আধার আর রেশন লিঙ্ক করাচ্ছে পাড়ায়। গেলাম সবাই। সবাই এসেছে কিন্তু কেউই যেন আসেনি। কেউ স্বীকারই করছে না যে সে এসেছে। রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো লিঙ্ক করাতে আসেননি অথচ সবাই এসে জানিয়ে যাচ্ছে যে সে আসেনি। পলাতকা ছায়া ফেলে দাঁড়িয়ে আছে শূন্য দৃষ্টিতে। কেউ চিনতেই পারছে না কাউকে। ছবি লাগছে কিনা আর প্রতিবেশীর উদাসীনতা সত্য কিনা জানতে এক কাকু বলল- 'তুমি কি কেবলই ছবি.. এনেছ? কার্ড লাগবে না?' রেশনের কথা কেউ বলছেই না মুখে। আর একটা জিনিস হচ্ছে, সবাই চমকে যাচ্ছে চেনা লোককে দেখে। কে আগে বলতে পারে প্রতিযোগীতার মত করে বলছে 'আরে তুমিও? এ কী, তুমি? তুমি কী মনে করে? তুমিও'। এভাবে হলঘরে 'তুমি তুমি তুমি তুমি' প্রতিধ্বনি শুনে বোঝা যাচ্ছে সবার বুকের ভিতর কিছু পাথর আছে। কিডনিতে বা গল ব্লাডারে না থাকলেই হল। অনন্ত জিজ্ঞাসা মানুষের মনে। নীল ধ্রুবতারার মত সবাই সবাইকে প্রশ্ন করে চলেছে। প্রশ্নের সঙ্গে উত্তরও আসছে বেঢপ। সহজ প্রশ্নের উত্তর তো জানা- 'না না, আআআমি তো রেশন তুলি না, আমি তো তোমাকে দেখতে এলেম অনেক দিনের পরে। কেউ বলছে- 'হাহাহা, কী বলছ ব্যাসন? না না, ও হ্যাঁ, রেশন। না না, মানে হ্যাঁ, এমা ছি ছি আমি তুলব কেন?' আরেকজন জোরে জোরে গল্প করছে সাউথ সিটি মলের পার্কিং এত উঁচুতে যে গাড়ি তুলতে গিয়ে একবার ভুল করে সেকেন্ড গিয়ার দেওয়ায় কী বিপদটাই না হয়েছিল। ওনাকে আবার পাশের লোক বলছে- 'বড়লোক আবার রেশন কার্ডটাও রাখে ওয়েস্টসাইডের ব্যাগে'। তারপর কী অট্টহাসি। সেই অট্টহাসি আর তুমি তুমি তুমি প্রতিধ্বনি মিশে সে এক বিশাল হট্টগোল, তোমরা যারা শোনোনি তাদের বলে বোঝানো দুষ্কর। যাদের উত্তর আসছে না তাদের বাড়ির বাকি লোক চলে আসছে আর প্রতিধ্বনি বেড়েই চলেছে 'তুমি তুমি তুমি'। একজন কেশে দিল মাস্ক ছাড়া আর সবাই মাস্ক প'রে তাকে কী বলল তার কিছু বোঝা গেল না। এর মধ্যে শৌখিনতার গোলাপকুঞ্জে মহুল ফুটিয়ে একজন চিৎকার করে উঠল 'বেশ করেছি রেশন নিয়েছি, শুয়ারের ইয়েগুলো, রেশন নিজের কার্ড থেকে নেবো। বাইক চালাই বলে কি রেশন নেবো না? তোর বাপও রেশন নিত, যত সব শুয়োরের ইয়ে'- এই বলে ফোঁসফোঁস করতে লাগল।