টিভিতে বিজ্ঞাপন দেখাচ্ছিল, কোন চ্যানেলে ক্ষীরের পুতুল সিরিয়াল শুরু হবে। দুয়োরাণী বলছেন রাজা সপ্তদ্বীপ থেকে বানিজ্যযাত্রা থেকে ফেরার সময়ে পোড়াকপালি দুয়োরাণীর জন্য যেন একটা পোড়ারমুখো বানরছানা আনেন। মনে পড়ে গেল আমরা ছোটবেলায় অবন ঠাকুরের ক্ষীরের পুতুল অভিনয় করেছিলাম।
আমার অভিনয় প্রতিভা যে সামান্য চার পাঁচটি চরিত্রে চরিত্রে সীমাবদ্ধ, তার মধ্যে একটি হচ্ছে ক্ষীরের পুতুলের সুয়োরাণী। আমার কিন্তু সূয়োরাণী হওয়ার কথা ছিলো না। সেই যখন আমি ছোট্ট মেয়েটি ছিলাম তখন আমি দিঠির মতো তুষ্টুর মতো রোগা, একমাথা চুল। কপালে অর্ধচন্দ্রাকারে ঝুরো চুল, নীরিহ গোবেচারা মতো ড্যাবা ড্যাবা চোখ। আমাকে রিহার্সাল দেওয়ানো হয়েছিলো দুয়োরাণী হিসেবে। আমার বন্ধু নূপুর বেশ মোটাসোটা, ফর্সা, খুব সুন্দর, ঝকমকে, ও স্বভাবতই সূয়োরাণী হিসেবে মানানসই। সেবারে আমি মাত্রই নূতন শহরে এসে নূতন স্কুলে ভর্তি হয়েছি। তখনও অনেক কিছুই জানিনা। হাবলা মতো। বুদ্ধি যদি বা থাকে স্মার্টনেসে গোল্লা। ওদিকে নূপুর ইনফ্যান্ট ক্লাস থেকে ওই স্কুলের ছাত্রী, খুব স্মার্ট, জেদি, দুষ্টুও মন্দ না। ওর মা স্কুলেরই দিদিমণি। বেচারি সাত বছর বয়সেই বাবাকে হারিয়েছে। এখন বছর দশেক বয়স। ভালো ছাত্রী সপ্রতিভ অন্যদিকে ব্যক্তিগত বিপর্যয় - সব মিলিয়ে দিদিমণিদের আদর সহানুভূতি দুইই পায়।
নূতন জায়গায় এসে নূপুরের সঙ্গে আমার কী করে বেশি ভাব হয়ে গেল। নূপুর আবার আমার সঙ্গে নানা ধরনের প্রতিযোগিতা করে অপদস্থও করে। ওর বাবা নেই শুনে অবাক লাগে - তখন বন্ধুদের সবারই বাবা আছে। নূপুরের ভাই নেই তাতেও অবাক। তখন তো সবারই দেখি, ভাই আছে বোন আছে। সে যাই হোক। আমার ভাইয়ের তখন মাথা ন্যাড়া করা হয়েছে। নূপুর বলে, তোর ভাইয়ের আর চুল হবে না। আমার ভাই নেই তবে দুই দিদি আছে। কতো চুল। সত্যি মীণাদি, টুলটুলদি যেমন সুন্দর তেমনি চুল। এরই মধ্যে আমার দাদু মারা গেছেন। বুড়ো হয়েছিলেন। অসুস্থ ছিলেন। বছর খানেক আগে নূপুরের বাবা সুন্দর, স্বাস্থ্যবান মানুষ হঠাৎই ব্রেনস্ট্রোকে মারা গেছেন। তা সে তো ছেলেমানুষ কতো আর বোঝে। আমার দাদুর শ্রাদ্ধে নিমণ্ত্রিত। খেয়েদেয়ে একটু গল্প হচ্ছে। নূপুর একসময়ে বললো - শ্রাদ্ধে অনেক মিষ্টি খাওয়াতে হয় নইলে যে মরে সে স্বর্গে যায়না। তোরা ক্ষীরতোয়া খাওয়ালে পারতি। আমি শুনেছি ভালো লোকেরা স্বর্গে যায়। আমি বললাম - আমার দাদু খুব ভালো লোক স্বর্গে চলেই গেছে। নূপুর কিছুতেই মানে না। নূপুর বলে তোর দাদুর চোখে ছানি হাঁটতে পারে না, লাঠি হাতে এখনো রাস্তার ধারে বসে ঘামছে, আমার বাবা জোরে হাঁটতে পারে, চোখে চশমা তবে ভালো দেখতে পায়, আমরা কতো মিষ্টি খাইয়েছি আমার বাবা তোর দাদুর অনেক আগে স্বর্গে চলে গেছে। কোনোভাবে আমাদের এই বাদানুবাদ কণামাসির কাণে যেতে আঁচলে চোখ মুছে নূপুরের হাত ধরে আদর করে অন্য কথায় নিয়ে গেলেন। আহারে সাতবছরের মেয়ে, বাবার আদরের ছোট মেয়ে মৃত্যুর বিষাদ তখনো মাপেনি।
ওই দেখ আসল কথা ছেড়ে কোথায় এসেছি। নাটকের কথা বলি।
লাইব্রেরি বলে একটা পিরয়ড থাকতো আমাদের স্কুলে। ঠিক ছুটির আগের পিরিয়ড - খিদে পেয়ে যেতো। কতক্ষণে ছুটি হবে সেই অস্থিরতা। একজন কোনো একটা বই পড়তো আমরা হয়তো শুনতাম, হয়তো হৈচৈ করতাম। একদিন ক্লাসে পড়া হোলো অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ক্ষীরের পুতুল। আমরা কজন মিলে ঠিক করলাম এই নাটকটা অভিনয় করতে হবে। নূপুরই দলনেত্রী। আমরা নিজেরাই রিহার্সাল দিতে শুরু করে দিলাম। কুশীলব নির্বাচনও আমাদের। রিসেসের সময়, সেলাই দিদিমণির ক্লাস ফাঁকি দিয়ে, স্টপগ্যাপ ক্লাসে রিহার্সাল দিই। বাড়িতে পার্ট মুখস্থ করি। নিজেরটা, অন্যেরটাও। রাজা হয়েছে শীলা দত্ত। লম্বা, ফর্সা, মানানসই স্বাস্থ্য। আমরা জানতাম রাজাদের নাক খাড়া হয়। শীলার নাক আমাদের চোখে রাজোচিত। নূপুরের আদেশে রোগা ছোটোখাটো অশোকা বেচারি বানরের রোল পেয়ে একটু মন খারাপ করলো। তখনকার দিনে যখন দুয়েকটা মাত্র রবীন্দ্র সঙ্গীত ককবরকে অনুবাদ হচ্ছিল, অশোকা রেডিওতে গাইতো। কিন্তু নাটকের দিন অশোকা খুব বাহবা পেল। একে তো তখন আগরতলার বিখ্যাত দুই মেকআপ আর্টিস্ট ছিলেন দুই ভাই। তাঁদের ভালো নাম জানতাম না। চারভাই কালা, ধলা, পচা, পোকড়া এই ডাক নামে খ্যাত ছিলেন। কালা স্যার এবং ধলা স্যার খুব ভালো করে সাজিয়ে দিয়েছিলেন সবাইকে। আমাদের ফাইন আর্টস ডিপার্টমেন্টের স্যার দুজন শৈলেশ দেববর্মন আর শান্তি রঞ্জন মুখোপাধ্যায় বানরের রূপসজ্জায় খুব মুন্সিয়ানা দেখিয়েছিলেন। অশোকা এতো প্রশংসা পেয়েছিল যে পরে তার আর দুঃখ ছিলো না। উল্টে ক্ষীরের পুতুলের ক্ষীর খেয়ে খুব খুশি হয়েছিলো।
রিহার্সাল তো দিচ্ছিলাম, কিন্তু ক্ষীরের পুতুলের নাট্যরূপ কেউ দিয়েছিল বলে মনে পড়ে না। বইয়ে যা লেখা আছে তাই সংলাপ হিসেবে বলে বলে অভ্যাস করেছিলাম। পরে হয়্তো দিদিমণিদের কেউ দৃশ্যভাগ বা সংলাপ সাজানোর কাজটা করেছিলেন, এত বছর পর সব কী আর মনে আছে! রিহার্সাল দিতে দিতে একদিন নূপুর বললো, নাটক করতে গেলে তো গয়না কিনতে হবে - চলো চাঁদা তুলি। ক্লাসের মেয়েরা কতো আর চাঁদা দেবে, তবু কেউ কেউ দিল। সামান্য সেই টাকা নিয়ে নূপুর আমাদের কয়েকজনকে নিয়ে এলো শহরের বড় ইমিটেশন গয়নার দোকানে। মালিক খুব সস্নেহ ব্যবহার করছিলেন কিন্তু নিজে নিজে গয়না কেনার উত্তেজনায় আমরা কী করে যেন শোকেসের কাঁচ ভেঙে ফেললাম। উনি আর কী করেন, বললেন স্কুলে জানাবেন। উপায়ান্তর না পেয়ে যৎপরোনাস্তি ভীত সন্ত্রস্ত আমরা সবাই গিয়ে দিদিমণিকে বলতেই দিদিমণি ক্ষোভে দুঃখে অস্থির। নূপুর কি করেছো, উইদাউট পারমিশন সরকারি স্কুলে চাঁদা তুলেছো। আমার মানসম্মান জলে গেল, বেআইনি কাজ করেছো তোমরা ইত্যাদি ইত্যাদি। ঐসব নিয়ে একপ্রস্থ লাঞ্ছনা গঞ্জনা হলো।
সে যাই হোক, ঐ করে বড়দিদিমনির কানে আমাদের নাট্যচর্চার খবর পোঁছলো। স্কুলের বড়দিদিমনি মিস্ সেন ছিলেন খুব রাশভারী মহিলা। শুধু ছাত্রীরা নয়, শহরের মান্যগণ্য সবাই তাঁকে সমীহ করতেন। বড়দিদিমণি দেখলেন আমরা নিজেরাই পার্ট টার্ট মুখস্থ করে নাটকের কাজ অনেকটা এগিয়ে রেখেছি, তখন ঠিক করলেন আসন্ন মাদারস্ ডে তে আমাদের নাটকই হোক্। আমাদের স্কুলে খুব ভালো ভাবে মাতৃদিবসের অনুষ্ঠান হোতো। মায়েদের মধ্যে খেলাধূলা, গান আবৃত্তি, আলোচনা, বিতর্ক আর ছাত্রীদের নাটক। মহারাণী তুলসীবতী স্কুলের মাতৃদিবস খুব গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান তখন। বর্ষিয়সী মাতামহারাণী থাকেন প্রধান অতিথি, তাঁর বসার জন্য আলাদা মঞ্চ। মাতামহারাণী হচ্ছেন প্রয়াত মহারাজা বীরবিক্রম কিশোরের মা। স্কুলটি রাজপরিবারেরই প্রতিষ্ঠিত। পরমাসুন্দরী বৃদ্ধা রাণী শাদা বেনারসী পরে তাকিয়া হেলান দিয়ে বসে নাটক দেখবেন - এটাই পরম্পরা। মায়েরা তাঁকে দেখবেন। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী ছাত্রীরা ছাড়া আর কোন ছাত্রী সেদিন সন্ধ্যায় স্কুলে আসে না। বড়দিদিমণির নির্দেশ মেয়েরা সেদিন মায়েদের সংসারের কাজ সামলাবে, ছোট ভাইবোনদের দেখবে। যে ছাত্রীর মা আসতে পারতেন না পরদিন তাঁকে জানাতে হোতো কি কারণে আসেননি। তখনকার দিনে এই একদিনের উত্সব মায়েদের জন্য অনেক ছিলো। ছাত্রীদের স্টেজ রিহার্সালটা দেখানো হোতো।
বড়দিদিমণির সিদ্ধান্তে দিদিমণিরা রিহার্সাল দেওয়ানো থেকে শুরু করে মেকআপ পোষাক পরিচ্ছদ সব কিছু পরিকল্পনা করতে লাগলেন, মাষ্টারমশাইরা স্টেজের দায়িত্বে। মঞ্চ পরিকল্পনার খুঁটিনাটি তাঁরাই দেখবেন। মহাসমারোহে শুরু হোল আয়োজন।
সব ঠিকঠাক চলছিল, বিপদ বাঁধালেন নূপুরের দিদি টুলটুলদি। নূপুর টুলটুলদির সঙ্গে খুব জেদ করতো। চারটে রসগোল্লা দেখিয়ে দেখিয়ে খাবে, দিদিকে একটাও দেবেনা। পিতৃহারা ছোট মেয়েটার প্রতি ওদের মায়েরও পক্ষপাতিত্ব ছিলো। তো, টুলটুলদি থিয়েটারের দুদিন আগে নূপুরকে বললেন, তুই তো হিংসুটে, তোর চেহারাও হিংসুটে, রাগী, তাইতো তোকে সূয়োরাণীর পার্ট দিয়েছে। শক্তি তো মিষ্টি দেখতে, কী নিরীহ শান্ত চেহারা তাই ওকে দুয়োরাণী করেছে। নূপুর খুব সাজগোজ করবে ভেবে সূয়োরাণী সাজতে রাজি হয়েছিল, এইবার বেঁকে বসলো। কিছুতেই সূয়োরাণী হবে না দুয়োরাণী হবে। দিদিমণি আমাকে বললেন লক্ষ্মী মেয়ে তুমি সূয়োরাণী হয়ে যাও। অসুবিধা ছিলো না, দুজনেরই দুজনের পার্ট মুখস্থ হয়ে গেছিল। শুধু একটা অসুবিধা রাজাকে রাগ দেখিয়ে সূয়োরাণী বলবে, মহারাজ, এ কোন্ রাজকন্যার পরা শাড়ি? এ কোন্ রাজকন্যার বাসি মালা? ইত্যাদি বলে দীর্ঘদিন পরে গৃহপ্রত্যাগত রাজাকে তিরস্কার করার সময়ে আমি তেমন তেজ দেখাতে পারছিলাম না। তবে একটাই ভালো সিরিয়ালের সূয়োরাণীর মতো কালো শাড়িতে পেত্নির মতো করে দিদিমণিরা সূয়োরাণী সাজাননি।
পায়ে পায়ে মাতৃদিবস চলে এলো। এতো বড়ো অনুষ্ঠান পরিচালনা করা সোজা তো নয়। বিকেল চারটা থেকে মায়েদের খেলাধুলা, আলোচনা সভা চলছে, সাতটায় নাটক হবে। কালা স্যার ধলা স্যার এর মতো শহরের নামকরা রূপসজ্জাকাররা যত্ন করে আমাদের সাজাচ্ছেন, দিদিমণিরা শাড়ি টারি পরাচ্ছেন। এরই মধ্যে স্নেহময়ী বীণা দিদিমণি হাঁড়ি নিয়ে হাঁ কর্ হাঁ কর্ বড় করে হাঁ কর্ বলে সবার মুখে বড় বড় লালমোহন গুঁজে দিয়ে গেছেন। নিভা দিদিমণি এসে দেখেন এক এক জনের লিপস্টিক ধেবড়ে ভুত। খুব বকলেন হ্যাংলামি করে মিষ্টি খেয়েছি বলে। স্টেজে আবার অশোকা ক্ষীরের পুতুলের জামার ভেতর থেকে সন্দেশ না খেয়ে মঞ্জুশ্রীর বোনের সখের পুতুলের মাথাই ভেঙে ফেললো। মায়েদের মধ্যেও কার মেয়ে কি পার্ট করলো কেমন করলো তা নিয়ে কথা টথা হয়েছিলো, এখনো যেমন হয়। আমার মা নাকি বলেছিলেন আমার মেয়েটাকে হিংসুটে রাণীর পার্টটা দিল। সম্পর্কে মায়ের বৌদি ডাইনী বুড়ির মা বললেন, ভ্রমর দুঃখ কইরো না, তবু তো তোমার মেয়ে রাজার রাণী আমার মেয়ে যে ডাইনী বুড়ি।
যা হোক আমাদের নাটকীয় নাটক বেশ ভালো উতরে গিয়েছিল, রঙীন ক্যামেরা ছিল না তখন ছবি তো নেই। তবে অভিনয়ে অশোকাই সবচেয়ে মাতিয়ে দিয়েছিল বানরের ভূমিকায়। মাতামহারাণী মাথায় হাত দিয়ে খুব আশীর্বাদ করেছিলেন।
নাটকের গল্প সমাপ্ত। এখন আমাদের জীবনের গল্পও প্রায় সমাপ্ত হওয়ার পথে। কিন্তু সেই ছোট বেলার নাটকের উন্মাদনা আনন্দ, সমবেত প্রচেষ্টার কথা এখনো মনে পড়লে ভালো লাগে। আমরা কে কোথায় ছিটকে গেছি। দেখা হয়না, তাই যোগাযোগ নেই - কিন্তু অলস দুপুরে বিকেলে মনে পড়ে সেই বন্ধুদের। বিশাল স্কুল ক্যাম্পাস, বড়দিদিমণি মিস্ সেন, অন্য দিদিমণিদের, মাস্টার মশাইদের কথা। জীবনের কাঠামোটি গড়ে দিয়েছিলেন তাঁরা, প্রথম রঙের পোঁচ তাদের হাতেই দেওয়া। টিভির জমকালো বিজ্ঞাপন দেখে আমাদের ছোট শহরের জলরঙে আঁকা মাদার্স ডে, অবন ঠাকুরের কলমের মায়া, গয়নার দোকানের শোকেসের ভাঙা কাচ, কত কী মনে পড়ে গেল। ভাবলাম আমাদের মায়ারাজ্যের সেই আট হাজার মানিকের আটগাছি চুড়ি, দশশো ভরি সোনার সেই দশগাছা মল ছড়িয়ে দেওয়া যাক, কেউ যদি কুড়িয়ে তোলে!
কি মায়াময় লেখনি!
শক্তিদিদির হাত ধরে ত্রিপুরার সেই জাদুমাখা শৈশবের দিনগুলো যেন সিনেমার স্লাইডের মতো ফিরে ফিরে এলো!
আমাদের জন্য আরো লেথ দিদি
ভাল লাগলো খুব। বিপ্লব রহমানকে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
অতি উপাদেয়।
অসাধারণ
দু:খ না ঠিক, হারানো দিনের জন্যে মায়া
ভারী ভালো লাগল
ভীষণ ভালো লাগলো এই লেখাটা। আপনার লেখা আমার খুব ভালো লাগে।