এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিবিধ

  • দেশভাগঃ ১৯৪৪ ও তারপর (দ্বিতীয় পর্ব)

    Indranil Ghosh Dastidar লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৮ এপ্রিল ২০২০ | ৫০১২ বার পঠিত | রেটিং ৩ (১ জন)
  • পর্ব ১ | পর্ব ২
    আলাপ-আলোচনার রাজনীতি ওয়াভেল খুব একটা খারাপ চালাচ্ছিলেন না। বিশেষ করে যদি মনে রাখি, যে তাঁর কোনো রাজনৈতিক অতীত ছিল না-তিনি ছিলেন আগাগোড়া সৈনিক। এছাড়াও বাংলার দুর্ভিক্ষ নিরসনে তাঁর একটা বড় ভূমিকা ছিল, সে কথা আগে আলোচনা করেছি। কিন্তু ওয়াভেল একটা বড় ভুল করে বসলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের যুদ্ধবন্দীদের নিয়ে। ২০ হাজার বন্দীর মধ্যে কয়েক' শ জনকে প্রকাশ্য বিচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৯৪৫-এর নভেম্বরে দিল্লীর লালকেল্লায় প্রকাশ্য বিচার শুরু হয়; সবচেয়ে মূর্খের মত মত কাজ হয় একসঙ্গে একজন হিন্দু, একজন শিখ ও একজন মুসলিমকে ( কর্নেল প্রেম কুমার সেহগল, কর্নেল গুরবক্স সিং ধীলন ও মেজর জেনারেল শাহ নাওয়াজ ) কাঠগড়ায় দাঁড় করানো। সাধারণ ভারতীয়র মনে সুভাষ চন্দ্র বোস ও আজাদ হিন্দ ফৌজের সম্মান তখন  সম্ভবতঃ ভারতবর্ষের অন্য যে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের চেয়ে বেশী। সেই সম্মানে আঘাত দেওয়া এবং একই সঙ্গে ভারতের তিন মুখ্য সম্প্রদায়ের তিনজন প্রতিনিধির বিচারের প্রয়াস ফের একবার এক প্রবল সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী অসাম্প্রদায়িক মনোভাবের জন্ম দিল ।

    দেশ জোড়া  বিক্ষোভের আঁচ পেয়ে তড়িঘড়ি জাতীয় কংগ্রেস আজাদ হিন্দ ফৌজের বন্দীদের পেছনে এসে  দাঁড়ালো। আসামীপক্ষের উকিল হিসেবে দাঁড়ালেন ভুলাভাই দেশাই, তেজ বাহাদুর সপ্রু ও জওহরলাল নেহরু - সেই জওহরলাল, যিনি আজাদ হিন্দ ফৌজের চরম বিরোধী ছিলেন; দীর্ঘ ২৫ বছর পরে তিনি  আবার কোর্টে এসে দাঁড়ালেন। প্রতিবাদে যোগ দিল মুসলিম লীগও;  আজাদ হিন্দ ফৌজের জনপ্রিয়তার পিঠেয় ভাগ বসানোর লোভ সামলানো  কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষেই সম্ভব ছিল না - সামনেই কড়া নাড়ছে নির্বাচন। বি শিব রাও নামক জনৈক সাংবাদিক লালকেল্লায় বন্দীদের দেখে এসে তাঁর প্রতিবেদনে লেখেন - '...তাঁদের মধ্যে বিন্দুমাত্র হিন্দু-মুসলমান বোধ নেই... এখন যাঁরা লালকেল্লায় বিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন, তাঁদের একটা বড় অংশই মুসলমান। জিন্না সাহেব যে পাকিস্তান নিয়ে বিবাদ জিইয়ে রেখেছেন, তাতে এঁদের অনেকেই ক্ষুব্ধ' (সুমিত সরকার, পৃ ৩৬১, ম্যানসার খণ্ড ৬, পৃ ৫৬৪)।

    ব্রিটিশের পক্ষে সবচেয়ে বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ালো এই উদ্দীপনার আঁচ ভারতীয় সেনাবাহিনীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা। জানুয়ারি মাসে পাঞ্জাবের গভর্নর জানাবেন,  লাহোরে মুক্ত আজাদ হিন্দ ফৌজের বন্দীদের সংবর্ধনায় উর্দি-পরা ভারতীয় সৈন্যরা হাজির ছিলেন।

    আরেকটি সমস্যা হয়ে দাঁড়াল - ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ায় ফরাসী ও ওলন্দাজ  ঔপনিবেশিক  শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্যবহার। ওয়াভেল এর তীব্র বিরোধী ছিলেন, কিন্তু মিত্রবাহিনীর কম্যান্ডার মাউন্টব্যাটেন তাঁর আপত্তি খারিজ করে দেন। এছাড়াও ছিল যুদ্ধের শেষে ব্যাপক বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি আর খাদ্যসঙ্কট। সব মিলিয়ে ব্রিটিশ প্রশাসনের ঘুম ছুটে যাওয়ার মত অবস্থা;  এই সেই সময়, পেন্ডেরেল মুন যার বর্ণনা দিয়েছেন 'আগ্নেয়গিরির কিনারা' বলে।

    ১৯৪৫-এর শরতে সরকারের প্রবল আশঙ্কা ছিল, কংগ্রেস আবার বিদ্রোহ করবে। আর এবারের বিদ্রোহ হবে '৪২-এর চেয়েও ভয়াবহ। '৪২-এর বীর শহিদদের স্মৃতি জাগিয়ে তুলে, সরকারী বর্বরতার কথা মনে করিয়ে দিয়ে, আজাদ হিন্দ ফৌজের  বন্দীদের মুক্তির দাবী তুলে কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতারা যেসব  উত্তেজক বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, ওয়াভেল সে সম্বন্ধে অভিযোগ করেন। কিন্তু প্রশাসন শিগগিরই বুঝে যায়, এইসব গরমা-গরম বক্তৃতা আসলে নির্বাচনের কথা মনে রেখে। কংগ্রেস নেতা আসফ আলি-র মন্তব্য উল্লেখযোগ্য; অক্টোবর মাসে একান্ত কথাবার্তায় তিনি নাকি বলেন - তাঁর দল যদি বিষয়টি নিয়ে লড়ে না যায়, তাহলে তারা দেশে অনেকটাই জমি হারাবে; কিন্তু তারা যদি ক্ষমতায় আসে, তবে অবশ্যই আজাদ হিন্দ ফৌজকে সেনাবাহিনী থেকে অপসারিত করবে, এমন কি কয়েকজনকে কাঠগড়াতেও দাঁড়াতে হতে পারে। (তদেব, পৃ ৩৬২, ম্যানসার, পৃ ৩৮৭)

    শুধু ব্রিটিশ প্রশাসনই নয়, কংগ্রেসের পৃষ্ঠপোষক পুঁজিপতিরাও কিছুটা চিন্তায় পড়েন। জি ডি বিরলা যে 'কংগ্রেস ব্ক্তৃতার উগ্রতায় শংকিত হয়ে উঠছেন' তার  উল্লেখ করেন একাধিক ব্রিটিশ বড়কর্তা। ৫ই ডিসেম্বর ওয়াভেল পেথিক - লরেন্সকে জানান, 'কংগ্রেসের পেছনে যে কট্টর পুঁজিবাদীরা আছে, তারা ক্রমেই তাদের সম্পত্তির নিরাপত্তা সম্পর্কে বিচলিত হয়ে উঠছে।' আর ঠিক তার পরদিনই  স্বয়ং বিড়লা জনৈক ব্রিটিশ বড়কর্তাকে এই বলে আশ্বস্ত করেন -  'জওহরলাল নেহরু সমেত এমন একজনও রাজনৈতিক নেতা নেই, যিনি সঙ্কট  বা হিংসা দেখতে চান.. গণ--অস্থিরতা ও বিদ্যমান প্রতিবেশের ফলেই ঐ ধরণের উগ্র বক্তৃতা দিতে হচ্ছে... কিন্তু আমার মনে হয় লাগামছাড়া ভাষা ভবিষ্যতে ক্রমেই আরো কম শোনা যাবে (তদেব, পৃ ৩৬৩, ম্যানসার পৃ ৬১৫)।

    পরিস্থিতির রাশ কিন্তু শিগগিরই নেতাদের হাত থেকে বেরিয়ে যায়। আজাদ হিন্দ ফৌজের বিচারকে কেন্দ্র করে ২১-২৩শে নভেম্বর কলকাতায় এক গণবিস্ফোরণ ঘটে যায়। বন্দীদের মুক্তির দাবীতে ছাত্ররা একটি মিছিল করেন। এর আয়োজক ছিলেন শুরুতে বঙ্গীয়  প্রাদেশিক ছাত্র কংগ্রেস। ছাত্রদের ডালহৌসি স্কোয়ারে ঢুকতে বাধা দিলে তাঁরা ধর্মতলা স্ট্রীটেই বসে থাকেন। এঁদের সঙ্গে যোগ দেন কমিউনিস্ট ছাত্র ফেডারেশনের কর্মীরা-যদিও দু-পক্ষের মধ্যেকার সম্পর্ক মোটেও মধুর ছিল না। আসেন  লীগের পতাকা নিয়ে ইসলামিয়া কলেজের ছাত্ররা।তুমুল হর্ষধ্বনির মাধ্যমে তাঁরা সংবর্ধিত  হন। ছাত্ররা অসাম্প্রদায়িক সাম্রাজ্যবাদ- বিরোধী আন্দোলনের প্রতীক হিসেব  কংগ্রেস, লীগের পতাকা ও লাল পতাকা একসঙ্গে বেঁধে দেন। পুলিশের প্রথম দফার গুলিতে দুজন মারা যান (একজন হিন্দু, অন্যজন মুসলিম)। এরপরেই ২২  ও ২৩ তারিখে  গোটা শহর জুড়ে বড় ধরণের গণ্ডগোল ছড়িয়ে পড়ে। ২২শে নভেম্বর ধর্মতলায়  প্রায় লাখ দুয়েক মানুষের  একটি জমায়েত হয় (Sohini Majumdar, A Different Calcutta-Calcutta: the Stormy Decades, ed. Tanika Sarkar, Sekhar Bandyopadhyay, p.242)।  সিপিআইয়ের অনুগত ট্রাম শ্রমিকরা ও অন্যান্য কল- কারখানার শ্রমিকরা ধর্মঘটে  সামিল হন। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সড়ক ও ট্রেন অবরোধ করা হয়। আন্দোলন এতটাই জঙ্গী ছিল, যে  জনতার ওপর গুলি চালালেও  তারা  পালিয়ে যাওয়ার কোনো লক্ষণই দেখাচ্ছিল না, বড়জোড় একটু পিছিয়ে গিয়ে আবার আক্রমণ করছিল।   ৩৩ জন নিহত ও প্রায় শ'দুয়েক মানুষ আহত হন। অপরপক্ষে  প্রায়  ৭০ জন ব্রিটিশ ও ৩৭ জন মার্কিন সৈন্য আহত হন। (সুমিত সরকার, পৃ ৩৬৩-৬৪)

    স্পষ্টতঃই এই আন্দোলন ছিল স্বতঃস্ফুর্ত, নেতৃত্ববিহীন। নেতারা বরং ব্যস্ত ছিলেন আন্দোলনকে স্তিমিত করার কাজে। উল্লেখ থাক, যে শরৎ চন্দ্র বসু স্বয়ং ঐ সমাবেশে ভাষণ দিতে অস্বীকার করেন।  এমন কি  আন্দোলন হিংসাত্মক হয়ে ওঠার জন্য তিনি পরে কমিউনিষ্টদের দায়ী করবেন (তদেব, পৃ ৩৬৩)। শুধু শরৎবাবুই নন, কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতারা কেউই আন্দোলনের রাশ হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় খুশী হন নি। কংগ্রেস নেতারা বস্তুতঃ  জনতার বিপ্লবী মনোভাব দেখে সন্ত্রস্তই হয়ে পড়েন। কংগ্রেসের পৃষ্ঠপোষক বনিক সম্প্রদায় ভয় পায়, এই আন্দোলনের ব্রিটিশ- বিরোধী অভিমুখ ঘুরে গিয়ে সমাজ- বদলের সর্বাত্মক বিপ্লব না শুরু  হয়ে যায়।  ২৪শে নভেম্বর  বোম্বাইয়ের এক নির্বাচনী জনসভায় পুলিশের সঙ্গে 'তুচ্ছ বিবাদে' শক্তি খইয়ে ফেলার নিন্দা করেন প্যাটেল। গান্ধি বলেন, এই জাতীয় ঘটনা - ..'অশোভন,  ভারতবর্ষের নাম খারাপ করছে... হিন্দু-মুসলমান ও অন্যান্যরা একযোগে হিংসাত্মক কাজ করছেন - এটি  একটি পাপকাজ।' (Sohini Majumdar, Calcutta: the Stormy Decades, p.249)। ১লা ডিসেম্বর আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের নীতি হল দেশে শান্তি বজায় রেখে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা।  নেহরুও স্পষ্ট ভাষায় এই আন্দোলনের নিন্দা করেন। একমাত্র অরুণা আসফ আলিই আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়ান। ডিসেম্বরের প্রথম  সপ্তাহে কলকাতায় কংগ্রেস  কার্যনির্বাহী সমিতির বৈঠকে অহিংসায় দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করা হয়। নেতারা ভুলে গেলেন, কিছুদিন আগে অবধিও তাঁরা '৪২-এর অগাস্ট আন্দোলনের প্রশংসায়  পঞ্চমুখ ছিলেন - যা কোনোমতেই অহিংস ছিল না।

    প্রশাসনও উপলব্ধি করে যে বড় বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে - এবার কিছু ছাড় দেওয়া দরকার। ওয়াভেল পরে স্বীকার করেছিলেন - যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকালীন বর্বরতার কোনো প্রমাণ দেওয়া সম্ভব নয়, তাদের প্রকাশ্যে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সাঙ্ঘাতিক ভুল  হয়ে গিয়েছে।  ওয়াভেলের ডায়েরি উদ্ধৃত করা যাক - 'আমাদের যে কোনো মূল্যে হিন্দু ও মুসলমান - এই দুই সম্প্রদায়ের সঙ্গে একসাথে ঝগড়া-কাজিয়ায় জড়িয়ে পড়া পরিহার করতে হবে।' (Ibid, p.250)  ১লা ডিসেম্বর ঘোষণা হল - যে সব আজাদ হিন্দ বন্দীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধবন্দীদের সঙ্গে নৃশংস ব্যবহারের অভিযোগ আছে, এখন থেকে শুধু তাদেরই বিচার চলবে। প্রথম দফার বন্দীদের যে কারাদন্ড  দেওয়া হয়েছিল, '৪৬-এর জানুয়ারি মাসে তাও মকুব করে দেওয়া হল। পরের মাসে ইন্দো-চীন ও ইন্দোনেশিয়া  থেকে ভারতীয় সৈন্যদের ফিরিয়ে আনা হল।  ২২শে জানুয়ারি সিদ্ধান্ত নেওয়া  হল - ভারতীয় নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার জন্য একটি ক্যাবিনেট মিশন ভারতে আসবে। ওয়াভেল অবশ্য এরই মধ্যে 'ভেঙে ফেলার পরিকল্পনা' শুরু করে দিয়েছিলেন।  মে মাসে এই পরিকল্পনাটি ক্যাবিনেট মিশনের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ভাবা হয়েছিল - ব্রিটিশ সেনা ও সরকারী কর্মচারীদের দেশের উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্বের মুসলিম-অধ্যুষিত প্রদেশে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, আর দেশের বাকিটা তুলে দেওয়া হবে কংগ্রেস নেতাদের হাতে। ক্যাবিনেট মিশন প্রস্তাবে এটি চাপা পড়ে যায়। সুমিত সরকার লিখছেন - ' কিন্তু তাহলেও, ভবিষ্যতে কংগ্রেসের নেতৃত্বে কোনো আন্দোলন দমন করা যে অসম্ভব হবে - সেটা স্বীকার করা হয়েছিল, আর সরকারী বড়কর্তাদের একটা উঁচু মহলে যে পাকিস্তানকে এক ভারতীয় উত্তর-আয়ারল্যান্ড তৈরী করার যে বাসনা  ছিল - এটা বোঝার ক্ষেত্রে ঐ 'পরিকল্পনা' এখনও এক কৌতূহলজনক প্রমাণ (পৃ ৩৬৪)
    -----------

    '৪৬-এর ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতা শহর আবার একটি গণ-আন্দোলনের সাক্ষী হয়। আজাদ হিন্দ ফৌজের ক্যাপ্টেন আব্দুল রশিদ আলিকে সামরিক আদালত ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছিল; তার প্রতিবাদে মুসলিম লীগের ছাত্র শাখা ধর্না-জমায়েত ও ধর্মঘটের ডাক দেয়। তাতে যোগ দেয় ছাত্র ফেডারেশন। ১২ই ফেব্রুয়ারি-র ধর্মঘটে কলকাতার শিল্পাঞ্চল স্তব্ধ হয়ে যায়। বিপুল সংখ্যক মানুষের জমায়েত হয় ওয়েলিংটন স্কোয়ারে; এই জমায়েতে হিন্দু-মুসলমান-কংগ্রেস-লীগ-কমিউনিষ্ট-খাকসার কোনো ভেদাভেদ ছিল না। সমাবেশে ভাষণ দেন লীগ-নেতা সুরাবর্দি, কংগ্রেস নেতা সতীশ দাশগুপ্ত ও কমিউনিষ্ট নেতা সোমনাথ লাহিড়ী। সুরাবর্দি বলেন - 'আমার জীবনের একটা বড় আশা আজ পূর্ণ হয়েছে - কংগ্রেস, লীগ পতাকার নিচে হিন্দু- মুসলমান ছাত্ররা আজ এক হয়ে দাঁড়িয়েছে (অমলেন্দু সেনগুপ্ত, উত্তাল চল্লিশ - অসমাপ্ত বিপ্লব, পৃ ৫৮)।' বিশাল পুলিশ ও সেনাবাহিনী নামিয়ে লাঠি-টিয়ারগ্যাস-গুলি চালিয়ে দু-দিনের চেষ্টায় এই আন্দোলন দমন করা সম্ভব হয়। এই দুদিনের সঙ্ঘর্ষে সরকারী হিসেব মত ৮৪ জন নিহত ও প্রায় ৩০০ মানুষ আহত হন ( সুমিত সরকার, পৃ ৩৬৫, Gautam Chattopadhyaya, the Almost revolution)। জনতার জঙ্গী মেজাজ দেখে ভীত লীগ ও কংগ্রেস আন্দোলনের নেতৃত্ব থেকে সরে আসে। নিজেদের ক্ষমতা সম্বন্ধে সন্দীহান কমিউনিষ্ট পার্টিও অগত্যা বাধ্য হয়ে পিছিয়ে আসে। যদিও এই আন্দোলন কলকাতার ছাত্রসমাজ ও শ্রমজীবী মানুষদের মধ্যে অভূতপূর্ব সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী চেতনা গড়ে তুলেছিল। ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে হিন্দু-মুসলমান বিভেদও মুছে গিয়েছিল। স্বাধীনতা পত্রিকার প্রতিবেদনে লেখা হয় - 'গতকাল গুলির আঘাতে নিহত নাজিমুদ্দিনের শব লইয়া ৫০ হাজার হিন্দু-মুসলমানের এক বিরাট শোভাযাত্রা নাখোদা মসজিদ হইয়া মানিকতলার কবরখানায় যায়। লীগের একজন সভ্য কবরের মাটী হাতে লইয়া বলেন - 'এই মাটী যেন লীগ ও কংগ্রেসের পতাকাকে শক্ত করে বেঁধে দেয়, শহীদের রক্তে এই বন্ধন চিরদিনের জন্য এক হয়ে যাক' (অমলেন্দু সেনগুপ্ত, পৃ ৬৪)।

    হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের জন্য নীচুতলার মানুষদের এহেন আবেগ থাকা সত্বেও ফাটল নেমে আসে উপরদিক থেকে। এই আন্দোলনের মূল উদ্যোক্তা ছিল মুসলিম লীগ, ফলে কংগ্রেসের উচ্চতম নেতৃত্বের মনোভাব ছিল ঠাণ্ডাগরম। আবুল কালাম আজাদ একে 'গুন্ডামি' আখ্যা দেন। তাঁর ভাষ্য মিলে যায় ব্রিটিশ সেনাধ্যক্ষ টাকারের ভাষার সঙ্গে- 'মুসলমান, শিখ, কমিউনিস্ট ও গুণ্ডা-বদমায়েশদের সক্রিয় সহযোগিতায় গোলযোগ দ্রুত শহরময় দাঙ্গা, অগ্নিকাণ্ড ও লুটতরাজের ব্যাপক আকার নেয়' ( তদেব, পৃ ৭৪, Gautam Chattopadhyay, p. 443)।সুরাবর্দির ডাকা সর্বদলীয় সভায় কংগ্রেস অনুপস্থিত থাকে। আজাদ পত্রিকা ইঙ্গিত করতে আরম্ভ করে, হিন্দুরা এই আন্দোলনের অপব্যবহার করছেন।

    রশিদ আলি দিবসের ঐক্যের ডাক শুধু কলকাতাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তার রেশ ছড়িয়ে পড়েছিল বাংলার জেলাগুলিতেও। ইতিমধ্যে জিনিষপত্রের দাম বাড়া ও র‌্যাশনের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে রেল শ্রমিক এবং ডাক ও তার বিভাগের কর্মীরা ধর্মঘটের হুমকি দিচ্ছিলেন। এবার সরকারী কর্মচারীরাও তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। শ্রমিক আন্দোলনের বিকেন্দ্রীকরণ ঘটে সারা ভারত জুড়ে আন্দোলন ছড়িয়ে যায় ( বিশ ও ত্রিশের দশকে এই আন্দোলন ও ধর্মঘটগুলি সীমাবদ্ধ থাকত মূলতঃ বোম্বাই ও কলকাতার সুতোকলগুলিতে)। লীগ ও কংগ্রেস অবশ্য র‌্যাশন কমিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটিকে সমর্থনই করে। আজাদ এটিকে 'দূরদর্শী' (পদক্ষেপ) হিসেবে বর্ণনা করেন এবং বলেন 'ধর্মঘট করা 'আজকের দিনে অবান্তর (সুমিত সরকার, পৃ ৩৬৫, ম্যানসার খণ্ড ৬, পৃ ১১-১৭)।'
    ----------------

    ব্রিটিশ সরকারকে সবচেয়ে বিচলিত করে অবশ্য '৪৬-এর ফেব্রুয়ারি মাসে বোম্বাই ও করাচির নৌ-বিদ্রোহ। ভারতীয় নৌ-সেনাদের নিত্যকার দুর্দশা আর বর্ণ- বৈষম্যের থেকে ক্ষোভের সূত্রপাত। 'শুয়োরের বাচ্চা', 'কুলির বাচ্চা', 'কালা বেজন্মা' বলে ভারতীয় নৌ-সেনাদের গালি দেওয়াটা ছিল ব্রিটিশ অফিসারদের রেওয়াজ। খারাপ খাবার, নৌ-বাহিনী থেকে ছাড়া পাওয়ার অনিশ্চয়তা, ছাড়া পেলে ভবিষ্যতে চাকরি জুটবে কিনা তার ঠিক নেই-এইসব বিক্ষোভের রাজনীতিকরণ ঘটায় ব্রিটিশ- বিরোধী গণচেতনা আর কমিউনিষ্ট মতাদর্শ। আজাদ হিন্দ ফৌজের বিচার আগুনে ঘি ঢালতে সাহায্য করে।

    ১৮-ই ফেব্রুয়ারি নৌ-সঙ্কেত প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান 'তলোয়ার'-এর রেটিংরা খারাপ খাবার ও বর্ণবৈষম্যগত অপমানের বিরুদ্ধে অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। পরদিন ক্যাসল ব্যারাকস, ফোর্ট ব্যারাকস ও বোম্বাই বন্দরের ২২টি জাহাজে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্রোহীরা জাহাজের মাস্তুলে কংগ্রেস- লীগ ও কমিউনিষ্ট পতাকা একসঙ্গে বেঁধে ঝুলিয়ে দেয়। ধর্মঘটীদের দাবী ছিল দুধরণের- প্রথমতঃ ভালো খাবার এবং ব্রিটিশ ও ভারতীয় সেনার বেতনের সমতা। আর সেইসঙ্গে জাতীয় রাজনৈতিক দাবী, যেমন আজাদ হিন্দ ফৌজ ও অন্যান্য রাজবন্দীদের মুক্তি, ইন্দোনেশিয়া থেকে ভারতীয় সেনা-প্রত্যাহার ইত্যাদি।

    ২০শে ফেব্রুয়ারি বিকেলে ধর্মঘটীরা নিজ নিজ জাহাজে ফিরে যেতে রাজি হন; কিন্তু গিয়ে তাঁরা দেখেন সেনারক্ষীরা তাঁদের ঘিরে ফেলেছেন। পরদিন ক্যাসলস ব্যারাক থেকে শুরু হয় লড়াই। ধর্মঘটীদের ঘেরাও করবার জন্য যে এক হাজার সৈন্য পাঠানো হয়, তারা উল্টে বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগদান করে। তাদের পরিবর্তে ব্রিটিশ সৈন্য পাঠানো হয়। দু পক্ষেই গুলি বিনিময় শুরু হয়। বিদ্রোহী নাবিকদের সমর্থন জানান দু হাজার ভারতীয় বৈমানিক। বোম্বাইয়ের গুর্খা সৈন্যদল নাবিকদের দিকে গুলি ছুঁড়তে অস্বীকার করে। ওদিকে অ্যাডমিরাল গডফ্রে বোমারু বিমানের সাহায্যে নৌ-বাহিনী ধ্বংস করার হুমকি দেন। স্কুল-্কলেজের ছাত্র ও কুড়ি হাজার ডক শ্রমিক নাবিকদের সমর্থনে ধর্মঘট করেন। বিদ্রোহী নাবিকদের কেন্দ্রীয় কমিটি দেশের সকল রাজনৈতিক দল ও বোম্বাইয়ের জনগণকে তাঁদের সমর্থনে সাধারণ ধর্মঘটে সামিল হতে বলেন। শহরময় খবর রটে যায় ব্রিটিশ সরকার নাবিকদের না-খাইয়ে মারার চেষ্টা করছে। শহরের অলিগলি থেকে মানুষ খাবারের প্যাকেট ও জল নিয়ে অ্যাপোলো বন্দরে এসে হাজির হন। বি সি দত্ত, নৌ-বিদ্রোহের অন্যতম কারিগর সেই দিনগুলোর কথা লিখছেন -
    "সমাজের সব স্তরের মানুষ খাবারের প্যাকেট, জলের ঘড়া নিয়ে আসছেন। গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়ার সামনের সমুদ্রমুখী রাস্তা ভিড়ে ভিড়াক্কার। রেস্তোরাঁ-মালিকরা লোকজনদের অনুরোধ করছেন যত খুশি খাবার নিয়ে বিদ্রোহী নাবিকদের পৌঁছে দিতে। এমন কি রাস্তার ভিখারিরাও ছোট ছোট খাবারের পুঁটলি নাবিকদের জন্য বয়ে নিয়ে চলেছেন।... কাঁধে রাইফেল ঝোলানো ভারতীয় সৈন্যরা নাবিকদের জন্য আনা খাবার নৌকায় তুলে দিতে সাহায্য করছেন... ব্রিটিশ অফিসাররা অসহায় দর্শকের মত দাঁড়িয়ে.." (Yasmin Khan, p.26)।

    ধর্মঘট ছড়িয়ে পড়ে ৭৮টি জাহাজ ও কুড়িটি নৌসেনা-দপ্তরে ২০০০০ নাবিকদের মধ্যে। ২২ তারিখ করাচি বন্দরে 'হিন্দুস্তান' জাহাজের নাবিকরা দীর্ঘক্ষণ গোলার লড়াই চালিয়ে তবে আত্মসমর্পণ করে। বোম্বাইয়ের রাস্তায়-রাস্তায়, মহল্লায়-মহল্লায় হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে ছাত্র ও শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর রক্তক্ষয়ী লড়াই চলে। ইতিহাসবিদ সুমিত সরকার এই ঘটনার তুলনা করেছেন ১৯০৫-এর প্রথম রুশ বিপ্লবের সময় কৃষ্ঞসাগর নৌ-বিদ্রোহের সঙ্গে। সেখানেও খারাপ খাবারের ইস্যুতে বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল এবং একই রকম ভাবে বিদ্রোহী নাবিকদের খাবার পৌঁছে দিতে গিয়ে অজস্র সাধারণ মানুষ সেনাবাহিনীর গুলিতে মারা যায় ( যে ঘটনা আইজেনস্টাইন অমর করে রেখেছেন তাঁর 'ব্যাটলশিপ পোটেমকিন' ফিল্মের 'ওডেসা স্টেপস' দৃশ্যে)।

    বিদ্রোহী নাবিকরা একটি ইস্তাহারে জানায় -
    'ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, মুসলিম লীগ ও কমিউনিষ্ট পার্টির নেতারা - বিশেষ করে আপনাদের কাছে আমরা আবেদন জানাচ্ছি। বোম্বাইয়ের রক্তস্নান বন্ধ করার জন্য আপনাদের সমস্ত শক্তি কাজে লাগান। নৌবাহিনীর কর্তৃপক্ষের গোলাগুলি চালানো রোধ করুন। আমাদের সঙ্গে আপস- আলোচনা চালাতে তাদের বাধ্য করুন।' (অমলেন্দু সেনগুপ্ত, পৃ ৯৩) রাজনৈতিক দলগুলি এর প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্টাস্পষ্টি দু-ভাগে ভাগ হয়ে যায়। কমিউনিষ্ট পার্টি নৌ-বিদ্রোহের সমর্থনে বোম্বাইয়ে ধর্মঘটের ডাক দেয়। অরুনা আসফ আলি, অচ্যুত পটবর্ধনের মত কংগ্রেস সোশ্যালিষ্ট নেতারাও একে সমর্থন করেন। অন্যদিকে সর্দার প্যাটেল জনগণকে যথারীতি তাঁদের স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। কংগ্রেস ও লীগের প্রাদেশিক নেতা এস কে পাটিল ও চুন্দ্রিগড় এমনকি শৃঙ্খলা-রক্ষার জন্য স্বেচ্ছাসেবক পাঠানোরও প্রস্তাব দেন। কংগ্রেস ও লীগের বিরোধিতা সত্বেও বোম্বাই শহরে সর্বাত্মক ধর্মঘট হয়। দু দিন ধরে রাস্তায় রাস্তায় খন্ডযুদ্ধ চলে। দু ব্যাটেলিয়ন সেনা নামিয়ে তবে বোম্বাই শহরে শান্তি ফেরানো সম্ভব হয়। সরকারী হিসেবমতে ২২৮ জন মারা যান, ১০৪৬ জন আহত হন (সুমিত সরকার, পৃ ৩৬৬, ম্যানসার খন্ড ৬, প্রি ১০৮২)।

    ২৩ তারিখ প্যাটেল, বিদ্রোহী নাবিকদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে আত্মসমর্পণে রাজী করান। কলকাতায় বসে একটি বিবৃতি দিয়ে তাঁর এই কাজে সম্পূর্ণ সমর্থন জানান স্বয়ং মহম্মদ আলি জিন্না ! নাবিকদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়- তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে জাতীয় দলগুলি তা আটকাবে। এই প্রতিশ্রুতি অবশ্য অচিরেই ভুলে যাওয়া হয়; ১লা মার্চ কংগ্রেস নেতা বিশ্বনাথনকে প্যাটেল লেখেন- 'সেনাবাহিনীর শৃংখলায় কোনোরকম নড়চড় করা যায় না... স্বাধীন ভারতেও আমাদের সেনা দরকার হবে' (তদেব, পৃ ৩৬৬, Sardar's letters, Vol. 4, p.165)। ৪৭৬ জন নাবিকের কোর্ট মার্শাল হয়; স্বাধীন ভারত কিংবা পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতে তাঁদের কারো কোনোদিন ঠাঁই হয় নি।

    নেহরু সেদিন 'হিংসার উন্মত্ত বহিঃপ্রকাশ' রোধ করবার প্রয়োজন অনুভব করেছিলেন। গান্ধি ছিলেন আরো শ্লেষাত্মক - 'চাকুরী যদি তাঁহাদের নিকট বা ভারতের পক্ষে অমর্যাদাকর হয়, তবে তাঁহারা চাকুরী করেন কেন? তাঁহারা ভারতের পক্ষে খারাপ এবং অযোগ্য উদাহরণ সৃষ্টি করিতেছেন। হিংসা কার্য্যের জন্য হিন্দু-মুসলমান ও অন্যান্যের মিলন অপবিত্র .. (অমলেন্দু সেনগুপ্ত, পৃ ১০৯, স্বাধীনতা, ২৪/২/৪৬)।

    উত্তরে অরুনা আসফ আলি বলেন - 'কংগ্রেসীরা নিজেরাই আইনসভায় যাচ্ছেন। রেটিংদের কাজ ছেড়ে দিতে বলার কথা তাঁদের মুখে একদমই সাজে না।' আরো বলেন : 'সাংবিধানিক ফ্রন্টের চেয়ে ব্যারিকেডে হিন্দু-মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করা হবে অনেক বেশী সহজ' (সুমিত সরকার, পৃ ৩৬৭). তাঁর এই মন্তব্য যে কতখানি সত্যি, সে কথা সেদিনকার জাতীয় নেতারা কেউ বোঝেন নি, বা বলা ভালো ইচ্ছে করে ভুলে ছিলেন।
    -------

    "তখন সমস্ত জাহাজে কালো পতাকা উড়ছে-আত্মসমর্পণের সঙ্কেত। মাইক্রোফোনে ইন্ডিয়া গেটে সমবেত ছাত্র ও জনসাধারণের উদ্দেশে শেষ ইস্তাহার ঘোষিত হল -
    'এই ধর্মঘট আমাদের জাতির জীবনে নতুন ইতিহাস রচনা করেছে। ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম সৈনিক ভারতবাসী ও অসামরিক ভারতবাসীর রক্ত একই আদর্শের প্রেরণায় প্রবাহিত হল। আমরা সৈনিকরা এই ঘটনা কখনও ভুলব না এবং আমরা জানি যে আপনারা, আমাদের ভাই-বোনেরাও কখনও ভুলবেন না। আমাদের মহান জনগণ দীর্ঘজীবী হোক। জয় হিন্দ!'

    খাবারের ঝুড়ি হাতে সমুদ্রতীরে 'ইন্ডিয়া গেটে' সমবেত হাজার হাজার মানুষ শিশুর মত কাঁদতে লাগল। কাল থেকে তারা কী নিয়ে বাঁচবে? (অমলেন্দু সেনগুপ্ত, পৃ ৯৯)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    পর্ব ১ | পর্ব ২
  • আলোচনা | ১৮ এপ্রিল ২০২০ | ৫০১২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • গবু | 172.69.***.*** | ১৮ এপ্রিল ২০২০ ২২:০৩92484
  • আগের পর্বের লিঙ্ক - https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=17331

    এটা লেখার ওপরে দেওয়া যায় কি ?

    পড়ছি
  • Indranil Ghosh Dastidar | ১৯ এপ্রিল ২০২০ ০৩:১০92505
  • দিয়ে দিলাম। ধন্যবাদ। পড়ার সাথে সাথে লিখুনও কিছু।
  • Indranil Ghosh Dastidar | ২১ এপ্রিল ২০২০ ০২:১৩92580
  • সংযোজিত ও সম্পাদিত হল।
  • Indranil ghosh dastidar | ২৪ এপ্রিল ২০২০ ০৩:২৩92647
  • আজাদ হিন্দ ফৌজের বিচার- রশিদ আলি দিবস- নৌ- বিদ্রোহ।
  • Asis Banerjee | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২৩:০৮497813
  • খুব ভালো লাগলো আরো লিখবেন
  • Somenath Guha | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১২:২৫497948
  • কংগ্রেস, লীগ একত্রে এইসব আন্দোলনকে ছুরি মেরেছে। এই বিদ্রোহগুলো সফল হলে আজ আমরা অন্য ভারতবর্ষ পেতাম।
  • Amitava Banerjee. | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২১:০২497975
  •  এই  নিবন্ধের দ্বিতীয় পর্ব কি ভাবে পড়া যায়? 
  • π | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২৩:২৬497977
  • এটিই দ্বিতীয় পর্ব।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন