এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ভুখা বাংলাঃ '৪৩-এর মন্বন্তর (পর্ব ৫)

    I লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ | ৫৭৩৮ বার পঠিত | রেটিং ৩ (২ জন)
  • (সতর্কীকরণঃ এই পর্বে দুর্ভিক্ষের বীভৎসতার গ্রাফিক বিবরণ রয়েছে)
    ----------
    ১৯৪৩-এর মে মাস নাগাদ রংপুর, ময়মনসিংহ, বাখরগঞ্জ, চিটাগং, নোয়াখালি থেকে অনাহারে মৃত্যুর খবর আসতে থাকল। 'বিপ্লবী' পত্রিকার ২৩ শে মে সংখ্যায় মেদিনীপুরে ৫টি অনাহারে মৃত্যু আর ৮টি ধান লুঠের খবর বের হল।জানানো হল-প্রতিদিন ছ' থেকে সাতশো মানুষ তমলুক থেকে রেলে চাপছে ওড়িশায় গিয়ে সস্তায় চাল কিনবে বলে। বহু মানুষ তাদের ঘটিবাটি বেচে দিয়ে কলকাতার দিকে রওনা হয়ে যাচ্ছে-স্রেফ দুমুঠো খেতে পাবে এই আশায়। পাবনা থেকে খবর এল জেলেরা দলে দলে না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছে।

    ২রা জুলাই বাংলার গভর্নর হার্বার্ট লিনলিথগোকে জানালেন-"Bengal is rapidly approaching starvation"(1)। হার্বার্টের চিঠির মার্জিনে লিনলিথগো লিখলেন-"আমার সন্দেহ হয়, লোকটা বাংলার অবস্থা সত্যিই কদ্দুর জানে.."। লিনলিথগো হার্বার্টকে দুচক্ষে দেখতে পারতেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন, তাঁর গভর্নরদের মধ্যে সবচেয়ে অপদার্থ হলেন হার্বার্ট। সে কথা সত্যি হতেও পারে; কিন্তু এই ক্ষেত্রে অন্ততঃ পরিস্থিতি-বিচারে হার্বার্ট ভুল করেন নি, দেরী করেছেন যদিও অনেক।

    এই অবস্থাতেও কিন্তু বাংলা জুড়ে সরকারী 'ফুড ড্রাইভ'এর পোষাকী নামের আড়ালে চাল বাজেয়াপ্ত করা চলছে। গ্রামের মানুষ যেটুকু পারছে , বাধা দিচ্ছে। চব্বিশ পরগণা থেকে কলকাতা আসার পথে ধানের নৌকো লুঠ হওয়ার ঘটনা ঘটছে আকছার (2)। কিন্তু সশস্ত্র পুলিশবাহিনীর কাছে নিরস্ত্র গ্রামবাসী আর কতদূর অবধি পেরে উঠবে ! তার ওপরে ছিল Punitive Tax, গ্রামীণ বাঙালীর মুখে মুখে যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল 'পিটুনি কর'। নদীপথে ধান-ছিনতাই কিংবা বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটলে নদীর আশেপাশের বেশ কিছু গ্রামের সবার কাছ থেকে গণ-জরিমানা নেওয়ার ব্যবস্থা চালু হয়েছিল।

    এদিকে লণ্ডনে ওয়ার ক্যাবিনেটের মিটিংয়ে লিনলিথগো'র আবেদন নিয়ে তখনো আলোচনা চলছে তো চলছেই-কোনো সিদ্ধান্ত দূর অস্ত। একটি মেমো'র ড্রাফ্‌টে বলা হচ্ছে-অক্ষশক্তি পরাজিত হলে ইতালীর জনগণকে খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্য জাহাজ লাগতে পারে-সেক্ষেত্রে দুর্ভিক্ষপীড়িত বাংলায় ত্রাণ পৌঁছনোর কাজ-"...scarcely seems justified..." (3)। শ্রীলঙ্কা ও মধ্য প্রাচ্যের জন্য প্রতি মাসে ৭৫০০০ টন গমের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির জন্য অস্ট্রেলিয় গমের স্টক তৈরী করা হচ্ছে, যদিও সে গম কবে কাজে লাগবে তার কোনো ঠিকঠিকানা নেই, কেননা পূর্ব ইউরোপ তখনো জার্মানি-অধিকৃত। ওয়ার ক্যাবিনেট বলছে, ভারতের জন্য বড়জোর এক লক্ষ টন ইরাকী বার্লির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সামান্য পরিমাণ গম (৫০,০০০ টন) আসলেও আসতে পারে; চাল তো নৈব নৈব চ। যদিও ১৯৪৩ সালে দেড় লক্ষ টন চাল মিশর থেকে পাওয়া গিয়েছিল, যার অধিকাংশই শ্রীলঙ্কায় রপ্তানী হয়। অজানা সূত্র থেকে পাওয়া আরো ১,৩০,০০০ টন চাল গ্রেট ব্রিটেন স্বয়ং আমদানী করে। (4)

    কাজেই চাল যখন বিশ্বের 'কোথাও নেই', তখন ব্রিটিশ সরকারের আর কী করার থাকতে পারে ক্ষুধার্ত বাঙালীদের জন্য- 'ভাত ছাড়া যাদের রোচে না, গম যারা সহ্যই করতে পারে না; তাছাড়াও গম থেকে রুটি বানানোর কায়দাও যারা জানে না'! নিজদোষে বাঙালীর আজ এই অব্স্থা; ব্রিটিশ শুধু বদনামের ভাগী হয় !

    যদিও নিন্দুকে বলে বাঙালী গম খায় না, তার কারণ রুটি/লুচি তাদের কাছে বিলাসিতা। রুটি তারা খেতেই পারে, যদি যথেষ্ট সংখ্যক গম পেষাই কলের বন্দোবস্ত করে দেওয়া হয়। আর অস্ট্রেলীয় গম আনলে সেটা এক্ষেত্রে কোনো সমস্যাই নয়, কেননা অস্ট্রেলিয়া জাহাজবোঝাই গম পাঠায় দানা হিসেবে নয়, আটা/ময়দার আকারে-যা থেকে রুটি তৈরী করা কোনো ব্যাপারই নয়।

    আর হজমের কথা বলতে গেলে আরো অনেক কথা আসে। দীর্ঘকাল অনাহারক্লিষ্ট থাকলে মানুষের পৌষ্টিক তন্ত্রের বারোটা বেজে যায়-সেক্ষেত্রে সে গম কেন, কোনো শক্ত খাবারই হজম করতে পারে না-এমন কি ভাতও না। সে অবস্থায় শক্ত খাবার খাওয়া মানেই সাক্ষাৎ মৃত্যু। কিন্তু তারও ব্যবস্থা ছিল। প্রশাসক ওলাফ মার্টিন তাঁর ক্যাম্পে অনাথ শিশুদের খাওয়াতেন ময়দা/আটা, গুড় আর মাখনের মিশ্রণ জ্বাল দিয়ে সুস্বাদু পরিজ বানিয়ে। বাচ্চারা তা দিব্যি খেত, সহজেই হজম করত, দিন দশেকের মধ্যে ভাত-ডাল -তরকারী খাওয়ার অবস্থাতেও পৌঁছে যেত। (5)

    চাল না জুটুক, গম পাঠালেও 'ভাত-খেকো' বাঙালীর তা কাজে আসত; কেননা গমের অভাবে পশ্চিমা সৈন্যদেরও ভাত খাওয়াতে হচ্ছিল-আর সেই ভাত আসছিল ভুখা বাঙালীর মুখের গ্রাস কেড়ে। যথেষ্ট গম বাংলায় পৌঁছলে তার সমপরিমাণ চাল অন্ততঃ বেঁচে যেত-গ্রামের মানুষদের কাছে বিলি-বন্দেজ করার একটা সুযোগ থাকত; করা হত কিনা, সে অবশ্য অন্য প্রশ্ন।

    'বিপ্লবী' পত্রিকার পাঁচই অগাস্ট সংখ্যায় রিপোর্ট বেরোলো-পরিবারকে খাওয়াতে না পেরে এক মুসলমান তাঁতী ঘর ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে।তার বৌ সন্দেহ করে সে কাঁসাইয়ের জলে ডুবে মরেছে। বুভুক্ষু বাচ্চাদের কান্না সইতে না পেরে সে-ও ছোটটাকে ভরানদীতে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। বড়টাকে ছুঁড়তে গেলে সে কাঁদতে কাঁদতে মাকে জড়িয়ে ধরে; অগত্যা অনাহারক্লিষ্ট হাতে কবর খুঁড়ে বাচ্চাটিকে মা সেই কবরে মাটিচাপা দিতে চেষ্টা করে; বাচ্চার কান্না শুনে এক পথচারী এসে তাকে বাঁচায়। জনৈক কাগমারা এসে বাচ্চাটির ভার নেয়। মা'র কী হল কেউ জানে না। সম্ভবতঃ সেও কাঁসাইয়ের বুকে শেষ আশ্রয় নিয়েছে।

    এবং এটা যে কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, সে কথা কাউকে বলে দেওয়ার দরকার নেই।ক্ষিদের জ্বালায় পরিবার-পরিজন-স্ত্রী-সন্তানকে খুন করা ও শেষে নিজেও আত্মহত্যা করা নিত্যকার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অনেকে সংসার ফেলে রেখে উধাও হয়ে যাচ্ছিল। একলা মাঠে একা বাচ্চা ঘুরে বেড়াচ্ছে, কিংবা মৃত সন্তান কোলে নিয়ে মা বুভুক্ষুর মত ক্যাম্পের খাবার খাচ্ছে- এও একদিন লোকের গা-সওয়া হয়ে গিয়েছিল।বাংলা চলচ্চিত্রের এক অভিনেত্রী (?কাননদেবী) বর্ণনা দিয়েছিলেন- তাঁর পরিচারিকার কাছ থেকে এক কঙ্কালসার মহিলা এসে একদিন পাত্র ভরে ফ্যান নিয়ে যায়। ফ্যানের গন্ধ পেয়ে মহিলার চারটি হাড়-জিরজিরে বাচ্চাও সাথে সাথে ছুটে আসে; কিন্তু সন্তানদের নির্দয়ভাবে মেরে তাড়িয়ে দিয়ে মা এক চুমুকে যতটা পারে ফ্যান শেষ করে দেয়; তারপর হঠাৎই শিউরে উঠে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে (6)। মার্কিন কনসাল জেনারেল ফরিদপুর ঘুরে এসে রিপোর্ট করেন- একজন মানুষ কুকুরের মত চেটে চেটে ফ্যান খাচ্ছে...আরেকজন খাবারের খোঁজে এসে কালেক্টরের ঘরের দরজার সামনেই পড়ে গিয়ে তৎক্ষণাৎ মারা যায়। মৃতদেহ যখন সরিয়ে নেওয়া হচ্ছিল, এক কোণে জবুথবু হয়ে বসে থাকা এক মহিলা একটি পুঁটলি ছুঁড়ে দিয়ে নিস্পৃহ গলায় বলে-'এটাও নিয়ে যাও'। পুঁটলি খুলে দেখা যায়, তার মধ্যে রয়েছে তার শিশুর লাশ ! (৭)

    মহিষাদলের কালিকাকুণ্ডু গ্রামের জনৈক গৌরহরি মাঝির বয়স তখন আট; পরবর্তীকালে মধুশ্র্রী মুখার্জীর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে জানিয়েছেন-মাসের পর মাস তাঁরা কচুডাঁটা-লতাপাতাসেদ্ধ-তেঁতুল পাতা-কষ্‌টা কলাইগাছ (অন্য সময় যা গরুকে খাওয়ানো হত) সেদ্ধ করে খেয়েছেন। দূর্বা ঘাসের খুদে খুদে বীজ খুঁড়ে খুঁড়ে খেতেন নিরন্ন মানুষেরা-"মাঠে একটাও দুব্বো ঘাসের পাতা বাকি ছিলনি" (8)।মহিষাদলের এক স্কুল মাস্টার দেখেছিলেন-একজন ভিখারী মরে পড়ে আছে, আর তার উদরাময়ের মল থেকে অজীর্ন ভাতের দানা খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে অভুক্ত বাচ্চারা।

    'মানবিকতা' শব্দটা একধরণের তেতো হাসির জিনিষ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। গেঁওখালি (মহিষাদল) থেকে জনৈক ব্যক্তি জানান-একজন ভিখিরি দোকানে রাখা কলাইয়ের বস্তা থেকে একমুঠো কলাই তুলে নিয়ে মুখে পোরে; তাই দেখে দোকানী তাকে এক ঘুষি মারে, মানুষটি তক্ষুনি সেখানে পড়ে মারা যায় (9)।অনাহারক্লিষ্ট শরীরটি একটি ঘুষির আঘাতও সহ্য করতে পারে নি; চড়-থাপ্পড় খেয়েও লোকে তখন মারা যেত। ১০ই অক্টোবরের 'বিপ্লবী' রিপোর্ট করে একজন ভুখা মানুষ রেল লাইনে ছড়িয়ে পড়ে থাকা শস্যদানা তুলে তুলে খাচ্ছিল; তাই দেখে রেল পুলিশের লোকেরা তার দিকে পাথর ছুঁড়তে শুরু করে। পালাতে গিয়ে লোকটি খালে পড়ে গিয়ে মারা যায়। ফরিদপুরের জেলা জজ এফ এ করিম জেলা পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখেন রাস্তায় একজন বৃদ্ধ অচৈতন্য হয়ে পড়ে আছে, তার চোখদুটি ঘোলাটে-আসলে সে মারা যাচ্ছে। আর চার পাশে জড়ো হওয়া জনতা খুব হাসছে, আমোদ করছে, চেঁচাচ্ছে-"বুইড়াডা মরত্যাসে! দ্যাহেন দ্যাহেন, বুইড়াডা মরত্যাসে !" (10)

    মৃতদেহ সৎকার করা ছিল আর এক যন্ত্রণা। বিশেষ করে হিন্দুদের শব। মড়া পোড়ানোর মত যথেষ্ট জ্বালানীর অভাব সর্বত্র। অনেক সময়েই মৃতদেহ স্রেফ নদী কিংবা খালের জলে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হত। ফ্রেন্ডস অ্যাম্বুলেন্স ইউনিটের একজন কর্মী বিবরণ দিয়েছেন-"... আপনি কাঁথি থেকে পানিপিয়া অবধি ক্যানালের ধার ধরে হেঁটে যেতে পারবেন না, গন্ধে গা গুলিয়ে উঠবে; রাশি রাশি পেটফোলা লাশ ক্যানালের জলে ভাসছে।" (11) আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানাবেন-মুমূর্ষু শিশুদের চারপাশ ঘিরে শেয়াল-কুকুর-শকুন ভীড় করে আসছে ; অনেক সময়ই তারা শিশুটি মরে-যাওয়া অবধি অপেক্ষা করে না। গ্রামের সাধারণ নেড়ি কুকুর গুলিই ভয়ানক হয়ে উঠেছে; এরা দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায়, সুযোগ পেলেই বাচ্চা ছিনিয়ে নেয়, দুর্বল মানুষকে মরবার আগেই কামড়াকামড়ি শুরু করে দেয়। (12)

    অনেক পরিবারই সন্তান বিক্রি করতে শুরু করল। কিন্তু ঐ আকালে সন্তান আর কে কেনে ! নারীশরীরের ক্রেতার অবশ্য অভাব ছিল না।শরীর বেচা দুভাবে চলছিল। গ্রামের অনেক বাড়িতে মা-মেয়ে-বৌয়েরা বাড়ি বসেই দেহবিক্রি করে চাল কিনত; তাই দিয়ে পরিবারের ক্ষুন্নিবৃত্তি হত। অনেক মেয়ে আবার গ্রাম থেকে চালান হয়ে যাচ্ছিল কলকাতা ও অন্যান্য বড় শহরের পতিতাপল্লীতে; সেখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে সৈন্যরা আর যুদ্ধের মুনাফাখোররা। জাপানীদের মত ব্রিটিশদের জোরজবরদস্তি করে যৌনদাসী সংগ্রহ করতে হয় নি; আকালের দেশে তারা পালে পালে আপনিই এসে ধরা দিচ্ছিল। আর্মি ক্যান্টনমেন্টগুলিতে সরকারীভাবে স্বীকৃত পতিতাপল্লী খোলা হচ্ছিল ।(১৩)

    গ্রাম পুড়লে শহরও এড়ায় না। কলকাতাতেও লাশের স্তূপ তৈরী হতে লাগল। তপন রায়চৌধুরী লিখেছেন-" রাস্তায় বের হলেই মৃত মানুষ পড়ে আছে দেখা নিত্যকার ঘটনা হয়ে দাঁড়াল। এরকম কতজন মৃত বা অর্ধমৃত মানুষ দেখেছি যদি জিজ্ঞেস করেন তো সঠিক উত্তর দিতে পারব না। তবে তার সংখ্যা ছ'-সাত সপ্তাহে পাঁচ-ছ' হাজারের কম হবে মনে হয় না। দুঃস্থ মানুষের ভিড় সবচেয়ে বেশী দেখা যেত চৌরঙ্গি অঞ্চলে। তখন বিদেশী সৈন্যের ভিড়ে কলকাতা শহর সরগরম । ঐসব অল্পবয়সি ছেলেরা বোধ হয় ভিক্ষে দেওয়ার ব্যাপারে মুক্তহস্ত ছিল। কিন্তু পয়সা দিয়ে কী হবে? বাজারে চাল কোথায়?" (14)

    এইসব মানুষ নামধারী প্রাণীরা কলকাতার রাস্তাঘাটে-অলিগলিতে ঘুরে বেড়াতে লাগলঃ মাংস-চর্বিহীন কঙ্কালসার দেহ, পাগুলো আর পেটটা শুধু ফোলা, চোখে পিঁচুটি, সর্বাঙ্গে ঘা-চুলকানি দাদ-হাজা,অসাড়ে পায়খানা করে দিচ্ছে, কোনমতে একটা শতচ্ছিন্ন নোংরা ন্যাকড়া গায়ে জড়ানো,গা থেকে অদ্ভুত বিশ্রী গন্ধ বেরোচ্ছে, গায়ের লোমগুলি আলপিনের মত খাড়া (অনাহারে মৃত্যুর অন্তিম লক্ষণ), মুখে সেই ভয়ংকর আর্তি-"ফ্যান দাও!" সেই আর্তনাদ কানে শোনা যেত না, এতই মর্মান্তিক; মধ্যবিত্ত গেরস্তরা ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে খেতে বসত।

    অনাহার সয়েও যারা বেঁচে থাকত, তাদের মারত ম্যালেরিয়া, কলেরা আর গুটি বসন্ত (small pox) এক ধরণের উদরাময় চালু হয় ভুখা মানুষদের মধ্যে, যার নাম দেওয়া হয়েছিল 'ফ্যামিন ডায়োরিয়া।' এই ডায়োরিয়া সারানো ছিল অত্যন্ত কঠিন।শারীরিক সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় মানসিক রোগ। সার্জন-জেনারেলের অফিস থেকে ভুখা মানুষের মানসিক অসুস্থতা নিয়ে একটি রিপোর্ট বের হয়- এরা শিশুর মত আচরণ করে, হাসপাতালের খাবার-আর স্বাচ্ছ্যন্দ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়, পালিয়ে গিয়ে অন্যত্র খাবারের খোঁজ কর, হাতের সামনে খাবার রাখা থাকলেও 'খাবার দাও', 'খাবার দাও' বলে চীৎকার করে, না খেয়ে কাঁদে, সারাক্ষণ বিরক্ত,উত্তেজিত, সারাক্ষণ ঘ্যানঘ্যান করছে, অসম্ভব নোংরা; এরা যেন ঠিক মানুষ নয়, মনুষ্যেতর কোনো জীব, "....the nadir of human misery and the epitome of famine".(15)

    তা সত্ত্বেও কলকাতার মোচ্ছবে কিছুমাত্র ভাটা পড়ে নি। সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষদের কৃচ্ছসাধন করতে হয়েছে বটে, কিন্তু তারা কেউ না- খেয়ে মরে নি। আর একবার তপন রায়চৌধুরী'র কাছে ফেরত যাই-"..... '৪৩-এর কলকাতা রীতিমত 'বুম টাউন'। চৌরঙ্গি অঞ্চলের রাস্তায় নানা বর্ণের সৈন্যরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের হাতে প্রচুর কাঁচা পয়সা এবং তা তারা মুড়ি-মুড়কির মত খরচা করছে। নতুন নতুন রেস্তোরাঁ আর ক্যাবারে হয়েছে। শহরের অলিতে-গলিতে মাসাজ পার্লারেরও সমারোহ...কালোবাজারের কৃপায় অনেকের পকেটেই প্রচুর কাঁচা পয়সা। সে পয়সা নানা বিলাসব্যসনে খরচ করার উপায় শহর কলকাতায় অজস্র... কোনও রহস্যজনক কারণে চালের দাম হু-হু করে বাড়া সত্ত্বেও রেস্তোরায়ঁ খাবারের দাম প্রায় একই ছিল। এমনকী ফারপোর সেই বিখ্যাত তিন পদ লাঞ্চের দাম দুর্ভিক্ষ যখন চরমে তখনও মাত্র তিন টাকা।.... বাড়ির দরজার বাইরে মানুষ আক্ষরিক অর্থেই না খেতে পেয়ে তিলে তিলে শুকিয়ে মরছে, এবং তারা সংখ্যায় একজন-দু'জন না, বিশ-ত্রিশ লক্ষ, এই দৃশ্য দেখে বা এই তথ্য জেনে সাহেব বলুন, দেশী লোক বলুন, কারো্‌ই গলায় ভাত আটকে যায় নি। আমাদের গতানুগতিক জীবনযাত্রা তথা ফূর্তি-আমোদেও কোনো বাধা পড়ে নি(16)।" 'কইলকাত্তার বীভৎস মজা' অব্যহত।

    ফ্রেণ্ডস অ্যাম্বুলেন্স ইউনিটের কর্মী রিচার্ড ব্র্যানসন তাঁর সেসময়কার কলকাতাবাসের সবচেয়ে মর্মন্তুদ দুটি অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন- প্রথমটি এক পথকুকুর একটি শিশুর মুণ্ড মুখে নিয়ে রাস্তা দিয়ে দৌড়চ্ছে। অন্যটি হল-হাসিখুশী দেশী-বিদেশী সায়েব-মেমগণ ঝকঝকে সাদা ডিনার জ্যাকেট গায়ে দিয়ে ফারপো -তে ঢুকছে, এবং তারা আক্ষরিক অর্থেই অজস্র মরা-আধমরা দেহ মাড়িয়ে ঢুকছে। (17) সিনেমাটোগ্রাফার কমল বোস সেসময় বিমল রায়ের ইউনিটের সঙ্গে কলকাতার রাস্তাঘাটে দুর্ভিক্ষের ছবি তুলে বেড়াচ্ছিলেন। যে বর্ণনা তাঁরা দিয়েছেন, তা ভয়াবহ। একটা রুটির টুকরো রাস্তায় পড়ে থাকলেও তাই নিয়ে ভিখিরিদের মধ্যে মারপিট লেগে যেত। সেইসব রীল সরকারকে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল-সরকার তাই নিয়ে কী করে কেউ জানে না। সে ছবি আজ পর্যন্ত কোথাও প্রদর্শিত হয় নি। (18)

    ব্রিটিশ কমিউনিস্ট ক্লাইভ ব্র্যানসন ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে লড়বার জন্য ব্রিটিশ ফৌজে নাম লিখিয়েছিলেন। তাঁর পোস্টিং হয় ভারতে। ভারত থেকে তিনি তাঁর স্ত্রী-কে চিঠি লিখছিলেন-'কলকাতায় বোমা পড়েছে শুনেছো নিশ্চয়! কিন্তু গোটা বাংলা জুড়ে যে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ চলছে, সেটা জানো কি?' ব্র্যানসন তখন ছুটিতে বম্বে এসেছেন। যে হোটেলে তিনি থাকেন, সেখানকার বন্দোবস্ত এলাহি। ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার সবেতেই ফাইভ কোর্স মিল পরিবেশন করা হয়। এদিকে খবরের কাগজ পড়ে ব্র্যানসন বিষণ্ন হয়ে যান;স্ত্রী-কে লেখেন-'ভয় হচ্ছে, আবার হয়তো আমাদের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার কাজে লাগানো হবে। তা বলে অবশ্য ভেবো না আমরা ফাটকাবাজ, জমিদার আর সরকারী অফিসারদের গুলি করে মারবো; আমাদের কাজ হবে খিদের জ্বালায় উন্মত্ত মানুষদের সামলানো।'
    ব্র্যানসনেরই এক সহকর্মী অবশ্য বাগান থেকে লেটুস পাতা চুরি করার অপরাধে জনৈক ভারতীয়কে গুলি চালিয়ে জখম করেন। সার্জেন্ট মেজর দুঃখ করে বলেন-'এঃ, বেজন্মাটা বেঁচে গেল! ৪০ কোটি লোকের মধ্যে একটা মরলে কী ক্ষতি হত! ব্লাডি ইন্ডিয়ানগুলোকে ধরো আর গুলি করে মারো।' (19)

    অক্টোবর মাসে বাংলায় পোস্টিং দেওয়া হয় ব্র্যানসনকে। ট্রেনে করে ভারতের বিস্তীর্ণ প্রান্তর-চাষের ক্ষেত-ছোট ছোট রেল স্টেশন দেখতে দেখতে মুগ্ধ হয়ে যান ব্র্যানসন। কিন্তু বাংলার সীমানার মধ্যে ট্রেন ঢুকতেই দৃশ্য বদলে যায় পুরোপুরি। ট্রেনের সমান্তরালে চলতে থাকে ভুখা মানুষের এক অন্তহীন সারি। ব্র্যানসন লিখছেন- "যখনই ট্রেন থামে, বাচ্চাদের দল মাছির ঝাঁকের মত ট্রেনের জানলার কাছে ভিড় করে আসে-ফাটা রেকর্ডের মত একঘেয়ে সুরে বলতে থাকে-বখশিস, সাহেব ! বাকিরা মাটিতে বসে অপেক্ষা করে।মেয়েদের দেখি-অস্থিচর্মসার, গায়ের কাপড় ধূলিধূসর, অভিব্যক্তিহীন মুখ; তারা যেন হাঁটছে না, এক পা দিয়ে অন্য পায়ের ভারসাম্য বজায় রাখছে শুধু-কোথায় যাবে, জানে না।কলকাতার যত কাছে এগো্‌ই,ছোট ছোট ন্যাংটো বাচ্চাদের ভিড় বাড়ে।কাঠির মত পা, পেটটা ফোলা-তারা আমাদের দিকে খালি টিন এগিয়ে ধরে। হাজার হলেও-বাচ্চা তো-ওরা হাসে, আমাদের দেখে হাত নাড়ে। ওদের পেছনে ধানক্ষেতের আভাস দেখতে পাওয়া যায়। নতুন ধানের সবুজ রং, যেন পিশাচের হাসি হাসছে।" (20)

    ব্র্যানসনেরই মত আর এক সৈনিক উইলিয়ামস বার্নস তাঁর ডায়েরিতে লিখেছেন-' চট্টগ্রামে আমার ক্যাম্পের বাইরে অজস্র পাঁচ থেকে দশ বছরের নিরাশ্রয় শিশু ভয়ানক কাশে আর করুণ সুরে কাঁদে। ভোর তিনটে থেকে চারটের মধ্যে খোলা আকাশের তলায় দাঁড়িয়ে তারা অবিরল বর্ষায় সমানে ভিজতে থাকে। ওদের কারো গায়ে একটা সুতো অবধি নেই। ওদের মা নেই, বাবা নেই, ঘরসংসার -বন্ধুবান্ধব কেউ নেই। থাকার মধ্যে আছে শুধু একটা খালি টিন, ওটাতে টুকরোটাকরা খাবার যা পায় কুড়িয়েবাড়িয়ে রাখে। ' (21)

    ১৯৪৩-এর ১৫ই নভেম্বর হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড পূর্ববঙ্গের ইসলামপুরের একটি ঘটনা বের করে- অজানা সূত্রে খবর পেয়ে তিনজন খ্রীষ্টান সন্ন্যাসিনী একটি স্থানীয় গোয়ালে গিয়ে দেখেন অন্ধকারের মধ্যে নোংরা মেঝেতে জনা কুড়ি বাচ্চা শুয়ে আছে। কেউ ক্ষিদেয় কাঁদছে, কেউ টেনে টেনে শ্বাস নিচ্ছে, বাকিরা এত ক্লান্ত ও দুর্বল যে টুঁ শব্দটুকু করতে পারছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেল এদের মায়েরা সব শহরে ভিক্ষে করতে বেড়িয়েছে-এতটা পথ বাচ্চাদের বয়ে নিয়ে যাওয়া-আসা করা তাদের ভুখা শরীরে আর সম্ভব নয় বলে বাচ্চাদের এখানেই রেখে গেছে। এদের মধ্যে অনেকেরই মা ফিরে এসে তার বাচ্চাকে আর জীবিত দেখতে পাবে না(22)। গীতা মুখার্জি তাঁর লঙ্গরখানা চালানোর এক মর্মান্তিক অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন। লাইনের পেছনদিকে দাঁড়ানো এক মা বারবার লাইন ভেঙে বেরিয়ে আসছিল, হল্লা করছিল-'আমার বাচ্চাকে দুধ দাও, এখুনি দাও'-বলে। কিন্তু লাইনের সামনের লোকেরাও ছাড়নেওয়ালা নয়। গীতা যখন লাইনের শেষে সেই মায়ের কাছে গিয়ে পৌঁছলেন, তখন সে শান্ত গলায় বলল-'আর দুধ লাগবে না।' তার বাচ্চাটি ততক্ষণে মারা গিয়েছে। তপন রায়চৌধুরী বর্ণনা করেছেন, ঝোঁকের মাথায় সমাজসেবা করতে নেমে কিভাবে তাঁরা অনভিজ্ঞতার মাসুল দিয়েছেন। বহুদিনের অভুক্ত মানুষকে পেট পুরে ভাত-ডাল খাইয়ে দিয়েছেন। পরের বেলাতেই সে মানুষ মারা গিয়েছে। আই সি এস অশোক মিত্রের জবানী আবার কিছুটা ভিন্ন। দুর্ভিক্ষের সময় তিনি মুন্সিগঞ্জে ত্রাণের কাজ দেখাশুনো করতেন। কলকাতা থেকে যা চাল আসে, তা আধপচা, কাঁকড়ে ভর্তি। তাই দিয়েই লঙ্গরখানা খোলা হল। প্রথমদিকে গলা ভাত, ফ্যান দেওয়া হত। পরের দিকে চাল, মুসুর ডাল, সামান্য আলু, নুন-হলুদ-তেজপাতা-অল্প তেল দিয়ে খিচুড়ি বানিয়ে খাওয়ানো হতে লাগলো। বুভুক্ষু মানুষদের আনন্দ দেখে কে ! সব হামলে পড়ে খিচুড়ি খেতে লাগল। এত আনন্দ করে খেত যে বেশী খেয়ে ফেলার জন্য বকতে গিয়েও ওঁর মায়া হত। এমনিতেও মানুষগুলো অনাহারের শেষ সীমায় পৌঁছে গেছিল; তাদের মৃত্যু ঠেকানোর কোনো উপায় ছিল না। মরার আগে অন্ততঃ তারা একবেলা পেটপুরে সুস্বাদু খাবার খেতে পেরেছিল-এটুকুই ছিল মিত্র'র সান্তনা। (23)

    বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্সের প্রধানের স্ত্রী শীলা চ্যাপম্যান -মর্টিমার বর্ণনা দিয়েছেন-গভর্নর হাউজের (অধুনা রাজভবন) পাশ দিয়ে তিনি যখন গাড়ি করে যাচ্ছিলেন, তখন দেখতে পান ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অহ্ঙ্কার, গ্রেকো-রোমান স্থাপত্যে তৈরী সাদা মার্বেলে মোড়া এই সুরম্য প্রাসাদের এক কিলোমিটার ব্যাপী পরিধির গোটাটা জুড়ে পড়ে রয়েছে মরা-আধমরা কালো কালো মানুষের সারি। যেন এম্পায়ারের আসন্ন বিদায়ের কথা জানতে পেরে ভগবান অথবা শয়তান ব্রিটিশ রাজকে শেষ অভিনন্দন (বা শেষ বিদায়) জানাচ্ছে মৃত মানুষের এক দীর্ঘ,অতি দীর্ঘ মালা সাজিয়ে। এ কিরকম সমাপতন, যে ব্রিটিশ শাসনের সূচনার তিন বছরের মধ্যেই শুরু হবে বাংলার ভয়াবহতম দুর্ভিক্ষ; এবং আর এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের বছর তিনেক কাটতে না কাটতেই ইন্ডিয়া গেট দিয়ে বিউগল বাজিয়ে দেশে ফিরে যাবে ব্রিটিশ সৈন্যে ভরা শেষ ব্রিটিশ জাহাজটি !

    Notes
    1.Janam Mukherjee, p. 120
    2.Ibid,p.118
    3.Madhushree Mukherjee, p. 146 (Cherwell Papers, H290/1,2)
    4.Ibid, p.150
    5.Ibid, p. 151
    6.Ibid, p. 158
    7.Janam Mukherjee, p.131
    8.Madhushree Mukherjee, p. 159
    9.Ibid, p. 168
    10.Janam Mukherjee, p. 134
    11.Ibid, p. 131 (K. C. Ghosh, p.90)
    12.Madhushree Mukherjee, p. 172
    13.Ibid, p.163
    14.তপন রায়চৌধুরী, পৃ ১২৬-২৭
    15.Janam Mukherjee, p. 130
    16.তপন রায়চৌধুরী, পৃ ১২৭-২৮
    17.http://gypsyscholar.com/31620historiceventsfaminet.html
    18.Rinki Bhattacharya: “Bimal Roy – A Man of Silence” New Delhi: Indus, 1994, p. 40-41
    19.Madhushree Mukherjee, p. 173
    20.Ibid, p.174 (Branson, British Soldier in India, p.101)
    21.Ibid, p. 191 ( CSAC, William Barnes Papers, Box 8, Diary,p.125)
    22.Ibid, p.192
    23.Ibid, p.195 (অশোক মিত্র, তিন কুড়ি দশ, পৃ ১৬১-৬৩)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ | ৫৭৩৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • Ishan | ***:*** | ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৬:২০65279
  • হ্যাঁ, বিহারে দাঙ্গা হয়েছিল কিছু। আর ব্যোমকেশের বৌ বাচ্চা পাটনা গিয়েছিল। অতএব বাংলার দাঙ্গা বিষয়ে শরদিন্দুর সাক্ষ্য পাওয়া যাবেনা। কলকাতা, নোয়াখালি, কিছুটা বরিশাল ছাড়া আর কোথাও দাঙ্গার খবর পাওয়া যায় কিনা দেখছি। সময় লাগবে একটু।
  • aranya | ***:*** | ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৬:৪৭65280
  • 'গান্ধী-টাটা-বিড়লা-গোয়েঙ্কা-নেহরু-প্যাটেল-নলিনী সরকার -- এই ক্লিকের শক্তির উৎস কী?
    - এটা জরুরী প্রশ্ন। পার্টিশনের পিছনে কি কোন গোষ্ঠীর ব্যবসায়িক স্বার্থ ছিল?
  • Du | ***:*** | ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৮:০০65281
  • আলোচনা ভালো হচ্ছে কিন্তু মূল লেখার পরের পর্বটা আশাকরি আসছে যথাসময়ে।
  • aranya | ***:*** | ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ ১০:০৩65282
  • 'গ্রাফিক' সতর্কবার্তা থাকায় এড়িয়ে যাচ্ছিলাম, এতদিনে এই পর্ব-টা পড়লাম।

    কী ভয়াবহ
  • | ***:*** | ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ ১২:৪৩65277
  • সত্যব্তী আর খোকা সুকুমারের সঙ্গে পশ্চিমে বেড়াতে গিয়েছিলো।কোলকাতায় দাঙ্গা শুরু হওয়ায় ব্যোমকেশ 'তার' করে তাদের কোলকাতায় ফিরতে বারণ করায় ''তদবধি তাহারা পাটনায় আছে''

    (আদিম রিপু)
  • | ***:*** | ২১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৫৯65283
  • আমি বীরভূমে প্র‍্যাকটিকালি দাঙ্গা র রেফারেন্স পাইনি, কিন্তু আমি এটাও দেখছি বীরভূম সম্পর্কে ও আমি খুব আস্তে আস্তে জানছি বেশি টাই জানতাম না। ঠিকাছে এটা খুঁজছি।
  • lcm | ***:*** | ২৯ মার্চ ২০১৯ ০৭:৩২65285
  • বেঙ্গল ফেমিন '৪৩ এর -- ছবি এঁকেছিলেন কয়কেজন ---

    চিত্তপ্রসাদ ভট্টাচার্য - স্কেচ ---











    জয়নাল আবেদিন - স্কেচ









  • Kavitha | 2405:204:203:7db:9e6:b6a4:33ea:***:*** | ২২ নভেম্বর ২০২১ ০৩:৩১501373
  • You have done commendable job in putting together the bits of infamous Bengal famine into consolidated piece of research work. Until now. I had read things in the books of history only but it gave only a limited sense of how the famine looked like but, this is the most elaborate, credible piece of work and the use of words make the crisis first hand account of witnessing something. Communication of Clive Branson used, lend the entire work all the more credibility. I write articles at career101.in on different verticals of career opportunities and will surely make this “British made infamous crisis” as part of general studies posts.

  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন