এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • পঞ্চায়েত ২০১৩,মুর্শিদাবাদ,ঘুরে দেখা

    কালপুরুষ লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৭ জুলাই ২০১৩ | ৫৭৫ বার পঠিত

  • পঞ্চায়েত ভোট দেখতে এবার মুর্শিদাবাদে।সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলা।দারিদ্র আর সচেতনতার অভাবের ছাপ সর্বত্র।ত্রিস্তরীয় নির্বাচন।পঞ্চমুখী প্রতিদ্বন্দিতা হবার সম্ভবনা প্রবল।বামফ্রন্ট,কংগ্রেস,তৃণমূল,বিজেপি আর এসডিপিআই এর মত কিছু সংখ্যালঘু দল।পিডিএস আর এসইউসি’র মত কিছু দলের নিজস্ব ভোট ব্যাঙ্ক আছে।তবে সামগ্রিক প্রভাবের দিক থেকে পিছিয়ে।গত কয়েকটি নির্বাচন থেকেই বিজেপি’র নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে।পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সংখ্যালঘু ভোটের একমুখী মেরুকরণ।এর দায়,মূল ধারার প্রাতিষ্ঠানিক রাজনৈতিক দলগুলোর।
    এবার ভোটে কংগ্রেসের পাল্লা ভারী।বামফ্রন্ট সেকেন্ড হবে।তবে হিসেব উলটে দিতে পারে তৃণমূল।বেশকিছু জায়গাতে বিজেপি আর সংখ্যালঘু দলগুলির মেরুকরণের ভোট নির্ণায়ক হয়ে দাঁড়াবে।তবে ভোটের হিসেব নিকেশে আমার উৎসাহ নেই।মুর্শিদাবাদের সাধারণ মানুষ কি ভাবছে ভোট নিয়ে সেটাই দেখার।

    জঙ্গীপুর
    ---------
    ভ্যানে করে যাচ্ছিলাম।ভ্যান চালক মফিজ সেখ,বয়স বছর পঞ্চাশ।পোশাক ও চেহারাতে দারিদ্রের ছাপ স্পষ্ট।টুকটাক কথা হচ্ছিল।জিজ্ঞেস করলাম,
    “দাদা,বিপিএল আছে?”
    জবাব এল, “নাই”।
    “আপনার চাষের জমি আছে?বা অন্য ব্যবসা?”
    “না।শুধু ভ্যান চালাই”
    “তাহলে বিপিএল নেই ক্যানো?”
    “নাম উঠেনি।কি করব বুলেন?সবই কপাল”
    “মেম্বার কে বলেন নি?”
    “মেম্বারের বাড়ি আমার পাশে।সবই জানে।করে দেয় না”
    “আপনার মত আপনার গ্রামে কজন আছেন?”
    “আছে অনেক।ভোটের আগে বুলে যে করে দিব,আর ভোটের পর চিনতে পারেনা”
    জঙ্গীপুরে ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রনব মুখার্জী ক্যান্ডিডেট ছিলেন।তার সুবাদে প্রচুর ব্যাঙ্ক হয়েছে।কিন্তু গ্রামের রাস্তা দূর অস্ত,ওমরপুর মোড় থেকে মিয়াপুর অব্দি রাস্তাটাই ঠিক হয়নি।দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে ওভার ব্রিজের কাজ চলছে।সোণাটিকুরীতে প্রণববাবুর প্রাসাদ এর মত বাড়ি রয়েছে।নিন্দুকেরা বলে সে বাড়ি নাকি  স্থানীয় বিড়ি ব্যবসায়ী’র করে দেওয়া যাকে তিনি প্রায় ৫০% সাবসিডি দিয়ে লোন দিয়েছিলেন।গিরিয়া-সেকেন্দ্রা তে ভোট হয়না।আগে সিপিএম এর মাস্তান ছিলেন ইলিয়াস।মৃগাঙ্ক চক্রবর্তী’র ডানহাত।তখন এক চেটিয়া তারাই ভোট পেত।তারপর ইলিয়াস পালটি খেয়ে কংগ্রেসে।এখন গিরিয়া-সেকেন্দ্রাতে একতরফা কংগ্রেস ভোট পায়।প্রণবপুত্র গত লোকসভা ভোটে এই গিরিয়া-সেকেন্দ্রা’র সুবাদেই জিতেছিলেন।
    হিরা বেওয়া,মাঝবয়সিনী।স্বনির্ভর গোষ্ঠী’র সাথে যুক্ত।স্কুলে মিড ডে মিলের রান্না করেন।
    “ভোট দেবেন কাকে?”
    “হাতে ব্যাটা”
    “কংগ্রেস না সিপিএম?”
    “তাতো জানিনা ব্যাটা।আমরা হাতেই ভোট দিই”
    “আহা,জানতে চাইছি যে আপনাদের দলের হয়ে ভোটে কে দাঁড়িয়েছে?”
    “সফিকুল”
    “সফিকুল ক্যামন ছেলে?প্রার্থী হিসেবে ভালো?”
    “তাতো জানিনা ব্যাটা”
    রওনা দিলাম আবার।রাস্তায় মধু মাঝি’র সাথে দেখা।তার স্ত্রী গতবারের গ্রাম পঞ্চায়েত মেম্বার।সেটা খাতায় কলমে।আসল কাজ কর্ম মধু মাঝি’ই করেন।এবার টিকিট পান নি।পঞ্চায়েত সমিতি’তে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন।দলের অনুমতি পান নি।চাপা ক্ষোভের সাথে দলের নিন্দে করলেন।মধু মাঝি’র ঘর বাড়ি দেখে মনে হল লোকটি রাজনীতি করে হয় কামাতে পারেন নি অথবা কামাতে চান নি।
    নফিজ সেখ।নির্দল দাঁড়িয়েছেন।প্রতীক নৌকো।কংগ্রেসের হয়ে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন।দল টিকিট দেয় নি।সেই দুঃখে দল ছেড়ে নির্দল হয়েছেন।জিজ্ঞেস করলাম,
    “জিতলে কি করবেন?”
    “মেম্বার হব”
    “সে জানি।আপনার এলাকায় পানীয় জল,মানে খাওয়ার পানি কি সবাই পায়?কল কটা আছে?”
    “কল বোধহয় গোটা তিনেক আছে আমাদের পাড়ায়।হেঁদু পাড়ার খবর জানিনা”
    “আপনি ভোটে জিতলে কি আবার কংগ্রেসে যোগ দেবেন?”
    “যেখানে সম্মান পাবো,সেখানে যাবো”
    লোকমুখে জানা গেল সেখ সায়েব আদতে নির্দল হয়ে জিতে নিজের পদটাকে বিক্রি করতে চান।এখানে ত্রিশঙ্কু হওয়ার সম্ভবনা প্রবল।সেক্ষেত্রে তার অর্থনৈতিক লাভের সম্ভবনা আছে।

    দৌলতাবাদ থানা’র অধীনে একটি গ্রাম
    ------------------------------------
    আদিবাসী পাড়া।খানিক দূর দিয়ে লাল রাস্তা চলে গেছে।কোনো অজ্ঞাত কারণে এই পাড়াকে এড়িয়ে গেছে।ঠিক যেমন ছোঁয়াচে রোগীকে এড়িয়ে চলি আমরা।ইলেকট্রিক নেই।গোটা পাড়া ঘুরে একটা কল চোখে পড়ল।পুকুর আছে।সেখানেই লোকে চান করে,কাপড় কাচে আর রান্নার জল নেয়।শহুরে পোশাক দেখে পাড়ার মেয়েরা এড়িয়ে চলছিলেন।এক বৃদ্ধ কে ধরলাম।তিনি কথা বলতে রাজি হলেন।সিগারেট দিলাম।প্রত্যাখান করে বিড়ি ধরালেন।
    নাম লোটন মূর্মূ।বয়স আন্দাজ সত্তর।শুকনো চেহারা।
    “ভোট দেবেন?”
    মাথা নেড়ে জানালেন না।
    “ক্যানো?’
    “ক্যানে দিবো?সরকার কি করেছে আমাদের?আপনি তো দেখছেন আমাদের হাল।আমিও রোজ খাটতে যেতাম।আমার লাতি’ও রোজ খাটতে যায়।একধারে পড়ে আছি।কেউ দেখতেও আসেনা”
    উত্তেজিত হয়ে বৃদ্ধ মানুষটি কাশতে লাগলেন।থুথু ফেললেন।থুথুতে রক্তের ছোপ।আমি কথা বলতে নিষেধ করলাম।পাশের একটা ছেলে’কে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম,
    “এখানে হেলথ সেন্টার কোথায়?”
    “এখানে নাই”
    “অসুখ হলে কাকে দেখাও”
    ছেলেটা হাসলো।যেন বোকার মত প্রশ্ন করে ফেলেছি।
    খোঁজ নিয়ে জানলাম কাছেই এক হাতুড়ে ডাক্তার আছে।ছেলেটাকে সঙ্গে নিয়ে তার সাথে দেখা করলাম।ডাক্তারের পসার ভালো।অনুরোধ করলাম বৃদ্ধটিকে দেখার।আমার সামান্য জ্ঞান বলছিল উনি টিবি’র শিকার।

    ভগবানগোলা
    -------------
    সীমান্তবর্তী এলাকা।চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য।এই সব এলাকাতে পুলিস থানা “ডাক” বা নিলাম হয় মাফিয়াদের মধ্যে।গরু পাচার হয় স্ট্যাম্প মেরে।এলাকার একটা বিশাল সংখ্যক লোক বাইরে কাজ করতে যান।ইঁটভাটা আছে প্রচুর।পাল্লা দিয়ে আছে শিশুশ্রমিক।বাইরে কাজ করতে যাওয়ার নামে নারীপাচার চলে।তবে এলাকার কিছু লোকের হাতে টাকা আছে।এখানে লড়াই হয় ত্রিমুখী।এখানকার তৃণমূলের যিনি নেতা,বিধানসভা ভোটে হেরে তাঁর পুনর্বাসন হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের জেলা সভাপতি হিসেবে।এলাকায় কান পাতলে তাঁর বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ শোনা যায়।স্বজনপোষণ থেকে দুর্নীতি,সবই আছে।একটু খারাপ লাগলো।অনেক আগে,এই নেতার সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল।তখন সদ্য তৃণমূল তৈরী হয়েছে।উচ্চশিক্ষিত,মার্জিত রুচি’র সেই ভদ্রলোককে আমার বেশ ভালো লেগেছিল।ক্ষমতার অন্ধগলিতে নেমে তার যদি সত্যিই অবনমন হয়ে থাকে,তাহলে তা ভালো উদাহরণ নয়।এখানকার বড় সমস্যা হল ভাঙ্গন।বন্যার সময় আতঙ্ক ধরে যায়।ভাঙ্গন রোধে উল্লেখ্য সরকারী ভূমিকা চোখে পড়লোনা।আর প্রান্তিক এলাকায় সেভাবে পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি।স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাল ভালো নয়।তবে মানুষজন বেশ রাজনীতি সচেতন।তা তাদের সাথে কথা বললেই বোঝা যায়।

    জিয়াগঞ্জ
    ---------
    পুরোনো এলাকা।প্রাক্তন শাসকদলের দাপট বেশী।সর্বময় কর্তা পেশায় শিক্ষক।সর্বহারার নেতা’র বিএড,ডিএড আর পলিটেকনিক কলেজ আছে।আর্থিক দূর্নীতি’র অভিযোগ আছে।বিপিএল তালিকা আর দলতন্ত্র নিয়ে চাপা ক্ষোভ আছে।নেই শুধু শক্তিশালী বিরোধী পক্ষ।ক্ষমতায় পরিবর্তন হবার সম্ভবনা কম।

    ডোমকল
    --------
    উপদ্রুত এলাকা।ভোট এলেই খুন জখম শুরু হয়ে যায়।কুপিল্যা সমেত কিছু জায়গাতে বোমা তৈরী কুটির শিল্প হিসেবে পরিগণিত হয়।এলাকায় অশিক্ষা,বেকারত্ব প্রবল।তা নিয়ে নেতাদের মাথাব্যথা নেই।রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি মানুষের অন্ধ আনুগত্য আছে।সাগরপাড়া,জলঙ্গী’র দিকে উদ্বাস্তু মানুষের বাস।সেখানে বিজেপি’র ভোট ব্যাঙ্ক বাড়ছে।ইসলামপুর,ডোমকলে জায়গা খুঁজছে সংখ্যালঘু ধর্মভিত্তিক দলগুলো।অবাধে অস্ত্র আমদানি হচ্ছে।প্রশাসন নির্বিকার।পানীয় জলের সমস্যা আছে।আর্সেনিক দূষণ বেড়েই চলেছে।সব আছে,গণতন্ত্রের জয়পতাকা আছে,শুধু মানুষের জন্য ভাবনা নেই।
    এই আর্থিক বছরে ১০০ দিনের মধ্যে এ জেলার লোক কাজ পেয়েছেন ৩৮ দিন।জনসংখ্যা 7,103,807 জন।গড় সাক্ষরতা ৬৫।৫৯%।সেক্স রেশিও  প্রতি হাজার পুরুষে ৯৫৮ জন নারী।মোট জনসংখ্যার ৮০.২৮% ভাগ গ্রামে বাস করেন।জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২১.০৯%।২০১১ এর সেন্সাস অনুযায়ী তথ্যগুলো দিলাম।এই জেলা এমনিতেই পিছিয়ে পড়া জেলা হিসেবে স্বীকৃত।রাজ্যের ২০১২ সালের হিসেব অনুযায়ী বিপিএল ছিল ৫০% এর কাছাকাছি।আমার নিজের ধারণা সঠিক সংখ্যাটা এর থেকে বেশী হবে,প্রায় ৬০% ছুঁয়ে যাবে। অসংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিকদের সংখ্যা প্রচুর।তাদের পেশাগত নিরাপত্তা নেই।বিপিএল তালিকা নিয়েও প্রচুর অসংগতি আছে।বিড়ি শ্রমিকদের গণনার ক্ষেত্রে বাড়ির মেয়ে’দের স্বাস্থ্য সচেতনতার দিকে কোনো খেয়াল নেই।বসতি এলাকায় সঠিক পরিকাঠামো ছাড়াই গড়ে উঠেছে একাধিক প্লাস্টিক কারখানা।সাগরদিঘি থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে দূষিত ধোঁয়া মিশছে বাতাসে।দূষণ বাড়ছে।
    বিড়ি শ্রমিকদের ৭২% হলেন মহিলা।আমার মনে হয়না এর সাথে বাচ্চা মেয়েদের সংখ্যা যুক্ত হয়েছে,যারা এই কাজে যুক্ত থাকে।এই জেলাতে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ৪৮.৭%।এরা কাজ করে ইঁটভাটা,প্লাস্টিক কারখানা,গ্যারেজ আর জমিতে।জাবালা অ্যাকশন রিসার্চ অর্গানাইজেশনের দেওয়া তথ্য অনুসারে ৭৯% মেয়েদের ১৬ বছরের আগেই বিয়ে হয়।৮০% মেয়ে প্রাইমারি স্তরেই ড্রপ আউট হয়।১৪ বছরের নীচে বিড়ি কারখানাতে কর্মরত শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ৮৮০০০।আর ২০০১ অব্দি,পভার্টি লাইনের নীচে থাকা পরিবারের সংখ্যা ৬১%।জাবালা’র তথ্যগুলো ২০০১ অব্দি।আমার অভিজ্ঞতা বলছে আগের থেকে স্কুল ড্রপ আউটের  সংখ্যা কমেছে।কিন্তু শিশু শ্রমিকের সংখ্যা আর কম বয়সে বিয়ের সংখ্যা কমেনি।
    এ জেলার আরেক সমস্যা হল নারী পাচার।ধূলিয়ান,ঔরঙ্গাবাদ সমেত বিস্তীর্ণ এলাকা এই পাচারকারীদের মৃগয়াক্ষেত্র।এর প্রকোপ আগের থেকে কমলেও আশংকা জনক স্তরেই রয়ে গেছে।
    ২০১১ সালের জেলাওয়াড়ি তথ্যটা  আমার কাছে নেই।তাই বাধ্য হয়ে ট্রানসেন্ডজ বলে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা’র ডেটা ব্যবহার করছি।২০১২ সালের ডেটা।১৮ বছরের নীচে ৬৩% মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।১৫-১৯ বছরের মধ্যে গর্ভবতী হওয়ার হার ৩০-৪০%।স্ট্রীট সারভাইভরস ইন্ডিয়া বলছে মুর্শিদাবাদে ৪.২ মিলিয়ন মানুষ পভার্টি লাইনের নীচে বাস করেন।কর্মসংস্থানের অভাবে জেলার একটা বড় অংশের মানুষ বাইরের রাজ্যে কাজ করতে যান,এদের একটা বড় সংখ্যায় হলেন রাজমিস্ত্রি।নারীপাচার তো চলছেই।অনেক সময় পরিবারের লোকেরাই মেয়েদের দেহ ব্যবসায় নামতে বাইরে পাচার করে,এই তথ্যটা আরও ভয়ঙ্কর।
    স্ট্রীট সারভাইভরস ইন্ডিয়া এর মতে কার্যকরী সাক্ষরতা’র হার পুরুষদের মধ্যে ২৫% আর মেয়েদের মধ্যে ১৫%।কার্যকরী সাক্ষরতা বলতে শুধুমাত্র নামসই বোঝায় না।নিজের স্বাভাবিক কাজকর্মের জন্য প্রয়োজনীয় সাক্ষরতা’কে বোঝায়।তার মধ্যে বাংলায় লেখা যা কিছু মোটামুটি বোঝা উচিত।আমি মুর্শিদাবাদ ঘোরার মাঝে র‍্যানডম স্যাম্পলিং এ জনা পঞ্চাশ মহিলা-পুরুষের সই নিলাম আর একটা যথাসম্ভব যুক্তাক্ষর বর্জিত বাংলায় লেখা কাগজ পড়তে দিলাম।যারা সই করেছেন এবং কাগজ পড়ার চেষ্টা করেছেন,তারা সবাই তিরিশের উপরে এবং প্রথাগত স্কুল শিক্ষা পান নি।পঞ্চাশজনের মধ্যে চৌত্রিশজন ছবি আঁকার মত করে নাম সই করলেন।তাদের মধ্যে পুরুষ কুড়ি জন।মহিলা চোদ্দ জন।সাতজন নাম লিখতে জানা সত্বেও টিপসই দিতে চাইলেন।সাকুল্যে আটজন কাগজটা পুরো পড়ে শেষ করলেন মোটামুটি সঠিক উচ্চারণে।তাদের মধ্যে পাঁচজন মহিলা,তিনজন পুরুষ।আমি যাদের বেছেছিলাম তারা সকলেই আর্থিকভাবে নীচুশ্রেণী’র।বলে রাখা দরকার,যে এটা কোনোভাবেই রেপ্রেজেনটেটিভ রেজাল্ট না।তবুও এর থেকে মুর্শিদাবাদের সাক্ষরতার আসল ছবিটা আঁচ পাওয়া যায়।আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে এ সমস্যা গোটা বাংলার।

    বহরমপুর
    ----------
    জেলার সদর শহরে এক ডাকসাইটে নেতা’কে ধরলাম।তিনি প্রথমে পাত্তাই দিতে চাইছিলেন না।অনেক চেষ্টাতে ডেটাগুলো দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,তাহলে উন্নতি’টা কোথায় হয়েছে?গাদাগুচ্ছের প্রাইভেট বিএড আর ডিএড কলেজ হয়েছে।রঘুনাথগঞ্জে তো এক বিড়ি কারখানার মালিক নিজের নামেই বিএড কলেজ খুলে বসেছেন।এগুলোতে রুলস রেগুলেশন না মেনে গাদা ডোনেশন নেওয়া হয়।এটাই কি ডেভেলপমেন্ট?
    তিনি মাছি ওড়ানোর মত করে আমাকে উড়িয়ে দিলেন।

    মুর্শিদাবাদের গ্রাম গুলোর চেহারা পাল্টেছে।বেশিরভাগ গ্রামে বিদ্যুৎ এসেছে।পাকা না হলেও লালমাটির রাস্তা হয়েছে।স্কুল বেড়েছে।শিক্ষার হার বেড়েছে।রেগা’র সুবাদে কিছুটা হলেও কর্মসংস্থান বেড়েছে।কিন্তু কোনোটাই তার প্রত্যাশিত মানে পৌঁছায়নি।অদূর ভব্যিষতে আর্সেনিক আর ভাঙ্গন,এ জেলাতে খুব বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেবে।ঠান্ডা ঘরের বান্দারা এ কথা বুঝলে তো?
    এখানে যেই জিতুক।প্রত্যাশিত উন্নয়ন হবে কিনা ঠিক নেই।এখন অব্দি যা হাওয়া,তাতে কংগ্রেসের দিকেই পাল্লা ভারী।তবে হিসেব পালটে দেবে তৃণমূলের ভোট।তাতে বামফ্রন্ট জিতে যেতে পারে।
    ডোমকল থেকে ফিরছি।দুপুরবেলা।বেশ রোদ।মাঠের ধারে একটা রোগা,হাড় বেরোনো চেহারার বাচ্চা খালি গায়ে একটি রাজনৈতিক দলের পতাকা নিয়ে চেচাঁচ্ছে,
    “ইনক্লাব,জিন্দাবাদ ***** চিন্নে ভোট দেন”
    আমি দাঁড়ালাম।পকেট থেকে লজেন্স বের করে দিলাম।জিজ্ঞেস করলাম,
    “কাকে ভোট দিবি?”
    উত্তর এল,
    “কুনো শালোকে লয়”
    আমি হাসলাম।আবার হাঁটা দিলাম।
    বাচ্চারাই সত্যি কথা বলে।গণতন্ত্র দীর্ঘজীবি হোক।
     


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৭ জুলাই ২০১৩ | ৫৭৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ছেনাল ঘোষ | ***:*** | ১৮ জুলাই ২০১৩ ০৪:০৭77652
  • @কালপুরুষ

    ডোমকল মহকুমাতে বিজেপির ভোট বৃদ্ধির কারণ কী? শুধু অনুপ্রেবেশকারী?

    ( ইচ্ছা করেই উদ্বাস্তু শব্দটা ব্যাবহার করলাম না)
  • bhabuk | ***:*** | ১৮ জুলাই ২০১৩ ০৬:২০77653
  • ভলো লাগলো। তথ্য আছে, কিন্তু তথ্যের কচকচি নেই। মুর্শিদাবাদ এর খণ্ডচিত্র পেলাম।
  • ছেনাল ঘোষ | ***:*** | ১৮ জুলাই ২০১৩ ০৯:১৭77648
  • সাগির হোসেনের এই হাল হয়েছে পড়ে/শুনে আমার'ও বেশ খারাপ লাগছে।
  • bb | ***:*** | ১৮ জুলাই ২০১৩ ১১:৩১77649
  • কুসুম্বা নাম বদলে কালপুরুষ? লেখা ভাল হয়েছে একটা সতেজতা আছে লেখায়, তবে একটু চটকদার লেখা, আবাপ র মতো লাগল।
  • কুসুম্বা | ***:*** | ১৮ জুলাই ২০১৩ ১২:৪১77650
  • সরি, বিবি, কালপুরূষ ভালো লিখেছেন, আমার কিছু অভিজ্ঞতা আছে মুর্শিদাবাদের কয়েকটা অঞ্চলের, স্বনামেই লিখব আগের টইটাতে সময় হলে, নাম বদলাইনি।
  • siki | ***:*** | ১৮ জুলাই ২০১৩ ১২:৪৬77651
  • কুসুম্বা আর কালপুরুষ এক ব্যক্তি নন। দুজনে আলাদা।
  • কালপুরুষ | ***:*** | ১৯ জুলাই ২০১৩ ১১:৪১77654
  • গত কয়েকবছর থেকে মুর্শিদাবাদে ভোটে ধর্মীয় মেরুকরণ শুরু হয়েছে।এর পিছনে কারণ অনেক কটি।তবে,অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে যে স্বাভাবিক বিদ্বেষ জমে আছে,তা কাজে লাগাচ্ছে বিজেপি।
  • শুদ্ধ | ***:*** | ২৩ জুলাই ২০১৩ ১১:৪৭77655
  • আপনি যখন দেখছেনই স্বচ্ছ ভাবে তখন যদি কখনো সম্ভব হয় তাহলে পঞ্চায়েত স্তরের নানান প্রকল্প, প্রয়োজনীয়তা ও তার আদত হাল নিয়েও পারলে লিখবেন? বিড়ির কথায় মনে পড়লো, ওখানকার বিড়ির সর্বাধিপতিটির টাকা খাটে এখন সিনেমা পাড়ায়, টেলিভিশন পাড়ায়। ফুর্তি করতে কলকাতায় আসেন ও সিনেমা বানানোর পয়সা দিয়ে থাকেন।
  • কালপুরুষ | ***:*** | ২৬ জুলাই ২০১৩ ০১:৩৩77656
  • বিড়ি কারখানা নিয়ে নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে।এই ভোটে ঘুরে ঘুরে একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছি।একটু সামলে নিই।
  • bb | ***:*** | ২৭ জুলাই ২০১৩ ০১:৩২77658
  • বিলো পভার্টি লেভেল
  • sumit roy | ***:*** | ২৭ জুলাই ২০১৩ ১১:৫২77657
  • বিপিএল কী?
  • এক মুঠো রোদ্দুর | ***:*** | ০৫ আগস্ট ২০১৩ ০৮:২৫77659
  • ভালো লেখা।তবে সামসেরগঞ্জ ব্লক নিয়ে আলোচনা করলে ভালো লাগত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন