এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • কলেজে ভর্তির মজারু গপ্পো

    Salil Biswas লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ | ১৫০৮ বার পঠিত
  • এখন সেপ্টেম্বর শেষ হতে চলল। ২০১৪ সাল।
    সব কলেজে ভর্তি শেষ। প্রায় সব কলেজেই চলছে ঝরতি-পড়তিদের অনুনয়-বিনয়ের পালাও শেষ। যারা ভর্তি হয়েছে তাদের মধ্যে ভাগ্যবানেরা অন্য আরো “ভাল” কলেজে চলে গেছে। বাকিরা “টিউশনি স্যার/ম্যাডাম” খুঁজতে ব্যস্ত। অল্প কয়েকজন বই-টই কিনে ক্লাস করছে। অনেক কলেজে এই সদ্য “রুটিন” তৈরি হয়েছে।
    নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে।
    শেক্সপীয়র সাহেব একটি নাটক লিখেছিলেন – “ম্যাকবেথ”। রাজা হবার লোভে আগের রাজা ডানকান-কে খুন করে নিজের রক্তাক্ত হাত দেখে ম্যাকবেথ স্বগতোক্তি করেছিল : This is a sorry sight! লেডি ম্যাকবেথ উত্তরে বলেছিল : A foolish thought …
    আজ উচ্চশিক্ষার “ব্যবস্থা”-র দিকে তাকিয়ে বলতে ইচ্ছে করে : This is a sorry sight!
    একথা বলছি কেন? খুন হল কে? নাকি, এটা আরও একটা foolish thought?
    খুন হয়েছে “মিথিক” একটি জীব, একটি উপকথার প্রাণী, যার নাম “উচ্চশিক্ষা”।
    ভর্তি শেষ। শিক্ষাবর্ষ শুরু। আসুন, তাকাই চারদিকে। শুরু করি গোড়া থেকে।

    ভর্তি – চৌখাটে পা
    এক চেহারা প্রতি বছর। অনেকগুলি উৎকণ্ঠিত নানা বয়সের মুখ। কলেজে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকছে। ক্লান্ত বিষণ্ণ আকৃতি সব। সকলে আসছে সর্বরোগহর দাওয়াই উচ্চশিক্ষার সন্ধানে। প্রথম ধাপ পেরোনো গেছে। নতুন পরিস্থিতি সামনে।
    দু’বছর আগে শিক্ষামন্ত্রক একটি নির্দেশ দিয়েছিল, যত দরখাস্ত জমা পড়বে, যত মেধা তালিকা প্রকাশিত হবে, যত নথিপত্র জমবে, সব জমা দিতে হবে মন্ত্রকের দফতরে। কলেজে তার হিসেব রাখতে হবে। নিয়মটা ভাল। কতদিন চলবে, কতদিন কার্যকরী থাকবে এই নিয়ম সেটা নিয়ে সন্দেহ ছিলই, কিন্তু একথা বলা হয়েছিল, পদক্ষেপটা খারাপ নয়।
    সরকারী আদেশ আরও বলেছিল, ভর্তি এখন থেকে যতটা সম্ভব “অনলাইন” করতে হবে। এই পদক্ষেপ তো খুবই ভাল। অনলাইন বা আন্তর্জালিক ভর্তি-ব্যবস্থা এর আগে থেকেই, ২০০৫/৬ থেকেই চালু হয়েছিল। একটি কলেজের কথা আমি ব্যক্তিগত ভাবে জানি, যেখানে ২০০৭ সালে এই ব্যবস্থা বেশ কিছু মানুষের সবল-দুর্বল অভিসম্পাত, বল ও ছলের প্রয়োগকে নাকচ করে চালু হয়েছিল।
    কতদিন কার্যকরী থাকবে সরকারী আদেশবর্গ, এনিয়ে নিন্দুকের আশংকাকে সত্য প্রমাণ করে সব ঝটপট ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে গেল। সাইজে অপেক্ষাকৃত ছোট, চেষ্টা করেও দলগঠনে অত দড় হতে না পারা মন্ত্রীকে পত্রপাঠ সরিয়ে আসন জাঁকালেন অনেক বেশি “হেভিওয়েট” এক মন্ত্রী যাঁর কাছে সহজে আসতে পারে ষণ্ডা গুণ্ডা পণ্ডা মার্কা উঠতি নেতারা, যারা জানে কী করে তোলা-হরলিক্স এবং গা-জোয়ারি-কমপ্ল্যান সহযোগে দল ও শরীরটাকে রাখতে হয়, “শয়তান দলবাজ” ভিসি বা প্রিন্সিপ্যাল বা টিচারগুলোকে বা পড়াশুনায় আগ্রহী মূর্খদের টাইট দিয়ে।
    টাইট দেবার নমুনা চারদিকে বিদ্যমান। প্রিন্সিপ্যালরা আকচার মারধোর খাচ্ছেন। দু’একজন ইস্তফা দিচ্ছেন। ভিসি-রা ছাঁটাই হচ্ছেন। কেউ কেউ পিঠে কুলো কানে তুলো দিয়ে দিব্যি (অন্তত আপাতদৃষ্টিতে) চালিয়ে যাচ্ছেন। মন্ত্রীর মন্ত্রণায় কোনও প্রিন্সিপ্যাল মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে কেউ কেউ ইস্তফা প্রত্যাহার করছেন। কিন্তু অনেকেই সরকারী সুবচনে আস্থা রাখতে পারছেন না। মনে পড়ে, আমিও এই রকম ইস্তফা দিয়েছিলাম ছাত্র (?) চাপে। তখন বর্তমান বাহুবলীরা ছিল না, কিন্তু অন্য নামে অন্য রঙে এরাই ছিল।
    ভর্তির ‘কহানী’ শুরু করা যাক।
    উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পরে যে কোন একটি ছেলে বা মেয়ে যে পরিস্থিতিতে পড়ে সেটা বেশ দুঃখজনক এবং কষ্টকর। শুধু ছাত্রছাত্রী নয়, তাদের বাবা-মায়েদেরও একই রকম দুরবস্থার মধ্যে পড়তে হয়। তাদের তখন কলেজে কলেজে ঘুরে প্রথমত জানতে হয় যে কোন কোন কলেজে ভর্তির কী কী ন্যূনতম মাপকাঠি বা ক্রাইটেরিয়া (আমরা আগাগোড়া চেনা কথা ‘ক্রাইটেরিয়া’ শব্দটাই ব্যবহার করব) ঠিক করা হয়েছে। তার মধ্যে তাঁর ছেলেমেয়েরা পড়ে কিনা। তারপর সেই ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী তারা কলেজগুলির দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে ছাত্রনেতাদের-শিক্ষাকর্মীদের-শিক্ষকদের জিজ্ঞাসা করেন, কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করেন আমার ছেলের হবে তো আমার মেয়ের হবে তো! যত বেশি নম্বরই পাক, এইটা প্রায় সকলকেই করতে হয়।
    যারা অনেকটা বেশি নম্বর পেয়েছে তারা খানিক নিশ্চিন্ত থাকে যে কোন না কোন কলেজে তারা জায়গা পেয়েই যাবে। কিন্তু যারা মাঝামাঝি নম্বর পেয়েছে বা কম নম্বর পেয়েছে, তারা খুব বিপদে পড়ে। বিভিন্ন কলেজে যে ক্রাইটেরিয়া ঠিক করা হয়, সেই ক্রাইটেরিয়াটা বিশ্ববিদ্যালয়ের যা ন্যূনতম প্রয়োজন তার থেকে বেশিই থাকে। কিছু বিষয়ে হয়ত ঐ ন্যূনতম প্রয়োজনটাকেই ক্রাইটেরিয়া বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু যাইই করা হোক না কেন, যেহেতু পুরো ব্যবস্থাটার মধ্যে কোন স্বচ্ছতা বা স্পষ্টতা নেই, বাবা-মায়েরা, ছেলেমেয়েরা খুব চিন্তার মধ্যে, একটা বাজে অবস্থার মধ্যে থাকেন।
    এই সময় তাঁরা যখন কলেজগুলোতে যান তখন কিছু দালাল শ্রেণীর লোকও তাদের ঘিরে ধরে। এই দালাল শ্রেণীর মধ্যে অনেকরকম মানুষ থাকে। কিছু লোক থাকে যারা নিছক তাদের ঠকাবার জন্য আসে, তাদের সঙ্গে কলেজের হয়ত কোন সম্পর্কই নেই। আবার কিছু লোক আছে, যারা কলেজের সঙ্গে সম্পর্কিত, নানান কারণে তারা নানারকম সুবিধে আদায় করার জন্য এই ছেলেমেয়েদের নানানরকম ভুল তথ্য দেয়, ভয় দেখায়, বলে এটা হবে না, সেটা হবে না। এবং শেষকালে বলে, আমার ওপর নির্ভর করলে আমি কাজটা করে দেব। যেহেতু ছেলেমেয়েরা ও বাবা-মায়েরা এই সময় মানসিকভাবে একটা টালমাটাল অবস্থায় থাকেন, তাই এই “করে দেব” ব্যাপারটাকে অনেকটাই মেনে নিতে থাকেন। এখানে বলে রাখা ভাল, কিছু কিছু বাবা-মা আবার আমাদের শ্রেণীর স্বভাবজ শর্টকাট-প্রেমে আচ্ছন্ন হয়েও চলে যান নেতাদের কাছে। আর অনেকে ধরেই নেন, নেতারাই আসল।
    অনেক সময় দেখা যায় কোন কলেজে ছেলেমেয়েরা বা বাবা-মায়েরা ভর্তির ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে প্রথমেই গেছেন ছাত্র ইউনিয়নের ঘরে। সত্যি কথা (হাসি পেলে চেপে রাখুন) বলতে গেলে ইউনিয়নের কোন ভূমিকা তো কলেজে ভর্তির নিয়মের নীতি-নির্ধারণে থাকা উচিত (এই কথাটা অবশ্য, যাকে বলে, জল-অচল।) না। তারা ছাত্রছাত্রীদের সুবিধে দেখবে, যারা ভর্তি হতে এসেছে তাদের সাহায্য করবে, এগুলো করতে পারে। বেনিয়ম হলে তারা নিশ্চয়ই দেখতে পারে, কিন্তু “বেনিয়ম” দেখার জন্য তারা থাকে না। তারা বেশিরভাগ সময় থাকে অন্য সুবিধে নেবার জন্য। আবার অনেক সময় কোনও অনিচ্ছাকৃত (ইচ্ছাকৃতও হতে পারে) বেনিয়ম দেখলেও তারা চুপ করে থাকে। পরে সেই কথা তুলে ফায়দা লোটার ধান্দায়।
    মুস্কিল হচ্ছে এই, যে ভর্তি হবার ক্রাইটেরিয়াগুলো বিভিন্ন কলেজে বিভিন্ন রকম ভাবে ঠিক করা হয়, তার ফলে ছেলেমেয়েরা খুব বিভ্রান্ত থাকে। এই কলেজে ৫০% পেলে আমি দরখাস্ত করতে পারব। (৫০% একটা কথার কথা)। ওই কলেজে ৭০ না পেলে দরখাস্ত করতে পারব না। আর একটা কলেজে ৪৫ পেলেই করতে পারব। এই যে ক্রাইটেরিয়ার একটা বিবিধ চেহারা সেটার ফলে ছেলেমেয়েদের খুব বিভ্রান্তি দেখা দেয়।
    মুশকিল হচ্ছে যে, কোন কোন কলেজে ছাত্রছাত্রী ভর্তি হতে চায় বেশি, কোন কোন কলেজে একেবারেই ভর্তি হতে চায় না। আবার কোন কোন কলেজে একটা বিষয়ে ভর্তি হবার চাপ থাকে । অন্যান্য বিষয়ে এত চাপ থাকে না। এই সমস্ত কিছু হিসেব করেই কলেজগুলো ক্রাইটেরিয়া ঠিক করে।
    কিছু কিছু কলেজ আছে যারা নিজেদের বেশি উন্নত কলেজ বলে মনে করে, তারা সেই মত নম্বরের হার ঠিক করে। উন্নত কলেজ সেটা হতেও পারে, নাও পারে। কিন্তু কোন কোন কলেজ মান উন্নয়ন করার কথা ভেবে, বেশি নম্বরের ছাত্র ছাড়া আমরা নেব না, এরকম একটা জায়গায় যেতে চায়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে ওইটে শেষ অবধি হয়ে ওঠে না। অন্যদিকে, এমন অনেক কলেজ আছে যেখানে হয়ত ছেলেমেয়ে ভর্তিই হয়নি। তখন তাদের অনেক কম নম্বরে ছেলেমেয়ে ভর্তি করতে হয়। কিন্তু সেটা অনেক পরে হয়।
    নানান রকম সমস্যা গোলমাল দেখে গার্ডিয়ানরা খুবই ধন্দে পড়ে যান। তারা বুঝতে পারেন না কী করবেন। বিভিন্ন কলেজের যে বিভিন্ন ক্রাইটেরিয়া আছে। একটা না হয় ঠিক করা আছে - ইউনিভার্সিটির ন্যূনতম। এর নিচে হলে ইউনিভার্সিটি তাকে রেজিস্ট্রেশন দেবে না, নথিভুক্ত করবে না। কিন্তু তার পরেও যে বিভিন্নতা হয়, সেটা এলোমেলো বিভিন্নতা। এখন যদি এরকম ব্যবস্থা করা যেত, যে এই ক্রাইটেরিয়ার ব্যাপারটাতেও একটা সমপর্যায়ী ব্যবস্থা থাকবে, ইক্যুইটেবল সিস্টেম হবে, তাহলে ভাল হত। কোন কলেজে হয়ত ৭০ শতাংশর নিচে ফর্মই দেবে না, আবার কোন কলেজে গেলেই ফর্ম দিয়ে দেবে। এই নিয়ে একটা কিম্ভুত পরিস্থিতি তৈরি হয়। এই সমস্যা সমাধানে কীভাবে কী করা যায় সেটা বিচার্য বিষয়। কোন একটা বাঁধাগৎ ফর্মুলাতে কাজ হবে না।
    সব কলেজের ভর্তি এক সঙ্গে এক মেধা তালিকা অনুযায়ী এক দিনে হলে ছাত্র অভিভাবক কলেজের, সকলেরই সুবিধা হবে, দুর্নীতি কমবে, একথা স্বীকার করতে হবেই। তাই সরকারী নির্দেশাবলী অনেককে আশান্বিত করেছিল। কিন্তু “ম্যান প্রপোসেস, এল্ডার সিস্টার ডিসপোসেস”। ফলে আদেশের হল ভুষ্টিনাশ, তিমির রইল তিমিরেই। উল্টে অনৃতভাষণের বইল বন্যা, বলা হল ‘অনলাইন’ ভর্তি-ব্যবস্থা চালু করার অবস্থায় কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নেই। একথা বলার আগের দিনই বলা হয়েছিল ব্যবস্থা আছে। আসল ব্যাপারটা জানতে কারো অসুবিধা হল না। কার স্বার্থে সরকারী আদেশ পাল্টালো তা স্পষ্ট হল, তোলাবাজী হল আইনসিদ্ধ, ছাত্র ছদ্মবেশী তস্করের দল কলেজে কলেজে চালাল তাণ্ডব। এখনো চলছে তা।
    ঘটনা হচ্ছে, ২০০৫/৬ সাল থেকেই ‘অনলাইন’ ভর্তি ব্যবস্থা অল্প কিছু কলেজে চালু হয়ে গিয়েছিল। কিছু কলেজে অনেক চেষ্টা করেও এক ধরনের ধান্দাবাজীর জন্য সব উপকরণ ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও এই ব্যবস্থা হয়নি। ২০০৭ থেকে কাজটা শেষ অবধি গতি পেল, এবং ধীরে ধীরে অনেক কলেজে এই ব্যবস্থা চালু হল। ‘অনলাইন’ ব্যবস্থা যাতে না হয় সে চেষ্টা তৎকালীন শাসকদলের অনুগত ছাত্রদলগুলো চালাতে ত্রুটি করেনি। তবে সরকারী ভাবে কোনও বিরোধিতা করা হয়নি, ছাত্রদলগুলির দিক থেকে কিছু চাপ থাকলেও। ভর্তির সময় ছাত্রদের উপর অত্যাচার বামপন্থী ছাত্র-সংসদগুলি দিব্য আনন্দে চালাত। টাকা লেনদেনও অবাধে চলত। অনেক কর্তাব্যক্তি ব্যপারটা সমর্থন করেছিলেন, এই আশায় যে ভর্তির উপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে হবে না। কিন্তু সে গুড়ে পাথর দেখে তাঁরা খেপে গিয়ে কী কী করেছিলেন সে গল্প অন্যত্র বলার। কিন্তু এঁরা কেউ সরকারী ব্যক্তি ছিলেন না। টাটা-বাহন সরকার তখন সিঙ্গুর নন্দীগ্রামে সূর্যোদয়ের নবীন আলোয় কৃষক নিধনে ব্যস্ত। তারপর কী হল সবাই জানে। প্রথম প্রথম নতুন সরকার ‘অনলাইন’ নিয়ে ভাবেননি। হয়ত বোঝেনওনি। আইন-টাইন বানিয়ে মেধাহীন তাঁবেদার আর মেধাবী ধান্দাবাজ জোগাড় করতে কিছু সময় নিয়ে এখন তাঁরা এসব দিকে মন দিচ্ছেন এবং বেশ জমিয়ে উচ্চশিক্ষার ছেরাদ্দ করতে নেমে পড়লেন। আসলে সব সরকারই তো সব সরকারের এপিঠ আর ওপিঠ।
    তারপর এতদিন কেটে গেছে। ‘অনলাইন’ ভর্তি সম্পর্কে মানুষ অবহিত হয়েছেন। পছন্দও করছেন। কিন্তু তাতে তো ছাত্র(?)নেতাদের চলবে না। নিয়ম মানলে আদ্যোপান্ত বেনিয়মের বেসাতিওয়ালাদের চলে কি করে।
    আমরা আগেও ভেবেছি, সমস্ত কলেজে বিষয় অনুযায়ী একইরকম ক্রাইটেরিয়া হবে এরকম যদি করা যায় তবে খুব ভাল হয়। এটা করা খুব মুস্কিল। কারণ প্রত্যেকটা কলেজেরই নিজস্ব কিছু সুবিধা অসুবিধা আছে। যে ব্যবস্থাটা ছিল এবং এখনও আছে, সেটা একটু জটিল। এই জটিলতাটা ইন্টারনেটে ‘অনলাইন’ অ্যাডমিশন হলে কমে যাবে। কাজটা কঠিন হলেও করাই যায়, করেছে অনেক কলেজ। ভেতরে বাইরে অনেক বাধা সত্ত্বেও। এটা যে করা সম্ভব তাতে কোন সন্দেহ নেই।
    কিন্তু এমন হোক বা না হোক, মূল কথা হচ্ছে, পুরো জিনিসটা খুবই স্বচ্ছ হতে হবে। প্রতিটি ছেলেমেয়ে, প্রতিটি অভিভাবক যেন প্রক্রিয়াটা সহজে বুঝতে পারে। এটা বোঝানোর জন্য (যদিও ইন্টারনেট এখন আক্ষরিক অর্থে সবার মুঠোয়), এ বিষয়ে একটা সচেতনতা তৈরি করা দরকার আছে। সকলকে বোঝাতে হবে যে এই জানতে পারাটা আপনার অধিকার। এই যে আজকে রাইট টু ইনফরমেশন অ্যাক্ট আছে তার একটা খুব সঠিক প্রয়োগ এখানে হওয়া উচিত। আমার ছেলেমেয়ে ভর্তি হতে পারল না, কেন পারল না, সেটা যাতে আমি পরিষ্কার বুঝতে পারি, তার ব্যবস্থা করতে হবে। এবং আমি যদি ওয়েবসাইটের ব্যাপারটা সবাইকে বোঝাতে পারি, এবং তালিকাটা যে বেরোচ্ছে, সেই তালিকা কেন এভাবে বেরোচ্ছে সেটাও যদি পরিষ্কার করে বলে দেওয়া যায়, তাহলে আমার মনে হয় না, যে কোনও অভিভাবকের মনে কোন প্রশ্ন থাকবে। তিনি অখুশি হতে পারেন, কিন্তু প্রশ্ন কিছু করতে পারবেন না। কারণ এখানে তো সবকিছু বলে দেওয়া হচ্ছে। পরিষ্কার, ক’টা আসন আছে, কীভাবে ভর্তি হচ্ছে সব বলে দেওয়া হচ্ছে।
    আরও একটা বিষয় এখানে বলে নেওয়া উচিত।
    যখন উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল বেরোল, বিভিন্ন কলেজে অ্যাডমিশন কমিটির মিটিং হল, অমুক তারিখ থেকে ফর্ম দেওয়া হবে ঠিক হল, তখন কলেজে একটা মোচ্ছব শুরু হয়ে যায়। কত তারিখ ফর্ম আসবে, কোন কাউন্টার থেকে ফর্ম দেওয়া হবে, ছেলেমেয়েরা কোথায় লাইন দেবে, কীভাবে ফর্ম জমা নেওয়া হবে, কীভাবে ফর্ম দেওয়া হবে, মার্কশীট দেখে ফর্ম দেওয়া হবে, না এমনি ফর্ম দিয়ে দেওয়া হবে। দেখে ফর্ম দেওয়া হলে সময় বেশি লাগে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এমনি ফর্ম দিয়ে দেওয়া হয়, কারণ কম নম্বর পেয়েও, ভর্তি হতে পারবে না জেনেও কেউ যদি টাকা দিয়ে ফর্ম তোলে তাহলে তো কলেজের কিছু করার নেই, তাতে কলেজের কিছু রোজগার হয়। সেটা হয়ত খানিক অনুচিত, কিন্তু এতে কোন মানুষ কোন কিছু মনে করেনও না, আর টাকাটা খুব একটা বেশি থাকে না, দশ/বিশ টাকা, সেটা লোকে দিয়ে চলে যান। কিন্তু না দেখে ফর্ম দেওয়া কলেজগুলোয় যে মনোভাব তৈরি হয়, সেটা হল একটা শ্লাঘার বিষয়, গর্বের বিষয়, দেখ দেখ, আমার কলেজ কত বিখ্যাত, আমার কলেজে ভর্তির জন্য সেই রামকৃষ্ণ মিশন বা সেই কতদূর অবধি লাইন পড়ে। এটা একটা ভীষণ গর্বের বিষয়। কিন্তু এটা তো এক ধরণের বোকামো। আমার কলেজে ভর্তির জন্য মানুষ এত কষ্ট করছে, এটা আমি দেখছি না, আমি দেখছি আমার কলেজে কত লোক “লাইন” দিচ্ছে। আরে এটা আমার কলেজে ভর্তির চাহিদা আছে বলে নয়, আমার কলেজ ভাল বলে নয়, কলেজটা গোলপার্কে বলে, বা কোন একটা সুবিধেজনক জায়গায় বলে। অথবা, অন্য কোন “গোলমেলে” কারণে। কলেজের মধ্যে লাইন দেবার জায়গা নেই, মানুষ রোদ জল কাদার মধ্যে লাইন দিচ্ছেন। এবং এটা একটা দুর্নীতি তৈরির জায়গা হচ্ছে। লোকে ফর্ম তুলে নিয়ে বিক্রি করে ওখানে, জায়গা রাখবার জন্য পয়সা নেয়, পাড়ার মাস্তানরা এসে অত্যাচার করে। এরকম যে কত কাণ্ড হত। যে মূহুর্তে ‘অনলাইন’ অ্যাডমিশন হয়ে গেল, সমস্ত বন্ধ। ফাঁকা রাস্তা, ফর্ম নেওয়া যখন খুশি, রাত বারোটার সময়ও কেউ ফর্ম নিতে পারছে। জমা দিতে পারছে। আগে যারা পাঁচটা কলেজে অতি কষ্টে দরখাস্ত করতে পারত, এখন তারা স্বচ্ছন্দে পঞ্চাশটা কলেজে করতে পারে।
    আরেকটা জিনিষ, যেটা আগের ব্যবস্থায় হত, সেটা হচ্ছে কলেজের পয়সা খরচ। ফর্ম ছাপাতে খরচ খুব সামান্য। অনেক সময় কলেজের কাজ করেন এমন ছাপাখানার লোকেরা বিনে-পয়সায় ফর্ম ছেপে দেন। কিন্তু এই যে ক’দিন ফর্ম দেওয়া হবে, নেওয়া হবে সে ক’দিন যাঁরা কাজ করবেন সেখানে তাদের খাওয়াতেও প্রচুর খরচ। নৈমিত্তিক খরচ প্রচুর। সেখানেও দুর্নীতি হয়, সেখানেও এ পয়সা মেরে দিচ্ছে ও পয়সা মেরে দিচ্ছে, এটা হতে থাকে। এগুলো সমস্ত বন্ধ করে দেওয়া যায় যদি ‘অনলাইন’ অ্যাডমিশন হয়।
    এবারে বলছি সীটের সংখ্যা নিয়ে। সীটের সংখ্যার ব্যাপারটা খুব গোলমেলে। পাইকারি রেটে আসন বাড়িয়ে দিলাম তাতে সমস্যা মিটে যাবে, এমন একেবারেই না। কিন্তু মেধাহীন বাহুবলীরা সে কথা বুঝতে এবং শুনতে নারাজ, কারণ যারা পয়সা দিয়েছে ভর্তি হবে বলে, তারা মানবে কেন?
    কলেজগুলোর গুণগত মানে সমতা আনা খুব জরুরি। তার জন্য দুটো-একটা তথাকথিত সরকার নিয়ন্ত্রিত ‘উৎকর্ষ-কেন্দ্র’ তৈরি করে কাজ হবে না। নজর দেওয়া উচিত সব কলেজের উপর সমান ভাবে। এর জন্য দরকার দু’ধরনের ইচ্ছা। একটা হচ্ছে সদিচ্ছা, কলেজের লোকের সদিচ্ছা, তারা ভালভাবে চেষ্টা করবেন এ জিনিষটা করার, স্রোতে গা ভাসিয়ে বসে থাকবেন না। এই একটা সদিচ্ছা, আর একটা সদিচ্ছা হচ্ছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা। একটা কলেজকে যদি খারাপ করে রাখা যায় তবে সে কলেজের ওপর নিয়ন্ত্রণ বেশি রাখা যায়, ছড়ি বেশি ঘোরানো যায়। আর একটা মারাত্মক ভাবনা হল, অন্ধ ক্ষমতা-লিপ্সা যা আজ সর্বত্র স্পষ্ট। এই ক্ষমতার মূল উদ্দেশ্য অবশ্যই একটা। এই ভাবনাটা যদি বিতাড়িত করা যায়, তবে যে কোন কাজ হতে পারে। এটা এমন একটা কিছু কঠিন ব্যাপার নয়।
    আগে যখন হাতে-হাতে পদ্ধতিতে (ম্যানুয়াল প্রসেস) কাজ হত তখন ফর্মগুলো জমা পড়লে অফিসে বসে সেই ফর্মগুলো সর্ট করা হত, এইগুলো ইংরেজির ফর্ম, এগুলো বাংলার ফর্ম, বা এগুলো অন্য কিছুর। আমাদের কলেজে প্রথম বাছাই হত কমার্সের ফর্ম, আর্টসের ফর্ম। কমার্সের ফর্মের একরকম রং থাকত আর্টসের অন্যরকম। এই রং দেখে ভাগ করা সহজ হত। এইবারে আর্টসের ফর্মগুলো থেকে বিষয় অনুযায়ী ভাগ করা হবে, তার জন্য কিছু লোক বসে থাকত। আবার কমার্সে কে পাস, কে অনার্স, ইত্যাদি দেখে ভাগ করা। এটা একটা বিশাল ঝামেলার কাজ ছিল। আর সব ফর্ম জমা হয়ে যাবার পরে বাছাই করব ভাবা হলে ভুলের শেষ থাকে না। মানুষী ভুল (হিউম্যান এরর) প্রচুর হয়। আর্টসেও আবার ইংরেজি বাংলা অমুক তমুক করে ভাগ হল। সেই ভাগগুলোকে তারপর আবার ক্রমানুসারে সাজাও। ভয়ঙ্কর খাটনির পোকা-বাছা কাজ ছিল। কিন্তু ‘অনলাইন’ ব্যবস্থা চালু হতেই এই ঝামেলাটা একদম উধাও হয়ে গেল।
    এই যে হাতে-হাতে পদ্ধতি, তাতে নানানরকম দুর্নীতির সুযোগ থাকে। আমি ফর্ম জমা দেইনি, আমার ফর্মটা ঢুকিয়ে দাও। ফলে যে প্রার্থীটি ঠিক সময় জমা দিয়েছে সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হল। আবার কিছু ফর্ম বাদ দিয়ে দিলাম, বেশি নম্বরের ফর্ম সরিয়ে নিলাম, এরকম অনেক কিছু। এর শেষ নেই। আবার আর একটা খুব সহজ চুরি, দশটা লোক কাজ করেছে, কুড়ি প্যাকেট খাবার এলো। নানান রকম হয়। এগুলো আটকানো খুব মুশকিল। ‘অনলাইন’ অ্যাডমিশন যদি করা যায়, তবে এই সমস্যাগুলো দূর হবে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে যে এই কারণে কিছু লোক ‘অনলাইন’ ব্যবস্থার খুব বিরোধী।
    সব চাইতে বড় কথা, পদ্ধতি অনেক সহজ সরল স্বচ্ছ সকলের বোধগম্য হবে। ‘অনলাইন’ পদ্ধতিতে কী হয়?
    আমি ‘অনলাইন’ হয়ে দরখাস্ত ভরলাম, আমাকে কলেজের ওয়েবসাইট একটা চালান দিল, সেটা নিয়ে ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিলাম, ব্যাঙ্ক থেকে আমাকে একটা রশিদ দিল, সেই রশিদটা নিয়ে আমি অপেক্ষায় রইলাম, এবং যেই ওই সাইটে মেধা তালিকা বের হল তখন আমি কাগজপত্র নিয়ে কলেজে গেলাম, কাগজপত্র দেখেশুনে করে কলেজ আমাকে ভর্তি করে নিলো। এটা তো খুব সরল পদ্ধতি। এই পদ্ধতি সম্পর্কে লোকে খুশি থাকে। এই পদ্ধতি আরও সহজ এবং দ্রুত করা যায়। যেমন, বারকোড সিস্টেম করা যায়, মার্কশিট ‘স্ক্যান’ করা যায়, তোমাকে রেজাল্ট নিয়ে যেতেই হবে না, তেমনও করা যায়। তবে সেগুলো অনেক অগ্রসর পদ্ধতি, সেগুলো এখনই না করলেও চলে।
    আবার অন্যদিকে, ‘অনলাইন’ ভর্তি সম্পর্কে কিছু মানুষের মনে অবিশ্বাস আছে। এটা দিলাম, জমা পড়ল তো? অনেকে আবার দেখতে আসেন ঠিকঠাক জমা পড়ল কিনা। কিন্তু ক্রমশ এই অবিশ্বাস কমে আসছে। আবার যাদের মতলববাজি ঘা খেয়েছে, ভর্তি ‘অনলাইন’ হলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যাদের ধান্দা, তারা কলেজের গেটে দাঁড়িয়ে বলতে থাকে, করুন, দেখুন, কম্পিউটারে কত ভুল-টুল হয়। দেখুন কী হয়। মানুষকে বিরূপ করার একটা চেষ্টা চলতে থাকে।
    একটা কথা বলা হচ্ছে, সব কলেজের টাকা নেই। একটা ‘অনলাইন’ ব্যবস্থা তৈরি করতে প্রাথমিকভাবে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা লাগে। অংকটা কী কী তুমি চাইছ তার উপর নির্ভর করে। প্রথমত, খরচা আজকাল কমে যাচ্ছে। কারণ, একটা সংস্থা যে বিশেষ একটা কলেজের ‘অনলাইন’ ব্যবস্থা দেখে, সে যখন অন্য কলেজের কাজ পায়, তখন তার ধাঁচটা তৈরি আছে। সুতরাং কাজ ধরার জন্য সে পয়সা কম চাইবে। সরকারেরও এ বিষয়ে কিছু করার আছে। তারা ‘রেট’ বেঁধে দিতে পারবে। যদি তুমি আগে কোথাও না করে থাক তবে তুমি বেশি চাইতে পার। কিন্তু তুমি যদি আগে কোথাও করে থাক তবে তুমি এর বেশি চাইতে পারবে না। এভাবে জিনিসটার মধ্যে সমতা আনা যায়। আমি যে কলেজে ছিলাম সেখানে করা হয়েছিল একেবারে ‘স্ক্র্যাচ’ থেকে। অনেক বাধার বিরুদ্ধে গিয়ে। প্রতি পদে আক্রমণ এসেছিল। টাকা নেই? সরকার টাকা দিক। সরকারপক্ষ একটা সাহায্য করতেই পারে। যখন ইউজিসি-র অনেক ক্ষমতা ছিল, তখন তারা নানা ভাবে সাহায্য করতে পারত। এখন তাদের ক্ষমতা কমানো হচ্ছে, তুলেই দেবে মোদী সরকার, কিন্তু তবু নিয়ম এখনো আছে। যদি না থেকে থাকে তবে চালু করা হোক। চোর-জোচ্চোর ধান্দাবাজ ‘ভেস্টেড ইন্টারেস্ট’ নিয়ে তো কিছু বলার নেই। তারা বাধা দিতেই থাকবে এবং মিথ্যা কথা বলবে। কিন্তু ইন্টারনেটের একটা সুবিধে হচ্ছে যে সেটাকে পৃথিবীর আচ্ছা আচ্ছা লোক কন্ট্রোল করতে পারে না। মহাশক্তিধর দেশ পারে না। কলেজের লোকাল মস্তানরা কোন ছার। তারা তো কিছুই করতে পারবে না। সবচেয়ে মজা হচ্ছে ‘লোকাল’ যারা এইসব করে তারা একেবারেই কম্পিউটার বোঝে না। তারা দু’নম্বরি করতে এত ব্যস্ত থাকে যে শিখে নেবে সে সময় তাদের নেই।
    এবারে মানুষজনকে শিক্ষিত করার একটা ব্যাপার আছে। বোঝাতে হবে। আমি দেখেছি, বলে দেওয়া হচ্ছে, যে আপনি নেটে দেখুন, সব পাবেন। তার পরেও লোকে জিজ্ঞেস করছে আচ্ছা এটা হবে তো? ওটা কি করে হবে? মানুষকে বোঝাতে হবে। ইতিমধ্যে এই বছর চারিদিকে যা শোনা যাচ্ছে তাতে মনে হয় মানুষ ‘অনলাইন’ ব্যাপারটাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। যেটা অসুবিধা সেটা হল সকলে তো ইন্টারনেট দেখতে পারেন না, সকলের তো বাড়িতে ইন্টারনেট নেই। তাহলে খবরগুলো মানুষ কি করে পাবেন? খবর দেবার একটা খুব সহজ পদ্ধতি আছে। ‘হেল্পলাইন’ চালু কর। হেল্পলাইনটা দু’ভাবে হতে পারে। এক বা একাধিক লোককে কাজটার দায়িত্ব দাও। তাদের কাছে ফোন থাকবে আর সেই নম্বরটা ওয়েবসাইট এবং কলেজে বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া থাকবে। এই ব্যবস্থা ২৪ ঘণ্টার হতে পারে। নাও হতে পারে। যতক্ষণ কলেজ অফিস চালু থাকে ততক্ষণ ফোন চালু থাকলেই হবে। আর কলেজ অফিস খোলা থাকার সময়ের মধ্যে হেল্পলাইনে ফোন করলেই হবে। অন্য সময়ের জন্য তো ইন্টারনেট আছে। আর যে সব কলেজে ইপিএবিএক্স আছে, তাদের তো কোন সমস্যাই নেই। প্রোগ্রামিং করা আছে, যেমন ইংরেজিতে শুনতে হলে ১ টিপুন। বাংলায় শুনতে হলে ২ টিপুন। এটা করা খুব সোজা। আপনি কি জানতে চান? ভর্তির ক্রাইটেরিয়া? ৩ টিপুন।
    কলেজেও টাঙাও, ওয়েবসাইটেও থাকুক, যে কোন জায়গা থেকে দেখে নেওয়া যাবে। হায়ার সেকেন্ডারীর ওই বিশাল পরিমাণ ফলাফল যদি আজকাল ওয়েবসাইটে দেওয়া যায়, তবে অ্যাডমিশনের তালিকা ওয়েবসাইটে না দেওয়ার কোন কারণ নেই। খুবই সহজ, দিব্বি করা যায়। যেটা দরকার সেটা হচ্ছে, একটু আক্কেল আর ইচ্ছা। এই ইচ্ছাটা আছে কিনা, সেটা মানুষকে ভাবতে হবে। ক্রমশ লোকে এ ব্যাপারে কিন্তু সচেতন হচ্ছে এবং আগামী দিনে আরও সচেতন হবে বলে আমার ধারনা।
    কিন্তু একটা জিনিস কিছুতেই ঠেকানো যায় না। ধরা যাক, একজন প্রার্থীর নাম উঠল তৃতীয় তালিকায়। ব্যাপারটা অজানা থাকায় সে তালিকা দেখতেই এলো না। একদল দালাল কিন্তু তক্কে তক্কে ছিল। তারা কোনভাবে প্রার্থীটিকে যোগাযোগ করল এবং বোঝালো যে তোমার নাম উঠেছিল, কিন্তু তুমি আসোনি, তাই নাম কাটা গেছে। তুমি চল, আমরা ব্যবস্থা করে দেব। অনেক সময়েই প্রার্থী বোকা বনে যায়, সে বোঝেই না যে কর্তৃপক্ষের কাছে সরাসরি গেলে সে এমনিই ভর্তি হতে পারত। এই দালালচক্রের হাত থেকে প্রার্থীদের রক্ষা করা খুব দরকার।
    এইবারে আসল সমস্যায় আসি। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। অ্যাডমিশনের ব্যাপারে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ যে খুবই সাঙ্ঘাতিক জিনিস, এবং সেটা যে কীভাবে সবকিছুকে আচ্ছন্ন করে রাখে, এখনো রেখেছে, সেটা কলেজে যাঁরা আছেন তাঁরা সবাই জানেন। সবাই হয়ত বাস্তবকে স্বীকার করেন না। যাঁরা এখনও চাকরিতে আছেন তাঁরা হয়ত ভয় পান স্বীকার করতে। ভয় মানে কী? কী করবে? আমি তো কিছু অন্যায় মিথ্যা কথা বলছি না। অবশ্য, বলা হবে আমি মিথ্যা কথা বলছি। কোন না কোন দলের ‘ভাবমূর্তি’ নামক কোন বস্তুকে আমি নষ্ট করার চেষ্টা করছি। যাই হোক সে অন্য আলোচনা।
    কী হয়? সমস্ত স্তরে, একেবারে উচ্চতম থেকে নিম্নতম স্তর অবধি চলে এই হস্তক্ষেপ। নিম্নতম স্তর কীরকম? ইউনিয়ন করে এমন একটা ছেলে বা মেয়ে, বা তার কোন একটা চ্যালা, সেও নাক-গলাবার চেষ্টা করে। সরকারের একেবারে উচ্চতম থেকে নিম্নতম স্তর, সেখান থেকেও হস্তক্ষেপ হয়। দলগুলো থেকে তো হয়ই। বলা ভাল, দলের স্থানীয় স্তর থেকেই হয়। দলগুলো কেন করে এমন করার চেষ্টা? প্রথম তো হচ্ছে নিজেদের আধিপত্য সব জায়গায় চালু করতে হবে। আমি কোন বিশেষ দলের কথা বলছি না। এটা সব দল করে। আগে যাঁরা ক্ষমতায় ছিলেন তাঁরাও করতেন, আজ যাঁরা ক্ষমতায় এসেছেন তাঁরাও করেন। বর্তমানে যাঁরা ক্ষমতায় এসেছেন তাঁদের ওপরের মহল, তাঁরা কতটা জানেন কি জানেন এই নিয়ে আর এখন সন্দেহ নেই। রাজনীতি-মুক্ত করার অজুহাতে নিজেদের নির্লজ্জ আধিপত্য চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কী করা যাবে! তাঁদেরও লোক ধরে রাখার প্রয়োজন থাকে। এবছরও সব জায়গায় চেষ্টা চলছে। যদি দল থেকে রাশ টানা হয়, তবে কিন্তু দলের উপকার ছাড়া অপকার হবে না।
    দলগুলো কেন এই কাণ্ড করে তার অনেকগুলো কারণ আছে। কতগুলো লাভ আছে বলেই করে, বলাই বাহুল্য। একটা লাভ হচ্ছে সদস্য সংগ্রহ। যত ছেলেকে আমি ভর্তি করতে পারব, ততগুলো ছেলে আমার দলের হবে। এটা একটা মস্ত বড় লাভের জায়গা। আর একটা ইনসেন্টিভ হচ্ছে - আমি তোমাকে ভর্তি করে দিতে পারি, আমি প্রিন্সিপালকে চাপ দিলে প্রিন্সিপাল চুপ করে যায়, আমি শিক্ষকদের ওপরে কথা বলতে পারি, আমি শিক্ষাকর্মীদের ঘেরাও করে তাদের দিয়ে সবরকম কাজ করাতে পারি। এই ক্ষমতা দেখানোটা একটা বড় ব্যাপার। যারা জড়িয়ে রয়েছে তাদের বয়স তো বেশি নয়, তারা এইগুলোকে ভাবে একটা অসম্ভব ম্যানলি ব্যাপার-ট্যাপার। সবথেকে যেটা ঘৃণ্যতম, সেটা হচ্ছে পয়সা নিয়ে অ্যাডমিশন করানো। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি আমার সমস্ত চাকরিজীবনে আমি দেখেছি পয়সা নিয়ে অ্যাডমিশন করানো হচ্ছে। যারা করছে, তারা ইউনিয়নের ছেলে হতে পারে, ইউনিয়নের বাইরের ছেলে হতে পারে। বহু বহু উদাহরণ আছে। এটা একদম ঠিক যে কোন কলেজের লোক যদি বিবেকবান হন তবে তিনি একথা মানবেনই যে এরকম হয়। আর একটা গভীর বেদনার ব্যাপার, সেটা ওই সদস্য-সংগ্রহের সঙ্গে যুক্ত, আমি নিজের চোখে দেখেছি, সহজ সরল একটা গ্রামের গরিব ঘরের ছেলে অসৎ হয়ে আস্তে আস্তে একটা সমাজবিরোধীতে পরিণত হল। এটা আমি একেবারে নিজের চোখে দেখেছি। যে পদ্ধতিটা চালু আছে, সেই পদ্ধতিটার খুব স্বাভাবিক পরিণতি হচ্ছে সমাজবিরোধীতে পর্যবসিত হওয়া। আবার কিছু কিছু ছেলেমেয়ে থাকে যারা একেবারে হিসেব করে আসে, আমি যতদিন কলেজে আছি এই সুবিধেগুলো পাব। কলেজ থেকে বেরিয়ে চাকরি পেতেও আমার এর থেকে সুবিধে হবে। চাকরিটি পেলে এসব ছেড়ে দিয়ে চলে যাব, এসব নিয়ে জীবনে ভাববও না। এরকম ছেলেমেয়েও আমি কম দেখিনি। আমি এখনই দশটা উদাহরণ দিতে পারি। ইউনিয়নগুলোর মধ্যে এবং ইউনিয়নের বাইরে। যেমন ধর একটা কলেজে তিনটে পার্টি আছে, এদের মধ্যে যে কি পরিমাণ নোংরা রাজনীতি, যাকে বলে ‘পলিটিকিং’, আছে, ব্যক্তিগত রেষারেষি, দলীয় রেষারেষি আছে তা ভাবা যায় না। একই দলের মধ্যে তিনরকম ছেলেমেয়ে তিনরকম কথা বলছে, তাদের মধ্যে মারামারি চলছে, কেবল ব্যক্তিগত স্বার্থে, কিংবা, একেবারে তাৎক্ষনিক লাভের খাতিরে তাৎক্ষনিক দলবাজি নিয়ে। কুৎসিত ব্যাপার।
    তার মানে কি ইউনিয়ন থাকবে না? অবশ্যই থাকবে। ইউনিয়নের অনেক দরকার আছে। নিশ্চয়ই সে কলেজের সঙ্গে নিগোশিয়েট করবে, ছাত্রছাত্রীদের উপকারের জন্য নানারকম চেষ্টা করবে। এই কারণে থাকবে। কিন্তু কোন ইউনিয়ন এখন এটা করে না। একটা ইউনিয়ন দেখাতে পারা যাবে না, যে এই কাজটা করে। যদি বা কিছু ছেলে করতে চায়, তাদের করতে দেওয়া হয় না। কারণ করতে দেওয়ার কারণ হচ্ছে কেউ যদি এটা করে তবে কালকে সে নেতা হবে। নেতারা তো সেটা অ্যালাউ করবে না। এই জিনিষটা আমি কিন্তু বলব, অনেক অসুখের কারণ। এই দুর্নীতি বন্ধ করতে না পারলে, এই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে না পারলে যতই ওয়েবসাইট কর আর যতই যা কর, গোলমাল হবেই। হবেই, কেউ ঠেকাতে পারবে না। সুতরাং এই জায়গাটাকে বন্ধ করতে হবে। ওয়েবসাইট করলে এরা অনেকেই অনেককিছু করতে পারে না এটা ঠিক, আবার করতে পারেও। সেইরকম পলিটিকাল ইন্টারফেয়ারেন্স যদি থাকে, তবে যে সার্ভিস প্রোভাইডার ওয়েবসাইটটা করেছে, তাকেই ইনফ্লুয়েন্স করে করা যায়। এ উদাহরণ আছে। ইন্টারনালি কিছুটা করাপ্ট করার চেষ্টা হয়েছে এবং কিছুটা করাও হয়েছে। এটা আমার নিজের সময় হয়েছে। এটা নিজে দেখেছি। এখন, এগুলো তো প্রমাণ করা যায় না। প্রমাণ করতে পারব না। এই ইউনিয়নগুলো এবং ইউনিয়নের বাইরে যারা আরও কিছু লোকজন থাকে, ধর একটা জায়গায় এসএফআই এর ইউনিয়ন আছে, সেখানে তৃণমূল ছাত্র-পরিষদেরও একটা দল আছে, দুই দলই ছাত্রদের ওপরে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করবে। ভর্তির সময় দুজনের একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়, একটা ভাগাভাগি। এটা হয়, এবং অভিভাবকদের এবং ছাত্রদের হ্যারাস করা হয়, চলে একটা নির্দয় অত্যাচার। টাকা দাও, প্রতি মূহুর্তে টাকা দাও, কলেজের গেটে কৌটো নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, পয়সা না দিলে তুমি ঢুকতে পারবে না, প্রত্যেক গেটে, কোন ছেলেমেয়ে যদি এটাতে বাধা দেয়, তাকে মারধোর খেতে হবে, বিশেষ করে অ্যাডমিশনের সময়। এবং জোর করে প্রসেশনে নিয়ে যাওয়া হবে, জোর করে মিটিং এ নিয়ে যাওয়া হবে। ক্লাস করতে দেবে না, থাকতে হবে। ক্লাসের ভেতরে ঢুকে আমি এই করব স্যার, আমি অমুক আমি তমুক। এগুলো বলা। এবং বেশিরভাগ টিচারই দেখেন যে, এই গণ্ডগোলের মধ্যে গিয়ে লাভ নেই, কারণ তিনি প্রোটেকশন পাবেন না, অথরিটি তাঁকে সাহায্য করবে না, কাজেই তিনি চুপ করে থাকেন। তিনি কী করবেন? আমাদের মত কিছু মার্কামারা লোকজন, এটা আমরা সহ্য করতাম না। তার ফলে আমাদের অনেক পেছনে লাগা সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু তবুও আমরা অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম। আমার ক্লাসের মধ্যে ঢুকে দুটো ছেলেকে বার করে নিয়ে যাবে, এমন ক্ষমতা কোন ইউনিয়নের ছিল না। কেউ তারা আমাকে ঘাঁটাতো না।
    যখন অ্যাডমিশন হয়, বা একটা ছেলে যখন অ্যাডমিশন নিতে আসে তখন তার নাম ঠিকানা লিখে নেওয়া হয়। এইটা একটা অপ্রত্যক্ষ ভীতি প্রদর্শন, যে তোমার নাম ঠিকানা আমার কাছে রইল, আমি কিন্তু তোমাকে দেখে নিতে পারি। যখন আগের পদ্ধতিতে অ্যাডমিশন হত তখন এটা হত, এখন আর সে সুযোগ থাকবে না। আর একটা হচ্ছে, যখন অ্যাকচুয়াল অ্যাডমিশনটা হচ্ছে, তখন একটা ছেলে বসে থাকবে, বসে থেকে সে ঐ নাম ঠিকানা লিখে নিচ্ছে। তার মানে কি? সে বলছে কি না আমাদের সঙ্গে এটা একটা যোগাযোগের পদ্ধতি। আসলে যোগাযোগের পদ্ধতি নয়। ওটা হচ্ছে ভয় দেখাবার পদ্ধতি। এরকম অনেক উদাহরণ আছে। বাড়িতে গিয়ে হামলা হয়েছে এরকম অনেক উদাহরণ আছে।
    এর ফলে যেটা হয়, অ্যাডমিশন প্রক্রিয়াটা ছাত্রছাত্রীদের মনে একটা সাঙ্ঘাতিক দাগ কাটে, একটা ক্ষত সৃষ্টি করে। বহু ছেলেমেয়ে যারা ভাল রেজাল্ট করে পড়তে এসেছে তারাও বলেছে যে আমাদের যে কি হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়েছে। ওদের কথা শুনে আমাদের চলতে হবে ওদের কথা শুনে যদি না চলি তবে আমার বিপদ হবে। এবং বিপদ হতেই পারে। সুতরাং এইটা এখুনি বন্ধ না করলে, কিছুতেই কিছু করা যাবে না। এটার ফলে একটা সমস্ত ছাত্র, মানে ভর্তি হতে আসা ছেলেমেয়ে এবং বাবা-মায়েদের মধ্যে এই ধারনাটা তৈরি হয়েছে যে কাউকে না ধরলে সরাসরি অ্যাডমিশন হয় না। এই বিশ্বাসটা মানুষের মনে থাকে যে ব্যাপারটা খানিকটা আমাদের, মানে শিক্ষকদের, হাতেও থাকে, আমরা যা বলব তাই হবে। যেহেতু আমরা এমন একটা দুর্নীতি-গ্রস্ত সমাজে বাস করি, যেখানে, দুর্নীতিটাই জীবনের প্রায় মূল ধারা, সেখানে মানুষ সেটা মেনেই নেয়। ও ঠিক আছে টাকা দিলে যদি হয়ে যায় তবে দিয়ে দেখাই যাক না! এই ধারণার প্রভাব যে কতটা মারাত্মক হতে পারে তা আমরা শিক্ষকরা অনেক দেখেছি। যখন একটা ছেলে বা একটা মেয়ে দেখে যে ওই কতগুলো ছেলেমেয়েদের হাতে এত পয়সা বা এত ক্ষমতা, তখন বাচ্চা ছেলেমেয়ে তো, তাদের মনের মধ্যেও ভাবনাটা ঘুরতে থাকে, আমিও তো এটা করতে পারি। এবং পরবর্তীকালে তাদের মধ্যে অনেকেই এটা করে। তবে বেশির ভাগই এমন করে না। যে কোন কলেজে নিরানব্বই দশমিক নিরানব্বই ভাগ ছেলেমেয়ে, ইউনিয়নের সঙ্গে জড়াতে চায় না, কারণ তারা তিতিবিরক্ত। ইউনিয়ন বলে আমরা মেজরিটি - ওসব মিথ্যা কথা। যেখানে নির্বাচন হয়ও সেখানেও এই একই জিনিস হয়। সবাই জানে যে দাদাদের কাছ থেকে হেল্প না নিলে হবে না। গার্জেনরাও জানে পাড়ায় দাদাদের কাছ থেকে হেল্প নিতে হয়, কলেজেও দাদাদের কাছ থেকে হেল্প নিতে হয়। কোন না কোন মহলকে ধরতে হবে অ্যাডমিশনের জন্য। এবং ঐ মেধা তালিকাটাতেই তো শেষ হবে না। মেধা তালিকা শেষ হবার পরেও যদি সিট থাকে, তাহলে কোথা থেকে নেওয়া হবে?
    রাজনৈতিক সদিচ্ছা, ব্যক্তিগত সদিচ্ছা থাকলে কিছু করা যায় না তা নয়। একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে স্থানীয় নেতারা, বা ছাত্র সংগঠনের স্থানীয় নেতারা, তারা এমন একটা ভাব করে থাকে যে তারা হচ্ছে ভীষণ ভাল, কলেজ কর্তৃপক্ষ হচ্ছে দুর্নীতি-গ্রস্ত। কলেজ কর্তৃপক্ষ দুর্নীতি-গ্রস্ত থাকে না একথা আমি বলছি না। থাকে। সেও অনেক উদাহরণ আছে, আমি দশটা উদাহরণ দিতে পারি যে কর্তৃপক্ষ, হয়ত শিক্ষকদের একটা ছোট্ট অংশ, শিক্ষাকর্মীদের একটা ছোট্ট অংশ, দুর্নীতিতে জড়িয়ে আছে। অ্যাডমিশনের সময় এরকমও তো হয় যে ছাত্র ইউনিয়নের একজন এদিকে বসে নাম লিখছে আর পাঁচ টাকা করে নিচ্ছে আর ওদিকে কোন শিক্ষাকর্মী বসে নিচ্ছে এরকমও উদাহরণ আছে। দুটোই হয়। স্থানীয় নেতারা এসে বলে, দুর্নীতি, আপনারা দুর্নীতি করছেন। আর মিথ্যে কথা? মিথ্যে কথা বলাটা তো রাজনৈতিক শিক্ষার অন্যতম অঙ্গ। সবাই এটা জানে।
    যেহেতু ভর্তি একটা অর্থ উপার্জনের বিরাট জায়গা, সেইজন্য যতরকমের, ইংরেজিতে একটা কথা আছে না, ইটের তলা থেকে বেরিয়ে আসছে পোকাগুলো, কামিং আউট অফ দ্য উডওয়ার্ক, অ্যাডমিশনের সময়, দুনিয়ার যত এই দু’নম্বরি লোকজন এসে জড়ো হয়। ভিতরে বাইরে সব জায়গায় এবং সবার উদ্দেশ্যটা এক -- কী করে এই ছেলেমেয়েগুলোর কাছ থেকে পয়সা আদায় করা যায়। এটা হচ্ছে একদম নিয়ম। এবং বলা হবে আমরা কন্ট্রোল করছি। কেন করছি? তাও এটা একদম এক দুই করে বলা দেওয়া যায়। এক নম্বর হল আমরা ছাত্রদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য করছি। এখানে যেটা প্রশ্ন করা হয় অনেক সময়, যে আমাদের ছাত্রদের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে কিভাবে? এরা তো আমাদের ছাত্রই হয়নি এখনো। তা তাদের স্বার্থ রক্ষা করছ কী করে? তখন বলবে, না - মানে যুব-সমাজের স্বার্থ রক্ষা করছি।
    সীট বাড়িয়ে দিন। সীট বাড়িয়ে দিন বললেই তো আর হয় না। আমি যে পদ্ধতিতে সীট ভাগ করায় সমতা আনার কথা বললাম, এরা সে কথা বলছে না। এরা বলছে সীটের সংখ্যা বাড়িয়ে দিন। পঞ্চাশ জনের জায়গা আছে, একশজন নিন। একশজনকে নেওয়া মানে হচ্ছে পঞ্চাশ জনকে বলা - তুমি এসো না। এবং ওরাও ওই পঞ্চাশ জনকে বলছে তোমরা ভর্তি হবে কিন্তু তোমাদের আসতে হবে না। আর একটা কথা তারা যেটা বলে সেটা হল, আমরা এই পুরো প্রসেসটাকে মনিটরিং করছি। আমরা নজর রাখছি যে প্রসেসে কোন দুর্নীতি হচ্ছে কিনা। আর একটা মিথ্যা কথা। কারণ দুর্নীতিটা তো যারা করছে তারাই নজর রাখার চেষ্টা করছে। ‘অনলাইন’ হলে এরা অখুশি। তাহলে তো আর নজর রাখার ব্যাপার নেই। এবং এরা হচ্ছে কর্তৃপক্ষের কর্তৃপক্ষ, অথরিটির অথরিটি, যাকে বলে সুপ্রা-অথরিটি। আমাদের কথা ছাড়া চলবে না, আমার কথা অনুযায়ী সব কিছু করতে হবে। এইটা আর একটা ব্যাপার। এরা আর একটা জিনিষ, যেটা আগেই বলছিলাম, মিথ্যা গুজব ছড়ায়। বলে দিল, লাস্ট ডেট অফ অ্যাডমিশন? সেটা হচ্ছে ৩০ তারিখ। হয়ত অ্যাডমিশনের লাস্ট ডেট ২০ তারিখ। ফলে অনেকে এলো না। তারা তো লিস্ট থেকে বেরিয়ে গেল। আর একটা যেটা করে সেটা হচ্ছে ছাত্রদের অভিভাবকরা যাতে সরাসরি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা না বলে তার চেষ্টা করে। কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে তো ঠিকটা জানবে। ওদের কাছে কী দরকার, আমার সাথে কথা বলুন। ওরা কি জানে! আমি বেশি জানি। এটা বলে। এবং আর একটা যেটা সেটা খুব মারাত্মক, সেটা হচ্ছে যেদিন অ্যাডমিশন হবে, আজকে ধর অ্যাডমিশনের ডেট, বারোটা থেকে অ্যাডমিশন, সাড়ে দশটা থেকে তীব্র মারামারি হল। অনেক ক্ষেত্রে বহু ছেলেমেয়ে ওই মারামারি দেখে ভর্তি হতে আসে না, চলে যায়। এমন একটা বোমাবাজি করল, মারামারি করল, গণ্ডগোল করল – এটা যে সবসময় সাজানো হয় তা না, সত্যি সত্যিও হয়, আবার আমি নিজে দেখেওছি, ইচ্ছে করে হয়। একবার আমার মনে আছে আমাদের কলেজে অ্যাডমিশন হয়েছিল, শেষ বছর। অ্যাডমিশন টেস্ট হবে যেদিন সেদিন এমন মারামারি জুড়ে দিল, অ্যাডমিশন টেস্টে আসার কথা ছিল ৪০০ ছেলেমেয়ের, এলো ২০০। ঠিক সংখ্যাটা আমার মনে নেই, তবে ওইরকম কিছু একটা সংখ্যা। পঞ্চাশ শতাংশ ছেলেমেয়ে পরীক্ষা দিতেই এলো না। গার্জেনরা দেখল যে কলেজে এত মারামারি হয়, সেই কলেজে আমি ভর্তিই করব না। তারা চলে গেল। সত্যি সত্যি যে মারামারিটা হয় সেটা হচ্ছে এলাকা দখলের লড়াই। এটা আমার জায়গা, এই এলাকায় তুই ঢুকতে পারবি না। এখান থেকে যা টাকা তোলার আমি তুলব, তুই ঢুকতে পারবি না। এতে ছাত্র ইউনিয়ন যেমন থাকে, পাড়ার মাস্তানরাও থাকে। এদের নিজেদের মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকে। এইটা যদি না যায়, তাহলে এই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, আমার পার্টির নির্দেশে অ্যাডমিশন হতে হবে, আমি বলব এই ভাবে অ্যাডমিশন করতে হবে, আমি বলব – একে নিতে হবে, এই করতে হবে। আমার পার্টির লোক কলেজে ঢুকতে পারবে, অন্য পার্টির লোক কলেজে ঢুকতে পারবে না। এবং সমস্ত ব্যাপারে আমার কথা শুনে চলতে হবে, এটা তো কলকাতার কলেজগুলোতে অতটা হয় না। হয়, সব জায়গাতেই হয়, কিন্তু তুলনায় কম। মফঃস্বল কলেজগুলোতে, কি যে অবস্থা, এটা যারা মফস্বলে থাকেন বা মফঃস্বল কলেজে চাকরি করেন, বা প্রশাসনে আছেন, তাঁরা ছাড়া আমরা কেউ ভাবতেই পারি না, যে কী হয় সেখানে। কি সাঙ্ঘাতিক কাণ্ড হয়। কিন্তু কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না। বলেন না, ভয়ে বলেন না। সেইসব জায়গায়, আমি জানি এরকম কিছু মানুষ প্রিন্সিপাল হতে গেছেন, একজনকে জানি, তিনি তিনদিন ছিলেন। আর একজনকে জানি তিনি বোধহয় বছর তিনেক ছিলেন। তারপরে তাঁকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দেখাতে হয়েছিল। এই জিনিষটা হতেই থাকে, এবং এই যে ঘুষ দেওয়াটা, ঘুষ দেওয়া এবং ঘুষ খাওয়ার প্রবণতা, দুটোকেই বন্ধ করা যায়। কিন্তু কে বন্ধ করবে? এবং আমি যেটা বারে বারে তখনও বলতাম, যে কোন ছেলে বা মেয়ে যদি ধরা পড়ে, যে ওই টাকা নিয়ে ভর্তি করার ব্যবস্থা করেছে, তক্ষুনি তার দৃষ্টান্তমূলক সাজা হওয়া উচিত। একটা ঘটনার কথা আমার মনে আছে। একটা ছেলে ৬০০ টাকা নিয়েছিল একজনের কাছ থেকে ভর্তি করিয়ে দেবে বলে। যে ছেলেটার কাছ থেকে নিয়েছিল, সে একটা নিরীহ ছেলে, তার এমনিতেই অ্যাডমিশন হয়ে যেত। তাকে বুঝিয়েছে হবে না বলে এবং ‘আমি ভর্তি করে দেব’ বলে টাকা নেয়। সেটা ধরা পড়ে, এবং তার কাছ থেকে টাকা আদায় করে ছেলেটাকে ফেরত দেওয়া হয়। এটা তো একটা লোক দেখানো ব্যাপার ছিল। সেই বছরই, হাজার হাজার টাকার লেনদেন হয়েছে, সেই তথ্য কর্তৃপক্ষ জানত। কিন্তু এক তো কর্তৃপক্ষর কিছু করবার ক্ষমতাই ছিল না। উপায়ও ছিল না, আর একটা হচ্ছে - ইচ্ছাটাও ছিল না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হয় কি? আবার কে ঝামেলায় যাবে। তুই দিয়েছিস কেন? টাকা দিয়েছিস? ও! দিয়েছিস, ঠিক আছে। ধরব না, চোখ বুজে থাকব, কান খুলে রাখব না। এটা করলে তো কোনদিন, কেউ কিছু করতে পারবে না। এবং এটা করা যায়। টাকা নিয়ে ভর্তি করিয়ে দিলে তাকে পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দাও না। এবং বিভিন্ন জায়গায়, যদিও এটা মোটে ভাল কথা নয়, পুলিশ ছাত্র ইউনিয়নের নেতাদের ওপর ভীষণ ক্ষেপে থাকে। ক্ষেপে থাকে কারণ কিছু করতে পারে না। চোখ রাঙ্গায় পুলিশের লোককে ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা, সে তো আমি দেখেছি। সে যদি একবার বাগে পায়, সেটা তো একটা উশুল করে, এইভাবে যদি চুরি করেছে বলে ধরা পড়ে তাকে তো পুলিশ ঠ্যাঙায়। যদিও সেটা অন্যায়, আমি সেটাকে সমর্থন করছি না। কিন্তু এটা ঘটনা, এটা হয়। সবচেয়ে মজা হচ্ছে প্রশাসনে থাকলে, অ্যাডমিশনের সময়, মিডিয়া তোমার কাছে খুব আসবে। সেই মিডিয়ার লোকেদের আমি বারে বারে বলেছি। টিভির লোককে বলেছি, খবরের কাগজের লোককে বলেছি, যে আপনারা কিচ্ছু না, একটা স্টিং অপারেশন করুন, একজন এসে বাইরে দাঁড়িয়ে বলুন আমার ছেলেকে ভর্তি করতে হবে, ভর্তি করতে পারছি না, কম নম্বর আছে। চারটে দালাল আসবে আপনার কাছে। আপনি স্বচ্ছন্দে তাদের ধরে ফেলতে পারবেন। মজার কথা হচ্ছে মিডিয়া কিছুতেই এই কাজটা করেনি। মিডিয়া ইচ্ছে করলেই পারত। কিন্তু করেনি। কেন করেনি? সেখানেও পলিটিকাল ইন্টারফেয়ারেন্স। কারণ মিডিয়া যতই বলুক আমি একেবারে সব দেখিয়ে দেব, তারাও পারে না, আর আজকাল তো মিডিয়াকে কলা দেখায়। টাকা নিয়েছি, বেশ করেছি, আমার ঘণ্টা করবে। সুতরাং ইচ্ছে যদি না থাকে, যদি সদিচ্ছা না থাকে তো কেউ কিছু করতে পারবে না। আর একটা জিনিষ হচ্ছে প্রশাসন সরাসরি যুক্ত থাকে অনেকক্ষেত্রে। এবং প্রশাসন যুক্ত থাকলে ছোটখাটো চুনোপুঁটিরাও জুটে যায়। এরকম অন্তত একজন খুব সম্প্রতিও একটা কলেজের দায়িত্বে ছিল। এই মুহূর্তে নেই, এত বেশি দুর্নীতি করেছে যে তাকে সরাতে হয়েছে। সে তো এই জিনিস করত। সরাসরি পয়সা নিত। এরকমও আছে। এরকম নেই তা না। কিন্তু তার সংখ্যা কম। সেটা হয়ত একশজনে একজন কি দুজন। সুতরাং অ্যাডমিশনের সময় দুর্নীতির সন্ধান পাওয়া গেলে, তক্ষুনি কিছু করা না যায় তাকে। এই দুর্নীতিও কিন্তু আমি বলছি একেবারে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর স্পষ্ট ফল। মানে সবকিছু ঘুরেফিরে কিন্তু গিয়ে দাঁড়াচ্ছে কিন্তু ওই জায়গাতেই। যে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, রাজনৈতিক দলের জড়িত থাকা, এইটা যদি বন্ধ হয়, তাহলে ইমিডিয়েটলি অনেক কিছু হতে পারে।
    এই কথাগুলোই আমার মনে এলো অ্যাডমিশনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে। আরও হয়ত কিছু আছে যেটা হয়ত আমার এখুনি মনে পড়ছে না। কিন্তু এই জিনিষগুলো করলে আমার মনে হয় ভাল হয়। মোটের উপর, এগুলো করা দরকার, এবং এই সব ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে যে পরিবর্তনের চেষ্টাটা করা হবে, সেটা হতে হবে কিন্তু একেবারে স্বচ্ছতম। সবাই জানবে এই জিনিস আমি পরিবর্তন করতে চলেছি। এই এই সমস্যা আছে। মানে একটা সমস্যাকে সমস্যা বলে শনাক্ত করা হচ্ছে প্রথম কাজ, তার সমাধান প্রক্রিয়ায় ঢুকে যাওয়ার জন্য। তো সমস্যাটাকেই তো কেউ সমস্যা বলে স্বীকার করছে না। এই পরিবর্তনটা সরকার থেকে করতে হবে। একটা অভিন্ন নীতি, প্রয়োগ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে করতে হবে। সেটা যদি করতে হয় তাহলে পুরো জিনিষটাকে স্পষ্ট এবং দ্ব্যর্থ-হীন হতে হবে, কোন হিডেন এজেন্ডা বা গোপন মতলব ছাড়াই। আমি আমার দুটো লোককে ঢোকাবো, আমার নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য নানা কাণ্ড করব, এটা যদি করা হয় তবে হবে না।
    বলছি বটে, আশা করা কিছু ভুল নয়, কিন্তু আমার আশঙ্কা, এসব কিছুই হবে না। যেমন চলছিল তেমনই চলছে, তেমনই চলবে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ | ১৫০৮ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    কমলাদি - Salil Biswas
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • hu | ***:*** | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৪৩72535
  • এটা একটা খুব ভালো লেখা। আরো অনেক লোকের পড়া উচিত। কিছু কি পরিবর্তন হবে? কে জানে!
  • Tim | ***:*** | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৪:৩৭72536
  • ভালো লাগলো লেখাটা। অনেক কিছু আমার অভিজ্ঞতার সাথে মিলেও গেল। তবে আমার মনে হয়না পরিবর্তনের কোন আশা আছে। যারা এই অব্যবস্থাটা থেকে ফায়দা তুলছে তারাই নীতি নির্ধারক। খামোখা কোন চাপে না পড়লে তারা এটা করবে কেন? সবটাই কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল হলে যা হয়, তাই হয়েছে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ তুলে দেওয়ার জন্যে অন্য যে উপায় আছে, তাহলো, আয়রনিকালি, রাজনীতি। এবার, মঙ্গলগ্রহ থেকে তো আর সেই রাজনীতি আসবেনা, কাজেই সেও একইরকম করাপ্ট এবং ধান্দাবাজ হবে। অ্যাডমিনস্ট্রেশন আর পলিটিক্স যতদিন আমাদের দেশে সমার্থক থাকবে, ততদিন এই ছবিই বজায় থাকবে।
    আরেকটা হতে পারতো, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব দৃঢ়চেতা অধ্যাপকদের যদি দেখাপাওয়া যেত, যারা প্রিন্সিপাল ভিসি এইসব পদে থাকতেন। কিন্তু সম্ভবত তাদের সবাইকে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
  • d | ***:*** | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১২:৫৩72534
  • যা বলছেন খুবই সত্যি কথা। কিন্তু সেসব শুনতে বয়েই গেছে ছিঁচকে চোর গুন্ডাদের।
  • সে | ***:*** | ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৪:৪৭72537
  • এতো সাংঘাতিক করাপশান।
  • Salil Biswas | ***:*** | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৭:৩২72538
  • সে = অনেক কিছুই তো তাও লিখিনি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন