এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • শিক্ষক দিবস ও সেই মেয়েটি

    Salil Biswas লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ | ১৫১৯ বার পঠিত
  • এই তো সেদিন, ৫ সেপ্টেম্বর, গেল “শিক্ষক দিবস”। বলছিলাম স্কুল থেকে ফেরার পথে এক বন্ধুকে, এই নিয়ে স্কুল কলেজ মিলিয়ে ৪৫টা শিক্ষক দিবসে হাজির থাকলাম আমি। ৪৫ বার ছাত্ররা আমাকে অভিনন্দিত করল, আমি তাদের এই নিয়ে ৪৫ বার স্নেহ ভালোবাসা জানালাম। আমার খুব ভালো লাগল এই নিয়ে ৪৫ বার। ওদেরও নিশ্চয় ভালো লাগল।
    সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণকে স্মরণ করা হল। স্মরণ করা হল না লক্ষ লক্ষ গ্রামেগঞ্জে পড়ে থাকা সেই সব দরিদ্র সম্বলহীন শিক্ষকদের যাঁরা নানা প্রতিকূলতা আর স্থানীয় নেতাগুণ্ডাদের হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও চেষ্টা করে চলেছেন তাঁদের বিশ্বাসমতো শিক্ষাদানের।
    আমাদের শ্রমজীবী বিদ্যালয়ে আমরা ছেলেমেয়েদের বুঝিয়েছি, কোনোকিছুই প্রশ্ন না করে গ্রহণ করবে না। অপচয় দেখলে প্রতিবাদ করবে। এই দুটো নীতি তারা মানতে শুরু করেই চক্ষুশূল হয়েছে কিছু মানুষের। তাহলেই বোঝা যায়, শ্রমজীবী পরিবারের মত প্রগতিশীল পরিসরেই যদি এরকম হয়, তাহলে প্রত্যন্ত গ্রামে প্রতিবাদী শিক্ষককে কেমন প্রথার প্রহারে জর্জরিত হতে হয়। কাজেই “তাঁদের বিশ্বাসমতো” শব্দবন্ধটি ব্যবহার করে তাঁদের প্রতি বড়ই অবিচার করা হল। এটা আমাদের শহুরে স্বভাব।
    আমার অচেনা সহকর্মীবৃন্দ, আমাকে মার্জনা করবেন।
    শিক্ষক দিবসে বারে বারে মনে হয়, আমি তো কলেজে পড়িয়েছি প্রায় সারা জীবন, আমি কি শিক্ষক দিবসে দাঁড়িয়ে কখনো ভেবে দেখেছি, এই শ্রদ্ধা, এই ভালোবাসা কি সত্যিই আমার প্রাপ্য? আজ, জীবনের প্রায় সায়াহ্নে এসে অন্য রকম শিক্ষকতা করতে করতে মনে মনে আবার নিজেকে সমীক্ষার সামনে রাখছি, চেষ্টা করছি ফিরে দেখে নিজেকে যাচাই করতে। বলছি আমার পুরোনো ও নতুন ছাত্রদের – আমার বিচার কর।
    ছোট্ট একটা কথা দিয়ে শুরু করছি।

    অনেকদিন আগে।
    একটি মেয়ে খাতায় লিখেছিল : ‘স্কুলে কত ভালো ছিলাম। এখানে আমার একদম ভালো লাগে না। কোনো নিয়ম নেই, কেউ নেই আমাদের শাসন করার, ভালোবাসারও কেউ নেই।’
    ক্লাস ইলেভেনের মেয়ে। কলেজ আর স্কুলের সন্ধিক্ষণে খানিকটা দিশেহারা। তখনো কলেজে কলেজে উচ্চমাধ্যমিক পড়ানো হত।
    ইংরেজি ক্লাসে চিঠি লিখতে দিয়েছিলাম মেয়েটিকে। বিষয়, কলেজ ভালো না স্কুল ভালো। তার গোটা চিঠিটার মধ্যে ঘুরেফিরে ওই একই কথা। ভুলে ভরা ইংরেজিতে। যথাসম্ভব ঠিকঠাক করে দিলাম, যদিও জানি, এই মেয়ে কোনোদিনই ইংরেজি ভাষাটা রপ্ত করতে পারবে না। কেননা এখানে তাকে কিছু শেখাবার কেউ নেই। আগেও তাকে কেউ তেমন করে ইংরেজি শেখায়নি। কিছুই কি শিখিয়েছে তাকে কেউ? তার চেয়েও বড় কথা, তার দিকে তাকিয়েছে কেউ? চিঠিটা তার অসচেতন সাহায্যপ্রার্থনা।
    একটু ভালোবাসুন আমাদের, একটু তাকান আমাদের দিকে। শাসনও করুন, কিচ্ছু আপত্তি নেই।
    যাদের পড়িয়েছি তাদের মনে আছে কি?
    শিক্ষকতা শুরু করেছিলাম সেই আটষট্টি সালে। তিপ্পান্ন বছর বড় কম সময় নয়। অনেক অনেক ছেলেমেয়ের সঙ্গে মিশেছি নানা ভাবে। তাদের কেউ শান্ত কেউ উদ্ধত, কেউ অনেক পড়ে কেউ কম, কেউ ভালো নম্বর পায় কেউ ফেল করে, কেউ আমাকে মনে রেখেছে কেউ রাখেনি। ভালো লাগত, যদি বলতে পারতাম, তাদের সকলকে মনে রেখেছি। কোনো কোনো মুখ স্পষ্ট ভাসে চোখের সামনে। কোনো কোনো মুখ আবছা। বেশির ভাগ মুখ আবার একেবারেই হারিয়ে গেছে।
    মনে আছে সেই ছেলেটিকে যার রোজ দেরি হয়ে যেত স্কুলে আসতে র‍্যাশনের দোকানের চাকরি সেরে। এসেই যে সকলকে উত্যক্ত করতে শুরু করত, আর তর্ক করত আমার মুখে মুখে। অত্যন্ত অসভ্য ছেলে বলে দুর্নাম ছিল যার, যাকে মাস্টারমশাইরা বলতেন, ছোটলোকের ছেলে। যে পর পর প্রায় এক মাস সব কাজ ফেলে আমাকে আগলে আগলে পৌঁছে দিত স্টেশনে, বাইরে থেকে আসা এক পরীক্ষার্থী আমাকে মারবে বলেছিল বলে। সেই পরীক্ষার্থীটিকে আমি নকল করতে দিইনি।
    মনে আছে সেই ছেলে দু’টিকে যারা কলেজে আমার এক শিক্ষাকর্মী বন্ধুকে মেরেছিল। আমাকে ভয় দেখিয়ে বলে পাঠিয়েছিল, ‘লাশ ফেলে দেবো’।
    মনে আছে সেই মেয়েটিকে, খাতা দেখে দিয়েছিলাম বলে যে আমাকে সসঙ্কোচে একমুঠো ফুল এনে দিয়েছিল।
    মনে আছে সেই ছেলেটিকে যে জানতে চেয়েছিল, আলডুস হাক্সলির ‘দ্য গেটস্‌ অব পারসেপশন’ বইটা আমি পড়েছি কি না, আমরা মাস্টারমশাইরা যাকে ঠাট্টা করতাম গোপনে, যার কৌতূহলকে আমরা বলতাম পাকামো।
    মনে আছে সেই ছেলেটিকে, প্রাকস্নাতক স্তরে ইংরেজি পড়ার যার ভীষণ আগ্রহ ছিল, যে প্রাণপণ চেষ্টা করত ইংরেজি পড়ার আর লেখার। কিন্তু সেই ছেলেবেলা থেকে তাকে কিচ্ছু ইংরেজি শেখানো হয়নি, সে কেবল অক্ষরগুলো চিনতে আর লিখতে শিখেছে। আর মনে পোষণ করে এসেছে সেই ভয়ঙ্কর ভুল ধারণা, এদেশে শতকরা নব্বই ভাগ লোক যে ধারণায় আচ্ছন্ন, ইংরেজি শিখলেই চাকরি পাওয়া যায়, জাতে ওঠা যায়। তার কথা উঠলে তো স্টাফরুমে হাসির রোল উঠত। সেবার পরীক্ষার পরে ছেলেটি যে কোথায় চলে গেল তা জানি না। গরিব ঘরের ছেলে। অনেক কষ্ট করে পড়া চালাত।
    মনে আছে আরও একটি তারই মত ছেলেকে, যার ভীষণ ইচ্ছে ছিল ইংরেজি পড়ার, যাকে আমি কিছুতেই তা পড়তে দিইনি, যে সব সময়ে কথা বলতো মাটির দিকে তাকিয়ে, কোনো এক আশ্রমে থাকার সময়ে তার মনে গভীর এক হীনমন্যতা প্রোথিত করে দেওয়া হয়েছিল, যার ভাইকে নাকি খুন করা হয়েছিল ওই আশ্রমেই।
    মনে আছে সেই ছেলেটিকে যে ভবানীপুরে রাস্তার ধারে আমাকে দেখে মুখ ঢেকেছিল, মাথায় করে পথে পথে মুড়ি বেচছিল বলে। মোটের উপর খারাপ ছাত্র সে ছিল না, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাম্মানিক ক্লাসে।
    মনে নেই সেই মাঝারি ছাত্রদের, যারা মাঝারি রেজাল্ট করে মাঝারি চাকরি পেয়ে মাঝারি জীবন কাটাচ্ছে।
    মনে নেই সেই খারাপ ছাত্রদের, যারা খারাপ রেজাল্ট করে সামান্য কোনো চাকরি করছে, অথবা চাকরি পায়ইনি। কী জীবন কাটাচ্ছে তারা তা আমরা জানিই না।
    বইমেলায় গেছি একবার। একটি মেয়ে যেতে যেতে উৎসুক মুখে দেখছে আমাকে। মনে হল হয়ত ছাত্র হবে। কিন্তু ঠিক চিনলাম না। কথাও বললাম না। নিরাশ হল মেয়েটি। ভবিষ্যতে কোনো মাস্টারমশাইকে রাস্তায় দেখে ও আর কথা বলতে চাইবে না।
    কেউ ভাবছেন কি, মেয়েগুলোকে ‘ছাত্র’ বলছি কেন? আমি সংস্কৃত জানি না, কিন্তু সেই সত্তর সালে এক বৃদ্ধ অধ্যাপকের কাছে শুনেছিলাম, ‘ছাত্র’ শব্দটার কোনো লিঙ্গভেদ হয় না।

    অন্য ছক
    কাকে মনে থাকে আর কাকে মনে থাকে না সেটা নির্ভর করে ছাত্রটির দৃশ্যমানতার উপরে। যে অন্যদের তুলনায় পৃথক, তাকেই আমরা মনে রাখি। যে পার্থক্যগুলো আমাদের চোখ টানে সেগুলোর হিসেব নিলেও একটা বিচিত্র ছক চোখে পড়বে। যে চেহারায় আলাদা সে আমাদের চোখ টানে। যে পোশাকে স্বতন্ত্র তাকে আমরা লক্ষ করি। যে খুব পড়ে তাকে আমরা তখনই দেখি যখন সে আমাদের কাছে আসে। খুব যে দুষ্টু তাকে দেখি শাসন করার সময়ে। আর খুব বেশি করে লক্ষ করি, মাথায় তুলি, প্রশংসায় প্রশংসায় আলোড়িত করি তাকে, যে খুব ভালো নম্বর পায়।
    ছকটার সঙ্গে কিন্তু ‘শেখা’ ব্যাপারটার সম্পর্ক বিশেষ দেখা যাচ্ছে না। অনেক সময়েই, যে শিখতে চাইছে তাকে আমরা মনে রাখছি হাসির খোরাক হিসেবে। মনে রাখার অন্য কারণগুলো সবই শিক্ষানিরপেক্ষ। পরীক্ষায় অনেক নম্বর পাওয়াকে আমি শিক্ষানিরপেক্ষ ব্যাপার বলেই ধরছি। যে সমস্ত ছাত্র অনেক নম্বর পায় তাদের কৃতিত্বের অবমূল্যায়ণ না করেও বলছি।
    কিন্তু যারা উপরে বলা বর্গগুলো থেকে আলাদা তাদের আমরা ভুলে যাই। তাদের সঙ্গে কোনো রকম দেওয়ানেওয়া আমাদের থাকে না। তাদের আমরা একটা মুখহীন দঙ্গল হিসেবে ভাবতেই অভ্যস্ত। আমাদের কাছে এদের পরিচয় ‘ক্লাস থ্রি’ বা ‘ইলেভেন ওয়ান’, অথবা ‘ফার্স্ট ইয়ার অনার্স’, অথবা ‘থার্ড ইয়ার টু’। কখনো বা আবার এরা ‘রুম নাম্বার নাইন্টিন’ অথবা ‘থার্টিফোর’ অথবা ‘ওয়ান’।

    অভিনেতা
    আমাকে কেমন মনে আছে অধিকাংশের, তা নিয়ে গল্প বলি একটা।
    একদিন রাস্তার ধারের একটা দোকানে খেতে গেছি। দোকানের ছেলেটি জিগ্যেস করল, আপনাকে কোথায় দেখেছি বলুন তো? আমারও চেনা চেনা লাগল ছেলেটিকে, কিন্তু অনেক ভাবার পরেও ঠিক ধরতে পারছিলাম না। বললাম, হয়ত রাস্তাঘাটে আমাকে দেখে থাকবে। খানিক ভেবে ছেলেটি বলল, আপনি কি নাটক করেন? মনে হচ্ছে আপনাকে অভিনয় করতে দেখেছি। বুঝলাম, ব্যাপারটা কী। বললাম, তুমি অমুক কলেজে পড়তে? তখন ছেলেটির মনে পড়ল,বলল, হ্যাঁ, হ্যাঁ, এবার মনে পড়েছে, আপনি তো আমাদের ‘স্যার’ ছিলেন।

    নিঃসঙ্গ
    মেয়েটির কথায় ফিরে যাই।
    স্কুলে তবু কাছাকাছি থাকা যায় শিক্ষকের। খানিকটা সময় দেন তাঁরা। একজন ক্লাস-টিচার থাকেন, সমস্যা দেখা দিলে তাঁর কাছে যাওয়া যায়। সমাধান না পেলেও গিয়ে দাঁড়ানো তো অন্তত যায়। গোটা ক্লাসটার দায়িত্ব নেন তিনি।
    আর এখানে? এক এক জন স্যার আসেন এক একটা জিনিষ পড়াতে। সময় মাত্র পঁয়তাল্লিশ মিনিট। বড়জোর এক ঘণ্টা। সপ্তাহে এক দিন কি দু’দিন। ওই উঁচু জায়গাটায় দাঁড়িয়ে কতগুলো কথা ছুঁড়ে দিয়ে চলে যান তিনি। কে বুঝলো, কে বুঝলো না সে নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় তাঁর নেই। সময় নেই একথা মিথ্যে নয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে ইচ্ছেও নেই।
    শয়ে শয়ে ছাত্র-ছাত্রী। বিরাট ওই ভিড়ে মেয়েটি একা। সাধারণ মেয়ে, লেখাপড়ায় ভালো না।
    এর পরে সে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবে। সেখানে লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়ের মধ্যে একা। তার পরিচয় সেখানে কেবল দু’টো সংখ্যাসমষ্টি দিয়ে। রোল নম্বর আর রেজিস্ট্রেশন নম্বর। সে পাশ করলে বা ফেল করলে তার আর তার পরিবার ছাড়া আর কারো কিচ্ছু যাবে আসবে না। খাতা দেখায় গোলমাল হলে সে কোনো সুবিচার পাবে না।
    কেউ কেউ বলবেই, মেয়ে তো, বেশি পড়াশোনার দরকার নেই। আমি জানি, জেনেছি খবর নিয়ে, মেয়েটি অনেক পড়তে চায়, অনেক কিছু জানার আগ্রহ আছে ওর। কিন্তু বেশি অনুসন্ধিৎসা প্রকাশ করতে ভয় পায় সে। সে ভাবে বেশি কথা বললে, স্যারেরা হয়ত বলবেন, মেয়েটা বেশি পাকা। তার ভাবনাটা যে সর্বাংশে ভুল এমন নয়।
    আর ক্লাসে কথা বলা তো নিষেধ বটেই।

    কেন চিনবে!
    আমরা বলি, চিনব কী করে? আমার প্রতিদিনের ক্লাসে এত ছাত্র থাকে যে তাদের সকলকে চিনে রাখা অসম্ভব। কথাটা খুব ভুল নয়। কিন্তু, সত্যি সত্যি চিনে রাখার চেষ্টা করি কি আমরা? আমার এক সহকর্মী ছিলেন যিনি সব ছাত্রের নাম রোল নম্বর মনে রাখতে পারতেন।
    নাটকে অভিনয় করার সময়ে অভিনেতা সামনের দু’একটা সারির পরে বসে থাকা দর্শকদের দেখতে পান না। হলটা অন্ধকার থাকে। তাঁর তো দেখার কোনো দরকার নেই। তাঁকে তখন চেষ্টা করতে হচ্ছে মঞ্চের উপর অন্য একটা জগত তৈরি করার। আমাদের তো তা নয়। আমাদের কাজ তো ছাত্রদের জগতের একজন হয়ে ওঠা, অথবা তাদের মিলিয়ে নেওয়া আমাদের জগতে। কোনোটাই করতে পারি না। নাকি, বলা উচিত, করি না? তাই ছাত্রদের কেউ কেউ আমাকে মনে রাখে অভিনেতা হিসেবে।
    সামনের দু’একটা সারির দর্শকদের দেখতে পান অভিনেতা। আমরাও পাই দেখতে, ওই সামনের সারির ছাত্রদের। তার পরে? কেবল কতগুলো মুখহীন অবয়ব।
    ওরা শূন্যচোখে তাকিয়ে আমার কথা শোনে। কিছু কথা বোঝে, কিছু বোঝে না। কিছু লিখে নিতে বললে সাগ্রহে লিখে নেয় তা। পরীক্ষায় আসতে পারে। লিখতে গিয়ে ভুল করে প্রচুর। আমি তা জানি। কিন্তু ভুল শুধরে দেবার সময় নেই আমার। সত্যিই নেই। সংখ্যায় ওরা বড় বেশি। কলেজে এমন একটা জায়গা নেই, যেখানে বসে শুধরে দেওয়া যায় ওই ভুলগুলো। আবার, আমাদের অনেকেই ওসব করতেই চান না। করবেনই বা কেন? এসেছি চাকরি করতে। আমাকে দেওয়া কাজটুকু করব, বাকিটা না করলে কেউ কিছু বলবে না। ওগুলো আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।
    কেউ কেউ আমরা দেখে দিতে চাই, কিন্তু পারি না। কেউ আবার দেখে দিতেই চাই না। অন্য কাজ থাকে আমাদের। ভুল শুধরে নিতে হলে আমাদের বাড়ি যেতে হয়। নিয়ম করে। পয়সা দিয়ে।
    আরও একটা মজার কথা। যখন দেখি আমার কথা শুনে ওরা কিছু বুঝছে না, তখন আমার খানিক ভালোও লাগে, নিজেকে বেশ পণ্ডিত বলে মনে হয়।
    ওদের ভুলগুলো নিয়ে আমরা খুব মজা করি। একটি ছেলে ক্লাস পরীক্ষাতে কলেজ নিয়ে রচনায় লিখেছিল, ‘আওয়ার কলেজ গুড কলেজ। আওয়ার প্রিন্সিপ্যাল ক্যারাকটার ভেরি সুইটফুল’। হাসি তো পাবেই। আমাদের বাবাকে তো আর ঘরামির কাজ করে আমাদের পড়ার খরচ জোগাড় করতে হয়নি।
    ওরা পরীক্ষা দেয়। কেউ পাশ করে, কেউ ফেল। শেখে না কিছু।
    আমরা দেখি না ওদের। ওরা চেনে না আমাদের। কোনো ছাত্র স্টাফরুমে এসে যখন জিগ্যেস করে ‘এন সি’ বা ‘এস ডি’ বা ‘এস বি’ বা ‘এ কে আর’ এসেছেন কিনা, তখন আমরা বিরক্ত হই। রেগে ভাবি, আমাদের নামটাও জানে না! কিন্তু ভাবি কি কখনো, কেন সে আমার নাম জানবে? আমি কি তার নাম জানি? আমার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক তো নেই! আমি তো তার কাছে রুটিনে উল্লিখিত কয়েকটা অক্ষর মাত্র – যাঁকে ভয় পেতে হয়, যাঁর কথা ভক্তিভরে শুনতে হয়, যিনি আমার নাম জানেন না, যাঁর কথা অনেক সময়েই আমি ভালো বুঝি না, যাঁর হাতে আমার মরণবাঁচনের চাবিকাঠি, পারলেই যিনি আমাদের ফেল করাবেন, ফেল করাতে পারলে খুশিও হয়ত হবেন, অনেক সময়ে খাতাটা ভালো করে না দেখেই। এই পরম শত্রুটির নাম জেনে সময় নষ্ট করবে কেন সে?
    হ্যাঁ। খাতা না দেখেই। সব সময়ে কি খাতা ভালো করে দেখি আমরা? দেখি না। কখনো কখনো আদৌ দেখি না, কখনো কখনো দেখি দায়সারা ভাবে। একটা সময় ছিল, যখন আমি, ব্যক্তিগতভাবেই বলছি, আমি খাতা না দেখেই নম্বর বসিয়ে দিতাম।

    নিরন্তর অচেনা মুখ
    এই চেনা বা না-চেনা আপাতদৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে নাও হতে পারে। কিন্তু প্রয়োজন যেখানে দেওয়ানেওয়ার সেখানে পারস্পরিক অপরিচয় জ্ঞানার্জনের পথে এক অপরিসীম বাধা হয়ে দাঁড়াবেই। জ্ঞানার্জন একমুখী স্রোত নয়। যে-কোনো একটা শ্রেণীকক্ষে শিক্ষক এবং ছাত্র দু’জনেই কিছু না কিছু শিখছে। সেই শিক্ষা বিষয়-বিচ্ছিন্ন হতে পারে, ভুল হতে পারে, আপত্তিকর হতে পারে, নেতিবাচক হতে পারে, তার ফলে কেবল শত্রুতাই বৃদ্ধি পেতে পারে, আবার খুবই ভালো হতে পারে, কিন্তু জীবনের অন্য সমস্ত পর্যায়ের মতই এখানেও শেখার ধারা অব্যাহত থাকে। সকলের ইচ্ছা অনিচ্ছা সদিচ্ছা আগ্রহ অনাগ্রহ সবকিছু ব্যতিরেকেই। তাই একটা শ্রেণীকক্ষে শিক্ষক এবং ছাত্র একটা অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। সেই বন্ধনকে যখন অবাস্তব বলে অস্বীকার করা হয় বা প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মকানুন দিয়ে তাকে প্রস্তরীভূত করে ফেলা হয়, তখন গোটা ব্যাপারটাই অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায়।
    চিনতে হবে। চিনতেই হবে পরস্পরকে। এটাই আজ বোধহয় সবচেয়ে বড় প্রয়োজন।

    শত্রু
    আমি দাঁড়িয়ে থাকি ওই কাঠের পাটাতনটার উপরে। সেই উঁচু জায়গাটা থেকে তোমাদের দিকে তাকাই। তোমরা বসে থাক সারি সারি ওই বেঞ্চিগুলোতে। আমার দিকে প্রথমে তাকিয়ে থাক অনেক আশা নিয়ে। তার সঙ্গে মিশে থাকে ভয়। এক সময়ে সেই ভয়টাই তোমাদের মনকে গ্রাস করে। আশা শুকিয়ে যায়।
    আশা কীসের, ভয়ই বা কেন?
    বড় বড় বইতে অনেক কথা লেখা আছে। সে সব কথা নিশ্চয় খুব মূল্যবান। কিন্তু তোমাদের কাছে তার কি কোনো দাম আছে? আর আমি? আমি ভালো করে কথাগুলোর মানেই বুঝি না। বিনয় করে, বা গর্ব করে বলছি না, সত্যিই বুঝি না। শুধু এটুকু বুঝি, আমাদের স্কুল-কলেজগুলোর যা অবস্থা তাতে ওসব বড় বড় কথা আর ভালো ভালো উপদেশ কিচ্ছু কাজে আসে না। তোমাদেরও না, আমাদেরও না।
    সেই ইতালিতে একজন পাদ্রি স্কুল থেকে ছাঁটাই হওয়া ছেলেমেয়েদের পড়াবার জন্যে কতগুলো পদ্ধতির কথা বলেছিলেন। আর একজন, তিনিও পাদ্রি, বলেছেন কী করে গরিব আর বয়স্ক নিরক্ষর মানুষদের লেখাপড়া শেখানো যায়। একজন শিক্ষাবিজ্ঞানের মাস্টারমশাইকে খুব উৎসাহ নিয়ে সে কথা বলতে গেলাম। তিনি গম্ভীর ভাবে বললেন, এসব কথা শিক্ষাবিজ্ঞানীরা অনেক আগেই বলে দিয়েছেন। আমার মনে হল, কী আশ্চর্য, ওই শিক্ষক মশাইয়ের কাজকর্ম দেখে কখনো মনে হয় না তো, এমন কতগুলো কথা তিনি জানেন!
    আমিও ওঁরই মত। আমার হাবভাব দেখলেও তো মনে হয় না যে আমি ওই পাদ্রির কথাগুলো শুনেছি।
    তোমরা আশা কর – অন্তত প্রথমে কলেজে ঢুকে – আমার কাছে নতুন কিছু শিখবে, নতুন কিছু জানবে। কেউ কেউ অবশ্য বলেন, আমার ধারণা ভুল। তোমরা কিছু জানতে বা শিখতে আগ্রহী নও একটুও। তোমরা কেবল পরীক্ষা পাশ করতে চাও। কখনো কখনো আমারও তাই মনে হয় তোমাদের হাবভাব দেখে। কিন্তু সত্যিই কি তাই? আর বেশ কিছুটা সত্যি যদি হয়ও, এমনটা হল কী করে? তোমাদের বয়স তো ষোল থেকে কুড়ির মধ্যে, ইতিমধ্যেই তোমরা জানবার সব আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছ, এও কি সম্ভব? তা যদি হয় তাহলে তো ব্যাপারটার মধ্যে, মানে আমরা যারা নাকি তোমাদের শিক্ষক, আমাদের কাজকর্মের মধ্যে খুব কিছু একটা গোলমাল আছে।
    আর সত্যি কথা বলতে কী, পরীক্ষা পাশ করতে চেয়ে তোমরা ভুল তো কিছু করনি। সারাক্ষণ পরীক্ষায় ভাল করতেই তো বলে চলেছি আমরা।

    উদ্ধত
    এইখানটাতেই ওই ভয়ের ব্যাপারটা এসে পড়ল এবার। পরীক্ষা-ভূতের ভয়।
    আমার হাতেই যে রয়েছে তোমার বাঁচামরার চাবিকাঠি। আমি ইচ্ছে করলেই তোমাকে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দিতে পারি। আমার ক্লাসে নিয়মিত হাজিরা না দিলে তোমাকে কলেজ থেকে তাড়িয়ে দিতে পারি, পরীক্ষায় বসতে না দিতে পারি। আমার ক্লাসে তুমি বোকার মত, শূন্য মুখে বসে থাক বলে আমি আড়ালে তোমাকে নিয়ে কত বিদ্রূপ করি। অথচ, আমার ক্লাসে তোমার কথা বলা কিন্তু আমি নিয়ম করে বন্ধ করে রেখেছি। কথা বললেই বকুনি খেতে হয় তোমাকে। আমি বলি, কী উদ্ধত, কী উচ্ছৃঙ্খল ছেলেমেয়ে যে ক্লাসে জুটেছে! কাজেই তোমাকে ধমকে, ভয় দেখিয়ে ক্লাসে বসিয়ে রাখার ব্যবস্থা করি আমি। তুমিও ছেলেবেলা থেকে শুনে এসেছ, চুপ করে থাকাই নিয়ম, ক্লাসে কথা বলতে নেই। সুতরাং, যখন কথা বল তখন মনে মনে ভাব অন্যায় করছ, আর সেই কল্পিত দোষ ঢাকার জন্যে যে সমস্ত কাণ্ড কর সেগুলো সত্যিই ঔদ্ধত্যের চেহারা নিয়ে ফেলে।
    মুখ বুজে চুপ করে বসে থেকে ভয়ানক বুদ্ধির পরিচয় কী করে দেওয়া যায়, আমার জানা নেই।

    শত্রু
    আমি তোমাকে বলি নির্বোধ, তুমি আমাকে মনে কর দণ্ডমুণ্ডের এমন একজন কর্তা যে তোমাকে পরীক্ষায় ফেল করাবার জন্য সব সময়ে তৈরি হয়ে আছে, যে তোমাকে এমন কতগুলো জিনিষ পড়তে বাধ্য করছে যেসব জিনিষ পড়তে তোমার একটুও ভাল লাগে না, যে তোমাকে শীতের বা বসন্তের সুন্দর দুপুরে একটা বদ্ধ ঘরে জোর করে চুপ করিয়ে বসিয়ে রাখে। আমি মনে করতে শিখেছি, সামান্য কয়েকজন উচ্চ মেধার ছেলেমেয়ে ছাড়া আর কেউই লেখাপড়ায় ভাল করতে পারে না, সবকিছু তো সবার জন্য নয়। কাজেই ক্লাসে একগুচ্ছের ছেলেমেয়েকে পণ্ডশ্রম করে না পড়িয়ে, বাছাই করা কিছু ছাত্রকে পড়ানই উচিত। আমি যাই ভাবি না কেন, বোকা তো তুমি নও, তাই , তুমি বুঝতে শিখে গেছ, আমি ওই ‘মেধা’ নামের অজুহাতটিকে খাড়া করে দিব্যি কেমন কাজে ফাঁকি দিচ্ছি। তুমি ভাব, আমি যখন প্রাইভেট টিউশন নেব বলে স্যারের কাছে গেলাম, স্যার তো কই পরীক্ষা করে দেখলেন না, আমি ভাল ছাত্র নাকি খারাপ! তখন তোমার মনে হয়, স্যারের তাহলে টাকার লোভ! ঠিকই মনে হয় তোমার।
    তার মানে হল, কাঠের পাটাতনটার উপরে বসানো আমার ওই চেয়ার টেবিল, আর তোমাদের বসার ওই বেঞ্চিগুলোর মধ্যে একটা অদৃশ্য দেওয়াল কে যেন তুলে রেখে দিয়েছে।

    শত্রু কে?
    যেদিন থেকে পড়াতে শুরু করেছি, সেদিন থেকেই দেখেছি, আমি যা পড়াতে চাই, যা পড়া দরকার বলে আমার মনে হয়, তার কোনোটাই আমাকে পড়াতে দেওয়া হয় না। তার বদলে যা আমি পড়াতে বাধ্য হই চাকরির খাতিরে তা আদৌ পড়ার প্রয়োজন আছে কি না, তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আমাকে কেউ কখনো জিগ্যেসও করেনি কী আমি পড়াতে চাই, কেনই বা চাই। অথচ দেখ, তোমাদের সঙ্গে সব চাইতে বেশি সময় কাটে আমার, তোমাদের ভালো-মন্দর সঙ্গে আমার রুটিরুজির, আমার কাজকর্মের যোগ সব চাইতে বেশি। সে-ই আমার মতামত কেউ চায় না। কখনোসখনো আনুষ্ঠানিক ভাবে কয়েকটা সভা করা হয়, কয়েকজন লোক সেখানে বক্তৃতা দেন, আরো কয়েকজন কতগুলো একেবারে দুর্বোধ্য এবং অদ্ভুত সব তথ্যে ভরা লেখা পড়েন, তারপর খবরের কাগজে পরের দিন ছাপা হয়, অমুক অমুক বিষয়ে শিক্ষকদের মতামত জানা হয়ে গেছে। সেই সব সভায় কিন্তু আমি উপস্থিতই থাকি না। উপস্থিত থাকেন গুটিকতক সরকারী প্রসাদপুষ্ট শিক্ষক নামধারী ব্যক্তি, কয়েক জন সরকারী আমলা, যখন যে রাজনৈতিক দল সরকার গড়ে ক্ষমতায় থাকেন তাঁদের প্রতিভূরা। ক্বচিৎ কদাচিৎ যদি আমি সেখানে গিয়ে পড়ি, আমার কথা কেউ শোনে না।
    অথচ এঁরাই অমোঘ নিয়ম বেঁধে বলে দেন আমি কী পড়াব, তুমি কী পড়বে।
    তোমার আমার শত্রু কি তাহলে একই লোকের দল?
    আর একটা মজার কথা হল, ক্ষমতায় বসা দল পাল্টায়, কিন্তু মুখগুলো একই থাকে। গায়ের রঙটা হয়ত সামান্য পাল্টায়। আগে একদম পাল্টে যেত। আজকাল সেটাও পাল্টায় না বেশি।
    সেই মুখগুলোকে চিনতে পারলে হয়ত তুমি আমি আর নিজেদের পরস্পরের শত্রু বলে মনে করব না। তাই প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালায় সেই মুখের মালিকরা আমরা যেন পরস্পরের দিকে সত্যি সত্যি না তাকাই।

    শোনা কথা
    একটা স্কুলে একটা ক্লাসঘর। মাস্টারমশাই বা দিদিমণি নিজের টেবিলে বসে আছেন। ছাত্ররা বসে আছে সামনে। এই ঘরে ওরাই রোজ বসে, সারাদিন ওই মাস্টারমশাই বা দিদিমণিই ওদের সবকিছু পড়ান। ঘরটা কেমন করে সাজানো হবে, সেটা তিনিই ঠিক করেন। ছেলেমেয়েরা তাঁকে সাহায্য করে। কী পড়ানো হয়? কী বই? বিষয়গুলোর একটা মোটামুটি ধাঁচ ঠিক করে দেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, কিন্তু কী কী বই পড়ানো হবে, বিষয়টার কতটা পড়ানো হবে, সেটা ঠিক করেন শিক্ষক। পরীক্ষা একটা হয় বটে, কিন্তু সেটা ওই ষাণ্মাসিক বা বাৎসরিক নামধারী দৈত্য নয়। পরের ক্লাসে যাওয়াটা নির্ভর করে সারা বছরের কাজের উপরে। একটা ছেলে ক’দিন হল স্কুলে আসছে না, দিদিমণি তার বাড়ি গিয়ে হাজির। একটা ছেলের জ্বর হয়েছে, শিক্ষক চললেন তার চিকিৎসা নিয়ে অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলতে। ওই মেয়েটা গান শিখতে চায়, শিক্ষক তার ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ওই বাচ্চাটার গালে লাল দাগ কেন? কোথাও কেউ ওকে মেরেছে নাকি? বাবা-মা? তাঁদেরও অধিকার নেই ওকে মারার। শিক্ষক চললেন দেখতে কী করা যায়।
    এমন নাকি হয় কোথাও কোথাও।
    ‘দিদিমণি’ আবার কে? প্রশ্ন করতে পারে কেউ। হ্যাঁ, ওই তোমরা যাঁকে আজকাল ‘আন্টি’ বল, তাঁরই মতো একজনের কথা বলছি। আমরা যখন স্কুলে পড়তাম, তখন ছেলে শিক্ষকদের ‘স্যার’ই বলতাম, আর মেয়ে শিক্ষকদের বলতাম ‘দিদিমণি’।
    অন্য একটা ক্লাসঘর। এটা কলেজ। এখানে মাস্টারমশাই বা দিদিমণি বসে আছেন, সামনে বসে ছাত্ররা। এরা অবশ্য ওই আগের ক্লাসটার ছাত্রদের চাইতে বয়েসে অনেকটা বড়। ‘পড়ানো’ হচ্ছে না, হচ্ছে আলোচনা। যেভাবে ছেলেমেয়েগুলো কথা বলছে শিক্ষকের সঙ্গে তাতে এখানে হলে হয়ত ক্লাস থেকে তাড়িয়েই দেওয়া হত। নাম ধরে ডাকছে শিক্ষককে, বড় জোর বলছে মিস্টার অমুক বা মিস অমুক, যত সব নিষিদ্ধ বিষয়ে প্রশ্ন করছে, হাসাহাসি করছে, সম্মান দেবার কোনো বালাই নেই। আর কী সব পোশাক পরেছে! বাবাঃ! কিন্তু শিক্ষক যা বলছেন, তা ঠিক বুঝে নিচ্ছে সকলে, কেউ পরীক্ষায় খারাপ করলে শিক্ষকেরই দায়, কেউ ফল ভালো না করতে পারলে শিক্ষকের কথার উপরে কর্তৃপক্ষ একটাও কথা বলতে পারছে না, কেন পরীক্ষায় খারাপ করল কেউ সে-নিয়ে অবশ্য শিক্ষককে জবাবদিহি করতে হতে পারে। একটা পরীক্ষার অর্ধেকটা খারাপ হলে সেটা এক মাস বা সাত দিন বা পনেরো দিন, এমনকি দু’বছর পরেও আরেকবার দিয়ে নেওয়া চলছে। বছর নষ্ট হওয়ার কোনো ব্যাপার নেই। আর পরীক্ষা? সেটা মোটেই পার্ট ওয়ান বা পার্ট টু বা হায়ার সেকেন্ডারি বা মাধ্যমিকের মত দেশজোড়া লড়াই নয়। অল্প ছেলেমেয়ে নিয়ে ছোট পরীক্ষা, অল্প জায়গা জুড়ে। যে পরীক্ষা দিচ্ছে সে চেনে যে পরীক্ষা নিচ্ছে তাকে। লুকোচুরি নেই কোনো।
    এমন নাকি হয় কোথাও কোথাও।
    এমন কি হতে পারে না আমাদের দেশে? না হওয়ার কিছু নেই কিন্তু।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ | ১৫১৯ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    কমলাদি - Salil Biswas
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • byaang | ***:*** | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৫:২৫72144
  • খুব খুব ভালো লাগল লেখাটা। একবার পড়ার পরে আরো কয়েকবার পড়লাম, মুগ্ধতা বাড়ল বই কমল না একটুও।
  • শ্যামলেন্দু মজুমদার | ***:*** | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৬:১০72145
  • এক কথায় অসাধারণ। সামগ্রিক অনুভব।
  • Salil Biswas | ***:*** | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৬:১৪72146
  • হ্হোতোবেলর কোতো কিছু চোখের সম্নে ভির কোরে দরলো। ডেখ্তে পেলম ভি্তোরিঅএর সিক্খিকদের। হোখ জে কেনো ভিজে উথ্ছিলো। অলোবস পেয়েছিলম কিন্তু তদের জোগ্যো হোতেই পরিনি। টই তো সে সোব দিঙ্গুলি তর কোরে বেরএ। ওল্লগে এ অদ্দই মর্লম, অবর চোখ ঝপ্স হোএ জছে।
  • Salil Biswas | ***:*** | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৬:৩২72147
  • Montake chhue gelo. Chokh je keno jhapsa hoe uthlo!! Victoriar vese uthlo ar sob sikkhikar mukhgulo. Tara cheyechhilo babar motoi ami jeno valo meye hoi. Kintu babar swapno to bastob rup nite pareni. Oi meyetir moto kono kichhu to hoeni. Taholeo parlam na korte. Ar collage sekhaneo sudhu adda, teacher ra pareni, chesta to chhilo onek. Jibonta boro klanto mone hoe. Egote hobei bachchaguloke nie tai na?
  • Amit | ***:*** | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৬:৩২72148
  • মন ভরে গেল আপনার লেখা পরে। প্রনাম নেবেন।
  • abantika | ***:*** | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৭:২৪72149
  • বড্ড ভালো লাগলো সলিল কাকু l প্রনাম আপনাকে, আরো একবার l
  • AS | ***:*** | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:২৯72154
  • খুব ভালো লাগলো
  • সিকি | ***:*** | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৪:৫৭72150
  • খুব ভালো লাগল।
  • ধুরন্ধর ঝাঁট | ***:*** | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৫:১১72155
  • প্রণাম নেবেন সার অসাধারণ লাগলো
  • Ishani | ***:*** | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৭:২৭72151
  • খুব ভালো লাগল |
  • Salil Biswas | ***:*** | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৭:৪০72152
  • তুই তো অনেক জরুরী কাজ করছিস, খুকু। ওই কাজেই তো বাবার ভাবনা মিশে আছে। তোর স্কুল অনেক বড় হবে। বাবা খুব খুশি হত দেখলে।
  • অরুন্ধতী | ***:*** | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১১:৩২72153
  • লেখাটা খুব ভালো লাগলো, ছাত্ররা পড়া না বুঝলে ক্লাসে যদি প্রশ্ন না করতে পারে, তবে ক্লাস নেবার কোনো মানে হয় না । লেখাটিতে অনেকেই নিজেকে দেখতে পাবেন কোথাও কোথাও ।
  • su | ***:*** | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:০৪72156
  • খুব ভালো লাগলো।
  • rakhi | ***:*** | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৫:৩১72157
  • কত কি যে টিপস পেলাম । এই কারণেই অপেক্ষা করি মিটিং গুলি তে , নতুন কিছু শিখব। তবে এই লেখা আরও ভালো লাগলো ব্যাক্তিগত মুহূর্ত গুলির জন্যে। ভারী ভালো লাগলো পরে ।
  • de | ***:*** | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১০:০২72158
  • ভারী ভালো!
  • মিলা | ***:*** | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৪:০৫72159
  • লেখাটা পরে ক্লাস ৬ এ ফিরে গেলাম, কাদতে কাদতে ক্লাস টিচার কে গিয়ে বলেছিলাম আমার কোনো বন্ধু নেই, একজন ই বন্ধু ছিল ওকে অন্য সেকশন এ দিয়ে দিলেন আমাকেও ওখানে পাঠিয়ে দিন, তিনি সেদিন মন দিয়ে আমার কথা শুনেছিলেন অনেকক্ষণ পাশে বসিয়ে, তারপর সারাটা বছর আমার জন্যে যা যা করেছেন সেগুলোর জন্যে আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব, ছোটবেলায় এরকম কয়েকজন কে পেয়েছিলাম ভাগ্গিস :)
  • আর এক ছাত্র | ***:*** | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৮:১১72160
  • একটা কথা জিগ্যাসা করি, খারাপ পাবেন না please,

    আসলে আমার এক অঙ্কের স্যার আছেন, যিনি কেমন পরান বলব না, তবে একই কথা, মানে প্রায় একই কথা বলতেন;

    তাই জানতে ইচ্ছা করল, এটা কি আপনি কোনো বই থেকে পরছেন...?
    পরলে,দয়া করে বই টার নাম আর লেখক এর নাম জানাবেন।।
  • b | ***:*** | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৫:৪১72161
  • '`আর এক ছাত্র'` কি অসমে থাকেন বা অসমে বড় হয়েছেন?
    নেহাৎ-ই ব্যক্তিগত কৌতুহল।
  • Salil Biswas | ***:*** | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৭:১৩72162
  • আর এক ছাত্র = কোন কথাটার কথা জানতে চেয়েছেন বুঝলাম না ... একটু উল্লেখ করে বলুন। এখানে কিছু কোনো বই থেকে লিখেছি বলে মনে পড়ছে না ... খারাপ কেন লাগবে? একটু বিস্তারিত বলুন। মনে করার চেষ্টা করি।

    b = এখানে আমার যে সব ছাত্রের কথা লিখেছি তাদের কেউ অসমে থাকে বা থাকতো বলে আমার জানা নেই।
  • b | ***:*** | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৭:৪২72163
  • সলিলবাবু, আপনাকে জিজ্ঞাসা করি নি। ওনাকেই করেছি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন