।।হাতকাটা হুব্বার হুমকি উপাচার্যকে।।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরীক্ষা অগাষ্ট মাসের শেষ সপ্তাহে। প্রায় তিরিশহাজার পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেবেন। কিন্তু ২৮ অগাষ্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের চুরি করা জন্মদিন। (একটা জন্মদিন অবধি চুরি করেছে তারা কংগ্রেসের ছাত্রসংগঠন ছাত্রপরিষদের নিকট হতে)। তাই তারা ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা বন্ধ করতে চায়। ফলত মুখ্যমন্ত্রী উচ্চ শিক্ষা দফতরের বকলমে এই পরীক্ষা বন্ধের নির্দেশ পাঠিয়েছেন উপাচার্যের কাছে।
উপাচার্য শান্তা দত্ত এরকম বেআইনি আবদার সপাটে ফিরিয়ে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের আপৎকালীন সভা ডেকেছিলেন এবং তাঁর নেতৃত্বে সিন্ডিকেটের প্রতিনিধিরা মোটামুটি সর্বসম্মতভাবে ওইদিন পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষাসূচী বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে বেজায় চটে শিক্ষামন্ত্রী হাতকাটা না গাঁটকাটা হুব্বার ভঙ্গিতে উপাচার্যকে হুমকি দিয়েছেন। তিনি যা বলেছেন তার সারমর্ম মোটামুটি এরকম, মুখ্যমন্ত্রী কোনো ব্যাপারেই হস্তক্ষেপ করেন না। এই একটা বিষয় একটু চেয়েছিলেন, তার কথাটা রাখা গেল না? এজন্য উপাচার্যের ব্যবস্থা হবে, তবে কী ব্যবস্থা সেটা গণমাধ্যমে বলা যাবে না!
বুঝে দেখুন, শাসকের স্পর্ধা কতদূর ছড়িয়ে পড়েছে!
উপাচার্যর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আগে শিক্ষামন্ত্রীকে উত্তর দিতে হবে এরকম সম্পূর্ণ বেআইনি, অন্যায় নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রী কেন দিতে বলবেন শিক্ষা দফতরকে? কোনো বেআইনি নির্দেশ উপেক্ষা করাই তো উচিত! এখানে উপাচার্যের অন্যায় কোথায়? বরং প্রশাসনের শীর্ষে বসে মুখ্যমন্ত্রী যদি এরকম তাঁর মর্জি অনুযায়ী বেআইনি নির্দেশ দিতে বলেন তাহলে তীব্রভাবে ভর্ৎসিত হওয়া তাঁর প্রাপ্য! যাতে একনায়কের কলেবর আরও ফুলেফেঁপে না ওঠে।
শিক্ষামন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী কী জানেন না যে উপাচার্য পরীক্ষার দিনক্ষণ ঠিক করেন না, তার জন্য অন্যান্যরা আছেন যাঁরা নানারকম দিন, ক্ষণ দেখে, ছুটি দেখে, ইউনিভার্সিটির নানারকম পাঠক্রমের সময়কে মাথায় রেখে, নানা ধরনের চলতে থাকা পরীক্ষাসূচির অন্তর্বর্তী সময় খুঁজে বের করে তারপর নতুন কোনো পরীক্ষার সময়সূচি নির্ধারণ করেন যা বেশ জটিল একটা প্রক্রিয়া এবং হঠাৎ করে বদলে ফেলাও যায় না। আর কোনো একটি রাজনৈতিক দলের জন্মদিন পালনের জন্য সেটা যদি বদলাতে হয় তাহলে এদেশের এক হাজার আটশ সাড়ে তেত্রিশটি রাজনৈতিক দল তাদের জন্মদিনে যাতে কোনো পরীক্ষা না হয় সেই দাবি তুলবে। তখন উপাচার্য কী করবেন? যুক্তি অনুযায়ী তাকে সবার দাবি মানতে হবে। তাহলে তো বছরে দিনই খুঁজে পাওয়া যাবে না পরীক্ষা নেওয়ার। কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি নয়, উপাচার্য শুধুমাত্র ইউনিভার্সিটি আর ছাত্রছাত্রীদের প্রতি দায়বদ্ধ। কোনো একনায়ক মুখ্যমন্ত্রীর বেআইনি নির্দেশে সে দায়বদ্ধতা যদি ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাহলে অবশ্যই তিনি সেটা উপেক্ষা করবেন!
অথচ এই একশ শতাংশ সঠিক কাজটি করার জন্য তাঁকে শাস্তির হুমকি শুনতে হচ্ছে হাতকাটা হুব্বা থুড়ি শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে? সাপের পাঁচ পা দেখা এসকল মন্ত্রী-সান্ত্রী, মুখ্য একনায়িকাদের আস্পর্ধা বাড়তে বাড়তে আজ আকাশ স্পর্শ করেছে।
উপাচার্যকে হুমকি দেওয়া হাতকাটা হুব্বা-মন্ত্রীকে পাল্টা স্পর্ধায় পরিষ্কার জানিয়ে দিতে চাই যে ক্ষমতার জোরে আজ এই হুমকি দিচ্ছেন সেই ক্ষমতায় আপনাদের বসিয়েছি আমরা অর্থাৎ সাধারণ জনগণ যাদের সামনে আপনি ও আপনার মুখ্যমন্ত্রী ভোটের আগে খোলস হইতে প্রস্ফুটিত ভুট্টার ন্যায় দন্তরাজি আকর্ণ বিকশিতপূর্বক, করজোড়ে এসে ভোটভিক্ষা করেন। জনগণের স্বার্থকে উপেক্ষা করে, আপনাদের ছাত্রদলের জন্মদিন উদযাপন আর দলনেত্রীর তুঘলকি ইচ্ছেকে মান্যতা দেবার জন্য নিয়মকানুন আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখাবার আস্পর্ধা, বুক ফুলিয়ে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি করার পর সত্যকে শাস্তি দেবার এই প্রবল আস্ফালন জনগণই ঘুচিয়ে দেবে একদিন। নিশ্চিত জানবেন, ‘সেদিন সুদূর নয় আর।’ মিথ্যের পায়ে লুটিয়ে এই কেন্নোজীবনে তদ্দিন আরও কিছু গুছিয়ে নিন নাহয়!
-- পল্লব কীর্ত্তনীয়া