এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিবিধ

  • ক্ষণিক

    সুকান্ত ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ | ৮০০ বার পঠিত
  • অফিস কম্পিউটারের কমিউনিকেটারে অনেক দিন পর হীতেশের বার্তা ভেসে উঠে –

    -কেমন আছিস শোভন?
    -আরে হীতেশ, অনেক দিন পর – ভাবি, ছেলে মেয়ে কেমন আছে?
    -ভালো সবাই – তুই কি খবরটা দেখেছিস কাগজে?
    -কি খবর? কোন কাগজে? আমি আসলে বাংলা ছাড়া –

    টিং করে শব্দের সাথে একটা ইংরাজী কাগজের লিঙ্ক চলে আসে। ক্লিক করার আগে লিঙ্কের শেষের কয়েকটি শব্দের দিকে চোখ চলে যায় শোভনের – এক মুহুর্তের জন্য যেন সময় থমকে দাঁড়ায়। পাশের এক পেজে লিঙ্কটা খুলতে থাকে – বামদিকের কোণে খুব চেনা দুটি ছবি ভেসে ওঠে – একটা হেডলাইনের শব্দ সময় পুরোপুরি দাঁড় করিয়ে দেয়। ওদিকে হীতেশের তাগাদা আসে –

    -দেখলি?

    শোভন কি বলবে বুঝতে পারে না। আসলে সে যে চ্যাট করছে সেটাই ভুলে যায় – অস্ফুটে বলে ওঠে, এটা কবে হল? হীতেশ ওদিকে বসে থাকে –
    অনুজের সাথে যেদিন প্রথম দেখা হয় সেদিনও শোভন দোনামোনা ভাবে দাঁড়িয়ে ছিল করিডোরের কফি মেশিনটার সামনে। মোট দশটা বাটনের কোনটা টিপে সে কি নেবে তাই ঠিক করে উঠতে পারে না – রোজকার ঘটনা। মাঝে মাঝে কাগজের কাপটা হোল্ডারে রেখে কফি মেশিনের সামনের সোফাটায় বসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে নানা নাম লেখা বাটনের দিকে – যার কোনটাই তার খুব প্রিয় নয়, আবার নয় অপছন্দেরও! মধ্যপন্থা যে কতটা অস্বস্তি বয়ে আনতে পারে তা এই কফি মেশিনটার কাছ থেকে শেখা হয়েছে ক্রমে ক্রমে। কোনটাকে আজ ভালো লাগাতে হবে সেই ভাবনায় শোভন কাটিয়ে দেয় অনেকটা সময় করিডোরে একা একা প্রায়ই। প্রায়শই ভাবে যে রোজ আলাদা আলাদা বাটন ট্রাই করবে, চক্রাকারে – কিন্তু আগের দিন কি খেয়েছিল, তা পরের দিন মনে থাকার জন্য রোজ আলাদা আর কিছু পান করা হয় না। ফলে শোভন নিজের ভালোলাগায় জোর দেয় – কোন নিয়মে নয় – ভালোবাসা নিজে থেকে না জাগলে, চেষ্টা করে জাগাতে অভ্যাস করে। সেই দিন এমনি ভালোবাসা জাগাবার চেষ্টা করছিল কফি মেশিনটার সামনের সোফায় বসে, এমন সময় নীচের তলা থেকে লালচে চুলের এক ভারতীয় উঠে এল এই তলায় কফি খেতে – মেশিন যখন, খারাপ তো হবেই!

    শোভন মনে মনে অনেকটাই বর্ণবিদ্বেষী – অর্থাৎ ভারতীয়দের তেমন একটা পছন্দ করে না, কেবলমাত্র যাদের চেনে তাদের ছাড়া। লাল চুলকে দেখে শোভনের মনের মধ্যে চিনতে চাওয়ার ভয় জেগে উঠল, সাধারণত যেমনটা ওঠে। লাল চুল জিজ্ঞেস করল, হিন্দীতে –

    -ব্যাঙ্গালোর থেকে নাকি?

    প্রশ্ন শুনে শোভনের বর্ণবিদ্বেষ আরো বেড়ে গেল। ঠিক এই প্রশ্নটা এরাবার জন্যই সে পি এইচ ডি করতে গিয়েছিল ইংল্যান্ডে – তারপর সেখান থেকে সরাসরি এই আমষ্টারডামের বহুজাতিক তৈল সংস্থার রিসার্চ অ্যাণ্ড ডেভেলপমেন্টের ল্যাবে যোগদান। কিন্তু ইতিমধ্যে জল বেশ অনেকটা গড়িয়ে গেছে – জব অফার আর জয়েন করার সময়টার মধ্যে সেই বহুজাতিক কোম্পানি বাকি আরো অনেকের মত ব্যাঙ্গালোরে একটা ল্যাব খুলে ফেলেছে। ফলতঃ বিদেশ থেকে ডিগ্রী নিয়ে জয়েন করলেও ভারতীয়দের মত দেখতে হবার জন্য শোভন ব্যাঙ্গালোরের পাবলিক বলেই চিহ্নিত হতে থাকল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে শোভনের কোম্পানি আর বাকি বড় বড় কোম্পানীগুলির মত ‘ইক্যুয়াল অপারচ্যুনেটি এমপ্লয়ার’। গোদের মত বিষ ফোঁড়ার মত ছিল নিখাদ বাঙলা মিডিয়ামে পড়ে উঠে আসার জন্য উচ্চারণে ভারতীয় টান – স্বান্তনা ছিল কেবল এই যে উচ্চারণ শুনে কেউ শোভনকে বাঙালি ধরতে পারত না!

    যাই হোক, একমুখ বিস্বাদ নিয়ে শোভন লালচুলের প্রশ্নের উত্তরে নিজের বহু ব্যবহৃত ব্যখ্যা শুরু করল – ইংল্যাণ্ড থেকে পি এইচ ডি, আমষ্টারডামে ডাইরেক্ট জয়েন করেছি। লাল চুলের অভিব্যক্তি দেখে বোঝা গেল না ঠিক ইমপ্রেসড হয়েছে কিনা বিদেশী পি এইচ ডি এবং ডাইরেক্ট বিদেশে জয়েন শুনে। উল্টে জানাল, সেও পি এইচ ডি। শোভন শুনে একটু নড়েচড়ে বসল – তাহলে লালচুলের ডঃ ডিগ্রী আছে!

    -আমার নাম অনুজ, তোমার?
    -আমি শোভন
    -তোমার কোন ডিপার্টমেন্ট? আমি ক্যাটালিসিস রিসার্চ টিমে জয়েন করেছি
    -আমি আছি মেটালার্জী – করোশন ডিপার্টমেন্টে।

    কথা ফুরিয়ে যায় শোভনের – এই সময় অন্য কেউ ডাকায় সেই দিনের মত বেঁচে যায়।

    আবার একদিন কফি মেশিন, এবার শোভনের সাথে হীতেশও কফি খেতে আসে। সাধারনত এই সময়টাই ওরা আলোচনা করি কিছু গুজব, ভারতে এল আই সি পলিসির মধ্যে কোনটা ভালো, ভারতে ইনকাম না করলেও ওদের ট্যাক্স ফাইল করা উচিত কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। হীতেশ শোভনের থেকেও অনেক বেশী সামাজিক এবং আরো বেশী করে ভারতীয়। ওরা পরস্পরের সাথে অনেক জায়গায় বিজনেস ট্রিপ ও বেড়াতেও গেছে। তবে সমস্যা একটাই - প্রবল নিরামিশাষী হীতেশ ভারতীয় খাবার ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেও পারে না এবং । একবার ডেল্টা এয়ারলাইন্সে অফিসের কাজে আমেরিকা যাবার সময় বিজনেস ক্লাস ও ফ্রীকোয়েন্ট ফ্লায়ারের প্রিভিলেজ নিয়ে সে এয়ারহোষ্টেসকে দিয়ে মাইক্রোওয়েভ ওভানে ডাল-ভাত রান্না করিয়ে খেয়েছিল। শোভন খুবই পছন্দ করত হীতেশকে কারণ অর মত পরোপকারী ছেলে সে বিদেশে বসে খুব একটা দ্যাখে নি – কিন্তু তার এই যে নতুন ভারতীয় অফিসে এলে তাকে খুঁজে খুঁজে বের করে জড়িয়ে যাওয়া শোভনের ঠিক পছন্দ হত না।

    এই ভাবেই মনে হয় অনুজকে খুঁজে বের করে ফেলেছিল হীতেশ। সেদিন কফি খেতে আবার উপরের তলায় উঠে আসে অনুজ যদিও ওর ফ্লোরে সেদিন কফি মেশিন ঠিক ঠাক কাজ করছিল। তিন জন ভারতীয় করিডোরে দাঁড়িয়ে – হীতেশ এবার ভালো ভাবে শোভনের সাথে অনুজের আলাপ করে দেয়। সেখান থেকেই জানা যায় সে অনুজও হীতেশের মতই গুজরাতী। আরো জানা যায় একবছরের জন্য একটা অ্যসাইনমেন্টে এসেছে সে এবং প্রাথমিক ভাবে হোটেলে থাকা শেষ হলে যে অ্যাপার্টমেন্টে উঠবে সেটা শোভনের অ্যাপার্টমেন্ট চত্ত্বরেই! প্রবল অনিচ্ছা সত্ত্বেও ওরা দুজন প্রতিবেশী হয়ে গেল – একজনার পঞ্চম তলায় এবং অন্যজনার দ্বিতীয় তলায় অ্যাপার্টমেন্ট রইল আমষ্টারডামের বিখ্যাত ক্যানেল ‘ব্রাউজগ্রাখট্‌’ এর ধারেই।

    -ভাবি কোথায় আছে এখন? হোটেলে?
    -না, আসলে ফ্যামিলি এখনো আনতে পারি নি –
    -কেন?
    -আরে আমাদের কোম্পানী তো সর্ট-অ্যাসাইনমেন্টের জন্য ফ্যামিলির ভিসা স্পনসর করবে না!
    -তাহলে? তুমি কি বাড়ি যাবে মাঝে মাঝে?
    -না, তেমন ইচ্ছা নেই, এখানে আমার নিজের পেপার ওয়ার্ক্স হয়ে গেলে ছেলে-বউকে তিন মাসের ট্যুরিষ্ট ভিসায় নিয়ে আসব।
    -তোমার ছেলে আছে নাকি?
    -হ্যাঁ, এই মাত্র দেড় বছর বয়স!

    কথায় কথায় জানা গেল যে শোভনের মত অনুজও ভুক্তভুগী কর্পোরেট ওভার-প্রমিসের। অনুজ বোম্বের কোন একটা ইউনিভার্সিটি থেকে এম এস সি করার পর বার্কে পি এইচ ডি করতে যায়। তার পর সেখান থেকে ইউ এস তে পোষ্ট-ডক। তা সে যখন ইউ এস থেকে এই কোম্পানীতে জব ইন্টারভিউ দেয় তখন ওকে প্রমিস করা হয় যে তোমাকে ব্যাঙ্গালোরের ল্যাব ম্যানেজার করে দেওয়া হবে – তবে ব্যাঙ্গালোরে সেটেল হবার আগে তোমাকে আমষ্টারডামের রিসার্চ ল্যাবে একটা চার বছরের ইনটারন্যাশানাল অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে। অনুজ সেই প্রস্তাবে রাজী হয়ে ব্যাঙ্গালোরে ফিরে যায় ইউ এস থেকে – কিন্তু গিয়ে দ্যাখে আমষ্টারডামের ডাক আর আসছে না! এই করে দুবছর গড়িয়ে যায় – শেষে চার বছর নয়, কিন্তু এক বছরের একটা অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে তাকে পাঠানো হয় আমষ্টারডামে।

    সেদিন চা খাওয়া শেষ – এই ভাবে শোভনের সাথে অনুজের আলাপ বেড়ে যায়। হোটেলে পনেরো দিন মত থেকে অ্যাপার্টমেন্টে শিফট করে সে। তার পর বিকেলে শোভনের সাথে বাড়ি ফেরে দুই জনে গল্প করতে করতে অফিস শেষে। ল্যাব থেকে ওদের দুজনের অ্যাপার্টমেন্ট হাঁটা পথের দুরত্বে। পরস্পর চেনা বাড়তে থাকে – দুই জনের দেখা যায় অনেক মিল রয়েছে চিন্তা ভাবনায়, তাই বেশ বন্ধুত্ব হয়ে যায়। সেই সময় শোভন মাত্র কিছু দিন হল ভারতে থেকে বিয়ে করে পাপিয়াকে আমষ্টারডামে নিয়ে এসেছে। একদিন বউ নিমন্ত্রণ করতে বলে অনুজকে রাতের বেলা খেতে।

    দেখে যা মনে হয়, অনুজ ওর থেকে অনেক বেশী রোমান্টিক – ওদের প্রেম করে বিয়ে। ছবি দেখায় শোভন ও পাপিয়াকে – ও নিজে গুজরাটি হলেও ওর বউ সাউথ ইন্ডিয়ান, পদ্মা নাম। ওদের পরিচয় হ্য় বার্কে পি এইচ ডি করতে গিয়ে। পদ্মার বাবা ওখানকার একজন বড় সায়েণ্টিষ্ট ছিল। রোমান্সের নাম শুনে পাপিয়া নড়েচড়ে বসে –

    -তোমরা প্রেম কোথায় করতে?
    -আরে আমার তখন প্রেম করার সময় এবং মুড কোনটাই ছিল না –
    -তাহলে?
    -আমি তখন সিনেমা, টিভি সিরিয়ালে অভিনয়ের জন্য হন্য হয়ে অডিশন দিচ্ছি
    -তোমার কি অভিনয়ের শখ ছিল নাকি?

    গল্প আরো জমে গেল অনুজের সাথে শোভনের – এক মাসের আলাপ হলেও ওদের দুজনের এই নিয়ে কোনদিন কথা হয় নি। জানা গেল অনুজ গুজরাটে পুরোদমে নাটক করত, বলতে গেলে নাটকই ছিল তার প্রথম প্রেম। পরে সিনেমার অডিশনের জন্য পোর্টফোলিও বানাতে শুরু করে – কিন্তু বোম্বেতে প্রচুর কম্পিটিশন। আর অনুজের কাছে পোর্টফোলিও বানানোর মত পয়সাও ছিল না। বাবাকে বিশাল ভয় খেত অনুজ, এবং বড় দাদাকেও। তাই ফ্যামিলি থেকে পয়সা চাইবার সাহস করে উঠতে পারে নি – এমন সময় সে জানতে পারে পি এইচ ডি তে চান্স পেলে নাকি স্কলারশিপ পাওয়া যায় – ফলতঃ পরীক্ষা দেওয়া এবং বার্কে চান্স পাওয়া। অনুজ লাজুক মুখে বলে,

    -আমাকে আসলে খারাপ দেখতে ছিল না তখন
    -সে তো তোমার লালচে চুল ও বডি দেখলেই বোঝা যায়, শোভন টিপ্পনী কাটে
    -আরে চুল তো লালচে করেছি কারণ সব চুল পেকে যাচ্ছিল। কিন্তু আগে আমি নিয়মিত শরীর চর্চা করতাম।

    তা বেশ বোঝা যায় অনুজকে দেখলে – পেটানো চেহারা।

    পদ্মা-অনুজের প্রেমের গল্প চলতে থাকে – আমষ্টারডামে গ্রীষ্মকালীন সূর্য অবশেষে অস্ত চায় অনেক রাত করে। ক্যানালের ধারে একের পর এক বোটে নানা ধরণের জনতা উল্লাস পার্টি করতে করতে যায়। আবার ভেসে চলে বোটের করে কোন নিবীড় পরিবার – বাচ্চারা একমনে স্যান্ডুইচ কাচ্ছে, আর বড়দের হাতে ওয়াইন গ্লাস। অনুজ উদাস হয়ে আসে –

    -উদ্যোগটা পদ্মার দিক থেকেই বেশী ছিল। পড়াশুনার চাপে আস্তে আস্তে অভিনয়ের পরিকল্পনা মাথা থেকে সরে যাচ্ছিল –
    -পোর্টফোলিও কি বানিয়েছিলে?
    -হ্যাঁ সেটা আর বলতে! কিছু মাসে টাকা জমিয়ে বানাই পোর্টফোলিও। বেশ কিছু দিন ঘুরেছিলাম সেগুলো বিলোতে।
    -ডাক এসেছিল কোথা থেকে?
    -তখন তো আর আজকের মত এতো বেশী টি ভী চ্যানেল ছিল না! তাই চান্সও লিমিটেড ছিল। তবে একটা সিরিয়ালে অভিনয়ের জন্য ডাক এসেছিল –
    -গেলে না কেন?
    -তত দিনে পদ্মা বেশ কাছে এসে গ্যাছে – আমাকে বোঝালো এই ভাবে কি ভবিষ্যত আছে? আর তা ছাড়া ওর বাবা গোঁড়া তামিল ব্রাক্ষণ, আমি সায়েন্টিষ্ট হলেও আমাকে এমনিতেই মেনে নেবে কিনা ঠিক নেই, তা উপরে সিরিয়াল করলে তো কথাই নেই!
    -মেনে নিয়েছিল শেষে? শোভন জানতে চায়
    -আরে তুমি না গল্প পুরো বানচাল করে দাও, খালি ক্লাইম্যাক্স জানার চেষ্টা! পাপিয়া অনুযোগ জানায়। বিয়েটা তো আগে হতে দাও!
    -অনুজ হাসে – বলে, আরে ভাবি তেমন কিছু নয়। পি এইচ ডি শেষে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব নিয়ে গেলাম। কিন্তু ওদের বাড়ির কেউ মানল না। তবে আমাদের বাড়ির দিক থেকে সমস্যা ছিল না কোন।
    -তারপর কি করলে?
    -কি আর করব, নিজেরা বিয়ে করে ফেললাম ওদের বাড়ির অমতে। দিয়ে আমি পোষ্ট-ডক করতে চলে গেলাম ওকে নিয়ে আমেরিকা। পরের চার বছর ওদের বাড়ির সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক ছিল না।

    পরিবেশ ভারী হয়ে আসছে মনে করে শোভন গল্প শেষ করার তাগাদা দেয়। কালকে অফিসও আছে আবার সকালে, আমষ্টারডামে রাত নেমে গেছে, ট্যুরিষ্টদের কথা বার্তা ভেসে আসছে খোলা জানালা দিয়ে। অনুজ পাঁচতলা থেকে দোতলায় নিজের ঘরের দিকে রওয়ানা দেয়, হয়ত পদ্মার কথা মনে করতে করতে।

    সময় এগিয়ে চলে – আমষ্টারডামে গ্রীষ্ম শেষ হয়ে যায়। ততদিনে অনুজের কাগজপত্র সব সেটেল হয়ে গ্যাছে – তাই সে ফ্যামিলির জন্য ট্যুরিষ্ট ভিসার আবেদন করে। ভিসা মঞ্জুর হয়ে যায় – একদিন ব্যাঙ্গালোর থেকে ওরা আসবে বলে শোভন, পাপিয়া ও অনুজ এয়ারপোর্ট যায় রিসিভ করতে। এক ফুটফুটে ছেলেকে ট্রলিতে চাপিয়ে পদ্মা বেরিয়ে আসে। পাপিয়া বাচ্চা ভালোবাসে, কোন কারন বশতঃ বাচ্ছারাও পাপিয়ার সঙ্গ পছন্দ করে। এই ভাবে পাঁচতলার সাথে দোতলা জড়িয়ে পড়ে পারিবারিক ভাবে। বেদান্ত বড় ন্যাওটা হয়ে যায় পাপিয়ার।

    নভেম্বরের শেষ দিকে আমষ্টারডামের প্রান্তে প্রবাসী ভারতীয়রা ‘দিওয়ালি মেলা’ আয়োজন করে। সেই মেলা প্রাঙ্গণ আবার হীতেশের বাড়ির খুব কাছে। তাই সেই মেলার দিন প্রথম বার তিন পরিবার একত্রিত হয় হীতেশের বাড়িতে। সেদিন মেলা বেড়িয়ে ফেরার সময় রাতের খাবার খেতে খেতে গল্প যেন আরো বেশী জমে ওঠে নতুন অতিথি পেয়ে। পাপিয়ার মত হীতেশের বউয়েরও অনুজ-পদ্মার প্রেম কাহিনী নিয়ে প্রচুর উৎসাহ – শোভন ভাবতে বসে সব মেয়েই একই রকম উৎসুক হয় কেন! হীতেশকে বেশী অবাক হতে দেখা গেল না – কারণ মনে হয় ও বেশী সময় বিবাহিত বলে। অতঃপর আগে বলা প্রেম কাহিনী রিপিট হল উভয়ের আমেরিকা চলে যাওয়া পরিবারের অমতে পর্যন্ত –

    -তাহলে আবার কি করে তোমার পরিবার মেনে নিল? পাপিয়া জিজ্ঞাসা করে।
    -নিশ্চয়ঃ বাচ্চা হবার পর! – হীতেশের বউ অনুমান করে!

    অনুজ আর পদ্মার একগাল হাসি দেখে বোঝা গেল এই ক্ষেত্রে অন্ততঃ ট্রা্ডিশনাল ভারতীয় ভাবে নিঃস্পত্তি হয়েছে ব্যাপারটার।

    গল্প করতে করতে পদ্মার চোখ চলে যায় দেওয়ালে ঝোলা হীতেশের মেয়ের একটা ওয়েল পোর্টেট-এর দিকে। সেটা কোথা থেকে আঁকিয়েছে জানতে চায় কারণ পদ্মার ইচ্ছা বেদান্তেরও একটা অমন পোর্টেট আঁকানোর।

    ঘটনা চক্রে সেই পোর্টেট এঁকে দিয়েছিল পাপিয়া। হিতেশের যখন বাচ্ছা হয় তখনো পাপিয়া আমষ্টারডামে আসে নি – শোভন পাপিয়াকে ই-মেল করে একটা ছবি পাঠিয়েছিল হীতেশ বাচ্ছা কোলে নিয়ে আছে। সেই ছবি দেখে পাপিয়া পোর্টেট এঁকে গিফট করে হীতেশকে বিয়ের পর ওদের বাড়ির প্রথম বার নিমন্ত্রণ খেতে গিয়ে।

    এই সব জানার পর, পদ্মা আর বেশী কিছু বলতে বাধো বাধো করে পাপিয়াকে। সেই দেখে পাপিয়া নিজেই বলে ঠিক আছে বেদান্তের একটা পোর্টেট সে এঁকে দেবে। পদ্মা হেসে ওঠে আনন্দে – অনুজের চোখেও দেখা যায় খুশীর ঝিলিক। এর কিছু দিন পরে শোভন নিমন্ত্রণ করে ওদের দুজনকে লাঞ্চে – ঠিক ছিল যে পাপিয়া পোর্টেট উপহার দিয়ে ওই দিন একটা চমক দেবে। কিন্তু দেখা যায় ওরা নিজেরাই চমকিত হয়, কারণ অনুজ-পদ্মা খেতে আসে একটা বিশাল ডাইনিং সেট গিফট নিয়ে। দাবী করে যে গুজরাতে নাকি নতুন কাপলের বাড়িতে খেতে গেলে এটাই ট্রাডিশন – সত্যি মিথ্যে নির্ণয় করে উঠতে পারে না পাপিয়া, কিন্তু ডাইনিং সেটটা খুব পছন্দ হয় – আরো মনে পরে যায় যে বিয়ের পর হীতেশও ঠিক এমন একটা কুকিং সেট গিফট দিয়েছিল! তাহলে মনে হয় গুজরাতী রুল আফটার অল্‌!

    বেদান্তের পোর্টেট এগিয়ে দেয় পাপিয়া – এবার ওদের চমকে ওঠার পালা। মনে হয় বুঝতে পারে নি বেদান্তের পোর্টেট এতো জীবন্ত হতে পারে বলে। পরে ওদের ঘরে গিয়ে শোভন দেখেছে ড্রয়িং রুমে বেদান্তের পোর্টেট কেমন ঝলমল করছে –

    ছবির কথা ভবে সম্বিত ফিরে পায় শোভন। টের পায় ও কম্পিউটারের সামনে অনেক ক্ষণ বসে এই সব কথা ভাবছিল। কথা শুরু হয়েছিল হীতেশের সাথে কমিউনিকেটরের চ্যাটে – ওর সামনে এখন খোলা একটা ওয়েব পেজ এবং তার কোনায় এক খুব চেনা ছবি – হীতেশের চ্যাটে লিখেছিল

    -ফোন করবি নাকি? শেষ কবে কথা বলেছিলি?

    শোভন বুঝতে পারে না কি বলবে। আমষ্টারডামের ক্যানেল মনে পড়ে যায়, সেই বাড়ির পিছনের ইতালিয়ান রেষ্টুরান্ট যেখানে ক্রীসমাস ইভ কেটেছিল অনেক দিন পর ভারতীয় সঙ্গে! সেই বার্সিলোনায় শীতের সন্ধ্যেবেলা, যেখানে অনুজ আর সে হন্য হয়ে খুঁজছে একটা ইন্ডিয়ান রেষ্টুরান্ট – ক্লান্ত, অবসন্ন এবং হয়ত ক্ষুণ্ণ পদ্মা আর পাপিয়া বসে আছে পার্কের বেঞ্চে। অবশেষে রেষ্টুরান্ট খুঁজে পেয়ে পৌরুষত্ব রক্ষা এবং ইন্ডিয়ান বিরিয়ানীর নামে খুচুড়ী জাতীয় কিছু একটা খেয়ে নিদারুণ পরিতৃপ্তি। সেই তিন মাস খুব সুন্দর কিন্তু বড় দ্রুত কেটে গিয়েছিল – ফেরার সময় এয়ারপোর্টে ঢুকে যাচ্ছে পদ্মা এবং বেদান্ত – শোভনের চোখ চলে যায় অনুজের দিকে, নিশ্চিত মনে হয় ওর চোখে জল, হয়তবা পাপিয়ার চোখেও। এর পরেও অফিস থেকে একসাথে ফেরে দুজন – কিন্তু বাড়ির কাছাকাছি এসে বড় ক্লান্ত, অন্যমনস্ক লাগে অনুজকে – দোতলায় উঠার সময় ছোট কেউ আর ছুটে এসে জড়িয়ে ধরবে না তাকে। শোভন বুঝতে পারে, সেই বোঝার জন্য রোমান্টিক হবার দরকার হয় না! এর কিছুদিন পরে অনুজও ফিরে যায়। প্রথম প্রথম নিয়মিত খোঁজ খবর, স্কাইপ – তারপর স্বাভাবিক জীবনের নিয়মে, যোগাযোগ একটু কমে আসে। খবর পায় অনুজ ব্যাঙ্গালোরের কোথায় অনুজরা ঘর ভাড়া নিয়েছে – বেদান্ত কেমন আছে, পদ্মা একটা বাচ্চাদের স্কুলে চাকুরী নিয়েছে – এই সব। তবে অনুজের সাথে শেষবার কি কথা বলেছে শোভন মনে করতে পারে না – অনেক চেষ্টা করে, তবুও – তখন যদি জানত –

    -কি রে, একবার কথা বলবি না?

    শোভন তখন খবরের কাগজের ওয়েবপেজ থেকে খবরটা পড়ার চেষ্টা করছে – চোখ ঝাপসা হয়ে গ্যাছে, কিন্তু –

    খবরের হেডলাইন, “স্বামীর আচমকা চড়ে স্ত্রীর মৃত্যু”

    খবরের কাগজ ওয়ালারা কোথা থেকে ছবি পায় কে জানে! হয়ত ফেসবুক থেকে, কারণ কোণের ছাপা ছবিটা শোভনেরই তোলা বার্সিলোনাতে অনুজ-পদ্মা বসে আছে। ছবি বলতে পারছে না, কিন্তু শোভন মনে করতে পারছে সেই মূহুর্তে বেদান্ত ছিল পাপিয়ার কোলে – পদ্মা কি আড়চোখে সেই দিকেই তাকিয়ে!
    খবর পড়ে জানা যায় যে সেই স্বামী কোন এক মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানীতে রিসার্চার – সন্ধ্যেবেলা টিভি দেখার সময় কোন এক উতপ্ত বাক্য বিনিময় কালীন স্ত্রীকে চড় মারে। চড়ের আঘাতে স্ত্রী অচৈতন্য হয়ে সোফায় পড়ে গেলে স্বামী ভয় পেয়ে অ্যাম্বুল্যান্স ডাকে। কাছের নার্সিং হোমে নিয়ে গেলে স্ত্রীকে মৃত ঘোষণা করা হয়। স্বামী এখন পুলিস হেফাজতে খুনের অভিযোগে –

    শোভন বারবার খোঁজে বেদান্তের কোন উল্লেখ – পায় না – হীতেশকে পিঙ করে,

    -আচ্ছা বেদান্তের কি হল?
    -ও এখন দিদিমার কাছে

    আমার মনে পড়ে যায় পদ্মার দেখানো সেই ছবিটার কথা, যেখানে ওর দিদিমা আর দাদু জম্মাষ্টমীর দিন ছোট্ট বেদান্তকে কৃষ্ণ সাজিয়ে দিয়েছে!

    -ওর দিদিমা কি তখন এসেছিল নাকি ব্যাঙ্গালোরে?
    -আমি ফোন করেছিলাম অনুজকে। আমাকে যেটা ও বলল, কিছু দিন আগে ওর শ্বাশুড়ি এসেছিল ব্যাঙ্গালোরে। সেই দিন ওরা সন্ধ্যাবেলা সবাই মিলে বাড়িতে বসে টিভি দেখছিল। এমন সময় অনুজের বোনের ফোন আসে। আমি যেটা বুঝতে পারলাম যে, অনুজের বোনের সাথে পদ্মার ঠিক জমত না। তা ফোনে নাকি পদ্মা শুনতে পায় অনুজের বোন ব্যাঙ্গালোরে কিছুদিন এসে থাকতে চাইছে। ফোন রাখা হলে পদ্মা অনুজকে বলে ওর বোন এই বাড়িতে এসে একটানা থাকুক সেটা সে চায় না। তুই তো দেখেছিস আমষ্টারডামে বা অফিসে যে অনুজে এই রকম রগচটা। সেই সামান্য জিনিস থেকে কথা কাটাকাটি হয়ে, তর্কা তর্কি শুরু হয় – এবার অনুজ রেগে গিয়ে ওর শ্বাশুড়ির সামনেই পদ্মার গালে একটা চড় মারে। পদ্মা অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় – তারপর তুই পড়লিই কাগজে বাকিটা –

    -কি হবে এবার?
    -তা আমি কি করে জানব!
    -অনুজের নামে কি মার্ডার কেস হবে?
    -জানি না রে – তবে শুনলাম ওর শ্বশুর বাড়ি থেকে কোন কমপ্লেন লজ্‌ করা হয় নি। এমনকি ওর শ্বাশুড়ি বিবৃতি দিয়েছে যে ঘটনার সময় তিনি মজুত ছিলেন, পুরোটাই অনিচ্ছাকৃত।
    -পেপারের তো দিয়েছে দেখলাম ওর কলিগরা নাকি ভাবতেই পারছে না কি করে এমন হল। ওরা সবাই পদ্মাকে চিনত – প্রেমের বিয়ের গল্প, সুখের জীবন সবই শুনেছে –
    -হ্যাঁ, সেটা তো আমিও দেখলাম – দেখা যাক কি হয়।
    -আচ্ছা হীতেশ, আমাদের কোম্পানীর কি নিয়ম রে? খুনীকে চাকুরীরে রাখবে?
    -আরে তুইও শেষে অনুজকে খুনী বলছিস শোভন!
    -সরি, সরি – আসলে কাগজে পড়তে পড়তে মাথাটা কেমন হয়ে গ্যাছে!
    -তুই একটা ফোন কর না, এই সময় তো আমাদের সাপোর্টেরই ওর দরকার!

    শোভন কি করবে বুঝতে পারে না – একটা ফোন করা কি খুবই সমস্যার? আচ্ছা, ফোন করাটা কি খুবই জরুরী? কি বলবে সে? বেদান্তের কি হল? তুমি আবার আগের মতই ইনোসেন্ট হয়ে অফিসে জয়েন করবে! ক্যান্টিনে কেউ ফিসফাস করে পাশের জনকে ঠেলবে না – ক্যাটালিসিস ল্যাবে কখনও তোমার ক্ষণিকের জন্যও মনে হবে না, ফোনটা না এলেই হত!

    নাকি অনুজ ভাববে, চড়টা না মারলেই হত! কার কারণে তাহলে – বোন যদি না থাকতে চাইত! নাকি এটাও ভাববে আমার শ্বাশুড়ি তো পাশে ছিল, ভাগ্যি ছিল! তিনি নিশ্চয়ই সত্যি কথা বলবেন।

    পদ্মার মা কি বলবেন? এখন তো মেনে নিয়েছেন সবই – দেখেওছেন যে পদ্মা কি ভালোবাসত অনুজকে এবং অনুজও পদ্মাকে। ওদের ভালোবাসার উত্তরাসুরীকে তিনি নিয়ে সোফায় বসে আছেন, পদ্মা পড়ে গেল সোফায় – অনুজ ডাকছে পদ্মা, পদ্মা – সাড়া নেই। অ্যাম্বুলেন্স এল পদ্মাকে নিয়ে যেতে, মেয়েটার নিঃশ্বাস পড়ছে এখনও নিঃশ্চয়। বেদান্ত বড় শান্ত ছেলে –

    পুলিস কি বলবে? মেয়ের মা প্রতক্ষ্যদর্শী, তিনি বলছেন যে ঘটনা ইচ্ছাকৃত নয়। কোন অভিযোগ তাঁরা করতে চান না –

    আচ্ছা, এমন কি হতে পারে না যে পোষ্টমর্টেমে দেখা গেল চড় মারার জন্যই ঠিক মৃত্যু হয় নি? কোন কি রোগ আছে যা খুবই রেয়ার – উত্তেজনার সাথে সাথে সেই প্রভাবে ধপ করে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে পদ্মার – চড় কেবল কো-ইনসিডেন্ট মাত্র!

    দোষী প্রমাণিত না হলে মনে হয় কোম্পানীর এইচ আর চাকুরী থেকে ছাড়াতে পারবে না – শোভনের এই মনে হয়।

    শোভন আইন জানে না – ফোনও করে উঠতে পারে না অনুজকে। শোভন ভারতীয়দের প্রতি বর্ণবিদ্বেষী হলেও শুধু অনুজের জন্য ভারতীয় সংবিধান জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠে। রাতে খেতে বসে থালার দিকে তাকিয়ে আবার আমষ্টারডাম ভেসে ওঠে – ওই ডিনার সেটের সাথে পদ্মার হাসি লেগে আছে, আছে বেদান্তের আঁকড়ে থাকা – পাপিয়াকে বলতে পারে না এই খবরের কথা – ফেসবুক ডি-অ্যাক্টিভেট হতে সময় লাগবে, অন্তত ততদিন –

    অনুভব নিয়ে দোলচাল চলে শোভনের। অনুভবও কি তাহলে বিবর্তিত হয়! কাগজ ছিঁড়ে ফেলে সে – কী-বোর্ডের ডিলিট বাটন্‌ও চাওয়ার থেকে বেশীক্ষণ চেপে থাকতে হয়। অনুভব ধরতে চায় - অবশ্য তা করতে গিয়ে সযতনে সরিয়ে রাখে অন্ধকার কিছু দিক। যেন কেউ শিখিয়ে দিয়েছে মনের গহীন কোণে আলো ফেলার অর্থ হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগানো। শোভন বেদনা ভাগ করে নিতে চায় না – তাই ভেবে চলে শুধু আনন্দের কথা যা শুধু পিচ্ছিল ভাবে গায়ে লেগে থাকে। পিচ্ছিল ভাবে? হয়তবা - অন্তত দুই দুখী ঘটনাক্রমের মধ্যবর্তী সময়টুকুতে!

    প্রকাশ করতে ভুলে যায় শোভন তার অন্য অনুভব গুলি। তাই মনে মনে প্রস্তুতি নেয় খুব বেশী দেরী হয়ে যাবার আগে একবার চেষ্টা করেই দেখবে আঁধারের কত কাছাকাছি গিয়ে ভাগ করে নিতে পারে তার এতোদিনের না-ছোঁয়া সকল। নিরবিচ্ছিন্ন বেদনা দিয়ে মুড়তে চায় শোভন – তবে সে জানে সময় নিরবিচ্ছিন্ন নয় মোটেই, তাই বেদনাও নয় অসংলগ্ন। বেদনা আর আনন্দের কেমন মিশেল হবে তাহলে? শোভন নিজেকে নিরপেক্ষ করে নেওয়ার কথা ভাবে – নাকি উদাসীন থাকাটাই শ্রেয়? কেবল পর্যবেক্ষক যেন! দোলচাল থেকে যায় – দোলচাল অনুভূত হয় –

    একটা ক্ষণিকের ফোন -
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ | ৮০০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন