এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • উত্তর আফ্রিকা ঃ বিশ্বযুদ্ধের এক সাইড শো

    dd লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ | ১০৫২ বার পঠিত
  • উত্তর আফ্রিকা ঃ বিশ্বযুদ্ধের এক সাইড শো

    হাল্লা চলেছে যুদ্ধে।।।।
    ********************************

    প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আফ্রিকা মহাদেশে লড়াই প্রায় বিশ্বযুদ্ধের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়েছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কিন্তু তেমনটা হয় নি। ইউরোপে যুদ্ধ শুরু হবার প্রায় বছর খানেক আফ্রিকা মহাদেশে, যুদ্ধের কোনো তেমন ইমপ্যাক্ট ছিলো না। উত্তর আফ্রিকায় ,লিবিয়া ছিলো ইতালীর দখলে আর ইজিপ্ট বৃটীশের অধীনে। তো দু একটা খুচখাচ সীমান্ত সংঘর্ষ হয়েছিলো কিন্তু সেগুলি নেহাতই ছোটোখাটো আঞ্চলিক লড়াই।

    ১৯৪০ সালে ১৩ই সেপ্টেম্বর উত্তর আফ্রিকায় আনুষ্ঠানিক ভাবে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শুরু হলো। ইওরোপে মার মার কাট কাট করে নাৎসী বাহিনী দেশের পর দেশ দখল করে নিচ্ছে, আর তার একমাত্র সহযোগী ইতালী নেহাৎই গৌন ভুমিকায়। মুসোলিনিরও তাই খুব সখ হলো, তিনিও বিশ্ব বিজয়ে নামবেন।

    তো ১৩ই সেপ্টেম্বর ইতালী যুদ্ধ ঘোষনা করলো। কিন্তু তাদের যুদ্ধ প্রস্তুতি ছিলো মরুযুদ্ধের পক্ষে নিতান্ত দায়সারা গোছের।

    অন্য দিকে বৃটীশ বাহিনীর কম্যান্ডার ও'কোন্নর কিন্তু খুব গুছিয়ে প্রতিরক্ষায় মন দিয়েছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন মরুযুদ্ধও সাগর যুদ্ধের মতন। ঘাঁটি গেঁড়ে লড়াই এখানে উপযুক্ত নয়। চাই দ্রুতগতি। সেনারা মরুর উপর মার্চ করে যেতে পারবে না, হয় অসহ্য গরম নয় দারুন শীত। বহুদুর থেকেই তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করা যাবে। আর তার হাতে ট্যাংক আর বিমানও যথেষ্ট নেই। তিনি প্রচুর তিন টনের লরী আমদানি করলেন, তুলনায় ইতালীয় বাহিনী ছিলো মুলতঃ ইনফ্যান্ট্রী নির্ভর।

    ইতালিয়ান কম্যান্ডার ছিলেন গ্রাজিয়ানি । তার বড় আশা যে জার্মানী খোদ বৃটীশ ভুখন্ড আক্রমন করবে, আর আফ্রিকায় মোতায়েন বিপর্য্যস্ত ও বিচ্ছিন্ন ব্রিটীশ সেনাদের তিনি আরামসে হারিয়ে দেবেন। ফাঁকা মাঠেই গোল দেবেন, তো তার জন্য একটু সময় চাই।

    কিন্তু অধৈর্য্য মুসোলিনির আর তর সইছিলো না। সাতই সেপ্টেম্বর তিনি গ্রাজিয়ানিকে ফাইনাল অর্ডার দিলেন, ইসপার বা উসপার,দুই দিনের মধ্যেই আক্রমন শুরু করো। অগত্যা গ্রাজিয়ানি দোনোমনো করে শেষ পর্যন্ত্য ১৩ তারিখে তার অভিযান শুরু করলেন।

    প্রায় বিনা প্রতিরোধেই গ্রাজিয়ানি ইজিপ্টে ঢুকে পরলেন। প্রচুর সেনা আর ট্যাংক নিয়ে তার গতি কিন্তু দিনে কুল্লে বারো মাইল। ব্রিটীশেরা মুখোমুখী সংঘাত এড়িয়ে চলেছেন, পাশ থেকে মাঝ মাঝে ছোটো খাটো হামলা করা ছাড়া তারা বড় রকমের বাধা দিলেন না।

    দিন চারেক পর ইতালীয়ান সেনারা প্রথম ঘাঁটি, সিদি বার্রানি দখল করে নিলেন। ব্যাস। গ্রাজিয়ানি ওখানেই গেঁড়ে বসলেন। তিনি একটা বাঁধনো রাস্তা তৈরী করতে মন দিলেন। জলের পাইপ বসলো। রসদের জন্য তৈরী হলো আস্তানা। এমন কি একটা বিজয় স্তম্ভও তিনি খাড়া করলেন !!

    অক্টোবর,নভেম্বর,ডিসেম্বর। এই তিন মাস চলে গেলো। কোনো পক্ষই আগ বাড়িয়ে আক্রমন করছেন না। কিন্তু ও'কোন্নরের উপর চাপ ছিলো প্রচুর। তার উর্দ্ধতন ওয়াভেল, লিখিত নির্দেশ দিলেন - প্রতি আক্রমন এইবারে শুরু করো।

    ততদিনে সিদি বার্রানির চারিদিকে অনেকগুলি মরুদুর্গ তৈরী হয়ে গেছে। পাশাপাশি,একটার পরে আরেকটা যাতে একটি দুর্গ তার পাশের দুর্গের উপর নজর রাখতে পারে। শুধু একটি যায়গাতেই ফাঁকটা একটু বড় ছিলো।

    তাসের কেল্লা
    ***********************************

    ৯ই ডিসেম্বর,১৯৪০। ঝকঝকে দিনের আলোয় ও'কোন্নরের প্রতিআক্রমন শুরু হলো। আর্টিলারি ব্যারাজের সাথে সাথে মাটিল্ডা ট্যাংকের গর্জন। প্রথম ক্যাম্পের বাইরে গোটা কুড়ি ইতালিয়ান ট্যাংক দাঁড়িয়ে ছিলো, তারা লড়াইএর অবকাশটুকুও পেলো না। সব যায়গাতেই একই ঘটনা। দু একটি ক্ষেত্রে বিছিন্ন ভাবে ইতালিয়ানরা একটু রুখে দাঁড়িয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু সামগ্রিক ভাবে তারা প্রথম থেকেই হেরে গেছিলেন।
    দুই দিনের মধ্যেই ইতালিয়ান রেসিস্টেন্স খতম।
    ও'কোন্নর সম্পুর্ন বিজয়ী।
    এর পরের লক্ষ্য লিবিয়ার অভ্যন্তরে বর্দিয়া দুর্গ।

    বর্দিয়া দুর্গে মোতায়েন ৪৫০০০ ইতালিয়ান সেনা আর প্রায় চারশো কামান। দুর্গ ঘিড়ে আছে বারো ফীট চওড়া আর চার ফীট গভীর পরিখা। তাদের পিছনেই ঘন আবদ্ধ কাঁটাতারের বেড়া। আছে দুই সাড়ি কংক্রীট আর ইস্পাতের বাংকার। সিদি বার্রানির লড়াইতে ব্রিটিশ ট্যাংক বাহিনি ছিলো সবার সামনে, আর ইন্ফান্ট্রী ছিলো পিছনে। এইবারে কিন্তু ট্যাকটিক আলাদা।

    জানুয়ারী মাসের ২/৩ তারিখের রাত একটা। গাধার পিঠে চড়ে প্রবল শীতের মধ্যে অগ্রগামী বাহিনী পৌঁছে গেলো দুর্গের সীমানায়। ভোর ছটার মধ্যেই তারা কাঁটাতারের বেড়া ভেদ করে দুটো পথ করেদিলেন ট্যাংকের জন্য। ইতালিয়ান প্রস্তুতি ও যুদ্ধক্ষমতা যে কিরকম কম ছিলো বোঝা যায় যখন দেখি ঐ "দুর্ভেদ্য" দুর্গের পতন হলো পরের দিনেই।

    প্রায় ৪০০০০ ইতালিয়ান সেনা বন্দী হলেন, দেড়শোর মতন ট্যাংক আর চারশো কামানও এলো বৃটীশদের হাতে। সব থেকে বড় দখল সাতশোর মতন ট্রাক।
    আর বৃটীশদের ক্ষতি? সাকুল্লে সাড়ে চারশো, হতাহত ও নিঁখোজ নিয়ে।

    এর পর লিবিয়ার আরো ভিতরে তব্রুক আর বেনঘাজি। এর মধ্যে তব্রুক উত্তর আফ্রিকার যুদ্ধে খুব নাম করবে।

    কেমন ছিলো তব্রুক? একটা ছোট্ট জনপদ। নিতান্ত ছোটো বন্দর। হাজার পাঁচেক অধিবাসী। আর কিছু গাধা আর উট।প্র্যাক্টিকালি কোনো গাছ গাছালি নেই। শহরের মধ্যখনে টাউন সেন্টারে কয়েকটি ম্রিয়মান পাম গাছ। একটাই ছোটো হোটেল,তার লাগোয়া একমেবাদ্বিতীয়ম রেস্তোরা।
    আর ছিলো সেনার দের দুর্গ। বিশাল পরিখা, ঘন কাঁটাতারের বেড়া। বাংকার।
    কিন্তু ও'কোন্নরের সেনাদের সাথে ইতালিয়ান লড়াই ছত্রিশ ঘন্টাও টিঁকলো না। তার পরের ঘাঁটি বেনঘাজি, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। সামান্য ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করেই বিপুল সংখ্যক যুদ্ধ বন্দী, তার সাথে ট্রাক,ট্যাংক,কামান।

    লড়াইতে কাবু হলেও সৌজন্য ইতালিয়ানরা ছিলেন অনন্য। বন্দীশিবিরে পরিদর্শনে ও'কোন্নর এসেছেন, তার কর্ডুরয়ের প্যান্ট,জ্যাকেট আর টুপি পরে। ইতালিয়ান সেনানায়্ক কিন্তু পুরো ইউনিফর্মেই হাজির।
    ও'কোন্নর বল্লেন "খুবই দুঃখিত। বন্দী শিবিরে আপনাদের অনেক অসুবিধে হছে।"
    ইতালিয়ান সেনানায়ক তাকে আশ্বস্ত করলেন "আরে না, না, জানি ই তো আপনাদের কতো তাড়াতাড়ির মধ্যে এইসব ব্যবস্থা করতে হয়েছে।"

    আউর এক ধাক্কা দো
    **********************************

    লিবিয়ার শেষ যুদ্ধ হলো বেডা ফম্মে। সেইখানে বৃটীশ ট্যাংক বাহিনীর ঝাঁকের সাথে ইতালিয়ান ট্যাংকেরা অসংঘবদ্ধ ভাবে একটু দুটি করে যুদ্ধ করতে আসছিলো। ফলাফল অবশ্যই শোচনীয় পরাজয়।

    এইবারে বাকী শুধু রাজধানী ত্রিপলি। ত্রিপলি দখল করতে পারলেই উত্তর আফ্রিকা থেকে অক্ষ শক্তির বিদায়।

    আর ত্রিপলির ডিফেন্স বলতেও কিছুই নেই। সম্পুর্ন বিজয় তো হাতের মুঠোয়। কিন্তু সেরকম হোলো কই?

    ততোদিনে গ্রীসে আবার মুসোলিনি আরো ঘোঁট পাকিয়েছেন।খামোখা গ্রীস আক্রমন করে পুরো নাস্তানাবুদ। হিটলারও অগত্যা বাধ্য হলেন তাকে সাহায্য করতে সেনাসামন্ত্র পাঠাতে। চার্চিলের ও উপায় ছিলো না। তিনি ও ব্যাস্ত হয়ে উত্তর আফ্রিকা থেকে সেনাদের তুলে নিয়ে পাঠিয়ে দিলেন গ্রীসে। ও'কোন্নর কখনোই চার্চিলের প্রিয়পাত্র ছিলো না। এবং উত্তর আফ্রিকা নিয়েও চার্চিলের কোনো মাথাব্যাথা ছিলো না। স্ট্র্যাটেজিক খুব গুরুত্ব ছিলো না। এক সুয়েজ খাল ছাড়া। আর হপ্তাখানেক অপেক্ষা করতে পারলেই কিন্তু ত্রিপলি চলে আসতো ব্রিটীশদের হাতে। উত্তর আফ্রিকা থেকে অক্ষশক্তির বিদেয় হোতো পুরোপুরি। আরো এক বছর ধরে লড়াই ও হোতো না। এমন কি এই প্রবন্ধও লেখার দরকার হোতো না।

    আসলে উত্তর আফ্রিকা দুই পক্ষের কাছেই ছিলো এক "সাইড শো" মাত্র। প্রায়োরিটি লিস্টে একেবারে সবার শেষে।

    দ্বিতীয় ঘটনাটি আরো বিস্ময়কর। হিটলার যদিও তখন রাশিয়া আক্রমনে ব্যাস্ত তাও তিনি রোমেলের মতন এক সুযোগ্য সেনানায়ক উত্তর আফ্রিকা পাঠতে মনস্থ করলেন। এই সিদ্ধান্তটিরও কোনো যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। হয়তো পশ্চিম ও পুর্ব ইওরোপ খুব সহজেই দখল করে হিটলারের আত্মবিশ্বাস প্রায় স্বপ্ন দেখার মতন তুংগে উঠেছিলো। তার ধারনা ছিলো রাশিয়া খুব সহজেই জিতে নেবে তিনি।

    এইবার হার্ডওয়ার নিয়ে কিছু কথা। ইতালিয়ান সেনাদের মোবিলিটি বলে কিছু ব্যবস্থাই ছিলো না। তাদের ইনফ্যান্ট্রী ট্যাংক ছিলো এতোই হাল্কা যে ভারী মেশিনগানের গুলিতেই ভেঙে পরতো। তুলনায় বৃটীশ ট্যাংক মাটিলডা ছিলো স্লথগতির, কামানও খুব জোরদার ছিলো না, কিন্তু মোটা ইস্পাতের বর্মের দরুন তখনকার ইতালীয়ানদের কাছে ছিলো দুর্ভেদ্য,অপরাজেয়।

    আর যুদ্ধ পদ্ধতিতেও ইতালিয়ানরা ছিলেন অপটু। সে সময়এর ট্যাংক যুদ্ধে খুব প্রচলিত ছিলো ল্যাংকাস্টার স্কোয়ার ল। যাতে বলা হয় একটি ট্যাংক একগুন শক্তিশালী হলে, পাশাপাশি দুটি ট্যাংক দুই নয়, আসলে চারগুন শক্তিশালী। অংক কষার দরকার নেই, মোদ্দা কথা হলো ট্যাংকদের আক্রমনে পাঠাতে হবে এক ঝাঁকে যাতে ওদের সন্মিলিত ফায়ার পাওয়ার চুড়ান্ত ভাবে আদায় করা যায়।
    তাদের বম্বার এস এম ৮১ এবং ফাইটার প্লেন ফিয়াট সি আর ৮২ আদৌ খারাপ মেশিন ছিলো না, কিন্তু তাদের না ছিলো উপযুক্ত রক্ষনাবেক্ষন, না ছিলো পর্য্যাপ্ত তেল ও স্পেয়ার পার্টস। আকাশ যুদ্ধেও ইতালি তাই সুবিধে করতে পারে নি।

    রোমেল এলেন লিবিয়ায়
    *************************************

    বারোই ফেব্রুয়ারী ,১৯৪১ রোমেল এলেন লিবিয়ায়।

    ও'কোন্নর খুব চিন্তিত হয়ে পরেন নি। ফেব্রুআরীর মাঝামাঝি রোমেল আসছেন , নিশ্চয়ই ধীরে সুস্থে সব কিছু বিবেচনা করেই রোমেল প্রতিআক্রমন শুরু করবেন। তার এবং তার উর্দ্ধতন অফিসারদের ধারনা ছিলো মে মাসের আগে রোমেল কিছুই করবেন না।

    কিন্তু রোমেল ছিলেন রোমেল। দেড় মাস পরেই তিনি প্রতি আক্রমন শুরু করলেন। দখল করে নিলেন বেন্ঘাজি। বৃটীশ সেনারা খুবই অপ্রস্তুত। গ্রীস আক্রমনের জন্য তাঁদের সেরা সেনাদের উত্তর আফ্রিকা থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। তারা প্রায় বিনা যুদ্ধেই পিছু হঠলেন।

    আটই এপ্রিল রোমেল স্বচ্ছন্দে দখল করে নিলেন গাজালা।

    খাতায় কলমে তার জার্মান সেনারা ছিলো ইতালিয়ান সর্বাধিনায়ক ইতালো গারিবল্ডির অধীনে। তিনি যতো ই হাঁ হাঁ করে ওঠেন, অতো তাড়াহুড়োর কি আছে? রোমেল তার কথা কানেই তুললেন না। তিনি সবেগে এগিয়ে চললেন।

    এরই মধ্যে এক ঐতিহাসিক অঘটন। রাতের বেলায় ভুল করে অনেকটা এগিয়ে গিয়ে জার্মান সেনাদের হাতে বন্দী হলেন কম্যান্ডার ও'কোন্নর। যদি বন্দী না হতেন ? তাহলে নিশ্চয়ই রোমেল বনাম ও'কোন্নরের ডুয়েল বিশ্বযুদ্ধের স্মরনীয় লড়াই হয়ে উঠতো।

    পনেরোই এপ্রিলের মধ্যে লিবিয়া মুক্ত। না, একটি কাঁটা থেকে গেলো, আর রয়ে যাবেও আরো ২৪০ দিন। সেটি হলো তব্রুকের দুর্গ। সেইখানে প্রায় হাজার কুড়ি অস্ট্রেলিয়ান সেনা এমনই ঘাঁটী গেঁড়ে বসে রইলেন যে দীর্ঘ আট মাস ধরেও রোমেল তাঁদের উৎখাত করতে পারেন নি।

    কিন্তু ঐ বাদে মাত্র কুড়ি দিনেই তিনি লিবিয়া আবার ছিনিয়ে নিলেন মিত্রশক্তির হাত থেকে।

    ভুগোল এবং যুদ্ধ ইতিহাস
    ***********************************

    হিসেব কষে দেখুন। ইতালী থেকে সাগর পাড়ি দিয়ে ত্রিপলি হচ্ছে ৫০০ মাইল।সেখানে থেকে ইজিপ্টের আলেকজান্দ্রিয়া বন্দর (যেটা অক্ষ শক্তির কাছে মূল লক্ষ্য) আরো ১৫০০ মাইল। মধ্যিখানে শুধু জনহীন উষর প্রান্তর।

    সমুদ্রের কূল ঘেঁষে ছোটো ছোটো অনেকগুলি বন্দর। তার মধ্যে ইম্পরটেন্ট হচ্ছে বেনঘাজী আর তব্রুক। ঐ উপকূলেই যা কিছু সমান মানে লেভেল যায়গা। শক্ত লাইম স্টোনের জমি, তার উপরে বালির আস্তরণ। গাড়ী ঘোড়া মায় ভারী ট্যাংক দিব্বি যেতে পারে।

    কিন্তু প্রায় আগাগোড়া, সমুদ্রের ধার ঘেঁষে এই পথটাই খুব বেশী চওড়া নয়। কিছুটা ভিতরের দিকে গেলেই প্রায় ৬০০ ফীট পর্যন্ত্য উঁচু পর্বতশ্রেনী। ঠিক পর্বত বলা যায় না- ইংরাজীতে যাকে বলে escarpment। টেনেটুনে বলা যায় ঘাট। ইন্ডিয়াতে যেরকম ওয়েস্টার্ন ঘাট। সেখানে গাড়ী ঘোড়া অচল। এই ঘাট ছাড়াও অনেক যায়গায় আছে খাদ বা salt marsh। সেখানে হাঁটাও সম্ভব নয়, গাড়ীতো দুরের কথা। একদিকে সমুদ্র আর অন্যদিকে এই ঘাট অথবা নোনা জলা জমির মধ্যে কখনো আট দশ মাইল, কখনো খুব বেশী হলে দেড়শ মাইল পর্যন্ত্য যুদ্ধের যায়গা।

    লজিস্টিকের সমস্যা দু পক্ষেই। রসদ যা কিছু তা সবটাই আসবে ইউরোপ থেকে । তারপর হয় ত্রিপলি নয় আলেকজান্দ্রিয়াতে আনলোড করে ট্রাকে করে পৌঁছে দিতে হবে রণাংগনে। সারাক্ষনই বালুর ঝড় চলে। তার জন্য সব গাড়ীতেই স্পেশাল ফিলটার লাগাতে হয়। তাতেও সমস্যা পুরো মেটে না। আর এক ফোঁটাও জল নিয়ে কোথ্থাও। আর আছে দিনের বেলার অসম্ভব গরম আর রাত্রের শীত,প্রচন্ড ডাঁশ পোকা আর মাছির উপদ্রব।

    ইউরোপে যে ট্যাংক ইঞ্জিনের লাইফ প্রায় ১৫০০ মাইল, সেটা এই মরু অঞ্চলে তার অর্দ্ধেক। ফলে যুদ্ধ করে হু হা এগিয়ে গেলেও মুষ্কিল। নিজের ঘাঁটী থেকে গোলা বারুদ নিয়ে আসাটা খুবই সমস্যার। বরং পিছিয়ে নিজেদের বন্দরের কাছে থাকাটাই সুবিধে।

    মরু ইঁদুরের অজেয় দুর্গ
    ***********************************

    আর এই জন্যেই তব্রুক এতো বিষ কাঁটা হয়ে উঠেছিলো রোমেলের কাছে। দীর্ঘ প্রায় বারোশ মাইলের একটা স্টিপ তার হাতে, সেই ত্রিপলি থেকে ইজিপ্টের সীমানা পর্যন্ত্য,কিন্তু মাঝপথে একটা বিষ ফোঁড়ার মতন রয়ে গেছে তব্রুকের দুর্গ। রোমেল পর পর চেষ্টা চালিয়ে গেলেন সেটাকে দখল করতে, বহু সেনা হতাহত হোলো, নষ্ট হোলো বহু ট্যাংক,কামান আর ট্রাক। কিন্তু দীর্ঘ আট মাস তব্রুক লড়ে গেলো মুলতঃ অস্ট্রেলিয়ান সেনাদের শক্ত হাতে।

    লর্ড হ হ, ব্যাংগ করে বলেছিলেন "আরে দুর। ওরা সৈন্য না কি? ওরা তো মাটীর মধ্যে গর্ত্ত খুঁড়ে টিঁকে আছে স্রেফ ইঁদুরের মতন"। সেটা শুনে অস্ট্রেলিয়ানেরা খুবই খুসী। তারা নিজেদেরকে তব্রুকের ইঁদুর বলেই পরিচয় দিতেন।

    তবে শুধু অস্ট্রেলিয়ানরাই নয়। পুরো কমনওয়েলথের সেনারাই ছিলো উত্তর আফ্রিকায়। ছিলো নিউজিল্যান্ড,সাউথ আফ্রিকা,মঔরিটানিয়া,মরক্কো,আলেজেরিয়া,এমন কি কাম্বোডিয়ার সেনারাও। আর ছিলো প্রচুর ভারতীয় সেনানী।উত্তর আফ্রিকার যুদ্ধে ভারতীয়রা খুবই জবরদস্ত লড়েছিলেন।কমনওয়েলথ ছাড়াও ছিলো পোলিশ,চেক ও ফরাসী (ফ্রী ফ্রেঞ্চ) সেনানীরা।

    সমুদ্র থেকে জাহাজে করে সাপ্লাই দেওয়া হতো তব্রুককে। তব্রুককে দখল করতে না পারলেও পুরো অবরোধ করে রেখেছিলো রোমেলের জর্মন ও ইতালিয়ান সে্নারা।

    “ঐ বদ্ধ পাগোলটাকে সামলান”
    **************************************

    রোমেলের এই অতি আক্রমনাত্মক ট্যাকটিক্স কিন্তু ওনার উপরওয়ালাদের পছন্দ ছিলো না। জেনারেল স্টাফের ডেপুটি চীফ ছিলে ফ্রান্স হালডের। তিনি প্রায় কাউকেই পছন্দ করতেন না, তবে রোমেলকে অপছন্দ করতেন সবথেকে বেশী।

    তিনি পাঠালেন পউলাসকে,তার সব থেকে পছন্দের লোক। বললেন রোমেলের পাগলামী বন্ধ করতে সব দেখে শুনে এসে আমাকে তদন্ত রিপোর্ট দাও।
    পউলাস এরকম একটা পাকামী করার চান্স পেয়েও কিন্তু তার পেশাদারীত্ব হারান নি। হালডেরের উষ্কানি থাকা স্বত্তেও তিনি রোমেলকে দূষলেন না, বরং বললেন যে রসদের যোগান না থাকার ফলে রোমেলের অবস্থা কাহিল।

    এতে জর্মনদের কোনো হেলদোল হোলো না কিন্তু এনিগমা ডিক্রিপশনের ফলে চার্চিল এই গোপন রিপোর্ট পড়ে ফেললেন। ব্যাস। তিনি তখন খুবই চাপাচাপি শুরু করলেন অবিলম্বে অ্যাটাক করে তোব্রুকের অবরোধ হটিয়ে দেও।

    আরে, ব্রিটীশদেরো তো একই অবস্থা। এ এক এমন রণাংগন যে যুদ্ধে জিতলেই সমস্যা শুরু হয়। নিজেদের ঘাঁটির থেকে যতোটা এগিয়ে যাবেন ততই যোগানের সমস্যায় পরবেন।
    দুটো হাফ হার্টেড চেষ্টা করলো ব্রিটীশেরা। অপারেশন ব্রেভিটি (মে মাসে) আর অপারেশন ব্যাটল এক্স (জুনের শেষে)। দুটোই রোমেল অবহেলে থামিয়ে দিলো। মাঝখান থেকে ব্রিটিশদের এক গাদা ট্যাংক নষ্ট হোলো। আরো খারাপ ঘটনা ঘটলো যে রোমেল কাউন্টার অ্যাটাক করে আরো কিছুটা ইজিপ্টের ভিতর ঢুকে ঘাঁটি গড়লেন হালফায়া পাসে। সেখানে এতো বেশী হতাহত হয়েছিলো দু পক্ষেই যে ওটার নামই হয়ে গেলো হেলফায়ার পাস।

    চার্চিল ক্ষেপে অস্থির। বদল করলেন কর্ত্তাদের। ওয়েভেলকে সড়িয়ে আনা হোলো অকিনলেককে। বহুবার হুমকিটুমকি দিয়ে অবশেষে চার্চিল রাজী করালেন অকিনলেককে। বছরের একেবারে শেষ দিকে, নভেম্বরে, অকিনলেক শুরু করলেন অপারেশন ক্রুসেডার। অনেকগুলি নতুন ব্রিটিশ ও মার্কিন ট্যাংক এসে গেছে তখন তার হাতে আর নতুন যুদ্ধ বিমানও।

    অন্য দিকে রোমেলের ভাঁড়ার প্রায় শুন্য। হিটলার ততোদিনে রাশিয়া আক্রমন করেছেন। সেখানে যোগান দিতেই টানাটানির অবস্থা, রোমেল কে আর কি দেবেন?

    রোমেলের কাছে বিমান প্রায় কিছুই নেই। ট্যাংক আছে মিত্রশক্তির অর্ধেক । আসলে আরো কম, কেনো না তার ট্যাংকের মধ্যে রয়েছে ইতালিয়ান লাইট ট্যাংকগুলিও। যেগুলি যুদ্ধে একেবারেই অচল।

    তাও ও রোমেল যুঝলেন যতোটা সম্ভব। কিন্তু শেষে হার মেনে পিছু হটে আসলেন ডিসেম্বরের শেষে। সাতই ডিসেম্বর অবরুদ্ধ তব্রুকে পৌঁছালো ব্রিটীশ সেনা। ব্রিটেইনে সে এক চরম আনন্দের দিন। একটানা হারতে হারতে অবশেষে একটা সুখবর। (ঐ দিনই পার্ল হারবার আক্রান্ত হওয়ায় আমেরিকাও সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পরলো)।চার্চিল খুস হুয়া।

    বছর গড়িয়ে ১৯৪২ এলো। চার্চিলের মুখের হাসিও মিলালো।
    রোমেল আবার একটু দম নিয়েই প্রতি আক্রমন শুরু করেদিয়েছেন। একটা একটা করে ছিনিয়ে আনছেন ব্রিটীশদের দখল করা ঘাঁটিগুলি। শেষ পর্যন্ত্য তব্রুক, এতোদিন ধরে অপরাজিত তব্রুককে দখল করে নিলো রোমেল।আর তব্রুকের দখল শুধু মরাল ভিকট্রিই নয়, প্রচুর রসদ পেলেন রোমেল। পেলেন ২০০০ লরী আর অন্যান্য গাড়ী, ৩০০ কামান,৫০০০ টন র্যা শন আর সব থেকে বড় কথা ২৫০০ টন পেট্রোল।হিটলার ও খুসী হয়ে রোমেলকে করে দিলেন ফীল্ড মার্শাল।

    যার শিল তারই নোড়া, তারই ভাঙি দাঁতের গোড়া। এটা রোমেলের ব্যাপারে বেশ খাটে। এই সময় রোমেলের কাছে যা যুদ্ধ রসদ ছিলো তার প্রায় ৮৫% হচ্ছে লুটে নেওয়া ব্রিটিশের সম্পদ।

    এই দুঃসংবাদ চার্চিল পেলেন যখন রুজভেল্টের সাথে একটা মিটিং চলছিলো তখন। চার্চিল একেবারে ভেঙে পরলেন। যেনো তাকে সান্তনা দিতেই রুজভেল্ট তখুনি অর্ডার দিলেন ৩০০ শেরম্যান ট্যাংক আর একশো সেল্ফ প্রপেলড কামান অবিলম্ব ইজিপ্টে পাঠাতে।

    মিত্রবাহিনী পিছু হঠে এলো ইজিপ্টের প্রায় একশো মাইল ভিতরে - মেরসা মাথরুতে। রোমেল তাড়া করে এসে জুনের শেষে মাত্র তিন দিনের লড়াইতে দুর করে দিলেন মিত্রশক্তিকে। আরো পিছু হটে, আলেকজান্দ্রিয়ার থেকে মাত্র ৬৬ মাইল দুরে ঘাঁটি গড়লেন ব্রিটিশেরা -এল এলামিনে। মাত্র ১৫০ মাইল দুরে কায়রোয় তখন প্যানিক। নানান ডকুমেন্ট পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বড় বড়ো নেতাদের পরিবারকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে ইওরোপে।আহ্লাদে আটখানা মুসোলিনিও দৌড়ে চলে এলেন লিবিয়ায়। খুব আশা, কায়রোর পতনের দিন বিজয়ী সেনানীদের আগে আগে তিনি যাবেন বিজয় মিছিলে।

    এল এলামিন - লাস্ট ব্যারিকেড স্ট্যানডিং
    *********************************************

    এল এলামিনে লাস্ট স্ট্যান্ড নেবার একটা বড় কারন যে এটি একটি ন্যাচারাল বটল নেক। উত্তরে সমুদ্রের ধারে এই ছোটো ট্রেডিংপোস্ট (বন্দর না বলাই ভালো), আর দক্ষিনে ২০ মাইল দুরেই রয়েছে একটা ছোটো পাহাড়ী জাংগাল (ridge), যেটার থেকে মরুভুমির দুর প্রান্ত নজরে রাখা যায়।আর তার থেকে মাইল পনেরো দুরে কাত্তরা ডিপ্রেসন। একটা নোনা, অনেকটা নাবাল ভুমি। সেখানে গাড়ী ঘোড়া একেবারেই অচল।সব মিলিয়ে চল্লিশ মাইলের ফ্রন্ট।

    আচমকা হানাদারীর কোনো সুযোগ নেই, বা পাশ কাটিয়ে আউট ফ্ল্যাংক করে শত্রুর পিছনে চলে আসাও সম্ভব নয়। অকিনলেক তাই চাইছিলেন যুদ্ধ হোক স্থানু (static) আর রোমেল চাইছিলেন সেটার বিপরীত।

    ক্রমাগতঃ যুদ্ধ চালানো তখন রোমেলের পক্ষে খুবই মুষকিল। ব্রিটীশ বিমানের জন্য কাছাকাছি কোনো বন্দর থেকে রসদ আনা যাচ্ছে না। সব থেকে কাছের নিরাপদ বন্দর হচ্ছে বেন ঘাজী - তা সেও তো প্রায় সাতশো মাইল দুরে।তাও রোমেল একবার চেষ্টা করলেন কিন্তু তিন দিন লড়াইএর পরই তার আর দম রইলো না। তিনি ডিফেন্সেই মন দিলেন। এর জন্য অকিনলেকের বাহবা পাওনা ছিলো কিন্তু চার্চিল তাকে সড়িয়ে বসালেন আলেকজান্ডারকে।

    ফুল মন্টি

    কিছুটা কপালের ফেরেই আলকজান্ডারের অধীনে ইজীপ্টের লড়াইএর জন্য আনা হোলো মন্টেগোমারীকে। কেউই বিশেষ চিনতেন না তাকে তখনো। এই এল এলামিনের যুদ্ধের পরই তিনি বিখ্যাত হয়ে পরলেন।

    অগাস্ট মাসে রোমেল আরো একবার চেষ্টা করলেন কিন্তু এনিগমা ডিক্রিপশনের জন্য তার প্ল্যান আগে ভাগেই জানা ছিলো মন্টির। ডিফেনসিভ লড়াইএর ওস্তাদ এই জেনারেল তার সমস্ত ট্যাংককে জাংগালের বিভিন্ন যায়গায় রেখে একটা অ্যামবুশের পরিস্থিতি করে রাখলেন। সেই ফাঁদে পা দিয়ে অনেকগুলি ট্যাংক খুইয়ে পিছু হঠলেন রোমেল। মন্টি কিন্তু তাকে ধাওয়া করলেন না। শত্রুর রক্তক্ষরণেই তিনি আপাততঃ সন্তুষ্ট রইলেন।

    দুই ক্যাপটেনেরই জানা ছিলো চমকদারীর কোনো সুযোগ নেই এই রণভুমিতে। দিনকে দিন রোমেলের রসদ ক্রমশঃই কমতে লাগলো। আর আমেরিকার সৌজন্যে মন্টির ভাঁড়ার তখন ভর্তি। এসে গেছে শেরম্যান আর গ্রান্ট ট্যাংক। অনেক কামান। তিনি রয়েছেনও আলেকজান্দ্রিয়া বন্দরের খুব কাছে। ঘন ঘন সাপ্লাইতে কোনো বাধা নেই।এমন কি নিয়মিত সিগারেট আর বীয়রও সাপ্লাই হচ্ছে। সব থেকে বড়ো কথা তার প্লেন রয়েছে প্রচুর আর জার্মানদের কাছে সেটি একেবারে তলানিতে ঠেকেছে।আর ট্রাম্প কার্ড - রয়েছে এনিগমা ডিক্রিপশনের যাদু। রোমেলের খুঁটি নাটি প্ল্যান সবই মন্টি জানতে পারছেন - কখনো কখনো ছয় ঘন্টার মধ্যেই।

    ফাইনাল এনকাউন্টার
    *******************************

    সেই তিন বছর ধরে তো অনেক লড়াই হোলো। এবারে মুখোমুখী। এটাই শেষ লড়াই। রোমেল জিতলে উনি পলকেই দখল করে নেবেন কায়রো। হেরে গেলে তার আর কিন্তু ঘুরে দাঁড়াবার শক্তি থাকবে না,কেনো না জার্মানীর পক্ষে রাশিয়ার ফ্রন্ট সামলে আর উত্তর আফ্রিকার দিকে নজর দেওয়ার ক্ষমতা নেই।

    দু পক্ষেরই প্রতিরক্ষা জোরদার। কয়েক মাইল গভীর মাইন ফীল্ড, তার পিছনে ঘন কাঁটাতারের বেড়া। কিন্তু চুপচাপ বসে থাকলে তো চলবে না। রোমেলের তো দিন আনি দিন খাই গোছের অবস্থা। নিত্যকার সাপ্লাই ক্রমেই কমে আসছে, এই ভাবে টিঁকে থাকাও মুশকিল।

    আক্রমন করলেন মন্টি ই। জানাই ছিলো রসদ যার বিজয় তার। তার হাতে হাজার খানেক ট্যাংক। রোমেলে কুল্লে শ পাঁচেক আর তার আধাটা ইতালিয়ান লাইট ট্যাংক যা বড়োজোর শহরের দাংগায় পুলিশের ব্যবহার জন্য উপযুক্ত। বাকী জর্মন ট্যাংকের ও প্রায় ৫০% হচ্ছে পুরোনো অবসিলিট টাইপ ৩ প্যানজার ট্যাংক। নেহাৎই ঝড়তি পড়তি মাল। আকাশ পুরোটাই মিত্রশক্তির হাতে।মন্টির কাছে প্রায় দুই লাখ সেনা আর রোমেলের হাতে এক লাখ - যার মধ্যে পঞ্চাশ হাজার হচ্ছে নিরুদ্যম ইতালিয়ান সেনানী।

    ৪০ মাইলের ফ্রন্টে চমক তো কিছু নেই। শুধু জানতে হবে মেইন অ্যাটাকটা কোন দিকে হবে - উত্তরে এলামিন শহরের দিকে না দক্ষিনে কাত্তরা ডিপ্রেশনের গা ঘেঁষে।

    মন্টি মিসইনফর্মেশনের প্ল্যান নিলেন। দক্ষিন দিকে বহু রবারের ট্যাংক আর কামান সাজিয়ে রাখা হোলো। ওরকমই ফলস জলের পাইপও বসানো হোলো। মিছিমিছি কিছু ট্যাংক খুব ঘোরাঘুরি করে প্রচুর ট্র্যাকের দাগ রেখে দিলো মরুভুমিতে। নানান রেডিও সিগন্যাল এইসব চললো কিছুদিন। রোমেল নিঃসন্দেহ না হলেও তার ট্যাংকের একটা বড়ো অংশ তাই দক্ষিন দিকেই মজুত রাখলেন।

    রোমেলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটা ছিলো খুবই মজবুত। প্রায় পাঁচ কিলো মিটার deep এক মাইনফীল্ডে ছিলো প্রায় পাঁচ লক্ষ মাইন। তার মধ্যে ছিলো অসংখ্য বুবি ট্রাপ। বোমা শেল ও তব্রুক থেকে দখল করা ভয়াবহ অ্যান্টি পার্সোনেল s মাইন। জার্মানরা নাম দিয়েছিলো Devil's garden।

    তবে একটা নতুন যন্ত্র এসে গেছিলো মন্টির হাতে। সেটি ম্যাগনেটিক মাইন ডিটেকটর। ধীরে ধীরে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে আর মাইনদের "আবিষ্কার" করতে হবে না। এই ডিটেকটর দিয়ে মাইন সরানোর কাজ প্রায় দ্বিগুন তাড়াতাড়ি হবে, নিরাপদও হবে অনেক বেশী।

    গোদের উপর বিষফোঁড়া, রোমেল জন্ডিস রোগে অসুস্থ হয়ে চলে গেলেন অস্ট্রিয়ায় চিকিৎসার জন্য। মন্টি ও আর দেরী করলেন না। ২৩ অক্টোবর,এলামিন ফ্রন্টের দক্ষিনে একটা ডাইভারশনারী অ্যাটাক করে তিনি উত্তর দিকে শুরু করেলেন বিখ্যাত "এলামিন ব্যারাজ"। এমন ই কপাল। রোমেল যার হাতে এলামিনের দায়িত্ব দিয়েছিলেন সেই জেনারেল যুদ্ধের পরে দিনই হার্ট এট্যাকে মারা গেলেন। অসুস্থ শরীরেই রোমেলকে উড়ে আসতে হোলো এলামিনের রণভুমিতে।

    মধ্যরাতে এক হাজার কামান থেকে এক সাথে গোলা বর্ষণ শুরু হোলো। এরকম কনসেন্ট্রেটেড ফায়ার এতাবৎ কালে আর কখনো ঘটে নি। পনেরো মিনিট একটানা ব্যারাজের পর পাঁচ মিনিটের বিরতি আর পরে আর একটু দুরে রোলিং ব্যারাজ শুরু।

    ততোক্ষনে স্যাপাররা তাদের মাইন ডিটেকটর নিয়ে এগিয়ে চলেছেন মাইন গুলিকে একের পর এক অকেজো করে ট্যাংক চলাচলের জন্য একটা পথ তৈরী করে দিতে। সে ছিলো এক পুর্ণিমার রাত। প্রচন্ড গোলার ধারা পতনের মধ্যে হাতে হাতে লন্ঠন ধরে সেই মাইনফীল্ড নিষ্ক্রিয় করে এগিয়ে চললো মিত্র বাহিনী।

    কিন্তু তাদের অভিযান তেমন সুগম কিছু হয় নি। জর্মন সেনারা অসম্ভব লড়াই করলেন। কিন্তু তাদের গোলা বারুদে টানাটানি শুরু হয়ে গেছিলো। সব থেকে অভাব পেট্রোলের। দক্ষিন দিকে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা সাঁজোয়া গাড়ীদের উত্তর দিকে নিয়ে যাওয়ারও তেলের অভাব। রোমেল, যিনি সচল যুদ্ধের এক জাদুগর তিনি প্রায় অচল হয়ে গেলেন।

    যুদ্ধ শুরু হবার আগেই মন্টি হিসেব টিসেব করে বলেছিলেন বারো দিন লাগবে তার এই লড়াই জিততে। হলও এক্সাক্টলি তাই। প্রায় সব ট্যাংক ধ্বংশ, অনেক হতাহত, রোমেল অনুমতি চাইলেন হিটলারের "পিছিয়ে আসবো"। হিটলার উত্তর দিলেন,না,ওখানে দাঁড়িয়ে থাকো আর বীরের মৃত্যু বরন করো। কিন্তু এক পা ও পিছু হটা চলবে না।

    পরের দিন রোমেল আবার টেলেগ্রাফ করলেন হিটলারকে, আর তারপরে (মতান্তরে) হিটলারের আদেশের অপেক্ষা না করেই তিনি এল এলামিন ছেড়ে লিবিয়ার দিকে যাত্রা শুরু করেছিলেন। হিটলার অগত্যা "পোস্ট ফ্যাক্টো" অনুমতি দিলেন। রোমেল কিন্তু ইতালিয়ান সেনাদের ফেলে রেখেই ফিরে চল্লেন।

    মন্টি তখনই পিছু ধাওয়া করে শেষ করে দিতে পারতেন পলাতক জার্মানদের কিন্তু তিনি চিরকালই রিস্ক নিতে অপছন্দ করতেন। প্রায় আঠারো ঘন্টা পর তিনি জর্মনদের পিছু নিলেন। কিন্তু তখন বড্ডো দেরী হয়ে গেছে।

    আরো লড়াই হবে তবে সে গুলি সবই পিঠ বাঁচানোর লড়াই । কোনো ক্রমে পিছু ধাওয়া করে আসা সেনাদেরকে যতোক্ষন পারা যায় আটকে রাখা। এই ভাবে প্রায় ছয় মাস ধরে ডিলেইং ট্যাকটিক্স করে অবশেষ ৪৩'এর মে মাসে শেষ জর্মন সেনাটিও উত্তর আফ্রিকা ছাড়লো।মরুবিজয়ের কেতন রইলো মন্টির হাতেই।

    উত্তর আফ্রিকায় বিশ্ব যুদ্ধের নটে গাছটিও মুড়োলো।

    ফিরে দেখা ঃ র িথৌত হতে
    *************************************

    রোমেলের ইচ্ছে ছিলো তার মেময়ের্স বের হবে এই যুদ্ধ নিয়ে যার নাম হবে "আ র িথৌত হতে"। সেটা তো আর সম্ভব হয়ে ওঠে নি।

    কিন্তু আগাগোড়াই এই তিন বছরের যুদ্ধে তার ব্যবহার ছিলো ১০০% সঠিক। কোনো মিত্রপক্ষীয় যুদ্ধবন্দী অত্যাচারের কোনো ঘটনা উল্লেখ করে নি। দুই পক্ষেরই পারষ্পারিক ব্যবহার ছিলো সুভব্য। বহু বহু ঘটনার উল্লেখ আছে দুই পক্ষেই। তাকে হত্যার জন্য পাঠানো ব্রিটীশ কম্যান্ডোদের তিনি বন্দী শিবিরেই পাঠান, এবং সেই রেইডে নিহত জিওফ্রে কেইসকে পুর্ণ মর্যাদায় কবর দেন। মন্টি এসে নিজের সেনানীদের নির্দেশ দেন যে ঐ রকম ভাবে ভক্তিভরে রোমেলকে উল্লেখ করা চলবে না। তবে তার উপর "এক কথায় প্রকাশ করো" বল্লে চার্চিলের উপরে আর কে যাবে? যুদ্ধ চলাকালীনই ১৯৪২ সালে হউস অব কমনসে চার্চিল বলেন "এ হভে অ ভের‌্য দরিঙ্গ অন্দ স্কিল্ল্ফুল ওপ্পোনেন্ত অগইন্স্ত উস, অন্দ, ময় ঈ সয় অ্রোস্স থে হভো ওফ র, অ গ্রেঅত গেনেরল "। এই যুদ্ধে জিতে মন্টেগোমারীও এক জন সুপার স্টার বনে গেলেন।

    কিন্তু এই যুদ্ধের আলাদা করে কোনো ফায়দা নেই। এ তো জমি দখলের লড়াই নয়। কি লাভ হবে ঐ উষর বালুভুমির দখল নিয়ে? শুধুই মরাল ভিকট্রি। তবে ঐ টানাটানির মধ্যেই রাশান ফ্রন্টিয়ার থেকে নানান রসদ যোগান দিতে হয়েছে উত্তর আফ্রিকায় - সেই টুকুই লাভ রাশার। আরো একটা বড় ঘটনা যে এই যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য হিটলার রাশা আক্রমন পাঁচ সপ্তাহ পিছিয়ে দেন। সেটার তাৎপর্য্য এখন বোঝা যায়। মস্কোর খুব কাছে পৌঁছেই ১৪০ সালের মধ্যে শীতলতম শীতের মুখোমুখি হন জর্মন বাহিনী। তাঁদের ঐ শীত মোকাবিলা করবার না ছিলো পোষাক না ছিলো অন্যান্য ব্যবস্থা। পাঁচ সপ্তাহ বেশী সময় পেলে কি হোতো কে জানে?

    -----------------------------------------------------------------
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ | ১০৫২ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    চম - dd
    আরও পড়ুন
    ও শানওয়ালা - dd
    আরও পড়ুন
    দ্রোণ পর্ব - dd
    আরও পড়ুন
    কর্ণসংহার - dd
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • T | ***:*** | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:৪৬66139
  • এটা তো বম্বি। অ্যালান ট্যুরিং এর ডিজাইন।
  • Jaqen H'ghar | ***:*** | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৮66140
  • ঠিক
  • dd | ***:*** | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৫৩66130
  • কি মুষ্কিল লাস্ট প্যারাটার দুটো লাইন আবার দিচ্ছি।

    ফিরে দেখা ঃ war without hate

    যুদ্ধ চলাকালীনই ১৯৪২ সালে হউস অব কমনসে চার্চিল বলেন "We have a very daring and skillful opponent against us, and, may I say across the havoc of war, a great general "।
  • T | ***:*** | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৪:০১66131
  • বাঃ, হেব্বি।
  • lcm | ***:*** | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৬:৫৪66141
  • ডিডিদা বাংলা যুদ্ধের গপ্পের ওস্তাদ।

    কোনো ছবি দেখে যদি মনে না পড়ে কিসের ছবি, তখন গুগল ইমেজ সার্চ করো, https://www.google.com/imghp এখানে গিয়ে ঐ ক্যামেরার ছবিতে ক্লিক করে ওখানে ছবির ঠিকানাটি (যেমন এক্ষেত্রে, পেস্ট করে দাও - ব্যস্‌, ছবি মিলিয়ে সার্চ রেজাল্ট আসবে।
  • b | ***:*** | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৭:০৩66132
  • রোমেল আমার ছোটোবেলার হিরো। ওনার একটা বাঙলায় লেখা জীবনী পড়েছিলাম, ছোটদের জন্যে। সেখানে এই রসদের অভাবটা বারবার বলা ছিলো।
    রোমেলকে বলত ডেজার্ট ফক্স। আর ইংরেজরা শুনেছি জার্মান বাহিনী বা হিটলারের সৈন্য উল্লেখ করা ছেড়েই দিয়েছিলোঃ বলত রোমেলের বাহিনী।
    ডি ডে নিয়ে আরেকটা বই পড়ছিলাম। নেহাত হিটলারের গান্ডুমির জন্যে দুটো ফ্রন্টে লড়তে হল বলে, নইলে জার্মান সৈন্যদের ট্রেনিং, ইকুইপমেন্ট ইত্যাদি অনেক ভালো ছিলো। চার্চিল রুজভেল্ট এবং তাদের বাবারো সাধ্যি ছেলো না। সেটা আখেরে ভালো না মন্দ হত সেটা অবশ্য জানি না।
  • b | ***:*** | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১১:৪৬66133
  • ডিডি,
    একটু ব্যাটল অফ কোহিমা সম্পক্কে লিখুন।
  • avi | ***:*** | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১১:৫৯66134
  • লিবিয়ার তেলের খনি তখনো আবিষ্কার হয় নি, না? পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল লিবিয়ায় তেল পেলে জার্মানি তখনই জিতে যায়।
    দারুণ লাগল। এরকম যুদ্ধের ওপর অবজেক্টিভ লেখা বাংলায় প্রায় পড়ি নি। যদ্দূর মনে হয় নীরদচন্দ্রের দু চারটে পড়েছি।
    একদম ছোটবেলায় 'রোমেল' নামে একটা বই দেখতাম, সুকন্যার। ভালো লাগে নি। সেন্টিমেন্টাল। এই লেখাটার মতো আরো চাই।
    জার্মানি আর বৃটেনের নৌযুদ্ধ নিয়ে লেখা হোক। ইউ বোট আর ডেস্ট্রয়ার।
  • Arpan | ***:*** | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১২:০৫66135
  • কিন্তু নিউক বম্ব তো আমেরিকা বানিয়ে ফেলতই। বড় জোর ব্রিটেনের পতন হত তদ্দিনে। তাও কোশ্চেনেবল।

    এনিগমা ডিকোডার নিয়ে একটু লিখুন ডিডিদা। মনে হচ্ছে ওটা দিয়ে ব্রিটিশেরা ওস্তাদের মার মেরেছিল।
  • Arpan | ***:*** | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১২:০৬66137
  • বোধির পোস্টের উত্তরে বললাম।
  • Arpan | ***:*** | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১২:০৬66136
  • বোধির পোস্টের উত্তরে বললাম।
  • Jaqen H'ghar | ***:*** | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১২:২৫66138
  • বলুন দিকি এটা কী?

  • sinfaut | ***:*** | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৭66142
  • আর যদি ছবির ঠিকানাও না থাকে তখন টিন আই রিভার্স ইমেজ সার্চ করো।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন