এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • টালমাটাল টিনএজ

    Suvendu Debnath লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৩ মার্চ ২০১৯ | ৮৯৮৫ বার পঠিত
  • টালমাটাল টিনএজ
    শুভেন্দু দেবনাথ

    দশটি মেয়ে এবং ছ-টি ছেলে। ষোলো জন কিশোর কিশোরী জড়ো হয়েছিল ২৩ শে জুলাই এক বান্ধবীর জন্মদিনের পার্টিতে। সকলেই যে ঘনিষ্ঠ তা নয়। বেশির ভাগেরই পরিচয় স্বল্প দিনের। কেউ কেউ তো আবার অচেনাও। এদের মধ্যেই একজন আবেশ দাশগুপ্ত, যে নিমন্ত্রিতই ছিল না। একজন বন্ধুর সঙ্গে সে গিয়েছিল পার্টিতে। সন্ধ্যে ছটা নাগাদ আবেশ কে আহত অবস্থায় পাওয়া যায়, যেখানে পার্টি হচ্ছিল সেই বাড়িরই বেসমেন্টে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় আবেশের। তদন্তে উঠে আসে এগারো বারো ক্লাসের ওই সব কিশোর কিশোরী সকলেই ছিল নেশায় চুর। সেইদিন সকালে ছেলেটি বেড়িয়েছিল মায়ের দেওয়া ১৮০০ টাকা নিয়ে। যদিও তার যাবার কথা ছিল অন্য একটি পার্টিতে, অন্তত তার ঘনিষ্ঠ এক বান্ধবীর সঙ্গে তেমনই ছিল পরিকল্পনা। পার্টিতে মত্ত আবেশের শরীরে পাওয়া যায় ন’টি আঘাতের চিহ্ন। যে বন্ধুটি ওই কিশোরকে সানি পার্কের পার্টিতে নিয়ে গিয়েছিল - সে রক্তাক্ত অবস্থায় আবেশকে ফেলে অসুস্থ মাকে দেখতে হাসপাতালে যাবে বলে তড়িঘড়ি বেরিয়ে যায়। যদিও সে ওই হাসপাতালে যায়নি। ভিজিটিং আওয়ার্স শেষ হয়ে যাওয়ায় সোজা চলে যায় বাড়িতে। আহত বন্ধুকে কেউই হাসপাতালে নিয়ে যাবার বন্ধুত্বটুকুও দেখায় নি। বেশ খানিকক্ষণ পরে যার পার্টির উদ্যোক্তা মেয়েটির বাবা তাকে নিয়ে যায় হাসপাতালে। দুর্ঘটনা নাকি খুন, তা এখনও তদন্ত সাপেক্ষ। কিন্তু আমাদের চারপাশের অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর কিশোরীদের নেশার কবলে তলিয়ে যাওয়া, হারিয়ে ফেলা মূল্যবোধ, নেশার কারণেই নানান অপরাধে জড়িয়ে পরার ঘটনা ক্রমশই বাড়ছে। কলকাতার আনাচে কানাচে চোখ রাখলেই টের পাওয়া যায় অসুখ বাড়ছে। দেখা যাক সেই অসুখের বীজ কতখানি ছড়িয়ে পড়েছে কলকাতার বুকে।

    সকাল সাড়ে দশটা। ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে ভেজা পার্ক স্ট্রীটের অফিস পাড়ার সবে ঘুম ভাঙছে। আড়মোড়া ভেঙে দোকানগুলোর সাটার উঠে যাচ্ছে একে একে। রাস্তাঘাটে গাড়িঘোড়ার মাঝে মাঝে ইতিউতি স্কুল ইউনিফর্ম পরা ছেলেমেয়ের দল। একটি হলুদ বাস এসে থামলো পার্ক স্ট্রীটের নামী কনভেন্ট স্কুলের গেট থেকে একটু দূরে। হুল্লোড়ে নেমে আসছে ছেলে মেয়েরা। শুধু দুটি মেয়ে পেছনের সীটে বসে, একেবারে তাড়া নেই তাদের। সতর্ক চোখে দেখছে স্কুল গেট। অন্যান্য ছেলে মেয়েদের সঙ্গে, বাস থেকে নামল তারা। সকলেই ব্যস্ত পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে স্কুল গেটের দিকে। ধীরে ধীরে হাঁটার গতি কমিয়ে দিল মেয়ে দুটি। অন্যান্যদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে ঢুকে পড়লো পাশের গলিতে। কোন ক্লাসে পড়ে তারা? বড়োজোর ক্লাস নাইন। মেয়েদুটি পাশের গলিতে ঢুকেই চট করে পরনের আপারটা খুলে সটান চালান দিলো ব্যাগে। ভেতরে দিব্বি গোল গলা কালো স্কিনটাইট টি-শার্ট। গলি থেকে বেড়িয়ে রাস্তা পার করে উল্টো দিকে হাঁটা দিলো । স্কুল না করে কোথায় যাচ্ছে? স্কুল থেকে ঠিক দশ পা দূরে একটা ডাবওয়ালার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো দুজনে। তেষ্টা পেয়েছে হয়ত। চমক ভাঙলো ওদের কথা শুনে। “কাকু চিনি আছে?” ডাবওয়ালার কাছে চিনি! ব্যাপারটা কি? ডাবওয়ালা মুচকি হেসে জিজ্ঞাসা করলো ‘কতটা’? একজন বলল ‘হাফ’। নীচের ঝোলা থেকে হাত ঢুকিয়ে ডাবওয়ালা বের করে আনলো নিজের মুঠো। তারপর গুঁজে দিলো মেয়েটির হাতে। মেয়েটিও মুঠোর মধ্যেকার জিনিসটা পার্সের ভেতর চালান দিয়ে বার করে আনলো চকচকে পাঁচশো টাকার নোট। গুঁজে দিলো ডাবওয়ালার হাতে। ডাবওয়ালার কাছে চিনি, যার দাম আবার ৫০০ টাকা! ততক্ষনে মেয়েদুটি আবার চলতে শুরু করেছে। এবার খানিকটা পা চালিয়েই। একটু এগিয়ে রাস্তা পার হলে উল্টো দিকে পার্ক স্ট্রিট সেমিট্রি। মেয়েদুটি ঢুকে গেলো । একদম ভেতরে নির্জন কোণ বেছে বসলো একটা মন্দিরের মত সমাধির ভেতর। চারদিক ভালো করে দেখে নিলো তারা। কেউ দেখছে না তো? ৫০০ টাকা দিয়ে ডাবওয়ালার কাছ থেকে চিনি কেনা, এই নির্জন সমাধির ভেতর জাঁকিয়ে বসা, এতো লুকোছাপাই বা কেন? খাবি তো এক মুঠো চিনি, তার আবার এতো আড়াল! ব্যাগের ভেতর থেকে বার করেছে একফালি সাদা কাগজ আর টিফিনবক্স। দেখলে মনে হবে বাদলা দিনে স্কুল পালিয়ে দুটি মেয়ে বোধহয় চড়ুইভাতি করছে। চমক এর পরেই। একটি মেয়ে সেই চিনির প্যাকেট ছিঁড়ে খানিকটা সাদা গুঁড়ো বন্ধ টিফিন বক্সের উপর পাতা কাগজে ছড়িয়ে দিল। দ্বিতীয়জন তখন বার করেছে কাগজ পাকানো একটা নলের মত জিনিস, আর একটা সিগারেটের প্যাকেট। প্যাকেট থেকে রাংতা বের করে ভাজ করে একটা শক্ত মত কার্ড বানালো মেয়েটি। তা দিয়ে সাদা পাউডারের মতো জিনিসটাকে সাজিয়ে তিনটে লাইন টানলো সে। হাতের নলটি বাড়িয়ে দিলো সঙ্গীকে। সঙ্গী মেয়েটি একটু ঝুঁকে পড়ে নলটি নাকে ঠেকিয়ে সেই লাইন টানা গুড়োর উপর অপরপ্রান্ত ধরে জোরে একটা লম্বা শ্বাস নিলো। হাতের তেলো দিয়ে নাক মুছে নলটি এগিয়ে দিলো অপরকে। এবং সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। ততক্ষনে প্রথম জন ধরিয়ে ফেলেছে একটি লম্বা সিগারেট। ছবিটা এতক্ষণে পরিস্কার। ওরা নেশা করছে। ওই চিনির গুড়ো আসলে হেরোইন। এতক্ষনের ঘটে যাওয়া ঘটনাটি আগামী কোন বাংলা সিনেমার স্ক্রীপ্ট নয়। আমাদের চারপাশে রোজ ঘটে যাওয়া সত্যিগুলোর একটা। একবর্ণ কল্পনার আশ্রয় নেই, নেই কোন অতিরঞ্জন। খানিক পড়েই আলাপ জমানো গেলো মেয়েদুটির সঙ্গে। টিউলিপ আর অস্মিতা (নাম পরিবর্তিত)। নামী কনভেন্ট স্কুলের ক্লাস নাইনের ছাত্রী। ‘এই যে স্কুল বাঙ্ক করো বাড়িতে বা স্কুলে কেস খাও না?’ ‘কামঅন ইয়ার, বোকা বোকা কথা বোলোনা তো। ওসব ব্যাকডেটেড হয়ে গেছে। স্কুল কামাই করলে আজকাল কোন কেস নেই। মা কিংম্বা বাবার সই নকল করা তো জলভাত’। বলেই দু বান্ধবীর হাই ফাইভ। কতদিন ধরে নেশা করছে প্রশ্ন করায় জানা যায় প্রায় এক বছর। কি ভাবে শুরু করলে? ওদের মুখেই শোনা গেলো সিনিয়ার এক দাদার হাত ধরেই কবরখানায় প্রবেশ। তারপর হেরোইন যার বাজার চলতি নাম ‘চিনি’র নেশা। এখন রেগুলার। বাড়িতে ধরা পড়ার ভয় নেই? নেশার টাকা জোগাড় হয় কি ভাবে? ‘ধুর বাড়ির লোকের এত টাইম কোথায়? মা পাপা দুজনেই বিজি। বাড়ী ফিরতে ফিরতে দশটা, ততক্ষনে আমি নিজের ঘরে। আর টাকা তো বাবা মাই দেয়। মাসে আমার পকেট মানি ৫ হাজার টাকা”। বলেই চকিতে প্রশ্ন ধেয়ে আসে, ‘এই তুমি এতো জেরা করছো কেনো, তুমি কি পুলিশ?” তাদের নিরস্ত করা গেল। পুলিশ নয়, নেহাতই এক চাকুরে, বৃষ্টিতে অফিস যেতে ইচ্ছে না করায় ওদের মতই পালানো। এত দাম রোজ নেশা করতে গেলে পাঁচ হাজারে হয়? উত্তর আসে – কখন বন্ধুরা খাওয়া, দরকারে ঠিক জোগাড় হয়ে যায়। কি ভাবে? আরে কত বন্ধু একটু লাইন দিলেই টাকা দিয়ে দেয়। লাইন দিলে মানে? আমার হাতের সিগারেটটা ছোঁ মেরে নিয়ে অন্যজন বলে- তুমি কি গাম্বাট, লাইন বোঝো না। আরে ইয়ার ছেলে গুলোর সঙ্গে সামান্য স্মুচ করলেই টাকা দেয়। স্মুচ? চমকাবেন না। এটাই বাস্তব। সোসাল মিডিয়ায় আবেশের মৃত্যু কে ঘিরে এতো বাওয়াল। কখনো পুলিশ কে গালাগাল কখনো আবেশের বাড়ির লোককে। সমস্যা কিন্তু এখনও আঁধারেই। আপাতত এদের ছেড়ে যাওয়া যাক একটু অন্য ঠেকে।

    ইশক দা সুট্টা

    মধ্য কলকাতার এক নামী রেস্তোরার হুক্কা পার্লার। দুপুর সাড়ে তিনটে। এর মধ্যেই বেশ ভিড়। সমস্তই অল্প বয়েসী ছেলেমেয়ে। ক্লাস এইট থেকে শুরু করে বড়োরাও আছে। পার্লারের গেটে সাদা কাগজের প্রিন্ট আউট সাঁটা। ২১ বছরের নীচে প্রবেশ নিষদ্ধ। কিন্তু ভেতরে আইনের চোখে বুড়ো আঙুল। সেখানে যেমন ১৪র অবস্থান, তেমনি ২৪শেরও। আলো আঁধারিতে চারিদিকে সোফা কৌচ, মাঝে সেন্টার টেবিলে হুক্কার বেস রাখা। নল হাতে একএক জনের ধূম উদ্গীরণ। বয়েসের বালাই নেই, কেউ কেউ আবার উদ্দাম গানের তালে নেচে যাচ্ছে। যে কোন হুক্কা পার্লারের পরিচিত ছবি। একটা হুক্কার দাম শুরু সর্বনিম্ন ২০০ টাকা থেকে। ছবিটা কিন্তু এখানেই শেষ নয়। আসল ছবির জন্য ধৈর্য ধরতে হয় রাত নটা অব্ধি, তার আগেই অবশ্য ট্রেলর পাওয়া যায় দুপুরের দিকে। দলে দলে এক একটা টেবিল জুড়ে ছেলে মেয়ে, হাতে হাতে হুক্কার নল ঘুরছে। খোলামেলা চলছে স্মুচিং। কে দেখলো না দেখলো থোড়াই কেয়ার। ছবিটা বদলে যেতে শুরু করে সন্ধ্যে ৭টায়। অল্প বয়েসীদের দল তো আছেই, সেই সঙ্গে আরেক দলও আছে। যারা এসেছে বাবা মায়ের সঙ্গে। এক সঙ্গে একই নলে চলছে অবিভাবকের সঙ্গে হুক্কা বিহার। তারই মাঝে তাদের হাত থেকেই সিগারেটের কাউন্টার অথবা দু এক সিপ মদ্যপান। ছবিটা ভয়ানক কিছু উচ্চবিত্তদের নয়। উচ্চবিত্তরা যেমন আছেন, তেমনই আছে মধ্যবিত্ত ঘরের অবিভাবক ও তাদের ছেলে মেয়েরা। শুধু অ্যালকোহল বা হুক্কাই? তবে যে শোনা যায় রাত বাড়লে অন্য রঙও দেখা যায় এই সব পার্লার আর ডিস্কো থেক যার ডাকনাম ‘ডিস্ক’গুলোতে! ব্যস্ত হবার দরকার নেই। আভি তো পার্টি শুরু হুই হ্যায়। হ্যাঁ, সত্যিই পার্টি সবে শুরু। রাত দশটা। ডিস্কের ডিজে এখন তুমুল মুডে। বাজাচ্ছে একের পর এক গা গরম করা গান। স্কুলে পড়া, সদ্য স্কুল পেরোনো তরুণ তরুণীরা উঠে এসেছে ডিস্কের মাঝে। কেউ কেউ হাতে বিয়ারের বোতল নিয়েও। এক বেয়ারা কে সাইডে ডেকে জিঞ্জেস করা গেলো শুকনো কিছু হবে না? মুচকি হেসে প্রাইভেট রুম গুলো দেখিয়ে দিলো। ‘হুয়া যাইয়ে, আধাঘন্টা বাদ শুরু হোগা।
    ঢোকা গেলো পাশের রুমে। এখানে মিউজিক একটু ধিমে তালে। আলোর চোখ ধাঁধানিও অনেকটা কম। তবে আলো আঁধারি আছে। এখানেও ঘর জুড়ে সোফা কাউচ, মাঝে মাঝে সেন্টার টেবিল। নানা বয়েসী কিশোর কিশোরী তরুণ তরুণী মায় বৃদ্ধও। সমস্তই জোড়ায় জোড়ায়। সবাই বেশ খুল্লমখুল্লা। সঙ্গের এক বন্ধু কে নিয়ে একটা কোণ দেখে বসে পড়া গেলো। চারিদিক নজর করতেই দেখা গেলো কোথাও বছর পনেরোর কিশোরী মধ্য চল্লিশের প্রায় কোলে উঠে পড়েছে, ঠোঁটের মধ্যে গোঁজা ঠোঁট। কোথাও দুই অপ্রাপ্ত বয়স্ক যুগল যা করছে তা হলি বলির সিনেমাকেও হার মানায়। এরই মধ্যে একটি বছর ষোলোর মেয়ে ও সারা শরীরে ট্যাটু রঞ্জিত বছর ২৪এর যুবক দরজা ঠেলে ঢুকলো। ঘরের সমস্ত টেবিল ভর্তি থাকায় কাছে এসে বলল এখানে বসতে পারে কিনা। রাজি হওয়ায় বসেই পড়লো। পরিচয় হতে জানা গেলো ছেলেটি একটি সফটওয়্যার ফার্মের চাকুরে। মেয়েটি দক্ষিণ কলকাতার এক নামী স্কুলের ক্লাস ইলেভেনের ছাত্রী। ফেস বুকে আলাপ। এসেছে বুজিং করতে। আজকেই প্রথম আলাপ। মেয়েটির আবদারে এসেছে গঙ্গা যমুনা খেতে। সে আবার কেমন জিনিস। মাথার মধ্যে হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে দেখি বেয়ারা হাজির। একটা প্লেটের মধ্যে গোটা দুই পাকানো সিগারেটের মত বস্তু। জানা গেলো ও দুটি মারিজুয়ানা আর হ্যাসিস এর কম্বিনেশন। প্রতিটার দাম ৪৫০ টাকা। আমরা যারা ভাবি মারিজুয়ানা মানে গাঁজা জেনে রাখা ভালো মুর্খের স্বর্গে বাস ছিল। আপাতত সে সব থাক জেনে নেওয়া যাক এই দুই যুগলের কীর্তি। জানা গেলো মেয়েটির বাড়িতে জানে বন্ধুদের সাথে রাতে পার্টি করে বান্ধবীর বাড়িতে রাত কাটাবে সে। কিন্তু আসল ব্যাপার আজ সে রাত কাটাবে ছেলেটির ফ্ল্যাটে। শর্ত একটাই গঙ্গা যমুনা।
    স্কুল পালানো, লুকিয়ে চুরিয়ে সিগারেট টানা, অথবা বন্ধুদের সাথে অল্পস্বল্প মদ্যপান প্রায় সকলেই করেছি কম বেশি একটা সময়ে। বয়ঃসন্ধির সময় একটা নিষিদ্ধ জগতের প্রতি টান থাকে। এই অব্ধি ঠিক ছিল। কিন্তু যখন সেখানে অপরাধ জড়িয়ে পড়ে তখন তো সামান্য হলেও সতর্কতা রাখতেই হয়। সোস্যাল মিডিয়ায় আবেশের মৃত্যু নিয়ে সকলেই প্রায় দুটি দলে অবস্থান নিয়েছে। একদল বলছে আবেশ উচ্ছন্নে গেছিল মরেছে বেশ হয়েছে, আরেকদল দোষারোপ করছে তার অবিভাবদের। কিন্তু কোথাও গিয়ে আমরা ভুলে যাচ্ছিনা তো যে এই তরজার ভেতর আসল সমস্যাটা চাপা পড়ে যাচ্ছে। কি বলছেন দমদমের এক নামী ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল আদিত্য অ্যাকাডেমির বর্ষিয়ান শিক্ষক প্রিন্স সেনগুপ্ত, “ দেখুন সমস্যাটা শুরু হচ্ছে বাড়ি থেকে। মানছি যুগ বদলেছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে মূল্যবোধ হারিয়ে যাবে। একান্নবর্তী পরিবার গুলো ভেঙে গিয়েছে। ছোট পরিবার । ফলে আমাদের সময় বাবা মায়েরা সময় দিতে না পারলেও দাদু ঠাকুমা, বা বাড়ির অন্যান্য লোকেরা আমাদের শাসন করতো। তাদের কাছে নানা শিক্ষা নিয়ে আমরা বড়ো হয়েছি। এখন যেটার অভাব দেখা দিচ্ছে। শিক্ষকদের গন্ডি এই স্কুলের ভেতরেই। স্কুলের কয়েকজনের পক্ষে প্রত্যেককে আলাদা নজরে রাখা সম্ভব নয়। তা ছাড়া আজকাল মারধরের কথা ছেড়ে দিন, সামান্য ধমক দিলেই গার্জিয়ানরা দল বেঁধে কৈফিয়ত চাইতে চলে আসেন। অথচ আমরা স্কুলে মার খেলে সে কথা বাড়িতে জানাতে ভয় পেতাম, কারণ বাড়িতে বললে আরো দু চার ঘা জুটবে। আমাদের সময় স্যারেদের পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করার চল ছিল, সম্বোধন ছিল আপনি। আর আজকাল বাচ্চারা দেখা হলে বলে হাই স্যার কেমন আছো? আসলে বোধ হয় যুগের সঙ্গে বদলাতে গিয়ে বেসিক মূল্যবোধটুকুকেও আমরা বদলে ফেলছি”। তাঁর মুখেই শোনা গেলো, বছর তিনেক আগে ক্লাস এইটের একটি ছেলেকে তারা ধরেছিলেন। ছেলেটি রেগুলার ক্লাসে এসে ঝিমোতো, তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ছেলেটি ড্রাগস নেয়। বাড়িতে খবর পাঠালে ছেলেটির মা স্কুলে এসে বলে যে তাঁর স্বামী ওপেন মাইন্ডেড। বাচ্চাদের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। এবং বাড়িতেই তারা ছেলের সাথে বসে মধ্যপান করেন। টিচারদের এসব নিয়ে ভাববার দরকার নেই, তারা শুধু দেখুন ছেলেটি পড়াশুনা করছে কিনা। সেই ছেলেটিই সম্প্রতি ড্রাগ ওভারডোজের কারণে মারা যায়। দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করা মানুষটি জানান – আমরা কি করবো বলুন, আমাদের হাত পা বাঁধা। বাড়িতে একটি ছেলেকেই মা বাবা সামলাতে পারছেন না, সেখানে এতগুলো বাচ্চাকে আমরা কি করে সামলাবো? তবু আমরা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে স্কুলের আশপাশে স্কুল চলাকালীন ঘোরা ফেরা করি, কেউ বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে কিনা জানতে। সম্প্রতি তারা কয়েকজন কে স্কুল থেকে সাসপেন্ডও করেছেন। তাদেরই একজনের বাবা পুলিশে চাকরি করেন। তিনিও স্কুলের সঙ্গে সহযোগিতা করে, সিভিল ড্রেসে স্কুলের আশপাশে নজরদারির বন্দোবোস্ত করেছেন।
    ধরে নিচ্ছি যুগ বদলেছে। সকলেই ব্যস্ত মূল্যবৃদ্ধির এই ইঁদুর দৌড়ে। ছেলে মেয়েদের সময় দিতে পারেন না, কিন্তু তার মানে এই নয় যে সময়ের ভর্তুকি স্বরূপ হাজার হাজার টাকা তারা তুলে দেবেন ছেলে মেয়েদের হাতে। সামান্য খোঁজটুকুও নেবেন না সে টাকা যাচ্ছে কোথায়?

    আভি তো পার্টি শুরু হুঁই হ্যায়

    অপরাধ কি নেশা করলেই হয়, নাকি নেশাই এই সমস্ত কিশোর কিশোরীদের টেনে নিয়ে যায় অপরাধের দিকে? অপরাধের জগতে ঘুরে দেখার আগে একটু দেখে নেওয়ার পালা নেশার জগতের দরদাম। যেকোন চলনসই ডিস্কে এন্ট্রি নিতে দুজনের লাগে ৩৫০০ টাকা। বিয়ারের আলাদা ৩৫০ টাকা। সঙ্গে অন্যান্য খাবার দাবার আছেই। সব মিলিয়ে হিসেব করলে একরাতে যেকোন ডিস্কে যেতে গেলে পকেটে থাকতে হবে নূন্যতম হাজার সাতেক টাকা। একটু দামি কোথাও গেলে সেটাই দাঁড়াবে প্রায় ১২ হাজারের কাছাকাছি। সাধারণ কোন বারে গেলে, বাজারে যে বিয়ারের দাম ৭০ থেকে ৮৫ মধ্যে সেখানে তার দাম পড়ে ২০০ টাকা। অন্যান্য মদের ক্ষেত্রে ২৫০ টাকা পেগ শুরু। এতো গেলো মদ্যপাণের কথা, যদি স্পেশাল কিছু পেতে চান দাম দিতে হবে প্রচুর। বিভিন্ন ধরনের গাঁজা, মারিজুয়ানার কম্বিনেশন শুরু ৫০০ টাকা থেকে ১৪ হাজার টাকা অব্ধি। বাজারে সাধারণ গাঁজা বিক্রি হয় ৫০, ১০০, ১৫০ ও ৩০০ টাকার খামে। এক রতি কোকেনের দাম শুরু ৫০০ টাকা থেকে। একটু ভালো কোয়ালিটির দাম পরে যায় হাজার চারেক টাকা রতি। হেরোইনের দামও প্রায় একই। হাসিস এর দাম ৩০০ টাকা থেকে শুরু। চলে আসুন হুক্কার দিকে। বাজারে বিভিন্ন হুক্কার ফ্লেবার পাওয়া যায় প্রায় ১৫০ রকমের। দাম শুরু ২০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা অব্ধি। শেষ হলে দ্বিতীয় বারের জন্য হুক্কার টিকে ফ্রি। তবে তা জায়গা বিশেষের ক্ষেত্রে। ফ্লেবার অনুযায়ী বাড়ে দাম। যেমন –হুইস্কি গ্রেপ অ্যাণ্ড মিন্ট, অ্যাপেল –স্প্রিং ওয়াটার- অরেঞ্জ, ইলাইচি মিন্ট রোজ, পান থান্ডার, রেড ডেভিল, ক্রেজি রোমান্স, রয়্যাল গোল্ড ইত্যাদি। অনেকে মিলে গেলে একটা হুক্কায় কি হবে? অন্তত ৩টে নিতে হবে ভালো মতন নেশার জন্য। সঙ্গে অন্যান্য খাবার তো আছেই। কতক্ষণ আর হুক্কা টানবেন। বিভিন্ন ধরনের ককটেলের গ্লাস শুরু ৩৫০ টাকা থেকে।
    এতো খুব কমন নেশা, দামী নেশা। যাদের পয়সা কম বন্দোবোস্ত আছে তাদের জন্যেও। মদ্যপান বা ড্রাগস ছাড়াও আছে সস্তায় ট্যাবলেটের নেশা। এন টেন যা ধারনত কড়া ঘুমের ওষুধ হিসাবে ডাক্তার প্রেসক্রাইব করেন তাও ব্যবহার হয় নেশার জন্য। যারা এখনও শিক্ষনবিশী তাদের এক এক বারে নেশা করতে লাগে ১২ খানা এন টেন। আর পাক্কা নেশাড়ুর ক্ষেত্রে একবারে লাগে প্রায় ২০ থেকে ২৫ খানা ট্যাবলেট। মেয়েদের মেনোপজের ব্যাথার জন্য ব্যবহৃত টেবলেট প্যাজমো প্রক্সিমন। চলতি নাম প্যাজ বা পি, যা কিনা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া বাজারে পাওয়া যায় না, নেশা হয় তা দিয়েও। শুরুতে লাগে ২টি ট্যাবলেট। একবার ধরে গেলে সংখ্যাটা দাঁড়ায় এক এক বারে ২০ ২৫ টি। দুটি ট্যাবলেটের ক্ষেত্রেই দিনে অন্তত তিনবার করে নেশাড়ুরা ওই সংখ্যক ট্যাবলেট নেয়। দামও খুব কম ৩০ ৩৫ টাকা পাতা। ছেলেরা নয় মেয়েরাও এই নেশা করছে বিন্দাস। অথচ ডাক্তারদের মতে বেশি মাত্রায় প্যাজ নিলে মেয়েদের বন্ধ্যাত্ব দেখা দেয়। প্যাজ নেবার মিনিট দশেক পরে মিষ্টি জাতীয় কিছু খেলেই নেশা বাড়ে চড়চড় করে। অনেকে লজেন্স অথবা চা কফিতেই কাজ সারে। যত বার চা অথবা লজেন্স খাবেন নেশা চড়ে যাবে দ্বিগুন। সম্প্রতি বাজারে এসেছে রোহিপনল, যার বাজার চলতি নাম ক্যাটামাইন বা কে। বিভিন্ন ওষুধের কম্বিনেশনে পাওয়া যাচ্ছে এই কে। ভারতের বাজারে এর আরো একটি নাম হচ্ছে ‘ডেট রেপ ড্রাগস’। এছাড়াও কিড রক, কিট ক্যাট, মেক হার মাইন নামেও জনপ্রিয় এই ট্যাব। এক গ্রামের দাম পড়ে প্রায় ৩০ টাকার মতো। তবে এর একটাই আপনাকে হিলিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট। ডেট রেপ ড্রাগস নাম করণের পেছনে কারণও আছে। ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের টিনএজ ছেলে মেয়েরা এই ট্যাবলেট ইউস করছে রেপ করার জন্য। কারণ এই ট্যাবলেটের সামান্যতম আপনার খাবার অথবা পানীয়তে মিশলে সর্বনাশ অবশ্যম্ভাবী। দ্রুত শরীরে মেশার ফলে শুরু হবে মাথা ঘোরা তারপর শিথীল হয়ে যাবে শরীর। তখন আপনি সম্পূর্ণ অন্যের বশে। ডেটিং করতে গিয়ে আজকের ছেলে মেয়েরা এটা ব্যবহার করছে। এর গুরুত্বপূর্ণ গুন হলো আজ সন্ধ্যায় বা রাতে আপনার সঙ্গে যা হয়েছে কাল ঘুম থেকে উঠে আপনার কিচ্ছু মনে থাকবে না। অর্থাৎ সম্পূর্ণ একটি সন্ধ্যা আপনার জীবন থেকে ভ্যানিশ। আপনি অনুভব করবেন যে আপনার কিছু একটা হয়েছে, কিন্তু মনে করতে পারবেন না। আজকাল এর ব্যবহার বিভিন্ন হোটেল, গেস্ট হাউস, অফিস এমনকি মধ্যবিত্ত বাড়িতেও হচ্ছে মেয়েদের ট্র্যাপ করার জন্য। এছাড়াও আছে ডেন্ড্রাইট, গদের আঠা, কার্বন পেপার, থিনার, লিথাইল, কাশির সিরাপ বিশেষ করে কোরেক্স, হোয়াইটনার। লিস্টি দিতে বসলে শেষ হবে না।

    নেশার অপরাধ

    এবার দেখা যাক অপরাধের হালহকিকত। মোটামুটি এক রাতে কোন ডিস্ক বা হুক্কা পার্লারে যা খরচের বহর তাতে মাস গেলে পাঁচ ছয় হাজার টাকা পকেট খরচ পাওয়া কোন টিনএজের পক্ষে কুলানো মুশকিল। এক রাতেই তা উধাও। ফলে চট জলদি টাকা পাবার সহজ পন্থা নেওয়া ছাড়া উপায় কি? দীর্ঘ দিনের এক পরিচিত ছেলে নাম বাপি। বাড়ি চন্দননগর। কলকাতায় আসতো আড্ডা দিতে। সেই বাপিকে কোন আত্মীয় স্বজনের বাড়ি ঢুকতে দেওয়া হতো না। কারণ সে চুরি করতো নানান আত্মীয়দের বাড়ি গিয়ে। কখনো টাকা, কখনো গয়না, কখনো যা হাতে আসতো। বাপি ছিলো পাতা খোর। ফলে টাকা জোটানো মুশকিল হয়ে পড়েছিল। মায়ের সিন্দুক বাবার পকেট থেকে বাড়তে বাড়তে হাত পরেছিলো আত্মীয়দের বাড়িতেও। লজ্জায় কোন আত্মীয়দের বাড়ি যেতে পারতেন না ওর অবিভাবকেরা। অথচ বাপি ছিল দুর্দান্ত আঁকিয়ে। তাক লেগে যেত ওর হাতের কাজে। আজ সেই বাপিকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। দমদমের গোরা বাজারে বাড়ি সৌভিকের। নন্দনে নিয়মিত আড্ডা। পনিটেলের সৌভিক বিখ্যাত তার হ্যালুসিনেশনের জন্য। প্রথম প্রথম সে নিজের থেকে ছোট বয়েসিদের নেশা ধরাত, তারপর তাদের পয়সায় নেশা করতো, বাধ্য করতো তাদের পয়সা দিতে। নিজেকে নানা কাগজের ক্রাইম রিপোর্টার, কখনো মিউজিক অ্যারেঞ্জার, কখনো মডেল ফটোশুটার পরিচয় দিয়ে মেয়েদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতো। তারপর দেখাত আসল খেলা। প্রথম প্রথম পয়সা ধার নিত। বহুবার তাকে মারধর খেতেও হয়েছে। শোধরায় নি সে। এখন সে নিজেই ছোটখাট পেডলার। নেশার জন্য পয়সা না পেয়ে বাড়ির লোকজনদের খুন হতে হয়েছে এমন খবর তো রোজকার কাগজেই থাকে। এছাড়াও রোজগারের আরেকটি সহজ পন্থা হলো আদিম সেই দেহ ব্যাপার। লেখার শুরুতেই সেই মেয়ে দুটির কথা ধরা যাক। পয়সার জন্য স্মুচ করছে। বছর ১৫র রিয়া (নাম পরিবর্তিত) কথা এর ফাঁকে একটু শুনে নেওয়া যাক। “দ্যাখো বস, আমার বুজ করতে ফান করতে ভালো লাগে। আজকের দুনিয়ায় ফ্রি তে কিছু পাওয়া যায় না। ডিস্কের বাইরে কিছু কুল ড্যুড থাকে। হুট করে বন্ধুত্ব হয়ে যায়, দেন কারো একটা বাড়িতে সেলিব্রেট করি। সকালে স্নান করে নিলেই হয়ে যায়”। কিন্তু এই ধরনের ফিজিক্যাল ইন্টিমেসিতে বিপদ নেই? অবাক করে রিয়ার জবাব, “ কাম অন বাডি দাদুদের মত কথা বলো না। আজকাল প্রোটেকশন আছে কত। কিছুদিন আগেই প্রেগনেন্ট হয়েছিলাম। শুরুতে বুঝিনি মাস তিনেক কেটে যাবার পর হুঁশ হলো। চাপে পড়ে যাই। একজন বলছিল এখন আর অপারেট করা যাবে না। তারপর এক বন্ধুর কথা মত নেটে সার্চ করে পেয়ে গেলাম ওষুধ। কি সেই ওষুধ? এমটিপি কিট বা মেফিজেস্ট কিট। প্যাকেটের পাঁচটি ট্যাবের একটা খাও আর চারটি ভ্যাজাইন্যালি পুশ করো। তিন সাড়ে তিন মাসের প্রেগনেন্সি বাহাত্তর ঘন্টায় মুক্ত”। ভাবতে পারা যায়? অথচ রিয়া জানে না এই ট্যাবের সাইড এফেক্ট কি। সিস্ট থেকে শুরু করে ইনফেকশন যা ম্যালিগনেন্ট অব্ধি ছড়াতে পারে। ওদিকে আরেক কিশোরী ক্লাস নাইনের সুজাতার (নাম পরিবর্তিত) সঙ্গে আলাপ হয়েছিল এলিয়ট রোডের আশেপাশে। কি বলছে ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট সুজাতা? ‘ দ্যাখো বস আমার পছন্দ নতুন নতুন গেজেট। আর যা দাম। বাড়ি থেকে যা দেয় তাতে হয় না। আমি দেখতে ভালো। একটু ফান করলে যদি পাওয়া যায় সব কিছু ক্ষতি কি? মাঝে মাঝে দু একটা ম্যাসাজ পার্লারে যাই, একদিনে যা আসে তাতে হয়ে যায়। যে দিচ্ছে সেও খুশ আমিও খুশ”। এখানেই শেষ নয়। এছাড়াও আছে পয়সার জন্য বান্ধবীদের সাথে কাটানো গোপন মুহুর্তের ভিডিও ফুটেজ শেয়ার করে দেবার ভয় দেখিয়ে নেশার পয়সা জোগার করা। ইন্টারনেটে কলকাতা সহ সমস্ত পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের প্রায় সব মহানগরের টিনএজ মেয়েদের লিক হয়ে যাওয়া ভিডিও ক্লিপিং সেই কথাই প্রমান করে। ২০০৪ সালের দিল্লির ডিপিএস কান্ড কিন্তু অনেকেই ভোলে নি। এনএসএইচএম নলেজ ক্যাম্পাসের প্রথম বর্ষের ছাত্রী রিয়া ভট্টাচার্য কি বলছে? “দেখো মজা করতে আমরা ভালোবাসি। মজা একবার শুরু হলে সেখানে আর কোনো কন্ট্রোল থাকে না। তাছাড়া এই ধরনের বার্থডে পার্টি বা বিভিন্ন ধরনের পার্টি আগে হতো না। জন্মদিন যে এভাবে সেলিব্রেট করা যায় বুঝতাম না। বন্ধুদের সাথে পাবে যাওয়া, কারো বাড়িতে নাইট আউট করা এগুলো শেখা সিনেমা দেখে। প্রথমবার করে ভালো লেগেছে, মজা পেয়েছি। আরো করেছি, আরো লার্জ স্কেলে করবো। নিজের বাড়ি ছেড়ে বন্ধুদের বাড়িতে করবো, বন্ধুর বন্ধুর বাড়ি গিয়ে করবো, তারপর অচেনা জায়গায় গিয়ে করবো। হু কেয়ারস? রিস্ক হলে হবে। সবাই তো বন্ধু কে কার ক্ষতি করবে। একবার ফান শুরু হলে ওসব রিস্ক টিস্ক সব ধোঁয়ায় উড়ে যায়”।

    চল ইয়ার ঠেক মার

    এই যে এত নেশা, বিভিন্ন পার্লার ডিস্ক ছাড়াও কিন্তু রয়েছে বিভিন্ন ঠেক। বড়ো বড়ো স্কুল কলেজ গুলোর সামনে একটু আড়াল করেই চলছে নেশার কারবার। চোখ কান খোলা রাখলেই দেখতে পাওয়া যায়। ডাব ওয়ালা, পান বিড়ির ছোট গুমটি তো আছেই। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন কেমিস্টের দোকান। যেখানে প্রায় বিনা প্রেসক্রিপশনেই অল্প বয়সিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে কড়া ডোজের ট্যাবলেট। পার্ক স্ট্রিট মেট্রোর উল্টোদিকের ময়দানটি তো ড্রাগ পেডলারদের রীতিমতো আখড়া। একটু বেলার দিকে ঘন জঙ্গলের ঝোপে চটের ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তাদের। এছাড়াও পার্ক স্ট্রীটের অলিতে গলিতে, রায়েড স্ট্রিট, রিপন লেন, এলিয়ট রোড, মির্জা গালিব স্ট্রিট, ফ্রিস্কুল স্ট্রিট, জান বাজার, মল্লিক বাজার, জগু বাজার, নন্দন চত্তর, গড়িয়াহাট, ঢাকুরিয়া লেক, দক্ষিনাপণ, ধর্মতলা, নিউমার্কেট। রমরমিয়ে চলছে এই নেশার কারবার। শুধু মধ্য বা দক্ষিণ কলকাতা নয়, লেকটাউন, দমদম, চিড়িয়ামোড়, শ্যামবাজার সহ উত্তরেও রয়েছে এইসব ঠেক। এক কথায় টালা থেকে টলি, বারাসাত থেকে বালি সর্বত্রই বিরাজ করছে এইসব ঠেক। কখনো ডাবওয়ালা, কখনো আইস্ক্রীম বিক্রেতা, ঘটি গরম বিক্রেতা, কাকে ছেড়ে কাকে ধরবেন? বলছিনা এই সব পেশার সকলেই নেশার কারবারি। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নেশার ঠেক গুলো এরাই চালনা করে।

    আবেশ কান্ডের তরজার মধ্যে আমরা কিন্তু আসল সমস্যাটাই ভুলে যাচ্ছি। দায় কার, কে দোষী? এই সব ব্যাপারে মাথা ঘামাতে গিয়ে কিন্তু আমরা প্রায় সকলেই দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছি। দায়িত্ব প্রায় সকলেরই। টাকার প্রয়োজন সবার। কিন্তু টাকা রোজগারের নেশায় নামতে গিয়ে কোথাও আমরা আগামী প্রজন্মকে অবহেলা করে ফেলছি না তো? প্রত্যেকটি অবিভাবকের দায়িত্ব তার সন্তানদের প্রতি নূন্যতম নজরদারি। ছেলে মেয়ে কোথায় যাচ্ছে, কাদের সাথে মিশছে, হাত খরচের গোছা গোছা টাকা কি ভাবে খরচ হচ্ছে, তাদের স্কুলের অ্যাটেনডেন্স ঠিক আছে কিনা। এসব করলেই যে সব ঠিক ঠাক চলবে এমন গ্যারান্টি নেই, তবু এই নজরদারিটুকু থাকলে তাদের মনে একটা ভয় অন্তত থাকবে। একটা বাধন থাকবে অন্তত। যা বয়েস অব্ধি জরুরী। বাচ্চাদের অপ্রয়োজনীয় টাকা দেওয়ার নাম স্বাধীনতা নয়, এটা বোঝা দরকার। প্রিন্স সেনগুপ্তের কথায়, “ এই পরিস্থিতিটা আমাদেরই তৈরি করা। বাচ্চারা বায়না করলেই আমরা তাদের হাতে তুলে দিচ্ছি তাদের চাহিদার জিনিস। এর ফলে যা চাই তাই পেয়ে যাওয়ার একটা মানসিকতা তৈরি হচ্ছে তাদের মধ্যে। বয়সের সাথে সাথে এই চাহিদা বৃদ্ধি হচ্ছে। একটা সময়ের পর যা কন্ট্রোল করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এরপর চাহিদার জিনিস না পেলেই তাদের মধ্যে প্রবনতা বাড়ছে যেন তেন প্রকারে সেটা পাবার। ফলে অল্পবয়েসীদের অপরাধের দিকে ঝুঁকে পড়ার সম্ভবনা বাড়ছে”। অস্বীকার করা উপায় নেই। সরকারী আইন অনুযায়ী স্কুল গুলির ২০০ মিটারের মধ্যে মদের দোকান পান বিড়ির দোকান নিষিদ্ধ। কিন্তু আইন কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সমস্তই চলছে খুল্লমখুল্লা। ২১ বছরের বয়সের নীচে কাউকে মদ সিগারেট বা তামাক জাতীয় নেশার জিনিস বিক্রি মানা। কিন্তু মানছে কে? নজরদারীই বা রাখছে কে? পার্কস্ট্রীটের এক বুড়ো দোকানি হেসে জবাব দেন- পুলিশ পুলিশের কাজ করে বাবু, আমরা আমাদের কাজ। একটু টাকা যায় এই যা। আরেক মদের দোকানির বক্তব্য - মদ কিনতে আসলে কি বার্থ সার্টিফিকেট চাইবো? আজকালকার ছেলে মেয়ে গুলোকে দেখে বয়েস বোঝা যায়? দমদম নাগের বাজারে আদিত্য স্কুল লাগোয়া হুক্কা পার্লারের এক কর্মচারীর বক্তব্য তো আরো ভয়ঙ্কর – পুলিশ আসে মাঝে মাঝে। আমাদের সব সেটিং আছে দাদা। ভাবা যায়! পার্ক স্ট্রীটের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে, ময়দান জুড়ে পুলিশের নাকের ডগায় রমরমিয়ে চলছে নেশার কারবার, অল্প বয়সীদের নিয়ে ম্যাসাজ পার্লার, সংবাদ মাধ্যমের পাতা জুড়ে থাকে তার বিজ্ঞাপন। ফ্রি স্কুল স্ট্রীটে কান পাতলেই শোনা যায় ফিসফিস - দাদা, স্কুল গার্ল, কলেজ গার্ল, লাগবে নাকি সস্তায়। নজরদারী আমাদের সকলেই করতে হবে। নইলে এক আবেশ গিয়েছে, এরপর হয়ত আমাদের বাড়ির কোন আবেশের পালা। অপেক্ষায় থাকুন!

    নেশার কোড নেম

    মারিজুয়ানা – গাঁজা, তামাক, পট, গ্রাস, ডোপ, মেরি জেন, উইড, ব্লান্ট, হার্ব, বাবা,
    হাসিস – হেম্প, হ্যাস, চরস, ক্রীম, মালানা ক্রীম, আফগান স্নো, কাসা, বম্বে ব্ল্যাক, গ্রেভি
    মারিজুয়ানা সিগারেট – স্প্লিফ
    ধূমপানের ওয়াটার পাইপ – বঙ
    রোলিং পেপার দিয়ে বানানো মারিজুয়ানা সিগারেট – জয়েন্ট, বব
    মারিজুয়ানা হাসিস কম্বিনেশন – গঙ্গা যমুনা
    কোকেন – কোক, সল্ট (নুন), কোকা, কোলা, ফ্লেক, স্নো, হেভেন ডাস্ট, ক্র্যাক
    হেরোইন – স্ম্যাক, হর্স, জাঙ্ক, এইচ, এস ক্যাগ, চিনি,
    প্যাজমো প্রক্সিমন ট্যাবলেট – প্যাজ, পি, ধুমকি,
    এন টেন ট্যাবলেট – এন, টিনটিন,টিনু, পিৎজা
    রোহিপনল – কে, ক্যাটামাইন, ডেটিং রেপ ড্রাগ, ডিডিআর ৩, কিড রক, কিট ক্যাট, মেক হার মাইন,
    কোরেক্স – হানি, মধু মালতি, কাজের মাসি।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৩ মার্চ ২০১৯ | ৮৯৮৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • Pinaki | ***:*** | ২৪ মার্চ ২০১৯ ০৮:১৩49485
  • আমার সত্যি বলতে এসকর্ট সার্ভিসটা নিয়ে মাথাব্যাথা নেই। কিন্তু ড্রাগ নিয়ে আছে। আমাদের স্কুল এজে ছেলেপুলে নেশা করত। কাফ সিরাপ, এনটেন ছিল। কিন্তু হেরোইন ছিলনা। হুক্কাবার ছিলনা। ডিস্কে পার্টি করতে মধ্যবিত্ত যেতনা। বন্ধুর বাড়ী সদলবলে রাত জাগলে মাল, পানু বা বড়জোর গাঁজাতে সীমাবদ্ধ থাকত। আমার কনসার্ন সেই ডোমেনটায় ড্রাগ ঢুকে পড়ছে কিনা, জাস্ট স্কুলের ছেলেপুলের হাতে বেশি টাকা হাতখরচ হিসেবে এসে যাওয়ার কালচারাল চেঞ্জটার জন্য। এই এজটা ভালনারেবল। এবং পরিণতি খারাপ দিকে যাবে কিনা সেটা অনেকখানি নির্ভর করে হাতে টাকা থাকা এবং না থাকার ওপর।
  • S | ***:*** | ২৪ মার্চ ২০১৯ ০৮:১৫49487
  • হেরইন তখনো ছিলো। ওটা সবথেকে খারাপ জিনিস। খুব অ্যাডিক্টিভ। কোকেইনের পপুলারিটি বোধয় সারা দুনিয়াতেই বেড়েছে।
  • Ekak | ***:*** | ২৪ মার্চ ২০১৯ ০৮:১৬49488
  • পাঞ্জাবের ওপর এই সমীক্ষা ও লেখা দু বছর আগে থেকে হচ্ছে । বাদল গভমেন্ট মহল্লায় মহল্লায় ড্রাগ বিলি করতো । রীতিমতো লরি দাঁড় করিয়ে শিশি ধরে ধরে । সেই নিয়ে প্রচুর ক্যাচাল হয় । কিছু এনজিও তখন রিপোর্ট তুলে আনে । সেই সুবাদেই তো কি একটা হিন্দি সিনেমা সাময়িক ব্যান হলো । ড্রাগের নেশায় ধুন্ধ হয়ে থাকে ওখানে একটা বড় অংশের যুবসমাজ ।

    এরকম পার্টি প্রোমোটেড ড্রাগ চক্র , পবতে হোচ্ছে নাকি ? আই হোপ নট । পব পাঞ্জাব নয় ।
  • Ekak | ***:*** | ২৪ মার্চ ২০১৯ ০৮:১৯49489
  • কোকেনের পপুলারিটি বেড়েছে নো ডাউট । কিন্তু ৫০০ তাকে কোকেন নয় চকের গুঁড়ো পাওয়া যায় । চারহাজার লুরুর রেট ।
  • sm | ***:*** | ২৪ মার্চ ২০১৯ ০৮:২৯49490
  • কোন ড্রাগ এর কি পপুলারিটি বেড়েছে, সেটা বিচার্য্য নয়। কিভাবে এই নাগপাশ থেকে বর্তমান প্রজন্ম কে রক্ষা করা যায় ,সেটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত।
    বড় এস, বরঞ্চ বলুন ইউ এস এ সমস্যা কি রকম?পিনাকী বলুন স্ক্যান্ডেনেভিয়ান কান্ট্রি গুলোর।
    ইউ কের অবস্থা আমি জানি। ভীষণ খারাপ।
    কিছু কিছু টাউন এর অর্থনীতি নষ্ট হয়ে গেছে এই ড্রাগ রিলেটেড প্রব্লেম এর জন্য।
    একটা টাউনে থাকতাম, মার্গেট বলে। ছবির মত সুন্দর। টুরিস্ট স্পট। এখন খাঁ খাঁ করছে হোটেল গুলো।
  • Ekak | ***:*** | ২৪ মার্চ ২০১৯ ০৮:৩২49456
  • কয়েকদিন আগে পড়লুম , একজন ছাত্রের কাছে কন্ডোম পাওয়া যাওয়ায় তাকে ইস্কুল থেকে সাসপেন্ড করে রাখা হয়েছিল । তারপর আদালতের নির্দেশে আবার ক্লাস শুরু করেছে ।

    এই তো রাজ্যের অবস্থা ! যৌনশিক্ষা -প্রটেকশন এসব এখনো ট্যাবু !! টিচারদের স্টুডেন্টরা প্রণাম করবে না "হাই " বলবে তাই দিয়ে সামাজিক সমস্যার বিচার হচ্ছে :):)))
  • S | ***:*** | ২৪ মার্চ ২০১৯ ০৯:০৪49491
  • এখানকার সবই শোনা কথা, খবরে দেখেছি। কোনো প্রত্যক্ষ এক্সপেরিয়েন্স নেই। হাইস্কুল গুলো ভরে গেছে। শুনেছি মিডল স্কুলেও আজকাল পাওয়া যায়। এখানে একটা বড় অংশ জনগণ অন্তত রিক্রিয়েশনের জন্য এক-আধবার ব্যবহার করেছে। এখন অনেকগুলো রাজ্যে রিক্রিয়েশনাল মারিজুয়ানা লীগাল। বাকিগুলোতে (খুব কম কয়েকটা বাদ দিয়ে) মেডিকাল মারিজুয়ানা লীগাল। কানাডা থেকেও ঢুকছে, ওখানে লীগাল হয়ে গেছে। ক্যানাবিজ স্টকগুলো কয়েকদিন আগে খুব ভালো করছিলো।

    অর্থনীতিতে খুবেকটা প্রভাব পড়েছে বলে তো মনে হয়না। উল্টে যেসব স্টেট লীগাল করে দিয়েছে, সেগুলোর অর্থনীতির উন্নতি হয়েছে। বরন্চ লোনলিনেস, সুইসাইড, গান ভায়োলেন্স এগুলো অনেক বড় সমস্যা এইমুহুর্তে।

    ড্রাগ্স নিয়ে অন্য একটা সমস্যা আছে। পরিসংখ্যান বলছে যে সাদা এবং কালোদের মধ্যে প্রায় সমান সংখ্যক লোক ড্রাগ্স নিলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শুধু কালোদের জেলে পাঠানো হয়। এখানে অনেকগুলো স্টেটে কনভিক্টরা ভোট দিতে পারেনা। ফলে এইভাবে ব্ল্যাক ভোট কমানো হয়।
  • প্রতিভা | ***:*** | ২৪ মার্চ ২০১৯ ০৯:১৫49457
  • বার বারই অভিভাবকদের বিপদে পড়তে দেখেছি। আবদার না মেটালে আত্মহত্যার হুমকি, না মেটাতে পারলে নিজের অন্তর্জ্বালা, অভিভাবকদের মাথার ওপর সর্বদা ঝোলে সেই বিখ্যাত খাঁড়া।
  • Dyuti Mustafi | ***:*** | ২৪ মার্চ ২০১৯ ১০:১৮49458
  • মারাত্মক অবস্থায় বাস চারদিকে, বাবা মা ছেলে মেয়েদের দেখবে কি করে তারা তো মধ্য বয়েস এঞ্জয় করছে। বেশিরভাগ অন্য সম্পর্কে জড়িত, কিম্বা ডিভোর্স নিয়ে ব্যস্ত, আর বাকি কিছু কেরিয়ার গোচাচ্ছেন। বাচ্চারা সব খুব বুঝদার এটাও দেখি। ঘরে দু পিস রয়েছে ওদের চোখ দিয়ে সব শুনি। আরেকটা ওই ডিপ্রেশন এটাও আজকাল এদের সংগী। সমাজ সবাইকে নিয়ে। তাই সবাই এসবের জন্য দায়ো ত
  • Kha | ***:*** | ২৪ মার্চ ২০১৯ ১২:১০49459
  • এই সব গেলো , পন্কে নিমজ্জিত ধরা ,
    এ ধরনের মতমত অতি ধুর লাগে।
  • বিপ্লব রহমান | ***:*** | ২৫ মার্চ ২০১৯ ০৬:১৭49492
  • কি নারকীয় পরিস্হিতি! এপারেও টিন এজারদের মধ্যে মরণ নেশা বাড়ছে। ভয়ঙ্কর নেশার নাম - ইয়াবা। মুদি দোকান সর্বত্র ইয়াবা ট্যাবলেট মিলবে, মোবাইলে ফোন করলে বাসায় চলে আসবে "বাবা" পরিস্থিতি এমন।

    এই ভয়ঙ্কর ড্রাগ নাকি মানুষের জিন কোড বদলে দেয়, তাকে উন্মত্ত করে তোলে।

    কিছুদিন আগে ঢাকায় ঐশী নাম এক স্কুল ছাত্রী ইয়াবার টাকা না পেয়ে, উন্মত্ত অবস্থায় বাবা মাকে ছুরি মেরে খুন করে জেলে গেছে। বাবা ছিলেন পুলিশের বড়ো অফিসার!

    ঐশীর খুন বা ঐশীকে খুন -- দুটোই ভেবে দেখা জরুরি।
  • Suvendu Debnath | ***:*** | ২৫ মার্চ ২০১৯ ১০:১৩49493
  • বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছে আমার এই লেখাটি নিয়ে তার আগে বলে নিই যে আমার এই লেখার উদ্দেশ্য কোনো এক বিশেষ শ্রেণীকে টার্গেট করা নয়। কিংবা কোনো বিশেষ স্কুলকে টার্গেট করা নয়। এই লেখাটা লিখতে হয়েছিল কলকাতার এক কিশোরের মৃত্যুর পরিবর্তী প্রতিক্রিয়া হিসেবে। সমাজ উচ্ছনে যাচ্ছে, বাংলার সমস্ত কিশোর কিশোরীরা উচ্ছন্নে যাচ্ছে এমনটা প্রমান করার পিতৃতান্ত্রি কোনো দায়ও আমার নেই। কিন্তু এই টিনএজদের একটা অংশ প্রবলভাবে জড়িয়ে পড়ছে নানা রকম অপরাধের মধ্যে। টিনএজদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারটা চিরকালেই ছিল। সেই ৮০র দশক পরবর্তী নিজের কৈশোরের সময়তেও দেখেছি আবার এখনো দেখেছি। তবে পারিপার্শ্বিকতা বদলে গিয়েছে। যাক প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাক। নাহ আমার কাছে লিখিত পরিসংখ্যান নেই ফলে কোনো কাগজকে কোট করতে পারব না, বা কোনো সূত্রকে। আমার কাজটা সরাসরি হাতে কলমে। এবং স্পটে গিয়ে করতেই আমি ভালবাসি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে। এই লেখাটি লেখার সময় আমি নিজের মতই একটা সমীক্ষা করেছি। তার জন্য প্রায় গোটা ৫০ স্কুলে সার্ভে করেছি। বাংলা এবং ইংরেজি দুই মিডিয়াম স্কুলই ছিল। আমার সামনে যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে দেখেছি বাংলা মিডিয়াম স্কুলের ক্ষেত্রে সিগারেট বিড়ি, বা মদ্যপান বাদ দিলে অন্যান্য নেশার ক্ষেত্রে রেশিয়োটা প্রতি ১০০ জনে ৫জন। ইংরেজি মাধ্যমে সেটা বেড়ে যাচ্ছে প্রতি ১০০ জনে অন্তত ৩৯জন। এই ইংরেজি মিডিয়ামের ক্ষেত্রে রেশিওটা সকলেই যে খুব উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের তা নয়। বরং মধ্যবিত্ত পরিবার বলা যেতে পারে। ফলে স্কুলের হাই সোসাটির ছেলে মেয়েদের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে বাড়ছে অপরাধের প্রবনতা। বাড়ি থেকে টাকা না পেলে বাড়ছে ড্রাগস পেডলিং, বেটিং, সাট্টার প্রবনতা। রেশিওটা সেখানে প্রতি ১০০ জনে ১৬জন। এবার আসি এসকর্ট বিজনেশের প্রসঙ্গে। আমি নিজে এই ধরণের অন্তত ৩০০ সার্ভিস প্রোভাইডারের সংস্পর্শে এসেছি। কথা বলেছি। একটা পরিসংখ্যান দিই। দমদম এলাকায় ২০১৬-১৭ সাল নাগাদ ম্যাসেজ পার্লারের সংখ্যা ছিল ১০টি নাম মাত্র। রেট ছিল এক ঘন্টায় ম্যাসাজ এবং ওয়ান শট ৩০০০ টাকা। তারপর থেকে ম্যাসাজ পার্লারের সংখ্যা ২০১৯ এর ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ১২০০। এই পার্লারগুলিতে যে সমস্ত মেয়েরা কাজ করে তাদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৪জন স্কুল ছাত্রী, বয়েস ১৬ থেকে ১৯। মধ্য কলকাতা অর্থাৎ ধর্মতলার দিকে এই রেশি প্রায় ৩গুন কোথাও ৪ গুন। দক্ষিণ কলকাতায় রেশিওটা আরো বেশি সেখানে এটা দাঁড়িয়ে প্রায় ৮গুন এবং ৯ গুন। মোট ২০০ জন স্কুল কলেজের ছাত্রীর সঙ্গে আমি কথা বলেছি, যাদের রেজাল্ট চোখ কপালে তোলার মত।এই ২০০ জনের মধ্যে ৩০জন রীতিমতো র্যােঙ্কিং স্টুডেন্ট। ৬০ জন ফার্স্টডিভিশনে পাশ মাধ্যমিকে। ২২জন জয়েন্টের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এবার এদের মধ্যে সকলেই যে এসকর্ট সার্ভিস এজেন্সির মাধ্যমে এই পেশায় আছে তা নয়। ব্যক্তিগত উদ্যোগেও চলছে কাজ। কিভাবে? আজকাল বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে আনম্যারেড কাপলদের জন্য কলকাতায় হোটেল এবং ঘর পাওয়া যাচ্ছে। কি করতে হবে? কিচ্ছু না কিছু অ্যাপ আছে। সেখানে ঢুকে কোন এলাকায় ঘর বা হোটেল চান জানাতে হবে। সঙ্গে মোবাইল নাম্বার দিয়ে দিন। ২ মিনিটের মধ্যে আপনাকে জানিয়ে দেওয়া হবে সেই এলাকায় কত হোটেল আছে যারা সেই অ্যাপে রেজিস্টার্ড। জানতে চাওয়া হবে আপনার বাজেট কত? ৫০০ থেকে মিনিমাম শুরু। একদিন পুরো থাকুন বা এক ঘন্টা রেট একই। পরীক্ষার জন্য আমার এক সহকর্মিনীকে নিয়ে গিয়েছিলাম চাক্ষুষ করতে। দুজনের ভোটার আইকার্ড দিলেই হবে। সেই সঙ্গে আপনি হোটেলে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই সেই অ্যাপ থেকে চলে যাওয়া হবে। এমনকী কাজ হয়ে যাওয়ার পর চেক আউট করা হলে দিতে হবে রেটিংও। সেফ অ্যান্ড সিকিওর। ম্যাসেজ পার্লারের ক্ষেত্রে মিনিমাম রেট ৫০০ টাকা। সেখানে গেলে ঠকতে হবে। যদি পকেটে রেস্ত থাকে মিনিমাম ২ হাজার টাকা তাহলে দেখা মিলবে স্কুল ছাত্রীদের সঙ্গে। তারা যে ফেক নয় তার প্রমান আমার হাতে রয়েছে। আমি নিজে এই ম্যাসাজ পার্লারগুলিতে গিয়েছি কাস্টমার সেজে। এমনই একটি থাই ম্যাসাজ পার্লারে পরিচয় হয়েছিল প্রায় ৪জন থাই ম্যাসাজারের সঙ্গে। ম্যাসাজ শুরু মিনিমাম ১৫০০ টাকা থেকে। বেশি কিছু করতে চাইলে সেই ম্যাসাজারকে দিতে হবে এক্সট্রা ৩০০০থেকে ৫০০০ টাকা। পুরোটাই তার রোজগার। এমনকী দূর্গাপুর, ব্যারাকপুর, আসানসোল, হুগলী, ২৪ পরগণা সব জায়গাতেই পাবেন এই থাইদের। দল বেঁধে থাকে বন্ডেলগেটে, যাদবপুর, বিজয়গড়ের দিকে। এই মুহূর্তে প্রায় ৮০০০ থাই মেয়ে রয়েছে কলকাতায় যারা ম্যাসাজ পার্লার এবং দেহ ব্যবসা করেন। ডিটেল আরো আছে। দিতে একটু সময় লাগবে। আজ এই পর্যন্তই। আমার এই বক্তব্যের স্বপক্ষে সেই সময় ছাত্রছাত্রীদের ভিডিয়ো এবং অডিও রয়েছে। সঙ্গত কারণেই সেসব দেওয়াটা সমীচিন নয়। সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলিকে দিয়েছিলাম জানিয়েছিলাম, তাদের বক্তব্য এব্যাপারে আমাদের কিছুই করণীয় নেই, কয়েকবার অ্যাকশন নেওয়ায় মিডিয়া এবং অভিভাবকেরা তাদের উপর চড়াও হয়েছেন। তারা জানেন কোন ছাত্র ড্রাগঅ্যাডিক্টেড, কারা স্কুলে আসছে না। কিন্তু তারা নীরব, এক স্কুলের রেপুটেশন ২ মিডিয়া এবং অভিভাবকদের ভয়। বাকি প্রশ্নগুলির জবাব একটু একটু করে দেব। আসলে অন্যকাজে প্রচুর ব্যস্ত রয়েছি, একটু সময় চাই।
  • S | ***:*** | ২৭ মার্চ ২০১৯ ০৩:৫৩49496
  • আগে অনেক গল্পে পড়তাম যে বাড়ির বয়স্ক লোকটি আফিমের নেশা করেন।
  • sm | ***:*** | ২৭ মার্চ ২০১৯ ০৪:৩০49497
  • বাড়ীর বয়স্ক লোকটি আফিমের নেশা করতো,এটা ফ্যাক্ট।কিন্তু এই আফিমের নেশা শুরু হতো ঔষধ হিসাবে।অর্থাৎ ওই বয়স্ক লোকটিকে প্রৌঢ় বয়সে ব্যাধি জনিত কারণে ঔষধ টি প্রেসক্রাইব করা হতো।ধীরে ধীরে পরিমান বাড়াতে বাড়াতে বয়স্ক লোক টি নেশাগ্রস্ত হতো।অনেকটা ঘুমের ওষুধের মতন ব্যাপার।
    আর এই জেনারেশন এ ড্রাগ ব্যবহার শুরু হয় কৌতূহল জনিত কারণে বা আরো অন্যান্য কারণে জন্য।
    দুটি আলাদা ব্যাপার।
  • S | ***:*** | ২৭ মার্চ ২০১৯ ০৪:৩৮49498
  • বলছেন আগের জেনারেশনের কোনো কৌতুহল ছিলোনা?
  • sm | ***:*** | ২৭ মার্চ ২০১৯ ০৫:১৯49499
  • কম ছিল।এই জেনারেশনে আরো অনেক কারণ আছে।একান্নবর্তী পরিবারের অস্তিত্ব লোপ পাওয়া,অনিশ্চয়তা,পিয়ার গ্রূপ প্রেশার,ইন্টারনেটে নেশার জিনিস এর সহজলভ্যতা এমনি অনেক কিছু।
  • Atoz | ***:*** | ২৭ মার্চ ২০১৯ ০৫:২৪49500
  • ঐ একান্নবর্তী যুগেও নেশা যারা করার, তারা করত। প্রচুর গাঁজা খেত। সিদ্ধি খেত। আরো নানাবিধ নেশার বস্তু নানাভাবে নিত।
  • | ***:*** | ২৭ মার্চ ২০১৯ ০৫:৩০49494
  • আচ্ছা একটা অন্য কথা মনে হল। একেবারে অপ্রাসঙ্গিক নয় যদিও।
    পশ্চিমবঙ্গের সরকারী ও বেসরকারী স্কুলগুলোতে সেক্স এডুকেশানের হাল কিরকম?
  • sm | ***:*** | ২৭ মার্চ ২০১৯ ০৫:৫১49501
  • না, ধারণাটা কিছুটা ভুল।আমাদের সময়ে স্কুল স্টুডেন্ট অবস্থায়,মদ খাওয়ার কথা চিন্তায় ছিল না।আমাদের আগের জেনারেশনে তো নয়ই।
    এবার আপনি বলুন ,আপনার আগের জেনারেশনে মানে বাবা,কাকা,জ্যাঠা দের মদ,গাঁজা,সিদ্ধি,আফিং খেতে কি রকম শতকরা হিসাবে দেখেছেন?
    আজকের জেনারেশনে কেমন শতকরা হিসাবে দেখছেন?

    যদি নেশার তীব্রতা হিসাব করে বলি--
    তাহলে জানেন,ওপিআম, হেরোইন,আর ফেনটানিল এরা তুলনামূলক ভাবে একে অপরের চেয়ে কত শক্তিশালী?
    আগেও বলেছি ,বাড়ির বয়স্করা মূলত প্রেসক্রাইবড মেডিসিন হিসাবে আফিং ধরতেন।
    তখনকার দিনে রোগব্যাধির বেশি ঔষধ ছিলো না। আফিং আর্থ্রাইটিস এর বেদনা,সর্দি-কফ কমানো,পেটখারাপ কমানো এসব কাজে বহুল ব্যবহৃত হতো।
    এটাই বাড়তে বাড়তে নেশায় পরিণত হতো।কিন্তু পুরোটাই ওরাল হিসাবে ব্যবহৃত হতো।ইনজেক্টেবল প্রিপারেশন তখনকার দিনে গল্প উপন্যাসেও প্রায় থাকতো না।
    তবে,এসব ছিল,দাদুদের আমল।বাবা কাকাদের আমলে,এই ওপিআম ব্যবহার নেগলিজিবল হয়ে যায়।অর্থাৎ দাদুদের আমল থেকে বাবা,কাকাদের আমলে আফিং এর ব্যবহার বেশ কমে যায়।কারণ ওইসব রোগের মেডিসিন বাজারে চলে আসে।
    আর সিদ্ধি,ভাঙ যারা খেতো,(পুজো পার্বন ছাড়া)তারা মূলত হার্ড কোর নেশারু। এদের সম্পর্কে,আলাদা ভাবে বলার কিছু নেই।
  • r2h | ***:*** | ২৭ মার্চ ২০১৯ ০৬:৪৬49495
  • "আজকাল বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে আনম্যারেড কাপলদের জন্য কলকাতায় হোটেল এবং ঘর পাওয়া যাচ্ছে।" - এতে সমস্যা কী? "দুজনের ভোটার আইকার্ড দিলেই হবে।" - বেআইনী কিছু তো না। আর অ্যাপ থেকে হোটেল বুক তো বহুদিন থেকেই হচ্ছে। বরং 'আনম্যারেড কাপল'এর ওপর নীতিপুলিশগিরি কমলে ভালোই হয়।

    এসব কাজে লাগিয়ে শোষন নির্যাতন বেআইনী কিছু ইত্যাদি হওয়া সমস্যা। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক দুজন মানুষের হোটেল বুকিং নিয়ে সমস্যা হওয়াটা অসুবিধেজনক।

    আর, একক যেটা বলেছে 'ইংলিশ মিডিয়াম এস্কর্টের কয়েক হাজার গুন্ মেয়ে অনেক বেশি খারাপ কন্ডিশনের শিকার হয়ে ওই কাজে আসে । সো দে ডিসার্ভ মোর এটেনশন' - এইটা আবারও মনে হচ্ছে যখন দেখছি মেয়েদের রেজাল্ট, র‌্যাঙ্ক, স্কুলের রেপুটেশন এসব প্রসঙ্গ বারবার আসছে। চাবাগানের বেতনহীন মজুরের মেয়ের হাইওয়ের ধারে ট্রাক ড্রাইভারের জন্যে কুপি জ্বালিয়ে অপেক্ষা করা অনেক বেশী ভয়ানক, যদিও মানছি, এই লেখায় পরিসর আলাদা।
    কদিন আগেও কাগজে দেখলাম কসবা অঞ্চলে কোন মহিলা তার টিনএজার মেয়েকে দেহব্যাবসায় বাধ্য করেছে - মেয়ে সাহস জুটিয়ে পুলিশে অভিযোগ করেছে, খুব সম্ভবত কোন এনজিওর মাধ্যমে। সমস্যাগুলি তো আছেই। ড্রাগও ভয়ানক সমস্যা - আমাদের সময় বা রূপচাঁদ পক্ষীর সময়ও ড্রাগ ছিল তার মানে এটা সমস্যা নয় তা বলছিনা। সমস্যা অবশ্যই, আলোচনা সচেতনতা সবই দরকার। কলকাতার পথে পথে, কাগজে কাগজে ফুল স্যাটিসফেকশন গ্যারান্টিড মাসাজ পার্লারের বিজ্ঞাপন দেখে অবাক লাগে, কত যৌনবুভুক্ষু ও প্রোভাইডার গিজগিজ করছে চারদিকে এই ভেবে।

    বিষয়টি খুবই গুরুতর, জরুরী, নিবন্ধটিও যত্নে লেখা। কিন্তু বিশ্লেষণের ধরনে একটু সমস্যা হচ্ছে, এই সব ছোটখাটো বিষয় নিয়ে।
  • S | ***:*** | ২৭ মার্চ ২০১৯ ০৬:৪৯49502
  • আমাদের আগের জেনারেশন তো ইস্কুলে থাকতেই বিড়ি, সিগ্রেট ধরতো। কলেজে মদ্যপান। সিগ্রেট কি কম খারাপ? আগের জেনারেশনে মদ, গাঁজা, আফিম, সিদ্ধিও বেশ পপুলারই ছিলো। সেই মাকড়শার রস নিয়ে ব্যোমকেশের একটা গল্প ছিলোনা? আমাদের সময় কলেজে আরো অনেকরকম নেশার বস্তুর আবিষ্কার হলো। আফিম আর সিদ্ধির পপুলারিটি কমলো। গাঁজার সাথে সাথে হাসিস, চরস এলো। তাছাড়া তখন সাপের ছোবল বলে একটা জিনিস এলো। খুব শুনতাম। লোকে ডেনড্রাইট, মর্টিন, জুতোর কালি, ঘরের পেইন্ট থেকেও নেশা করতে শুরু করলো। কি আজব।
  • sm | ***:*** | ২৭ মার্চ ২০১৯ ০৭:০৮49503
  • আপনি মাকড়সার রস খায়,এমন কাউকে জানেন?বা,সাপের ছোবল?
  • Atoz | ***:*** | ২৭ মার্চ ২০১৯ ০৭:১৮49504
  • বাবাকাকাদের আমলের পরে দাদাদের আমল যখন এল, তখন তো সিগারেট একধরনের ইয়ে হয়ে গেছিল, সিগারেট না খেলে সে ছেলে স্মার্ট হত না। রাস্তায় ঘাটে কী মারাত্মক সিগারেট যে লোকে খেত! আপদ! সেকেন্ডারি স্মোকিং এ বাকীদেরো ক্ষতি করত। আরে শয়তান ব্যাটারা, নিজেরা মরবি মর না, অন্যদের জোর করে ধোঁয়া দিস কেন? এরা ছিল মোদো মাতালদের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিকর। মদ যারা খাচ্ছে, কোণে বসে নিজেরা নিজেরা খাচ্ছে, অন্যদের সেকেন্ডারি খাওয়াচ্ছে না, মন্দের ভালো।
    এখান সম্ভবতঃ অনেক প্রচারের ফলে সিগারেট কিছু কমেছে খাওয়া।
  • S | ***:*** | ২৭ মার্চ ২০১৯ ০৭:৪৭49505
  • সাপের ছোবল খেয়েছে এরকম দুয়েকজনকে চিনতাম। শুনেছিলাম।

    আমি মোদো মাতালদের খুব পছন্দ করি। ওরা সেকেন্ডারি চাট খাওয়ায়। কি সুন্দর কাঠের বাটিতে করে বাদাম টাদাম দিতো।
  • Atoz | ***:*** | ২৭ মার্চ ২০১৯ ০৭:৫৫49506
  • সেকেন্ডারি চাট !!!! ঃ-)
  • Suvendu Debnath | ***:*** | ২৭ মার্চ ২০১৯ ০৯:২৯49507
  • "আজকাল বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে আনম্যারেড কাপলদের জন্য কলকাতায় হোটেল এবং ঘর পাওয়া যাচ্ছে।" - এতে সমস্যা কী? "দুজনের ভোটার আইকার্ড দিলেই হবে।" - বেআইনী কিছু তো না। আর অ্যাপ থেকে হোটেল বুক তো বহুদিন থেকেই হচ্ছে। বরং 'আনম্যারেড কাপল'এর ওপর নীতিপুলিশগিরি কমলে ভালোই হয়।"
    @r2h
    নাহ নীতিগিরি দেখাচ্ছি না, অ্যাপের মাধ্যমে হোটেল বুকিং নিয়েও বলছি না বা আনম্যারেড কাপল কিভাবে বা কেনই যাচ্ছে সেটা বলার উদ্দেশ্য নয়। আমি বলতে চেয়েছি এসকর্ট এজেন্সির মাধ্যমে এই স্কুল গোয়িং মেয়েরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে ব্যবসা করছে। এজেন্সির মাধ্যমে ব্যবসা করলে অর্ধেক টাকা দিয়ে দিতে হয়। কিন্তু এই ব্যক্তিগত উদ্যোগে কোনো খরচা নেই। হোটেল ভাড়াও ক্লায়েন্টের। অর্থাৎ টাকাটা পুরোটাই পকেটে। এবং এই প্রবণতা বাড়ছে। তথ্যটা সেই কারণেই দেওয়া।

    "এসব কাজে লাগিয়ে শোষন নির্যাতন বেআইনী কিছু ইত্যাদি হওয়া সমস্যা।"

    এটাই হচ্ছে। অনেকক্ষেত্রেই গোপনীয় মুহুর্ত রেকর্ড করে ব্ল্যাকমেলিং ছেলে এবং মেয়ে দুই ক্ষেত্রেই। এমনকী কয়েকটা জায়গায় এমনও হয়েছে, হোটেলে যাওয়ার পর মেয়েটি চিৎকার করে লোক জড়ো করেছে রেপ করা হচ্ছে বলে এবং সেটা থেকে টাকা রোজগার। আরো অনেক অপরাধ। সম্প্রতি এমন ২ ৩টি চক্রও ধরা পড়েছে কলকাতার বুকে।যারা স্কুল গোয়িং মেয়েদের কাজে লাগিয়ে এমন ব্ল্যাকমেলিং করছে।

    "আর, একক যেটা বলেছে 'ইংলিশ মিডিয়াম এস্কর্টের কয়েক হাজার গুন্ মেয়ে অনেক বেশি খারাপ কন্ডিশনের শিকার হয়ে ওই কাজে আসে । সো দে ডিসার্ভ মোর এটেনশন' - এইটা আবারও মনে হচ্ছে যখন দেখছি মেয়েদের রেজাল্ট, র‌্যাঙ্ক, স্কুলের রেপুটেশন এসব প্রসঙ্গ বারবার আসছে। চাবাগানের বেতনহীন মজুরের মেয়ের হাইওয়ের ধারে ট্রাক ড্রাইভারের জন্যে কুপি জ্বালিয়ে অপেক্ষা করা অনেক বেশী ভয়ানক, যদিও মানছি, এই লেখায় পরিসর আলাদা।"

    এই মেয়েদের রেজাল্ট, র‍্যাঙ্ক, স্কুলের রেপুটেশন এই প্রসঙ্গটি এসেছে কারণ পরিসরটাই ছিল এটা। অর্থাৎ এই মুহূর্তে কলকাতার বুকে স্কুল গোয়িং ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা, ভালো স্টুডেন্ট হওয়া সত্ত্বেও কিভাবে তারা শেষ হচ্ছে। এইলেখার পরিসর ছিল আবেশ দাশগুপ্তের মৃত্যু পরবর্তী ছবিটা কি? শুধু আবেশ নয় পর পর এমন কয়েকটি ঘটনা কলকাতার বুকে ঘটেছে।

    বাকি রইল সমাজের অন্য মেয়েদের শোষণ। সেটা নিয়েও কাজ চলছে, হয়ত শিগিগিরি সেটা নিয়েও লিখব। তবে তার ভয়ঙ্করটা এত বেশি মাঝে মাঝে লিখতে গেলে নিজেরই হাত কেঁপে যাবে বলে মনে হচ্ছে। যেহেতু এক সময় বাড়ি থেকে পালিয়ে পালিয়ে গ্রামে গঞ্জে বিভিন্ন আদিবাসি বস্তিতে মাসের পর মাস পড়ে থাকা অভ্যেস ছিল ফলে এই কদর্য রূপটি আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। এমনকী বছর দুয়েক অরেঞ্জ ভ্যালি টি গার্ডেনে চাকরি করার সূত্রে অভাব এবং তার তাড়নায় যৌন শোষণ কোন পর্যায় যেতে পারে তা সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছি। হয়ত সেটা নিয়েও লিখব
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন