এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  রাজনীতি

  • সমান নাগরিক সংহিতাঃ বিতর্ক হোক

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | রাজনীতি | ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ | ৭১৩৮ বার পঠিত
  • সমান নাগরিক সংহিতাঃ বিতর্ক হোক

    নান্দীমুখ

    গত ৯ ডিসেম্বর, ২০২২ বিজেপি সাংসদ কিরোড়ী লাল মীণা রাজ্যসভায় একটি প্রাইভেট মেম্বার্স বিলে পেশ করেছেন যার সার কথা হল দেশে ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা সমান আচার সংহিতা জারি করার উদ্দেশ্যে একটি কমিটি গঠন করা হোক।

    ব্যস, যাকে বলে একেবারে হল্লা বোল শুরু হয়ে গেল। সমস্ত বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের এক রায় — বিজেপি গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনে বিজয়ের পর একজন সাংসদকে দিয়ে একটি ব্যক্তিগত বিল পেশ করে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে জল মাপছে।

    কারণ, তার আগে একবছর ধরে কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা, ত্রিপুরার মত ৯টি বিধানসভা নির্বাচন এবং একগাদা পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে।

    বিজেপির নেতারা মুখ ভার করে বলছেন — এসব কী? সংবিধান সভা দেশকে যে কথা দিয়েছিলেন – যা এতদিন কেউ রাখে নি — আমরা তো সেটাকেই আইনের চেহারা দেওয়ার চেষ্টা করছি মাত্র।

    আরএসএসের লোকেরা ব্যক্তিগত স্তরে বলছেন — আমরা তো কবে থেকে বলছি যে এক জাতি, এক রাষ্ট্রভাষা, এক আচার সংহিতা দেশ এবং রাষ্ট্রকে ঐক্যবদ্ধ করে, সুদৃঢ় করে।

    এই শব্দকল্পদ্রুমের পরিবেশে বর্তমান প্রবন্ধে নিচের বিন্দুগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করছি। মোদ্দা কথা -- ইউনিফর্ম সিভিল কোড ব্যাপারটা কী - খায় না মাথায় দেয়? সংবিধান সভা এ নিয়ে ৩ নভেম্বর ১৯৪৮ এবং ১৯৪৯ সালে কী বলেছিল?

    এবং, এটা যদি সবার জন্যে উইন-উইন গেম হয় তাহলে আপত্তির কারণ কী? এ নিয়ে কতদূর চেষ্টা করা হয়েছে এবং কোথায় আটকাচ্ছে?

    একটা ডিসক্লেমার দিয়ে রাখি — এই আলোচনার জন্যে আমি ঠিক যোগ্য ব্যক্তি নই। আমি খালি বিতর্কের মুখ খুলে দিচ্ছি, সুস্থ তথ্যসমৃদ্ধ বিতর্ক চলুক।

    আমার একটাই যোগ্যতা — যখন ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে ২২তম ল’ কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত জাস্টিস বি এস চোপরা ইউনিফর্ম সিভিল কোডের ব্যাপারে আমজনতার মতামত জানতে চেয়ে মিডিয়ায় এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ১৬ পয়েন্ট প্রশ্নাবলী জারি করেছিলেন এবং নভেম্বর মাসের মধ্যেই প্রায় ১০,০০০ উত্তর পেয়েছিলেন তার মধ্যে একটা সেট আমারও ছিল। স্বল্পবুদ্ধিতে যা মনে হয়েছিল তাই উত্তরের খোপে ভরে দিয়েছিলাম।

    সিভিল ও ক্রিমিনাল কোড

    যে কোন দেশের আইনকানুনকে মোটামুটি দুটো ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।

    এক, ক্রিমিনাল কোড – যা রাষ্ট্র এবং সমাজের বিরুদ্ধে অপরাধ; এর আওতায় আসবে চুরি-ডাকাতি, খুনজখম, শারীরিক আক্রমণ, ধর্ষণ ইত্যাদি।

    দুই, সিভিল কোড – যার ভিত্তি হল এক দেশ বা সমাজে বাস করার আচরণ বিধির সামাজিক কন্ট্র্যাক্ট। এতে রয়েছে বিয়ের অনুষ্ঠান পদ্ধতি, বিচ্ছেদ, এবং সম্পত্তির কেনাবেচা, ব্যবসার নিয়ম, উত্তরাধিকার এবং দত্তক নেয়ার নিয়ম কানুন ইত্যদি।

    ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা সমান নাগরিক আচার সংহিতাঃ

    এইখানে এসে কি একটু গুলিয়ে যাচ্ছে?

    এক, ক্রিমিনাল কোড তো জাতিধর্ম নির্বিশেষে দেশের সমস্ত নাগরিকের জন্যে সমান। খুন-চুরি-ডাকাতির অপরাধে শাস্তি দেবার সময় আইন বা রাষ্ট্র নাগরিকের জাতধর্ম দেখে না, একই আইনে একই শাস্তি দেয়। তাহলে সিভিল কোড এক হবে না কেন?

    -- আরে সিভিল কোডের অনেকগুলো তো মূলতঃ সবার জন্যেই সমান!

    ব্যবসা করতে কন্ট্র্যাক্টের নিয়ম ও আইন, সেলস্‌ অফ গুডস অ্যাক্টের আইন, জি এস টি, ইনকাম ট্যাক্স, রেজিস্ট্রির নিয়ম, জমি বাড়ি সম্পত্তি কেনাবেচার আইন, মর্টগেজ বা সম্পত্তি বন্ধক রাখার আইন – সবই তো হিন্দু-বৌদ্ধ-শিখ-জৈন-পারসিক-মুসলমান-খ্রিস্টানী সবার জন্যে এক। তাহলে?

    -- আছে, তফাৎ আছে। ভারতবর্ষে সিভিল কোডের অন্তর্গত কিছু বিষয় বিভিন্ন ধার্মিক এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্যে আলাদা। সেগুলো হল মুখ্যতঃ তিনটি -- বিয়ের অনুষ্ঠান পদ্ধতি এবং বিচ্ছেদ; সম্পত্তির উত্তরাধিকার; এবং দত্তক নেয়ার নিয়ম কানুন।

    সমান নাগরিক আচার সংহিতার সমর্থকেরা চাইছেন - ওই তিনটে ব্যাপারেও বিভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায়ের লোকজনের জন্যে আলাদা আলাদা নিয়ম বন্ধ হোক। সব ধুয়ে মুছে এক হয়ে যাক, ঠিক স্কুল ইউনিফর্মের মত।

    ধুয়ো উঠছেঃ এক হউক, এক হউক, এক হউক, হে ভগবান!

    আমরা সংক্ষেপে আলোচনার সুবিধের জন্যে দেশের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মভিত্তিক সম্প্রদায়ের (হিন্দু ও মুসলিম) কোড বিল নিয়ে আলোচনা করব।

    হিন্দু কোড বিলের অন্তর্গত রয়েছে তিনটে আইন — হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্ট ১৯৫৫; হিন্দু সাকসেসন অ্যাক্ট; হিন্দু মাইনরিটি অ্যান্ড গার্ডিয়ানশিপ অ্যাক্ট এবং হিন্দু অ্যাডপশন (দত্তক নেয়া) এবং মেইন্টেন্যান্স (খোরপোষ) অ্যাক্ট।

    এইসব তৈরি হয়েছে ইংরেজ আমলে কিছু টুলো পণ্ডিত ডেকে বিভিন্ন স্মৃতি বা সংহিতা (মনু, যাজ্ঞবল্ক্য, পরাশর ইত্যাদি) ঘেঁটে। এ নিয়ে বিদ্যাসাগর প্রসঙ্গে গুরুর পাতায় গত বছর আমাদের এলেবেলে (দেবোত্তম চক্রবর্তী) চমৎকার আলোচনা করেছিলেন।

    তেমনই ভারতের মুসলিমদের রয়েছে মুসলিম পার্সোনাল ল (শরিয়ত) অ্যাক্ট ১৯৩৭। এতে বিয়ে, তালাক, খোরপোষ, দান-দক্ষিণা সব কিছুর ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে মুসলিম জীবনযাপন পদ্ধতির নির্দেশের ব্যাপারে চারটি উৎসকে মান্যতা দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলঃ কুরআন, সুন্না বা অহল-এ-হাদিস (হজরত মহম্মদের নিজের আচরণে যা সিদ্ধ), কিয়াস (ব্যাখ্যা টীকা ভাষ্য ইত্যাদি) এবং ইজমা (বিদ্বানদের সর্বসম্মত ব্যাখ্যা)।  

    এখন ইউনিফর্ম সিভিল কোড মানে — ওইসব বিভিন্ন আইন বাতিল করে সবার জন্য কোন ধার্মিক রেফারেন্স ছাড়া একটাই আইন চালু করা।

    আচ্ছা, তাতে অসুবিধা কী? বেশ আধুনিক এবং প্রগতিশীল শোনাচ্ছে।

    ধর্মনিরপেক্ষ আধুনিক ভারতে এরকমটা হওয়ারই কথা তো! অসুবিধেটা কোথায়?

    সংবিধান সভার আর্টিকল ৪৪ এ নেহরুজি এমনই কিছু বলেছিলেন কিনা?

    -- বলেছিলেন বটে, কিন্তু অসুবিধেটাও তখনই স্পষ্ট হয়েছিল। কন্সটিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলি বা সংবিধান প্রণয়ন সভার ২৩ নভেম্বর, ১৯৪৮ এর বিতর্কটি দেখলেই বোঝা যাবে।

    বোম্বাই থেকে কংগ্রেসের নির্বাচিত প্রতিনিধি স্বাধীন দেশের জন্যে ধর্মের অনুশাসনের উর্দ্ধে উঠে একটি সমান নাগরিকতার পক্ষে যুক্তি দেন। বিরুদ্ধে মাদ্রাজ এবং বিহারের প্রতিনিধিরা বলেন – এতে ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং বিবিধতা নষ্ট হবে। ঐক্য এবং একরূপতা এক কথা নয়।

    ওঁরা উদাহরণ দিয়ে বললেন — বিশাল দেশ ভারতবর্ষে ভৌগলিক এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত। পূবে আসামে এত বৃষ্টি হয়, কিন্তু পশ্চিমে রাজস্থানে খটখটে মরুভূমি। উত্তরে বরফ পড়ে, হাড়কঁপানো শীত। কিন্তু দক্ষিণে শীত সেভাবে টের পাওয়া যায় না।

    শেষে একবছর পরে ১৪ নভেম্বর, ১৯৪৯ সালে সংবিধান সভার এই বিষয়ে বিতর্ক সমাপ্ত করে নেহরু বললেন — তাড়াহুড়ো না করে এই প্রগতি জনতার উপর চাপিয়ে না দিয়ে ধীরে ধীরে জনতার মধ্যে চেতনার বিকাশ ঘটিয়ে ওদের সম্মতি নিয়ে ট্র্যাডিশনে পরিবর্তন আনতে হবে। এবং, ওঁর পরামর্শ মত ইউনিফর্ম সিভিল কোডের ধারণাটিকে সংবিধানের ডায়রেক্টিভ প্রিন্সিপলের (মার্গদর্শী সিদ্ধান্ত) অধীনে আর্টিকল ৪৪ এ নিচের শব্দে বাঁধা হলঃ

    Article 44. Uniform civil code for the citizens.
    The State shall endeavour to secure for the citizens a uniform civil code throughout the territory of India.

    ঠিক আছে, কিন্তু করে ফেলতে কিসের অসুবিধে? সত্তর বছর হয়ে গেল যে!

    -- দেখুন, হিন্দুদের স্মৃতিশাস্ত্রে বিহিত আট রকমের বিয়ের মধ্যে শুধু ‘প্রাজাপত্য’ই আজকাল চলছে। এতে বাবা বা তাঁর অবর্তমানে পরিবারের কোন গুরুজন ‘কন্যাদান’ করে। আর বিয়ের কার্ডে প্রজাপতির ছবি এঁকে ‘প্রজাপতয়ে নমঃ’ লেখা থাকে। প্রজাপতির নির্বন্ধে ডিভোর্সের কথাই ওঠে না, জন্ম-জন্মান্তরের বন্ধনে হাঁসফাস করলেও।

    অবশ্য আজকাল যেটাকে লাভ ম্যারেজ বলা হয় সেটা মনু’র গান্ধর্ব বিবাহের (বর কনে নিজেদের সম্মতি বা পছন্দের হিসেবে) আধুনিক রূপ মাত্র।

    তবে ইদানীং হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্টে কিছু সংশোধন হয়েছে। তাই সময়ের দাবিতে কিছু শর্ত সাপেক্ষে ডিভোর্সের সুযোগ রয়েছে। এই বিয়ের অনুষ্ঠানে সপ্তপদী গমন এবং যজ্ঞ একটি আবশ্যিক অনুষ্ঠান। আর রয়েছে (হিন্দি বলয়ে) সাতটি শপথ (সাতোঁ বচন) নেওয়ার কথা, যেমন পরস্পরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা, ভাত-কাপড়ের দায়িত্ব নেওয়া, ইত্যাদি।

    কিন্তু মুসলিম বিয়ে হল পিওর কন্ট্র্যাক্ট। বিয়ে মসজিদে না হয়ে কারও বাড়িতে (কন্যার ঘরে) হয়। পুরোহিতের স্থানে কাজি বসেন বটে, তবে পাঁচ জন সাক্ষী রেখে কন্যাকে বসিয়ে তিনবার জিজ্ঞেস করা হয় — আপনি কি অমুককে কবুলনামায় লেখা শর্ত অনুযায়ী জীবনসঙ্গী হিসেবে স্বীকার করতে রাজি? 

    কন্যা তিনবার ‘কবুল’ বললে একই কন্ট্র্যাক্টের পাঁচ কপিতে ওরা দুজন, কাজি এবং সাক্ষীদের সইসাবুদ হয়ে গেলে বিয়ে সম্পন্ন হয়। ওদের দুজন এবং সাক্ষীদের কাছেও একটি করে ওই নিকাহ্‌নামা বা চুক্তির কপি থাকে। তাতে কন্যার সিকিউরিটি হিসেবে পূর্বনির্ধারিত ‘দেনমোহর’ কত টাকা তার উল্লেখ থাকে।

    আমি এক মুসলিম কলিগের ছোট ভাইয়ের বিয়েতে সাক্ষী একজন কম পড়ে যাওয়ায় এন্ট্রি পেয়েছিলাম এবং সই করার পরে এক কপি (বেশ রঙীন কাগজে) পেয়েছিলাম।

    চুক্তি বলেই মুসলিম ম্যারেজ অ্যাক্টে তিন রকমের তালাকের প্রথা রয়েছে — আহসান, হাসান, এবং বিদ্যৎ। 

    ভাববার সময় না দিয়ে যখন মর্জি তখন তিনবার ‘তালাক’ বলে স্ত্রীকে ঘরের বাইরে করে দিলাম - এটাই ওই বিদ্যৎ তালাক। এটা প্রথাসিদ্ধ কিন্তু শরিয়ত অনুমোদিত নয়, তাই অধিকাংশ মুসলিম দেশে এই রকম তালাক উঠে গেছে।

    ভারতেও সুপ্রীম কোর্টের রায় মেনে আইন করে শুধু ওই তালাক-এ-বিদ্যৎ নিষিদ্ধ হয়েছে, বাকি নিয়ম যথাবৎ আছে।

    স্বামী তালাক দিলে ওই দেনমোহর বিবিকে ফেরত দিতে হবে। বাস্তবে কী হয় সেটা অন্য প্রসংগ।

    একটা কথা; ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী মুসলিম মেয়ে কোন অন্য ধর্মের ছেলেকে বিয়ে করতে পারে না। তবে মুসলিম ছেলে একেশ্বরবাদী ধর্মের (ক্রিশ্চান ও ইহুদী) মেয়েকে বিয়ে করতে পারে, কিন্তু কোন বহুদেববাদী ধর্মের ( হিন্দু) মেয়েকে নয় (কুর্‌আন, সুরা ৫.৫)।

    ক্রীশ্চান ম্যারেজ অ্যান্ড ডিভোর্স অ্যাক্টের (১৮৭২) অনুষ্ঠান চার্চে হতেই হবে। কিন্তু ইসলাম ও ক্রিশ্চানিটি দুটোই আব্রাহামিক ধর্ম, তাই অনুষ্ঠানে কিছুটা মিল রয়েছে। পাদ্রী সবার সামনে ব্রাইডকে তিনবার জিজ্ঞেস করে সম্মতি পেলে পরমপিতা পরমেশ্বরের আশীর্বাদে বা দৈব ইচ্ছায় ওই জোড়াকে তখন বিধিসম্মত স্বামী-স্ত্রী বলে ঘোষণা করেন। তারপর বলেন – এখন তোমরা একে অপরকে চুমো খেতে পার।

    তখন ওরা সবার সামনে একে অপরকে চুমো খায়, ব্যস্‌।

    হিন্দুদে্র শুধু মালাবদল হয়, সবার সামনে চুমো-টুমো খাওয়ার সুযোগ নেই।

    এবার বলুন, এই তিনরকমের বিয়ের আইন তুলে দিয়ে কী করতে চান? কেমন কোড আনতে চান?

    চুমো খাওয়া তুলে দেবেন? নাকি সবাইকেই ভবিষ্যতে আইন মেনে চুমো খেতে হবে?

    সাক্ষীসাবুদ-দেনমোহর করে রীতিমত চুক্তিপত্রে সই করে বিয়ে দেওয়া তুলে দেবেন? নাকি সবাইকেই ওইরকম করতে হবে?

    সপ্তপদী, যজ্ঞ, অরুন্ধতী নক্ষত্র দেখানো তুলে দেবেন? নাকি সবাইকেই তাই করতে হবে?

    আরও আছে। হিন্দু তেলুগু সম্প্রদায়ে মামাতো ভাইবোনের মধ্যে বিয়ে সবচেয়ে উত্তম সম্বন্ধ ধরা হয়। আমার এক কলিগ তিন ভাই। ওরা ওদের আপন মামার মেয়েদের বিয়ে করেছে।

    এটা কি বাদ যাবে? নাকি সবাইকে মামাতো পিসতুতো ভাইবোনের মধ্যে বিয়ে করতে হবে?

    মুসলমানদের মধ্যেও তুতো ভাইবোনের মধ্যে বিয়ে করার চল আছে। ওদের হয়তো অসুবিধে হবে না? কিন্তু আমাদের?

    মৈত্রী কড়ার (Friendship Contract):

    সত্তরের দশকের গুজরাতে কোন এক প্রাচীন ট্র্যাডিশনের ধুয়ো তুলে ঊচ্চবর্ণের হিন্দুদের মধ্যে শুরু হল মৈত্রী কড়ার। এর মানে দুজন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ে সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসে গিয়ে ১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে এগ্রিমেন্ট বানিয়ে একসঙ্গে লিভ টুগেদার করতে পারে — আশা এই যে ওরা কিছুদিন পরে বিয়ে করবে।

    হিন্দু কোডে কোথাও এমন কোন টেম্পোরারি বিয়ের কথা বলা নেই। কিন্তু আইন এর প্রতিবন্ধক নয়। শুধু ছ’বছর আগে দুই ছোটবেলার সাথী (ছেলে মুসলিম, মেয়ে হিন্দু) ওই কড়ার করে বাধা পেয়ে শেষে গুজরাতের হাইকোর্টে গিয়ে ২৫ নভেম্বর, ২০১৬ রায়ে অনুমোদন আদায় করায় গুজরাতে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের টনক নড়ল। শেষে কি আমাদের ঘরের মেয়েরা শ্বশুরবাড়ি গিয়ে মাছ-মাংস রান্না করতে বাধ্য হবে? [1]

    আজকে সমান আচার সংহিতা শুরু হলে মৈত্রী কড়ার বন্ধ হবে নাকি?

    তারপর অ্যান্থ্রোপলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার হিসেবে ভারতে ৪৬০০ আদিবাসী সম্প্রদায় আছে যাদের পূজার্চনা এবং বিবাহ সংস্কারের নিয়ম আমাদের থেকে ভিন্ন। ওদের সংস্কৃতিকেও কি দুরমুশ করে আমাদের মত করতে হবে?

    -- ভাল জ্বালা! তার চেয়ে বিয়ের জন্যে এমন একটা আইন করা যায় না যাতে দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়ে, নিজেদের জাত ধর্ম বাবা-মার অনুমতির তোয়াক্কা না করে ধর্মের দোহাই না দিয়ে বিয়ে করতে পারে? তাহলেই তো ল্যাটা চুকে যায়।

    সে আইন তো কবেই হয়ে গেছে — স্পেশ্যাল ম্যারেজ অ্যাক্ট ১৯৫৪। অর্থাৎ হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্টের (১৯৫৫) একবছর আগে। তাতে শুধু ছেলের বয়েস ২১ হতে হবে, আর মেয়ের ১৮। তবে প্রধানমন্ত্রী বলছেন শিগগিরই মেয়েদের বয়েসও আইন করে বাড়িয়ে ২১ করে দেওয়া হবে, ভাল কথা।

    তফাৎ হল — হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্টে আগে বিয়ে, পরে রেজিস্ট্রি। স্পেশ্যাল অ্যাক্টে আগে দরখাস্ত দিলে রেজিস্ট্রার দেবে একমাসের নোটিস, তারপরও যদি মিয়া-বিবি রাজি থাকে, তবে একই সঙ্গে রেজিস্ট্রি এবং বিয়ে।

    তাহলে আর হৈ চৈ কিসের?

    কারণটা রাজনৈতিক, পরে আসছি। আগে সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে বলি।

    হিন্দু ও মুসলিম কোডে মেয়েদের সম্পত্তির অধিকার

    হিন্দু কোড বিলে আগো মেয়েদের পৈতৃক সম্পত্তিতে কোন অধিকার ছিল না। প্রথমে সংশোধিত হয়ে মেয়েদের বসবাসের অধিকার স্বীকৃত হল, কিন্তু মালিকানা হক নয়। পরে ২০০৫ সালের সংশোধনে ভাই এবং বোনের সমান অধিকার স্বীকৃত হল। তারপর ২০২২ সালের একটি রায়ে সুপ্রীম কোর্ট বললেন যে বিবাহিত মেয়েরাও ভাইয়ের সমান অংশীদার, সমান ভাগ পাবে।[2]

    মুসলিম কোডে কিন্তু প্রাচীন কাল থেকেই সম্পত্তিতে বাবা-মায়ের পৈতৃক এবং স্বোপার্জিত সম্পত্তিতে মেয়েদের অধিকার স্বীকৃত, সে বিবাহিত হলেও।  তবে সবসময় সেটা ছেলেদের সমান ভাগ নয়, কখনও ১/২, কখনও ১/৪।

    ব্যাপারটা বেশ জটিল। যখন আইনের স্নাতক স্তরের পরীক্ষায় বসেছিলাম তখন আমরা সবাই ভয় পেতাম মুসলিম সম্পত্তির ভাগ-বাঁটোয়ারার প্রশ্নকে। তাতে খেয়াল করে ভগ্নাংশের অংক কষতে হত।

    -- যাকগে, এসব জটিল ব্যাপারে আপনার আমার মত হরিদাস পালেদের মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। এর জন্যে উপযুক্ত সংস্থা হল ল’ কমিশন। ওদের দিয়েই এসব আইন ও ট্র্যাডিশনের প্যাঁচ খুলে একটি আধুনিক সিভিল কোডের খসড়া বানানো হোক। মিঃ আম্বেদকর, নেহেরুজী, প্যাটেলজী – সবার আত্মা শান্তি পাক। অসমাপ্ত কাজ পুরো করা হোক।

    ল’ কমিশন

    গোড়াতেই বলা দরকার যে ল’ কমিশন কোন সাংবিধানিক (constitutional) অথবা বৈধানিক (statutory) সংস্থা (body) নয়। এটি বিশুদ্ধ প্রশাসনিক (executive) সংস্থা যা ভারত সরকারের নির্দেশে কোন নিশ্চিত ইস্যুতে এবং নির্ধারিত সময়ের (tenure) জন্য গঠিত হয়।

    এর দায়িত্ব হল আইনের সংস্কারের ব্যাপারে রিসার্চ করে সরকার চাইলে বা স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে (suo moto) পরামর্শ দেওয়া।

    বর্তমান ভারত সরকার ইউসিসি’র বিষয়ে ২০১৬ সালে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জাস্টিস বি এস চৌহানের অধ্যক্ষতায় ২১ তম ল’ কমিশন গঠন করে।

    উনি এ’ব্যাপারে আম-নাগরিক এবং সিভিল সোসাইটির অভিমত এবং পরামর্শ জানতে চেয়ে ৩/১০/২০১৬ তারিখে এক ১৬ বিন্দু প্রশ্নাবলী  সম্প্রচারিত করেন। নভেম্বর মাসের মধ্যে প্রায় দশ হাজার উত্তর এবং মতামত পেয়ে বেজায় খুশি হয়ে প্রেসকে জানিয়েও দেন।

    কিন্তু বুঝতে পারছিলেন যে ব্যাপারটা এত সোজা হবে না। তারপর জাস্টিস চৌহান ২০১৮ তে কোন রিপোর্ট পেশ না করেই অবসর নেন।
      
    তারপর গত চার বছর ধরে কমিশনের কোন চেয়ারম্যান না থাকায় ব্যাপারটা ন যযৌ ন তস্থৌ হয়ে থেমে ছিল।

    অবশেষে ভারত সরকার গত ৮/১১/২২  তারিখে কর্ণাটক হাইকোর্টের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত চিফ জাস্টিস ঋতুরাজ অবস্থী-র অধ্যক্ষতায় ২২তম ল’ কমিশন গঠন করেছে। জাস্টিস অবস্থী কর্ণাটকের বিবাদিত হিজাব মামলার রায়দাতা।

    আশা করা যাচ্ছে আগামী মার্চ ২০২৩ নাগাদ ল’ কমিশন ইউসিসি ইস্যুতে তাঁদের রেকমেন্ডেশন বা সুপারিশ ভারত সরকারকে জানিয়ে দেবেন।

    কিন্তু তাই যদি হয় তাহলে আমরা মার্চ অব্দি অপেক্ষা না করে এখন থেকেই চেঁচামেচি করছি কেন? উত্তরটাও সহজ, রাজনীতি।

    সমান নাগরিক আচার সংহিতা বা ইউনিফর্ম সিভিল কোড (ইউসিসি) ও রাজনীতি

    আসলে সমান আচার সংহিতা নিয়ে এত আগ্রহের পেছনে রয়েছে আরেকটি ইস্যু – মুসলিম সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ।

    মোদীজি ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই বিজেপি ও আরএসএসের ঘোষিত তিনটে এজেন্ডা ছিল – রাম মন্দির নির্মাণ, সংবিধান থেকে ৩৭০ ধারা বাতিল এবং ইউনিফর্ম সিভিল কোড। এর জন্যে দরকার ছিল বড় মাপের সংখ্যাগরিষ্ঠতার। সেটা পাওয়া গেল ২০১৯ সালের মে মাসের সাধারণ নির্বাচনে।

    ব্যস্‌, ব্রুট মেজরিটির জোরে ৫ অগাস্ট ২০১৯ সালে বাতিল হল আর্টিকল ৩৭০, অবশ্য নাগাল্যান্ড, মিজোরাম ইত্যাদির আলাদা আইন, আলাদা পতাকা নিয়ে আর্টিকল ৩৭১ আগের মতই রয়ে গেল।

    তারপর ৯ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে অযোধ্যা মামলার রায় বেরোল। ৫ অগাস্ট ২০২০তে সংসদে মন্দির নির্মাণের জন্য বিশেষ ট্রাস্ট গঠনের ঘোষণা হল।

    বাকি রইল একটাই— সমান নাগরিক আচার সংহিতা, ইউনিফর্ম সিভিল কোড।

    এতসব চেঁচামেচির একটাই লক্ষ্য — মুসলিম আইনে যে চারটে বিয়ের অনুমোদন রয়েছে সেটা বাতিল করে সবাইকে এক পত্নীব্রতে থাকতে বাধ্য করা। বাকি সম্পত্তির অধিকার-টার যাক চুলোয়।

    ওদের যুক্তিঃ বেশি পত্নী মানেই বেশি সন্তান; এর মানে মুসলিমদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি। তার মানে কোন এক ভবিষ্যতে ওরা মেজরিটি হবে এবং আমাদের দেশকে ফের ভাগ করবে।

    এটা খোলাখুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় বলা হয় এবং বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক নেতারা এটাকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মোড়কে গম্ভীর মুখে বলে থাকেন।

    বিজেপি সাংসদ এবং আরএসএসের তাত্ত্বিক নেতা রাকেশ সিনহা সংসদে জুলাই ২০১৯ সালে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি প্রাইভেট মেম্বার্স বিল পেশ করলেন।
     
    প্রধানমন্ত্রী সে’ বছর স্বাধীনতা দিবসের অভিভাষণে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বের কথা বলে এটাকে ‘a form of patriotism’ আখ্যা দেন। [3] অর্থাৎ যাদের সন্তান বেশি তারা দেশকে ভালবাসে না।

    উনি সেটা বলতেই পারেন।

    মোদীজির ভাষণের একই দিনে ১৫ই অগাস্ট, ২০১৯শের  স্বাধীনতা দিবসে আসাম সরকার ঘোষণা করে দিল যে যাদের দুটোর বেশি সন্তান রয়েছে তারা সরকারি চাকরি পাবে না এবং স্থানীয় স্তরে কোন নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবে না। [4]

    অবশ্য এনডিএ জোট থেকে বেরিয়ে এসে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার স্বাধীনতা দিবসের অভিভাষণে বলেছেন যে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন নতুন আইনের দরকার নেই। ওঁর একটিই সন্তান।

    এদিকে প্রাক্তন মন্ত্রী এবং ইউপির মুজফফরনগর কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত সাংসদ সঞ্জীব বালিয়ান সেই ২০১৯ থেকে নিয়মিত সংসদে বলছেন ভারতে জনসংখ্যা যে হারে বেড়ে চলেছে যে রিসোর্সে টান পড়ছে, করদাতাদের উপর বোঝা বাড়ছে, এখনই ১৩৫ কোটি ছাড়িয়ে গেছে, ভবিষ্যতে কী হবে? ওঁর আবেদনে ১২৫ জন সাংসদের সই ছিল।
     
    তবে  ডঃ রাকেশ সিনহার (আরএসএস বুদ্ধিজীবি এবং রাজ্যসভার মনোনীত সদস্য) তিনবছর আগে পেশ করা বিলটিকে এ’বছর এপ্রিল মাসে স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মনসুখ মণ্ডাভিয়া অপ্রয়োজনীর বলে মতপ্রকাশ করেন।

    ওনার মতে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির দর আশংকাজনক নয়। জোর করে প্রতি পরিবার দুই সন্তানের লক্ষণরেখা টেনে দেওয়ার দরকার নেই। সরকারের প্রচেষ্টায় জনতা এখন অনেক জাগরুক, বাকিটুকু শিক্ষার আরও প্রসার হলেই হয়ে যাবে।

    তখন রাকেশ সিনহা বিলটি প্রত্যাহার করে নেন। [5]

    কিন্তু উত্তরপ্রদেশ সরকার দুই সন্তানকে বাধ্যতামূলক করার খসড়া বিল জুলাই ২০২১ এ বিধানসভায় পেশ করে।

    তবে গত বছর জুলাই মাসে সংসদে  দুই বিজেপি এমপির প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী  জানিয়েছিলেন যে NFHS III(2005-06) সার্ভে হিসেবে TFR 2.7 ছিল, তারপর NFHS IV (2015-16) [6] অনুযায়ী কমে 2.2 হয়ে গেছে। কাজেই আইন করে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার দরকার নেই।

    তারপর এ’বছর জুন মাসে এক সাংবাদিককে স্বাস্থ্য মন্ত্রক থেকে জানানো হয় যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মণ্ডাভিয়া কোনরকম জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিল আনার কথা ভাবছেন না যেহেতু NFHS V অনুযায়ী ভারতের টোটাল ফার্টিলিটি রেশিও স্থায়িত্ব দর ২.১ থেকে কমে ২.০ হয়ে গেছে। [7]

    অথচ এ’বছর গত ৯ ডিসেম্বর তারিখে দু’জন বিজেপি এমপি নিশিকান্ত দুবে এবং রবিকিষণ লোকসভায়  প্রাইভেট মেম্বার্স পপুলেশন কন্ট্রোল বিল পেশ করেছেন। রবিকিষণ, ভোজপুরি লোকগায়ক এবং গোরখপুরের বিজেপি এমপি, ওঁর তিন মেয়ে এক ছেলে।

    এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে উনি বলছেন এর জন্যে কংগ্রেস দায়ি। [8] ওরা যদি আগেই এই বিল আনত তাহলে নাকি  রবিকিষণ আগের থেকে সতর্ক হয়ে যেতেন।

    মুশকিলে পড়লাম, কে ঠিক বলছেন?

    প্রধানমন্ত্রী না স্বাস্থ্যমন্ত্রী, কে ঠিক?

    দুই বিপরীত মেরুর বক্তব্য বুঝতে হলে কিছু সরকারী ডেটা দেখুন। প্রথমে বিগত ২০১১ সালের সেন্সাস অনুয়ায়ী আমাদের দেশে ধর্মভিত্তিক নাগরিকদের  সংখ্যা ও অনুপাতঃ   

    তালিকা -১  

    সম্প্রদায়জনসংখ্যার প্রতিশত
    হিন্দু৭৯.৮০
    ইসলাম১৪.২৩
    খ্রীস্টান২.৩০
    শিখ১.৭২
    অন্যান্য১.৯৫
    মোট১০০.০০

    National Family Health Survey (NFHS-5) অনুযায়ী ভারতের গড় ফার্টিলিটি রেশিও ২.২ থেকে কমে ২.০ হয়েছে। আন্তর্জাতিক রিপ্লেসমেন্ট রেশিও হল ২.১। অর্থাৎ যে অনুপাতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি (নতুন জন্ম-নতুন মৃত্যুর সংখ্যা কাটাকুটি করে যা পাওয়া যায়) স্থির থাকে। তার মানে এখন ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার আশংকাজনক নয়।

    মাত্র পাঁচটি স্টেটের টিএফআর ন্যাশনাল অ্যাভারেজের এবং রিপ্লেসমেন্ট রেশিওর থেকে বেশি। তারা হল—

    বিহার (২.৯৮), মেঘালয় (২.৯১), উত্তরপ্রদেশ (২.৩৫), ঝাড়খণ্ড (২.২৬) এবং মনিপুর (২.১৭)। [9]

    এর কোনটিই মুসলিম বহুল রাজ্য নয়। অথচ, মুসলিম প্রধান জম্মু-কাশ্মীর (১.৩) এবং বঙ্গে (১.৬) টিএফআর ন্যাশনাল গড়ের থেকে অনেক কম।

    তার মানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির দর ধর্ম নির্ভর নয়, বরং শিক্ষার হার এবং জীবনযাপনের স্তরের উপর নির্ভরশীল।

    এবার ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সমস্ত জনগোষ্ঠীতে সন্তানোৎপাদনক্ষম বয়সের মহিলার সন্তান সংখ্যা কত নিচের তালিকায় দেখুন।

    তালিকা-২

    Total Fertility Rate (TFR) by Religion, average number of children by woman of reproductive age

    ReligionAverage number of children
    Hindu1.94
    Muslim2.36
    Christian1.88
    Sikh1.61
    Buddhist1.39
    Jain1.66
    Others2.15

    সূত্রঃ National Family Health Survey (NFHS-5)

    সিদ্ধান্তের ভার পাঠকের উপর ছেড়ে দিলাম। আমি অংকে কাঁচা। তালিকা একের জনসংখ্যাকে মূলধন এবং TFR  কে সূদের হার ধরে কম্পাউণ্ড ইন্টারেস্টের ফর্মূলা লাগিয়ে আঁক কষে বলুন তো এভাবে চললে কত বছর পরে মুসলিম জনসংখ্যা হিন্দুদের ছাড়িয়ে যাবে?

    শেষপাতেঃ

    বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলো বসে নেই। বিশেষ করে যেখানে একের পর এক নির্বাচন। উত্তরাখণ্ডে রিটায়ার্ড জাস্টিস রঞ্জনা দেশাইকে অধ্যক্ষ করে রাজ্য ল’ কমিশন কাজ শুরু করে দিয়েছে। হিমাচলের বিজেপি সরকার দু’মাস আগে বলেছিল – নির্বাচনে জিতলে ওরা রাজ্যে ইউসিসি চালু করবে। চিঁড়ে ভেজে নি। গুজরাতে মহারাস্ট্রে মধ্যপ্রদেশে এবং গুজরাতে শোনা যাচ্ছে ইউসিসি নিয়ে কমিটির কথা এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণেরও।

    কিন্তু সুপ্রীম কোর্টের প্রখ্যাত অ্যাডভোকেট সঞ্জয় হেগড়ে বলছেন — ভিন্ন রাজ্যের ভিন্ন সংস্কৃতি। তাহলে তো কোন প্রথা, ধরুণ বিয়ে এক রাজ্যে বৈধ হবে তো অন্য রাজ্যে অবৈধ। কিন্তু এটি তো গোটা দেশের জন্যে ‘ইউনিফর্ম’ হওয়ার কথা।

    নিন্দুকে বলছে — আরে এগুলো ইলেকশনের আগে জিগির তোলা। হবে সেই মার্চে কেন্দ্রীয় ল’ কমিশনের রিপোর্ট এলে।

    দিন গুণছি।

    =======================================================================
    [1] ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৬।
    [2]  সুপ্রীম কোর্ট,অরুণাচল গৌন্ডার বনাম পন্নুস্বামী, জানুয়ারি ২০২২।
    [3]  দি স্টেটস্‌ম্যান, ১৬ অগাস্ট, ২০১৯।  
    [4]  দি হিন্দু, ১৬ অগাস্ট, ২০১৯।
    [5] ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ২ এপ্রিল, ২০২২।
    [6] হিন্দুস্থান টাইমস্‌ ২৪ জুলাই, ২০২১।
    [7] টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ৯ জুন, ২০২২।
    [8] ঐ, ৯ ডিসেম্বর, ২০২২।
    [9]  টাইমস্‌ অফ ইণ্ডিয়া, ৬ মে, ২০২২।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ | ৭১৩৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:3280:bb5e:3c82:***:*** | ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:১৯514800
  • সবার বিয়ের বয়স একুশ হওয়া খুবই ভাল কথা। কিন্তু এনফোর্সমেন্ট কি করে হবে সে ঈশ্বরই জানেন। পশ্চিমবঙ্গে তো শুনি কন্যাশ্রী আর নাবালিকা বিবাহ একসাথেই বাড়ছে।
     
    পলিগ্যামি বারণ না করে পলিয়্যানড্রি লিগ্যাল করে দিলেই হয়। তখন রে রে করে মনুবাদী আর শরিয়াবাদী মিলে যাবে। 
  • Ranjan Roy | ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:১৮514808
  • অরণ্য এবং অমিত, 
    ১ 
     সমস্ত ধর্মের মেয়েদের বিবাহযোগ্য বয়েস কেন এক (১৮) হবে না-- এই মর্মে একটি অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ পিটিশন (শুধু মুসলিমদের ১৫) সুপ্রীম কোর্ট শুনানির জন্যে  গ্রহণ করেছে এবং পরের পদক্ষেপ হিসেবে ভারত সরকারকে মতামত চেয়ে নোটিশ জারি করেছে-- যেহেতু   কেন্দ্রীয় সরকার এতে অন্যতম রেস্পন্ডেন্ট।
     এটি এখন মাত্র প্রসিডিউরাল ব্যাপার। সব পক্ষের এফিডেভিট এবং তার পালটা শোনার পর  হবে আর্গুমেন্ট, তারপর আদালতের রায়। 
     
    আর এক দিকে গুগল করে এটাও দেখুনঃ  ১০ই ডিসেম্বরে চিফ জাস্টিস চন্দ্রচূড় পস্কো আইনের সংশোধনের এক বৈঠকে পার্লিয়ামেন্টের কাছে আবেদন করেন--আইন পাশ করে সেক্সুয়াল কন্সেন্টের বয়েস কমাতে।
    স্পষ্ট বলছেন-- ১৫ -১৬ বছরের ছেলেমেয়ে  যদি প্রেমে পড়ে স্বেচ্ছায় যৌনসম্পর্ক স্থাপন করে তাহলে সেটা যেন শাস্তিযোগ্য অপরাধ না হয়! 
    এতো একেবারে উলটো গঙ্গা বইছে!
     
    ধরুন তার পরেও যদি সুপ্রীম কোর্টের রায়  পিটিশনারের পক্ষে যায় তাহলে কী হবে? 
    খুব ভাল হবে নিঃসন্দেহে। 
    ইউসিসি না এনেও যদি হিন্দু বা মুসলিম পার্সোনাল ল' তে সংবিধানের মূল ভাবনার পরিপন্থী বলে অ্যামেন্ড করা যায় তাতে কার আপত্তি থাকতে পারে?
    ২ কিন্তু এটা নিয়ে গেল গেল রব তোলার কী হয়েছে? আইন করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে?
     হিন্দুদের মেয়ের বিয়ের বয়েস ১৯২৯ সালে ছিল ১৪ বছর, স্বাধীনতার পর ১৯৪৯ সালে হল ১৫ বছর। ২৯ বছর পরে ১৯৭৮ সালে গিয়ে হল ১৮ বছর। মুসলিম মেয়েদের সেই ১৫ রয়ে গেছে।
    এই বার সমাজের ভেতর থেকে পরিবর্তন বলতে কী বোঝাতে চাইছিলাম সেটা বলিঃ
     
    ২.১ 
    ঘটনা হল  চাইল্ড ম্যারেজ রিস্ট্রেইন অ্যাক্ট ১৯২৯ অনুযায়ী বিবাহযোগ্য মেয়ের বয়েস হবে ১৪; এই আইন সংশোধিত হয়ে ১৯৭৮ সালে বয়েস হল ১৮। আর ২০০৬ সালে একটি নতুন আইন হয়ে কম বয়েসে বিয়ে দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ হয়ে গেল। আমার অধিকাংশ বন্ধুদের বিয়ে  ১৯৭৭ এর মধ্যে হয়ে গেছল।  তো ১৯৭৮ এর আগে অব্দি ১৫ই ছিল। কিন্তু আমার বন্ধুদের মধ্যে কেউ বাইশ বছরের কম বয়সের মেয়েকে বিয়ে করে নি, ১৫ বছর তো দূর কী বাত? 
    ২.২ 
      এতসব আইনকানুনের পর ভারতে  বাল্যবিবাহের কী অবস্থা?
    ইউনিসেফের রিপোর্ট থেকে বলছি, ভেরিফাই করে নেবেন। 
    ইন্ডিয়া ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে ২০১৫-১৬ র ডেটা বলছে "India is home to the largest number of child brides -- a third of the global total. While it is illegal for girls under the age of 18 to marry in India, estimates suggest that at least 1.5 million girls under age 18 get married in India each year. Nearly 16% of all adolescent girls aged 15-19 are currently married."
    আগে আমাদের নিজেদের সামাজিক চেতনা বৃদ্ধি করা দরকার নয়? 
     
    ২.৩ বহুবিবাহ শুধু মুসলিমদের মধ্যে? শরিয়ত আইন?
     --লেটেস্ট ডেটা (ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে ২০১৯-২০) বলছে ঃ
     
    ধার্মিক সম্প্রদায়                                  পলিগেমি (%) নিজেদের জনসংখ্যার মধ্যে কতজন 
    হিন্দু                                                       ১.৩
    মুসলিম                                                 ১.৯
    অন্যরা                                                  ১.৬
     
    সূত্রঃ টাইমস অফ ইণ্ডিয়া, ২৮ জুলাই, ২০২২।
     
    এবং হিন্দু ৮০%, মুসলিম ২০%। তাহলে মোট পলিগেমাস ফ্যামিলি কার বেশি?
    আর সবারই পলিগেমি দ্রুত কমছে। 
    এটাই সামাজিক চেতনা এবং পারিপার্শ্বিক পরিবর্তনের ফল। 
     
  • Amit | 118.208.***.*** | ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:৩৮514809
  • এতো সামাজিক চেতনা র কথা এলে তো কোনো আইনের ই তাহলে দরকার নেই। তাহলে ১৯৫৬ পলিগ্যামি এক্ট থেকে মিনিমাম বিয়ের বয়স সমস্ত তোলা হোক না। ওসব থাকার দরকার আছে কি ? 
  • Amit | 118.208.***.*** | ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:৫৩514810
  • আর কনসেন্সুয়াল সেক্স এর এজ ১৬ করার সাথে মিনিমাম বিয়ের বয়েস এর কোনো সম্পক্ক নেই। কোনো উল্টোপানে হাঁটা নয়। বরং এই বিয়ের প্রতিশ্রুতির নাম করে রেপ চার্জের যে একটা চূড়ান্ত হাস্যকর ক্লজ আছে ইন্ডিয়ার আইনে, কনসেন্ট ল টা সেটার থেকে বেরোনোর একটা পজিটিভ স্টেপ। 
  • PM | 202.74.***.*** | ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৫:৪৩514811
  • রঞ্জনদার  বন্ধুরা যেমন ১৯৭৮ এর আগে বিয়ে করলেও চাইল্ড ম্যারেজ করেন নি.. --- আমার কোনো বন্ধুও ম্যারাইটাল রেপ করে নি . তাহলে  ম্যারাইটাল  রেপ এর মত  একটা আইন ই  বা আনার চেষ্টা কেন ? এক্ষেত্রেও সমাজের ভেতর থেকে পরিবর্তন এর জন্য অপেক্ষা করা হোক .
     
    কিন্তু রঞ্জনদা ওই আইন প্রণয়নের পক্ষে !!!
  • Ranjan Roy | ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৭:০৬514812
  • পি এম 
     
    এটা  কি যুক্তি?
    ক্রিমিনাল wrong  and  Civil  Wrong এর মধ্যে  তুলনা  হোল আপেল আর কমলা লেবুর মতো. 
     
    যেমন আপনি  আমি  বা  guruchandali পাঠকদের মধ্যে কেউ খুন  করেনি.  তাহলে খুনের বিরুদ্ধে আইনের দরকার  নেই !
    বেশির ভাগ civil আইন  হল prescriptive। 
    যেমন বিধবা বিবাহ আইন। তাতে বিধবাকে বিয়ে করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। তার মানে এই নয় যে সব বিধবাকে  বিয়ে করতেই হবে বা সব পুরুষকে শুধু বিধবাকেই বিয়ে করতে হবে।
     
    কিন্ত সমস্ত ক্রিমিনাল আইন হল নিষেধাজ্ঞা গোছের., deterrent।
    হত্যা কর না, চুরি কর না, রেপ কোর না -- ইত্যাদি।
     
    মেয়েদের বিয়ের বয়স ওই রকম একটা সিভিল আইন। এর urge চেতনার বিকাশ থেকেই এসেছে।
    তাই চেতনার সঙ্গে ওর পরিমাপ বদলায়। 10 থেকে14, তারপর 15,  এখন 18।
     ভবিষ্যতে 21 ও হতে পারে।
     
    কিন্ত  হাজার বছর ধরে খূন মানে আজও খুন, চুরি মানে চুরি।
     
    আর আপনারা  কন্টেক্স্ট ভুলে যাচ্ছেন-- ইউ সি সি।
    আমি যেমন ম্যারিটাল রেপ নিরোধক আইনের পক্ষে, তেমনি মেয়েদের বিয়ের বয়স আরও বাড়িয়ে দেয়ার পক্ষে। ছেলেদের সমান করে 21 হলে আরও ভাল।
     
    কিন্ত একই সঙ্গে আমি ইউ  সিি সির বিরুদ্ধে।
    ওটা ছাড়াই ধার্মিক আইনের রিফর্ম সম্ভব। 
    মানে যে ধারাগুলো সংবিধানের বেসিক টেনেট্স্ এর বিরোধী।
    ঠিক যেভাবে তিন তালাক রিফর্ম হয়েছে।
     
  • Amit | 118.208.***.*** | ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৭:৪০514813
  • ওকে। তাহলে মোদী সরকারের তিন তালাক রিফর্ম টা ভালো হয়েছে বলছেন তো ?
  • | 2620:7:6001::***:*** | ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৯:৩৮514815
  • খুন মানে খুন, বিয়ে মানে বিয়ে। তার কোনটা জায়েজ আর কোনটা শাস্তিযোগ্য আর কি শাস্তি সেটাই আইন। শম্বুক বধে শাস্তি হবে কিনা বা আত্মরক্ষার্থে খুন চলবে কিনা সেগুলো চেতনার সঙ্গে সঙ্গে বদলায়।
  • Ranjan Roy | ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ২১:০০514816
  • ল,
     অনেকটা ঠিক। আইনি পরিভাষায় নরহত্যা (হোমিসাইড) আর খুন (মার্ডার) এবং ম্যানস্লটার --সব আলাদা । আত্মরক্ষার জন্যে প্রত্যাঘাত, অ্যাক্সিডেন্ট (পাখিকে নিশানা করেছিলাম, পেছনে মানুষকে দেখতে পাইনি), রাগের মাথায় পিটিয়েছি--মরে যাবে ভাবি নি --সব আলাদা করে পরিভাষিত আছে।
    কিন্তু খুন অর্থাৎ মার্ডার (আমাদের ৩০২) বিশেষ বদলায় নি। অর্থাৎ ঠান্ডা মাথায় মেরে ফেলবার উদ্দেশ্য নিয়েই প্ল্যান করে কাউকে মেরে ফেলা। 
     
    অমিত (১)
    এতো সামাজিক চেতনা র কথা এলে তো কোনো আইনের ই তাহলে দরকার নেই। তাহলে ১৯৫৬ পলিগ্যামি এক্ট থেকে মিনিমাম বিয়ের বয়স সমস্ত তোলা হোক না। ওসব থাকার দরকার আছে কি ? 
      --এটা  বাচ্চাদের মত কথা বললেন। চোরের ওপর রাগ করে মাটিতে ভাত খাওয়ার মতন। 
      ওপরে ল' এর সঠিক বক্তব্য দেখুন।
      সামাজিক চেতনার অভিব্যক্তি থেকেই আইনের রূপ বদলায়, পরিবর্তন হয় এবং নতুন আইন তৈরি হয় ও পুরনো খারিজ বা সংস্কার হয়।
       ধারা ৩৭৭কে ডিক্রিমিনালাইজ করা বা এলজিবিটির পক্ষে ক্রমশঃ আইনী স্বীকৃতি গড়ে ওঠা অবশ্যই সমাজে চেতনার বিকাশের ফল। এখন যে স্কুলে বাচ্চাদের মায়ের নাম লেখালেও  চলে--এটাও চেতনার স্বীকৃতি। 
      চেতনার দুটো ফাংশন-- আইন প্রণয়ন এবং পরিবর্তন; আর আইনকে সমাজ জীবনে কাজে সফল প্রয়োগ করা, মেনে চলা। 
      হিন্দু বিধবার পুনর্বিবাহ আইন, ১৮৫৬ সালে পাশ হয়েছিল--মূখ্যত, উচ্চবর্ণের বিধবাদের কথা মাথায় রেখে। নিম্নবর্ণের মধ্যে বিধবা বিবাহ, পুনর্বিবাহ সহজ সামাজিক প্রথাতেই ছিল।
      এ বিষয়ে গুরুর পাতায় এলেবেলে দু'বছর আগে বিদ্যাসাগর প্রসংগে খুব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন।
       
      কিন্তু সামাজিক চেতনার স্তর্‌ ও মেয়েদের শিক্ষা এবং পেশার ক্ষেত্রে স্বাধীনতার অভাব তার একশ' বছর পরেও এই আইনের বাস্তবিক প্রয়োগ বিশেষ হতে দেয় নি। 
      ইদানীং একুশ শতকে বিধবা বিবাহ সহজ স্বীকৃতি পেয়েছে। কারণ সহজেই অনুমেয়। 
      এই কথাটি আরও প্রাসংগিক ট্রিপল তালাক প্রশ্নে। পরে বলছি।
        
    • Ranjan Roy | ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ২১:১৬514817
    • অমিত (২)
      "তাহলে মোদী সরকারের তিন তালাক রিফর্ম টা ভালো হয়েছে বলছেন তো "?
       
      --তিষ্ঠ! তিষ্ঠ! 
       একটু পেছনে হাঁটা যাক।
       
      ট্রিপল তালাক ব্যান আদৌ মোদী সরকারের ক্রেডিট নয়।
      উত্তরাখণ্ডের শায়রা বানো স্বামীর চিঠি পাঠিয়ে তিন তালাকের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টে যায়। ইতিমধ্যে আরও চার জন মুসলিম মহিলা -- ইশারাত জাহাঁ, গুলশন পরবীন, আফ্রীন রেহমান এবং আতিয়া  সাবরী একই ইস্যুতে পিটিশন পাঠিয়ে ছিলেন। সুপ্রীম কোর্ট পাঁচটি পিটিশন একসঙ্গে শুনানির জন্যে গ্রহণ করলেন।
      এদের সঙ্গে যুক্ত হলেন ষষ্ঠ বাদী "ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলন" বলে মুসলিম মেয়েদের একটি সংগঠন। 
       
      সুপ্রীম কোর্ট মোদী সরকারকে নোটিস পাঠালে ওরা পিটিশনার দের পক্ষে ট্রিপল তালাকএর বিরুদ্ধে এফিডেভিট দিল। 
      "ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলন" এর নেতৃ জাকিয়া সোমান  পাঁচ সদস্যের  কন্সটিট্যুশনাল  বেঞ্চের সামনে কুর্‌আন খুলে দেখালেন এই তালাক-এ-বিদ্যত ব্যবহার সিদ্ধ , কুরআনের কোথাও নেই। কাজেই এটি বাতিল যোগ্য।
      সুপ্রীম কোর্ট দু'বছর পরে ২০১৭তে পিটিশনারদের পক্ষে রায় দিল। আর মোদী সরকারকে নির্দেশ দিল উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করতে।
        এই নির্দেশ পেয়ে মোদী সরকার কি করল সেটা পরে বলছি।
      মোদ্দা কথা, ট্রিপল তালাক রদ করা মুসলিম নারীদের চেতনার বিকাশের একটি উদাহরণ।
    • Amit | 121.2.***.*** | ২৪ ডিসেম্বর ২০২২ ০১:২৬514819
    • তিন তালাক আইন নিয়ে কয়েকটা জিনিস আপনার নজর এড়াচ্ছে বা দেখেও দেখতে চাইছেন না। ইচ্ছে করেই হয়তো। :)  
       
      ১। তিন তালাক বিদ্যত বহু আগেই অনেক গুলো ইসলামিক দেশে নিষিদ্ধ হয়েছিল। এটা জানতে তো রকেট সায়েন্টিস্ট হতে হয়না। তাহলে ইন্ডিয়ার ইসলামিক ল বডি গুলো সব জেনেও নিজের থেকে এটাকে বেআইনি ঘোষণা করেনি কেন ? কেন সুপ্রিম কোর্টের ইন্টারভেনশন দরকার হলো ইন দা ১স্ট প্লেস ? 
       
      ২। কেন্দ্রে মোদী সরকার না থাকলে শায়রা বানো  বা বাকি চারজন সুপ্রিম কোর্ট অবধি যেতে পারতেন কি ? তার আগেই যে ওনাদের সবাইকে অভিজিৎ রায় র কাছে পৌঁছে দেওয়া হতনা কে বলতে পারে ? কল্লা নামানোর অতীত বা বর্তমান তো দেখাই যায় একটু চোখ খুলে রাখলেই। সংখ্যা খুব কম নয়। 
       
      ৩। আগের ৭০ বছরে তথাকথিত সেক্যুলার সব সরকারের কাজকম্মো ভুলে যাওয়া হচ্ছে। ১৯৮৫ শাহবানু আর খোরপোষ মামলা আর তাতে সেক্যুলার কংগ্রেস সরকারের রোল। ইভেন তিন তালাক রায় চলার সময় মমতা ব্যানার্জী সরকারের আচরণ। জেলবন্দি পাত্থ চাটুজ্যে তখন বেশ কয়েকটা ইসলামিক সভায় গিয়ে তিন তালাকের সাপোর্টে গলা ফাটিয়ে এসেছিলো। 
      মাইনরিটি ভোটব্যাঙ্ক পলিটিক্স তো কম দেখা যায়নি এতো বছরে। এখন মোদী সরকার ও তাই করছে। কিন্তু ওরা গেম রুল আর টার্গেট অডিয়েন্স টাই পাল্টে দিয়েছে। 
       
      ৪। এই যে তিন তালাক বদলাতে হলে কুরআন এর রেফারেন্স লাগবে বা বিদ্যাসাগরকে পরাশর দেখিয়ে বিধবা বিবাহ ভ্যালিডেট করতে হবে - এই বেসিক প্রেমিস টাই আমাৰ কাছে একদম ভুল। কেউ নিজের ইচ্ছেয় জন্মায় না। হিন্দু মুসলিম শিখ কোনো ঘরে জন্মালে তাকে সারা জীবন সেই ধর্মের খাঁচায় বন্দি থাকতে হবে - যতদিন না সেই ধমের সক্কলের চেতনা জাগছে - আপনি বাম মনস্ক হয়ে সেই তত্ত্বে সাবস্ক্রাইব করছেন এটা জাস্ট হিপোক্রেসি। এবং এটা ব্যক্তি আক্রমণ নয়। আপনি নিজের যুক্তি গুলো পেছনে গিয়ে পড়ুন। 
       
      ৫। চেতনা যে একদিকে হাঁটেনা বা এগিয়েও আবার পেছনপানে যাওয়া যায় - আফগানিস্তান ইরান পাকিস্তান তার নমুনা আপনার চোখের সামনে। এরা এবং আরো গুচ্ছ গুচ্ছ দেশ লিবারেল সোশ্যাল সিস্টেম এর পথে অনেকটা এগিয়েও আর্মড মৌলবাদি দের খপ্পরে পড়ে আবার জাহান্নমে গেছে বা যাচ্ছে। কয়েকটা রাইফেল এর সামনে হাজাৰটা লোকের চেতনার ল্যাজ গুটিয়ে যায়। কারণ বেঁচে থাকাটা আসল প্রায়োরিটি। গুলি খেয়ে মরলে চেতনা দিয়ে কি হাত ধোবে ? 
       
      কল্লোলদা বলছিলেন বটে একবার বাংলাদেশের যুদ্ধে আরো বেশি লোক মরলে স্বাধীনতা আরো পোক্ত হতো। এরকম লেভেলের হাস্যকর যুক্তি আমি অন্তত বেশি শুনিনি। এর সামনে আহমেদাবাদ আইটি সেল এর ব্ল্যাবারিং হার মেনে যাবে। 
       
      আর পলিগ্যামি এক্ট নিয়ে ঐন্ তুলে দেওয়া মাটিতে ভাত খেতে হবে কেন ? আপনি নিজেই মেনে নিচ্ছেন আপনার কোনো বন্ধু চাইল্ড ম্যারেজ করেনি আইন না থাকতেও। এদিকে এখন আইন থাকতেও গাদা গাদা চাইল্ড ম্যারেজ হচ্ছে। আবার এটাও আপনি নিজেই যুক্তি দিচ্ছেন হিন্দু রা ৮০-% এবং তাদের মধ্যে পলিগ্যামি ১।৩ %. সুতরাং পলিগ্যামাস হিন্দুর সংখ্যা বেশি। 
       
      সুতরাং দেখাই যাচ্ছে এসব আইন থেকেও কোনো কাজ হচ্ছে না। তাহলে এসব স্ক্রাপ করে বরং চেতনা জাগানোর কোনো আইন বানাতে পারলে ভালো হয় - তাইনা ? 
    • aranya | 2601:84:4600:5410:157e:8615:2f04:***:*** | ২৪ ডিসেম্বর ২০২২ ০২:১৬514820
    • চেতনা বৃদ্ধি আর আইন প্রণয়ন -এ দুটো তো একসাথেই চলতে পারে
       
      একটা সমস্যা বোধহয় এই যে বিজেপি ইউসিসি চাইছে, সুতরাং তার বিরোধিতা করতেই হবে। এভাবে না দেখে বরং ইউসিসি-র আওতায় কী কী জিনিস আসছে, সেগুলো ধর্ম - টর্ম বাদ দিয়ে ভাল বলে মনে হচ্ছে কিনা - মানুষের জন্য, বিশেষতঃ নারী ও শিশুদের জন্য -এভাবে দেখলে ভাল হয় 
       
      বিজেপি, আরএস এস এর এনারসি, সিএএ, পরিবেশ আইন লঘু করে দেওয়া, উচ্চ শিক্ষায় বরাদ্দ কমানো -এমন বহু পদক্ষেপ-ই সমর্থন করি না।  কিন্তু প্রতিটাই কেস বাই কেস দেখতে চাই
    • Ranjan Roy | ২৪ ডিসেম্বর ২০২২ ১৩:১১514824
    • অরণ্য

      "চেতনা বৃদ্ধি আর আইন প্রণয়ন -এ দুটো তো একসাথেই চলতে পারে"।

      -- একশ' বার।

      কখনও চেতনা এগিয়ে থাকে, আইন পিছিয়ে। আন্দোলনের চাপে ক্রমশঃ জনমানসে এবং আদালতের মানসিকতায় ও পরিবর্তন আসে। ওঁরাও সমাজেরই অংশ। উদাহরণ, ধারা ৩৭৭ এ সমলৈঙ্গিক সম্পর্ককে ডিক্রিমিনালিজ করা। 

      আবার কখনও আইন সমাজের গড় চেতনার থেকে এগিয়ে থাকে, তাই সমাজকে সেটা আত্মসাৎ করে চেতনায় পরিবর্তন আনতে খানিক সময় লাগে। যেমন বিধবা বিবাহ ও বাল্যবিবাহ আইন।

      এটা খানিকটা বাঁ পা, ডান পায়ের সম্পর্কের মত।

      একটা এগোয়, তারপর একটা। এভাবেই সমাজ এগোয়, আমরা এগিয়ে চলি। কখনই গোটা সমাজ একসাথে এগোয় না বা একটি নির্দিষ্ট কালখণ্ডে গোটা সমাজের মানসিকতা এক হয় না। 

      আপনার দ্বিতীয় বক্তব্যঃ

      "একটা সমস্যা বোধহয় এই যে বিজেপি ইউসিসি চাইছে, সুতরাং তার বিরোধিতা করতেই হবে"। এবং "কিন্তু প্রতিটাই কেস বাই কেস দেখতে চাই"।

      -- না না; নিশ্চয়ই প্রতিটা কেসই আলাদা করে মেরিট-ডিমেরিট বেসিসে দেখা উচিত। কিন্তু সেটা হবে আদ্দেকটা দেখা। একই সঙ্গে গ্র্যাণ্ড ডিজাইনের অংশ হিসেবেও দেখতে হবে। দুটো দেখা মিলিয়ে তবে --।

      আপনি বলছেন এদের পলিসি এবং তার নেগেটিভ সাইড নিয়ে আপনারা যথেষ্ট অবহিত। 

      দুঃখের সঙ্গে বলছি -- সেটা আপনাদের পক্ষে সম্ভবপর নয়। কারণ আপনারা দেখছেন সরকারের ঘোষিত নীতি, এবং ভারতে এলে থাকছেন একটি বিরোধী রাজ্যে। কিন্তু অন্য রাজ্যে থাকলে বিপদটা টের পেতেন, সব কাগজে বেরোয় না।

      সর্বোচ্চ নেতা বলবেন -- সব কা সাথ, সব কা বিকাশ, সব কা বিশ্বাস।

      কিন্তু গ্রাউন্ড লেভেলে হয় উল্টোটা, আর এসম্বন্ধে সবাই নীরব থাকেন।

      কিছু উদাহরণ দিচ্ছি।

      (১) গুজরাতের একটি  ছোট শহরে (হিন্দু-মুসলমান প্রায় ফিফটি ফিফটি) গরবা উৎসবের সময় দু'পক্ষের কিছু ছেলের মধ্যে বচসা হয়। শুধু মুসলমান্দের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়। তাতে অভিযোগ হয় যে এরপরে কিছু মুসলমান যুবক পাথর ছুঁড়েছে। পুলিশ কিছু ছেলেকে থানায় নিয়ে যায়। তারপর স্থানীয় জনতার দাবিতে ওদের রাত দুটো সময় থানা থেকে বের করে এনে মন্দির মসজিদের মাঝখানের স্কোয়ারে ল্যাম্পপোস্টে এক এক করে বেঁধে লাঠিপেটা করা হয়। উন্মত্ত জনতা উল্লাসে ফেটে পড়ে, হাততালি দিতে থাকে। ভিডিও তুলে সার্কুলেট করে।

        কমপ্লেন হলে কিছু পুলিস অফিসার  গোপনে স্বীকার করেন -- সম্পূর্ণ বে-আইনি কাজ হয়েছে, শাস্তি হবে। 

      কিন্তু পুলিশ মন্ত্রী বলেন -- উচিত শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। সবাই পুলিশকে ধন্যবাদ দিন।

      তারপর উনি রেকর্ড ভোটে জিতলেন। 

      (২) আজকে দেখুন -- জানুয়ারি ২০২৩ থেকে একবছর ৮০ কোটি জনতাকে ফ্রি রেশন দেওয়া হবে। এটি ইউপিএ সরকারের খাদ্য সুরক্ষা আইনের অনুপালনে নেওয়া সিদ্ধান্ত। ওরা করেছিল সুলভ রেশন -- চাল ৩ টাকা, গম ২ টাকা, অন্য খাদ্যশস্য কিলোপ্রতি ১ টাকা।

      এখন সবকিছুই ফ্রি -- ২০১৪এর গোড়ায় জেনারেল ইলেকশন আসছে না?

      অথচ একমাস আগেও বারবার বিষোদ্গার শুনলাম -- হে দেশবাসী! যারা ফ্রি রেওড়ি বিতরণ করছে, লোভ দেখাচ্ছে তাদের থেকে সাবধান হও, ওরা তোমাদের পঙ্গু করে দিচ্ছে, দেশকে পিছিয়ে দিচ্ছে। 

      হ্যাঁ, সরকারের ভাঁড়ারে ৫০% অতিরিক্ত বাফার স্টক রয়েছে।

      (৩) গতকালও গুরুগ্রামে বজরং দলের লোকজন এসে খোলা মাঠে শুক্রবারে নামাজ পড়ায় বাধা সৃষ্টি করেছে।

      ২০১৮ সালে হরিয়ানা সরকার, হিন্দু এবং মুসলিম কমিটি বসে ১৮টি স্পট ঠিক করে যেখানে শুক্রবার দুপুরে ১৫ মিনিট নামাজ পড়া চলবে।

      এখন তার প্রায় সবগুলোকেই শান্তিরক্ষার নামে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নিজের নিজের ঘরে পড়। যারা চাকরি করছে তাদের লাঞ্চের সময় একটু ওখানেই পড়ে নেওয়া ছাড়া গতি কি? 

      কিন্তু মল হোক কি অফিস, ধীরে ধীরে ম্যানেজমেন্টকে চাপ দিয়ে -- সবই বন্ধ। 

       প্রখ্যাত সাংবাদিক সৈয়দ নাকভি একটি নাটক লিখেছেন ইংরেজিতে -- দ্য মুস্লিম ভ্যানিশেস্‌। হাসির মোড়কে কটু সত্য। ওরা যেন বেশি মুসলিমপনা না দেখায়। মাথা নীচু করে থাকে। পোষাকে আশাকে যেন আমাদের থেকে আলাদ করে চেনা না যায়! তবেই মঙ্গল। 

      (৪) আজ সাংবাদিক কাপ্পন প্রায় দু'বছর পরে জামিন পেলেন। এলাহাবাদ হাইকোর্ট বলছে ভুয়ো কেস, কোন টেরর যোগাযগ, মানি ট্রেইল দেখা যাচ্ছে না।

      এটা এখন নর্ম, ৮৩ বছরের বুড়ো পাদ্রীকে যেভাবে বিনা বিচারে জেলে মরতে হল -- সেটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে।

      (৫) বিলকিস বানো কেসে গোধরার এম এল এ খুনী-ধর্ষকদের সার্টিফিকেট দিলেন -- ওরা ব্রাহ্মণ, ভালো সংস্কার পেয়ে বড় হয়েছে। 

      তারপর উনি রেকর্ড ভোটে জিতলেন।

      (৬) গুজরাতের দু-তিনটে গাঁয়ের প্রবেশপথে   বোর্ড টাঙানো হয়েছে -- হিন্দু রাষ্ট্র। 

      আলাদা করে সংবিধান বদলের কোন দরকার নেই। মেজরিটি জনতার  চেতনায় গেড়ে বসেছে -- এটা হিন্দুদের রাষ্ট্র, অন্যদের থাকতে হবে মাথা নীচু করে।

      এখানেই বিজেপি সফল।
    • Ranjan Roy | ২৪ ডিসেম্বর ২০২২ ২২:২৫514826
    • অমিত,

      আপনি বলছেন -- "তিন তালাক আইন নিয়ে কয়েকটা জিনিস আপনার নজর এড়াচ্ছে বা দেখেও দেখতে চাইছেন না। ইচ্ছে করেই হয়তো।" :)

      "কল্লা নামানোর অতীত বা বর্তমান তো দেখাই যায় একটু চোখ খুলে রাখলেই"।

      "আগের ৭০ বছরে তথাকথিত সেক্যুলার সব সরকারের কাজকম্মো ভুলে যাওয়া হচ্ছে। ১৯৮৫ শাহবানু আর খোরপোষ মামলা আর তাতে সেক্যুলার কংগ্রেস সরকারের রোল"। 

      "আপনি বাম মনস্ক হয়ে সেই তত্ত্বে সাবস্ক্রাইব করছেন এটা জাস্ট হিপোক্রেসি। এবং এটা ব্যক্তি আক্রমণ নয়। আপনি নিজের যুক্তি গুলো পেছনে গিয়ে পড়ুন"।

      -- অমিত, আমি মেনে নিচ্ছি যে আমার চোখ বন্ধ, আমি হিপোক্রিট, এবং ইচ্ছে করে অনেক কিছু দেখি না। আর আপনার ওপরের কমেন্ট গুলো আদৌ ব্যক্তি আক্রমণ নয়। :))

      আমি খালি মনে করিয়ে দিতে চাই যে ঃ

      ১.১ 

      এই টইয়ে আলোচনার বিষয় রঞ্জন রায়ের মানসিক গঠন নয়, বরং ইউসিসি নামক আইন নিয়ে যে প্রচার হচ্ছে তার আদৌ দরকার আছে? নাকি প্রচলিত আইনগুলোর আবশ্যিক সংশোধন করে নিলেই কাজ চলে যাবে, আসল উদ্দেশ্য রাজনৈতিক?

      ১.২

      মনে করিয়ে দিতে চাই যে শাহ বানো কেস আদালতে গেছল মোদীজির সময়ে নয়, রাজীব গান্ধীর আমলে এবং তাতে কারও কল্লা কাটা যায় নি। আর ট্রিপল তালাক কেসের সময় শাহবানো কেস নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে, কেউ কিছু ভুলে যায় নি। ইচ্ছে বা অনিচ্ছেয়।

      ১.৩

      মনে করিয়ে দিতে চাই যে অভিজিত রায়ের মতন র‍্যাশনালিস্ট চিন্তার প্রবন্ধ লেখায় ভারতে  গলা কাটা গাছে ডঃ দাভোলকর,, গোবিন্দ পানসরে , ইতিহাস চর্চার কলবুর্গী এবং সাংবাদিক গৌরী লংকেশের। এই হত্যার পেছনে রয়েছে অভিনব ভারত বলে এক উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন।

      ১.৪

      মনে মনে করিয়ে দিতে চাই যে ২০০৮ সালের মালেগাঁও ব্লাস্ট কাণ্ডের  অন্যতম অভিযুক্ত প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর  -- .৪০ জন মারা গেছল --  কোর্টে চার্জশীট পেশ হয়ে নিয়মিত ট্র্যায়াল শুরু হয়েছে, আজ বিজেপির সদস্য এবং ভোপালের সাংসদ। উনি বছরে একবার কোরটে হাজির হয়ে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দিয়ে চলে আসেন। অসুস্থতার কারণে জামিন পেয়ে নির্বাচনী প্রচার, ভলিবল খেলা সবই করছেন। গান্ধীজির নিন্দাকরে গড়সে কে আসল দেশপ্রেমিক বলেছিলেন।

      দিব্যি আছেন। আর ৮৩ বছরের স্ট্যান স্বামী মারা যাওয়া অব্দি জামিন পান নি। 

      ২.০

      আপনি অনেকবার মুসলিম বা সংখ্যালঘু তোষণের কথা তুলেছেন।

      একবার কিছু উদাহরণ দেবেন কি? মানে সরকারের এমন কোন নির্ণয় যাতে হিন্দুদের স্বার্থের উপরে মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে?

      আমি যা দেখচিঃ

      ২.১

      জাস্টিস রাজিন্দার সাচ্চার কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী কোন সরকার ওদের জন্যে কিছু করে নি। শুধু স্তোকবাক্য দিয়েছে। ওরা জনসংখ্যার হিসেবে শিক্ষা, চাকরি রাজনীতিতে প্রতিনিধিত্ব--কিছুই পায় নি। ওরা সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা মাইনরিটি, এস সি/ এস টির সমতূল্য।

      ২.২

      হিন্দু জয়েন্ট ফ্যামিলির জন্যে ইনকাম ট্যাক্স আইনে কিছু রিলিফ আছে, যার সুযোগ হিন্দি বলয়ে পারিবারিক মালিকানার  বিজনেস ফার্মগুলো নেয়। এমন কোন কনসেশন অন্য কোন ধার্মিক সম্প্রদায় পায় না।

      ৩.০

      এহ বাহ্য।

      এমন কি সুবিধে মুসলিম সম্প্রদায় কে দেয়া হয়েছে যা হিন্দুদের স্বার্থের পরিপন্থী? আমি সত্যি জানি না, জানতে চাই। 
    • দীপ | 2402:3a80:196f:8ff7:f41e:6f08:ec86:***:*** | ১৯ মার্চ ২০২৩ ২৩:০৯517618
    • কেরালার মুসলিম দম্পতি উকিল শুকুর ও তাঁর স্ত্রী শিক্ষাবিদ ডঃ শীনার তিন মেয়ে, কোন ছেলে নেই। ফলে ইসলামিক সিভিল কোড অনুযায়ী মৃত্যুর পর তাঁদের সম্পত্তির একাংশ পরিবারের পুরুষ সদস্যদের কাছে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এই পরিস্থিতিতে বিয়ের 29 বছর পর Special Marriage Act অনুযায়ী রেজিস্ট্রি বিয়ে করলেন এই মুসলিম দম্পতি। এই রেজিস্ট্রি বিয়ের ফলে তাঁদের সম্পত্তি ধর্মীয় আইনের বদলে Indian Succession Act অনুযায়ী বন্টিত হবে, ফলে মেয়েরাই পুরো সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবেন।
      ফেসবুক থেকে প্রাপ্ত।
    • Ranjan Roy | ২৩ মার্চ ২০২৩ ০০:১৫517764
    • অর্থাৎ বর্তমানে যে আইন গুলো  রয়েছে,  তাই যথেষ্ঠ.  তার সাহায্যে মৌলবাদী ধর্মীয় নীতি গুলোকে কাউন্টার করা  যায়. 
      UCC অনাবশ্যক এবং বাহুল্য মাত্র.
    • দীপ | 42.***.*** | ২৩ মার্চ ২০২৩ ০০:৪৮517769
    • সেজন্যই সারা দেশে সুনির্দিষ্ট আইন প্রয়োজন, মা সবাইকে সমান চোখে দেখবে। ধর্মীয় ভিত্তিতে কোনো বিভেদ থাকবে না।
    • Amit | 121.2.***.*** | ২৩ মার্চ ২০২৩ ০৪:২৮517774
    • আচ্ছা রঞ্জনদা - বেশ কিছু দেশে এরকম বিতর্কিত বিষয় - যেমন সমলিঙ্গ বিবাহ ইত্যাদি নিয়ে গণভোট হয়েছে  নতুন আইন বানানোর জন্যে। ইন্ডিয়াতে ইউনিফর্ম সিভিল কোড সেরকম একটা ডাইরেক্ট এপ্রোচ নিলে সেটা নিয়ে ​​​​​​​আপনার কি ​​​​​​​মতামত ?
       
      হ্যা - আমার  মত হলো ওতে হিন্দু ফ্যামিলি ট্যাক্স আইন টাও পাল্টানোর প্রস্তাব রাখা হোক। সবার জন্যে এক ট্যাক্স আইন আনা হোক। আর যেসব হিন্দু প্রেফারেনটিয়াল আইন আছে - জানিনা অবশ্য কি কি আছে- সেগুলোও একসাথে সব পাল্টানো হোক। তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই।
    • Ranjan Roy | ২৩ মার্চ ২০২৩ ১০:২৯517783
    • কোন  প্রেফারেনশিয়াল আইন না থাকলে কোন সমস্যা নেই।
      কিন্তু গণভোট কেবল রিয়েল টাইমে মেজরিটারিয়ান ভিউয়ের প্রতিফলন মাত্র।
       যাঁরা মুম্বাইয়ের হাজি আলিতে মুসলিমের প্রবেশাধিকার নিয়ে আদালতের রায়ে উল্লসিত হয়েছিলেন তারাই কেরালার মন্দিরে হিন্দু মেয়ের প্রবেশাধিকার নিয়ে সুপ্রীম কোর্টের রায়ের বিরোধিতায় রাস্তায় নামলেন এবং সংখ্যাধিক্যের জোরে সেই রায়কে ঠাণ্ডাঘরে পাঠালেন।
       
      সমস্যা এখানেই।
      আপনি ইউসিসি রিফর্মের প্রস্তাবকে তার বহুসংখ্যক রাজনৈতিক রণনীতির থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবে দেখছেন--সমস্যা সেখানেই।
    • Amit | 163.116.***.*** | ২৯ জুন ২০২৩ ০৩:৪৭520806
    • এই টোয়ি টা এবার ওপরে তুলে দেওয়া যাক। দরকার পড়লেও পড়তে পারে। 
       
    • দীপ | 42.***.*** | ১৭ আগস্ট ২০২৩ ১৫:১৬522562
    • দীপ | 42.***.*** | ১৭ আগস্ট ২০২৩ ১৫:২১522563
    • আর আমাদের বিপ্লবীরা ঠিক এটাই করেন! ধর্মনিরপেক্ষতার বুলি আউড়ে তাঁরা একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ আইন দাবী করেন! 
      ফলাফল, বিজেপি আরো শক্তিশালী হয়!
    • dc | 2401:4900:1f2a:7963:e07a:e278:ec36:***:*** | ১৭ আগস্ট ২০২৩ ১৭:২২522564
    • ২০২৪ এ জেনারাল ইলেকশান আসছে। তার আগে সিএএ, ইউসিসি নিয়ে কয়েক জায়গায় আগুন লাগাবে, কয়েকটা দাঙ্গাও লাগবে মনে হয়। 
    • মতামত দিন
    • বিষয়বস্তু*:
    • কি, কেন, ইত্যাদি
    • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
    • আমাদের কথা
    • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
    • বুলবুলভাজা
    • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
    • হরিদাস পালেরা
    • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
    • টইপত্তর
    • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
    • ভাটিয়া৯
    • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
    গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


    মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
    পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন