বিজেপি ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র করতে চায়? না। করতে চায় বলে ঘোষণা করে। করবে বলে অভিনয় করে। মক পদক্ষেপ নেয়। ঘোষণাটি খুড়োর কলের মুলো। তাতেই যা কাজ হওয়ার হয়। কমুনালিটি বাড়ে। ধর্মের ভিত্তিতে বিভেদ বাড়ে। লক্ষ আরো পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকা। সাম্প্রদায়িকতা বাড়ানোর লক্ষে আর এস এস এর দীর্ঘমেয়াদি ধর্মভিত্তিক গ্রাউন্ডওয়ার্ক এদের বাড়তি সহায়ক। সেইস্তরে যারা কাজ করে চলেছে, তাদের উজ্জীবিত রাখতেও কিছু না কিছু খুটখাট তো করে যেতেই হবে।মুসলিম সমাজের বৃহদাংশ পিছিয়ে থাকা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আর্থিক অবস্থা, সব বিষয়েই। এই বৃহদাংশের কাছে ধর্ম ও ধার্মিক অনুশাসন, অধিকার, নিয়ম কানুন বড্ডই স্পর্শকাতর। সেখানে হাত পড়লেই আইডেন্টিটি ক্রাইসিস, চরমতম জান কবুল প্রতিরোধ। যাবতীয় মুসলিম মৌলবীরা ক্ষমতা বজায় রাখতে আর মেজরিটি মুসলিম জনগোষ্ঠীকে তাঁবে রাখতে এই জায়গাটা আরও স্পর্শকাতর করে রাখে। যেভাবে আর এস এস হিন্দুদের এই অংশটাকে স্পর্শকাতর করে তোলার কাজ করে চলেছে।
এতদিন ভারতে যেটা করা হয়েছে, শান্তি ও স্বস্তি বজায় রাখতে, এই ক্ষতস্থানে আরো খোঁচাখুচি না করা। সমাজ এমনিতেই এগোয়, সামাজিক মূল্যবোধ ও প্র্যাকটিস আপনা থেকেই সার্বিকভাবেই আধুনিকতার পথে চলে। যেভাবে মেজর মুসলিম সমাজ এমনিতেই বহুবিবাহের বা তিনতালাকের প্র্যাকটিস করে না। কিন্তু আইন করে এই ধার্মিক প্রোভিশনটিকে বিলোপ করতে গেলেই সর্বস্তর থেকে প্রতিরোধ জেগে উঠবে। সেই প্রতিরোধ কমুনাল, ধর্মভিত্তিক, আইডেন্টিটি পলিটিক্স। যা হিন্দু পপুলেশনকে ইনসিকিউরিটি দেবে, হিন্দু ভোট ক্লাস্টারাইজ হবে অ্যান্টিমুসলিম (ঘোষিতভাবে) রাজনৈতিক দলের দিকে । ফল দীর্ঘমেয়াদি গদিদখল করে রাখা।
সতীদাহের ক্ষেত্রেও তাইই হয়েছিল। সমাজের বেশিরভাগ মানুষই ওই প্রথা পালন করতেন না। কিন্তু আইন করার কথা হতেই সবাই রে রে করে তেড়ে উঠল। সেক্ষেত্রে সংস্কারক হিন্দু সমাজেরই একজন মাত্র হওয়ায় সব রোষ তার বিরুদ্ধে একত্র হয়েছিল। তাকে সাপোর্ট করা প্রশাসন গৌন ছিল, যেহেতু এই রদ করার যুক্তিকাঠামোটা একজন মানুষই গড়ে দিয়েছিল। মুসলিম সমাজ যেটা মিস করছে, তাদের ভিতর থেকে উঠে আসা এমন এক বা একাধিক সংস্কারক। রামমোহন না থাকলে শুধু সতীদাহ রদ করতেই ব্রিটিশ শাসন টিঁকে থাকতে সমস্যার সম্মুখীন হত। বলপ্রয়োগ কোন লেভেলে নিয়ে যেতে হত ভাবা যায়! সে চেষ্টাই তারা করত না। যদিও মেজরিটারিয়ান হিন্দুদের মধ্যেও খুব কম অংশই সরাসরি এফেক্টেড ছিল।
ভারতকে হিটলারের জার্মানি করে তোলা যদি আজকের দিনে অসম্ভব নাও হয়, অন্তত পঞ্চাশ একশ বছরের ডেডিকেটেড প্রয়াস লাগবে। ততদিন এমনিতেই দেশটা ছিবড়ে হয়ে কর্পোরেটের কাছে বিক্রি হয়ে দেউলিয়া ডিক্লেয়ার্ড হয়ে যাবে। সম্পদহীন দেশ নিয়ে আর কেউ মাথাও ঘামাবে না। ফলে নাৎসীনিধনের মত মুসলিম নিধনের দিনও আসবে না।
জনসংখ্যা কমানোর লক্ষে ভবিষ্যতে যদি মুসলিম জনগোষ্ঠীকে বিতারণ করাটা সে সময় লক্ষও হয়, বাংলাদেশ পাকিস্তানে যেভাবে হিন্দুদের তাড়ানো চলেছে, তবে সেই লক্ষ ক্রমে ক্রমে হিন্দু অন্ত্যজ জনগোষ্ঠীর দিকেও নির্ধারিত হবে। মনে হয় না তাতে বিশেষ লাভ হবে, যেহেতু খেটে করা কাজের জন্য লোকের অভাব হতে থাকবে। তাছাড়া যখন জনসংখ্যা কমানোর বায়োলজিকাল ওয়েপন আবিষ্কার হয়েই গেল, আর তার টেস্টিং ও সফলভাবে হয়ে গেল, তখন এভাবে কেনই বা জনসংখ্যা কমাবে।
এখন, প্রথম টার্গেট করতে হবে বিজএপিকে ক্ষমতা থেকে সরানো এবং যাবতীয় নেতাদের রোজগার ও সম্পতির খতিয়ান নিয়ে দুর্নীতির অর্থ বাজেয়াপ্ত করা। সেজন্য দরকার একটা তুল্যমূল্য অল্টের্নেট রাজনৈতিক এনটিটি। তার জায়গায় ওদের তৈরি করে দেওয়া বিতর্কের প্রেমিসেই আমাদের যাবতীয় তর্ক বিতর্ক আবদ্ধ থেকে যাচ্ছে।