এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  রাজনীতি

  • সমান নাগরিক সংহিতাঃ বিতর্ক হোক

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | রাজনীতি | ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ | ৭১৪১ বার পঠিত
  • সমান নাগরিক সংহিতাঃ বিতর্ক হোক

    নান্দীমুখ

    গত ৯ ডিসেম্বর, ২০২২ বিজেপি সাংসদ কিরোড়ী লাল মীণা রাজ্যসভায় একটি প্রাইভেট মেম্বার্স বিলে পেশ করেছেন যার সার কথা হল দেশে ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা সমান আচার সংহিতা জারি করার উদ্দেশ্যে একটি কমিটি গঠন করা হোক।

    ব্যস, যাকে বলে একেবারে হল্লা বোল শুরু হয়ে গেল। সমস্ত বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের এক রায় — বিজেপি গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনে বিজয়ের পর একজন সাংসদকে দিয়ে একটি ব্যক্তিগত বিল পেশ করে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে জল মাপছে।

    কারণ, তার আগে একবছর ধরে কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা, ত্রিপুরার মত ৯টি বিধানসভা নির্বাচন এবং একগাদা পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে।

    বিজেপির নেতারা মুখ ভার করে বলছেন — এসব কী? সংবিধান সভা দেশকে যে কথা দিয়েছিলেন – যা এতদিন কেউ রাখে নি — আমরা তো সেটাকেই আইনের চেহারা দেওয়ার চেষ্টা করছি মাত্র।

    আরএসএসের লোকেরা ব্যক্তিগত স্তরে বলছেন — আমরা তো কবে থেকে বলছি যে এক জাতি, এক রাষ্ট্রভাষা, এক আচার সংহিতা দেশ এবং রাষ্ট্রকে ঐক্যবদ্ধ করে, সুদৃঢ় করে।

    এই শব্দকল্পদ্রুমের পরিবেশে বর্তমান প্রবন্ধে নিচের বিন্দুগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করছি। মোদ্দা কথা -- ইউনিফর্ম সিভিল কোড ব্যাপারটা কী - খায় না মাথায় দেয়? সংবিধান সভা এ নিয়ে ৩ নভেম্বর ১৯৪৮ এবং ১৯৪৯ সালে কী বলেছিল?

    এবং, এটা যদি সবার জন্যে উইন-উইন গেম হয় তাহলে আপত্তির কারণ কী? এ নিয়ে কতদূর চেষ্টা করা হয়েছে এবং কোথায় আটকাচ্ছে?

    একটা ডিসক্লেমার দিয়ে রাখি — এই আলোচনার জন্যে আমি ঠিক যোগ্য ব্যক্তি নই। আমি খালি বিতর্কের মুখ খুলে দিচ্ছি, সুস্থ তথ্যসমৃদ্ধ বিতর্ক চলুক।

    আমার একটাই যোগ্যতা — যখন ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে ২২তম ল’ কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত জাস্টিস বি এস চোপরা ইউনিফর্ম সিভিল কোডের ব্যাপারে আমজনতার মতামত জানতে চেয়ে মিডিয়ায় এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ১৬ পয়েন্ট প্রশ্নাবলী জারি করেছিলেন এবং নভেম্বর মাসের মধ্যেই প্রায় ১০,০০০ উত্তর পেয়েছিলেন তার মধ্যে একটা সেট আমারও ছিল। স্বল্পবুদ্ধিতে যা মনে হয়েছিল তাই উত্তরের খোপে ভরে দিয়েছিলাম।

    সিভিল ও ক্রিমিনাল কোড

    যে কোন দেশের আইনকানুনকে মোটামুটি দুটো ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।

    এক, ক্রিমিনাল কোড – যা রাষ্ট্র এবং সমাজের বিরুদ্ধে অপরাধ; এর আওতায় আসবে চুরি-ডাকাতি, খুনজখম, শারীরিক আক্রমণ, ধর্ষণ ইত্যাদি।

    দুই, সিভিল কোড – যার ভিত্তি হল এক দেশ বা সমাজে বাস করার আচরণ বিধির সামাজিক কন্ট্র্যাক্ট। এতে রয়েছে বিয়ের অনুষ্ঠান পদ্ধতি, বিচ্ছেদ, এবং সম্পত্তির কেনাবেচা, ব্যবসার নিয়ম, উত্তরাধিকার এবং দত্তক নেয়ার নিয়ম কানুন ইত্যদি।

    ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা সমান নাগরিক আচার সংহিতাঃ

    এইখানে এসে কি একটু গুলিয়ে যাচ্ছে?

    এক, ক্রিমিনাল কোড তো জাতিধর্ম নির্বিশেষে দেশের সমস্ত নাগরিকের জন্যে সমান। খুন-চুরি-ডাকাতির অপরাধে শাস্তি দেবার সময় আইন বা রাষ্ট্র নাগরিকের জাতধর্ম দেখে না, একই আইনে একই শাস্তি দেয়। তাহলে সিভিল কোড এক হবে না কেন?

    -- আরে সিভিল কোডের অনেকগুলো তো মূলতঃ সবার জন্যেই সমান!

    ব্যবসা করতে কন্ট্র্যাক্টের নিয়ম ও আইন, সেলস্‌ অফ গুডস অ্যাক্টের আইন, জি এস টি, ইনকাম ট্যাক্স, রেজিস্ট্রির নিয়ম, জমি বাড়ি সম্পত্তি কেনাবেচার আইন, মর্টগেজ বা সম্পত্তি বন্ধক রাখার আইন – সবই তো হিন্দু-বৌদ্ধ-শিখ-জৈন-পারসিক-মুসলমান-খ্রিস্টানী সবার জন্যে এক। তাহলে?

    -- আছে, তফাৎ আছে। ভারতবর্ষে সিভিল কোডের অন্তর্গত কিছু বিষয় বিভিন্ন ধার্মিক এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্যে আলাদা। সেগুলো হল মুখ্যতঃ তিনটি -- বিয়ের অনুষ্ঠান পদ্ধতি এবং বিচ্ছেদ; সম্পত্তির উত্তরাধিকার; এবং দত্তক নেয়ার নিয়ম কানুন।

    সমান নাগরিক আচার সংহিতার সমর্থকেরা চাইছেন - ওই তিনটে ব্যাপারেও বিভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায়ের লোকজনের জন্যে আলাদা আলাদা নিয়ম বন্ধ হোক। সব ধুয়ে মুছে এক হয়ে যাক, ঠিক স্কুল ইউনিফর্মের মত।

    ধুয়ো উঠছেঃ এক হউক, এক হউক, এক হউক, হে ভগবান!

    আমরা সংক্ষেপে আলোচনার সুবিধের জন্যে দেশের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মভিত্তিক সম্প্রদায়ের (হিন্দু ও মুসলিম) কোড বিল নিয়ে আলোচনা করব।

    হিন্দু কোড বিলের অন্তর্গত রয়েছে তিনটে আইন — হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্ট ১৯৫৫; হিন্দু সাকসেসন অ্যাক্ট; হিন্দু মাইনরিটি অ্যান্ড গার্ডিয়ানশিপ অ্যাক্ট এবং হিন্দু অ্যাডপশন (দত্তক নেয়া) এবং মেইন্টেন্যান্স (খোরপোষ) অ্যাক্ট।

    এইসব তৈরি হয়েছে ইংরেজ আমলে কিছু টুলো পণ্ডিত ডেকে বিভিন্ন স্মৃতি বা সংহিতা (মনু, যাজ্ঞবল্ক্য, পরাশর ইত্যাদি) ঘেঁটে। এ নিয়ে বিদ্যাসাগর প্রসঙ্গে গুরুর পাতায় গত বছর আমাদের এলেবেলে (দেবোত্তম চক্রবর্তী) চমৎকার আলোচনা করেছিলেন।

    তেমনই ভারতের মুসলিমদের রয়েছে মুসলিম পার্সোনাল ল (শরিয়ত) অ্যাক্ট ১৯৩৭। এতে বিয়ে, তালাক, খোরপোষ, দান-দক্ষিণা সব কিছুর ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে মুসলিম জীবনযাপন পদ্ধতির নির্দেশের ব্যাপারে চারটি উৎসকে মান্যতা দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলঃ কুরআন, সুন্না বা অহল-এ-হাদিস (হজরত মহম্মদের নিজের আচরণে যা সিদ্ধ), কিয়াস (ব্যাখ্যা টীকা ভাষ্য ইত্যাদি) এবং ইজমা (বিদ্বানদের সর্বসম্মত ব্যাখ্যা)।  

    এখন ইউনিফর্ম সিভিল কোড মানে — ওইসব বিভিন্ন আইন বাতিল করে সবার জন্য কোন ধার্মিক রেফারেন্স ছাড়া একটাই আইন চালু করা।

    আচ্ছা, তাতে অসুবিধা কী? বেশ আধুনিক এবং প্রগতিশীল শোনাচ্ছে।

    ধর্মনিরপেক্ষ আধুনিক ভারতে এরকমটা হওয়ারই কথা তো! অসুবিধেটা কোথায়?

    সংবিধান সভার আর্টিকল ৪৪ এ নেহরুজি এমনই কিছু বলেছিলেন কিনা?

    -- বলেছিলেন বটে, কিন্তু অসুবিধেটাও তখনই স্পষ্ট হয়েছিল। কন্সটিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলি বা সংবিধান প্রণয়ন সভার ২৩ নভেম্বর, ১৯৪৮ এর বিতর্কটি দেখলেই বোঝা যাবে।

    বোম্বাই থেকে কংগ্রেসের নির্বাচিত প্রতিনিধি স্বাধীন দেশের জন্যে ধর্মের অনুশাসনের উর্দ্ধে উঠে একটি সমান নাগরিকতার পক্ষে যুক্তি দেন। বিরুদ্ধে মাদ্রাজ এবং বিহারের প্রতিনিধিরা বলেন – এতে ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং বিবিধতা নষ্ট হবে। ঐক্য এবং একরূপতা এক কথা নয়।

    ওঁরা উদাহরণ দিয়ে বললেন — বিশাল দেশ ভারতবর্ষে ভৌগলিক এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত। পূবে আসামে এত বৃষ্টি হয়, কিন্তু পশ্চিমে রাজস্থানে খটখটে মরুভূমি। উত্তরে বরফ পড়ে, হাড়কঁপানো শীত। কিন্তু দক্ষিণে শীত সেভাবে টের পাওয়া যায় না।

    শেষে একবছর পরে ১৪ নভেম্বর, ১৯৪৯ সালে সংবিধান সভার এই বিষয়ে বিতর্ক সমাপ্ত করে নেহরু বললেন — তাড়াহুড়ো না করে এই প্রগতি জনতার উপর চাপিয়ে না দিয়ে ধীরে ধীরে জনতার মধ্যে চেতনার বিকাশ ঘটিয়ে ওদের সম্মতি নিয়ে ট্র্যাডিশনে পরিবর্তন আনতে হবে। এবং, ওঁর পরামর্শ মত ইউনিফর্ম সিভিল কোডের ধারণাটিকে সংবিধানের ডায়রেক্টিভ প্রিন্সিপলের (মার্গদর্শী সিদ্ধান্ত) অধীনে আর্টিকল ৪৪ এ নিচের শব্দে বাঁধা হলঃ

    Article 44. Uniform civil code for the citizens.
    The State shall endeavour to secure for the citizens a uniform civil code throughout the territory of India.

    ঠিক আছে, কিন্তু করে ফেলতে কিসের অসুবিধে? সত্তর বছর হয়ে গেল যে!

    -- দেখুন, হিন্দুদের স্মৃতিশাস্ত্রে বিহিত আট রকমের বিয়ের মধ্যে শুধু ‘প্রাজাপত্য’ই আজকাল চলছে। এতে বাবা বা তাঁর অবর্তমানে পরিবারের কোন গুরুজন ‘কন্যাদান’ করে। আর বিয়ের কার্ডে প্রজাপতির ছবি এঁকে ‘প্রজাপতয়ে নমঃ’ লেখা থাকে। প্রজাপতির নির্বন্ধে ডিভোর্সের কথাই ওঠে না, জন্ম-জন্মান্তরের বন্ধনে হাঁসফাস করলেও।

    অবশ্য আজকাল যেটাকে লাভ ম্যারেজ বলা হয় সেটা মনু’র গান্ধর্ব বিবাহের (বর কনে নিজেদের সম্মতি বা পছন্দের হিসেবে) আধুনিক রূপ মাত্র।

    তবে ইদানীং হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্টে কিছু সংশোধন হয়েছে। তাই সময়ের দাবিতে কিছু শর্ত সাপেক্ষে ডিভোর্সের সুযোগ রয়েছে। এই বিয়ের অনুষ্ঠানে সপ্তপদী গমন এবং যজ্ঞ একটি আবশ্যিক অনুষ্ঠান। আর রয়েছে (হিন্দি বলয়ে) সাতটি শপথ (সাতোঁ বচন) নেওয়ার কথা, যেমন পরস্পরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা, ভাত-কাপড়ের দায়িত্ব নেওয়া, ইত্যাদি।

    কিন্তু মুসলিম বিয়ে হল পিওর কন্ট্র্যাক্ট। বিয়ে মসজিদে না হয়ে কারও বাড়িতে (কন্যার ঘরে) হয়। পুরোহিতের স্থানে কাজি বসেন বটে, তবে পাঁচ জন সাক্ষী রেখে কন্যাকে বসিয়ে তিনবার জিজ্ঞেস করা হয় — আপনি কি অমুককে কবুলনামায় লেখা শর্ত অনুযায়ী জীবনসঙ্গী হিসেবে স্বীকার করতে রাজি? 

    কন্যা তিনবার ‘কবুল’ বললে একই কন্ট্র্যাক্টের পাঁচ কপিতে ওরা দুজন, কাজি এবং সাক্ষীদের সইসাবুদ হয়ে গেলে বিয়ে সম্পন্ন হয়। ওদের দুজন এবং সাক্ষীদের কাছেও একটি করে ওই নিকাহ্‌নামা বা চুক্তির কপি থাকে। তাতে কন্যার সিকিউরিটি হিসেবে পূর্বনির্ধারিত ‘দেনমোহর’ কত টাকা তার উল্লেখ থাকে।

    আমি এক মুসলিম কলিগের ছোট ভাইয়ের বিয়েতে সাক্ষী একজন কম পড়ে যাওয়ায় এন্ট্রি পেয়েছিলাম এবং সই করার পরে এক কপি (বেশ রঙীন কাগজে) পেয়েছিলাম।

    চুক্তি বলেই মুসলিম ম্যারেজ অ্যাক্টে তিন রকমের তালাকের প্রথা রয়েছে — আহসান, হাসান, এবং বিদ্যৎ। 

    ভাববার সময় না দিয়ে যখন মর্জি তখন তিনবার ‘তালাক’ বলে স্ত্রীকে ঘরের বাইরে করে দিলাম - এটাই ওই বিদ্যৎ তালাক। এটা প্রথাসিদ্ধ কিন্তু শরিয়ত অনুমোদিত নয়, তাই অধিকাংশ মুসলিম দেশে এই রকম তালাক উঠে গেছে।

    ভারতেও সুপ্রীম কোর্টের রায় মেনে আইন করে শুধু ওই তালাক-এ-বিদ্যৎ নিষিদ্ধ হয়েছে, বাকি নিয়ম যথাবৎ আছে।

    স্বামী তালাক দিলে ওই দেনমোহর বিবিকে ফেরত দিতে হবে। বাস্তবে কী হয় সেটা অন্য প্রসংগ।

    একটা কথা; ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী মুসলিম মেয়ে কোন অন্য ধর্মের ছেলেকে বিয়ে করতে পারে না। তবে মুসলিম ছেলে একেশ্বরবাদী ধর্মের (ক্রিশ্চান ও ইহুদী) মেয়েকে বিয়ে করতে পারে, কিন্তু কোন বহুদেববাদী ধর্মের ( হিন্দু) মেয়েকে নয় (কুর্‌আন, সুরা ৫.৫)।

    ক্রীশ্চান ম্যারেজ অ্যান্ড ডিভোর্স অ্যাক্টের (১৮৭২) অনুষ্ঠান চার্চে হতেই হবে। কিন্তু ইসলাম ও ক্রিশ্চানিটি দুটোই আব্রাহামিক ধর্ম, তাই অনুষ্ঠানে কিছুটা মিল রয়েছে। পাদ্রী সবার সামনে ব্রাইডকে তিনবার জিজ্ঞেস করে সম্মতি পেলে পরমপিতা পরমেশ্বরের আশীর্বাদে বা দৈব ইচ্ছায় ওই জোড়াকে তখন বিধিসম্মত স্বামী-স্ত্রী বলে ঘোষণা করেন। তারপর বলেন – এখন তোমরা একে অপরকে চুমো খেতে পার।

    তখন ওরা সবার সামনে একে অপরকে চুমো খায়, ব্যস্‌।

    হিন্দুদে্র শুধু মালাবদল হয়, সবার সামনে চুমো-টুমো খাওয়ার সুযোগ নেই।

    এবার বলুন, এই তিনরকমের বিয়ের আইন তুলে দিয়ে কী করতে চান? কেমন কোড আনতে চান?

    চুমো খাওয়া তুলে দেবেন? নাকি সবাইকেই ভবিষ্যতে আইন মেনে চুমো খেতে হবে?

    সাক্ষীসাবুদ-দেনমোহর করে রীতিমত চুক্তিপত্রে সই করে বিয়ে দেওয়া তুলে দেবেন? নাকি সবাইকেই ওইরকম করতে হবে?

    সপ্তপদী, যজ্ঞ, অরুন্ধতী নক্ষত্র দেখানো তুলে দেবেন? নাকি সবাইকেই তাই করতে হবে?

    আরও আছে। হিন্দু তেলুগু সম্প্রদায়ে মামাতো ভাইবোনের মধ্যে বিয়ে সবচেয়ে উত্তম সম্বন্ধ ধরা হয়। আমার এক কলিগ তিন ভাই। ওরা ওদের আপন মামার মেয়েদের বিয়ে করেছে।

    এটা কি বাদ যাবে? নাকি সবাইকে মামাতো পিসতুতো ভাইবোনের মধ্যে বিয়ে করতে হবে?

    মুসলমানদের মধ্যেও তুতো ভাইবোনের মধ্যে বিয়ে করার চল আছে। ওদের হয়তো অসুবিধে হবে না? কিন্তু আমাদের?

    মৈত্রী কড়ার (Friendship Contract):

    সত্তরের দশকের গুজরাতে কোন এক প্রাচীন ট্র্যাডিশনের ধুয়ো তুলে ঊচ্চবর্ণের হিন্দুদের মধ্যে শুরু হল মৈত্রী কড়ার। এর মানে দুজন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়ে সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসে গিয়ে ১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে এগ্রিমেন্ট বানিয়ে একসঙ্গে লিভ টুগেদার করতে পারে — আশা এই যে ওরা কিছুদিন পরে বিয়ে করবে।

    হিন্দু কোডে কোথাও এমন কোন টেম্পোরারি বিয়ের কথা বলা নেই। কিন্তু আইন এর প্রতিবন্ধক নয়। শুধু ছ’বছর আগে দুই ছোটবেলার সাথী (ছেলে মুসলিম, মেয়ে হিন্দু) ওই কড়ার করে বাধা পেয়ে শেষে গুজরাতের হাইকোর্টে গিয়ে ২৫ নভেম্বর, ২০১৬ রায়ে অনুমোদন আদায় করায় গুজরাতে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের টনক নড়ল। শেষে কি আমাদের ঘরের মেয়েরা শ্বশুরবাড়ি গিয়ে মাছ-মাংস রান্না করতে বাধ্য হবে? [1]

    আজকে সমান আচার সংহিতা শুরু হলে মৈত্রী কড়ার বন্ধ হবে নাকি?

    তারপর অ্যান্থ্রোপলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার হিসেবে ভারতে ৪৬০০ আদিবাসী সম্প্রদায় আছে যাদের পূজার্চনা এবং বিবাহ সংস্কারের নিয়ম আমাদের থেকে ভিন্ন। ওদের সংস্কৃতিকেও কি দুরমুশ করে আমাদের মত করতে হবে?

    -- ভাল জ্বালা! তার চেয়ে বিয়ের জন্যে এমন একটা আইন করা যায় না যাতে দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়ে, নিজেদের জাত ধর্ম বাবা-মার অনুমতির তোয়াক্কা না করে ধর্মের দোহাই না দিয়ে বিয়ে করতে পারে? তাহলেই তো ল্যাটা চুকে যায়।

    সে আইন তো কবেই হয়ে গেছে — স্পেশ্যাল ম্যারেজ অ্যাক্ট ১৯৫৪। অর্থাৎ হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্টের (১৯৫৫) একবছর আগে। তাতে শুধু ছেলের বয়েস ২১ হতে হবে, আর মেয়ের ১৮। তবে প্রধানমন্ত্রী বলছেন শিগগিরই মেয়েদের বয়েসও আইন করে বাড়িয়ে ২১ করে দেওয়া হবে, ভাল কথা।

    তফাৎ হল — হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্টে আগে বিয়ে, পরে রেজিস্ট্রি। স্পেশ্যাল অ্যাক্টে আগে দরখাস্ত দিলে রেজিস্ট্রার দেবে একমাসের নোটিস, তারপরও যদি মিয়া-বিবি রাজি থাকে, তবে একই সঙ্গে রেজিস্ট্রি এবং বিয়ে।

    তাহলে আর হৈ চৈ কিসের?

    কারণটা রাজনৈতিক, পরে আসছি। আগে সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে বলি।

    হিন্দু ও মুসলিম কোডে মেয়েদের সম্পত্তির অধিকার

    হিন্দু কোড বিলে আগো মেয়েদের পৈতৃক সম্পত্তিতে কোন অধিকার ছিল না। প্রথমে সংশোধিত হয়ে মেয়েদের বসবাসের অধিকার স্বীকৃত হল, কিন্তু মালিকানা হক নয়। পরে ২০০৫ সালের সংশোধনে ভাই এবং বোনের সমান অধিকার স্বীকৃত হল। তারপর ২০২২ সালের একটি রায়ে সুপ্রীম কোর্ট বললেন যে বিবাহিত মেয়েরাও ভাইয়ের সমান অংশীদার, সমান ভাগ পাবে।[2]

    মুসলিম কোডে কিন্তু প্রাচীন কাল থেকেই সম্পত্তিতে বাবা-মায়ের পৈতৃক এবং স্বোপার্জিত সম্পত্তিতে মেয়েদের অধিকার স্বীকৃত, সে বিবাহিত হলেও।  তবে সবসময় সেটা ছেলেদের সমান ভাগ নয়, কখনও ১/২, কখনও ১/৪।

    ব্যাপারটা বেশ জটিল। যখন আইনের স্নাতক স্তরের পরীক্ষায় বসেছিলাম তখন আমরা সবাই ভয় পেতাম মুসলিম সম্পত্তির ভাগ-বাঁটোয়ারার প্রশ্নকে। তাতে খেয়াল করে ভগ্নাংশের অংক কষতে হত।

    -- যাকগে, এসব জটিল ব্যাপারে আপনার আমার মত হরিদাস পালেদের মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। এর জন্যে উপযুক্ত সংস্থা হল ল’ কমিশন। ওদের দিয়েই এসব আইন ও ট্র্যাডিশনের প্যাঁচ খুলে একটি আধুনিক সিভিল কোডের খসড়া বানানো হোক। মিঃ আম্বেদকর, নেহেরুজী, প্যাটেলজী – সবার আত্মা শান্তি পাক। অসমাপ্ত কাজ পুরো করা হোক।

    ল’ কমিশন

    গোড়াতেই বলা দরকার যে ল’ কমিশন কোন সাংবিধানিক (constitutional) অথবা বৈধানিক (statutory) সংস্থা (body) নয়। এটি বিশুদ্ধ প্রশাসনিক (executive) সংস্থা যা ভারত সরকারের নির্দেশে কোন নিশ্চিত ইস্যুতে এবং নির্ধারিত সময়ের (tenure) জন্য গঠিত হয়।

    এর দায়িত্ব হল আইনের সংস্কারের ব্যাপারে রিসার্চ করে সরকার চাইলে বা স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে (suo moto) পরামর্শ দেওয়া।

    বর্তমান ভারত সরকার ইউসিসি’র বিষয়ে ২০১৬ সালে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জাস্টিস বি এস চৌহানের অধ্যক্ষতায় ২১ তম ল’ কমিশন গঠন করে।

    উনি এ’ব্যাপারে আম-নাগরিক এবং সিভিল সোসাইটির অভিমত এবং পরামর্শ জানতে চেয়ে ৩/১০/২০১৬ তারিখে এক ১৬ বিন্দু প্রশ্নাবলী  সম্প্রচারিত করেন। নভেম্বর মাসের মধ্যে প্রায় দশ হাজার উত্তর এবং মতামত পেয়ে বেজায় খুশি হয়ে প্রেসকে জানিয়েও দেন।

    কিন্তু বুঝতে পারছিলেন যে ব্যাপারটা এত সোজা হবে না। তারপর জাস্টিস চৌহান ২০১৮ তে কোন রিপোর্ট পেশ না করেই অবসর নেন।
      
    তারপর গত চার বছর ধরে কমিশনের কোন চেয়ারম্যান না থাকায় ব্যাপারটা ন যযৌ ন তস্থৌ হয়ে থেমে ছিল।

    অবশেষে ভারত সরকার গত ৮/১১/২২  তারিখে কর্ণাটক হাইকোর্টের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত চিফ জাস্টিস ঋতুরাজ অবস্থী-র অধ্যক্ষতায় ২২তম ল’ কমিশন গঠন করেছে। জাস্টিস অবস্থী কর্ণাটকের বিবাদিত হিজাব মামলার রায়দাতা।

    আশা করা যাচ্ছে আগামী মার্চ ২০২৩ নাগাদ ল’ কমিশন ইউসিসি ইস্যুতে তাঁদের রেকমেন্ডেশন বা সুপারিশ ভারত সরকারকে জানিয়ে দেবেন।

    কিন্তু তাই যদি হয় তাহলে আমরা মার্চ অব্দি অপেক্ষা না করে এখন থেকেই চেঁচামেচি করছি কেন? উত্তরটাও সহজ, রাজনীতি।

    সমান নাগরিক আচার সংহিতা বা ইউনিফর্ম সিভিল কোড (ইউসিসি) ও রাজনীতি

    আসলে সমান আচার সংহিতা নিয়ে এত আগ্রহের পেছনে রয়েছে আরেকটি ইস্যু – মুসলিম সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ।

    মোদীজি ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই বিজেপি ও আরএসএসের ঘোষিত তিনটে এজেন্ডা ছিল – রাম মন্দির নির্মাণ, সংবিধান থেকে ৩৭০ ধারা বাতিল এবং ইউনিফর্ম সিভিল কোড। এর জন্যে দরকার ছিল বড় মাপের সংখ্যাগরিষ্ঠতার। সেটা পাওয়া গেল ২০১৯ সালের মে মাসের সাধারণ নির্বাচনে।

    ব্যস্‌, ব্রুট মেজরিটির জোরে ৫ অগাস্ট ২০১৯ সালে বাতিল হল আর্টিকল ৩৭০, অবশ্য নাগাল্যান্ড, মিজোরাম ইত্যাদির আলাদা আইন, আলাদা পতাকা নিয়ে আর্টিকল ৩৭১ আগের মতই রয়ে গেল।

    তারপর ৯ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে অযোধ্যা মামলার রায় বেরোল। ৫ অগাস্ট ২০২০তে সংসদে মন্দির নির্মাণের জন্য বিশেষ ট্রাস্ট গঠনের ঘোষণা হল।

    বাকি রইল একটাই— সমান নাগরিক আচার সংহিতা, ইউনিফর্ম সিভিল কোড।

    এতসব চেঁচামেচির একটাই লক্ষ্য — মুসলিম আইনে যে চারটে বিয়ের অনুমোদন রয়েছে সেটা বাতিল করে সবাইকে এক পত্নীব্রতে থাকতে বাধ্য করা। বাকি সম্পত্তির অধিকার-টার যাক চুলোয়।

    ওদের যুক্তিঃ বেশি পত্নী মানেই বেশি সন্তান; এর মানে মুসলিমদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি। তার মানে কোন এক ভবিষ্যতে ওরা মেজরিটি হবে এবং আমাদের দেশকে ফের ভাগ করবে।

    এটা খোলাখুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় বলা হয় এবং বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক নেতারা এটাকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মোড়কে গম্ভীর মুখে বলে থাকেন।

    বিজেপি সাংসদ এবং আরএসএসের তাত্ত্বিক নেতা রাকেশ সিনহা সংসদে জুলাই ২০১৯ সালে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি প্রাইভেট মেম্বার্স বিল পেশ করলেন।
     
    প্রধানমন্ত্রী সে’ বছর স্বাধীনতা দিবসের অভিভাষণে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বের কথা বলে এটাকে ‘a form of patriotism’ আখ্যা দেন। [3] অর্থাৎ যাদের সন্তান বেশি তারা দেশকে ভালবাসে না।

    উনি সেটা বলতেই পারেন।

    মোদীজির ভাষণের একই দিনে ১৫ই অগাস্ট, ২০১৯শের  স্বাধীনতা দিবসে আসাম সরকার ঘোষণা করে দিল যে যাদের দুটোর বেশি সন্তান রয়েছে তারা সরকারি চাকরি পাবে না এবং স্থানীয় স্তরে কোন নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবে না। [4]

    অবশ্য এনডিএ জোট থেকে বেরিয়ে এসে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার স্বাধীনতা দিবসের অভিভাষণে বলেছেন যে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য কোন নতুন আইনের দরকার নেই। ওঁর একটিই সন্তান।

    এদিকে প্রাক্তন মন্ত্রী এবং ইউপির মুজফফরনগর কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত সাংসদ সঞ্জীব বালিয়ান সেই ২০১৯ থেকে নিয়মিত সংসদে বলছেন ভারতে জনসংখ্যা যে হারে বেড়ে চলেছে যে রিসোর্সে টান পড়ছে, করদাতাদের উপর বোঝা বাড়ছে, এখনই ১৩৫ কোটি ছাড়িয়ে গেছে, ভবিষ্যতে কী হবে? ওঁর আবেদনে ১২৫ জন সাংসদের সই ছিল।
     
    তবে  ডঃ রাকেশ সিনহার (আরএসএস বুদ্ধিজীবি এবং রাজ্যসভার মনোনীত সদস্য) তিনবছর আগে পেশ করা বিলটিকে এ’বছর এপ্রিল মাসে স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মনসুখ মণ্ডাভিয়া অপ্রয়োজনীর বলে মতপ্রকাশ করেন।

    ওনার মতে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির দর আশংকাজনক নয়। জোর করে প্রতি পরিবার দুই সন্তানের লক্ষণরেখা টেনে দেওয়ার দরকার নেই। সরকারের প্রচেষ্টায় জনতা এখন অনেক জাগরুক, বাকিটুকু শিক্ষার আরও প্রসার হলেই হয়ে যাবে।

    তখন রাকেশ সিনহা বিলটি প্রত্যাহার করে নেন। [5]

    কিন্তু উত্তরপ্রদেশ সরকার দুই সন্তানকে বাধ্যতামূলক করার খসড়া বিল জুলাই ২০২১ এ বিধানসভায় পেশ করে।

    তবে গত বছর জুলাই মাসে সংসদে  দুই বিজেপি এমপির প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী  জানিয়েছিলেন যে NFHS III(2005-06) সার্ভে হিসেবে TFR 2.7 ছিল, তারপর NFHS IV (2015-16) [6] অনুযায়ী কমে 2.2 হয়ে গেছে। কাজেই আইন করে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার দরকার নেই।

    তারপর এ’বছর জুন মাসে এক সাংবাদিককে স্বাস্থ্য মন্ত্রক থেকে জানানো হয় যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মণ্ডাভিয়া কোনরকম জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিল আনার কথা ভাবছেন না যেহেতু NFHS V অনুযায়ী ভারতের টোটাল ফার্টিলিটি রেশিও স্থায়িত্ব দর ২.১ থেকে কমে ২.০ হয়ে গেছে। [7]

    অথচ এ’বছর গত ৯ ডিসেম্বর তারিখে দু’জন বিজেপি এমপি নিশিকান্ত দুবে এবং রবিকিষণ লোকসভায়  প্রাইভেট মেম্বার্স পপুলেশন কন্ট্রোল বিল পেশ করেছেন। রবিকিষণ, ভোজপুরি লোকগায়ক এবং গোরখপুরের বিজেপি এমপি, ওঁর তিন মেয়ে এক ছেলে।

    এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে উনি বলছেন এর জন্যে কংগ্রেস দায়ি। [8] ওরা যদি আগেই এই বিল আনত তাহলে নাকি  রবিকিষণ আগের থেকে সতর্ক হয়ে যেতেন।

    মুশকিলে পড়লাম, কে ঠিক বলছেন?

    প্রধানমন্ত্রী না স্বাস্থ্যমন্ত্রী, কে ঠিক?

    দুই বিপরীত মেরুর বক্তব্য বুঝতে হলে কিছু সরকারী ডেটা দেখুন। প্রথমে বিগত ২০১১ সালের সেন্সাস অনুয়ায়ী আমাদের দেশে ধর্মভিত্তিক নাগরিকদের  সংখ্যা ও অনুপাতঃ   

    তালিকা -১  

    সম্প্রদায়জনসংখ্যার প্রতিশত
    হিন্দু৭৯.৮০
    ইসলাম১৪.২৩
    খ্রীস্টান২.৩০
    শিখ১.৭২
    অন্যান্য১.৯৫
    মোট১০০.০০

    National Family Health Survey (NFHS-5) অনুযায়ী ভারতের গড় ফার্টিলিটি রেশিও ২.২ থেকে কমে ২.০ হয়েছে। আন্তর্জাতিক রিপ্লেসমেন্ট রেশিও হল ২.১। অর্থাৎ যে অনুপাতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি (নতুন জন্ম-নতুন মৃত্যুর সংখ্যা কাটাকুটি করে যা পাওয়া যায়) স্থির থাকে। তার মানে এখন ভারতের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার আশংকাজনক নয়।

    মাত্র পাঁচটি স্টেটের টিএফআর ন্যাশনাল অ্যাভারেজের এবং রিপ্লেসমেন্ট রেশিওর থেকে বেশি। তারা হল—

    বিহার (২.৯৮), মেঘালয় (২.৯১), উত্তরপ্রদেশ (২.৩৫), ঝাড়খণ্ড (২.২৬) এবং মনিপুর (২.১৭)। [9]

    এর কোনটিই মুসলিম বহুল রাজ্য নয়। অথচ, মুসলিম প্রধান জম্মু-কাশ্মীর (১.৩) এবং বঙ্গে (১.৬) টিএফআর ন্যাশনাল গড়ের থেকে অনেক কম।

    তার মানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির দর ধর্ম নির্ভর নয়, বরং শিক্ষার হার এবং জীবনযাপনের স্তরের উপর নির্ভরশীল।

    এবার ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সমস্ত জনগোষ্ঠীতে সন্তানোৎপাদনক্ষম বয়সের মহিলার সন্তান সংখ্যা কত নিচের তালিকায় দেখুন।

    তালিকা-২

    Total Fertility Rate (TFR) by Religion, average number of children by woman of reproductive age

    ReligionAverage number of children
    Hindu1.94
    Muslim2.36
    Christian1.88
    Sikh1.61
    Buddhist1.39
    Jain1.66
    Others2.15

    সূত্রঃ National Family Health Survey (NFHS-5)

    সিদ্ধান্তের ভার পাঠকের উপর ছেড়ে দিলাম। আমি অংকে কাঁচা। তালিকা একের জনসংখ্যাকে মূলধন এবং TFR  কে সূদের হার ধরে কম্পাউণ্ড ইন্টারেস্টের ফর্মূলা লাগিয়ে আঁক কষে বলুন তো এভাবে চললে কত বছর পরে মুসলিম জনসংখ্যা হিন্দুদের ছাড়িয়ে যাবে?

    শেষপাতেঃ

    বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলো বসে নেই। বিশেষ করে যেখানে একের পর এক নির্বাচন। উত্তরাখণ্ডে রিটায়ার্ড জাস্টিস রঞ্জনা দেশাইকে অধ্যক্ষ করে রাজ্য ল’ কমিশন কাজ শুরু করে দিয়েছে। হিমাচলের বিজেপি সরকার দু’মাস আগে বলেছিল – নির্বাচনে জিতলে ওরা রাজ্যে ইউসিসি চালু করবে। চিঁড়ে ভেজে নি। গুজরাতে মহারাস্ট্রে মধ্যপ্রদেশে এবং গুজরাতে শোনা যাচ্ছে ইউসিসি নিয়ে কমিটির কথা এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণেরও।

    কিন্তু সুপ্রীম কোর্টের প্রখ্যাত অ্যাডভোকেট সঞ্জয় হেগড়ে বলছেন — ভিন্ন রাজ্যের ভিন্ন সংস্কৃতি। তাহলে তো কোন প্রথা, ধরুণ বিয়ে এক রাজ্যে বৈধ হবে তো অন্য রাজ্যে অবৈধ। কিন্তু এটি তো গোটা দেশের জন্যে ‘ইউনিফর্ম’ হওয়ার কথা।

    নিন্দুকে বলছে — আরে এগুলো ইলেকশনের আগে জিগির তোলা। হবে সেই মার্চে কেন্দ্রীয় ল’ কমিশনের রিপোর্ট এলে।

    দিন গুণছি।

    =======================================================================
    [1] ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৬।
    [2]  সুপ্রীম কোর্ট,অরুণাচল গৌন্ডার বনাম পন্নুস্বামী, জানুয়ারি ২০২২।
    [3]  দি স্টেটস্‌ম্যান, ১৬ অগাস্ট, ২০১৯।  
    [4]  দি হিন্দু, ১৬ অগাস্ট, ২০১৯।
    [5] ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ২ এপ্রিল, ২০২২।
    [6] হিন্দুস্থান টাইমস্‌ ২৪ জুলাই, ২০২১।
    [7] টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ৯ জুন, ২০২২।
    [8] ঐ, ৯ ডিসেম্বর, ২০২২।
    [9]  টাইমস্‌ অফ ইণ্ডিয়া, ৬ মে, ২০২২।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ | ৭১৪১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ranjan Roy | ২১ ডিসেম্বর ২০২২ ২২:৪২514755
  • UCC
    না ভাই.  দুটো কেস সমান নয়. 
    আমার লেখার প্রথম ভাগ পড়ুন. 
    অবশ্যই সিভিল ও ক্রিমিনাল JURISPRUDENCE আলাদা.  একটা ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির বিবাদ. 
    অন্য টি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধ.. 
    সময়মত বাড়ি ভাড়া না দেওয়া,  ঋণ নিয়ে ফেরত  না দেওয়া  আর মানুষকে মেরে ফেলা, আহত করা,  রেপ করা কি সমপর্যায়ের?
    তাই সিভিল জুরিসপ্রুডেন্স আলাদা, ক্রিমিনাল  জূরিসপ্রুডেন্স আলাদা। এদের প্রমাণের মাপকাঠি আলাদা। 
    সিভিল কেসে যেখানে রিজনেবলি প্রোব্যাবল দেখালে কাজ চলে যায়, সেখানে ক্রিমিনাল কেসে beyond all doubt প্রমাণ করতে হয়. 
    তাই শাস্তিও  আলাদা.. 
    আপেল ও কমলা লেবু দুটোই ফল.  শুধু এই basis এ  তুলনা করলে হবে?
    হাওড়া স্টেশন থেকে দুটো ট্রেন একই সময়ে ছাড়লো .
    একটা Bombay মেইল,  অন্য টি দিল্লী.
    ফল তো পৃথক হবেই ভাই. 
    একটার উদ্দেশ্য নাগরিকদের সিকিউরিটি দেয়া,  অন্যটি সামাজিক রীতি রেওয়াজ. 
    বাকি বিজনেস laws  তো সবার জন্যে সমান. 
     
  • aranya | 2601:84:4600:5410:4453:d3b5:3612:***:*** | ২১ ডিসেম্বর ২০২২ ২৩:৩১514758
  • 'UCC' দরকার নেই। 
    কিন্তু সব রকম ধর্মীয় বিবাহ আইন রদ করে, শুধু সিভিল ম্যারেজ আইন যেটা আছে, সেটাই চালু রাখলে সমস্যা কী? 
  • Ranjan Roy | ২১ ডিসেম্বর ২০২২ ২৩:৪২514759
  • অরণ্য 
    ধর্মীয় বিবাহ ছাড়া বিশুদ্ধ সিভিল ম্যারেজ আইন তো আছেই.  কিন্তু যার মন চাইবে সে তার পারিবারিক কাঠামোর রেওয়াজ হিসেবে বিয়ে করতে পারবেন  না? সেই অপশন থাকবে  না?
    কতজন হিন্দু নারী পুরুষ সপ্তপদী যজ্ঞ না করে বিয়ে ঠিকমত হয়েছে ভাববেন?
    আর শ্রাদ্ধ তর্পণ?
  • র২হ | 2607:fb90:ac95:d98b:62:6c6a:73da:***:*** | ২১ ডিসেম্বর ২০২২ ২৩:৪৬514760
  • সেসব করুন না। কিন্তু আইনে সেসব থাকতে হবে কেন? সামাজিক প্রথা হিসেবে তো আছেই।
     
    শিশুর অন্নপ্রাশনের পদ্ধতি সংবিধানে থাকবে নাকি? পৈতে খৎনা ব্যাপ্টিজম? কিন্তু জন্ম নথিভুক্ত করতে হবে - সেটা থাকবে।
  • aranya | 2601:84:4600:5410:4453:d3b5:3612:***:*** | ২১ ডিসেম্বর ২০২২ ২৩:৫৮514761
  • ধর্মে তো অনেক রিগ্রেসিভ রীতি নীতি থাকে। রাষ্ট্র যদি আইন করে সেসব কে মান্যতা দেয়, তাহলে তো মুশকিল 
     
    ধরুন, হিন্দু বিবাহ আইনে যদি কন্যাদান থাকে, এটা কিভাবে রাষ্ট্র সমর্থন করতে পারে? মুসলিম  বিবাহ আইনে যদি এমন টা থাকে যে ছেলেরা ৪ টে বিয়ে করতে পারবে, কিন্তু মেয়েরা পারবে না - রাষ্ট্র কি করে আইনী ভাবে তাকে সমর্থন দিতে পারে? 
  • যোষিতা | ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ০১:৩৮514762
  • আহা বাদ দিন না। যা সব মণিমুক্তো বেরোচ্ছে এই আলোচনায় যে শিউরে উঠতে হয়।
  • যোষিতা | ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ০৩:০৩514763
  • পৃথিবীর যে কোনও দেশে সব নাগরিকদের জন্য একই আইন। বিবাহের আচার যে যার মতো করুক না কেন, আইন একটাই থাকে। পলিগ্যামি কারো জন্য লিগ্যাল, কারো জন্য ইল্লিগ্যাল ( ভোটব্যাংক) এটা হয় না। বিয়ের ন্যূনতম বয়সের ক্ষেত্রেও তাই হয়, ধর্ম বেছে বেছে আলাদা নিয়ম নয়।
    এবার এত কিছুর পেচনে যেটা, সেটা হচ্ছে সন্তান বংশ উত্তরাধিকার। সেখানেও ধর্মের বেসিসে একেকজন একেকরকম পাচ্ছে, ছেলে বেশি পাবে, বউ কম, মেয়ে কম। যারা এগুলোতে সায় দেয় আপাতভাবে মুসলমানদের কত্তো ভালবাসি বোঝাতে, তারা দ্বিচারিতায় ভরা।
    সন্তান সন্তানই। বিবাহ করে হোক, কি না করে, বা দত্তক নিয়ে, পুং সন্তান, কি কন্যা, কি অন্য জেন্ডার, সবার সমান অধিকার থাকে ভদ্র দেশগুলোয়। বাপমায়ের ধর্মের বেসিসে নয়। 
    আর একটা ল্যাংবোট বলেছিল কোনও কোনও শিশুর ইস্কুলে ভর্তি বা পাসপোর্ট দেওয়া বন্ধ করতে চায়, তা সেই ল্যাংবোট এতটাই দুর্গন্ধময় পাদ পেচ্ছাপের গন্ধ ভরা ল্যাংবোট, যে তাকে ভদ্রসমাজের অংশ হিসেবে ধরাই ঠিক নয়। সময় যাক, ও ঠিক হিসেব পেয়ে যাবে।
  • যোষিতা | ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ০৩:১৫514764
  • অভিন্ন দেওয়ানি আইন সবার জন্য প্রযোজ্য হওয়া উচিত। আশা করা যায় সেই আইন আধুনিক দুনিয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়েই হবে, মানুষে মানুষে বিভেদ বজায় রেখে নয়। কলোনিয়াল হ্যাংওভার যারা কাটিয়ে উঠতে পারে নি তাদের দিন শেষ হতে বেশি দেরি নেই। সবার জন্য এক আইন, এতে যদি কেও আন্ডারএজ মেয়েদের বিয়ে করে, তাহলে ফৌজদারি আইনে রেপের আসামী হবে। যেটা এখন হচ্ছে না শরিয়তি আইনের আন্ডারে। সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্যও ধর্মের আশ্রয় নিতে হবে না। ডিভোর্সের ক্ষেত্রেও সামান্য দেনমোহরের টাকা দিয়ে বা না দিয়ে পার পাওয়া যাবে না।
    ল্যাংবোটের মত পুতিগন্ধময় পাবলিকও তখন চোদ্দবার ভাববে এরকম নোংরা কথা লিখবার আগে। 
  • যোষিতা | ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ০৩:৪৯514765
  • যারা না জেনেই আগড়ম বাগড়ম বকছে তাদের জানা নেই যে দেনমোহর জিনিসটা কী।
    এটা ডিভোর্সেশ সময় দিতে হয় বলে যে ধারণাটা তারা প্রচার করতে চাচ্ছে সেটাও ভুল। বিয়ের সময়েই দেনমোহর দিতে হয়। যারা বাকি রাখে তারা যেটুকু বাকি তা ডিভোর্সের সময় দেয়।
    আইন না জেনেই লম্বা চওড়া লেকচার মারার ফল এটাই। 
  • Ranjan Roy | ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:৪৩514767
  • হুতো এবং অরণ্য  
    বিয়ের ধার্মিক অনুষ্ঠানগুলো সামাজিক রীতি হিসেবে থাকুক, কিন্তু আইনের মোহর না লাগুক এই তো?
    আমার কোন মতভেদ নেই (underlined and in bold font). 
     
    এবার মূল প্রসঙ্গে আসি।
     
    যদি কোন ধার্মিক অনুষঙ্গ ছাড়া বিশুদ্ধ আধুনিক সিভিল কোড হয় তাহলে তো কোন আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্ত আপনারা গাছ দেখছেন,  বন দেখছেন না।
    এই  টইয়ের গোড়ায় জনৈকের বিজেপির ম্যানিফেস্টোর উল্লেখ দেখুন। ট্র্যাফিক বেস্ট প্র্যাক্টিস 
     
    ভাবছেন ওরা সেকুলার ইউনিফর্ম সিভিল কোড আনতে চায়?
    যারা চন্দ্রযান-2 রকেট ছাড়ার সময় বৈজ্ঞানিক কে দিয়ে বৈদিক যজ্ঞ করায়, গীতাকে সমস্ত স্কুলে অবশ্য পাঠ্য করার ওকালত  করে তারা সেকুলার  ইউনিফর্ম আইন চায়?  আপনারা কোলকাতা এবং বিদেশে থেকে হিন্দি বলয়ের গ্রাউন্ড রিয়েলিটির সঙ্গে পরিচিত নন। 
    গ্র্যান্ড ডিজাইন হল অঘোষিত হিন্দুরাষ্ট্র নির্মাণ। 
     
    পদ্ধতি? মুসলিমদের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব কে লুপ্ত করে দেওয়া।
    তাই পঞ্চায়েত জনসভা করে নির্ণয় নেয় মুসলমান দোকান ব্য়কট।
    গুরুত্বের মুসলিমদের খোলা মাঠে নামাজ পড়ার নিষিদ্ধ করা হল।
    কথিত ধর্মগুরু  মুসলিম মেয়েদের  এবং পুরুষদের বিরুদ্ধে হত্যার ডাক দিয়েও জেলে যান না , বরং  ভিডিওটি সবার গোচরে আনা মুসলিম সাংবাদিক  হিন্দুধর্মের অপমান এবং দেশদ্রোহিতার  অভিযোগে গ্রেফতার হন।
    বিলকিস বানো কেসে  শিশুহত্যা  এবং গণধর্ষণের অপরাধীদের সম্বর্ধনা দেওয়া হয়।
    আজ হিন্দুদের রীতিরেয়াজই  নিও- নর্মাল।
    এই প্রেক্ষিত বাদ দিয়ে বিশুদ্ধ আইনের দিক থেকে UCC র চর্চা অর্থহীন। 
     
    মনে রাখবেন, নিবন্ধটি UCC in general এর  নিয়ে  নয়,  বরং  UCC in particular,  অর্থাৎ বর্তমান ভারতে শাসক দল প্রস্তাবিত UCC নিয়ে। 
  • Ranjan Roy | ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:৪৫514768
  • টাইপো:
    ট্র্যাডিশনাল বেস্ট প্র্যাক্টিস। 
  • র২হ | 2607:fb90:ac95:d98b:49f0:2345:5c3a:***:*** | ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:০১514769
  • রঞ্জনদা, গাছ বন প্রেক্ষিত সবই দেখেছি, এই সরকারের চাল বিশ্বাস করা যায় না, সেটা পঁচিশবার বলেওছি।
     
    কিসে অর্থপূর্ণ জানি না, যেকোনরকম উদার বা বামচর্চাই  আমাদের দেশে প্রয়োগের দিক থেকে অর্থহীন হয়ে পড়ছে দেখছি। অন্তত তত্ত্বের দিক থেকে তো সততা দরকার। 
     
    দাবি, মানে যদি কারো কোন দাবি থাকে বা করার মত জোর থাকে তাহলে হয়তো এটা হওয়া উচিত যে ইউসিসি পর্যালোচনা কমিটিতে সব রাজনৈতিক দলের সমান রিপ্রেজেন্টেশন থাকবে এবং শরীয়তির পাশাপাশি মনুবাদী রেফারেন্সও ছাঁটতে হবে।
     
  • র২হ | 2607:fb90:ac95:d98b:49f0:2345:5c3a:***:*** | ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:০৮514770
  • "মনে রাখবেন, নিবন্ধটি UCC in general এর  নিয়ে  নয়,  বরং  UCC in particular,  অর্থাৎ বর্তমান ভারতে শাসক দল প্রস্তাবিত UCC নিয়ে। "
     
    "...BJP reiterates its stand to dra a Uniform Civil Code, drawing upon the best traditions and harmonizing them with the modern times."
     
    তবে হ্যাঁ, এই ডিসক্লেমার আর প্রথম মন্তব্যের ম্যানিফেস্টো - এই দুটি একসঙ্গে করলে মেক সেন্স - দ্বিমত হওয়ার অবকাশ নেই।
  • Amit | 121.2.***.*** | ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ১০:৩৬514771
  • রঞ্জন দা কে প্রশ্ন: 
     
    আলাদা আলাদা ধর্মীয় আইন রাখলে কি সেটা ইউনিটি ইন ডাইভারসিটি তে আদৌ হেল্প করে ? নাকি উল্টে ডিফারেন্ট সম্প্রদায় এর মধ্যে এনমিটি টাকেই আরো বাড়ায় ? অন্যান্য দেশের সাথে তুলনায় এখনো যাচ্ছিনা। কিন্তু ইন্ডিয়ার গত ৭০ বছরের অভিজ্ঞতা কি বলে ? 
  • UCC | 118.179.***.*** | ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ১২:২০514772
  • রঞ্জনবাবু , আমি জানি সিভিল কোড আর ক্রিমিনাল কোড এক নয়। কিন্তু শরীয়াতে বলা  4 টি বিয়া করতে না পেলে যদি ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ  হয় , তাহলে এই এক ই যুক্তিতে  শরীয়তে বলা চুরিতে হাত কাটা শাস্তি না দিলেও ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ।  স্টেট্ কি করবে সেটা আলাদা কথা . কিন্তু মোল্লা দের পার্সপেক্টিভ থেকে দুটোই শরীয়াত এর ভায়োলেশান .  তারা একটা রক্ষার জন্য আন্দোলন করলে আরেকটার জন্য করবে না কেন ?  দুদিকের ভালো ​​​​​​​জিনিস ​​​​​​​খাবো ​​​​​​​বললে ​​​​​​​চলবে ​​​​​​​কেন ?
     
    তাই ​​​​​​​আমার ​​​​​​​প্রস্তাব --- শরিয়তি ​​​​​​​সিভিল ​​​​​​​কোড ​​​​​​​চাইলে --- শরিয়তি ​​​​​​​ক্রিমিনাল ​​​​​​​কোড ​​​​​​​ফ্রি ​​​​​​​তে ​​​​​​​দেওয়া ​​​​​​​হোক ----  হৃদয় ​​​​​​​ঐটুকু ​​​​​​​বড় ​​​​​​​না ​​​​​​​করে ​​​​​​​আরও বড় ​​​​​​​করুন ​​​​​​​:) :)
     
  • Ranjan Roy | ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ১২:৩০514773
  • হুতো
    একদম সহমত। দ্যাট দ্য স্পিরিট!
     
    তবে কোন তত্ত্বের চর্চা, বাম, ডান বা জ্ঞানের, পরিপ্রেক্ষিত বাদ দিয়ে হতে পারে না। আর ইউসিসির মত প্রায়োগিক আইনের ক্ষেত্রে কথাটা আরো প্রযোজ্য।
     
    চারদিকে হিন্দি বলয়ে যেভাবে বিদ্বজনেরা মনুস্মৃতির গুণগান করছেন , ঋষি মনুর মূর্তির স্থাপনের চিন্তা হচ্ছে, তাতে আমি বেশ ভয় পাচ্ছি।
    বলা হচ্ছে মনুস্মৃতি আমাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির অন্য তম বেস্ট ট্র্যাডিশন।
    ইউ সি সি আনা হচ্ছে মেজরিটারিয়ান এজেন্ডা পুশ করতে। 
    সি এ এ দেখ।  মুসলিমদের বিরুদ্ধে কিছু বলা হয় নি তো! আসলে মুসলিমদের কথাই বলা হয় নি। কিন্ত মুসলিম দেশের থেকে পালিয়ে আসা লোকদের নাগরিক করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
    অর্থাৎ মুসলিমরা ধর্মীয় কারণে নির্যাতিত হয় না , শুধু নির্যাতন করে। পাকিস্তানে যে হাজিরা, ইসমাইলি খোলা ইত্যাদি মাইনরিটিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার হয় সে ব্যাপারে কবি নীরব। 
     
     
    আফগানিস্তানের সঙ্গে আমাদের কমন বর্ডার কতটুকু আর মায়ানমারের সঙ্গে?
    কিন্ত লিস্টে আফগানিস্তান আছে, মায়ানমার নেই।
    তেমনি ভ্যানিশ শ্রীলঙ্কার তামিল হিন্দু শরণার্থী বা মুসলিম রোহিঙ্গা।
     
    অমিত 
     দেশের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার একটাই মন্ত্র---- হিন্দু, হিন্দি, হিন্দুস্তান।
    ভাষাগত আবেগ ধর্মের চেয়ে কম নয়। দাঙ্গাও হয়।
    আসামের 1985 চুক্তির মোদ্দা কথা বাঙালী বিরোধ।
     
    সাম্প্রতিক কর্ণাটক, তামিলনাড়ু। মহারাষ্ট্র গোর্খাল্যান্ড দেখুন।
    একতার নামে?
  • Ranjan Roy | ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ১২:৩১514774
  • টাইপো:
    দ্যাটস্ 
  • যোষিতা | ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৩:১১514776
  • বেশি সুবিধা পাবার লোভ এমন জিনিস যে নতু মাকু ল্যাংবোট সবে মিলি এক হয়ে নারীবিদ্বেষী আইন সাপোর্টাচ্ছে। সব শেয়ালের এক রা।
    কেউ চাইল্ড পর্ন অ্যাডিক্ট হয়ে নীতির বুলি আওড়ায়, কেউ এক্স নকু হয়ে চুদুরবুদুরের জন্য উলুত পুলুত, কেউ  গু খেয়ে খেয়ে বিরাট পণ্ডিত।
    থুতু দিই এদের।
  • বিবেচক | 103.76.***.*** | ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৩:১৩514777
  • বিজেপি ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র করতে চায়? না। করতে চায় বলে ঘোষণা করে। করবে বলে অভিনয় করে। মক পদক্ষেপ নেয়। ঘোষণাটি খুড়োর কলের মুলো। তাতেই যা কাজ হওয়ার হয়। কমুনালিটি বাড়ে। ধর্মের ভিত্তিতে বিভেদ বাড়ে। লক্ষ আরো পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকা। সাম্প্রদায়িকতা বাড়ানোর লক্ষে আর এস এস এর দীর্ঘমেয়াদি ধর্মভিত্তিক গ্রাউন্ডওয়ার্ক এদের বাড়তি সহায়ক। সেইস্তরে যারা কাজ করে চলেছে, তাদের উজ্জীবিত রাখতেও কিছু না কিছু খুটখাট তো করে যেতেই হবে।
    মুসলিম সমাজের বৃহদাংশ পিছিয়ে থাকা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আর্থিক অবস্থা, সব বিষয়েই। এই বৃহদাংশের কাছে ধর্ম ও ধার্মিক অনুশাসন, অধিকার, নিয়ম কানুন বড্ডই স্পর্শকাতর। সেখানে হাত পড়লেই আইডেন্টিটি ক্রাইসিস, চরমতম জান কবুল প্রতিরোধ। যাবতীয় মুসলিম মৌলবীরা ক্ষমতা বজায় রাখতে আর মেজরিটি মুসলিম জনগোষ্ঠীকে তাঁবে রাখতে এই জায়গাটা আরও স্পর্শকাতর করে রাখে। যেভাবে আর এস এস হিন্দুদের এই অংশটাকে স্পর্শকাতর করে তোলার কাজ করে চলেছে।
    এতদিন ভারতে যেটা করা হয়েছে, শান্তি ও স্বস্তি বজায় রাখতে, এই ক্ষতস্থানে আরো খোঁচাখুচি না করা। সমাজ এমনিতেই এগোয়, সামাজিক মূল্যবোধ ও প্র‍্যাকটিস আপনা থেকেই সার্বিকভাবেই আধুনিকতার পথে চলে। যেভাবে মেজর মুসলিম সমাজ এমনিতেই বহুবিবাহের বা তিনতালাকের প্র‍্যাকটিস করে না। কিন্তু আইন করে এই ধার্মিক প্রোভিশনটিকে বিলোপ করতে গেলেই সর্বস্তর থেকে প্রতিরোধ জেগে উঠবে। সেই প্রতিরোধ কমুনাল, ধর্মভিত্তিক, আইডেন্টিটি পলিটিক্স। যা হিন্দু পপুলেশনকে ইনসিকিউরিটি দেবে, হিন্দু ভোট ক্লাস্টারাইজ হবে অ্যান্টিমুসলিম (ঘোষিতভাবে) রাজনৈতিক দলের দিকে । ফল দীর্ঘমেয়াদি গদিদখল করে রাখা। 
    সতীদাহের ক্ষেত্রেও তাইই হয়েছিল। সমাজের বেশিরভাগ মানুষই ওই প্রথা পালন করতেন না। কিন্তু আইন করার কথা হতেই সবাই রে রে করে তেড়ে উঠল। সেক্ষেত্রে সংস্কারক হিন্দু সমাজেরই একজন মাত্র হওয়ায় সব রোষ তার বিরুদ্ধে একত্র হয়েছিল। তাকে সাপোর্ট করা প্রশাসন গৌন ছিল, যেহেতু এই রদ করার যুক্তিকাঠামোটা একজন মানুষই গড়ে দিয়েছিল। মুসলিম সমাজ যেটা মিস করছে, তাদের ভিতর থেকে উঠে আসা এমন এক বা একাধিক সংস্কারক। রামমোহন না থাকলে শুধু সতীদাহ রদ করতেই ব্রিটিশ শাসন টিঁকে থাকতে সমস্যার সম্মুখীন হত। বলপ্রয়োগ কোন লেভেলে নিয়ে যেতে হত ভাবা যায়! সে চেষ্টাই তারা করত না। যদিও মেজরিটারিয়ান হিন্দুদের মধ্যেও খুব কম অংশই সরাসরি এফেক্টেড ছিল।
    ভারতকে হিটলারের জার্মানি করে তোলা যদি আজকের দিনে অসম্ভব নাও হয়, অন্তত পঞ্চাশ একশ বছরের ডেডিকেটেড প্রয়াস লাগবে। ততদিন এমনিতেই দেশটা ছিবড়ে হয়ে কর্পোরেটের কাছে বিক্রি হয়ে দেউলিয়া ডিক্লেয়ার্ড হয়ে যাবে। সম্পদহীন দেশ নিয়ে আর কেউ মাথাও ঘামাবে না। ফলে নাৎসীনিধনের মত মুসলিম নিধনের দিনও আসবে না। 
    জনসংখ্যা কমানোর লক্ষে ভবিষ্যতে যদি মুসলিম জনগোষ্ঠীকে বিতারণ করাটা সে সময় লক্ষও হয়, বাংলাদেশ পাকিস্তানে যেভাবে হিন্দুদের তাড়ানো চলেছে, তবে সেই লক্ষ ক্রমে ক্রমে হিন্দু অন্ত্যজ জনগোষ্ঠীর দিকেও নির্ধারিত হবে।  মনে হয় না তাতে বিশেষ লাভ হবে, যেহেতু খেটে করা কাজের জন্য লোকের অভাব হতে থাকবে। তাছাড়া যখন জনসংখ্যা কমানোর বায়োলজিকাল ওয়েপন আবিষ্কার হয়েই গেল, আর তার টেস্টিং ও সফলভাবে হয়ে গেল, তখন এভাবে কেনই বা জনসংখ্যা কমাবে।
    এখন, প্রথম টার্গেট করতে হবে বিজএপিকে ক্ষমতা থেকে সরানো এবং যাবতীয় নেতাদের রোজগার ও সম্পতির খতিয়ান নিয়ে দুর্নীতির অর্থ বাজেয়াপ্ত করা। সেজন্য দরকার একটা তুল্যমূল্য অল্টের্নেট রাজনৈতিক এনটিটি। তার জায়গায় ওদের তৈরি করে দেওয়া বিতর্কের প্রেমিসেই আমাদের যাবতীয় তর্ক বিতর্ক আবদ্ধ থেকে যাচ্ছে। 
  • যোষিতা | ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৩:২৯514778
  • যারা নারীর সমানাধিকার এবং শিশুর অধিকারের বিরুদ্ধে পাতার পর পাতা নিজের নিজের মনের নোংরামি উজাড় করে দিচ্ছে, তাদের মুখোশ খুলে গেছে।
  • Ranjan Roy | ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:২৪514780
  • বিবেচক
     
    অনেক ধন্যবাদ। 
     
    আমি মুখে ফেনা তুলে আঙুলে ব্যথা করে পাতার পর পাতা পোস্টিয়ে যে কথাটা গুছিয়ে বলতে পারি নি, সেটা  আপনি একটি মাত্র পোস্টেই  চমৎকার  বলেছেন।
    আমার এই বিষয়ে আর কিছুই বলার  নেই।
     
  • মরেচে | 2a03:94e0:ffff:185:181:61::***:*** | ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৪:৩০514781
  • দিদির আবার মাতায় ছিট উটেচে।  একন খিস্তানো চলবে কদিন।
     কতা হল পরানের পোদান্মন্তি নারীর পেট কেটে ভ্রুণ বের করিয়ে তিশুলের ডগায় তুলে নেত্য করিয়েছিল।  বিলকিস বানোর ৫ মাস গভভ থাকতে পোদান্মন্তির লোকে তাকে ধর্ষণ করে করে পেট খসিয়ে দেছেল। তার ছোট মেয়েটাকে পাথরে আছরে দেওয়ালে ছুড়ে মেরেছিল। সে লোকেদের একন পোদান্মন্তির পোষা কুমির শাস্তি মকুব করে ছেড়ে দিয়েছে। সেই পোদানমন্তি আর তার লোকেরা নারী ও শিশুর সমানাধিকারের জন্যি আইন আনচে? হ্যা হ্যা হ্যা হ্যা হ্যা হ্যা। খোলাখুলি  বল না বাপু আরো অনেক গুজরাট২০০২ চাই।
    হ্যা হ্যা হ্যা হ্যা হ্যা হ্যা
  • Ranjan Roy | ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৭:৩১514785
  • UCC
    একবার বলেছিলাম,  শেষ বারের মতো আপনার উত্তর দিচ্ছি. 
    আপনার কথা মানলে দেশে সিভিল এবং ক্রিমিনাল বলে দুটো আলাদা কোড,  আলাদা jurisprudence এর কোন দরকার নেই.  শুধু একটা কোড থাকলেই কাজ চলে যাবে।
     
    পৃথিবীর কোন সভ্য দেশে এমন বিচার ব্যবস্থা আছে যেখানে সিভিল ও ক্রিমিনাল কোড ঘেঁটে ঘ করা হয়?
     
    বিক্রেতা দাম নিয়ে লো কোয়ালিটি জিনিস দিলে, ধার নিয়ে ফেরত না দিলে আর খুন করলে একই ধরণের বিচার একই ধরণের শাস্তি দিতে হবে।
     
    আর খালি শরিয়ত কেন? আপনার  যুক্তির হিসেবে তো হিন্দুদের জন্য  ফৌজদারি  আইনও মনুস্মৃতির হিসেবে হওয়া উচিত। 
    তাতে শুধু হাত পা কাটা নয়, ঠোঁটকাটা, নুনু কাটা, কানে গরম তেল ঢালা, মেয়েদের আঙুল কাটে -- সবরকম বিধান আছে।
    পছন্দ হবে?
    নিজেই বই খুলে দেখুন। সংস্কৃত শ্লোকের সঙ্গে বাংলা অনুবাদ ও ব্যাখ্যা। ভরত ন্যায় শিরোমণি অথবা সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তীর। 
  • Ranjan Roy | ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৮:০৬514787
  • পি এম, 
    ম্যারিটাল রেপ নিয়ে আপনার পোস্ট এখন চোখে পড়ল।
    ব্যাপারটা প্রিসাম্শন অফ কনসেন্ট বা ক্যানন অফ অ্যাকুইসেন্স।
    অর্থাৎ,  যতক্ষণ একজন আপত্তি না করছে, ধরে নিতে  হবে সম্মতি আছে।
    যেমন আমি আপনার বাড়িতে গেলাম, আপনি কিছু বললেন না, তাহলে ঠিক আছে।
    কিন্ত যেদিন বলবেন-- ঢুকতে মানা করেছিলাম,  শোনেনি, --- সেদিন ট্রেসপাস।
     
    তবে মহিলার অভিযোগ পেলেই আদালত স্বামীকে একতরফা  শাস্তি দেবে এমন নয়। 
    যেসব দেশে ম্যারিটাল রেপ অপরাধ বলে স্বীকৃত সেখানে খতিয়ে দেখার অনেক যুক্তিপূর্ণ পদ্ধতি আছে।
    সব জানি না, তবে একটা হল -- অন্য দুর্ব্যবহার এবং শারীরিক অত্যাচার। concomitant offence. 
    ধরা হয়, যে স্বামী বিছানায় জোর-জবরদস্তি করে সে নিশ্চয়ই গায়ে  হাত তোলে বা খিস্তি করে।
    সেগুলো প্রমাণিত হলে এই অভিযোগ শক্ত পোক্ত হয়. 
  • dc | 2401:4900:1cd1:58e0:7144:ac76:4522:***:*** | ২২ ডিসেম্বর ২০২২ ১৯:৩৬514789
  • রঞ্জনদার মন্তব্যঃ "গ্র্যান্ড ডিজাইন হল অঘোষিত হিন্দুরাষ্ট্র নির্মাণ" আর 
     
    বিবেচক এর মন্তব্যঃ "ওদের তৈরি করে দেওয়া বিতর্কের প্রেমিসেই আমাদের যাবতীয় তর্ক বিতর্ক আবদ্ধ থেকে যাচ্ছে।"
     
    একমত, এই দুটো মন্তব্যই হলো ইউসিসি-সিএএ-এনারসির আসল প্রেক্ষিত। আরেসেসের দীর্ঘকালীন লক্ষ হিন্দু রাষ্ট্র তৈরি করা, তার জন্য ওরা সত্তর বছর বা তারও বেশী সময় ধরে কাজ করে চলেছে। এখন ওরা অনেকটাই সফল হয়েছে, লক্ষর দোড়গোড়ায় পৌঁছে গেছে, কারন এখন সবাই ওদের তৈরি করে দেওয়া প্রিমাইসের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। ইউসিসি বা এনারসি যে আদৌ কোন সরকারের কাজই হতে পারে না, এই বোধটাই আমাদের আর নেই। ফলে মুসলমানদের সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেন কেন করা হবে, এই প্রশ্নটা আমরা আর তুলছি না। আমরা আরেসেসের বানানো স্টেডিয়ামে ওদের তৈরি করে দেওয়া রুল মেনে ওদের খেলা খেলছি।  
  • r2h | 165.***.*** | ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ০১:০২514793
  • আমাদের মধ্যে নেই, বা আমরা তুলছি না - এই আমরাটা ঠিক কারা? বিজেপি আরেসেসের সমর্থকরা এর মধ্যে অবশ্যই আছে, তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি এই অগৌরবের বহুবচনে একাত্ম হতে নিতান্ত অনাগ্রহী।

    প্রেক্ষিত না বোঝার কিছু নেই। অভিসন্ধি সাধু নয়, অবশ্যই একমত। বিজেপি প্রস্তাবিত ইউসিসি বিপজ্জনক - একমত।
    কিন্তু দেওয়ানি বিধি, সংবিধানের ধারা টারা, নাগরিকত্বের পলিসি - সেসব সরকারের কাজ না - তার মানে? তাহলে কার কাজ এসব? বাল্যবিবাহ বহুবিবাহ সতীদাহ এইসব আটকানো, জন্ম মৃত্যুর নিবন্ধীকরনের পলিসি ঠিক করা - এসব সরকারের কাজ না?

    বিজেপি ইভিল, সিএএ এনারসি অদরকারী, কিন্তু মজা হল কং থেকে বাম কেউ এর ব্ল্যাংকেট বিরোধিতাও করেনি। বিপদের রিসিভং এন্ডে থাকা নির্দিষ্ট জাতিসত্ত্বাকে রেকোগনাইজও করেনি। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি - দরকারি জিনিসই, কিন্তু তর্ক কেবলই ঘন্ট পাকিয়ে যায়। অমুক ধর্মের ছেলে অমুক ধর্মের মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে বা পারবে না, সামাজিক রীতিতে কেউ হাত দিতে বলছে না, কিন্তু সংবিধানে এসবের স্বীকৃতি থাকবে? সিরিয়াসলি? আজকের আপদগুলি আমরা দেখি, শাহবানো বা রামমন্দিরের তালা খোলা গৌন হয়ে যায়। এইসবের সুদূরপ্রসারী ফল দেখে সাবধানে পা ফেলা সরকারেরই কাজ। সরকারের ওপর এসবের দায় না চাপালে এসব পাপের বোঝা বইবে কে? রেটরিক্যাল "আমরা"?

    যাই হোক, এখানে অনেক বৃথা তর্ক হয়ে গেল। রঞ্জনদার "...UCC in particular, অর্থাৎ বর্তমান ভারতে শাসক দল প্রস্তাবিত UCC নিয়ে।..." যুক্তিযুক্ত। এই মেনে নিয়ে আর
    "...BJP reiterates its stand to dra a Uniform Civil Code, drawing upon the best traditions and harmonizing them with the modern times." -এই বেস্ট ট্র‌্যাডিশনের বিপদ লক্ষ্য করে এখান থেকে বিদায় নিলাম।
  • গণতন্ত্রের তিনটি স্তম্ভ | 185.243.***.*** | ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ০১:৪১514795
  • দেওয়ানি বিধি, সংবিধানের ধারা টারা, নাগরিকত্বের পলিসি, জন্ম মৃত্যুর নিবন্ধীকরনের পলিসি ঠিক করা এসব আইনসভার কাজ। 
    সরকারের কাজ আইনসভার নেওয়া সিদ্ধান্তকে ইমপ্লিমেন্ট করা এবং বাল্যবিবাহ বহুবিবাহ সতীদাহ এইসব আটকানো। 
    জুডিসিয়ারির কাজ সংবিধান রক্ষা করা।
  • aranya | 2601:84:4600:5410:5ded:86a6:8679:***:*** | ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ০২:১৬514797
  • 'The Supreme Court on Friday issued notice to the Centre on a petition filed by the National Commission for Women (NCW) to make the minimum age of marriage for Muslim girls the same as that of persons belonging to other religions.
    A bench of Chief Justice of India DY Chandrachud and Justice PS Narasimha sought a response from the Centre within four weeks.
    The minimum age for marriage in India is currently 18 for women and 21 for men. However, the minimum marriage age for Muslim women is when they attain puberty and 15 years is presumed to be that age.'
     
    - রঞ্জন দা, এটা কয়েকদিন আগের খবর। 
     
    এখন তো ইন্টারনেট থাকায় খবর পাওয়া সহজ, হিন্দি বলয়ে শারীরিক ভাবে থাকার দরকার হয় না। বিজেপি / আরএসএস এর অয়াজেন্ডা আমরা সবাই জানি। 
     
    কিন্তু অন্তত কিছু বিষয়ে তো অভিন্ন আইন দরকার। ১৫ বছর বয়সী একজন মেয়ের বিয়ে তো মেনে নেওয়া যায় না। 
  • Amit | 121.2.***.*** | ২৩ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:০৬514799
  • রঞ্জনদা কে এই ১৫ বছরে বিয়ের কোশ্নো টাই জিগিয়েছিলাম ১৫ ডিসেম্বর ২০২২ ১৬:৪৯ - এ। 

    "কারেন্ট ইসলামিক ম্যারেজ আইন মেয়েদের  ১৫ বছরে বিয়ে র অনুমতি দেয়। সুতরাং সবার জন্যে ২১ আইন হলে আশা করি সেটাও মডিফাই করতে ল বোর্ডের কোনো আপত্তি থাকবে না ?খুব শান্তিপূর্ণ ভাবে মেনে নেওয়া হবে ? "
     
    ওনার উত্তর ছিল ১৫ ডিসেম্বর ২০২২ ১৮:৫৪
    "ল বোর্ডের কিসে আপত্তি হবে সেটা ল বোর্ডের উকিল জিয়াকে ভাল হয়।"
     
    এটাও ওনার বক্তব্য যে চেঞ্জ সেই ধর্মের ভেতর থেকেই আসা উচিত। 
     
    খুব ভালো কথা। তাতে অনন্তকাল লাগলে হয়তো অনেকের বিশেষ সমস্যা নেই। কিছু লোকের লাইফ নাহয় বরবাদ হলো ধর্ম রক্ষার খাতিরে। এ আর এমন কি। সামান্য ব্যাপার। সুতরাং যেকোনো ইস্যুতেই মুসলিমদের দোকান বয়কট , গোহত্যা, গুজরাট যাবতীয় সমস্যা একসাথে টেনে এনে ঘেটে ঘ করে ফেলতে হবে। 
     
    পলিগ্যামি বা আন্ডারেজ ম্যারেজ বা চাইল্ড বার্থ এসমস্ত ইস্যু (সমস্ত ধর্মে - এটাকে এন্টি-মুসলিম বলে প্রজেক্ট করাটাই হাস্যকর লাগছে আমার কাছে) যেখানে ওভারঅল একটা হেলথ  বা সোশ্যাল প্রবলেম ক্রিয়েট করছে বা করতে পারে , সেখানে এফেক্টেড ইন্ডিভিজুয়াল দের ওপিনিয়ন বা রাইটস বা নিয়ে সরকারের ভাবা উচিত নয় - তাই তো -? সে সমস্ত প্রবলেম খাপ পঞ্চায়েত বা মোল্লাতন্ত্রের হাতেই ছেড়ে দেওয়া উচিত? 
     
    নাহলেই খুব সাবধান।  হিন্দু রাষ্ট্র এসে গেলো বলে। 
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন