প্রথম আপত্তিঃ আমি ভাষাবিদ নই। কানে শুনে এবং সাধারণ লোকে যেভাবে ওই ভাষাগুলোকে চেনে আমি সেই প্রেক্ষিত থেকে বলছি।
১ মৌলানা আজাদ আরবি ও উর্দুর পন্ডিত নন?
কাশ্মীরের নেহরু উর্দু ও হিন্দির তফাত বোঝার জন্য যথেষ্ট সমঝদার নন?
২ ফরাসী ভাষা, জর্মন এবং ইংরেজি --সবই একই লিপিতে লেখা হয়। তাহলেও সেগুলো আলাদা ভাষা। যদিও সবার আদি উৎস লাতিন।
৩ কিন্তু একই ভাষা, দুটো আলাদা লিপি সমান্তরাল চলে এমন উদাহরণ?
তুর্কির উদাহরণ খাটে না। ওরা আগের লিপি পরিত্যাগ করে নতুন লিপি নিয়েছে।
কিন্তু যেখানে বর্ণমালা, লিপি ও উচ্চারণ সমান্তরালে চলছে সেখানে লিপি এবং বর্ণমালা ভাষার আইডেনটিতির অঙ্গ হয়ে গেছে সেখানে কী বলবেন?
৪ আসামী ভাষা এবং বাংলার বর্ণমালা এক, পেটকাটা ব দিয়ে র লেখা হয় এমন উদাহরণ হাতে গোণা।
কিন্তু আসামী আর বাংলা কি একই ভাষা? গ্রামারে সিন্ট্যাক্সে কোথায় ফান্ডামেন্টাল তফাৎ?
৫
মনে হয় আমরা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে ভিন্নসুরে কথা বলছি।
উর্দু ১২শ শতাব্দীর আগে ছিল না। আজকের হিন্দুস্তানীও ছিল না। এলিটের ভাষা ছিল সংস্কৃত, আম আদমির প্রাকৃত।
সেখানে ফার্সি ও আরবি মিলে হোল হিন্দুস্তানি যা উত্তর ভারতে সবাই বোঝে।
তার থেকে আরবি ফার্সি বাদ দিয়ে কেবল তৎসম শব্দের উপর জোর দিয়ে কৃত্রিম ভাবে শুরু হোল খড়িবোলী হিন্দি।
কিন্তু সত্তর বছরের অভ্যাসের ফলে এখন উত্তর ভারতের পাঠ্যপুস্তক, সরকারি কাজকর্ম সবই চলে খড়িবোলী হিন্দিতে। ওটাই এখন স্ট্যান্ডার্ড। এখন আর কানে বাজে না।
আপনাদের অনভ্যস্ত কানে বেসুরো লাগবে।
একটা কাল্পনিক কিন্তু বাস্তব উদাহরণ দিচ্ছি।
আমি ব্যাংকের এক শাখার থেকে হেড অফিসে চিঠি লিখছি। বিষয় আমার এখানে কিছুদিনের জন্যে এক স্টাফ ডেপুটেশনে পাঠাতে। দেখতে এরকম হবে।
প্রতি,
মহাপ্রবন্ধক,
-------ব্যাংক
প্রাধান কার্যালয়
ঠিকানা
==========
বিষয়ঃ এক কার্মিক কী অল্পকালীন প্রতিনিযুক্তি
আদরণীয় মহোদয়,
সনম্র নিবেদন হ্যায় কি হমারী শাখা মেঁ এক করণিক কী অল্পকালীন প্রতিনিযুক্তি কী আবশ্যকতা হ্যায়।
কারণ, বর্তমান পক্ষকালীন জমা অভিযান হেতু হমারী শাখা মেঁ প্রাপ্ত নকদ রাশি কী অধিকতা হো গয়া। ইসকী উচিত প্রবন্ধন হেতু বর্তমান মেঁ উপলব্ধ সেবাযুক্ত কী সংখ্যা অপর্যাপ্ত হ্যায়।
বিশেষ রূপ সে এক মহিলা করণিক আকস্মিক অস্বস্থ হো কর অবকাশ পর হ্যায়।
অতঃ মহোদয় সে প্রার্থনা হ্যায় কি হমারী ইস নিবেদন কো সহৃদয়তা পূর্বক বিচার করকে কিসী নিকটস্থ শাখা সে এক সেবাযুক্ত কো হমারী শাখা মেঁ ন্যুনতম পন্দ্রহ দিন কে লিয়ে প্রতিনিযুক্তি পর প্রেষিত করনে কী কৃপা করেঁ।
ভবদীয়
শাখা প্রবন্ধক
দেখুন অভ্যাসে এসে গেছে উর্দু/ফার্সি বাদ দেওয়া।
কাজেই ভাষাতাত্ত্বিক বিচার, আগে কী ছিল কে মাতা কে পিতামহী --এসব তত্ত্বজিজ্ঞাসা আজ অর্থহীন। এসব দিয়ে দক্ষিণপন্থী প্রচারের মোকাবিলা করা যাবে না।
.১ আজকের শতাব্দীর ভারতে দাঁড়িয়ে বলতে হবে-- ঠিক আছে, খড়িবোলী হিন্দি আর খালিস উর্দু --দুটো আলাদা ভাষা হলেও ভারতে উদ্ভুত । দুটোই সংবিধান স্বীকৃত ভাষা। কেউ সুয়োরাণী দুয়োরাণী নয়। দুটোই সমান মর্যাদা এবং সরকারের সমান পৃষ্ঠপোষকতার দাবি করে।
২ কোন ভাষাকে ধর্মের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে যুক্ত করা ভুল।
হিন্দু শাস্ত্র হিন্দিতে লেখা হয় নি, হয়েছে সংস্কৃতে।
কুরান উর্দুতে লেখা হয় নি, হয়েছে আরবিতে।
হিন্দুস্থানিতে লেখাপত্র আগের মতন শুরু হোক। যেমন সুনন্দ'র জার্নালে নারায়ণ গাঙ্গুলি লিখেছিলেন--আমরা কি ইন্তেজার করি ? না প্রতীক্ষা করি?
বোলচালের ভাষা হিন্দুস্থানির জয় হোক।
হিন্দি ও উর্দু থাক পাশাপাশি, সম্মানের সঙ্গে।