এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • রহস্য বাকি আছে

    Sudeep Chatterjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১১ এপ্রিল ২০২৫ | ৫৪৮ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য আর রহস্য নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ ক্রমে কমতে দেখছি। ছোটবেলায় একটা নতুন প্রাণী বা প্রাকৃতিক বিস্ময়ের কথা জেনে গেলে আমি দিনরাত সেই চিন্তাই করতাম। আফ্রিকা, আমাজন বা তিব্বত আমাদের মনোজগতে এক রহস্যময় জায়গা হয়ে বেঁচেছিল। আমি ততোটাও বুড়ো হাবড়া নই, সেই যুগেও প্ৰযুক্তির যথেষ্ট অনুপ্ৰপবেশ ঘটেছে মানবজীবনে, গৃহযুদ্ধ, সন্ত্রাসবাদ আর রাজনৈতিক বিপর্যয় লেগেই থাকত গোটা দুনিয়া জুড়ে। কিন্তু এসব সত্ত্বেও একটা অবাক হওয়া ছিল, চমকে ওঠা ছিল, নতুন একটা তথ্য জেনে বিস্ময়মিশ্রিত আনন্দে ডগমগ হওয়া ছিল। ইন্টারনেট আর স্মার্টফোনের যুগে তথ্য পাওয়া সহজ হয়ে গেছে, কিন্তু 'বিস্ময়' জিনিসটা প্রায় হারিয়েই গিয়েছে মানুষের মন থেকে। এখন আর আমরা কেউই অবাক হই না। অনেকের আবার ধারণা, পৃথিবীর সব রহস্যই আসলে আবিষ্কার করা হয়ে গেছে। অবাক হওয়ার মতো কিছুই আর বাকি নেই। অথচ সত্যি কথা হল, এখনও, এই যুগেও একের পর তাক লাগানো আবিষ্কার হচ্ছে। শুধু আফ্রিকার কথাই যদি ধরি, গত কুড়ি বছরে এমন সমস্ত প্রাণীদের খোঁজ পাওয়া গেছে, এমন সব প্রাকৃতিক ফেনোমেনার কথা জানা গেছে যে বিজ্ঞানীরা নড়েচড়ে বসেছেন, বারবার। কয়েকটা বলা যাক। 

    গত এক দশকে চাঞ্চল্যকর আবিষ্কার হল রুয়ান্ডার গোল্ডেন মাঙ্কিদের নিয়ে। তাদের সোনালি পশমের মতো লোম রোদ্দুরে ঝকঝক করে, দেখা গেছে তাদের এই লোমে আসলে ফিওমেলানিন পিগমেন্ট আছে বলেই এমনটা হয়। এই ধরনের প্রাইমেট প্রজাতিকে রাখা হয়েছে cercopithecid গ্রূপে, অন্যান্য প্রাইমেট প্রজাতির সঙ্গে এদের যথেষ্ট ফারাক আছে। একদিকে গোল্ডেন মাঙ্কিদের নিয়ে উন্মাদনার ফলে রুয়ান্ডার পর্যটন ইন্ডাস্ট্রি বেশ অর্থলাভ করছে, অন্যদিকে কনজারভেশন বায়োলোজিস্টরা এদের বাঁচানোর জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। একের পর এক অভিযান হচ্ছে। গত বছর রুয়ান্ডায় সবচেয়ে বড় গোল্ডেন মাঙ্কিদের দলকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। 

    তানজানিয়া চিরকাল গেম রিজার্ভ বলে খ্যাতিলাভ করেছে, সেরিংগেটিতে শ্বাপদরা হরিণ আর ওয়াইল্ড বিস্টদের ছুটিয়ে শিকার করছে, তানজানিয়া বললেই এই ছবি মাথায় আসে। কিন্তু এখানে বৈচিত্র্যেরও অভাব নেই। কয়েক বছর আগে বিজ্ঞানীরা সেখানে এমন এক প্রজাতির বায়োলুমিনিসেন্ট উদ্ভিদ খুঁজে বের করেছিলেন, যার পাতা থেকে নীল রঙের আলো বিচ্ছুরিত হয়। রিসেন্টলি Tessmannia princeps বলে এক নতুন প্রজাতির গাছ পাওয়া গেছে, সে প্রায় ৩০০০ বছর প্রাচীন। Udzungwa এলাকার Mngeta Valley নাকি অজানা গাছপালা খুঁজে পাওয়ার জন্য সেরা জায়গা। কিন্তু এখনও সেখানে অত অভিযান করা হয়ে ওঠেনি। 

    ইথিওপিয়ার পাহাড়ি অঞ্চলে এথনোবোটানিস্টরা এমন একটা উদ্ভিদ আবিষ্কার করেছেন যার পাতায় শক্তিশালী anti-inflammatory গুণ রয়েছে। স্থানীয় উপজাতির মানুষ নাকি যুগ যুগ ধরে এই গাছের পাতা ব্যবহার করে আসছে চোটজখম হলে। প্রিলিমিনারি ক্লিনিক্যাল স্ট্যাডিতে জানা গেছে অন্য anti-inflammatory উদ্ভিদের মতো এই গাছের পাতা সেবন করলে কোনও সাইড এফেক্টও হয় না। 

    ওদিকে ম্যাডাগাস্কারে ব্যাঙ পেয়ে জুলোজিস্টরা নাচ শুরু করেছেন। একের পর এক ব্যাঙ পাওয়া যাচ্ছে, সবাই নিজগুণে অনন্য। একটার নাম দেওয়া হয়েছে চাঁদের আলোর ব্যাঙ। সূর্যের আলো পড়লে ব্যাঙটার চামড়া স্বচ্ছ ট্রান্সপ্যারেন্ট হয়ে যায়, চাঁদের আলো পড়লে মনে হয় ব্যাঙের দেহের ভিতর একটা বেগুনি আলো জ্বলছে। ব্যাঙ বাবাজি এর ফলে দিনের বেলাও নিরাপদে থাকে, রাতের নিশাচর প্রাণীরাও কিছু করতে পারে না। সার্ভাইভালের জন্য এমন এভোলিউশনারি ইনোভেশন খুব কমই দেখা গেছে। এছাড়াও আছে এলিয়েন ব্যাঙ, মানে এই ব্যাঙগুলো ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর করলে মনে হয় স্টার ট্রেকের স্পেশাল সাউন্ড এফেক্ট চলছে। মাঝেমধ্যেই ডক্টর Mark Scherz লাইভ বা রেকর্ডেড অনুষ্ঠান করেন, সেখানে আরো বিশদে জানা যাবে।  

    এখানেই শেষ নয়, গোটা আফ্রিকা জুড়ে নেত্য চলছে আসলে। কঙ্গো ও পশ্চিম অঞ্চলের দুর্গম অরণ্যে গবেষকরা এমন একটা ফল আবিষ্কার করেছেন যা চিনির চেয়ে বহু গুণ বেশি মিষ্টি, কিন্তু কোনও ক্যালোরি নেই। এই ফলকে স্থানীয়রা 'মিষ্টি সাগরের তারা' বলে ডাকে। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করছেন যে যে এই ফল থেকে একটি ন্যাচারাল সুইটনার তৈরি করা যেতে পারে যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী হবে। এখন শুনছি এরকম আরো কিছু শিকড়বাকড় আর ফলের সন্ধান নাকি পাওয়া গেছে। 

    নামিবিয়ার মরুভূমিতে এমন একটা বিটল পোকা পাওয়া গেছে যা বাতাস থেকে জল সংগ্রহ করতে পারে। এই অদ্ভুত কীটের পিঠে বিশেষ একরকমের কাঁটা রয়েছে যা কুয়াশা থেকে জল নিয়ে ধরে রাখে, এবং তারপর সেই জল সরাসরি তার শরীরে অ্যাবসর্ব করে নেয়। আর এদিকে আমরা এতদিন সব ক্রেডিট ব্যাটাছেলে উটদের দিয়ে আসছি শুধু। 

    জিওকেমিস্টরাও কম যান না। তারা মালি ও অন্যান্য জায়গায় রিভারসাইড ডিপোজিট পরীক্ষা করে বিশেষ ধরনের মাটি বা montmorillonite clay পেয়েছেন, হেভি মেটাল আর বিষাক্ত টক্সিন শুষে নিতে এই মাটির জবাব নেই। স্থানীয় মহিলারা বারবার বলেছিলেন যে এই মাটি দিয়ে তাদের হাত ধোয়ার পর ত্বকের সমস্যা সেরে যায়। এখন দেখা যাচ্ছে, তারা ঠিকই বলেছিলেন। বলাবলি চলছে, কসমেটিক্স আর ফার্মা ইন্ডাস্ট্রিতে এই মাটি বিপ্লব আনতে পারে। 

    কঙ্গো বেসিনের অরণ্যে গত বারো বছরে প্রায় সাড়ে সাতশোরও বেশি নতুন প্রজাতির জীব পাওয়া গিয়েছে। তাদের মধ্যে কুমির থেকে ইলেকট্রিক মাছ, পেঁচা থেকে অর্কিড সবই আছে। হুড়োহুড়ি পড়েছে De Winton's golden mole এর প্রত্যাবর্তনে, যে ব্যাটা বালিতে সাঁতার দেয়। Leaf-Mimic Frog এর কথাও বলতে হবে, এই ছোট ব্যাঙের ত্বকের টেক্সচার এবং রঙ জঙ্গলের মাটিতে পড়ে থাকা পচা পাতাকে প্রায় পুরোপুরি অনুকরণ করে। ডিএনএ বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত করেছে যে এই প্রজাতি সম্পর্কে আগে কিছুই জানা ছিল না। এদের ত্বকে এক বিশেষ কোষ রয়েছে যা তার তাৎক্ষণিক পরিবেশের প্রতিক্রিয়ায় টেক্সচার এবং বর্ণকে সূক্ষ্মভাবে বদলে দিয়ে লুকিয়ে পড়তে পারে। আমার ফেভারিট হল লেসুলা মাংকি, যারা একেবারে মানুষের মতো মুখভঙ্গি করে। দলে বসে থাকলে দেখে মনে হয়, সংসদের অধিবেশন… থাউক সে কথা!

    ওদিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য চালানোর সময় ইউরেনিয়াম-থোরিয়াম ডেটিং কৌশল ব্যবহার করে প্রায় ১২,০০০ বছর আগে বিলুপ্ত মেগাফৌনা প্রজাতির গুহাচিত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। এই ছবিগুলোতে অত্যাধুনিক পিগমেন্ট প্রিপারেশন দেখা যায়, রঙ চটে না যায় এইজন্য সেগুলো পশুর চর্বির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার চেয়েও বড় কথা, এই গুহাচিত্রে যে সব প্রাণী দেখা যাচ্ছে তাদের সঙ্গে মানুষদের কোনওদিন মোলাকাত হয়েছে বলে জানা ছিল না। এখন দেখা যাচ্ছে, লেট প্লাইস্টোসিন এবং আর্লি হোমো-সেপিয়েন্সের মধ্যে কিছু ইন্টারেকশন হয়েও থাকতে পারে? কারণ প্লাইস্টোসিন যুগের ম্যামথের ছবিতে এই ধরনের কালারিং টেক পাওয়া যায়নি, মানে সেই যুগের শিল্পীদের মগজে তখনও ওঁৎ বুদ্ধি আসেনি। না এসেছিল? নাকি ম্যামথ জাতীয় জীবদের সঙ্গে হোমো সেপিয়েন্সদের সাক্ষাৎও হয়েছে? হেহে, ইটা বাড়াবাড়ি হয়ে গেল! যাই হোক, নানান প্রশ্ন আছে, আপাতত প্যালিও এনভায়োলেন্টমেট কন্ডিশন নিয়ে জোর গবেষণা চলছে সাউথ আফ্রিকায়। এছাড়াও নতুন হিউমিনয়েড প্রজাতি পাওয়া গিয়েছে সাউথ আফ্রিকার আরেক গুহায়। 

    এখন, এই সব আবিষ্কারগুলোই হয়েছে গত এক থেকে দেড় দশকের মধ্যে। কোনওটা চার বছর আগে, কোনওটা দশ বছর আগে। কিন্তু এই গবেষণা এখনও কন্টিনিউ হচ্ছে। এখন অনেকে হয়তো ভাবতে পারেন, মাত্র এই? এ আর এমন কি! বেশ, তাহলে আরো কয়েকটা লিস্টি করে দিলাম। 

    ২০২৩ সালের শেষের দিকে তানজানিয়ার জাঞ্জিবারের উপকূলে একটা দুর্দান্ত আবিষ্কার হয়েছে। ম্যারিন বায়োলোজিস্টরা সেখানে একটি কোরাল রিফ সিস্টেম অর্থাৎ প্রবাল প্রাচীর ব্যবস্থা আবিষ্কার করেন যা উষ্ণ সমুদ্রের তাপমাত্রার প্রতি অস্বাভাবিক রেসিলিয়েন্সের পরিচয় দিতে পারে। সবাই জানে, গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফলে কোরাল রিফের তাপ বাড়ছে, তারা কঙ্কালে পরিণত হচ্ছে, কিন্তু এই প্রবাল প্রাচীন সেখানে অবস্থিত হিট রেজিস্টেন্ট অ্যালগির প্রকারের সঙ্গে চমৎকার একটা সিম্বায়োটিক রিলেশনশিপ ডেভেলাপ করেছে। জিনোম সিকোয়েন্সিং করে দেখা গেছে যে জলের তাপ বাড়লেই শৈবালগুলো এসে একটা প্রটেক্টেড লেয়ার তৈরি করে ফেলে। এই আবিষ্কারটা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে এই গবেষণার ওপর নির্ভর করে গোটা দুনিয়াযা কোরাল রিফ সংরক্ষণের জন্য কাজ করা যায়, ইতিমধ্যেই বৈজ্ঞানিকরা এই ধরনের শৈবাল ট্র্যাক করে দুনিয়ায় অন্যান্য কিছু জায়গাতেও এইধরনের তাপরোধকারী কোরাল রিফ খুঁজে পেয়েছেন। বিজ্ঞানীরা খুব বেশি মুখ খুলছেন না, কারণ ঘটনাটার একটা আর্থিক রাজনৈতিক দিকও আছে। তাই ঘটনাটা কতটা বাস্তব বোঝা এই মুহূর্তে মুশকিল। তবে হিট রেজিস্টেন্ট কোরাল রিফ সম্পর্কিত বড়সড় কিছু একটা যে পাওয়া গেছে, তাতে সন্দেহ নেই। 

    ২০২৪ সালের শুরুতে ইথিওপিয়ার হাইল্যান্ডে বিজ্ঞানীরা একটা ভূগর্ভস্থ ছত্রাক নেটওয়ার্ককে চিহ্নিত করেন। আগেও পাওয়া গিয়েছিল কাছাকাছি একটা কলোনি, কিন্তু এইবার তারা আগের ডেটা বিশ্লেষণ করে আরো ব্যাপক ভাবে গবেষণা চালিয়েছে। এই ব্যাপক মাইসেলিয়াল ফাঙ্গাই সিস্টেম বিভিন্ন পরিবারের একাধিক বৃক্ষ প্রজাতিকে সংযুক্ত করে, পুষ্টি বিনিময়ের সুবিধা দেয়। আইসোটোপ ট্রেসিং কৌশল ব্যবহার করে দেখা গেছে যে  ফাঙ্গাই নেটওয়ার্কটা স্ট্রেস কন্ডিশনে গাছেদের কাছে নিউট্রিশন পৌঁছে দেয়। এই প্ল্যান্ট-ফাঙ্গাই কমিউনিকেশন মেকানিজম ঠিক হলে উপস্থিত ইকলজি মডেলগুলো নিয়ে আবার করে ভাবতে হবে। 

    ২০২৩ সালের মাঝামাঝি নামিবিয়ার মরুভূমি অঞ্চলে কাজ করা উদ্ভিদবিদরা এক succulent প্রজাতির উদ্ভিদ খুঁজে বার করেছেন। এই উদ্ভিদ সোলার রেডিয়েশনের তীব্রতা অনুযায়ী ফোটোসিন্থেসিস পাথওয়েকে বদলে দিতে পারে। জটিল বিজ্ঞানে না ঢুকে বলি, ব্যাপারটা কাজে লাগালে সাহারাতেও সুন্দরবন হতে পারে, মানে খরা অঞ্চলে কৃষি করা বা গাছপালা বসানো অনেক সহজ হয়ে যাবে। একইভাবে কেনিয়ার হাইল্যান্ডসেও একটা উদ্ভিদ পাওয়া গেছে যাদের পাতায় বিশেষ ট্রাইকোম বিকশিত হয়েছে যেগুলো বায়বীয় আর্দ্রতা গ্রহণ করে সোজা হাইস্পিড ট্রেনে করে সেই জল শিকড়ের কাছে পৌঁছে দেয়। এমনকি আর্দ্রতা কম হলে, এই ট্রাইকোম উদ্ভিদকে বাঁচাতে বাতাস থেকে পর্যাপ্ত জলও বের করতে পারে। বায়োমিমিক্রি ইঞ্জিনিয়াররা এই নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছেন ইতিমধ্যেই। বলুন, এই ধরনের যুগান্তকারী একটা সম্ভাবনা নিয়ে আমাদের নিউজ চ্যানেলরা দু এক কথা বলতেও তো পারে! 

    যাই হোক, ওদিকে মাদাগাস্কারেও গত বছর একটা পিঁপড়ে পাওয়া গেছে যে ব্যাটাচ্ছেলে তাদের কোষের মধ্যে ব্যাকটিরিয়া চাষ করছে, এই ব্যাকটিরিয়াগুলো কাজে লাগাতে পারলে ছত্রাকদের থেকে হওয়া সংক্রমণকে একেবারের জন্য নির্মূল করে দেওয়া যেতে পারে। এই খবরটা ইউটিউবে কোথাও দেখেছিলাম বলে সত্যতা প্রমাণিত করতে পারব না, তবে ম্যাডাগাস্কারে যে দুরন্ত সব আবিষ্কার আর গবেষণা চলছে তা সায়েন্স ডট ওআরজি সাইটে গিয়ে পড়লেই জানতে পারবেন। 

    ২০২৩ সালের একদম শেষে দক্ষিণ আফ্রিকায় স্পিলিওলজিস্টরা একটা ফাটাফাটি আবিষ্কার করেছেন। মাটির এক কিলোমিটার নিচে এমন একটা প্রকাণ্ড গুহার নেটওয়ার্ক পাওয়া গেছে যেখানে আগে যাওয়া সম্ভবই ছিল না। কিন্তু আসল কথা হল এই অসম্ভব প্রতিকূল পরিস্থিতিতে, যেখানে বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন প্রাণ বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনাই নেই, সেখানে তারা মাইক্রোঅর্গ্যানিজমের একটা আইসোলেটেড ইকোসিস্টেম খুঁজে পেয়েছে। এই প্রবল অম্লীয় পরিস্থিতিতে কোনও অণুজীব থাকতে পারে তা কেউ চিন্তাও করেনি। কিন্তু এই পুঁচকে অণুজীবগুলো কোন একটা উপায়ে যেন মিনারেল মেটাবলাইজ করে দিব্যি বেঁচেবর্তে আছে। এদের শরীরের কেমিক্যাল পাথওয়ে আর গঠন জানা গেলে মানুষকে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বাঁচিয়ে রাখার দিকে একটা নতুন পথ খুলে যাবে, স্পেস ট্রাভেল রেডিয়েশনের ঝুঁকিও অনেক কমে যাবে। 

    ২০২৪ সালে, আরো কিছু জরুরি কাজ হয়েছে, সেগুলো সেই অর্থে আবিষ্কার নয়। প্রথমেই বলতে হয় Operation SAMA এর কথা, অবৈধ চোরাশিকার আর পোচিং আটকে ওয়াইল্ডলাইফ সমৃদ্ধ করার এই প্রজেক্ট উনিশটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে আর উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে। সিয়েরা লিওন আর লাইবেরিয়াতে রিফরেস্টেশন প্রোগ্রাম ভালো ফল দিয়েছে, শকুন আর অন্যান্য মাংসাশী পাখিদের সংখ্যা বেড়েছে। পোচিং কমেছে হাতি আর প্যাংগলিনের। জাম্বিয়াতে লেপার্ডের সংখ্যা বিপজ্জনক ভাবে কমে গিয়েছিল, এখন তাদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। কোপা ভের্দেতে সাস্টেনেবল ফিশিং শুরু হয়েছে, আশার কথা। হাজার হাজার হতাশাজনক খবরের মধ্যেও দেখে ভালো লাগে এখনও অনেকে প্রকৃতি নিয়ে ভাবে। এখনও আমাদের পৃথিবীতে প্রচুর অজানা রহস্য রয়ে গেছে।    

    এই লিস্টি চালিয়ে গেলে শেষ হবে না। জুকুবাবু আমাকে ফেসবুক থেকে বার করে দেবে। যাকগে, দিয়ে রাখলাম। সেদিন মিশরের পোস্ট দেখে একজন বলেছিলেন যে আমি কষ্টকল্পিত/অতিরঞ্জিত তথ্য প্রমোট করছি, তাই কমেন্টে সব খবরের সোর্স দিয়ে রাখলাম। তবু কিছু ভুলভাল হতেই পারে, সব লিংক না পেলে আর সন্দেহ হলে নিজে রিসার্চ আর্টিকেলের সাইটে গিয়ে পড়ে নিলেই ভালো।

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১১ এপ্রিল ২০২৫ | ৫৪৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 172.56.***.*** | ১১ এপ্রিল ২০২৫ ২১:৪৮542281
  • ভালো লাগলো আপনার লেখাটা। অনেক অজানা জিনিষ জানাতে পারলাম। কিন্তু ভাবছি যে এই ন্যাচারাল স্যুইটনার, হেভিমেটাল ও টক্সিন অ্যাব্সর্বিং মাটি বা ফোটোসিন্থেসিস পাথওয়ে বদলে দেওয়ার উপায়, এগুলোর ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন শুরু হয়ে গেলে কি এরাও বিপর্যস্ত হবেনা? প্রাকৃতিক ব্যালান্স নষ্ট হবার রাস্তায় পৃথিবী আরো এগোবেনা? কখনো কখনো মনে হয় প্রকৃতির কিছু জিনিষে মানুষের হাত না পড়লেই হয়তো ভালো! খুবই কনফিউজড লাগে! শেষের আগের প্যারাটা পড়ে অবশ্য অনেক আশাজনক দিকও দেখতে পেলাম।
  • MP | 2409:4060:e8b:3f5a:2567:2024:970c:***:*** | ১১ এপ্রিল ২০২৫ ২৩:৩৯542285
  • অসংখ্য ধন্যবাদ লেখককে l আপনার মিশর নিয়ে লেখাটাও পড়ে ফেললাম l মিশর নিয়েও একটা প্রশ্ন আছে l মমি আর পিরামিড বানানো মিশরে কবে থেকে ও কেন বন্ধ হয় ?
  • MP | 2409:4060:e8b:3f5a:2567:2024:970c:***:*** | ১১ এপ্রিল ২০২৫ ২৩:৪১542286
  • মাদাগাস্কারের মানুষখেকো উদ্ভিদ নিয়ে হিমাদ্ৰীকিশোরের একটা উপন্যাস পড়েছি l এটাও কি সত্য নাকি ফিকশন মাত্র ?
  • Sudeep Chatterjee | ১২ এপ্রিল ২০২৫ ০০:১১542288
  • কেকেবাবু, আমিও বুঝি না। ওই কনফিউজড হয়েই আছি। মাত্রা জিনিসটা ইন্ডাস্ট্রি বোঝে না, মানবজাতিও বোঝে না। কিন্তু আবিষ্কার তো চলতেই থাকবে। কী আর করা? 
  • Sudeep Chatterjee | ১২ এপ্রিল ২০২৫ ০০:১৫542289
  • এমপিবাবু, পড়লেন বলে ধন্যবাদ। হিমাদ্রিবাবুর লেখা শুধুই ফিকশন মনে হয়। আমি মিশর নিয়েও বিশেষ কিছু জানি না, শুনেছি ফার্স্ট সেঞ্চুরি বিসির আগেই মমি বানানো কমে গেছিল। বিদেশি শক্তিদের প্রভাব বাড়ছিল, টাকাপয়সা কমছিল। পুরোটাই ইকোনমিক্স আর পলিটক্সের ঝামেলা। তবে লক্ষ লক্ষ মমি বানিয়েছেন বহুদিন ধরে, আর বানিয়ে কাজ নেই
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ১২ এপ্রিল ২০২৫ ১০:৪৬542295
  • ভীষণ ভালো লাগল এই পোস্ট টা। অনাবিল আনন্দ পেলাম এই আবিষ্কারগুলোর কথা পড়ে।
  • অয়নেশ | 2402:3a80:1985:9f1:378:5634:1232:***:*** | ১২ এপ্রিল ২০২৫ ১২:০৪542296
  • এই আবিষ্কার আর তার আনন্দের আতিশয্যে যেটুকু বেঁচে আছে তাও হয়তো বছর দশেকের মধ্যেই ভোগে চলে যাবে। অতএব মহানন্দে আবিষ্কার ও তার ধ্বংস চলুক। মাঝেমধ্যে খানিক আহা উহু। 
  • প্রতিভা | 117.22.***.*** | ১৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:২৫542377
  • সুদীপের লেখা তো সবসময়ই আদরণীয়। এখানে এসেও অনলগর্ভার কপি তাকে সাজানো রয়েছে দেখছি। আমার তো চমৎকার লাগে লেখকের সেন্স অব হিউমার! এই লেখাতেও তা পুরোদমে উপস্থিত। 
  • Sara Man | ১৫ এপ্রিল ২০২৫ ১১:৪৬542395
  • লেখাটা খুব ভালো লাগলো।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন