আর জি করে যে একটা রীতিমতো অনৈতিক দালাল চক্র কাজ করছে, সেটা এখন নিশ্চয় সবাই জানে। কারোর ধারণা সেক্স রাকেট, আমার মনে হয় ড্রাগ মাফিয়া, এর পেছনে আছে। ড্রাগ মাফিয়া মানে শুধু মাদক দ্রব্য নয় কিন্তু, এর পেছনে হসপিটালের ওষুধের ফেরবদল করে দু হাতে টাকা কামানোর বিষয়টাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এই অন্ধকার সাম্রাজ্য রমরম করে চালানোর মূল হোতা হলো ওই কলেজের প্রিন্সিপল, তারই প্রশয়ে আর নজরদারিতে দুষ্কর্মগুলো চলে আর হেঞ্চম্যান হিসেবে কাজ করে টিমসিপি ইউনিটের কিছু উঠতি নেতা, তাতে একদিকে যেমন দাদাগিরি ফলানো যায়, অন্যদিকে মদ আর মোচ্ছবের খরচটাও উঠে আসে। প্রতিবাদ করলে কাউকে ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে, কাউকে হোস্টেলে থাকতে না দিয়ে বা কাউকে কেস করতে না দিয়ে দমিয়ে রাখা হতো।
এভাবেই চলছিল, তাল কাটলো যখন দি এই অবিচারের প্রতিবাদ করলো। এ বেশ মাসখানেক আগের ঘটনা, কারণ তার পরবর্তী মাসগুলোতে চূড়ান্ত হেনস্থার শিকার হতে হয় দিদিকে, ডিপার্টমেন্টের না এইচওডি না সিনিয়ররা, কেউ ফিরেও দেখেনি। একসময় দিদি বুঝতে পারে, কোর্স কমপ্লিট করা কঠিন হয়ে পড়বে অসহযোগিতা চলতে থাকলে, বাড়িতে বলেও লাভ হয়নি, অসহায় বৃদ্ধ বাবা মা কিই বা করতে পারতো ? তখন বয়ফ্রেন্ডের পরামর্শে দিদি এদের বিরুদ্ধে প্রমান জোগাড় করতে শুরু করে, যাতে উল্টোপাল্টা কিছু হলেও দিদির হাতে আইনি লড়াইয়ের রসদ থাকে।
টার্নিং পয়েন্টটা তখন এলো, যখন ডিপার্টমেন্টের লোকেরা বিষয়টা জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে ওই টিএমসিপি ইউনিটের ছেলেদের জানিয়ে দিলো। ওরা ঠিক করলো, দ্রুতই একটা এসপার ওসপার করে ফেলতেই হবে। সেই মতো সব প্ল্যানিং সাজানো হলো। ওই সেমিনার রুমের ঠিক সামনের ঘর থেকে পেশেন্ট শিফট করা হলো, 'ফল গাই' হিসেবে বাছা তারকাটা সঞ্জয়ের মুখ সিসিটিভিতে দেখিয়ে আনা হলো, তারপর দলের ছেলেদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হলো, কোনো অবস্থাতেই যেন নাইট ডিউটির শিফটে (মানে সকাল আটটা অবধি) পেশেন্ট, নার্স বা অন্য কেউ ওইদিকে না আসে। খেতে খেতেই দিদিকে সেমিনার রুমে শোওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলো। তারপর এলো ওরা চারজন।
একজন মুখ খুললে বাকিরাও কথা বলবে, ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়তে পারে, তাই মুখ বন্ধ রাখতে মার্ডারটাই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য। কিন্তু একটা শান্ত, নির্বিরোধী মেয়ের অচানক খুন হলে মোটিভ খুঁজতে গেলে আগে তাদের ওপরই নজর পড়বে, তাই হাতে তুলে নেওয়া হলো চিরকালীন অস্ত্র, ধর্ষণ, যাতে লোকে ভাবে রেপটাই আসল ছিল, মার্ডার তো পরে হয়েছে। ওই চারজন জোয়ান মদ্দার সাথে যুদ্ধ করা সম্ভব ছিল না ছোটোখাটো দিদির পক্ষে, কি নৃশংসভাবে অত্যাচার করা হয়েছিল, অটোপসি রিপোর্টেই তার প্রমাণ আছে।
এরপরেই এলো যে টুইস্ট, ভাবলেও ঘেন্না হয়। তারকাটা সঞ্জয়কে ডেকে আনা হলো মৃতা দিদির যোনিতে বীর্যপাতের জন্য, যাতে একান্তই ইনভেস্টিগেশন হলে সিমেনের ডিএনএ দেখে ওই সঞ্জয়কেই পাকড়াও করা হবে, এদিকে সে তো খুন করেইনি, তার গায়ে কোনো আঁচড়ের দাগ ও নেই, ওকে মার্ডারের আসামি বানালে ছাড়া পেয়ে যাবে, খুব বেশি হলে মৃতের সঙ্গে সহবাস বা নেক্রোফিলিয়াতে অভিযুক্ত করা যেতে পারে, যার জন্য ভারতীয় আইনে কোনো সাজা নেই। তারপর দিব্যি সঞ্জয়ের ইয়ারফোন ফেলে রাখা হলো মাটিতে, যেন অপরাধী জেনেবুঝে মোস্ট অবভিয়াস ট্রেসটাই ফেলে গেছে।
দিদির গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছিল, সেটা হয়েছিল সেই প্রমাণগুলো উদ্ধার করে নষ্ট করার জন্যই। যখন মাননীয়া নিশ্চিত খবর পেলেন এভিডেন্স ট্যাম্পেরিং থেকে শুরু করে প্রমাণ নিয়ে অপরাধী খোঁজার শেষ সূত্রটুকুও মুছে ফেলা হয়েছে, পরম শান্তিতে তিনি সিবিআই এর জন্য গ্রীন সিগন্যাল দিয়ে দিলেন।