এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • শিক্ষক দিবস --  শিক্ষার অর্থ কী?

    Partha Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ৩১০৯ বার পঠিত
  • আমাদের দেশে -- ভারত, বাংলাদেশ ইত্যাদি জায়গায় -- শিক্ষা হলো প্রধানতঃ চাকরিবাকরি, কাজকর্ম পাওয়ার একটা রাস্তা। এবং মালিকদের ও শাসকদের নির্ধারিত পথ অন্ধভাবে অনুসরণ করার যোগ্যতা অর্জন করা।

    কিন্তু এ শিক্ষা কোনো শিক্ষাই নয়।

    শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য হলো যোগ্যতা অর্জন করা, যাতে প্রশ্ন করার, গবেষণা করার, চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা জন্মায়। ক্রিটিকাল থিঙ্কিং অর্থাৎ গভীরভাবে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা অর্জন করা যায়। কেউ যদি বলে, মহাভারতের সময়েই ইন্টারনেট ছিল, কিংবা গরুর কুঁজে সোনা থাকে, তাহলে মাথা গরম না করে ঠাণ্ডা মাথায় যুক্তি দিয়ে যেন বুঝিয়ে দেওয়া যায় এসব হলো খাঁটি গো-চোনা, যাকে ইংরিজি ভাষায় বলে বুলশিট।
    কিন্তু সেটা করতে গেলে মিথ্যার সঙ্গে সত্যের পার্থক্য খুঁজে বের করার মতো শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে।

    প্রশ্ন করলে, চ্যালেঞ্জ করলে শাস্তি হবেনা কখনো। পরীক্ষায় নম্বর কেটে নেবেনা কেউ। ক্লাসে টিচার সবার সামনে দাঁড় করিয়ে চড় খাওয়াবেনা অন্যদের দিয়ে।

    আমেরিকা, ইংল্যাণ্ড বা ইউরোপ-প্রভাবিত ভারতে মুক্তচিন্তার একটা অবকাশ এতদিন ছিল। ভারতে এখন আর নেই। ফ্যাসিস্টরা দরজায় কড়া নাড়ছে। হিটলারের অনুসারীরা ভারত ধ্বংসের রাজপথে খোলা তরোয়াল হাতে মারো মারো হাঁক দিচ্ছে রোজ।

    আমেরিকায় প্রায় চল্লিশ বছর কাটিয়ে অনেক কিছু শিখেছি। এবং শিক্ষাব্যবস্থায় মুক্তচিন্তা এবং বাক-স্বাধীনতা থাকার কারণে এমনভাবে ভাবনাচিন্তা করতে শিখেছি, যা দেশে থাকতে কখনো সম্ভব হয়নি। ওখানে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা হচ্ছে মূলতঃ, ওই যে বললাম, অন্ধভাবে ইন্সট্রাকশন ফলো করার শিক্ষা।

    কিছু ব্যতিক্রমী শিক্ষক ও শিক্ষিকা অবশ্যই আমরা পেয়েছি। যাঁরা সিলেবাসের মধ্যে নিজেদের আবদ্ধ রাখেননি। ক্লাসরুমে এসে রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে গানের লড়াই খেলা খেলেছেন। সুকান্ত ভট্টাচার্য্যের কবিতা শিখিয়েছেন। কেমিস্ট্রি পড়াতে এসে টাইম মেশিনের গল্প বলে শুনিয়েছেন। মনের দরজা খুলে দিয়েছেন তাঁরা।

    কিন্তু এডুকেশন সিস্টেমটাই ছিল সিলেবাস-কেন্দ্রিক। এবং শাস্তিকেন্দ্রিক। যাকে ইংরিজিতে বলে পিউনিটিভ। প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য রক্তচক্ষু চারদিকে ঘুরে বেড়াতো। বাড়ির মধ্যে, রাস্তায়, সমাজে, স্কুলে, কলেজে, ইউনিভার্সিটিতে। ছেলেদের জন্যে একরকম শাস্তি। মেয়েদের জন্যে আর একরকম।

    পরীক্ষার ভীতির মধ্যে আমরা বড় হয়েছি। এবং অতি প্রাচীনপন্থী, বাজে সিলেবাস। যেখানে বাংলা টেক্সট বইতে পনেরোটা পীসের মধ্যে ছটা রবীন্দ্রনাথ, তারপর শিবনাথ শাস্ত্রী, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী, বিবেকানন্দ, বিদ্যাসাগর, ইত্যাদি। তাঁদের নমস্কার জানিয়েও বলছি, গুরুদেবরা, আপনারা বিলক্ষণ জ্ঞানী মানুষ। আমাদের সৌরজগতের জ্যোতিষ্ক। কিন্তু শিশু মনের, কিশোর কিশোরী, বালক বালিকার মনের ফান আপনারা কিছুই জানতেন না।

    এবং আপনাদের অন্ধভাবে অনুসরণ করা ওই শিক্ষাব্যবস্থার কর্তারা। শিক্ষা যে পরীক্ষাভীতি নয়, আর কেবল জ্ঞানের বাণী নয়, তা আপনারা বোঝেন নি।

    আমাদের বাংলা বইতে একটা শিবরাম, একটা টেনিদা, একটা লীলা মজুমদার, পরশুরাম, আর একটা সত্যজিৎ রায় অবশ্যই থাকা উচিৎ ছিল। থাকেনি।

    মুসলমান লেখকদের, প্রান্তিক জাতির লেখক কবিদের রচনা অবশ্যই থাকা উচিৎ ছিল। কখনো থাকেনি। তাই আমরা তাঁদের কখনো সম্মান করতেও শিখিনি।

    সত্যি কথা বলতে আমেরিকায় এসে প্রথমে বিজ্ঞান এবং তারপর হিউম্যানিটিজ নিয়ে পড়াশোনা করে, এবং বহু বছর পড়িয়ে রপ্ত করেছি শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য।

    আমার গুরু নোম চমস্কি, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিক্টর নাভাস্কি এবং জেমস ক্যারি, সাদার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটির ল্যারি ম্যাটেন এবং বারবারা স্টটলার -- এঁদের কথা আজ খুব বেশি মনে পড়ে। শিক্ষক দিবস বলে যদি কিছু পালন করতেই হয়, সেই শিক্ষক শিক্ষিকাদের মনে করবো, যাঁরা শুধু উৎসাহিত করেছেন।

    যাঁদের সঙ্গে ভুল ইংরিজিতে কথা বলতেও কখনো ভয় করেনি।

    যাঁরা বলেছেন, এগিয়ে যাও। প্রশ্ন করো। চ্যালেঞ্জ করো। যাঁরা বলেছেন, আর যাই করো, আমার সঙ্গে কথা বলতে এসে পায়ে লুটিয়ে পোড়োনা। ওসব আমরা পছন্দ করিনা। এমন কি, আমাদের নাম ধরেও ডাকতে পারো।

    জগদ্বিখ্যাত দার্শনিক নোম চমস্কি আমাকে বলেছেন, পার্থ, আমাকে প্রফেসর চমস্কি বলে ডেকোনা। ওসব কলোনিয়াল সেন্টিমেন্ট আমার ভালো লাগেনা।

    তাঁকে গত দশ বছর ধরে নোম বলেই ডেকে এসেছি।
    ____________
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ৩১০৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দীপ | 42.***.*** | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:০৪523302
  • আমরা বাংলা সাহিত্যে নজরুল, জসীমউদ্দীন, সৈয়দ মুজতবা আলী সাহেবের লেখা পড়েছি। 
    সহায়ক পাঠে সত্যজিতের ক্লাসফ্রেন্ড ছিল।
    এছাড়াও নীচের ক্লাসে অবনীন্দ্রনাথ পড়েছি।
  • দীপ | 42.***.*** | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:১৩523303
  • বাংলা সাহিত্য এক বিস্তৃত বিষয়, তার ভগ্নাংশমাত্র মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক সিলেবাসে থাকে।
    জোর করে সাহিত্য পড়ানো যায়না। আগ্রহী ছাত্রছাত্রী স্বেচ্ছায় মনের তাগিদে পড়ে।
    আমরা ছোটোবেলাতেই উপেন্দ্রকিশোর, সুকুমার, সত্যজিৎ, লীলা মজুমদার, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় পড়েছি।
    এগুলো সিলেবাসে ঢোকাতে হয়না। ছেলেমেয়েরা মনের আনন্দে পড়ে। 
    উচ্চমাধ্যমিকে পরশুরামের বিরিঞ্চিবাবা ছিল।
  • দীপ | 42.***.*** | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:১৬523304
  • বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, বিভূতিভূষণ প্রমুখ ব্যক্তিত্বদের বাদ দিয়ে বাংলা সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব নয়।
    যিনি বলেন, তাঁর সাহিত্যজ্ঞান ও মানসিক সুস্থতা নিয়েই প্রশ্ন জাগে।
  • সৃষ্টিছাড়া | 2405:201:a41e:a049:35a5:5b2c:923c:***:*** | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২১:৪৯523309
  • ঐধরনের প্রতিষ্ঠান যুক্তি নির্ভরতা গড়তে ভারত বাংলাদেশে আসতে হবে। দূর থেকে যুক্তি আওড়ালে আত্মপ্রচার এর মত শোনায়, স্বার্থপর পার্থ মনে হয়। গত ৪০ বছর এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিনা পারিশ্রমিকে পাঠ বিতরণ করে, ডলার তো নই, অন্নের সংস্থান করতে না পেরে এখন প্রায় অভুক্ত কোনো পার্থ স্বার্থ ছেড়ে বিদ্যাসাগর মহাশয় এর মত মধু কবি কে না চিনে সাহায্য করেন নি।
    তিনটি স্নাতকোত্তর তাই শিক্ষক দিবসে পুড়িয়ে দিলাম, কারণ অভিজাত পিতা মাতার সন্তানেরা প্রাক্তন শিক্ষক মলো কি বাঁচলো তার বিবেচনা বোধে স্থান দেয় না। তারা চায় bliss
  • Partha Banerjee | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:১৭523310
  • @সৃষ্টিছাড়া -- যদিও আপনার কথা ভালো বুঝিনি, তাও সারাংশ বুঝলাম। তাহলে বলছেন দেশে থাকলেই দেশের জন্যে কাজ করা যাবে, এবং বিদেশ থেকে কোনো কথা বলা যাবেনা? বিদেশ থেকে কথা বললেই স্বার্থপরতা হয়ে যাবে? তাহলে আমার মনে হয় বিদেশের কোনো জিনিস -- কম্পিউটার থেকে বিদেশী গাড়ি থেকে ফোন থেকে ম্যাকডোনাল্ড বা পিজ্জা হাট বা কোক -- কোনো কিছুই দেশে বসে ব্যবহার করা উচিৎ নয়। বিদেশের সঙ্গে কোনো সংস্পর্শ সম্পূর্ণ বর্জন করা উচিৎ।  
  • m | 2405:8100:8000:5ca1::1fd:***:*** | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২২:২৭523311
  • শুনলুম ডিএমকের নেতা সনাতন ধর্মকে ধ্বংস করার ডাক দিয়েছে। কিন্তু এটাকে কি এখুনি ফ্যাসিজম বলা উচিত? হেট স্পীচ বড়জোর।
  • critical thinking | 2405:8100:8000:5ca1::255:***:*** | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২৩:৩৬523316
  • সিলেবাস বহির্ভূত কোন্ মুসলমান বা প্রান্তিক লেখকের লেখায় ফান এলিমেন্ট বেশি ছিল?
  • Bratin Das | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০১:৫৯523317
  • লেখক   দের মধ্যে  হিন্দু  মুসলমান  আসে কোথা থেকে? 
     
    আমরা ছোট বয়েসে বন্দে আলি মিয়া পড়িনি? জসিমউদদীন  পড়িনি?  সৈয়দ মুস্তফা আলি পড়ি নি? 
    কাজী নজরুল  ইসলাম পড়ি নি? 
     
    আচ্ছা  বিপদে পড়া গেল তো!!
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:68e5:d89f:a0cf:***:*** | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৩:১৮523319
  • মুক্ত চিন্তা আর আমেরিকা ঠিক খাপ খায়না। আমেরিকা প্রতিষ্ঠা হয়েছিল পিউরিটানদের হাতে। বহু জায়গায় স্কুল লেভেলে ইভলিউশন পড়াতে গেলে গালি খেতে হয়, চাকরিও যেতে পারে। আমেরিকায় সুপ্রীম কোর্ট অ্যাবরশন রাইটের বিরুদ্ধে রায় দিলে তাই নিয়ে তেমন কিছু ঝামেলা হয়না। ইস্ট কোস্ট অ্যাকাডেমিয়ার গজদন্ত মিনারে বসে বাকী আমেরিকাকে বিশেষ চেনা যায়না। স্কুল লেভেলে শিক্ষকদের যোগ্যতা সাধারণভাবে খারাপ।
     
    সোভিয়েতের ভয়ে কিছুদিন আমেরিকা এসব মত প্রকাশের ঝামেলা ইত্যাদি সহ্য করেছিল। এখন আবার অন্ধকার গর্তে ফেরত যাচ্ছে। খবর টবর শুনে সন্দেহ হয় ইউরোপও যাচ্ছে, তবে একটু আস্তে।
  • যোষিতা | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৩:৩৫523320
  • পার্থবাবু কি খুবই সিনিয়র মানুষ? আমাদের সিলেবাসে তো বিভূতিভূষণ নজরুল মাইকেল প্রেমেন্দ্র মিত্র সুকুমার রায় অবনীন্দ্রনাথ প্রমুখ সকলেই ছিলেন। তবে অধিকাংশ সাহিত্যই সিলেবাসের বাইরে থেকে পড়তে হয়। ইস্কুলে আর কতটুকু পড়ানোর সময় থাকে?
    ডারউইনবাদ অ্যামেরিকায় সিলেবাসে আছে? আমরা কিন্তু ইস্কুলেই পড়ে নিয়েছিলাম। অ্যামেরিকায় শুনেছি শিক্ষকদের বেতন বড্ড কম দেয়। সেইজন্যই কি ভালো শিক্ষকের অভাব? তার ওপরে ওদিকের ইস্কুলগুলোয় নাকি মেটাল ডিটেক্টর পাস করে করে ঢুকতে হয়? শোনা কথা অবশ্য। নিয়মিত গোলাগুলি খুন খারাবি হয় ইস্কুলগুলোয়, শুটিং ইন অমুক স্কুল —এগুলো খবরে দেখি। মুক্তচিন্তার দেশ হলে হেটক্রাইম এত হতো? জেলখানাগুলো শুনেছি বড়ো ইন্ডাস্ট্রি। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মানুষ যে দেশে জেলেই জীবন কাটায় এবং শ্রম দেয়। যাদের অধিকাংশই কালোমানুষ। স্কুল টু প্রিজন — এইভাবেই তাদের জীবনের ধারা। মুক্তচিন্তা?  রিয়েলি?
  • Partha Banerjee | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৪:২২523321
  • @যোষিতা -- আপনি আমার নতুন বই "আমেরিকা স্বপ্নপুরী না হত্যাপুরী?" পড়ুন। আপনার প্রশ্নের অনেক উত্তর পেয়ে যাবেন। আমার সব বই haritbooks.com এখানে গেলেই পাওয়া যায়। 
  • Partha Banerjee | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৪:২৪523322
  • বাই দা ওয়ে, আমি প্রায় চল্লিশ বছর আমেরিকায় আছি। একটু একটু জানি দেশটাকে। 
  • যোষিতা | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:১২523323
  • না না, সে ঠিক আছে, আমরাও খবর রাখি। টিভি দেখি, খবর পড়ি, ওদিকে গেছিও। স্বপ্নপুরী কারও কারও জন্য হতেই পারে, তবে হত্যাপুরী নামের একটা ডিটেকটিব বই ছিল না? সত্যজিৎ রায়ের?
  • যোষিতা | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:৩১523324
  • একজন বাঙালি ভদ্রলোক সপরিবারে ১৯৬৩ সাল থেকে আপনাদের ঐ দেশেই রয়েছেন, বিগত চল্লিশ বছর  ক্যারোলি(লাই?)নাতে থাকেন। ষাট বচ্ছর অ্যামেরিকা বাস। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী যথেষ্ট বায়াসড। নতুন কেউ ওদেশে যাক সেটা পছন্দ করেন না। সাদা কালোর বেতন বৈষম্য সাপোর্ট করেন। তাঁর যুক্তি অন্যরকম। পরাধীন ভারতে জন্মে বড়ো হয়ে উঠেছিলেন বলেই কি এমন মনোভাব? ওদিকে আবার ভীষণ ডেমোক্র্যাট। প্রচুর স্ট্রাগল করেছেন জীবনে স্বামীস্ত্রী দুজনেই। এই বৃদ্ধ বয়সেও পেনশন বলতে কিছু নেই। 
    আমার এখানেও নানান বয়সের বাঙালি পরিবার এসে ঘুরে থেকে গেছে। বাইরে থেকে দেখলে বোঝা যায় না কী কৃচ্ছসাধনের জীবন। সপ্তাহে একদিন রান্না করে সারা সপ্তাহ সেটা গরম করে করে খায়। বাঁধাকপির তরকারি আর ভাত। রোজ। হয়ত ডালও রাঁধে। বাচ্চাদের বাংলা শেখায় না। যদি মস্তিষ্কে বাংলাভাষা ঢুকে গেলে খানিকটা জায়গা অকুপায়েড হয়ে যায়, সেখানে গণিত ইংলিশ এগুলো ঢুকলে কাজে দেবে এই ভেবে। যারা শিক্ষকতার জীবনে, তাদের বেতন নগন্য। 
    শিক্ষকদের যদি রেসপেক্টই করবে, তবে বেতন কম দেবে কেন? ফ্রোজেন ভেজিটেবল সস্তার জিনিস, সেগুলো কিনে খায়। জানতে কিছু বাকি নেই। ঐ যে পরে বাড়ি কিনবে, গাড়ি কিনবে, ফোটো পাঠাবে দেশে।
    এমন লোকও জানি স্যালভেশন আর্মি থেকে সস্ত্রীক কাপড়জামা নিত। ওদিকে প্রফেসর। নিজেই বলেছে।
    রাস্তা থেকে লোকের ফেলে দেয়া লেপ তোশক আসবাব বাসন কুড়িয়ে আনা রোজগেরে পরিবারও চিনি।
    বাইরে থেকে দেখলে টের পাওয়া যায় না। যখন দেশে ঘুরতে যাচ্ছে ডলারের গরম দেখাচ্ছে।
  • যোষিতা | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:৪৫523325
  • খবরে দেখলাম হু হু করে অ্যামেরিকান ঢুকছে ইয়োরোপে। মাইগ্রেট করছে বৌবাচ্চা দলবল সহ। বেটার লাইফের জন্য। স্পেন পোর্তুগালের মতন গরীবদেশেও ঢুকে যাচ্ছে। এখানে গোটা একটা ডলার ভাঙালে খুচরো পয়সা মেলে। এ হচ্ছে সায়েবদের কথা।
    বাঙালি অ্যামেরিকান সায়েবদের আবার অন্য রকম ব্যাপার। ইন্ডিয়া (নাকি ভারত?) গেলে ডলার ভাঙালে অনেকগুলো টাকা পায়। এদিকে ঘুরতে এলে মুখ ব্যাজার, ডলার ভাঙালে খুচরো পয়সা। পরপর কতগুলো এমন পরিবার দেখলাম, তাদের প্রায় নব্বই শতাংশই এই গুরুতে আসে, নাম বলব না সেজন্য। 
    এর নাম স্বপ্ন?
  • Partha Banerjee | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:৫৪523326
  • যোষিতা -- আপনি আমার বইটা পড়ুন। না পড়ে এই মন্তব্যগুলো একেবারেই মিনিংলেস। আমি আপনাকে বন্ধু ভেবেই বলছি। আমেরিকার দুটো দিক আছে। একটা দিক ভয়াবহ অন্ধকার, যার কথা আমি আমার বইতে বিশদভাবে লিখেছি। যা বোধহয় এখনো পর্যন্ত কেউ লেখেনি। আবার আর একটা দিক হলো আমেরিকার মুক্তচিন্তার ধারক ও বাহকদের আলোকিত দিক। যার এক গুরু নোম চমস্কি। বা আরো অনেক শিক্ষক। যার ফসল আমি। একটু পড়ুন। 
  • যোষিতা | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:৫৯523327
  • এভাবে নিজের বইয়ের বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন?
    বুদ্ধদেব গুহ নাকি এই লেভেলে নিজের বইয়ের প্রচার করতেন।
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:7152:e95:120c:***:*** | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:০৫523328
  • আপনি কি পার্সেলটাং? devil
  • a | 2405:8100:8000:5ca1::26e:***:*** | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:১৪523329
  • নোম মানে Khmer rogue এর ভক্ত যিনি?
  • π | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:২৫523330
  • রবীন্দ্রনাথ ' শিশু মনের, কিশোর কিশোরী, বালক বালিকার মনের ফান কিছুই জানতেন না'?? 
  • dc | 2401:4900:1f2b:fc32:4402:7952:5f93:***:*** | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:২৭523331
  • নোম ফ্লয়েডোস্কি 
     
  • | 49.207.***.*** | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:২৯523333
  • "কাকে বলে দুন্দুভি? কাকে বলে অরণি?
    বলবে কী তোমরাতো নোটবই পড়নি"
  • Partha Banerjee | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:২৪523335
  • আমার এক শিক্ষক বন্ধুর কথা এখানে পোস্ট করলাম। 
    __________________

    ১৯৮০ সালে শিক্ষকতার চাকরি নিয়ে স্কুলে ঢুকি,যে স্কুলে আমি পড়তাম সেই স্কুলেই।ভালোই লাগত।নিজের স্কুল নিজের গ্রামের স্কুল।আমেরিকা বা কোনো উন্নত দেশে কীভাবে শিক্ষা দেওয়া হয় তার কিছুই জানতাম না তবু শিক্ষকতাকে জীবনের ব্রত হিসেবেই নিয়েছিলাম।তখন স্কুল সিলেবাসে এবং পরীক্ষা পদ্ধতিতে সামান্য হলেও মুক্ত বাতাস বইতে।পরীক্ষার তোয়াক্কা না করে অনেক স্বাধীনভাবেই পড়ানোর সুযোগ ছিল।ফলে ভালো ছেলে মেয়েরা তো বটেই এমনকি পড়াশুনোয় পিছিয়ে পড়া কিছু ছেলে মেয়ে আমার সঙ্গে সারাক্ষণ লেপ্টে থাকতে চাইতো।এতে করে তা হয় তাইই হল,বেশির টিচারদের শত্রু হয়ে গেলাম আমি(তার মধ্যে আমার কিছু শিক্ষকও ছিলেন)।এতেও কোনো অসুবিধা ছিল না বরং নিজেকে অনেকটাই সফল বলে মনে হত।গোল বাধতে শুরু করল ২০০০সালের দিকে এসে।পরীক্ষা পদ্ধতি এবং সিলেবাস বদলাতে বদলাতে এমন এক জায়গায় এল,ক্লাসে পড়াবার সুযোগটাই গেল কমে।নাম্বার শুধু নাম্বার।টেক্সট বইগুলো সব নোট বইতে রূপান্তরিত হল।স্টুডেন্টদের কাছে ক্লাস টিচিংটা অপ্রয়োজনীয় মনে হতে লাগল।বরং টিউটর(তাদের মধ্যে অনেকেই ছাত্র জীবনে আর্টস বা কমার্সের ছাত্র ছিল)দের প্রেসক্রাইব  করা প্রশ্নোত্তর মুখস্থ করে অনেক বেশি বেশি নাম্বার পেতে থাকল।সত্যিই ক্লাস করার তাগিদটাই তখন থেকে কমতে থাকল।ভাবতে থাকলাম,এ আমি কোন পথ বেছে নিলাম।
    শিক্ষকতা জীবনের প্রথমে ভাবতাম,জীবনের শেষদিন পর্যন্ত যদি এইভাবে কাটিয়ে যেতে পারি......আর হল তার উল্টো।ভাবতে থাকলাম,রিটায়ারমেন্টের দিন কবে আসবে।
  • শিক্ষক বন্ধু | 64.62.***.*** | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:৫২523336
  • আপনার বই কিনেছে তো?  
  • Partha Banerjee | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:২০523337
  • ওই তো। যেখানে বিষয় নিয়ে কথা নেই, সেখানেই ব্যক্তিগত আক্রমণ। নাম নিয়েছেন শিক্ষক!! হাহা। 
  • শিক্ষক হাহা | 64.62.***.*** | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:৩৬523338
  • আহা রাগেন ক্যানো? ঢোল পেটানো খারাপ নাকি?  
  • s | 2405:8100:8000:5ca1::28c:***:*** | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:৩৭523339
  • আমেরিকান শিক্ষাব্যবস্থার মুক্তচিন্তার নমুনা দেখে সহজেই বোঝা যায় ভারতীয়রা কেন ওখানে হুলিয়ে করে খাচ্ছে।
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:53e1:2622:28f5:***:*** | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:৪৬523341
  • হুলিয়ে করে খাচ্ছে কথাটা বোধহয় ঠিক নয়। কয়েকজন সিইও দেখে অবস্থা ঠিক বোঝা যায়না। আমেরিকায় বেশিরভাগ ভারতীয় মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত। অনেক সময়েই তাদের রোজগার সমপর্য্যায়ভুক্ত সাদাদের চেয়ে কিছুটা কম। যেহেতু এদের কোন উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া সম্পদ নেই, তাই বিপদ আপদ সামলানোর ক্ষমতাও কম।
     
    স্বাধীন চিন্তা কম করাটা এই মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত ভারতীয়দের আমেরিকাতে একটা ইউএসপি। যেহেতু ওই চাকরিটাই সম্বল (যাকে বলে পে-চেক টু পে-চেক বাঁচা) তাই এদেশে ভারতীয়রা এমনিতেই ভাল কর্পোরেট দাস হয়। তার ওপর স্বাধীন চিন্তা একটু কম থাকলে নিজেদের প্রায় সাদা ভেবে নিতে অসুবিধা হয়না।
     
    আমাদের পার্সেলটাং একটু অতিরঞ্জন করেছেন ঠিকই। কিন্তু আমেরিকার আর্থিক অবস্থা গত পঞ্চাশ বছরে খারাপ হয়েছে। সেই সঙ্গে ভারতীয় অভিবাসীদের অবস্থাও।
  • :) | 2405:8100:8000:5ca1::11e:***:*** | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:১৪523344
  • এই তো - হোয়াইট আমেরিকানরা স্বাধীন চিন্তা করে বলে কর্পোরেট দাস হয় না, রোজগার কম করে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন