২৯.০৩.২০২২ তারিখে বিজনেস ইন্ডিয়া-য় প্রকাশিত একটি খবরের শিরোনাম “Pharma firms aim for higher revenues as govt hikes price of lifesaving drugs”। এ সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে যেসব ওষুধ কোম্পানি জীবনদায়ী ওষুধ বানায় তারা আগামী তিনমাসে অনেকটা বেশি মুনাফাবৃদ্ধি করতে পারবে এবং এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে যে ন্যাশনাল ফার্মাসিটিকাল প্রাইসিং অথরিটি (NPTA) পয়লা এপ্রিল থেকে ৮০০টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার ফলেই কোম্পানিগুলির এই লাভ হবে। আরও জানা যাচ্ছে, ভারতের প্রথমদিকের ২৫টি বৃহৎ কোম্পানি “এসেনশিয়াল ড্রাগস” বিক্রির পরিমাণ তাদের মোট বিক্রির পরিমাণের ৭-৪৪%। পরিমাণটি নেহাত কম নয়।
ওষুধের দাম বাড়ার ফলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে যারা ফিক্সড-ড্রাগ কম্বিনেশন (যেমন জ্বরের ওষুধ প্যারাসিটামলের সাথে কোন হাবিজাবি ব্যথার ওষুধ জুড়ে দেওয়া কিংবা একগাদা অ্যান্টি-ডায়াবেটিক ওষুধ নিয়ে একটি ট্যাবলেট বানানো) বিক্রি করে বেশি – দেশীয় ওষুধ নির্মাতাসংস্থাগুলির মধ্যে যারা ফিক্সড ড্রাগ কম্বিনেশন ব্যবহার করে এবং জাইডাস লাইফ সায়েন্সেস, জে বি কেমিকালস প্রভৃতি বড় কোম্পানি যারা জীবনদায়ী ওষুধের সরকারস্বীকৃত লিস্টের (NLEM) ৩৩-৪৪% ওষুধ বানায় তারা সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে এতে। এর পাশাপাশি অ্যালকেম, সিপ্লা, ইপকা প্রভৃতি কোম্পানিরও লাভ অনেকটা বাড়বে, উক্ত লিস্টের ২১-২৬% ওষুধ এরা বানায়। এইরকম সূচনা কোটাক সিকিউরিটির লিস্টে পাওয়া যাচ্ছে। মনে রাখতে হবে, ভারতে ওষুধের খুচরো বিক্রির বাজার প্রায় ১.৫ লক্ষ কোটি টাকার।
৩০.০৩.২২ তারিখের ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সংবাদপত্রের একটি প্রতিবেদনে আলোচনা করা হয় যে ভারতে ওষুধের দাম বিগত কয়েকবছরে অভূতপূর্ব হারে বেড়েছে। সংবাদটিতে জানানো হচ্ছে যে ন্যাশনাল ফার্মাসিটিকাল প্রাইসিং অথরিটির এই মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণার ফলে প্যারাসিটামল, অ্যাজিথ্রোমাইসিন, ও আর এস, আইইউডি এবং কন্ডোম জাতীয় জন্মনিয়ন্ত্রক, ইনসুলিন শট ও মাল্টিভিটামিনের দাম অনেকটা বেড়ে যেতে পারে।
এ ব্যাপারে একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে। টাইমস অফ ইন্ডিয়া এই পরিবর্তনের একটি চেহারা তুলে ধরেছে।
প্রায় ২ বছর ধরে চলা কোভিড অতিমারির পরেও আন্তর্জাতিক জগতে দানবীয় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মুনাফায় ঘাটতি পড়েনি। আমি কয়েকটি কোম্পানির গত কয়েকবছর বিক্রির হিসেব দিচ্ছি –
জনসন অ্যান্ড জনসনঃ ৮২৬০ কোটি ডলার (২০২০) , ৮২১০ কোটি ডলার (২০১৯)
নোভার্টিসঃ ৪৮৬৬ কোটি ডলার (২০২০), ৪৭৪৫ কোটি ডলার (২০১৯)
মার্কঃ ৪৮০০ কোটি ডলার (২০২০), ৪৬৮৪ কোটি ডলার (২০১৯)
অ্যাবভিঃ ৪৫৮০ কোটি ডলার (২০২০), ৩৩২৭ কোটি ডলার(২০১৯)
গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনঃ ৪৩৭৭ কোটি ডলার (২০২০), ৪৩৩২ কোটি ডলার (২০১৯)
ব্রিস্টল মায়ার্স স্কুইবঃ ৪২৫২ কোটি ডলার (২০২০), ২৬১৫ কোটি ডলার
অ্যাস্ট্রাজেনেকাঃ ২৬৬২ কোটি ডলার (২০২০), ২৪৩৮ কোটি ডলার (২০১৯)
অ্যামজেনঃ ২৫৪২ কোটি ডলার (২০২০), ২৩৩৬ কোটি ডলার (২০১৯)
এলি লিলিঃ ২৪৫৪ কোটি ডলার (২০২০), ২২৩২ কোটি ডলার (২০১৯)
প্রায় সবকটি অতিবৃহৎ বহুজাতিকের বার্ষিক মুনাফা ১০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি বা বেশি। এদের ভারতীয় শাখাগুলোও এ সুবিধে ভোগ করার অবারিত দ্বার পাচ্ছে। কারণ ভারতের অর্থনীতি পূর্ণত মুক্ত বাজারের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। মুক্ত বাজারের হাটে কেনাবেচা চলছে। গুনাগার দেবে আমজনতা, যারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই সময়কালে। এবং সবক্ষেত্রে বাজারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েই চলেছে। যদিও মানসিক জগতে একে সইয়ে নেবার এক বিপজ্জনক ঐতিহাসিক অবস্থা জন্ম নিয়েছে। একধরনের সামগ্রিক সামাজিক চৈতন্যের বিবশতা সর্বব্যাপী চেহারা নিয়েছে। আমাদের সামাজিক মানসিকতাকে (social psyche) গড়েপিটে নিচ্ছে। আমরা ক্রমবর্ধমান পথে রাষ্ট্রানুগত্যকে আমাদের আইডেনটিটির মধ্যে প্রবেশ করানোর অনুঘটক হিসেবে নিজেরাই ভূমিকা পালন করছি। কোভিড পরবর্তী সময়ে এটা আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।
করোনা অতিমারি-অতিক্রান্ত সময় সম্ভবত আমাদের দেশের এবং বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থার গোড়া ধরে কিছু মৌলিক পরিবর্তন আনতে চলছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার ধারণা সম্ভবত একটি emblem বা স্মারক ছাড়া আর কিছু থাকবেনা। এ মারাত্মক সময়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার মানুষের দৃষ্টিপথ (visibility), শ্রুতি (discernibility) এবং ভাবনার ক্ষেত্রপথের একেবারে বাইরে চলে যাচ্ছে। অতি উচ্চ মুল্যের আইসিইউ পরিষেবা, উচ্চচাপের অক্সিজেনের ব্যবস্থা, ECMO ইত্যাদি জন মানসিকতায় ক্রমশ গ্রাহ্য হয়ে উঠছে, মান্যতা পাচ্ছে। সমগ্র বিষয়টি নিতান্ত হাই-টেক এবং কর্পোরেট-পুঁজি নির্ভর হতে যাচ্ছে। আক্রান্ত, নিরুপায় এবং বিভ্রান্ত মানুষের কাছে দামি হাসপাতালের কয়েক লক্ষ টাকার বিল এবং একইসাথে ভেন্টিলেটর ECMO ICU এগুলো খুব গ্রহণযোগ্য শব্দ হয়ে গেছে। মজার ব্যাপার, ক্ষোভ থাকা সত্ত্বেও দামী হাসপাতাল এবং দামী টেকনোলজি ভালো চিকিৎসার সমার্থক হয়ে উঠছে। এবং লক্ষ্যণীয় হল কর্পোরেট পুঁজিশাসিত ও নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র এটাই চায়। অতিরাষ্ট্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা মানুষের নতুন চাহিদা এবং স্মৃতি প্রতিনিয়ত নির্মাণ করে চলে – সে রামমন্দির নিয়েই হোক বা হাই-টেক পাঁচতারা কর্পোরেট চিকিৎসাই হোক।
জার্নাল অফ আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন-এ (৩ মার্চ, ২০২০) একটি পেপার প্রকাশিত হয়েছিল “Profitability of Large Pharmaceutical Companies Compared With Other Large Public Companies”। এ পেপারে বিভিন্ন পরিসংখ্যানগত তথ্য বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত হিসেবে জানানো হয়েছিল – “২০০০ থেকে ২০১৮-র মধ্যে ফার্মাসিউটিকাল কোম্পানিগুলোর লাভ অন্যান্য বৃহৎ, পাবলিক কোম্পানির চেয়ে লক্ষ্যণীয়ভাবে বেশি ছিল”। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত GoodRx Health ম্যাগাজিনে আমেরিকার কথা বলা হয়েছে (জানুয়ারি ৬, ২০২২) – প্রত্যেক বছর জানুয়ারি ও জুলাই মাসে ওষুধনির্মাতা কোম্পানিগুলি দাম বাড়িয়ে চলেছে। গত জানুয়ারিতে ৮৩২টি ওষুধের দাম গড়ে ৪.৬% হারে বেড়েছে। “
জানুয়ারি ২০২২-এ ওষুধের দাম বাড়ার বিশদ: (মূল টেবিলের ১ ও তিন নং সারণী দেখানো হল)
Brand:791 brand drugs have increased by an average of 4.9%
Generic:19 generic drugs have increased by an average of 12.6%
Total:810 drugs in total have increased by an average of 5.1%
অদ্ভুত মিল পাচ্ছি আমেরিকার মূল্যবৃদ্ধি এবং ওষুধের সংখ্যার সাথে।
১৯৮০ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে রোনাল্ড রেগানের নির্বাচন বোধ করি বিগ ফার্মা-দের উত্থানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। এসময়ে কেবলমাত্র রাষ্ট্রনীতিতে নয়, সামাজিক ক্ষেত্রেও প্রবলভাবে প্রো-বিজনেস শিফট হল। ১৯৮০-তেই রচিত হল বি/কু-খ্যাত বে-ডোল আইন (Pub. L. 96-517, December 12, 1980)। ইন্ডিয়ানার ডেমোক্র্যাট সেনেটর বার্চ বে এবং কানসাসের রিপাব্লিকান সেনেটর রবার্ট ডোলের যৌথ উদ্যোগে জন্ম নিল এ আইন। পুঁজির অবাধ বিচরণের জন্য যা ডেমোক্র্যাট তাই রিপাবলিকান – আমে দুধে মিশে যায় অভ্রান্তভাবে। ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর হেলথ (NIH), আমেরিকার একটি সরকারি সংস্থা যা চিকিৎসা গবেষণার অনুদান দেয়, এই অনুদান আসে করদাতাদের টাকা থেকে। টেকনোলজি ট্রান্সফারের নামে বে-ডোল আইন অনুসারে NIH ছোট ব্যবসা ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে তাদের অনুদানে চলা গবেষণার থেকে আবিষ্কৃত ওষুধের পেটেন্ট নিতে উৎসাহি করল এবং পরবর্তীকালে বড় ওষুধকোম্পানিগুলিকে এক্সক্লুসিভ লাইন্সেন্স দিল সেই ওষুধ বাজারে আনার জন্য ( Marcia Angell, The Truth about the Drug Companies: How They Deceive Us and What to Do about It, 2004, p. 7)
PLoS-এ ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে প্রকাশিত সম্পাদকীয় “নিউক্লিয়ার ওয়েপনস অ্যান্ড নেগলেক্টেড ডিজিজেসঃ দ্য টেন থাউস্যান্ড-টু-ওয়ান গ্যাপ”-এ বলা হয়েছিল – “১১টি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের পারমাণবিক অস্ত্র রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যা খরচ হয় তার ১/১০,০০০ ভাগেরও কম খরচে অবহেলিত রোগগুলোকে নির্মূল করা ও বিশ্বের উত্তেজনা কমিয়ে শান্তি রক্ষা করা সম্ভব।”
আজ থেকে প্রায় ৪৫ বছর আগে, ১৯৭৮ সালে অতিবৃহৎ বহুজাতিক কোম্পানি মার্ক-এর তদানীন্তন প্রধান কর্মকর্তা হেনরি গ্যাডসডেন বিখ্যাত ফরচুন পত্রিকার প্রতিনিধি ডবলু রবার্টসন-কে জানিয়েছিলেন (Forune, March, 1976) যে তাঁরা বহুজাতিক কোম্পানি রিগলির মতন হতে চান, যাদের জিনিস সকলে কেনে।
তুলনাটি বড়ো কৌতুকপ্রদ। রিগলি কোম্পানি, আমাদের অনেকেরই জানা, আমেরিকার একটি বিখ্যাত বাবল গাম প্রস্তুতকারক কোম্পানি। গ্যাডসডেন-এর আক্ষেপ হল যে বাবল গাম-এর মতো ওষুধকেও সবার কাছে বিক্রি করতে পারলেন না।! অতঃ কিম্? এরপরে শুরু হল সুকৌশলী এবং প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করে রোগ বা অসুখ বিক্রি করার নিরন্তর, ধারাবাহিক ও হিংস্র একটি উপাখ্যান লেখার ইতিহাস। সে ইতিহাসের সানুপুঙ্খ বিবরণ ধরা আছে রে ময়নিহান এবং অ্যালান ক্যাসেলস-এর লেখা Selling Sickness: How Drug Companies Are Turning Us All Into Patients (Allen Unwin, 2008) পুস্তকে। আগ্রহী পাঠকেরা নিশ্চয়ই বইটি দেখবেন।
অধুনা একটি অতি জনপ্রিয় চালু বিষয় হল “whole body check-up”। যে বিশাল সংখ্যক রোগী প্রধানত দক্ষিণ ভারতে পাড়ি জমান চিকিৎসার জন্য তাদের জন্য অ্যাপোলো হাসপাতাল সম্ভবত প্রথম বাণিজ্যিকভাবে অত্যন্ত লাভজনক এরকম একটি প্যাকেজ চালু করে। রোগীদের চিন্তায়, মননে এবং বোধে ধীরে ধীরে সংক্রামিত হতে থাকে একবার whole body check-up করে ফেলতে পারলে রোগ নিয়ে আর দুর্ভাবনার বিশেষ কিছু থাকে না। একটু নজর করলে বুঝবো মানুষের স্বাভাবিক সুস্থতার মাঝে একটি অপরিহার্য বিপন্নতাবোধের জন্ম হচ্ছে, মানুষ আরও বেশি বেশি পরিমাণে ওষুধের ওপরেনির্ভর করতে শুরু করছে, যাকে আমরা বলছি medicalization of life। এ প্রসঙ্গে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (৯-ই জুন,২০১৪) প্রকাশিত একটি সম্পাদকীয় এবং আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা পত্রের উল্লেখ করা যেতে পারে। সম্পাদকীয়-র শিরোনাম – “General health checks don’t work: It’s time to let them go”। এতে বলা হয়েছিল –হেলথ চেক-আপের সুযোগকে যে সব মানুষ পান তাঁরা উচ্চতর আর্থসামাজিক বর্গের এবং, তাঁদের হৃদরোগের সম্ভাবনা ও মৃত্যুর আশংকা কম। অর্থাৎ সচরাচর যারা এ ধরণের চেক-আপ করাতে যান তারা অর্থনৈতিকভাবে সুস্থিত অবস্থায় থাকার ফলে বিশেষ কিছু শারীরিক সমস্যার সম্ভাবনা সাধারণভাবে কম। Danish Inter99 Trial-এর একটি বড়ো রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালের এক-ই সংখ্যায়। ১৯৯৯-২০০৪ পর্যন্ত ৩০-৬০ বছর বয়সি ৫৯,৬১৬ জন মানুষের ওপরে এ সমীক্ষা করা হয়েছিলো। সমীক্ষায় কিছু গোষ্ঠীর বিভিন্ন ব্যক্তিকে ইসকিমিক হার্ট ডিজিজের নিয়মিত পরীক্ষাইয় রাখা হল এবং তাদের লাইফস্টাইল পাঁচবছর সেই অনুসারে নিয়ন্ত্রণ করা হল। দশ বছর পরে দেখা গেল সেইসব ব্যক্তির ইসকিমিক হার্ট ডিজিজ, স্ট্রোকের সম্ভাবনা বা মৃত্যুহারে তাদের গোষ্ঠীর অন্যান্য মানুষের থেকে খুব কোনও ফারাক নেই।
আজ থেকে ২১ বছর আগে নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর ২৪শে জুন ২০০১ সংখ্যায় মার্গারেট ট্যালবট একটি প্রবন্ধ লেখেন – “The Shyness Syndrome”। এ প্রবন্ধে তিনি দেখান ডেভিড বেকহ্যাম, স্পাইস গার্ল বা রিকি উইলিয়ামস-এর মতো সেলিব্রিটিরা ওষুধ কোম্পানির টাকায় মিডিয়ার সামনে কেমন করে নতুন ধরণের সামাজিক ফোবিয়ার শিকার হচ্ছেন বলে জানাচ্ছেন। একটি নতুন অ্যান্টি ডিপ্রেসেন্ট ওষুধ তৈরি হচ্ছে এই ফোবিয়ার জন্য। যে বিশেষ বৈশিষ্ট্য মানুষের ভিন্নতার জন্ম দেয়, সেরকম একটি বৈশিষ্ট্য স্বল্পবাক বা লাজুক চরিত্রকে medicalize করে ফেলতে পারলে তা ওষুধের ও চিকিৎসার আওতার মধ্যে চলে আসবে। নতুন ওষুধ তৈরি হবে। কয়েক মিলিয়ন বা বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হবে। ক্রিস্টোফার লেন মন্তব্য করছেন যে কাউকে তার স্বল্পবাক বা লাজুক চরিত্রের জন্য চিকিৎসা করা হচ্ছে বললে লোকে সেই চিকিৎসা নিয়ে উপহাস করবে, কিন্তু যদি বলা হয় সোশাল ফোবিয়া ও তজ্জনিত ডিসঅর্ডারের (বিশেষ মনোবৈজ্ঞানিক পরিভাষা উল্লেখ করে) চিকিৎসা করা হয়েছে, তাহলে ইনসিউরেন্স কোম্পানিগুলো সেই চিকিৎসার খরচ ফেরৎ দেবে (Christopher Lane, Shyness: How Normal Behavior Became a Sickness, Yale University Press, 2008)।
ট্যালবট আশঙ্কা বোধ করেন এমন কোন দিন হয়তো আসবে যখন পৃথিবীতে মৃদুভাষী, স্বল্পবাক বা স্বভাব ভীরু বলে কিছু থাকবে না, কেউ সেরকম হলে তার চিকিৎসা করা হবে বিভিন্ন ওষুধ খাইয়ে। এই আশঙ্কার বাস্তব ভিত্তিতে আছে অর্থনৈতিক মুনাফা। আমেরিকাতে ওষুধ কোম্পনিগুলো বছরে (এ হিসেব ২০০৪ সালের এবং এখন বহুল পরিমাণে বেড়েছে) ১১ বিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় করে “on promoting their products.” (Lancet, “Dealing in drugs”, November 6, 2004, pp. 1655-56) অন্য আরেকটি প্রসঙ্গে গবেষকেরা দেখিয়েছেন, কিভাবে মহিলাদের কিছু স্বাভাবিক স্বভাবকে একটি বিশেষ রোগের নামে নামাঙ্কিত করে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করা হয়। (Ray Moynihan and Barbara Mintzes, Sex, Lies, and Pharmaceuticals: How Drug Companies Plan to Profit from Female Sexual Dysfunction, Allen & Unwin, 2010).
এরকম একটি চিন্তা, মত ও ভাবনা উৎপাদনের সামাজিক পরিবেশ, ডিজিটাল দুনিয়া, সংবাদমাধ্যম এবং পারস্পরিক আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে আমাদের সময় অতিবাহিত হচ্ছে। ফলে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধিও আমাদের কতটা নাড়া দেবে সেটা চিন্তাসাপেক্ষ।