বই = ডা. নন্দ ঘোষের চেম্বার
লেখক = ডা. সৌম্যকান্তি পন্ডা
প্রকাশক = প্রণতি প্রকাশনী
মুদ্রিত মূল্য = ১০০ টাকা (প্রথম সংস্করণ)
———————————————————————————————————————
১) অন্ধকারের রাজ্যে —— একদিকে চিকিৎসা অন্যদিকে কুসংস্কারের বিশ্বাসী হাতুড়ের টোটকার মাঝে ভুগতে থাকা রোগীর কাহিনী এখানে বিবৃত।
২) ভরসা —— আজকের দিনে যখন রোগী এবং চিকিৎসাকর্মীদের পরষ্পরের প্রতি বিশ্বাস দোদুল্যমান, তখন এই কাহিনী রোগী তথা সাধারণ মানুষের প্রতি চিকিৎসকের ভরসা আবার জাগিয়ে তোলে।
৩) কুহু —— দৈনন্দিন জীবনের নানা কারণে মেজাজ খারাপ হয়ে থাকা চিকিৎসকের তার রোগীর চিকিৎসার মাধ্যমেই মন ভালো হওয়া নিয়ে এই কাহিনীটি।
চিকিৎসকের মনের একটি দিক এই কাহিনীতে সুন্দরভাবে চিত্রিত।
৪) কাশি নিয়ে ঝেড়ে কাশি —— কাশি যে শুধু রোগ নয় বরং বিভিন্ন রোগের উপসর্গও বটে এবং কাশি হলেও কোনও একটা "কাশির ওষুধ" সেবন না করে সঠিক রোগ নির্ণয় করে সেই অনুযায়ী চিকিৎসার প্রয়োজন কতটা, সেটা এই কাহিনীতে বিবৃত।
৫) লক্ষ্মী পুজো —— কন্যাসন্তান যে এখনো কিছু ঘরে অবাঞ্ছিত সেই কাহিনীই এই গল্পে দেখা যায়।
৬) লিচুর আমি লিচুর তুমি —— লিচু কি বিষাক্ত? বা, গরমকালে লিচু খেয়ে শিশুমৃত্যু ঘটার খবর আসে কেন? — এই জাতীয় প্রশ্নের উত্তর এই লেখায় পাবেন।
৭) অ্যাসক্লেপিয়াসের দন্ড বনাম হার্মিসের ক্যাডুসিয়াস —— চিকিৎসকদের প্রতীক হিসেবে একটি সাপওয়ালা দন্ড অথবা দন্ডের দুই দিকে জড়িয়ে থাকা দুইটি সাপ, কোনটি কেমন করে প্রচলিত হলো সেই ইতিহাসটি জানতে গেলে এই গল্পটি পড়তে হবে।
৮) বসন্ত এসে গেছে —— বসন্ত অর্থাৎ জলবসন্তের চিকিৎসা নিয়ে জানতে এই কাহিনীটি পড়তে পারেন। বসন্তে গায়ের চামড়া খসে পড়া গুটি বা খোসা নিয়ে প্রচলিত একটি ভুলও এই কাহিনীতে দূর করা হয়েছে।
এরসাথেই শুধুমাত্র দূরভাষ বা চলভাষের মাধ্যমে রোগীকে না দেখেই চিকিৎসার নিদান দিতে চিকিৎসকের কেন সমস্যা হয় সেটাও এই কাহিনীতে জানানো আছে।
৯) ফিরিবার পথ নাহি দূর হতে দেখ চাহি পারিবে না চিনতে আমায় হে বন্ধু বিদায় —— বাচ্চার হাঁপানির চিকিৎসা, Inhaler-এর প্রকার ভেদ এবং তার ব্যবহারের প্রণালী, ঔষধের সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রভৃতি বিষয় এই গল্পে লেখা আছে।
Inhaler যকৃতে গেলে কর্মদক্ষতা কমে কেন, সেটা থাকলে আরো ভালো হতো। এছাড়া, কর্মদক্ষতা কমলেও এই ওষুধ আছে কেন বা ব্যবহার করতে বলা হয় কেন সেটাও দিলে আরো ভালো হতো।
১০) প্রথম ছমাস শুধুই বুকের দুধ —— লেখাটির শিরোনাম থেকেই এই গল্পের বিষয়বস্তু ধারণা পাবেন। মায়ের বুকের দুধ শিশুর জন্য কতটা প্রয়োজনীয়, কেমন পরিমাণে খাওয়াতে হবে ইত্যাদি বিষয়ে এখানে জানানো হয়েছে।
১১) অন্তর্মুখী স্তনবৃন্ত —— মায়ের অন্তর্মুখী স্তনবৃন্ত (Inverted Nipple) থাকলে সেই ক্ষেত্রে বাচ্চার স্তন্যপানে উদ্ধুত সমস্যা এবং তার প্রতিকার নিয়ে এই কাহিনীটি লেখা হয়েছে।
সিলকনের নিপল শিল্ড আর ব্রেস্ট পাম্পের কথা চিত্রের মাধ্যমে উল্লেখ করার সাথে বিশদে লিখে ব্যাখ্যা করলে আরো ভালো হতো।
১২) অবিনাশী দাদ —— সাধারণ দাদ কেমন করে ভুল ঔষধ সেবনের ফলে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে তা এই গল্পের মাধ্যমে জানানো হয়েছে।
১৩) ডায়েরিয়া ও অ্যান্টিবায়োটিক —— ডায়েরিয়া হলেই নিজেই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার অভ্যাস যে কীভাবে রোগীর ভালোর জায়গায় মন্দ করতে পারে তা এই কাহিনীটিতে বলা হয়েছে।
সাধারণ মানুষের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় পাঠ।
১৪) নেফ্রোটিক সিনড্রোম —— এই লেখায় Nephrotic syndrome এবং এটির চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
পেচ্ছাবের প্রোটিন মাপার পদ্ধতিটা থাকলে ভালো হতো।
১৫) দেবীর বোধন —— এখানে ভারতের প্রথম টেস্ট-টিউব বেবি প্রস্তুতকারক ডাক্তার সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।
১৬) বিজয়া দশমী —— এখানে ডাক্তার নন্দ ঘোষ দুর্গাপূজা নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন।
১৭) কিংবদন্তি বনাম ঈশ্বর —— ভারতের সাম্প্রতিক অতীতের চিকিৎসার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান অবস্থা নিয়ে ছোট একটি তুলনা করা হয়েছে।
১৮) স্ক্রাবুন স্ক্রাবা প্র্যাক্টিস করুন —— এখানে স্ক্রাব টাইফাস রোগ এবং তার চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
রিকেটিসিয়াল ডিজিজ যে Rickettsiaceae Family-এর ব্যাক্টেরিয়া থেকে এসেছে সেটা উল্লেখ করতে ভালো হতো। নাহলে স্ক্রাব টাইফাসের জন্য দায়ী Orientia tsutsugamushi নামক ব্যাক্টেরিয়ার সাথে রিকেটিসিয়া ব্যাক্টেরিয়ার সম্পর্ক (Same Family, Different Genus) লেখা না থাকায় রোগটার নাম "ওরিয়েন্সিয়াল ডিজিজ" জাতীয় না হয়ে রিকেটিসিয়াল হলো কেন সেটা নিয়ে অনেকেই ভাবতে পারেন।
১৯) এবং অ্যান্টিবায়োটিক আবারও —— অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করার সার্বজনীন নির্দেশাবলী (General Guidelines) নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়েছে।
এই আলোচনাটা চিকিৎসক ও রোগী বা রোগীর আত্মীয়দের মধ্যে হয়েছে; এর সাথে এটি মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভদের জন্যও খুবই দরকারি।
২০) নজরবন্দি খেলা —— চোখে কাজল দিলে কেমন সমস্যা তৈরী হতে সেই নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়েছে।
কাজলে থাকা কোন কোন পদার্থ কেমনভাবে চোখের ক্ষতি করে সেটা আরো বিশদে বলার ভালো ছিলো। আর সেটা সারানো যায় কিনা (repairable damage) এবং তার চিকিৎসার পদ্ধতি ও খরচ সম্পর্কে একটি ছোট ধারণা দিলে আরো ভালো হতো।
২১) ছ মাসের পরে বাড়ির খাবার —— শিশুর বয়স ছয় মাস হওয়ার পরে তার খাদ্যাভ্যাসের কেমন পরিবর্তন করতে হবে সেই নিয়ে এখানে আলোচনা করা হয়েছে।
২২) বিসিজি টিকা —— এখানে বিসিজি টিকা নিয়ে আলোচনা করার সাথে সাথে এর ইতিহাসটাও জানানো হয়েছে।
BCG-এর জীবাণু একবার মারা গেলে দ্বিতীয়বার টিকা দেওয়া যায়না কেন, তার বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দিলে খুব ভালো হতো।
২৩) গরু হইতে সাবধান —— গরুর দুধ বাচ্চার জন্য কেমন সমস্যা তৈরী করতে পারে সেটা এখানে বিবৃত।
২৪) দাঁত কিড়মিড় —— দাঁত কিড়মিড় মানেই যে কৃমির রোগ নয় সেটা এই কাহিনী থেকে জানা যায়।
২৫) ভ্যাকসিন —— ফতোয়ার জন্য কেমন করে শিশুর টিকাকরণের কাজে বাধার সৃষ্টি হয়, সেই নিয়ে এই লেখাটি।
মূল লেখার "ভ্যাকSin" নামটিই আরো ভালো ছিলো (লেখাটি আমি Facebook-এ লেখকের Post-এ পড়েছিলাম)।
২৬) বাজারের থলিতে ইমিউনিটি —— এখানে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং সেটা বজায় রাখা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে।
২৭) একটি মজে যাওয়া লিভার ও কয়েকটি ভাবনা —— বিলিয়ারি আর্টেসিয়া রোগটি নিয়ে ছোট করে আলোচনা করা হয়েছে, যেখানে অপচিকিৎসার ফলও দেখানো হয়েছে।
২৮) গামছা কাঁধে কেষ্ট রাধে —— করোনার জন্য মাস্ক পরার নিয়ম জানানো হয়েছে।
তথ্যসূত্রের উল্লেখ এখানে দরকার ছিলো, কারণ, পরবর্তীকালে Guidelines বদলালে লেখাটি নিয়ে ভুল ধারণা তৈরী হতে পারে। কিন্তু বইটির প্রকাশকাল যেহেতু আমরা জানতে পারছি, তাই সেটা খেয়াল রাখলে পাঠকের অতটাও সমস্যা হবে না।
২৯) কোয়ারেন্টাইন বনাম আইসোলেশন —— এখানে কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশনের পার্থক্য বোঝানো হয়েছে।
৩০) টিউমার নিয়ে ধুন্ধুমার —— লসিকা গ্রন্থির বৃদ্ধির জন্য টিউমার কেমনভাবে তৈরী হয় সেটা এখানে জানানো হয়েছে। তার সাথেই, বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে চিকিৎসার উপর আবার জোর দেওয়া হয়েছে।
৩১) করোনা ও টিকাকরণ —— ধর্মীয় গোঁড়ামি কেমন করে টিকাকরণের কাজে বাধার সৃষ্টি করে সেই নিয়ে এই প্রবন্ধ।
৩২) ডাইনির দুধ —— কয়েক সপ্তাহ বয়সী শিশুর বুক থেকে মাঝে মাঝে দুধ নিঃসরণের কারণ এখানে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
এই বইটিতে লেখক বারবার কুসংস্কার এবং অপচিকিৎসার বিরুদ্ধে লিখেছেন। এমনকি অপ্রয়োজনীয় ওষুধ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়াও যে একপ্রকার অপচিকিৎসা, সেটাও জানাতে দ্বিধাবোধ করেননি। আর, পুরোটাই জানানো হয়েছে গল্পের মাধ্যমে। সবমিলিয়ে এই বইটিতে থাকা বিষয়গুলিকে সহজভাবে ব্যাখা করা হয়েছে, ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রাথমিক ধারণাটুকুও যাদের নেই, সেই সব মানুষের জন্য এই বইটি কাজে দেবে। একজন চিকিৎসক যেখানে নিজেই এই সমস্ত বিষয় লিখছেন, সেখানে তার দেওয়া তথ্য-যুক্তির উপর ভরসা করাই যায়। তাই, এই বইটি পড়ে এইসব বিষয়ে নিয়ে মানুষের সচেতনতা বাড়বে বলেই আমার মনে হয়েছে।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।