সমস্ত সরকারি চাকরিতে একশো শতাংশ এবং বেসরকারি চাকরি, ঠিকাদার, টেন্ডারে নব্বই শতাংশ ভূমিপুত্র সংরক্ষণ সহ বেশ কিছু দাবি দাওয়া নিয়ে রবিবার প্রকাশ্য সমাবেশের ডাক দিয়েছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন 'বাংলা পক্ষ'। ২০১৮ সালে তৈরি হওয়া এই সংগঠন মূলত বাঙালিদের নানা অধিকার নিয়ে লড়াই আন্দোলন করে আসছে। ধর্মতলায় রানি রাসমণি রোডে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশকে ঐতিহাসিক দাবি করে, সংগঠনের তরফে কৌশিক মাইতি জানালেন,আসন্ন বিধানসভা ভোটে প্রতিটি কেন্দ্রে বাঙালি প্রার্থী দেওয়ার দাবি জানিয়ে খুব শীঘ্রই তাঁরা সমস্ত রাজনৈতিক দলকে স্মারকলিপি দেবেন।
সভার উদ্যোক্তাদের দাবি অনুযায়ী বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় হাজার দুয়েক সমর্থক আজকের সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা থেকে আসা তরুণ প্রদীপ সূত্রধর জানালেন, মূলত সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায় বছর দুয়েক ধরেই বাংলা পক্ষের বিভিন্ন কর্মসূচি দেখে তিনি এই কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসেছেন। এদিন তাঁরা বেশ কয়েকজন বন্ধু একসঙ্গে সভায় এসেছিলেন।
বেকারত্বের সমস্যা যখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তখন এই সময়ে দাঁড়িয়ে চাকরিতে সংরক্ষণসহ সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বাংলা বাধ্যতামূলক করা - এই দাবিসমূহ নিয়ে আন্দোলন মূলত তরুণদের মধ্যে বাংলা পক্ষের প্রতি আকর্ষণ তৈরি করেছে। সুদূর উত্তরবঙ্গ থেকে আসা মানস রায়ের মতে, বাংলা পক্ষের উচিত অবিলম্বে আসন্ন বিধানসভা ভোটে নিজেদের প্রার্থী দেওয়া। তবে এ প্রসঙ্গে, সংগঠনের অন্যতম প্রধান মুখ ড. গর্গ চট্টোপাধ্যায় জানালেন, এখনই ভোটে লড়া নিয়ে তাঁরা কিছু ভাবছেন না, বরং যে দলই জিতে আসুক বাঙালির অধিকার রক্ষায় তাঁরা যাতে পদক্ষেপ করেন, তা বাংলা পক্ষ সুনিশ্চিত করবে।
কেন এই সমাবেশ ঐতিহাসিক তার ব্যাখ্যা করে গর্গ চট্টোপাধ্যায় জানালেন, বাঙালি এর আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মিছিল-সমাবেশ দেখেছে, ধর্মীয় সংগঠনের সভা দেখেছে কিন্তু জাতি হিসেবে বাঙালির দাবি-দাওয়া নিয়ে স্বাধীনতার পরে কোন সংগঠনই সোচ্চার হননি। সেই হিসেবে দেখতে গেলে বাংলা পক্ষ আজ এক ইতিহাসের সূচনা করল।
কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এবং আরএসএস এর সমালোচনা করে গর্গ জানালেন, খুব সুকৌশলে হিন্দি হিন্দু হিন্দুস্থানের একটি প্রকল্প বাঙালির ওপর চাপানো হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় বাংলায় কথা বলার জন্য অপদস্থ হতে হচ্ছে বাঙালিকে। এ ধরনের ঘটনার বিরোধিতায় বাংলা পক্ষ সর্বদা তৎপর থেকেছে বলে তাঁর দাবি।
অন্যতম সংগঠক অমিত সেন জানালেন, বাংলার নানা প্রান্ত থেকে আরও সর্মথকরা আজকের সভায় আসতে চেয়েছিলেন, মূলত অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে তাঁদের পিছিয়ে আসতে হয়েছে। তবে আগামী বছর ব্রিগেড ময়দানে আরও বৃহৎ আকারে কর্মসূচি করার ব্যাপারে তাঁরা আশাবাদী।
রবিবারের সভায় তরুণদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বাংলা পক্ষ মহিলা শাখার তরফে প্রচুর সংখ্যক মহিলাও এই সভায় যোগ দেন। ঘনঘন 'জয় বাংলা' ধ্বনিতে মুখরিত ছিল আজকের ধর্মতলা চত্বর। পথচলতি মানুষজন থমকে দাঁড়িয়ে শুনেছেন সভার বক্তব্য।
গর্গের মতে এদিনের সভার চেয়ার থেকে শুরু করে প্যান্ডেল মাইক সবই বাঙালির টাকায় বাঙালির কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে। এই ছোট ছোট পদক্ষেপই আগামী দিনে বড় সাফল্য এনে দেবে বলে তাঁর প্রত্যয়।
1968 সাল নাগাদ এমনই একটি সংগঠন শুরু করেছিল -- বাঙালি জাগো, বাঙালি গর্জে ওঠো। বঙ্গভঙ্গই বাঙালির অধ:পতনের মূল কারণ ইত্যাদি।
গোটা শহর দেয়াললিপিতে ভরে দিয়েছিল।
আলোচ্য সংগঠন প্রধান ড: গর্ব কি বিভিন্ন চ্যানেলে দিদির হয়ে গলা ফাটানো ভদ্রলোক?
তাহলে ইলেকশানের আগে গজিয়ে ওঠা এটি মনে হয় দিদির "বাঙালি" চাল।
ঢপের কেত্তন
সরকারি চাকরিতে ১০০% ও বেসরকারি চাকরিতে ৯০% ভূমিপুত্রদের জন্য সংরক্ষণ - এই মূল দাবীর উল্লেখই তো প্রতিবেদনে নেই।
ইয়ে এই বাঙালির টাকা ব্যাপারটা কি? মা সারদার কৃপায় নতুন কারেন্সি চালু হয়েছে নাকি?
গর্গ চ্যাটার্জি জিন্দাবাদ। কৌশিক মাইতি জিন্দাবাদ, বাংলা পক্ষের জয় হোক।।
আজ বাংলা পক্ষ আছে বলেই ব্রিটিশ এর পা চাটা কিছু বাঙালির ফাটছে, যতো ফাটবে বাংলা পক্ষ ততো বড়ো হবে,
এটা প্রতিবেদন কম, বাংলাপক্ষের ইস্তেহার বেশি হয়েছে।
এবার গুরুচণ্ডা৯ একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাপক্ষের ইস্তেহার বিলি করতে চায় কিনা, সেটা ভেবে দেখা ভালো।
@জয় বাংলা.. প্রতিবেদনের একদম প্রথম লাইন টা আর একবার চোখ বুলিয়ে নিলে ভালো হয়।
@হুতো, এটা বাংলাপক্ষের ইস্তাহার মনে হল কেন? এর আগে 'আমরা এক সচেতন প্রয়াস' এর প্রোগ্রাম যেভাবে রিপোর্ট করা হয়েছে, 'জনতাপক্ষ'র প্রোগ্রাম যেভাবে রিপোর্ট করা হয়েছে, 'অন্নদাতাদের সাথে বাংলা'র অবস্থান কর্মসূচির রিপোর্ট যেভাবে করা হয়েছে তার সাথে এই রিপোর্টিংএর ধরনের তো কোনো তফাৎ নেই। ওগুলোতে বরং কিছু 'ওপিনিয়ন'ধর্মী ঝোঁক রাখা হয়েছে। এবং সেগুলো ঐ প্রোগ্রামগুলোর পক্ষে। এক্ষেত্রে সেটাও যতটাসম্ভব এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রোগ্রামের সংগঠকরা কী বলছেন, সেটুকুই তুলে ধরা হয়েছে তাঁদের বয়ানে। ওপিনিয়ন যতটাসম্ভব না দিয়ে এর চেয়ে অন্যরকম কোনো রিপোর্টিং করা যেত বলে তো আমার মনে হয়না। হ্যাঁ, এক্সপেক্টেশন যদি এইটা হয় যে বাংলাপক্ষের বিরোধী কোনো 'ওপিনিয়ন'এর ঝোঁক রিপোর্টিংএ কেন থাকল না - সে হলে অন্য কথা। কিন্তু সেক্ষেত্রে সেটা ওপিনিয়ন পিস হত। এটা যতদূর সম্ভব 'খবর' হিসেবেই পরিবেশন করতে চাওয়া বলেই আমার মনে হল।
আমার বক্তব্যের সমর্থনে আমি টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্টিংএর লিংক দিলাম।
হুতোর কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাইব এই রিপোর্টিংএর সাথে আমাদের রিপোর্টিং কোথায় আলাদা? লাইন তুলে দেখিয়ে দিলে ভাল হয়। অভিযোগটা হাল্কাভাবে নিচ্ছি না। রিপোর্টিং এর ধরনে কোনো ইমপ্রুভমেন্ট শেখার থাকলে নিশ্চয়ই শিখতে আগ্রহী।
মেধাশক্তির জোরে যদি ভিন রাজ্যের ভিন ভাষা ভাষির লোক এই রাজ্যে চাকরি পায় ....যদি আমাদের ঘর কুনো বাছারা বাইরে দূরে গিয়ে রোজগার করতে অপারগ হয় , বা এই মানসিকতা থাকে যে "" ওরা আমাদের সব নিয়ে নিলো ।...খেয়ে নিলো ।..এই ধরনের ।..তাহলে আপত্তি আছে !! ওখানে আমাদের বাছাদের একটু ""হেইসা মার জোরসে ""করতে হবে !!আর যদি হিন্দি- হিন্দু - হিন্দুস্তানী বা ""কাউবেল্ট "" সংস্কৃতি কে এবং তাদের প্রকল্পগুলো কে বন্ধ করতেহয় ।..তবে মনেহয় আরেকটা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হয় !!সেটাহলো ।..পাপা ।..মাম্মী ।।.আই লাভ ইউ সংস্কৃতির মুখে ঝাঁটা মারতেহবে ।...একেবারে ঘর থেকে শুরু ।..ওই হনূমান চালিসা পাঠ ।।.রাম ভক্ত ।..গনেশ বন্দনা ।..বড়দিন নিয়ে আদিখ্যেতা ।..বার্থডে কেক কাটার ন্যাকামো ((আজকাল বুড়ো বুড়ি সব ভুড়ুঙ্গে গুলোও যা করে থাকে ))..এই সব আদতে বাংলা সংস্কৃতির পরিপন্থী বলেমনেহয় !!! যুদ্ধ টা এই দুই ফ্রন্টে দরকার ।...বুয়েচ বাছা ????
বার্থডে কেক কাটা চলবে না আর আই লাভ ইউ বলা যাবেনা। বেশ। আর কি কি চলবে না? ফতোয়াগুলো এক এক করে পেশ করে ফেললে ভালো হয়।
লাইন ধরে ধরে কী করে বলবো, ওরকম হয় নাকি! পুরো একটা লেখার থেকে তার সুরটা ধরা পড়ে। গর্গবাবুর নীরবতা ভঙ্গ হলো, গুরু তার সাক্ষী থাকলো - এখানেই তো সুরটা বাঁধা হয়ে গেল - নার্গিসবনে কবি নীরব ছিলেন, তার নীরবতা ভঙ্গের ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী গুরুচণ্ডা৯। বিপুল সংখ্যক তরুণকন্ঠে জয় বাংলা গর্জন শুনে থমকে যাওয়া পথিক - এটা আমার কাছে ওপিনিয়ন না, ওপিনিয়নতর লাগলো!
এমনিতে বাঙালী জাতিসত্ত্বা, ঐতিহাসিক বঞ্চনা ও তার বিশ্লেষণ - এইগুলি অতি গুরুতর জিনিস এবং এগুলো নিয়ে চর্চা, সচেতনতা হওয়াই উচিত। কিন্তু বাংলা পক্ষ নিয়ে নানাবিধ সন্দেহের অবকাশ তো এখনো আছে। যারাই বিজেপির বিরুদ্ধে গলা তুলছে, তাদের প্রতি কিছু পক্ষপাতও আমারও আছে। কিন্তু নন্দীগ্রামের মুক্তিসূর্যও তো বিজেপিকে গাল দিত। বাংলাপক্ষ যদি শিবসেনা মডেল হয়, তাহলেও সন্দেহ করার কারন আছে।
আমরা এক সচেতন প্রয়াসের ধারাবাহিক খুবই ভালো লেগেছিল, অবজেক্টিভ রিপোর্টিং এবং অন্তর্লীন মানবিকতার সুরটা; কিন্তু ঐ পুরো ব্যাপারটার সঙ্গেই এর তুলনা চলে না, এমনিতেই নানান দল ও গোষ্ঠীর আঁতাত এই বাজারে নড়বড়ে। এই প্রতিবেদনে পক্ষপাতটা লুকনো থাকেনি।
হ্যাঁ, আরেকটু নরম করে, ইস্তেহার না বলে পক্ষপাত বললে হয়তো আরেকটু সাবধানী শব্দচয়ন হতোঃ)
এখানে দ্বিমত আছে। :-)
1) এই সমাবেশটা নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এক, শুধুমাত্র বাংলা জাতীয়তাবাদী দাবী নিয়ে কোনো সংগঠন এর আগে কলকাতায় এরকম সমাবেশ করেনি, জেলা টেলা থেকে লোক এনে। শুধুমাত্র ফেসবুকের হৈহল্লার বাইরে বাংলা জাতীয়তাবাদ একটা সাংগঠ্নিক রূপ নিচ্ছে - এটা এই সভা থেকে অনেকটাই নির্ণায়কভাবে সামনে এল। বিশেষত এমন একটা সময়ে যখন গর্গ লাস্ট কয়েকমাস সীনে নেই এবং তৃণমূলের সাথে বাংলাপক্ষর সুসম্পর্ক আর সেভাবে এগজিস্ট করে না। দুই, গর্গ বেশ কয়েকমাস আত্মগোপন করার পর এই সভায় প্রকাশ্যে এল। এই দুটো বিষয়ই - কেউ পছন্দ করুক বা না করুক - নিজে থেকেই 'খবর' হওয়ার দাবি রাখে। কেউ বংলা জাতীয়তাবাদকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে করলে তার কাছে তো অতি অবশ্যই রাখে। এই কারণেই রন্তিদেবকে পাঠানো হয়েছিল কভার করতে। সাক্ষী থাকা এখানে লিটারালি। পক্ষ নিয়ে অতিরঞ্জন করা অর্থে নয়।
2) আমি নিজে গতকালের গর্গর ভাষণটা শুনেছি। পুরো ৫০ মিনিটের। ফেসবুকে আছে। এখানে কোনো অতিরঞ্জন করা হয়নি। দুমিনিট অন্তর অন্তর জয় বাংলা স্লোগান উঠছিল। স্পিরিট খুবই হাই ছিল। সেটাকে স্বীকৃতি না দেওয়াই বরং নিজের সাবজেক্টিভ বায়াস চাপিয়ে দেওয়া। পথচলতি লোক থমকে শুনছিল কিনা সেটা ফেসবুক থেকে বুঝতে পারিনি। ওটা রন্তিদেব দেখেছে, ও বেটার বলতে পারবে।
এটা যে খবর হওয়া উচিত তা নিয়ে কিন্তু দ্বিমত একেবারেই নেই। খবর অবশ্যই হওয়া উচিত, দিলীপ ঘোষ তথাগত রায় শোভন মুকুল কী বললো তার থেকে অনেক বেশি করেই খবর হওয়া উচিত। আমার সমস্যা একেবারেই, যেটাকে আমার কাছে পক্ষ নেওয়া বলে মনে হয়েছে সেটা নিয়ে।
বাঙালী জাতীয়তাবাদ গুরুত্ত্বপূর্ণ (যদিও কাঙ্খিত কিনা তা নিয়ে খুব তর্ক আছে, আদৌ কোনরকম জাতীয়তাবাদই সুবিধের জিনিস না), বা বাঙালী জাতিসত্ত্বা, আত্মপরিচয়, ইতিহাস সেসব অতি গুরুতর, কিন্তু ভূমিপুত্রদের ১০০% সংরক্ষণ যারা চায়, তাদের সঙ্গে অভিবাসনকারী বা পরিযায়ীবিদ্বেষেদের তফাত কতটা তার তুল্যমুল্য বিচার না করে একটুও বায়াস আমার কাছে বিপজ্জনক।
সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ আটকাতে গিয়ে পাল্টা সাম্রাজ্য বা ঘেটো, দুটোই কঠিন ব্যাপার।
"হিন্দি কেন?
৫ জানুয়ারি এসবিআই (বেনিয়াপুকুর, আইটি বিল্ডিং) শাখার প্রবন্ধককে ফোন করলে সরাসরি বলেন, “আপনি হিন্দিতে কথা বলুন।” আমি হিন্দি জানি না। বাংলায় বলি। তবুও তিনি বলেন, “হিন্দিতে বলুন। বাংলা বুঝতে পারি না।” আমি কী ভাবে বলব? তাঁর এক কথা— “ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে বলুন, আমি বুঝে নেব।” আমাকে বাধ্য করলেন আধা হিন্দি আধা বাংলায় কথা বলতে। জানি না প্রবন্ধক মহাশয়কে আমার কথা বোঝাতে পারলাম কি না!
আমি বাংলা ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলতে পারি না। এই ব্যাঙ্কে আমি বহু পুরনো গ্রাহক। নিজের মাতৃভাষায় জরুরি কথা বলতে না পেরে যে অপমানিত হলাম বৃদ্ধ বয়সে, তা কিছুতেই ভুলতে পারছি না।
গৌতম দে, কলকাতা-৫৬"
আজকের আনন্দবাজার থেকে।
আমাকে কেউ হিন্দিতে বলতে বললে তো আমি হিন্দিতেই বলি। ইংরেজিতে বলতে বললে ইংরেজিতে বলি। কোন অসুবিধে হয়না।
কিছুদিন আগে কলকাতা থেকে বাগডোগরা গেলাম বিমানে, আসা যাওয়া র কোনো সময় ই দুই বিমানবন্দরে কোথাও বাঙ্গলায় ঘোষনা শুনতে পেলাম না। বিমানবালা রাও উড়ানে গুরুত্বপুর্ন ঘোষনা শুধু ইঙ্গরেজি ও হিন্দি তেই সারলেন।
ডিসি আপনার যেমন অসুবিধে হয় না, তেমনি বহুলোকের অসুবিধে হয়।
একদা সুনীল গাঙ্গুলীও এই রকম বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের সব দোকানের অফিসের হোর্ডিং প্লাকার্ড বিজ্ঞাপন দেওয়াল লিখন সব বাংলায় করতে হবে। বেশ কিছুটা কাজ হয়েওছিল। আবার গর্জে ওঠা দরকার। ভেতো বাঙালীর বদনাম একটু ঘুচুক। বাংলায় অন্য ভাষা চাপাতে এলে পাতি ক্যালানো দরকার। কিছু ক্যালাকেলি হলে আবার কিছুদিনের জন্য সব সোজা হবে। অন্য ভাষা থাকলে পাশে থাকুক। ফন্ট সাইজ বাংলার চেয়ে ছোটো হতে হবে ব্যাস। আলটিমেটাম দেওয়া দরকার। এক মাসের মধ্যে না পাল্টালে ভেঙে দেওয়া হবে।
অন্তত এইটুকু করাই যায় - যখন স্যার আপকে লিয়ে অফার হায় বলে ফোন আসে, তখন বলতে হয় বাংলায় বলুন। কিছু লোক বলে - কিছু লোক সরি বলে রেখে দেয়। ওটা ফিডব্যাক লুপও হতে পারে আশা করা যায়।
আমাকে আমার রাজ্যে কিছু বেচতে হলে আমার ভাষায় কথা বলেই বেচতে হবে - এতে সবার জোর দেয়া উচিত। যেরকম আপনি ইউপি গিয়ে বাংলা বললে কেউ শুনবে না - সেইরকম। শ্রেষ্ঠ রাস্তা নয় - তবে জরুরি।
জয় বাংলা। বাংলা ও বাঙালির স্বার্থে বাংলাপক্ষ লড়ছে, লড়বে। ভূমিপুত্র সংরক্ষণ আইন বলবৎ এই বাংলায় বাঙালি ও ভূমিজ জাতির স্বার্থে করতে হবে। জয় বাঙালী।
কনজাঙ্কটিভাইটিস
ডিসি কে কেউ তামিল ,কন্নড় বা মালায়ালী তে বলতে বললে সেটাও বলেন কি ?
আমার সাথে কেউ তামিলে কথা বলতে চাইলে আমি তামিলেই বলি। কোন কিছু বুঝতে না পারলে জিগ্যেস করে নি। আমার কয়েকজন ভালো তামিল বন্ধু আছে, তাদের সাথে তমিল / ইংরেজিতে কথা বলি। কন্নড় আর মালয়ালি জানিনা, ঐ ভাষাগুলোতে কেউ কথা বলতে চাইলে আমি ইংরেজি আর হিন্দির অপশান দি। ভাষা নিয়ে সেরকম অসুবিধে কোথাও হয়েছে বলে মনে পড়েনা, কোন না কোন ভাবে আদান প্রদান হয়েই যায়। আর কোন একটা ভাষায় কথা বলতেই হবে, সেরকম কোন প্রেফারেন্স আমার নেই।
ডিসি বললেও বলতে পারেন, কে জানে। যতদূর মনে পড়ে ডিসি আগে বলেছিলেন দু'পাঁচটা ভাষা শিখে ফেলা এমন আর কী কঠিন ব্যাপার।
এখানে যদিও ডিসি এক্সপ্লিসিটলি সেরকম বলেননি, তবু পোস্টটা পড়ে মনে হলো, আমি তো পারি, এ আর এমন কী অসুবিধে, বা এসব আপত্তির মানেই বা কী।
মুশকিল ঐটাই। আমি তো পারি, অন্যরা কেন পারবে না, এর মধ্য যে সহমর্মিতার ঘাটতিটা আছে, এইটা থেকেই অনেকরকম সমস্যা আসে। যেমন ধরা যাক সরকারী স্বাস্থ্য নিয়ে - বিত্তবানরা ভাবেন আমি তো যেতে পারি বেসরকারী হাসপাতালে। আমি তো পারি টাকা রোজগার করতে, আমি তো পারি নিজেকে টাকা রোজগারের জন্য নিজেকে তৈরী করতে। এবার অনেক লোক যে সেটা পারেনি, সেটাও তো খুব বাস্তব। খবরের কাগজে যে এই চিঠি লিখেছেন, তিনি বাংলা ছাড়া কোন কিছু ভালো জানেন না লিখেছেন, ঐ বাস্তবতা তো অনেক মানুষের। নিজের জায়গায় থেকে সেই স্থানীয় ভাষায় পরিষেবা পাওয়ার জায়গাটা অবশ্যই থাকা উচিত।
ক'বছর আগে নিইয়র্কের কোন খাওয়ার দোকানে ইংরেজি স্প্যানিশ নিয়ে একটা ক্যাও বেঁধেছিল, তাতে প্রগতিশীলরা ডাইভার্সিটির পক্ষে অনেক ভালো ভালো কথা বলেছিলেন, কিন্তু হিন্দি এবং অন্য ভারতীয় ভাষার ক্ষেত্রে সে আর দেখি না।
এয়ার ইন্ডিয়ার উড়ানকালীন বিনোদন চ্যানেলে অপশন আছে হিন্দি, ইংরেজী, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক। স্থানীয়তে আছে গুজরাটি মারাঠী তামিল তেলুগু মালয়ালম। বাংলার কোন চিহ্ন নেই, এবার সেটা এয়ার ইন্ডিয়ার দোষ আমি বলবো না, আগেকার দিনে বড় বড় জায়গায় বাঙালীরা বসে বাংলা প্রোমোট করতেন, সে হয়তো এখন আর হয় না, পড়েছিলাম প্রেমেন্দ্র মিত্র প্রমুখের জন্যেই আকাশবানীতে বেতার উপদেষ্টা বলে একটা পদ চালু হয়েছিল, এখন সেই রাবন লংকা ব্রাহ্মণের তেজ, শিং, ল্যাজ কিছুই নেই, তা যাক, আপদ গেছে। কিন্তু নিজের জায়গায় মানুষ নিজের ভাষায় কথাটিও বলতে না পারলে কী করে হবে।
আমাদের বাঘাযতীন পাড়ায় এক অতিপ্রবীণা ছিলেন, বিকেলে পরিচারিকা নিয়ে লাঠি ঠুকঠুক করে হাঁটতে বেরুতেন। ভীষন সুন্দর দেখতে, পোষাক পরিচ্ছদ সামান্য অলঙ্কার ইত্যাদি থেকে স্বাচ্ছল্য ঠিকরে বেরোয়। পাড়ায় সবার সঙ্গে খুব সদ্ভাব ইত্যাদি। তাঁর মুখের বুলিটি এক্কেবারে অপরিবর্তিত পূর্ববঙ্গীয়, ঐ পাড়া যদিও সব ছিন্নমূলদের নিয়েই তৈরী কিন্তু শেষ নব্বইয়ে ডায়ালেক্টের ইতিহাস অস্তমিত। তো উনি একবার বলেছিলেন, ঐ পার থেকে আসার সময় সবই তো ফেলে এসেছি, কিন্তু ভাষাটাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি, ভাষাটা আমার সঙ্গে থাকবে।
তো ঐ আরকি, ভাষাটা তো থাকে, অনেক মানুষ রাখতে চায়ও।
ও, আর বিটিডাব্লু, এয়ার ইন্ডিয়ার হিন্দিতে দুটি ভাগ আছে, হিন্দি লেটেস্ট আর হিন্দি ক্লাসিক। হ্ন্দি ক্লাসিকের মধ্যে অন্য পাঁচটা সিনেমার সঙ্গে আছে দাবাং টু।
যা বলেছিলাম (বহুভাষা), ডিসির পোস্ট দেখার আগেই পোস্ট করেছিঃ)
r2h, ঠিক সেরকম না :-)
প্রথমত, আমি যা বলেছি সেটা শুধু আমার জন্যই। নিজের মত অন্য কারুর ওপর চাপিয়ে দেওয়ার আমি ঘোর বিরোধী। "আমি তো পারি, অন্যরা পারবে না কেন", এরকম কিছুও বলতে চাইনি। তবে আমার কোন বিশেষ ভাষার প্রতি দুর্বলতা নেই। যেখানে থাকি সেখানকার ভাষা শিখে নি বা শিখে নিতে চাই, আবার সেখান থেকে চলে গেলে সে ভাষা ভুলেও যেতে পারি। এক সময়ে ভালো ফ্রেঞ্চ শিখেছিলাম, এখন অনেকটাই ভুলে গেছি। অনেকদিন বাংলা বলতে বা পড়তে না হলে বাংলাও ভুল যাবো হয়তো, সে নিয়ে কোন দুঃখ থাকবে না। আবারও বলি, এটা শুধু আমার ব্যপার, অন্য কারুর জন্য না।
আর ইন জেনারাল কোনরকম ন্যাশানালিজম বা রিজিওনালিজম এরও আমি বিরোধী। অমুক চাকরি অমুকের জন্য ৯০% সংরক্ষিত করতে হবে, ভূমিপুত্রের অধিকার সবার আগে, এসবেরই বিরোধী। এক সময়ে নাজিরা এসব করেছে, তারপর শিব সেনা করেছে, এই দুদিন আগে ট্রাম্প করলো। এখন দেখছি জাগো বাংলাও করছে। এসব না করলেই ভালো। তাই বলে কি রাস্তায় নেমে জাগো বাংলার বা ট্রাম্পের বিরোধীতা করবো? একেবারেই না। যে যা করছে করুক, আমার কি? গুরুতে কয়েকটা পোস্ট করলাম, এবার কাজ করতে যাবো। এই তো হলো ব্যপার :-)
আবারও ডিঃ দিয়ে দি, ওপরে যা লিখলাম সেসব আমার মত। অন্য কারুর অন্য মত থাকতেই পারে। পসন্দ আপনা আপনা।
আন্দোলন করে ভাষা বাঁচিয়ে রাখার কোন ঐতিহাসিক ও প্রামাণ্য উদাহরণ আছে? পুরো মানবেতিহাস ধরলে?