ভয়েস অফ আমেরিকা-র সংবাদে (৩১.০৭.২০২০) – Could Mumbai’s Slums Be Headed to Herd Immunity? – বলা হল যে একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষা দেখিয়েছে মুম্বাইয়ের বস্তিতে ৫০%-এর বেশি মানুষের ক্ষেত্রে কোভিড-১৯-এর প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি পাওয়া গিয়েছে।সিএনএনসংবাদ সংস্থার সংবাদে (১৩.০৮.২০২০) জানা যাচ্ছে মুম্বাইয়ের বস্তিবাসীদের ৫৭% করোনা পজিটিভ। আবার একইসাথে দেখা যাচ্ছে মুম্বাইয়ের বিখ্যাত বস্তি ধারাভিতে মে মাসে (২০২০) যেখানে গড় সংক্রমণের হার ছিল ৪৩ সেটা আগস্টে নেমে এসেছে ৯-এ। বৃহত্তর মুম্বাইয়ে ক’দিন আগে অব্দি (১৯.০৮.২০২০২-র আগে) গড় সংক্রমিতের হার ছিল ১০০০-এর মতো। ধারাভিতে ৬ আগস্ট পর্যন্ত মোট সংক্রমিতের সংখ্যা ২,৫৯৭। কিন্তু মৃত্যুর হার সে তুলনায় অনেক কম। কেন? সে উত্তর খুঁজবো এ প্রবন্ধে।
অথচ এ যেন এক মৃত্যুমিছিল চলছে – করোনার মৃত্যুমিছিল। ১৮.০৮.২০২০-তে worldometer-এর তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীতে আক্রান্তের সংখ্যা – ২২,১০২,৬৮১। মৃত্যু হয়েছে ৭৭৮,৩৭৬ জনের। সুস্থ হয়েছে – ১৪.৮৪০,৬৬৯ জন। পৃথিবীর সব দেশ এবং একটি দেশের সব অঞ্চল সমানভাবে আক্রান্ত হয়নি।
ভারতে করোনা সংক্রমণের গ্রাফ এখনো ঊর্ধমুখী বা এক্সপোনেনশিয়াল বলা চলে। কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস ঘটিত যে ভয়ঙ্কর সংক্রমণের সময় আমরা অতিবাহিত করছি সেটা একেবারেই অচেনা, আগন্তুক। মানুষের শরীরের সাথে এর কোন পূর্ব পরিচয় ছিলনা। আরএনএ ভাইরাস ঘটিত আগে যে মহামারি হয়েছে – যেমন, ২০০২-৩-এ সার্স-কোভ-১ বা ২০১২-তে মূলত মধ্যপ্রাচ্যে সীমাবদ্ধ মার্স (MERS) – সেগুলোর থেকে এর চরিত্র ভিন্ন। এর গায়ে থাকা স্পাইক প্রোটিনের ফলে সংক্রমণক্ষমতা অনেক বেশি। সাধারণ ফ্লু-র চেয়ে ১০ গুণ বেশি সংক্রমণ ক্ষমতা। যদি আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি তৈরি করতে পারে তাহলে স্থায়ী সমাধান হবে, যেমনটা হাম, পোলিও বা স্মল পক্সের ক্ষেত্রে হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় স্তরে টীকাকরণ কর্মসূচীকে সফল করে তোলার ফলে। বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া এ রোগগুলো এখন পৃথিবী থেকে নির্মূল হয়ে গেছে।
ভারতের ক্ষেত্রে আমরা দেখছি বস্তি অঞ্চলের চাইতে অপেক্ষকৃত স্বচ্ছল এবং সম্ভ্রান্ত অঞ্চলে সংক্রমণের মাত্রা বেশি। তাছাড়াও দেখা যাচ্ছে সংক্রমণের ক্ষেত্রেও দুটি মানুষের মাঝে পার্থক্য ঘটছে, সংক্রমণ হবার পরে কেউ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ছে, আবার কেউবা প্রায় কোন সমস্যা ছাড়া সুস্থ হয়ে উঠছে। জনসমষ্টির বিশেষ অংশ বেশি সংক্রমিত হচ্ছে, অন্য অংশ কম। কেন এরকম ঘটে? এ প্রশ্ন কি বিজ্ঞানীদের কি সাধারণ মানুষ ও চিকিৎসকদের গভীরভাবে ভাবাচ্ছে। এর কোন সরল একমাত্রিক উত্তর নেই। ২৭ মার্চ, ২০২০-তে বিখ্যাতসায়ান্স পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল “How sick will the coronavirus make you? The answer may be in your genes” শিরোনামে। সেখানে বলা হয়েছিল – “গবেষকেরা এখন ক্রমাগতভাবে রোগীদের জেনোমে ডিএনএ-র তারতম্য বোঝার জন্য তন্নতন্ন করে খোঁজার মাত্রা বাড়িয়ে চলেছেন যাতে এই রহস্যের সমাধান করা যায়।” জিনগত পার্থক্য এবং তারতম্য ছাড়াও এ প্রবন্ধে বলা হল – “variants of the ACE2 receptor, scientists want to see whether differences in the human leukocyte antigen genes, which influence the immune system’s response to viruses and bacteria, affect disease severity.” (এগুলোর বাংলা করা কষ্টকর এবং বাংলা করলে তার চেহারা কেমন দাঁড়াবে এরকম সংশয়ের জন্য বাংলা করা থেকে বিরত থাকছি)
আরেকটি নামী বিজ্ঞানের জার্নাল “ইনফেকশন, জেনেটিক্স অ্যান্ড ইভোলিউশন”-এর জুলাই, ২০২০-র সংখ্যায় “Genetic diversity and evolution of SARS-CoV-2” শিরোনামে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে কয়েকটি বিষয় বলা হল। (১) “সার্স-কোভ-২-এর দুটি অঞ্চলেই – যেখানে জেনেটিক কোডিং হয় এবং যেখানে হয়না - প্রচুর সংখ্যক মিউটেশন এবং ক্ষয়ে যাওয়া বা বাদ পড়ার ঘটনা দেখা গিয়েছে” এবং (২) “আমরা (পড়ুন গবেষকেরা) ৮৬টি পূর্ণ বা প্রায়-পূর্ণ জেনোমের জেনেটিক বিশ্লেষণ করেছি”। এর ফলাফল? এতে প্রকাশিত হল যে “manymutations and deletions on coding and non-coding regions” ঘটে। এই তথ্যগুলো দুটি বিষয়কে প্রমাণ করে। প্রথম, নভেল করোনা ভাইরাসের জিনগত বৈচিত্র্য বিপুল এবং, দ্বিতীয়, ভাইরাসটির দ্রুত বিবর্তন হচ্ছে। আরও সহজ করে বললে, একটি ডিএনএ-তে একইসাথে মিউটেশন এবং একটা অংশ খসে যাওয়া দুটোই ঘটছে। ফলে করোনাতে সংক্রমণের ক্ষেত্রে জিনের ভূমিকা বৈজ্ঞানিকভাবে ক্রমশ বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে।
দুভাবে আমরা করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে স্থায়ীপ্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি গড়ে তোলার কথা ভাবতে পারি। এবং এ দুটোই একমাত্র পরীক্ষিত কার্যকরী পথ।
(১)সমষ্টিগত ইমিউনিটি বা হার্ড ইমিউনিটি – যদি ৭০% থেকে ৯০% জনসংখ্যার সংক্রমণ ঘটে (১০.০৪.২০২০-তে জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাব্লিক হেলথের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী) তাহলে আমরা হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করেছি এমনটা ভাবতে পারি। এরকম একটা পরিসংখ্যান প্রায় অসম্ভব। নিউ ইয়র্কের মতো করোনা-বিধ্বস্ত শহরে যেখানে মৃত্যু হয়েছে ৩২,৪৩৫ জনের সেখানে শহরের সমগ্র জনসংখ্যার মাত্র ১২.৩ থেকে ১২.৭%-এর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। ফলে ওখানেও হার্ড ইমিউনিটির কোন ভরসা বৈজ্ঞানিকেরা দেখতে পাচ্ছেন না।
(২)টীকা বা ভ্যাক্সিন। আমি এ আলোচনায় ভ্যাক্সিন নিয়ে কিছু বলবোনা। এটা এখনো সময়ের অপেক্ষা। বরঞ্চ অন্য একটিনেচার জার্নালে প্রকাশিত (৩.০৬.২০২০) রিপোর্টের উল্লেখ করা যেতে পারে। রিপোর্টের শিরোনাম – “India expands use of controversial drug despite safety concerns”। এর দু’দিন বাদে ৫ জুন, ২০২০২-তে প্রকাশিত ইংল্যান্ডের বৃহৎ RECOVERY trial-এর ফলাফল প্রকাশিত হবার পরে এ ওষুধের ব্যবহার কার্যত আন্তর্জাতিকভাবে পরিত্যক্ত হয়।
সমষ্টিগত ইমিউনিটি নিয়ে আরও সাম্প্রতিক গবেষণাপত্র “হার্ড ইমিউনিটি”-কে আরেকটু ভিন্ন চোখে দেখছে।সায়ান্সজার্নালে (২৩.০৬.২০২০) একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল “A mathematical model reveals the influence of population heterogeneity on herd immunity to SARS-CoV-2” শিরোনামে। এখানে যা বলা হয়েছে তাকে বোধগম্য বাংলায় বললে দাঁড়ায় যে যদি কোন অঞ্চলে জনসমষ্টি বিভিন্ন ধরনের মিশ্রণে তৈরি হয় অর্থাৎ চরিত্রের দিক থেকেঅসমসত্ত্ব হয় এবং তাদের মধ্যে সংযোগ বা কনট্যাক্ট বেশি থাকে তাহলে সেখানে RO= 2.5 হলেও (RO ১-এর চেয়ে ২.৫ গুণ বেশি হলেও) এতদিন ধ্রুপদী এপিডেমিওলজিতেসমসত্ত্ব এবং কম সংযোগ বা কন্ট্যাক্ট-এর জনসমষ্টির হার্ড ইমিউনিটির ক্ষেত্রে ৬০%-এর যে মান এতদিন ধরে নেওয়া হয়েছে তার থেকে কমে - ৪৩%-এ - এই ইমিউনিটি অর্জিত হবে। তাহলে আমাদের বুঝতে অসুবিধে হবার কথা নয় যে দু-তিনটে বিষয় গবেষণায় গুরুত্ব পেলো – (১) জনসমষ্টির চরিত্র কেমন –সমসত্ত্ব কিংবাঅসমসত্ত্ব, (২) এদের মধ্যে কন্ট্যাক্টের চরিত্র কিরকম – বেশি হচ্ছে বা কম হচ্ছে, (৩) যদি কন্ট্যাক্টের হার বেশি হয় তাহলে হার্ড ইমিউনিটি অর্জিত হবার মান ধ্রুপদী ধারণার চেয়ে কম হবে – ৪৩% অব্দি এটা হতে পারে।
সহজ কথায় বললে, হার্ড ইমিউনিটি হল জনসমষ্টির ক্ষেত্রে সে ধরনের ইমিউনিটি যে স্তরে জনসমষ্টি পৌঁছুলে রোগের ছড়িয়ে পড়া ক্রমাগত নিম্নমুখী হবে, এমনকি সমস্ত ধরনের বিধিনিষেধ তুলে নেবার পরেও। গবেষণাপত্রের ভাষায় – “The classical herd immunity levelhC is defined ashC = 1 – 1/R0, whereR0 is the basic reproduction number, defined as the average number of new infections caused by a typical infected individual during the early stage of an outbreak in a fully susceptible population.” এভাবে ইংরেজিতে বলে দিলে বেশিরভাগ মানুষের কাছে কোন অর্থ নেই। আরেকটু ভেঙ্গে বলা যাক। এখানে হার্ড ইমিউনিটিকেhC দিয়ে বোঝানো হচ্ছে। এবার ধরা যাক কোন এক সময়েR0 হল ৪। R0হল কোন এক বিশেষ সময়ে সংক্রামক জীবাণু এবং জনসমষ্টিতে এর সংক্রমন কতোটা ছড়াচ্ছে এর পারস্পরিক সম্পর্ক। নিউজিল্যান্ড প্রবাসী আমার অনুজপ্রতিম এপিডেমিওলজিস্ট চিকিৎসক অরিন্দম বসু একে সহজভাবে ব্যাখ্যা করেছেন –এপিডেমিওলোজির ভাষায় সংখ্যাটি ১-এর নীচে গেলে সম্পূর্ণ সংক্রমণমুক্ত বলা যেতে পারে না। যেটা হয় তাহ’ল সংখ্যাটি ১ এর নিচে গেলে নতুন করে সংক্রমণ হয়ে মহামারীর আকার ধারণ করার ক্ষমতা আর থাকে না। ১ এর নিচে গেলে নতুন সংক্রমণের সম্ভাবনা কমে যায়, নতুন ক্লাস্টার হবার সম্ভাবনা কমে যায়। একে সঠিক অর্থে সংক্রমণ মুক্ত বলা যায় না। Effective Reproduction Number 0.২৫ মানে আগে যদি R = ২ হয়ে থাকে যেখানে একজন মানুষ দুজনকে সংক্রমণ করছিলো (R = ২ ), এখন উল্টোটা, ৪ জন সংক্রমিত ও আক্রান্ত লোক লাগবে একজনকে রোগ ধরাতে গেলে, অর্থাৎ, খুব বড় ক্লাস্টার ছাড়া আর রোগ টিকবে না। ফলে সংক্রমণ ছড়াতে প্রায় পারবেনা বললেই চলে। এটা ঠিক সংক্রমণমুক্ত নয়, তবে হার্ড ইমিউনিটি অর্জিত হয়েছে একথা বলা যায়। ক্লাস্টারগুলো খুলে গেলে আবার ছোট বড় মহামারী হতে পারে, যেমনটা চিনে, মালয়েশিয়ায়, ভিয়েতনামে কিংবা সিঙ্গাপুরে হচ্ছে। এবার ধরুন কোন এক সময়, কোন এক বিশেষ অঞ্চলে R0হল ৪। সেক্ষেত্রে হিসেবটা দাঁড়াবে ১-১/৪ = ০.৭৫। অর্থাৎ, ০.৭৫ হল ইমিউনিটি থ্রেশোল্ড (imunity threshold) বা হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের জন্য সেসময়ের সে অঞ্চলের জনসমষ্টির ৭৫% মানুষকে সংক্রমিত হতে হবে। যদি R0৩ হয় তাহলে সে সংখ্যা হবে ৬৭%। আবার যদি R0১.১৩-১.১৭ (যেটা ভারতের ক্ষেত্রে এই মুহূর্তের সরকারি হিসেব) হয় তাহলে সে সংখ্যা আরো কমে যাবে। সুবিখ্যাত Cell জার্নালে (মে ১৯, ২০২০) “Herd Immunity: Understanding COVID-19” প্রবন্ধে বলা হয়েছে – “Thus a single pathogen will have multiple R0 values depending on the characteristics and transmission dynamics of the population experiencing the outbreak. This inherently implies that the herd immunity threshold will vary between populations, which is a well-documented occurrence.” অর্থাৎ, পরিস্থিতি সাপেক্ষে একটি নির্দিষ্ট জীবাণুর একাধিক R0মান থাকতে পারে এবং বিভিন্ন জনসমষ্টিতে ইমিউনিটি থ্রেশোল্ড পরিবর্তিত হবে জনসমষ্টির বিশিষ্ট চরিত্রের ওপরে নির্ভর করে। এই অসমান অবস্থা খানিকটা বোঝা যাবে নীচের ডায়াগ্রাম থেকে।
নীচের গ্রাফ দুটি থেকে এটা আরও অন্যভাবে বোঝা যাবে।
(Plot of the overall fraction infected over time for the age and activity structured community withR0 = 2.5, for four different preventive levels inserted March 15 (day 30) and lifted June 30 (day 135). The blue, red, yellow and purple curves correspond to no, light, moderate, and severe preventive measures, respectively. –সায়ান্স জার্নালের প্রবন্ধটি থেকে গৃহীত।)
(Plot of the cumulative fraction infected over time for the age and activity structured community andR0 = 2.5, for a four different preventive levels inserted March 15 and lifted June 30. The blue curve corresponds to no preventive measures, the red with light preventive measure, the yellow to moderate preventive measures and the purple corresponding to severe preventive measures.–সায়ান্স জার্নালের প্রবন্ধটি থেকে গৃহীত।)
ইন্ডিয়া টুডে-র খবর অনুযায়ী (১৫.০৮.২০২০) মুম্বাইয়ের সেরোলজিকাল সার্ভে দেখিয়েছে বস্তিবাসীদের ৫৭% এবং বস্তিবাসী নয় এমন জনসমষ্টির ১৬%-এর সংক্রমণের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।ডাউন টু আর্থ পত্রিকায় (১৪.০৮.২০২০) প্রকশিত হয়েছে “Did Dharavi model work? Is it herd immunity or plain luck?” শিরোনামে প্রবন্ধ। ধারাভি, আমরা সবাই জানি, এশিয়ার সবচেয়ে বড়ো বস্তি। জনসংখ্যা ৫০ লক্ষ বা তার বেশি, এমন গলিও আছে যেখানে দু’জন মানুষ পাশাপাশি হাঁটতে পারেনা। ফলে এরকম জনসমষ্টিতে সংক্রমণ ছড়াবে যেমন দ্রুত আবার যদি জনসমষ্টির বেশিরভাগ যুবক বা কম বয়সী হয় তাহলে তাদের শরীরে অ্যান্টিবডিও তৈরি হবে। ফলে ঈপ্সিত হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হবে – যে হিসেব আমি প্রবন্ধের শুরুতে দিয়েছি সে হিসেব অনুসরণ করে।
এখানেবিবিসি-তে প্রকাশিত (২৯.০৭.২০২০) প্রতিবেদন “India coronavirus: 'More than half of Mumbai slum-dwellers had Covid-19'” উল্লেখ করার মতো। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে চেম্বুর, মাতুঙ্গা এবং দহিসর এই তিনটি বস্তি এলাকায় ৫৭% জনস্মষ্টির ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাসের প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি পাওয়া গিয়েছে। এই সার্ভে চালিয়েছিল যৌথভাবে দুটি সংস্থা – ভারত সরকারের নীতি আয়োগ এবং টাটা ইন্সটিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চেস (TIFR)। বিজ্ঞানীদের অভিমত এই ফলাফল ও সমীক্ষা বৈজ্ঞানিকভাবে শক্তিশালী এবং প্রতিনিধিত্বকারী। এই স্টাডিতে দেখা গিয়েছে – “a large section of people had been infected and survived with no or little symptoms, leading to a low fatality rate in these areas - one in 1,000 to one in 2,000”। ধারাভি এবং বিবিসি-র প্রতিবেদন সবগুলোই আমার প্রবন্ধের গোড়ার দিকে উল্লেখিতসায়ান্সজার্নালে (২৩.০৬.২০২০) প্রকাশিত “A mathematical model reveals the influence of population heterogeneity on herd immunity to SARS-CoV-2” প্রতিবেদনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
তবে এটাই একমাত্র কারণ সেটা ধারাভি বা কলকাতার বস্তিবাসীদের ক্ষেত্রে বলা যাবেনা। এর জন্য আরও বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং অঙ্ক কষা দরকার। তবে এটাতো একটা সম্ভাব্য কারণ বটেই।
ধারাভিতে যে মডেল কাজ করেছে সেটা এরকম –
এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল – ধারাভির সাধারণ মানুষ রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে। এরা নিজেরাই কনটেইনমেন্ট জোন তৈরি করেছে, সংক্রমিতদের আলাদা করেছে এবং তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর সরবরাহের ক্ষেত্রে যা করার করেছে। দীর্ঘদিন পর্যন্ত সরকারি তরফে চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীদের দেখা পাওয়া যায়নি। স্থানীয় যে চিকিৎসকেরা ছিলেন, স্বাস্থ্যকর্মীরা ছিলেন তারা এগিয়ে এসেছেন।
এগুলো তো প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার অঙ্গ। সেটা ভেঙ্গেচুড়ে গিয়েছে বলে মানুষ উদ্যোগ নিয়ে রোগ ঠেকাচ্ছে। এজন্য করোনা অতিমারির সময়েও মাথায় রাখতে হবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা, social determinants of health এবং Sustainable Development Goals-এর মতো অতি প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে। এগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে না পারলে, সক্রিয় ও জীবন্ত রাখতে না পারলে আগামী অতিমারির সংক্রমণ কিছুতেই সফলভাবে ঠেকানো সম্ভব নয়।
প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপরে জোর দিয়েই নিউজিল্যান্ড এই মুহূর্তে করোনা মুক্ত। ইংল্যান্ড নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে।
এরকম সংকটের সময়ে নজরে রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সাধারণ মানুষের তরফে রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রনেতাদের ওপরে ট্রাস্ট বাবিশ্বাস। এবং এই বিশ্বাসের ভিত্তি হয় সরকারের তরফেস্বচ্ছতাকে নিশ্চিত করা। এই মুহূর্তে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে এবং ভারতবর্ষে প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার একেবারে গোড়ার যে কাজগুলো সেগুলো বন্ধ হয়েছে বা থমকে আছে। এগুলোর মধ্যে পড়ে সার্বজনীন টীকাকরণ, যেগুলোকে “নেগলেকটেড ট্রপিকাল ডিজিজেজ” বা অবহেলিত গ্রীষ্মকালীন দেশের রোগ বলা হয়, যেমন ম্যালেরিয়া, টিবি বা শিশুদের ডায়ারিয়া এবং গর্ভবতী মায়েদের যত্ন নেবার জন্য যে সমস্ত প্রোগ্রাম আছে। নেচার-এর মতো পত্রিকায় (১৩.০৮.২০২০) বিশেষ প্রবন্ধ প্রকাশিত হচ্ছে “এইডস, ম্যালেরিয়া অ্যন্ড টিউবারকিউলোসিস আর সার্জিং”, অর্থাৎ এইডস, ম্যালেরিয়া এবং টিউবারকিউলোসিস প্রবল গতিতে বাড়ছে।
পারস্পরিক এই বিশ্বাস, স্বচ্ছতা এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে জীবন্ত ও বেগবান রাখার ফলে আরেকবার বলবো নিউজিল্যান্ড করোনা মুক্ত হতে পেরেছে।
নেচার-এর আলোচিত প্রবন্ধের পর্যবেক্ষণে – “More than three months of lockdowns have prevented many people from accessing treatments for non-COVID infectious diseases; at the same time, new cases of these illnesses will have gone undetected.” এদের হিসেবে চিন, ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা জুড়ে ২০২০ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে ২০০,০০০ অতিরিক্ত মৃত্যু ঘটবে। আরেকটি হিসেব বলছে, সাব-সাহারা আফ্রিকায় ২০২০-তে ৭৭৯,০০০ জন মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। এদেরকে কে বাঁচাবে? একমাত্র সক্রিয় ও জীবন্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা এদের বাঁচাতে পারে। যদি এক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করা না যায় তাহলে কোভিডে যত মৃত্যু হবে তার চেয়ে বেশি মৃত্যু হবে এ রোগগুলোর জন্য। ঐ প্রবন্ধের শেষে মন্তব্য করা হয়েছে – “কোভিড-১৯ সংক্রামক ব্যাধির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ে ঘড়ির কাঁটা ঘুরিয়ে দিয়েছে কয়েক বছরের জন্যতো বটেই, এমনকি কয়েক দশকও হতে পারে।” বলা হয়েছে – “একটি সংক্রামক ব্যাধির হাত থেকে (পড়ুন কোভিড) মানুষকে রক্ষা করতে গিয়ে আরেক সংক্রামক ব্যাধিতে মানুষ মারা যাচ্ছে সেটা হল এমন এক শেষ হিসেব যা মানুষ চায়না।”
কে দেবে এর উত্তর? রাষ্ট্র, রাজনৈতিক নেতারা কিংবা আক্রান্ত জনসাধারণ? সময় এবং ইতিহাস সেকথা বলবে।
Beautifully presented sir. Excellent one.
Nice, eisomoy khub proyajoni likha,.
আমি জানি ভারতবর্ষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুটো দিক - এক, Protective Health System এবং দুই, Curative Health System. ভারতের Protective side খুব শক্তিশালী বলে অনেক রোগকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু Curative side টা এখনও দূর্বল। আর কিকি ব্যবস্থা নিলে এই পাবলিক হেল্থ সিস্টেম শক্তিশালী করা যাবে মানে প্রথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সরকারকে কী ভূমিকা গ্রহন করতে হবে? কোভিড নিয়ে আজ পর্যন্ত প্রচুর গবেষণা চলছে কোনো সুনির্দিষ্ট ফলাফল এখনও অধরা। অনেকে বলছেন এটা নিয়ে নাকি একটা চক্রান্তও চলছে। সত্যিটা জানি না।
Well analyzed and lucidly presented. Thanks Dr Bhattachryya.
অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেলাম, অসংখ্য ধন্যবাদ লেখক ডাক্তার বাবু কে, কিন্তু টীকা সম্পর্কিত আলোচনা টা আরও দীর্ঘায়িত হলে ভালো হতো, ,,,
কারন, শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হলেও, তার স্থায়ীত্ব কাল ভীষন কম।
অসাধারণ স্যার।সমৃদ্ধ হলাম।
প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অবহেলা করে কর্পোরেট হাসপাতালের রমরমা কি তবে ভবিষ্যতে আরো অনেক এমন সমস্যা তৈরি করতে পারে?
ভাল লাগল। তথ্যবহুল লেখা।
খুব গুরুত্বপূর্ণ। আরও প্রচারিত হোক।
তথ্যসমৃদ্ধ লেখা।
অসাধারণ কাকু...অনেক কিছু জানতে পারলাম
দারুণ লেখা
ধারাভির ব্যাপারটা আমিও ভাবছিলাম, এখন পরিস্কারভাবে বুঝতে পারলাম ।প্রচুর নতুন তথ্য পেলাম।খুব সুন্দর লেখা জ্যেঠু।
অনেক কিছু জানতে পারলাম , উত্তরে উত্তরে আরো জানতে চাই.....
অত্যন্ত যুক্তিগ্রাহ্য, তথ্যসমৃদ্ধ (অবশ্যই কিছুক্ষেত্রে ভারাক্রান্তও), মান্য এবং গুু রুু ত্ব পূ রণ লেখা। কিন্তু বিষয় সাধারণের হলেও, আলোচনা খুবই. specialised,
হার্ড ইমুনিটি বিষয়ে অসাধারণ বিশ্লেষণ করেছেন স্যার। অনেক অজানা এবং ধোঁয়াশা বিষয় কাটাতে সাহায্য করবে। এছাড়াও সাম্প্রতিক কালে আপনার প্রায় প্রতিটি লেখায় যেভাবে আপনি প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পক্ষ্যে জোরদার সওয়াল করছেন তা আমাদের শুধু মাত্র চিকিৎসা নির্ভর স্বাস্থ্য ব্যাবস্থার মোহ কাটাবে বৈকি।
Excellent presentation
১) নভেল করোনা ভাইরাস বা sars-cov-2 -এর অতিমারীর আকারে পৃথিবীব্যাপী বিস্তারের প্রক্রিয়াটা নিয়ে বিশদ বিবরণ ( এখন অবধি যা জানা গেছে ) পাওয়া দরকার। সেরকম কোন নিবন্ধ এখনও দেখিনি। অথচ এই অভূতপূর্ব বিস্তার নিয়ে মনোযোগী গবেষণা প্রয়োজন।
২) ভারতবর্ষের সুবিস্তীর্ণ জনপদে এই অতিমারীর বিস্তার, অঞ্চলভিত্তিক epidemiological studies, age, occupation etc etc, গোষ্ঠী সংক্রমণ, development of herd immunity , সব মিলিয়ে comprehensive study নেই। বিদেশী জার্নালগুলোতে যে study গুলো বেরোচ্ছে সেগুলোই আমাদের নির্ভরতার জায়গা। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের ক্ষেত্রে এর সংক্রমণ, সেরে ওঠা, মৃত্যুু, এবং immunity-র বৈশিষ্ট্য সংক্রান্ত তথ্য খুুবই সামান্য।
৩) যাঁরা সেরে উঠছেন তাঁদের নিয়েও study নেই বললেই চলে। কোনো কোনো চিকিৎসাকেন্দ্র সেরে ওঠা মানুুষদের plasma নিয়ে কিছুু patient-দের plasmatherapy করেছে। Isolated কিছু এইরকম ঘটনার কোন definite structure বা অবয়ব নেই।
৪) তাই এখানকার ব্যাপারটা বড়ই এলোমেলো এবং রীতিমতো নৈরাজ্যমূলক।
Khub detailed lekha anek na jana jinish jana gelo thank you aro lekha asha korchi
Very good study. In Uttar dinajpur also we have observed that people of lower socioeconomic group and villagers suffer almost nil or very mild disease with covid 19 whereas their counterpart is suffering moderate to severe disease. Further research work needed to explore the actual reason.
প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সক্রিয় ও স্বয়ং সম্পূর্ণ না করতে পারলে আমরা(সাধারণ মানুষ) কর্পোরেট পূজির সহজ শিকারে পরিণত হব ই _এটা শুধু সময়ের অপেক্ষা। সবাইকে অনুরোধ সঠিক ভাবে মাস্ক ব্যবহার করুন। পরিবারে আমার আপনার অবস্থান যাইহোক না কেন সরকারের কাছে আ আ মরা শুধু ই একটি সংখ্যা। দ
আপনার লেখার ওপর মন্তব্য করার মত শিক্ষা বা সাহস কিছুই আমার নেই,একেবারে ভাঁড়ার শূন্য।যাই পড়ি,শুধু নিজেকেই উন্নত করি। তবু নিজের উপলব্ধি অনুযাই বলছি ---স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার, এবং সঠিক নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে এর প্রয়োগ নাহলে রাষ্ট্র দুর্বল হবেই।
আমি বিশ্বাস করি, সকলের জন্য উন্নত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের দায়িত্ব রাষ্ট্রের ওপরেই বর্তায়। তবেই রাষ্ট্র সঠিক ভাবে উন্নত হবে। যদি এই দায়িত্বকে আগামীতে রাষ্ট্র সঠিক ভাবে পালন না করে,তবে আগামীতে যা ভয়ানক ভবিষ্যত অপেক্ষারত,তার কাছে এই করোনা কিছুই নয়।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ।
কোভিড ছাড়া অন্য সংক্রমণের মৃত্যুর আশঙ্কা বেড়ে যাবেই ।
করোনা বা Covid19 এর ওপর ডাঃ জয়ন্ত ভট্টাচার্যের সুচিন্তিত এবং তথ্যবহুল প্রবন্ধগুলো আমি নিয়মিত পড়ি এবং বিষয়ের লোক না হয়েও ওঁর লেখা অনেকটা বুঝতে পারি বলে আমার বিশ্বাস কারণ ডাক্তার হিসেবে যেমন উনি রোগী রোগ সম্বন্ধে বোঝান, তেমনি প্রবন্ধকার হিসেবে উনিও আমার মত পাঠককে মনে রেখে বোঝানোর চেষ্টা করেন।
এই লেখাটায় হার্ড ইমিউনিটি নিয়ে সাম্প্রতিককালের পরস্পর বিরোধী দাবীগুলিকে উনি পরিষ্কার করে আলোচনা করেছেন। আমি ওঁর মতের সমর্থক ওঁনার যুক্তিগুলিকে গ্রহনযোগ্য বলে মনে করে।
পরিশেষে, রাষ্ট্রের কাছে যে স্বচ্ছতার দায়িত্ব আশা করতে চেয়েছেন তা পাওয়া নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এডস, টিবি এবং অন্যান্য মারণ রোগরা যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এই সুযোগে সরকারী চিকিৎসার ওপর নির্ভরশীল নাগরিকদের মধ্যে এটা সত্য এবং সামাজিক উদ্বেগের কারণ।
ডাঃ জয়ন্তকে আমার নমস্কার।
সবাইকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ!
সমৃদ্ধ হলাম।
A VERY USEFUL PRESENTATION EVEN FOR LAY MAN LIKE ME.THANKS,DR.BHATTACHARYA.
সুন্দর তথ্যবহুল বিশ্লেষণ।
তথ্য নির্ভর সুন্দর আলোচনা, যা প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে সকলকে ভাবতে বাধ্য করে । তবে, যে কারণে মানুষে মানুষে disease manifestation আলাদা হচ্ছে তার উল্লেখযোগ্য কারন অবশ্যই জিন ঘটিত। যেমন, toll like receptor এর জিন এর mutation, বা ACE2 receptor gene এর mutation এর জন্য respitatory বা অন্যন্য manifestation এর পার্থক্য , (ref Nature May 2020) . যা এখোনও study হয়নি বা publish হয়নি, তা হলো MHC gene locus, interleukin (IL receptor gene locus) এর mutation ect, যেগুলো তে পৃথিবীর নানা দেশে ছোট ছোট study population তৈরি করে কাজ করা হচ্ছে। আরো একটু সময় পেলে আমরা এর বিস্তার এর চরিত্র, mechanism of infection ঠিক করে বুঝতে পারব।
ধন্যবাদ জয়ন্তদা | খুব দরকারী তথ্যবহুল আলোচনা ও প্রবন্ধ। একটা ব্যাপার নিয়ে একটু লেখা যাক। অবিশ্বাসীর চোখ থেকে, :-)
একটা ব্যাপার লক্ষ কর, সাধারণভাবে যে দেশ জোড়া, পরিকল্পিত সমীক্ষা না করে RTPCR ভিত্তিক যে পরিমাপ ভারত থেকে পাওয়া যাচ্ছে তাতে দেশজোড়া সংক্রমণের হার 0.3 % এর কাছাকাছি। বম্বেতেও হয়ত তাই হবে। এখন দেশে হয়ত টেস্ট যতটা হওয়া উচিৎ তার থেকে কম হচ্ছে, কিন্তু তাহলেও রাশিবিজ্ঞানের সূত্র অনুযায়ী এ সংখ্যাটি এত মানুষের ওপর করা হয়েছে যে মোটামুটি বিশ্বাসযোগ্য, তবে উনিশ বিশ কম বেশী হতেও পারে। কিন্তু তুমি যদি বম্বের বস্তিতে seroprevalence, মানে এন্টিবডি ভিত্তিক মাপ দেখ, দেখবে বস্তিতে ৫৭%, অ-বস্তিতে আরেকটু কম, বম্বেতে ৪০% লোক বস্তিতে থাকে ধরে নিলে এই সমীক্ষার ভিত্তিতে মোটামুটি ৩০% শতাংশ মানুষের করোনা সংক্রমণ হয়েছে সেখানে। তার মানে RT PCR আর অ্যান্টিবডি টেস্টের তফাৎ ১০০- ২০০ গুণ! কিভাবে হল?
আসলে করোনাভাইরাস সংক্রমণ কতজনের হয়েছে এ ব্যপারে RT PCR ভিত্তিক আর
অ্যান্টিবডি ভিত্তিক মাপের মধ্যে এতটা তফাৎ কেন সেটা চিন্তা করতে গিয়ে
প্রথমে যেটা মনে হয়, সাধারণত বায়াসড স্যামপলিং (লোক বাছতে গিয়ে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভ্রান্তি) না হলে এ জিনিস সম্ভব নয়। পুরো লেখাটা পেলে আরো বিশদভাবে পরীক্ষা করে দেখা যেত, অতএব যা লিখছি আমার স্পেকুলেশন, এটাকে এখনি সিরিয়াসলি নেওয়ার দরকার নেই।
তুমি ভাববে এতটা বাড়িয়ে সংক্রমণের সংখ্যা দেখানো হচ্ছে কেন? তার একটা
কারণ সরকারী তরফে মৃত্যুহার কম করে দেখানোর তাগিদ আছে। কেস ফ্যাটালিটি রেশিও একটা "যথাযথ" মাপ নয়, অপেক্ষাকৃত "বেশী" হবেই, ও দুটো ভিন্ন সংখ্যার ভিত্তিতে মাপছে (যাদের সংক্রমণ আর যারা মারা
যাচ্ছেন এঁরা একটা পুল থেকে আসছেন না) | সে যাই হোক, এইজন্য ইনফেকশন
ফ্যাটালিটি রেশিওর মাপযোক করা অনেক বেশী দরকার এবং সত্যি কাজের । তাতে অন্তত
দেখা যাবে মৃত্যুহার কতজনের আগে সংক্রমণ হয়েছিল তার ভিত্তিতে মাপ করা হচ্ছ, অর্থাৎ যাঁঁরা মারা গেছেন তাঁরা পুরনো সংক্রমণের পুল থেকে আসছেন, বেঁচে আছেন ও মারা গেছেন উভয়ের তরফ থেকে নয়।কাজেই কেস ফ্যাটালিটির থেকে সে মাপ অনেক কম হবে সঙ্গত কারণেই | এখন
সেটা মাপতে গেলে সমাজে কতজনের ইনফেকশন হয়েছে দেখতে হবে।
এখন দেখব কোন উপায়ে? লোককে ধরে ধরে RT-PCR করা যেতে পারে, তাতে প্রচুর হ্যাপা |
তার চেয়ে অ্যানটিবডি মাপা যাক। তাতে বোঝা যাবে কার ইতিপূর্বে সংক্রমণ হয়েছে। এতে করেও
যাঁদের সাম্প্রতিক ইনফেকশন হয়েছে কিছু বুঝতে পারা যাবে না। অর্থাৎ জুলাই মাসে
কতটা সংক্রমণ জুলাই মাসে Antibody Test করে বোঝা যাবে না, কারণ IgG Antibody শরীরে আসতে আসতে ৪ সপ্তাহ মত সময় নেয় । সে যাই হোক, এর ওপর যদি তোমার স্যামপলিং এ গলদ থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। আর ধর তুমি অনেকটা বাড়িয়ে যদি ইনফেকশন দেখাতে পারো, তাহলে তোমার দেখানো মৃত্যুহার হু হু করে কমে যাবে | এটা দেখাতে পারলে কার সুবিধা? :-)
মানছি RT PCR দ্বারা মাপযোক করতে গেলে এবং টেস্টের সংখ্যা হয়ত অনেকটা কম
হচ্ছ, তাই বলে RT-PCR হিসেব ভিত্তিক যা দেখাচ্ছে আর এরা যা দেখাচ্ছে তার
মধ্যে ১৫০-২০০ গুণের ফারাক! আরো একটা ব্যাপার আছে। বস্তিতে যদি ৫৭% লোকের সংক্রমণ হয়ে থাকে, তাহলে প্রায় হার্ড ইমিউনিটির মাত্রা পৌঁছেচে জুন মাসেই, কাজেই বোম্বেতে আর একটুই সংক্রমণ হবার কথা নয়। কারণ একেবারে প্রথমবার লোকে R0 (Basic Reproduction Number, 2.5 এর আশেপাশে) ধরবে, তারপর একবার সংক্রমণ শুরু হলে তখন R0 নয়, Re (effective reproduction number) ধরা হয়, যার পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম (তুমি একথাটা এখানেই লিখেছ) | বোম্বেতে তাই হয়েছে কি? হয়নি তো? তাহলে এদিক থেকে ভাবলেও ৫৭% সংখ্যাটি নিয়ে প্রশ্ন ওঠানো যেতে পারে। আসল সংখ্যাটি কত? কে জানে?
এইসব কারণে পাপী মন বলে NITI AYOG এই গবেষণা করতে কেন মাথা গলিয়েছে, একথাটাও ভেবে
দেখতে হবে, :-)