
রাজধানী দিল্লি ও তার আশেপাশে সংক্রমণ হাজার হাজার করে বেড়ে যাচ্ছে প্রতি দু'দিনে, হরিয়ানা আর ইউপি বর্ডার সিল করা হয়েছে।
আপনাদের যদি মনে হয় লক ডাউন উঠে এসেছে সব কিছু আবার আগের মতন স্বাভাবিক হয়ে যাবে, খুব ভুল ভাবছেন, আমার উদাহরণ বাদ দিলাম কিন্তু মানুষের হাতে আর একদম পয়সা নেই, এদিকে সরকারের রান্নাঘর গুলিও সব বন্ধ হয়ে গেছে, একটা অদ্ভুত বিচ্ছিরি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
আপনাদের মনে হবে বাড়িয়ে বলছি কিন্তু বিশ্বাস করুন লক ডাউন এর সময় তাও বা যারা খেতে পাচ্ছিল এখন তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আপনাদের কি মনে হয় সবাই চাকুরিজীবী, সরকারি বা বেসরকারি?
ব্যাটারি রিক্সা, অটো, দিল্লি তে শহরের মধ্যেই একটা পরিবহন আছে, আমরা বলি গ্রামীন সেবা। আসলে একটা বড় অটো যাতে প্রায় বারোজন লোক ঢুকিয়ে নিয়ে যায়, ভাড়া যেখানেই যাও ৫ টাকা, সেই পরিবহন আর তাকে ব্যবহার করে বেঁচে থাকা মানুষ, মল বা মেট্রো স্টেশন এর বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে জিনিসপত্র বিক্রি করা মানুষ, গরমে রাস্তায় রাস্তায় প্রতি দুহাত অন্তর জলজিরা আর সিকন্জি বিক্রি করা মানুষ, মেট্রো বা রাস্তার পাশের লক্ষ লক্ষ খাবারের ঠেলাগাড়ি, বিল্ডিং মেটেরিয়াল সাথে যুক্ত মানুষ, এরা মূলত ভিনরাজ্যের।
আমি যাদের কথা বললাম তা হিমশৈলের ৫%, মোট সংখ্যা কোটি ছুঁলেও ছুঁতে পারে, এদের জীবন কবে ঠিক হবে জানা নেই।
আমাদের দ্বারকা সেক্টর - ২৩ এর পিছনে কয়েকটা গ্রাম আছে, তাদের চাষের জমি এখন দিল্লি সরকারের, একটা বাইপাস আছে যাতে দ্বারকার ভিতর দিয়ে সিগন্যালের জ্যাম বাঁচিয়ে চলা যায়, সেই রাস্তার পাশে ভোর চারটে থেকে বেলা এগারোটা অব্দি, আবার বিকালে পাঁচটার পর থেকেই বেশ কিছু দেহাতী যুবতী, মহিলা দাঁড়িয়ে বা বসে থাকছেন, একটি লোকাল ভ্যান চালকের সাথে গিয়ে কথা বললাম কয়েকজন মহিলার সাথে। ফটো তুলতে পারিনি, তাঁদের আপত্তি ছিল।
আমি: আপনারা তো পিছনের গ্রাম গুলোয় থাকেন আর এখানে তো কখনো আসতে বা বসতে দেখিনি, কি সমস্যা হচ্ছে আপনাদের?
প্রথম মহিলা: পয়সা নেই, বর আখ কাটতে গেছিল হিস্সর এ, ফেরেনি, পয়সাও পাঠায় নি, 5টা বাচ্চা, খাওয়াবো কি ?
দ্বিতীয় মহিলা: প্রথমে লজ্জা পেতাম কিন্তু এখন গ্রামের প্রায় সব মেয়েরাই বসছে এখানে বা গল্ফ কোর্স রোডের পাশে বা যেখানে কাস্টমার পাচ্ছে আর পুলিশ কম।
তৃতীয় মহিলা: আমার বাচ্চাটা 3 বছরের, খুব শরীর খারাপ হাঁপানী, যা টাকা পাচ্ছি যেদিন পাচ্ছি সেদিন চুলা জ্বলছে বাকি ভগবান ভরসা।
আমি: কাস্টমার কারা ?
চতুর্থ মহিলা: মূলত ট্রাক্টার চালক, লরি চালক, আর দ্বারকা এবং নজফগরের বড় বড় এপার্টমেন্ট গুলো থেকে গাড়ি নিয়ে আসা কিছু যুবক আর বয়স্ক পুরুষ, তবে এরা খুব জ্বালায়, ফটো তুলতে চায়, গায়ে মদ ঢেলে ভিজিয়ে দেয়, আর 500 বলে 200 টাকা দেয় নয়তো খিস্তি দেয়।
আমি: আপনারা কি পাচ্ছেন এখানে বসে ?
তৃতীয় মহিলা: ওই পিছনের জঙ্গলে নিয়ে যায়, কেউ ৩০ টাকা দেয় কেউ ১০০। কি করবো, কেউ কেউ মারে খুব, আর টাকাও দেয় না।
আমি : পুলিশ ?
দ্বিতীয় মহিলা: পুলিশ ধরার আগে দৌড়ে জঙ্গলে ঢুকে যাই, ধরতে পারলে সব টাকা কেড়ে নেয়, বলে থানায় চল, থানায় গেলে দুদিন তিনদিন আটকে রাখে।
প্রথম মহিলা: পুলিশ দিদিরা ভালো, মারে আবার ছেড়েও দেয়, আমরা তো এসব কখনো করিনি, কিন্তু বাড়িতে বাচ্চা আছে ..
এরকম অনেক কথা হল, জানলাম গ্রামে পুরুষ বেশি নেই, যারা আছে সারাদিন বসে তাস খেলে আর সন্ধ্যায় লোকাল মদের টাকা নিতে আসে এদের থেকে।
আপনারা জাট বা গুজ্জরদের গরিব গ্রামগুলোর হাল জানেন কিনা জানিনা, এদের পুরুষদের স্বাভিমান খুব তাই নিজে ভিক্ষা করবে না কিন্তু বাড়ির বউকে মাঠে বা ইট ভাটায় বা এভাবে রাস্তায় দেহ ব্যবসা করাতে এদের আত্মসম্মানে লাগে না।
লেখাটা দীর্ঘ করাই যায়, আপনাদের ও বোর করাই যায়, আসলে আমি ঠিক মেনে নিতে পারছি না ব্যাপারটা।
আমার মাইনা হয়নি, অমৃতার ও আসেনি এখনও তবু ওই রান্নাঘর এর থেকে ৩৭০০ টাকা বেঁচে ছিল, ৭ জন মহিলাকে দিলাম ৫০০ করে বললাম আমার এর থেকে বেশি কিছু করার নেই, বিশ্বাস করবেন না ওদের মধ্যে অন্তত ৩ জন বিশ্বাস ই করলো না যে শারীরিক সম্পর্ক না করে আমি কেন পয়সা দিচ্ছি, বললো ওকে আপনি কি এডভান্স দিচ্ছেন?
দেশের রাজধানীর উপকন্ঠে সাধারণ গ্রামীণ মহিলারা শরীর বিক্রি করছেন পেটের দায়ে, ক্ষিদের জ্বালায়।
আমি আপনাদের পরামর্শ আর সাহায্য চাই, এঁদের জন্য কিছু করতে চাই।
r2h | 49.37.***.*** | ১০ জুন ২০২০ ১৭:২০94203
সোমরাজ | 203.192.***.*** | ১০ জুন ২০২০ ২১:২৪94208রান্নাঘর যেটা আমি দিল্লি তে লক ডাউন এ চালিয়েছিলাম সেটার জন্য যারা আমায় টাকা দিয়েছিলেন সেই টাকার বেঁচে যাওয়া অংশ টা আমি এদের দিয়েছি, এরা যে অসুবিধা র মধ্যে আছেন তাতে হয়তো কিছু সুবিধা হবে।
আমি জানি এই পরিস্থিতিতে টাকা দেওয়া টা সলিউশন না, কিন্তু অল্প কিছু দিয়ে এদের মধ্যে প্রথমে বিশ্বাস তৈরি করে ধীরে ধীরে সমস্যার গভীরে ঢুকে এদের জন্য কোন কাজের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি র চেষ্টা করাই আমার মূল উদ্দেশ্য
r2h | 2405:201:8805:37c0:d931:8af0:1186:***:*** | ১০ জুন ২০২০ ২২:১৭94210ভেতরে ভেতরে চমকে উঠলাম। মানুষ কত অসহায়
Abhyu | 47.39.***.*** | ১১ জুন ২০২০ ২৩:২৮94230
r2h | 2405:201:8805:37c0:857f:7fcd:98ac:***:*** | ১২ জুন ২০২০ ১৪:০৮94240
pi | 14.139.***.*** | ১২ জুন ২০২০ ১৪:১১94242