এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  বইপত্তর

  • ইতিহাস লেখা

    সিএস লেখকের গ্রাহক হোন
    বইপত্তর | ০৭ মে ২০২০ | ৪২০২ বার পঠিত
  • গত ক'দিনে কয়েকটা কথা মনে হচ্ছিল, ইতিহাস নিয়ে তক্কাতক্কির সময়ে, ইতিহাস লেখা নিয়ে যা। সেগুলো লিখে রাখা, ইতিহাস কেন আর কীভাবে লেখা হয়, অন্তত আমি যেরকম লেখা পড়তে চাই বা ইতিহাস লেখার মধ্যে দিয়ে যা আশা করি সে সম্বন্ধে দু-তিনটি প্যারাগ্রাফ -

    ইতিহাস খুঁড়ে বার ক'রে একজন ব্যক্তিকে - অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যারা সমাজ-্সভ্যতায় প্রভাব বিস্তার করেছেন এক সময়ে - দাগিয়ে দেওয়াই কী ইতিহাস লেখার উদ্দেশ্য ? হিটলার ইহুদী বিদ্বেষী, স্টালিন খুনী আর গান্ধী বর্ণবাদী, ঘটনা আর তথ্য দিয়ে এইটুকু প্রমাণ করে দিলেই কী ইতিহাস নিয়ে যারা লিখছেন তাদের কাজ শেষ ? হ্যাঁ, বিশেষ উদ্দেশ্য থাকলে, সমসময়ে যা প্রচলিত, হয়ত হেজিওগ্রাফি যা , তার বিরুদ্ধে তর্ক করতে গেলে এরকম মত প্রতিষ্ঠিত হয়, কিন্তু সেরকম করলে ইতিহাসের কতটুকু জানা যায়, কিছু ঘটনা আর তথ্য বাদ দিলে ?

    ইতিহাস এক সময়ে ছিল রাজচরিত, সভাসদদের বর্ণনা, তার মধ্যে দিয়ে সেই সময়ের অবস্থার ছবি, পরে হয়ত সেটাই হল হেজিওগ্রাফি, বিশ্রুত ব্যক্তিত্বদের ব্রণবিরহিত জীবনী, কিন্তু এসবের কোন মূল্যই ঐতিহাসিকরা স্বীকার করেন না। শুধু করেন না নয়, ব্যক্তি থেকে সরে এসে ইতিহাস অনেক ছড়িয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে - ফরাসীদের অ্যানালস স্কুল বা এদেশের সাব- অল্টার্ণ চর্চা, সেরকম উদাহরণ। এই যে ছড়িয়ে পড়া তার একটা কারণ হল ঐতিহাসের ঝোঁকটা বড় মানুষদের থেকে সরিয়ে এনে অনেক বেশী সংখ্যক মানুষদের মধ্যে এনে ফেলা আর দ্বিতীয় কারণ হল ইতিহাসিক যেটা বুঝতে চায় যে, এক বিশেষ সময়ে ব্যব্স্থাটা কেমন ছিল, কী সেই পরিস্থিতি ছিল - অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতি সব মিলিয়ে - যেটা থেকে হয়ত আরো গভীরে গিয়ে বোঝা যাবে যে একজন বিশেষ ব্যক্তিত্ব বিশেষ রকমের আচরণ করেছিল কেন (যথা - হিটলার, স্টালিন বা গান্ধী)। এরকম করলে যেটা হয় যে ঝোঁকটা ব্যক্তি থেকে সরে এসে সময়ের ওপরে পড়ে। ব্যক্তিকে দায়ী করলে প্রশ্ন উঠবে যে ব্যক্তিটি ঐরকম কেন (শুধু হিটলার ইহুদী বিদ্বেষী বলে সিদ্ধান্তে এলে প্রশ্ন উঠবে হিটলার সেরকম কেন), কিন্তু ইতিহাস লেখক সেই ব্যক্তি চরিত্র বিশ্লেষণ করে সেকরম উত্তরে পৌছতে পারবে না, সেটা ইতিহাস লেখার কাজ নয়, ইতিহাস অনুসন্ধিৎসু ব্যক্তির মনস্তত্ব অথবা তার শৈশব আর পরিবারের ব্যাপারে চিন্তিত নয়, বয়সকালে গিয়ে চরিত্রটি কী করেছিল সেগুলোই তার অনুসন্ধানের বিষয়, আর সেই অনুসন্ধান করতে গেলে ইতিহাস লেখককে সময়টারই অনুসন্ধান করতে হবে।

    অশ্বিন দেশাইয়ের গান্ধী সংক্রান্ত বইয়ের প্রসঙ্গ উঠেছিল। আমি সেই বই পড়িনি, পড়বও না কিন্তু লেখক পরিচিতি দেখে মনে হচ্ছিল গান্ধীকে যে রেসিস্ট সে রকম স্থির সিদ্ধান্তে পৌছনই কী লেখকের উদ্দেশ্য ছিল ? তো তারপর খুঁজে পেলাম এই লেখাটি (https://www.huffingtonpost.in/ashwin-desai/writing-the-south-african_b_8224498.html), অশ্বিন দেশাইয়েরই, উৎসাহীরা পড়ে দেখতে পারেন, এবং পড়ে যেটা মনে হল আমি যেভাবে ইতিহাস লেখাকে দেখতে চাই তার থেকে খুব বেশী দূরত্বে ইনি অন্তত নেই। অশ্বিন যেমন বলছেন যে গান্ধীকে নিয়ে বইটি লেখার উদ্দেশ্যই ছিল গান্ধীকে critical scrutiny- মধ্যে নিয়ে যাওয়া, আর গান্ধী ভক্তরা গান্ধীকে ঘিরে যে ধূপ-মালা চর্চিত ছবি তৈরী করেছে (ধূপ-মালা আমার ব্যবহার, একেই হেজিওগ্রাফি বলা যায়) তার বিরুদ্ধে অন্য মত উপস্থিত করা। এখন ইতিহাসের দায়ই এই, নির্মোক মোচন করা, সে ব্যক্তির হোক বা সমাজ-্সময়ের, বইটিতে সেরকম হলে একজন পোক্ত ইতিহাসকার হিসেবেই কাজটি করা হচ্ছে।

    কিন্তু আমার কাছে আরো গুরুত্বপূর্ণ হল লেখাটির Leaving Gandhi? অংশটি। অশ্বিন লিখছেন যে বইটি লিখে দুটি শিক্ষা পেলেন - একটি হল বিনয় (humility), অন্যটি aspiration(উচ্চাকাঙ্খা) ! বিনয় কেন, না বইটি লিখতে গিয়ে গান্ধী চরিত্রটির মধ্যে দিয়ে তারা বুঝতে পারলেন যে একজন ব্যক্তির সৎ উদ্দেশ্য থাকলেও সমাজ নির্ধারিত জায়গা থেকে সে মুক্তি পেতে পারেনা, উল্টোদিকের কঠোর আর নিপীড়ক শক্তির ওপর দীর্ঘস্থায়ী ছাপ রেখে যাওয়া কতখানি কষ্টকর একজন ব্যক্তির পক্ষে, ভারতীয়দের উন্নতিকল্পেই গান্ধী ইচ্ছাকৃতভাবেই শাসকদের সাথে সেই গোষ্ঠীর সহযোজন ঘটিয়েছেন (যা অনেক ক্ষেত্রেই খুবই বিসদৃশ) কিন্তু এও বোঝা যায় যে সেরকম না করে গান্ধীর হয়ত উপায় ছিল না কারণ তার প্রতিপক্ষের জোর অনেক বেশী। (ভারতীয়দের পক্ষই কেন শুধুমাত্র নিতে হয়েছিল গান্ধীকে সেই নিয়েও বোধ করি সেই সময়ের বিশ্লেষণ আছে যার কারণ রয়ে গেছে সেই সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয়রা যেভাবে পরিচিত হত, যেমন তামিল শ্রমিকরা বা অনেক ভারতীয় বংশোদ্ভূতই আবার নিজেদের 'আরব' বলে পরিচয় দিত, কিন্তু সেসব অনেক জটিল ও অন্য প্রসঙ্গ)

    ফলে আমার কাছে ইতিহাসকারের বিনয়শিক্ষাটা জরুরী। বিনয় শিক্ষা (হয়ত একে দীনতাও বলতে পারি) এই জন্যই যে একজন সৎ ইতিহাসকার ইতিহাসের বিশ্লেষণ করতে করতে হয়ত বুঝতে পারেন যে সময় আর সমাজ কী বা জটিল, সহজ উত্তর বা সমাধান সেখানে বিশেষ নেই, ব্যক্তি আর গোষ্ঠী শুধুমাত্রই সৎ আর স্বাধীন মনোভাব নিয়েই চললেই তাদের উদ্দেশ্য সব সময়ে সাধিত হবে না, অনেক রকমের ফোর্স ক্রিয়া করে একই সময়ে, তার মধ্যে দিয়েই পথ কেটে চলতে হয় সে সময়ে (এই পুরো ব্যাপারটিকেই হয়ত বলা যায় 'ইতিহাসের শিক্ষা') এবং সেরকম ক্রমাগত ঘটে চলে বলে পরে এসে ব্যক্তিত্বদের জীবনী আর ইতিহাস পড়ি যখন তখন মনে হয় তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রেই ঠিক আচরণ করেনি। সেই ভুল আচরনের মধ্যে সেইসব ব্যক্তির অসৎ উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া যাবে নাকি তাদের অসাফল্য (গান্ধীকে যে অসফল বলে বলা হয়েছে, শেষ জীবনে নিজেও মেনেও নিয়েছিলেন, তার কারণ হয়ত এটাই যে সময়ের যে জটিলতা তাকে পুরোপুরি সঙ্গতি তাঁর কাজ আর আদর্শের মাধ্যমে দিতে পারেননি, অনেক বড় মানুষের ক্ষেত্রেই যা ঘটে থাকে) সেটা নির্ভর করবে যে ঐ ইতিহাস পড়ছে, ইতিহাস আর সময় সম্বন্ধে তার ধারণার ওপর, আর এই বোধের ওপর যে সহজ উত্তর কোন সময়েই নেই, না বর্তমানে না সেই বর্তমান অতীত হয়ে গেলে, তখন; ইতিহাসের ব্যক্তিদের মতই ইতিহাস নিয়েও যারা লিখছেন, তাদেরও তথ্য আর ঘটনার মধ্যে দিয়ে পথ কেটে চলতে হয়, অ্যাজেন্ডা আর স্ট্রং ওপিনিয়নকে মান্যতা দেওয়াই ইতিহাস লেখকের উদ্দেশ্য হতে পারে না, অনেক দিনই সেসব নেই।

    (অশ্বিনের লেখাটিতে এও লক্ষ্য করার যে দক্ষিণ আফ্রিকায় গান্ধীর কাজকর্মের তদন্ত করার পরেও কিন্তু লেখক গান্ধীবাদকে অপ্রাসঙ্গিক বলছেন না, সেই ধারণাকে মেনেই নিচ্ছেন, সেই ধারণাকে মূল্যবান বলে মনে করছেন শেষ পর্যন্ত ন্যায়সঙ্গত পৃথিবী প্রতিষ্ঠার উপায় হিসেবে। )
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • বইপত্তর | ০৭ মে ২০২০ | ৪২০২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • সিএস | ০৫ জুলাই ২০২০ ২২:১৭94884
  • পড়ুন | 98.114.***.*** | ০৫ জুলাই ২০২০ ২৩:০১94889
  • কিন্তু বইটা পড়বেন না কেন?
  • সিএস | 2405:201:8803:be5f:1024:67b7:7443:***:*** | ০৬ জুলাই ২০২০ ০০:১২94893
  • আলাদা করে এই মুহূর্তে গান্ধীর ব্যাপারে আগ্রহ নেই, মোটমাট ধারণা আছে বলেই মনে করি। সব বই পড়ার সময়েও নেই।
  • aranya | 2601:84:4600:9ea0:184e:5daf:c212:***:*** | ০৬ জুলাই ২০২০ ০২:৩০94899
  • 'সেই ভুল আচরনের মধ্যে সেইসব ব্যক্তির অসৎ উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া যাবে নাকি তাদের অসাফল্য ' - দামী কথা
  • সম্বিৎ | ০৬ জুলাই ২০২০ ০৮:৩৯94907
  • আগে ইতিহাসে লেখা থাকত - তারপরে সেনাপতি বিদ্রোহ করিলেন। কিন্তু কেন তিনি বিদ্রোহ করিলেন, দেশের কোন পরিস্থিতিতে বিদ্রোহ করা সম্ভব হল, কেন প্রজারা সেই বিপ্লবকে সমর্থন করলেন - এসব লেখা থাকত না। এর পরের স্টেজে এল ইডিওলজিকাল ইন্টারপ্রিটেশন। যেমন মার্ক্সিস্ট হিস্টোরিয়ানরা কজাল অ্যাানালিসিস করলেন ক্লাসের দিক থেকে।

    অন্যদিকে এখনও অনেক ইতিহাসের চর্চা দেখি মূলতঃ প্রথম ধারার। মানের ঘটনা পরম্পরা বিবৃত করা। সময়টাকে ধরার চেষ্টা নেই। বিশেষতঃ যখন প্রোটাগনিস্টের কোন আপাতবিরোধী ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। যেমন ধরুন বিদ্যাসাগর। বিদ্যাসাগর যাঁকে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সোশাল রিফর্মার বলে ভাবা হয়, বিশেষতঃ নারীবাদী হিসেবে - সেই বিদ্যাসাগরই নাটকে মেয়েদের যোগদানের খুবই বিরোধীতা করেছিলেন। এটা তো ঘটনা। এখানে "দেখ বিদ্যাসাগরের হিপক্রিসি" বলে থেমে গেলে ইতিহাসচর্চা হল না। তিনিই ভাল ঐতিহাসিক যিনি বোঝার চেষ্টা করেন কী কারণে ও অবস্থায় বিদ্যাসাগর এই পজিশন নিয়েছিলেন।

    আরেকটা উদাহরণ নিই। রবীন্দ্রনাথ। অত্যন্ত আধুনিক নারীবাদী। তিনি গৌরীদান করেছিলেন। বহু ঐতিহাসিক এই বলে থেমে জাজমেন্টাল হয়ে রবীন্দ্রনাথের স্ববিরোধীতা নিয়ে পাতা ভরান। সেটায় নতুন কিছু নেই। আধুনিক ঐতিহাসিক কিন্তু তখনকার সমাজ, রবীন্দ্রনাথের পরিবার ইত্যাদি অ্যানালিসিস করছেন।

    যেকোন ঐতিহাসিক চরিত্রে প্রচুর স্ববিরোধীতা। সেগুলো ডকুমেন্টেড। শুধু সেই স্ববিরোধীতার চর্চায় নতুন কিছু নেই। কজাল অ্যাানালিসিস আর ইন্টারপ্রিটেশনই আধুনিক ইতিহাস চর্চা। অন্ততঃ আমি যা বুঝি।

  • dc | 103.195.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২০ ০৯:০৬94908
  • সমবেত বিনয় আর উচ্চাকাঙ্খা - humility আর aspiration - এটা শুধু ইতিহাস কেন, যে কোন বিষয়েই সবথেকে উঁচু পর্যায়ে যেতে গেলে ভয়ানক জরুরি। অ্যাস্পিরেশান দরকার কারন আমি যা জানিনা সেটা জানার তাগিদ, আর হিউমিলিটি সরকার কারন আমি যে সামান্য ছাত্র মাত্র, সেই বোধটা থাকা। ফাইনম্যানের ভিডিওগুলো, যেমন বিবিসি সিরিস বা লেকচার্স, ওগুলো দেখতে দেখতে প্রতিবার মনে হয় হিউমিলিটি আর অ্যাস্পিরেশানের কি আশ্চর্য মিশ্রন। এড উইটেন ও তাই। সমস্ত বিষয়েই এরকম অনেকে আছেন, দুয়েকটা নাম পড়লো আর কি।
  • এলেবেলে | 202.142.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২০ ১২:৫৯94916
  • ভাটিয়ালি-সঞ্জাত তিক্ততার বিন্দুমাত্র রেশ না রেখে এখানে কিছু লিখতে চাই। সিএস এবং ন্যাড়া যদি আমাকে বলেন যে তাঁরাও সেই তিক্ততা ভুলে গিয়েছেন, তবেই লিখব।

  • S | 69.146.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২০ ১৩:০২94917
  • গুরুতে খোলা পাতায় লিখতে কারোর পারমিশান নেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই।
  • dc | 64.62.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২০ ১৩:০৫94918
  • এলেবেলে নির্দ্বিধায় লিখে ফেলুন ঃ-)
  • সিএস | 103.99.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২০ ১৩:৪১94921
  • এখানে লিখ্লামই তো যাতে আপনি বা আর পাঁচজনে লেখেন। তদুপরি পিনাকী বলে গেল যে সব গুছিয়ে রাখতে। লিখে ফেলুন।
  • b | 14.139.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২০ ১৪:১৪94922
  • ডিসি কি ফেইনম্যানের ভিডিও-র লিংক দেবেন?
  • lcm | 99.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২০ ১৪:১৫94923
  • ভলতেয়ার প্রথম চেষ্টা করেন। ১৭৫৬ সালে লেখেন An essay of Universal history - যুদ্ধের ইতিহাস, রাজা-উজির-্সম্রাট দের ইতিহাস, ধর্মীয় গুরুদের ইতিহাস - এসব থেকে বেরিয়ে সমাজের ইতিহাস, মানুষের ইতিহাস, পৃথিবীর ইতিহাস লিখতে। তথাকথিত ইতিহাস সম্বন্ধে তাঁর বক্তব্য ছিল - What is history? A lie that everyone agrees on । কিন্তু তাঁর এই আইডিয়া চলে নি। - Voltaire’s early attempts to make history an empirical, objective discipline did not find many followers. Throughout the 18th and 19th centuries, European historians only strengthened their biases.
    সেই বায়াস এখনও চলছে।
  • | ০৬ জুলাই ২০২০ ১৪:৩৩94924
  • বি,
    ইউটিউবে আছে। নাম লিখে সার্চ করুন। ফ্যান্টাস্টিক।
  • | ০৬ জুলাই ২০২০ ১৪:৪০94925
  • একটা দিলাম
  • এলেবেলে | 202.142.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২০ ১৬:২১94927
  • এখানে লেখার মূল ঝোঁকটা আছে গান্ধীর ওপরে। তারই রেশ টেনে ন্যাড়া (নাকি সম্বিৎ-ই বলতে হবে?) বিদ্যাসাগরের প্রসঙ্গ এনেছেন মূলত, তবে রবীন্দ্রনাথও আছেন।

    এই প্রসঙ্গে আমি নিজের মতটা বলি অর্থাৎ আমি নিজে যখন ইতিহাসের চর্চা করব তখন মূলত কোন কোন দিকগুলোকে ফোকাসে রাখব, কোন কোন দিকগুলোকে অপ্রাসঙ্গিক বিবেচনা করে হয় আনবই না, কিংবা আনলেও কেবল ছুঁয়ে চলে যাব।

    ভাটিয়ালিতে এ বিষয়ে অরণ্য আমাকে এই নিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। আমি তাঁকে উত্তরে যা বলেছিলাম তার মোদ্দা ব্যাপারটা হল এই --- একজন ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে ইতিহাস রচনা করা এখন সম্পূর্ণ বাতিল হয়ে গেছে। যদিও আমাদের দেশে, আমি নিজে মনে করি, এই ধারার প্রবর্তন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। হয়তো অজান্তেই। এখন খ্যাতির বিড়ম্বনা তাঁর ছিল, পাশাপাশি এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে তাঁর আমলে শ্রেষ্ট বাঙালি ইন্টেলেকচ্যুয়াল তিনিই ছিলেন। তো তার নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে চারিত্রপূজা-য়। সেখানে তিনি কোনও সভা বা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছেন, প্রবন্ধ পাঠ করেছেন কিংবা মানুষটাকে বিশ্লেষণ করেছেন তাঁর নিজের মতো করে সেটাই ছাপার অক্ষরে দেখি আমরা। যদিও বীন্দ্রনাথ নিজে তাঁর দর্শনগত জায়গার দিক থেকে হয়তো যাঁর সম্পর্কে বলেছেন বা প্রবন্ধ পাঠ করেছেন, তার থেকে অনেকটাই ভিন্ন ঘরানার।

    তবে বাঙালি রবীন্দ্রনাথের আর কিছু না নিলেও, অন্তত ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে এই চারিত্রপূজা-র ধাঁচাটাকে আপন করে নিল। ফলে বিদ্যাসাগরের প্রথম যে চারটে জীবনী লিখলেন শম্ভুচন্দ্র, চণ্ডীচরণ, বিহারীলাল এবং সুবল চন্দ্র মিত্র সেখানে নির্ভেজাল ব্যক্তিপুজো শুরু হল। একই কথা খাটে গান্ধীর ক্ষেত্রেও। তাঁর প্রথম জীবনীকার তাঁরই নির্দেশে জীবনী রচনা করেছেন (যেমন নারায়ণচন্দ্রের অনুরোধে জীবনী রচনায় নেমেছিলেন চণ্ডীচরণ) এবং তার পরে সেই জীবনীকে আকর গ্রন্থ বিবেচনা করে একের পর গান্ধী-জীবনী রচিত হয়েছে। এই ব্যাপারটা জিবি সিং-এর বইতে ডিটেলে আছে।

    এই হেজিওগ্রাফি-পর্ব শেষে শুরু হল একদম একশো আশি ডিগ্রি বিপরীত অবস্থানকারী মার্ক্সিস্ট ইতিহাস বয়ান। গান্ধীর ক্ষেত্রে রজনী পাম দত্ত, বিদ্যাসাগরের ক্ষেত্রে বিনয় ঘোষ। সেখানে শ্রেণি প্রাধান্য পেল সবচেয়ে বেশি। উন্মোচিত হল শ্রেণিস্বার্থের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা উক্ত ব্যক্তিটিকে বিশ্লেষণ করার এক নতুন ন্যারেটিভ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, তার সীমাবদ্ধতাও একটা সময়ে পৌঁছে প্রকট হতে শুরু করল।

    এইবারে আসল ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে পোস্ট-কলোনিয়াল বা উত্তর-ঔপনিবেশিক এবং সাব-অল্টার্ন দৃষ্টিভঙ্গী। এখানে ব্যাপক গুরুত্ব পেল সমকালীন সময়, তার রাজনীতি-অর্থনীতি; অন্যদিকে সাব-অল্টার্ন ইতিহাসবিদরা জোর দিলেন নিম্নবর্গের প্রান্তিক মানুষদের ওপরে।

    আমি নিজে মনে করি বর্তমানের প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে একজন সৎ, পরিশ্রমী ইতিহাস চর্চাকারীকে (সে তিনি যতই অ্যামেচার হন না কেন) তিনটে দৃষ্টিভঙ্গী থেকে গোটা সময়টাকে বিবেচনা করতে হবে - মার্ক্সিস্ট ধারা, পোস্ট-কলোনিয়াল ধারা এবং সাব-অল্টার্ন ধারা।

    এবারে গান্ধী রেসিস্ট কি রেসিস্ট নন তার প্রচুর নিদর্শন গান্ধী নিজেই রেখে গেছেন। বর্তমানে সে সব সহজলভ্য। একই সঙ্গে এই কথাও সত্য গান্ধীর দক্ষিণ আফ্রিকা পর্ব নিয়ে সত্যিকারের ভালো বই বা লেখালেখির পরিমাণ অবিশ্বাস্য রকমের কম। তাঁর ভারতে প্রত্যাবর্তনের সময় থেকে মুলত ইতিহাসবিদরা গান্ধী নিয়ে চর্চা করেছেন। আমি নিজে তাঁর দক্ষিণ আফ্রিকা পর্ব নিয়ে লিখতে প্রচণ্ড অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছি। অথচ তাঁর জীবনের এই মূল্যবান ২১টা বছর একেবারেই হেলাফেলার নয়, অপ্রাসঙ্গিক তো নয়ই।

    আরও একটা বিষয় ইতিহাসের সময় বিবেচনায় খুব জরুরি। সেটা হচ্ছে আমার লেখার কেন্দ্রবিন্দুতে যিনি দাঁড়িয়ে রয়েছেন তাঁকে যে শুধু সেই সময়ের প্রেক্ষিতে বিবেচনা করতে হবে তা-ই নয়, একই সঙ্গে নজর রাখতে হবে একই সময়ে তাঁর সমসাময়িকদের বক্তব্য, কাজকর্ম এবং তাঁদের সেই ব্যক্তিটি সম্পর্কে ইতিবাচক বা নেতিবাচক মূল্যায়ন। মোট কথা সাদা ফ্যাটফেটে বা কালো কুচকুচে ইতিহাস চর্চার দিন শেষ, শুরু তাঁর ধূসর এলাকার সন্ধান করা।

    গান্ধীর ক্ষেত্রে এই শেষ প্যারামিটারটা খুঁজে বের করা তুলনামূলক সহজ। কারণ তিনি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হওয়ায় প্রচুর রাজনৈতিক ব্যক্তির মূল্যায়ন পাওয়াটা অপেক্ষাকৃত সহজ। সেটা জিন্না-নেহরু-সুভাষ-আজাদ-আম্বেদকর-জিন্না হয়ে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত সুবিস্তৃত এবং লক্ষ্য করলে দেখা যাবে এঁদের কারও গান্ধী-মূল্যায়নই অবিমিশ্র শ্রদ্ধাজনিত নয়। বিশেষত আম্বেদকর-জিন্নার মুল্যায়ন তো মারাত্মক। এখন যে দেশে মুসলমান প্রায় এক-তৃতীয়াংশ, দলিতরাও প্রায় তাই; সেখানে মাত্র এক-তৃতীয়াংশের নেতা হয়েই কি রয়ে গেলেন গান্ধী? তাঁকে প্রোজেক্ট করা হল ১০০ শতাংশ ভারতীয় জনগণের নেতা হিসেবে? 

    গান্ধী নিজে গোলটেবিল বৈঠকে কতকটা সেই দাবি করেছিলেন। কিন্তু সেটা যে আদতে অসার ছিল তা বুঝতে পারা গেছে গোলটেবিল বৈঠকের মাত্র ১৫ বছরের মধ্যেই। আর রবীন্দ্রনাথ? তাঁর সঙ্গে প্রায় প্রথম থেকেই গান্ধীর আদর্শগত সংঘাত।

    আমি এখানে বিদ্যাসাগরের প্রসঙ্গটা ইচ্ছে করেই আনছি না। এবং তাঁর ক্ষেত্রে এই শেষ প্যারামিটার খুঁজে পাওয়ার লোক নগণ্য। কিন্তু বিদ্যাসাগরের যে নারীমুক্তির কথা বলেছেন ন্যাড়া, খুব খেয়াল করে দেখলে সেটাও কি ওই এক-তৃতীয়াংশ নারীর জন্য নয়? কিংবা হয়তো আর কম শতাংশ নারীকে রিপ্রেজেন্ট করেন তিনি।

    এভাবে কি আদৌ ভাবা যায়?

  • b | 14.139.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২০ ১৭:২০94929
  • এলেবেলের এই বিশ্লেষণ ভালো লাগলো।
  • S | 2001:910:1410:600::***:*** | ০৬ জুলাই ২০২০ ১৯:১৩94932
  • সমস্যাটা অন্যত্র। ধরা যাক আমরা সবাই বললাম যে অমুক মহাপুরুষ অসাধারণ - একদম সুপারলেটিভ আখ্যা দিয়ে দিলাম। যেমন বইটইতে ব্যক্তিবন্দনা হয়ে থাকে আরকি। ফলে, তার সব কথা কাজ মেনে চলতে হবে আমাদের। এবারে একদল এসে দেখালো যে তিনি অত্যন্ত কাস্টিস্ট ছিলেন - একদম লেখাতেই আছে। তাহলে খুব ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। কোনদিক রাখবো। রেসিজম নিয়ে যখন কথা হচ্ছে তখন আম্রিগাতে প্রায়শই দুপক্ষের লোকই ফাউন্ডিং ফাদারদের রেফার করে। একদল বলে যে দেখো তারা কত ভিশনারি ছিলেন, কত কারেজিয়াস ছিলেন, কত ইন্টেলিজেন্ট ছিলেন। আরেকদল দেখায় যে তাদের অনেকে স্লেভ রাখতেন - অতেব দ্যাট মাস্ট বি ফাইন। এই ডাইকোটমিটা খুব মুশকিল করছে বিশেষ করে যেখানে একটা ভয়ন্কর ন্যারেটিভ রয়েছে যারা শুধুমাত্র খারাপ দিকটা এমব্রেস করতে বেশি উৎসাহী।
  • aranya | 162.115.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২০ ২০:৩৫94936
  • 'একজন ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে ইতিহাস রচনা করা এখন সম্পূর্ণ বাতিল হয়ে গেছে'
    - তা সত্ত্বেও গান্ধী, বিদ্যাসাগর ইঃ-কে কেন্দ্র করে (পজিটিভ, নেগেটিভ যেভাবেই দেখানো হোক, তাদের কেন্দ্র করেই) ইতিহাস রচনা হয়ে চলেছে।

    'একজন সৎ, পরিশ্রমী ইতিহাস চর্চাকারীকে (সে তিনি যতই অ্যামেচার হন না কেন) তিনটে দৃষ্টিভঙ্গী থেকে গোটা সময়টাকে বিবেচনা করতে হবে - মার্ক্সিস্ট ধারা, পোস্ট-কলোনিয়াল ধারা এবং সাব-অল্টার্ন ধারা'
    - কোনরকম ধারার ধার না ধেরে একজন সৎ, পরিশ্রমী এবং বুদ্ধিমান ইতিহাস চর্চাকারী তথ্যের ভিত্তিতে তার নিজের ইন্টারপ্রিটেশন দিতে পারেন
  • Tim | 174.102.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২০ ২২:৩৩94942
  • এখানে আলোচনাটা একজায়গায় ট্রান্সফার হয়ে খুব সুবিধে হয়েছে। পড়ছি।

    এলেবেলে যেমন বলেছেন, সেইরকম এক একটি খোপে ধরে ধরে ইতিহাসচর্চার কিছু সমস্যা আছে। এক, এতে আগে থেকেই একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে তারপর সেই থিওরি অনুসারে তথ্য খুঁজে নেওয়ার প্রবণতা থেকে যায়। দুই, খোপের সংখ্যা পরবর্তীতে বেড়ে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে এই মেথড অবসোলিট হয়ে যাবে, কারণ প্রচেষ্টাটি শুরুই হয়েছে একটা all inclusive view থেকে দেখার দাবি নিয়ে। গান্ধিকে বোঝাই যদি উদ্দেশ্য হয়, আমি বরং খুবই সাবধানে, কোন খোপের বায়াস যথাসাধ্য (পুরোটা হবেনা) এড়িয়ে করতে চাইবো।

    এলেবেলে লিখেছেন দেখলাম গান্ধীর দক্ষিণ আফ্রিকা পর্ব নিয়ে সত্যিকারের ভালো লেখালেখির সংখ্যা অবিশ্বাস্যরকম কম। ("একই সঙ্গে এই কথাও সত্য গান্ধীর দক্ষিণ আফ্রিকা পর্ব নিয়ে সত্যিকারের ভালো বই বা লেখালেখির পরিমাণ অবিশ্বাস্য রকমের কম। তাঁর ভারতে প্রত্যাবর্তনের সময় থেকে মুলত ইতিহাসবিদরা গান্ধী নিয়ে চর্চা করেছেন। আমি নিজে তাঁর দক্ষিণ আফ্রিকা পর্ব নিয়ে লিখতে প্রচণ্ড অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছি। অথচ তাঁর জীবনের এই মূল্যবান ২১টা বছর একেবারেই হেলাফেলার নয়, অপ্রাসঙ্গিক তো নয়ই।")

    --এই জায়গাটা আরেকটু বিশদে বলবেন? মানে কোন কোন বই বা মেটেরিয়াল আপনি পেলেন, এবং তাদের মধ্যে কোনগুলোকে বাতিল করলেন?
  • এলেবেলে | 202.142.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২০ ২২:৪৩94943
  • অরণ্য, হ্যাঁ 'কোনরকম ধারার ধার না ধেরে একজন সৎ, পরিশ্রমী এবং বুদ্ধিমান ইতিহাস চর্চাকারী তথ্যের ভিত্তিতে তার নিজের ইন্টারপ্রিটেশন দিতে পারেন'। আবার সেটাকেই কেউ একটা ধারা হিসেবে বা বিভিন্ন ধারার সংমিশ্রণ হিসেবে সংজ্ঞায়িতও করতে পারেন। না-ও পারেন।

    'তা সত্ত্বেও গান্ধী, বিদ্যাসাগর ইঃ-কে কেন্দ্র করে (পজিটিভ, নেগেটিভ যেভাবেই দেখানো হোক, তাদের কেন্দ্র করেই) ইতিহাস রচনা হয়ে চলেছে' কারণ কোনও ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে ইতিহাস চর্চা মানেই নিছক সেই ব্যক্তিটিকে নিয়ে নয়, সেই সময়টাকও ভিন্ন দিক থেকে দেখার চেষ্টা করা। 

    এক্ষেত্রে আমি একটা উপমার সাহায্য নিচ্ছি। সেটা হল ভারতের জাতীয় পতাকা। যার কেন্দ্রে একটি চক্র রয়েছে ঠিকই, কিন্তু চক্রটাই পতাকা নয়। সে একটা আয়তাকার পতাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মাত্র। এবং এই ধরণের চর্চা এখন যথেষ্টই হচ্ছে, বাংলা ও ইংরেজি দু'ভাষাতেই।

    বড়েস, 'এই ডাইকোটমিটা খুব মুশকিল করছে বিশেষ করে যেখানে একটা ভয়ন্কর ন্যারেটিভ রয়েছে যারা শুধুমাত্র খারাপ দিকটা এমব্রেস করতে বেশি উৎসাহী' কারণ আপনি যদি নীলকে সাদা বলেন আপনার অ্যাজেন্ডা পুরণ করতে, তাহলে আশা করবেন কেন অন্য কেউ তার অ্যাজেন্ডা পূর্ণ করতে তাকে লাল বলবে না? তবে যুগটা এখন বাইনারি কন্সট্রাকশন-রিকন্সট্রাকশন থেকে এগিয়ে গেছে।

    আরও একটা হাহাকার ইদানীং কিছু লিবার‍্যালদের মুখে শোনা যায়। সেটা হল অমুকটা করা যাবে না বা তমুকের ইতিবাচক দিকটাই তুলে ধরতে হবে নতুবা বিজেপির সুবিধা হয়ে যাবে। ব্যক্তিগতভাবে এটা আমার হাস্যকর লাগে। বিজেপি একটি রাজনৈতিক দল, তাকে প্রতিহত করতে হলে ইতিহাসচর্চায় পলিটিক্যাল কারেক্টেনেস দেখানোর হদ্দমুদ্দ করা হলে না হয় সেটা ইতিহাস, না হয় কোনও রাজনৈতিক দলকে প্রতিহত করা। একটা টার্ম লিখব ভেবেছিলাম, মানে এই ধরনের শৌখিন ইতিহাসচর্চাকারীদের জন্য তবে শেষ অবধি আর লিখলাম না।

  • এলেবেলে | 202.142.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২০ ২২:৪৮94945
  • আচ্ছা, আমি তো রিফ্রেশ না করা ইস্তক নতুন লেখা কিছু দেখতে পাই না তাই টিমের পোস্ট চোখে পড়েনি। এখানে আমার অবস্থান খুব পরিষ্কার। এটা আমার টই নয়, আমার লেখা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে না বোধহয়, মানে আমি অন্তত যেটুকু বুঝেছি। কাজেই সে বিষয়ে এখানে আমি কিছুই বলব না। খুবই উৎসাহী হলে সে লেখায় নিজে চলে যান এবং দেখে নিন।

  • এলেবেলে | 202.142.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২০ ২২:৫১94946
  • *কন্সট্রাকশন-রিকন্সট্রাকশন নয়, কন্সট্রাকশন-ডিকন্সট্রাকশন।

  • বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত | 202.142.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২০ ২৩:০৪94947
  • এই আলোচনা টা যদি পারা গেল, তাহলে ঐটা কেন হল ঈশ্বর জানেন। এলেবেলে মাইরি ব্যান্টারে এত আ্যলাজ্জি হলে হবে? পূর্নাঙ্গ প্রবন্ধ লেখার আগে এনগেজমেন্ট এ যেও না, মানে শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে অনুরোধ করছি। লেখাটাকে ই একমাত্র এনগেজমেন্ট হিসেবে ও রাখতে পারো। গুরু চন্ডালিকে অর্গানাইজড লার্নিং এর সম্ভাব্য প্রচেষ্টা হিসেবে দেখার কোন মানে নেই।

    ইতিহাস রচনার নানা ধরণ ধারন, তার নিজের ইতিহাস তো আছে ও থাকবে, কিন্তু ব্যক্তি বনাম সময় ইত্যাদি র আকচুয়ালি কোন ভাল রিজলিউশন নেই। গান্ধী এমন একজন পলিটিশিয়ান যিনি রাজনৈতিক ক্ষমতার চর্চায় প্র্যাকটিকালি শাসকের ব্যক্তিগত মরালিটিকে তার লেজিটেমেসির সঙ্গে জূড়ে দিচ্ছেন। অনশন , মৌন, চরকা ইত্যাদি মাস প্রোটেস্টে আসচছে। এবং ৪৬ এর চুড়ান্ত সাম্প্রদায়িক সময়ে এটা আসেটিক লেভেল এ চলে যাচ্ছে, এবং ১৯৪৮ এর ঘাতকের হাতে মৃত্যুর পরের নেশন বিল্ডিং এটা ব্যবহৃত হচ্ছে, আর কোন মরার অথরিটি এঁর ধারে কাছে নেই। সুতরাং এহেন গান্ধী কে নিয়ে খুব স্বাভাবিক ভাবেই কাটাছেঁড়া হবে। একেকটা সময়ে একেক প্রসঙ্গে হবে, আফ্রিকান স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়, দলিত আইডেন্টিটি সিরিজের সময়, এখন ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার নানা সময়ে এটা হবে। তো এমতাবস্থায় নতুন কিসু নেই এক এলেবেলে র এই বিষয়ে নতুন আগ্রহ ছাড়া, কিন্তু সেটাকে ওভারল ভালো উদ্যোগ শুধু না একটা ব্রডার ট্রেন্ডের অংশ হিসেবে দেখি, সেটা হল সাধারণ ভাবে স্কুলের টেক্সট বুকের র কোয়ালিটি খারাপ হবার কারণে আর ইতিহাস জিনিসটা তে জাস্ট খানিক নম্বর পাবার পর প্রতিযোগিতা ময় পৃথিবীতে অপাংক্তেয় অপ্রয়োজনীয় কিসু না নেশন বিল্ডিং এর বর্তমান এর সঙ্গে তার তে একটা যোগাযোগ আছে সেটা অনেকেই বুঝতে পারছেন , এবং সেটা ওভারল আনন্দের কথা। এবং এক ই সঙ্গে বাংলা আধুনিকতা র নানা রকম ইভ্যালুয়েশন দরকার, হবে, এবং আকাদেমি ক রিসার্চ এর বাইরেও হবে, তে পার্ট টা ফালতু কোন্দলের জন্য হবে‌সেটা নিশ্চয়ই সিরিয়াস এফর্টে র থেকে আলাদা করা যাবে। এই জন্যই আমার তো মনে হয় এলে, ইশান, ইন্দো, মিঠুন দের নানা বিষয়ে র আকসেসিবল ইতিহাস চর্চা টা আনন্দের খবর, বিশেষ করে এবিষয়ে সেরা এবং নতুনতম কাজ গুলির খবর তারা যখন রাখছেই , রেফার করছে, ক্রিটিক করছে। তাতে এত বিতর্ক এর কি আছে বুঝিনি। লেখাপড়ার এইটেই প্রচলিত পদ্ধতি। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং হল, তিরিশ চল্লিশের দশকে ভারতীযয় রাইট উইং এবং তার আগে থেকেই ভারতীয় মেন স্ট্রীম জাতীয় ইতিহাস চর্চা মেডিয়েভেল কেই প্রধান কনটেস্টে র জায়গা হিসেবে দেখছিল, এখন আমরা আধুনিক এবং সমসাময়িক স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতকে কনটেস্টে র জায়গা হিসেবে দেখছি, টেক্সট ব ইয়ের বাই্রছ দেখছি, এটা আনবিলিভেবলি ইন্টারেস্টিং। এত লম্বা ব্যাপার ফাইনাল পজীশন তো কিসু নেই তো এত তর্ক কিসের। মানে ব্যক্তিগত কুস্তি র তো জায়গাই বিশেষ নেই। এলেবেলে কে একটা কথাই খেয়াল রাখতে হবে এখনকার সমসাময়িক ভারতীয় রাজনীতি তে যেটা বিতর্কের বিন্যাস সেটা মাথায় রেখেই লিবেরাল প্রোজেক্ট এর ক্রিটিক করা ভালো, নইলে তার আর্গুমেন্টে বা আর্গুমেন্টের টাইমিং এবিজেপির উপকার হলে তাহলে তার প্রতিহত করার চেষ্টা হবে , তাতে অকারণ সেন্টু হলে হবেনা মাইরি। কারণ কনটেস্টে র এরেনাটা আকাদেমি ক শুধু না, নাইজার বাই নেচার নর বাই ইনটেন্ট। এলেবেলে কে আবার ও অনুরোধ, সে খুব ভালো লেখক, কিন্তু পূর্ণাঙ্গ প্রবন্ধে র পরে এনগেজমেন্ট এ আসাই বেটার বি তর্ক করতে করতেই লিখে ফেলতে পারেন। অসবিধে কি। পৃথিবীর বহু শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ ই কোলিগ বন্ধু দের মধ্যকার বিতর্কের ফসল। ইপি থমসন প্রসঙ্গে শ্যূলা মার্কস স্মর্তব্য।
    ন ইলে শুধু পিনাকি র না ক্যাজুয়াল রগডখর এর ও অসুবিধা হচ্ছে। আই নেভার গট দো হোয়াট ওয়াজ দ্য মেন পয়েন্ট অফ দিস ডিবেট, দ্যাট ইট ডিড সাউন্ড পেটি,‌সেটাতছ আর অবাক হচ্ছি না, এইটেই রীতি হয়ে গেছে।
  • lcm | 2600:1700:4540:5210:991a:80fa:d8b3:***:*** | ০৬ জুলাই ২০২০ ২৩:০৯94948
  • এ তো সহজ ব্যাপার - -
    সাউথ আফ্রিকার ইতিহাসে গান্ধীর তেমন ভূমিকা নেই। ভারতের ইতিহাসে গান্ধীর ভূমিকা আছে।
  • dc | 103.195.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২০ ২৩:১২94949
  • ক্যাজুয়াল রগডখর এ শুধু পিনাকি বাবু কেন, অনেকেরই অসুবিধে হবার কথা। রগডখর এর মতো সিরিয়াস জিনিশ ক্যাজুয়ালি নিলে হবে?
  • বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত | 202.142.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২০ ২৩:২৪94951
  • ****ক্যাজুয়াল রিডা্র

    কেন একথাটা বলছি একটা উদা দেই, লিবেরালিজম এর নেচারটাই হল সে আভ্যন্তরীন ডিবেটে সে বহুধাবিভক্ত, (ফরেন পলিসি আলাদা এবং প্রবলেমেটিক,:---)))))
  • | 202.142.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২০ ২৩:২৮94952
  • ,
  • ব মতো | 202.142.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২০ ২৩:৩৪94954
  • বহু কিছু উড়ে গেল ও পাল্টে গেল :---)))) যাক একটি এখনও অপ্রকাশিত পোবোন্দ নিয়ে, না হলেই ভালো হত বিতর্ক র পরে মোটামুটি মাথা ঠাণ্ডা হবার পরের ট ই তে আমার ইন্টারভেনশন টা ফান্ডামেন্টালি অপ্রয়োজন ছিল, তাই ক্ষতি কিসু নাই:---))))))))
  • এলেবেলে | 202.142.***.*** | ০৬ জুলাই ২০২০ ২৩:৪১94956
  • , জানি না টেলিপ্যাথি আছে কি না। আমি যদিও সেটাতে বিশ্বাস করি না। কিন্তু আমার মন আজ সকাল থেকেই বলছিল যে আপনি এই টইতে না এসে থাকতে পারবেন না। গত ক'দিন এখানে যে ঝড় আমার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে - মানে আমাকে নাকি কোন বইমেলায় গুরুর গুরুদেবরা লাথ মারার খোয়াবেও মত্ত। আমি দাঁতে দাত চেপে লড়ে গেছি। বিশ্বাস করুন, অনেক দিন পরে আপনার ফিরে আসাতে আমি সম্ভব ইমোশনাল হয়ে পড়েছি। একই রকম ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম যখন ইন্দ্রনীলবাবু ফিরে এসেছিলেন।

    আপনি ফিরে এসেছেন এটা আমার পরম পাওনা। কাল থেকে আমি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডি-অ্যাক্টিভেট করে দিয়েছি। গুরুতে নিয়মিত হয়তো আসা হবে না। বা আসলেও এনগেজ হব না। আমার অনেক বড় মাপের কাজ করা বাকি আছে। আজ থেকে সেকাজে সানন্দে মনোনিবেশ করব। শুধু একটাই অনুরোধ, আপনি ফের উধাও হয়ে যাবেন না।

    আমি চললাম।

  • Tim | 174.102.***.*** | ০৭ জুলাই ২০২০ ০০:০৮94958
  • ধন্যবাদ এলেবেলে। লেখার লিংক খুঁজে নিলাম (আগে দেখেছিলাম কিন্তু হারিয়ে গেছিলো)। কিছু প্রশ্ন থাকলে পরে করছি।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন