ইনফ্লুয়েঞ্জার ভাইরাসের মতন সার্স-কোভ২ ভাইরাসও সম্ভবত আমাদের সঙ্গে অনেক, অনেক দিন থাকবে:
ভাইরাস-শিকারী পিটার পিওট এর সঙ্গে আলাপচারিতা ~ দ্বিতীয় পর্ব
২৯) এই নতুন ভাইরাস কতটা মারাত্মক?
বেশিরভাগ বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন যে এই ভাইরাস থেকে সংক্রামিত সমস্ত লোকেদের মধ্যে ১% থেকে ২% মারা যায়। WHO এখন একটু বেশি বলছে, বলছে ৩% এরও বেশি, তবে ওরা যখন যেসব কেস রিপোর্ট হয় নি বা যেগুলোতে খুব অল্প লক্ষণ দেখা গেছে সেই সব অজস্র কেসকে হিসেবে আনবে, তখন মনে হয় এই অনুমানটা আরও কমবে। বয়স্ক মানুষদের আর যাঁদের আগে থেকেই অন্য কোন অসুখ আছে, তাঁদের মধ্যেই মৃত্যুর হার বেশি।
৩০) আমরা কি তাহলে গড় মৃত্যুর হারের সংখ্যাটাই নজরে রাখব?
ঠিক তা না। “গড়” ৩ ইঞ্চি জলেও আপনি ডুবে মরতে পারেন। এর ঝুঁকিগুলো বোঝার একটা উপায় হল এটা মেনে নেওয়া যে এটা কিছু নির্দিষ্ট দলের মানুষের জন্য খুবই মারাত্মক আবার অন্য দলের জন্য ততটা নয় – আর সংক্রমণের ফলাফল অনেক রকমের হতে পারে।
৩১) তাহলে কোন কোন সংখ্যা আর চেকপয়েন্টের উপর নজর রাখব?
৮0% ক্ষেত্রে এটা একটা হালকা রোগ, তবে ২0% ক্ষেত্রে এটা মারাত্মক হয়ে ওঠে, সবচেয়ে খারাপ কেসগুলোতে উচ্চ তাপমাত্রা বা শ্বাসকষ্টের কথা বলা হচ্ছে। ফলে কিছু লোককে হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে – কিছুজনের যাঁদের ফুসফুসের সংক্রমণ খুব বেশি, তাঁদের ক্রিটিক্যাল সময়টাতে ইন্টেন্সিভ কেয়ারেও থাকতে হচ্ছে।
৩২) কোন দলের লোকেরা এখানে সবচেয়ে বেশি বিপদে রয়েছে?
প্রথমত, আমার মতো বয়স্ক ব্যক্তিরা: আমার ৭১ বছর বয়স। আপনার বয়স যত বেশি, তত ঝুঁকি বেশি। ডায়াবেটিস, ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ লাংসের অসুখ, শ্বাসযন্ত্রের বা হ্রদযন্ত্রের রোগ বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার কমের মত অসুখ যাঁদের আছে, তাঁদেরও ঝুঁকি রয়েছে।
৩৩) এই বেশি ঝুঁকিওয়ালা দলের লোকেরা কতটা বিপদের মুখোমুখি?
এঁদের মৃত্যুর হার ১০% বা এমনকি ১৫% এর মত বেশিও হতে পারে। আর যত বেশি অসুখ থাকবে, তত ঝুঁকি বাড়বে। ওয়েবে এইসংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক তথ্য নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে।
৩৪) তাহলে ডায়াবেটিসের মত অন্য অসুখ আগে থেকেই থাকলে ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। কেন?
কারণ যে কোনও সংক্রামক ভাইরাসের আক্রমণের ক্ষেত্রেই আপনার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই দুর্বল, আর বিশেষ ভাবে এই ভাইরাসের জন্য তো বটেই।
৩৫) সাধারণভাবে মনে হচ্ছে যে শিশু ও কমবয়সীরা শুধু অল্প অসুস্থ হচ্ছে, যদি আদৌ অসুস্থ হয়। এটা কি সত্যি?
অনেকটা সে রকমই মনে হচ্ছে। তবে COVID-19 সংক্রান্ত অন্য অনেক ইস্যুর মতো এই বাবদেও নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।
৩৬) যদি তাই সত্যি হয়, তাহলে SARS-CoV2 কেন বয়স্ক লোকদের বেশি অসুস্থ করবে, কমবয়সীদের আর শিশুদের ততটা নয়?
জানা নেই আসলে। কারণটা বুঝতে আরও খানিকটা সময় লাগবে।
৩৭) আর কিছু অস্বাভাবিক ব্যাপার আছে কি?
কোন রোগলক্ষণ না থাকলে আর আপনি পুরো সুস্থ বোধ করলেও অন্য লোককে সংক্রামিত করতে পারেন। এইচআইভি সংক্রমণের সময়ও এরকম হয় যদিও, তবু এটা অস্বাভাবিক।
৩৮) আমরা প্রায়ই শুনছি যে COVID-19 মরসুমী ফ্লুর সঙ্গে তুলনীয়। এটা ঠিক কিভাবে আমরা বুঝতে পারি? যেমন ধরুন মরসুমী ফ্লু আর করোনভাইরাস কি সমান বিপজ্জনক?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণত মরসুমী ফ্লু বছরে ৩ কোটি লোককে সংক্রামিত করে আর এই সংক্রামিতদের মধ্যে থেকে ১% এর ১/১0 এর চেয়েও কম লোক মারা যায় - তবে তাহলেও এটা বেশ বড় সংখ্যা। সারা পৃথিবীতে, একটা সাধারণ বছরে, মোট ৩০০,০০০ মানুষ মরসুমী ফ্লুতে মারা যায়। তবে, মোটামুটি, নতুন করোনভাইরাসটি ১০-২০ গুণ বেশি মারাত্মক এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার সঙ্গে এর তফাত এই যে, আমরা এক্ষেত্রে টিকা নিয়ে নিজেকে সুরক্ষিত করতে পারি না।
৩৯) এই নতুন ভাইরাস কি ফ্লুর মতো সহজেই ছড়িয়ে পড়ে?
নতুন ভাইরাসটি ফ্লুর মতো সহজেই ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
৪০) ফ্লু আর COVID-19 এর তুলনা নিয়ে আরও প্রশ্ন করতে চাই, এদের কারণ কি? ফ্লুও কি ভাইরাসের থেকে হয়?
হ্যাঁ. ফ্লু ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের থেকে হয়। তবে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এবং করোনা ভাইরাস অনেকটাই আলাদা। ফ্লু’র টিকা নিলে আপনার ঝুঁকি অনেক কমে যায়, কিন্তু তাতে নতুন করোনা ভাইরাসের বাবদে কোন সাহায্য হয় না। সাধারণ সর্দি, যার কোনও টিকা বা নিরাময় নেই, প্রায়শই রাইনোভাইরাস নামের আরেক ধরণের ছোট্ট ভাইরাসের জন্য হয় আবার মাঝে সাঝে অন্য কোনও করোনা ভাইরাসের জন্যও হয়।
৪১) এই নতুন করোনা ভাইরাসটা যখন আপনার শরীরে ঢুকে পড়ে, তখন কিভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে?
এটি সাধারণত কাশি দিয়ে শুরু হয়। তারপরে অল্প জ্বর। তারপরে অল্প জ্বর থেকে সেটা বেশি জ্বরে পরিণত হয় আর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়।
৪২) ঠিক কোন সময় ভাল চিকিত্সা জীবন ও মৃত্যুর মধ্যে তফাৎ গড়ে দেয়?
যখন আপনার জ্বর খুব বেশি থাকে এবং আপনার ফুসফুসগুলো এতই সংক্রমিত হয় যে আপনার শ্বাসকষ্ট হয় বা শ্বাস নিতে সাহায্য লাগে, তখন ঠিকমত চিকিৎসা লাগে।
৪৩) হাম , মাম্পস বা চিকেন পক্সের মতো কোনও রোগের থেকে এই নতুন ভাইরাস কিভাবে আলাদা?
SARS-CoV2 এখন তুলনায় অনেক কম সংক্রামক ও বিপজ্জনক, তবে আমরা এখনও এর সম্বন্ধে অনেক কিছুই জানি না। অন্যান্য অসুখগুলোর সম্বন্ধে আমরা অনেক ভালভাবে জানি।
৪৪) নতুন করোনাভাইরাস যদি অন্য ভাইরাসের তুলনায় কম বিপজ্জনক হয় তবে কেন অনেকে এটিকে এত ভয় পাচ্ছেন?
কারণ নতুন কিছু যা আমাদের মেরে ফেলতে পারে বা অসুস্থ করে তুলতে পারে, সেগুলোতে আমরা খুব উদ্বিগ্ন হই। তবে ভয় পাওয়া বন্ধ করতে দরকার সঠিক জ্ঞান, তাই এখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, আমি আপনাদের অনুরোধ করব CDC.gov এর দিকে নজর রাখতে। অন্যান্য দেশে আপনার জাতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বা WHO র ওয়েবসাইট দেখুন।
৪৫) লোকেরা কত ঘন ঘন CDC or WHOর ওয়েবসাইট , বা তাদের জাতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ওয়েবসাইট দেখবে?
আমরা নতুন ভাইরাস সম্পর্কে যতই জানছি, সাথে সাথে আমাদের জানাটাকে নিয়মিত আপডেট করছি, তাই এই সাইটগুলি ঘন ঘন দেখা উচিত।
৪৬) মানুষ কি কখনও কোনও ভাইরাস পুরো মুছে ফেলতে পেরেছে?
হ্যাঁ. গুটিবসন্ত, যা লক্ষ লক্ষ লোককে মেরে ফেলত। এছাড়া গেটস ফাউন্ডেশন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশ্বের অনেক সরকারকে ধন্যবাদ যে পোলিওও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। পৃথিবীতে কী ভয়াবহ প্লেগ হত সেটাও যেন ভুলে না যাই।
৪৭) কিভাবে নতুন ভাইরাস গোটা পৃথিবীর নতুন নতুন জায়গায় যায়?
স্থলপথে, বায়ুপথে এবং সমুদ্রপথে। ভাইরাস আজকাল প্লেনে চড়ে যাতায়াত করে। যাত্রীরা SARS-CoV2 বহন করতে পারে।
৪৮) তাহলে কি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোর মাধ্যমেই নতুন ভাইরাসকে আদর করে ডেকে আনা হচ্ছে?
আসলে SARS-CoV2 ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ বেশির ভাগ দেশেই ঘাঁটি গেঁড়ে ফেলেছে আর বড় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়িয়ে অনেক ভিতরে পৌঁছে গেছে।
৪৯) যেহেতু এই মহামারী চীনে শুরু হয়েছিল, সেই দেশ থেকে আসা জনগণই কি যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস আমদানি করার বাবদে সবথেকে বড় বিপদ?
২০১৯ সালে চীনে নতুন ভাইরাসটি দেখা হওয়ার পরে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২কোটি মানুষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ৪ সপ্তাহ আগেই চীন থেকে সরাসরি আসা বেশির ভাগ উড়ান বন্ধ করে দিয়েছে, কিন্তু তাতে ভাইরাসের ঢোকা বন্ধ হয় নি। এখন চীনে কোভিড -১৯ এর কেসগুলো বেশিটাই অন্য দেশ থেকে আসা কারণ আপাতত চীনে মহামারীর প্রকোপ কমছে বলে মনে করা হচ্ছে।
৫০) অন্য ভাবে বললে, বড় বড় বিমানবন্দরগুলোর কারণেই কি এটা নিশ্চিত যে যে কোনও দেশেই ৩ মাসেরও কম সময়ে সর্বত্র ভাইরাসে ছেয়ে যাবে?
হ্যাঁ. ওই যে আপনারা আমেরিকায় বলেন না, “The horse has left the barn.” এটি সমস্ত ভ্রমণ পুরোপুরি বন্ধ করার মত কোন কারণ নয়।
৫১) জাপানের মতো দেশেও স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে কেন?
ইতালি, ফ্রান্সের মত অন্যান্য দেশও একই কাজ করছে। কারণ বিজ্ঞানীরা জানেন না যে শিশুরা্ যারা ভাইরাসের বাহক, তারা কতটা এর ছড়িয়ে পড়াকে দ্রুততর করছে। জাপান এই ছড়িয়ে পড়া কমানোর জন্য খুব চেষ্টা করছে। বাচ্চারা হাত ধোয় না আর ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের নিয়মগুলো মেনে চলে না বলে সাধারণত ভাইরাস বেশি ছড়ায়। ফ্লু ছড়ান’র বাবদে তাদের একটা বড় ভূমিকা থাকে আর সে জন্যেই বহু দেশ ভাইরাস-আক্রান্ত এলাকায় স্কুল বন্ধ করে দিচ্ছে।
৫২) একবার সংক্রামিত হলে কোন ওষুধ আছে কি যেটা খেলে ভাইরাসের আক্রমণ কম জটিল হবে বা একেবারে সেরে উঠব?
চিকিত্সার জন্য কার্যকর বলে প্রমাণিত, মানে ডাক্তাররা যাকে বলেন “থেরাপি” এমন কোন ওষুধ এখনো পাওয়া যায় নি। ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলোতে অনেক আলাদা আলাদা ওষুধ পরীক্ষা করা হচ্ছে, সুতরাং আশা করা যায় যে খুব তাড়াতাড়িই এই ছবিটা বদলে যাবে।
৫৩) নতুন রোগ সারানোর ওষুধ বেরনোর সম্ভাবনা কতটা আর কত তাড়াতাড়ি?
আমার বিশ্বাস যে সম্ভবত আগামী কয়েক মাসে, আমরা খুব সম্ভবত এখানকার ওষুধগুলোরই এমন কোন off-label” ব্যবহার পাব যেটা আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিত্সা করতে সাহায্য করবে। অন্য ভাবে বললে, এখনকার কোন ওষুধেরই, যেটা আদতে হয়ত HIV র মত অন্য কোন ভাইরাল সংক্রমণ সারাতে ব্যবহার হয়, তার নতুন কোন ব্যবহার পাব । তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য সময় লাগবে আর অনেক অনেক সত্যিকারের পরীক্ষা করতে লাগবে। নতুন রোগাপহরক ওষুধগুলোর ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলিতে চলছে অনেক জায়গাতেই, বিশেষত চীনে। এটা খুবই আশার কথা।
৫৪). অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে কিছু বলবেন? সবাই তো বিপদে পড়লেই সেদিকে ছোটে।
এটি একটা নতুন ভাইরাস, ব্যাকটিরিয়া নয়। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে, ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে না। হয়ত হাসপাতালে কোন ব্যাক্টেরিয়া থেকে হওয়া সেকেন্ডারি সংক্রমণ সারাতে তারা কাজে লাগে, তবে নতুন ভাইরাসের উপর সে কোন কাজই করে না।
৫৫) এই যে ইন্টারনেটে এত ধরণের নতুন নিরাময়, থেরাপি আর চিকিত্সা শোনা যাচ্ছে সেগুলো নিয়ে কিছু বলবেন ?
অজস্র ভুলভাল দাবি করা হচ্ছে। একমাত্র একাধিক নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইটে যদি কিছু পড়া যায়, তাহলেই সেটাকে সত্যিকারের বিজ্ঞান বলে ধরা যেতে পারে। তবে বেশিরভাগই যা শোনা যাচ্ছে তা আসলে জঞ্জাল, তাই সাবধান হোন আর সত্যাসত্য যাচাই না করে গুজব ছড়াবেন না।
৫৬) মুখোশের ব্যাপারটা কি? এই নীল সার্জিকাল মাস্ক কাজের নাকি N95 ফেসমাস্ক?
খুব কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতি বাদ দিলে মুখোশের কার্যকারিতা খুব সীমিত। যেমন বলা যায়, N95 মাস্কের ধরণের উপর নির্ভর করে, ৫০% এর কম ভিতরে ঢুকতে চাওয়া ভাইরাস কণা ফিল্টারে আটকে যাবে, তবে এটা বায়ুবাহিত জলকণার মাধ্যমে ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া কমাতে পারে।
৫৭) সঠিকভাবে ব্যবহার করা মাস্কের সুবিধা কি ও কাদের মুখোশ পরা উচিত?
সাবধানে লাগানো এবং নিয়ম মেনে পরা সবথেকে ভালো মাস্কগুলোও শুধু অসুস্থ লোকদের কাশি থেকে ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া কমায়। মানে, মাস্ক আপনাকে অন্য লোকদের থেকে রক্ষা করার জন্য নয়; এটা আপনার থেকে অন্যান্য লোকদের রক্ষা করার জন্য। আপনার যদি মনে হয় যে ঠাণ্ডা লেগেছে আর আপনি কাশতে শুরু করছেন, তখন অন্যদের প্রতি সৌজন্য দেখানোর জন্য মাস্ক পরা দরকার। মাস্কের আরেকটা অতিরিক্ত সুবিধা হল যে এটা পরে থাকলে আপনার মুখ ছোঁয়ার সম্ভাবনা কমে যায়, তাই আপনার হাতে ভাইরাস থাকলে সেখান থেকে ভাইরাসের আপনার শরীরে চলে আসার সম্ভাবনাও কমে। মাস্ক স্বাস্থ্যপরিষেবার কর্মীদের জন্য ভালো। যদি আপনি স্বাস্থ্য পরিষেবাতে বা বয়স্ক মানুষের পরিচর্যার কাজ করেন, তাহলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক।
৫৮) এই বিশ্বজোড়া মহামারীর মধ্যে সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য কি করা যায়?
ঘন ঘন হাত ধোয়া, মুখ না ছোঁয়া, কনুই বা কাগজের রুমালে কাশি ও হাঁচি, হাত না মেলানো বা জড়িয়ে না ধরা এগুলো একজনের ঝুঁকি কমায়। আপনি যদি অসুস্থ হন, বাড়িতে থাকুন আর ফোন করে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে জেনে নিন এরপর কি করবেন, আর অন্য লোকের সঙ্গে দেখা করতে হলে মাস্ক পরুন।
৫৯) "mitigation" মানে কি? বিজ্ঞানীরা কথাটা খুব ব্যবহার করছেন শুনছি।
"mitigation" বলতে ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া কমিয়ে দেওয়া আর জনস্বাস্থ্য পরিষেবা, জনজীবন ও অর্থনীতিতে এর প্রভাব সীমিত করার চেষ্টা করা। কোনও টিকা না পাওয়া পর্যন্ত আমরা শুধু এর ছড়িয়ে পড়াটাকেই কমাতে পারি। এটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ।
৬০) ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়াকে আমরা আর কিভাবে কমাতে পারি?
ভাল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও সাধারণ সৌজন্য দেখানো এই ছড়িয়ে পড়া কমাতে পারে। এছাড়াও, "সামাজিক দূরত্ব" বজায় রাখার ব্যবস্থা - যেমন বাড়ি থেকে কাজ করা, বিমানে না চড়া, স্কুল বন্ধ করে দেওয়া এবং বড় বড় জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারী করা - SARS-CoV2-এর বিস্তারকে কমাতে সাহায্য করবে।
৬১) একেকটা ভাইরাস কি অন্যদের তুলনায় বেশি সহজে ছড়িয়ে পড়ে?
হ্যাঁ, হাম সবচেয়ে খারাপ। একজন সংক্রামিত লোক একটা ঘর ছেড়ে চলে যাওয়ার ২ ঘণ্টা পরেও যদি আপনি সে ঘরে গিয়ে ঢোকেন, তাও আপনার হাম হতে পারে। এইজন্যে টিকাকরণের হার কমে গেলেই আবার হামের প্রকোপ ঘটে। খুব শক্ত রোগ এটা। সাধারণ সর্দি মোটামুটি সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। এইচআইভির ছড়িয়ে পড়া বরং আরও শক্ত, তাতেও এখনো ৩.২ কোটি লোক মারা গেছেন।
৬২) এই ভাইরাস বন্ধ করা যাবে কি করে?
সত্যিই কেউ নিশ্চিতভাবে জানে না, তবে চীন দেখিয়েছে যে এর বিস্তার উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো যায়। SARS-CoV2 পুরোপুরি নির্মূল করতে মনে হয় একটা টিকা লাগবে।
৬৩) একটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমান আকারের জনসংখ্যার মধ্যে নতুন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে কতটা সময় লাগবে?
ভালো ভালো স্বাস্থ্যবিধি সাধারণভাবে মেনে চলা হলে, SARS-CoV2 মনে করা হচ্ছে প্রতি সপ্তাহে সংক্রামিত জনসংখ্যাকে আগের সপ্তাহের দ্বিগুণ করে দেয়। এর মানে ৫০ জন সংক্রামিত লোকের থেকে সংখ্যাটা এক লাখে পৌঁছাতে ১৪ সপ্তাহ লাগবে। এটা সংক্রামণ ছড়ানোর সহজ অঙ্ক। অবশ্যই, আমরা এটাকে কমানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে পারি।
৬৪) করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া কমানোর কাজে ভাল স্বাস্থ্যবিধি কতটা কার্যকর? লোকেরা গাইডলাইন অনুসরণ করলে সংক্রামিত লোকদের সংখ্যা কি লক্ষণীয়ভাবে হ্রাস পাবে?
লোকেরা কতটা সতর্ক থাকে তার উপর ভিত্তি করে সংখ্যাগুলি বদলায় এবং এমনকি খুব ছোট ছোট পরিবর্তনগুলিও গুরুত্বপূর্ণ যাতে স্বাস্থ্যপরিষেবা ব্যবস্থার উপর একেবারে প্রয়োজন না হলে চাপ না পড়ে।
৬৫) কয়েক হাজার কেস কি আমাদের জনসংখ্যার মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে? সেটা কি ভাবে সম্ভব?
প্রতি বছর, কয়েক শত লাখ লোকের ফ্লু হয়। এই বছর, এর মধ্যে কিছু কেস আসলে COVID-19। এছাড়াও, অনেক সংক্রামিত ব্যক্তিরই কোনও লক্ষণ দেখা যায় না বা খুব হালকা লক্ষণ দেখা যায়, তাই তারা এমনি চোখে ধরা পরে না।
৬৬) পরীক্ষার ফল পজিটিভ মানে কী?
এর মানে হ'ল ভাইরাসটি যে সেই ব্যক্তির দেহগত তরলে রয়েছে, তা একটি সেনসিটিভ পরীক্ষায় সনাক্ত হয়েছে।
৬৭) যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সকলের পরীক্ষা করা উচিত কি?
COVID-19 এর পরীক্ষা আরও অনেক বেশি পরিমাণে হওয়া উচিত কারণ আমরা এখনো ভালো করে জানি না যে কে আক্রান্ত আর ভাইরাসটি কীভাবে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এইসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে আমাদের আরও অনেক পরীক্ষা-নিরিক্ষার দরকার।
৬৮) দক্ষিণ কোরিয়া কেন "ড্রাইভ-থ্রু" পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে?
দক্ষিণ কোরিয়াতে ড্রাইভ-থ্রু পরীক্ষা রয়েছে কারণ প্রতিটি সংক্রামিত ব্যক্তিকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খুঁজে বার করে মারীর প্রকোপ কমানোর জন্য তারা খুব চেষ্টা করছে।