ইতু সাধভক্ষণ করে। আর আমরা খাই মালপোয়া। শিব্রাম চকরবরতীর বোন ইতু নয় কিন্তু। যার নামে বই, ‘ইতু থেকে ইত্যাদি’। এই ইতুই নাকি বড় হয়ে সিনে নায়িকা কাবেরী বসু। কিন্তু আমার কাছে ইতু কখনও বড় হননি। তাই তাঁর বড়বেলার খবর জানি না।
প্রতি বছর অগ্রহায়ন মাসে যে গর্ভাধান করে এবং সাধ খায় সে দেবী ইতু। এখনও গ্রাম বাংলার বহু ঘরে কার্তিক সংক্রান্তিতে মাটির সরায় ইতু পাতা হয়। ছোলা, মটর, কচু গাছের ঝাঁক নিয়ে সেই ইতু পুজোর জল পেতে পেতে গর্ভাধান করে। আর অগ্রহায়ন মাসের শেষ দিনে সাধ খায়। ইতু পুজো নিয়ে আমার কোনও মাথাব্যথা নেই। যেমন নেই ইতু দেব না দেবী, তা নিয়েও। পণ্ডিতেরা তো কেউ কেউ ইতুকে ইন্দ্রও বলেছেন। তা বলুন। কিন্তু সাধ খাওয়াত তো আমার পিসি। কিংবা পাশতুতো বোন। দেবীর সাধভক্ষণের দিনে মালপোয়া ভেজে। তার নাগাল জিভের ডগায় পেতেই আমার যত আগ্রহ। আহা! মৌরী দেওয়া, কিটকিটে মিষ্টি নয়, গাঢ় বাদামি রঙের রসসিক্ত সেই চাকতি। ঘরে ভাজা। অহো, কী স্বাদ!
বাংলার উৎসবের মিষ্টি নিয়ে লিখতে গেলে লৌকিক মিষ্টির কথা আসবেই। তার্কিকেরা যেন ভুরু কুঁচকোবেন না, লৌকিক মিষ্টি মানে! তাহলে কি অলৌকিক কিছু আছে নাকি? আছে কিনা জানি না। যেমন জানি না, বৈকুণ্ঠলোকের ক্ষীরসাগর সত্যিই ক্ষীরের তৈরি কিনা। যদি জানতে পারি তো, ইহলোক ত্যাগের পরে আমার সাধনোচিত ধাম বৈকুণ্ঠলোক। আমার সাধনার জোরে নয়। মাতৃকুল পরম বৈষ্ণব। নবদ্বীপ ধামের পরের স্টেশনেই মামার বাড়ি। নরানাং মাতুলক্রম, কথাতেই আছে। সুতরাং ক্ষীরসমুদ্রের ক্ষীরের ভাগিদারও।
সত্যি বলতে কি, উৎসবের মিষ্টি কিন্তু লৌকিক মিষ্টিগুলোই। লৌকিক মানে যার তেমন বাজার মূল্য নেই। একসময় প্রচুর চলত। এখন পুজোআচ্চার সঙ্গে জুতে গিয়ে কোনও ক্রমে মান বজায় রেখেছে। অথবা ঘরোয়া ভাবে মাঝে মাঝে উদয় হয়ে অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। যেমন মালপোয়া। এখন অবশ্য কিছু কিছু মিষ্টির দোকানেও মালপোয়া তৈরি করে।
ধানেরও সাধ দেয়। বাংলায় যাকে বলে নল দেওয়া। আশ্বিন মাসের শেষ দিনে ধান জমিতে নল দেওয়া হয়। নল দেওয়া মানে ধানগাছকে সাধভক্ষণ করানো। এই সময়ে ধানগাছে শিস ধরতে শুরু করে। ধানের সবুজ খোলকের ভেতরে তখন সাদা তরল। চাষিরা বলেন, ধানের দুধ। মানে ধানগাছ গর্ভবতী হয়েছে। ধানের সবুজ খোসা যত সোনালি হবে এই দুধ তত শক্ত হবে। শেষে চাল। ধানে দুধ এলেই চাষিরা সাধভক্ষণের ব্যবস্থা করেন। পুজোর থালায় সেদিন চিড়ে, মুড়কি, তালশাঁসের সঙ্গে কদমা, তিলেখাজা। শহরে কদমার প্রচলন আছে কিনা জানা নেই। ধবধবে সাদা, গোল মিষ্টি। একসময় বাড়িতে অতিথি এলে চিড়ে, গুড় বা মুড়কি দিয়ে জলখাবার দেওয়া হত। তখন কদমারও চল ছিল। এখন পুজোতেই শুধু লাগে। তিলেখাজাও তাই।
আচ্ছা পিঠে কি মিষ্টান্নের মধ্যে পড়ে? যদি পড়ে তাহলে বলব চষি পিঠের কথা। চালের গুঁড়ি দিয়ে বানানো। গুঁড়ি আটার মতো মেখে লেচি কাটতে হয়। তার পর সেই লেচিকে লম্বা করে বেলন চাকির চাকিতে রেখে হাতের তালুর চাপে এবং কায়দায় ছোট ছোট টুকরো করা হয়। টুকরোগুলো হয় অনেকটা বেলনের মতো। মাঝখানটা মোটা, দু’ধারে সরু। কিন্তু আকারে খুব ছোট। তর্জনীর অর্ধেক। সেই টুকরোগুলোকে দুধ আর চিনির রসে ফুটিয়ে নিতে হয়। সুগন্ধের জন্য তেজপাতা, এলাচ দেওয়া যেতে পারে। চষি পিঠেও সাধভক্ষণের মিঠাই। তবে একেবারেই বাঙাল বাড়ির। ইচ্ছে করলে কেউ কেউ অন্য সময়েও করে খেতে পারেন। হবু মায়ের জন্য তৈরি এই পিঠের দিকে বাচ্চারা নজর দিলে এক সময়ে দিদা, ঠাকুমারা ভয় দেখাত বটে। তবে আমি নিশ্চিত, এতে ভয় বা JOY, কোনওটাই নেই। নির্ভয়ে খান। লুপ্তপ্রায় মিষ্টান্ন। বাঙাল বাড়ি থেকেও হারিয়ে যেতে বসেছে। নতুন করে তৈরি শুরু করলে অস্তিত্ব রক্ষা হবে।
তালের বড়ার যোগ জন্মাষ্ঠমীর সঙ্গে। নন্দদুলালের জন্মদিন পালন কেক কেটে হয় না। হয় তালের বড়া দিয়ে। অনেকে তাল ফুলুরিও বলেন। অষ্টম গর্ভের সন্তানের জন্য বাঙালি মা-ও এই দিন তালের বড়া ভাজেন। কিন্তু তালের বড়া ধীরে ধীরে ঐতিহ্য হারাচ্ছে। তার জন্য একমাত্র দায়ী পরিবার পরিকল্পনা। অষ্টম গর্ভ তো এখন দিল্লির দূষণ মুক্তি বা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে সই করানোর থেকেও অসম্ভব ব্যাপার। পরিবার পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল ‘হাম দো হামারা দো’ দিয়ে। এখন ‘হাম দো হামারা এক’ করে নিয়েছেন বুদ্ধিমান মাতা-পিতা। তাই জন্মাষ্টমীও কমেছে। তালের বড়াও। তাছাড়া তালের বড়া তৈরিতে ঝক্কিও রয়েছে। এখনকার ছোট পরিবারে সেই পিসি, ঠাকুমারা কোথায়? যাঁরা ভাইপো বা নাতির জন্য ঝুড়ি উপুড় করে ঘষে ঘষে তাল চাঁছবেন! গৃহকর্ত্রীর সময় নেই।
গুজিয়া নামক একটি মিষ্টি এখনও গ্রামাঞ্চলের কিছু কিছু মিষ্টির দোকানে ট্রেতে শুয়ে থাকে। একসময়ে বাড়িতে অতিথি এলে প্লেটে গুজিয়া আর গ্লাসে জল এগিয়ে দিলে কেউ কিছু মনে করতেন না। এখন এগিয়ে দিলে সামনাসামনি রক্তে চিনি বেশি বলে অজুহাত খাড়া করবে। আড়ালে কিপটে বলবে। খুব অভিমানী অতিথি হলে সম্পর্ক ছেদ। এখন অবশ্য মিষ্টিটা পুরোপুরিই দেবভোগ্য হয়ে গিয়েছে। পুজোআচ্চাতেই বেশি লাগে। চিনির পরিমাণই বেশি। অথচ উপকরণ ঠিকঠাক থাকলে প্যাড়ার কাছাকাছি খেতে।
মণ্ডা নামক মিষ্টান্নটিও বেশির ভাগ জায়গায় দেবতার ভোগেই লাগে। বাঁকুড়ার কিছু দোকানে মণ্ডার নাম রয়েছে বটে। তবে বেশির ভাগ দোকানেই মণ্ডা নামে যা বিক্রি হয় তা চিনির টুকরো। বাঁকুড়ার রানিবাঁধ এলাকার একটা দোকানে আমি, ইন্দ্র, দীপু, বাবলা খেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল কেউ যেন রেশন দোকানে নিয়ে গিয়ে চিনির বস্তায় জিভ ঠেসে ধরেছে। বাবলা বলেছিল, আমাদের পাতিহাল গ্রামের মণ্ডলা কালীপুজোর মেলায় পুজোর সন্দেশ হিসেবে বিক্রি করা মিষ্টির সঙ্গে রানিবাঁধের মণ্ডার কোনও তফাৎ নেই। চিনি চিনি। সবই দামে সস্তা রাখায় মানের সঙ্গে আপস। তাছাড়া দেওয়া তো হচ্ছে দেবতাকে। ওদের সুগার হওয়ার ভয় নেই। আর লোকে তো প্রসাদ হিসেবে অল্প করে খাবে। আচ্ছা, এমন নিম্নমানের মিষ্টি পেয়ে দেবতারা ক্ষেপে যান না! এই সন্দেশ খাওয়ার পরে, আমি নিশ্চিত পরের দিনের দধিকর্মা ঠাকুরের মুখে রুচবে না। মিষ্টি জাতীয় কিছু দেখলে গা-ও গুলোতে পারে। আমি দেবতা হলে যে এই রকম মিষ্টি দিয়ে পুজো দিত সেই ভক্তকে টানা তিনদিন ঘুমোতে দিতুম না। চোখ বুঝলেই স্বপ্নাদেশ, তোর বড় ছেলের নামে জোড়া পাঁঠা দে। না হলে দেশদ্রোহী তকমা লাগিয়ে দেব। কিংবা মন্দির নির্মাণ কল্পে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দিবি। অন্যথায় দিদিকে বলে কাটমানি কেসে ফাঁসিয়ে দেব ছোট ছেলেকে।
ও হ্যাঁ, মণ্ডাও এখন বেশির ভাগ জায়গায় পুজোর মিষ্টি। অথচ একসময় এর কী প্রতাপ ছিল সমাজে-সাহিত্যে। যোগীন্দ্রনাথ সরকার লিখলেন, ‘মণ্ডা মিঠাই তেতো সেথা ওষুধ লাগে ভাল’। সুকুমার রায় খুলেছিলেন ‘মণ্ডা ক্লাব’। যদিও ক্লাবের নামটা মানডে থেকে এসেছিল। তা হোক। মিষ্টিতেই তো শেষপর্যন্ত আস্থা রেখেছিলেন ‘আবোল তাবোল’এর কবি।
তবে বাংলার উৎসবের সেরা মিষ্টি হল নাড়ু। এর ঐতিহ্য আর চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দেওয়া মুশকিল। বাঙালির সবথেকে বড় উৎসব দুর্গাপুজোয় এর উপস্থিতি উজ্জ্বল। বিশেষ করে বিজয়া দশমীর দিনে দুর্গার বারকোশ ছাড়াও ঘরে ঘরে নাড়ু তৈরির ভিয়েন। কত রকমের যে নাড়ু হয়! শুধু নারকেলের নাড়ুরই কত রকমফের। গুড় দিয়ে করলে একরকম। চিনি দিয়ে করলে আরেক রকম। গুড় আর চিনির মিশেল পাকানো নাড়ু অন্যরকম। নারকেল কুরিয়ে করলে একরকম স্বাদ, বেটে করলে আরেক রকম খেতে। চিনির সঙ্গে ক্ষীর মিশিয়ে নারকেল নাড়ুর স্বাদ নিয়ে তো কথাই হবে না। সেসব অমৃত খণ্ড। হাতে পাকাতে হয় নাড়ু। আবার ছাঁচে ফেলে সন্দেশও তৈরি হয়। উপকরণ একই। তাই নাড়ু সন্দেশ বলতেই পারি। জাতি হিসেবে বাঙালি যদি কোনও মিষ্টান্নের জিআই দাবি করতে চায়, তা হল এই নাড়ু। কিন্তু মুশকিল একটাই। কোন নাড়ুকে মাপকাঠি ধরা হবে? কারণ ঘর বদলালেই যে নাড়ুর স্বাদ বদলে যায়। নাড়ু নির্ভর করে অনেক কিছুর উপরে। পাকের ওপরে, পাকানির মর্জির ওপরে। বাড়ির বউয়ের মন খারাপ। বিজয়া দশমীর দিনে খালি মনে পড়ছে পাড়ার দুর্গামণ্ডপের সিঁদুর খেলার কথা। অথচ বাপের বাড়ি যাওয়ার উপায় নেই। ঘর সামলাতে হবে। মনখারাপের নাড়ু হবে শক্ত। মসৃণ হবে না। হবে খোঁচা খোঁচা। জিআইওলারা পাগল হয়ে যাবে।
লক্ষ্মীপুজোয় নারকেল নাড়ুর সঙ্গে যোগ হয় আরেক নাড়ুর। তিলের নাড়ু। তিলের নাড়ু পাকাতে গেলে অত্যন্ত অভিজ্ঞ হাতের প্রয়োজন হয়। এবং অখণ্ড মনোযোগের। গুড় আর তিলের পাকে একটু ভুলচুক হলেই সর্বনাশ। অভিমান হয়ে যাবে তিল আর গুড়ের। তারা আর বলবে না, ‘আয় তবে বেঁধে বেঁধে থাকি’। বলবে হাঁড়ি আলাদা কর। আমরা ভেন্ন। মানে আঠা আঠা হবে না। তিল-গুড়ের মিশেল হয়ে যাবে মিহিদানার মতো ঝুরোঝুরো। তা নিয়ে নাড়ু পাকানো যাবে না। আবার পাকের সময়ে দুই তালুর চাপ কম বেশি থাকলে তিলের নাড়ু হবে শক্ত। সেই নাড়ু অনায়াসে গাজা ভূখণ্ডে সরবরাহ করে দু’পয়সা কামানো যেতে পারে। নিরাপত্তা বাহিনীকে তাক করে গুলতি ছোড়ার জন্য।
মুশকিল হল, নাড়ু বিষয়টা ধীরে ধীরে সংরক্ষণের তালিকায় চলে যেতে বসেছে। সুগৃহিণীরা হয় অস্তমিত, নয় হাতের ব্যথায় কাবু। নতুনেরা কেনাকাটাতেই বিশ্বাসী। কিন্তু কেনা নাড়ু স্বাদে যাচ্ছেতাই। বিশেষ করে তিলের নাড়ু। খেলে মনে হয় তিলের কটকটি বিস্কুট খাচ্ছি। এতটাই মুচমুচে করে ফেলে। কিন্তু তিলের নাড়ু হবে অল্প নরম। চাপ দিলে দাঁতে জড়িয়ে ধরবে কিছুটা। কিছুটা নেমে আসবে জিভে। তার পর ধীরে ধীরে গলা দিয়ে নামবে। মন ভরবে তিলে তিলে।
এ সব তো গেল পালা পার্বণের সঙ্গে জুতে যাওয়া মিষ্টি কাহিনি। এই বাংলায় এমন কিছু মিষ্টি আছে যেগুলো শুধু উৎসবের জন্যই তৈরি হয়েছিল। যেমন চাঁদশাহি খাজা, নিজুক মিঠাই। দু’টোই পশ্চিম মেদিনীপুরের। চাঁদশাহি ঘাটালের নাড়াজোলের মিষ্টি। নাড়াজোল রাজ পরিবারের দুর্গাপুজোর ভোগের জন্য তৈরি হয়েছিল কোনও এক সময়ে। এখনও এলাকার বিভিন্ন দোকানে মেলে চাঁদশাহি খাজা।
পশ্চিম মেদিনীপুরে ঐতিহাসিক জায়গা বগড়ি। একসময়ে পরগনা ছিল। এই এলাকার কৃষ্ণনগর আর মায়তা অঞ্চলে মেলে নিজুক মিঠাই। জায়গাটা গড়বেতায়। বগড়িতে আছে শ্রীকৃষ্ণরায়জীউয়ের মন্দির। তাঁর ভোগের জন্য তৈরি হয়েছিল নিজুক মিঠাই। প্রতিদিনের ভোগে দিতেই হবে এই মিষ্টি। দোলের সময় শ্রীকৃষ্ণরায়জীউ থাকেন কৃষ্ণনগরে। রাসের সময় মায়তায়। এই দুই উৎসবের সময়ে তো আরও বেশি করে তৈরি হয় এই মিঠাই। তবে এখন সারা বছরই পাওয়া যায়। প্রথমে ছানার সঙ্গে বেসন, আটা দিয়ে মেখে বোঁদের মতো করে ভাজা হয়। তার পর গুড়ের সঙ্গে পাক করে গোল্লা পাকানো হয়। দেওয়া এলাচ। তবে সাধারণ নিজুকে কর্পূর ব্যবহার করা হয়।
গড়বেতার প্যাড়ার একসময়ে দারুণ নাম ছিল। এখনও আছে। এই মিষ্টিও দুর্গাপুজো, ভাইফোঁটার সময়ে প্রচুর চলে। এই বিষয়েই একটা কথা বলার আছে। উৎসবের মিষ্টি বলে চিরস্থায়ী কিছু হয় না। ঐতিহ্যবাহী মিষ্টিগুলোই উৎসবের মিষ্টি। নাড়ু, কদমা, মণ্ডা। যেমন ধরুন, ভাইফোঁটার সময়ে ভাইয়ের পাতে অনেক রকম মিষ্টি সাজিয়ে দিতে হয়। সেজন্য দোকানদারেরা নতুন কিছু আইটেম করেন। কিন্তু সেগুলো হয় কোনও কিছুর অনুকরণ। নয়তো একাধিক মিষ্টির মিশেল। আবার নাড়া দেওয়া ঘটনার অনুকরণে কিছু মিষ্টি তৈরি হয় প্রতি বছর। এ বছর যেমন হয়েছিল নোবেল মিষ্টি। প্রাপক অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মানে। কিন্তু পরের বছর কেন ছ’মাস পরেই নোবেল মিষ্টির কোনও কদরই থাকবে না। বাঙালি হুজুগে মাতা জাতি। বারবার প্রমাণ দেয়। নতুন কিছু গড়লে তা নিয়ে ইতিহাস লেখা হত। উৎস, স্রষ্টা, প্রসিদ্ধি। হয় কি? তাই পরের বছর ভাইফোঁটায় অন্য কোনও মিষ্টি বাজারে আসে। টিকে যায় কারা? জনাইয়ের মনোহরা, রানাঘাটের পান্তুয়া, কৃষ্ণনগরের সরপুরিয়া। উৎসব, অনুষ্ঠানে এই মিষ্টিগুলোই পাতের মান বাড়ায়। এই মিষ্টিই উৎসবের সময় দেবদেবীকে নিবেদন করা হয়।
তবে মিষ্টির ইতিহাস মঙ্গলকাব্যগুলোর মতো দেবখণ্ড-নরখণ্ডে বিভক্ত। প্রথমে ঈশ্বরভোগ্য ছিল। তার পর জনসাধারণের হয়েছে। এমন মিষ্টি ভারতে প্রচুর। বাংলার চাঁদশাহি, নিজুক তো আছেই। শোনা যায় মালদার রসকদম্ব নাকি চৈতন্যদেবের সম্মানে তৈরি। চৈতন্যদেব গৌড় অর্থাৎ এখনকার মালদার কোনও এক কদম গাছের নীচে রূপ ও সনাতন গোস্বামীকে দীক্ষা দিয়েছিলেন। সেই ঘটনার স্মরণে রসকদম্ব তৈরি। যদিও এই তথ্যে দ্বিমত প্রচুর। তা থাকুক। তবে মিষ্টির ইতিহাসে মালদা জায়গা পেয়েছে রসকদম্বের জন্যই।
রসকদম্বের কথায় আরেকটি মিষ্টির কথা মনে পড়ল। এ মিষ্টি অবশ্য বহির্বঙ্গের। উত্তরাখণ্ডের আলমোড়ার। দেখতে একেবারে রসকদম্বের মতো। রসকদম্ব গোল। ইনি লম্বাটে। মিষ্টিটি তৈরি হয়েছিল নাকি সূর্যদেবতার ভোগের জন্য। পরে তো লোকগাথা, গল্প, কবিতায় স্বমহিমায় বিরাজমান। এখন বছরের সবসময়েই মেলে। জিআই তকমাও পেয়েছে।
মিষ্টির নাম বাল মিঠাই।
ঋণ স্বীকার: স্বজিভ, আপন মা, বাংলার খাবার-প্রণব রায়, আনন্দবাজার পত্রিকা
‘দ’ মহাশয়
‘দারুণ বই। পাতলা চটিমত কিন্তু কি সরস। বইটা আমার সংগ্রহে আছে। ন্যাড়াদার সেই বৈঠকিগপ্প প্রসঙ্গে বলেওছিলাম। রণজিত কি যেন। খুঁজে বের করতে হবে। গত মে মাসে শিফট করার পর আর কোন বই সময়মত খুঁজে পাই না’।— এটা আপনার মন্তব্য।
বইটি কি খুঁজে পেয়েছেন? পেলে একটু জানাবেন।
হ্যাঁ ন্যাড়াদা'কে দিয়েওছিলাম
‘দ’ মহাশয়া,
অনেক ধন্যবাদ। ‘কলকাতার রাস্তায় রাস্তায়’ সংগ্রহ করে নেব শীঘ্রই।
আবারও ধন্যবাদ জানাই।
চমৎকার লাগলো! লেখার স্টাইল আর কনটেন্ট দুইই রসে ভরপুর।