আদলাজ থেকে ফেরার পথে গান্ধীনগর - আহমেদাবাদ এয়ারপোর্টের রাস্তায়। রাস্তার ধারে ন্যায়ারা এনার্জি , আদানি সিএনজির পাম্প। গুজরাতের রাজধানী আহমেদাবাদ থেকে কুড়ি কিলোমিটার উত্তরে গান্ধীনগর। মণিভূষণ ভট্টাচার্যের 'গান্ধীনগরে এক রাত্রি' মনে পড়তে পারে। ১৯৭৪ সালে এই অঞ্চল নবনির্মাণ ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। কম করে একশো জনের মৃত্যু এবং তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেসের চিমনভাই প্যাটেলের ইস্তফা। স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতের একমাত্র আন্দোলন যা একটি নির্বাচিত সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করেছিল। বাংলার নকশালবাড়ি আর গুজরাটের এই ছাত্র আন্দোলনের অজুহাতেই জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। ... ...
এবারের দুর্গোৎসব অন্যরকম। ঘরে, বাইরে, সর্বত্র। তাই ভিড় থেকে নির্জনে এসেছি আমরা। কিন্তু কোথায় কী — বনপথে পাখি ও ঝিঁঝির কলতানে কান পাতা দায়। দিগন্তে ত্রিশূল, নন্দাদেবী, পঞ্চচুল্লীর বড় বড় মণ্ডপ দেখতে ভিড় করেছে পাইনের লাইন। আর আলোসজ্জা তো নক্ষত্রের — তেমন আর কখনও দেখিনি আগে… ... ...
শ্রীনগর লেহ জাতীয় সড়ক বরাবর কিছুদূর এগোতে পাশ থেকে সঙ্গ নেয় দ্রাস নদী। দুপাশের সুউচ্চ পর্বতশ্রেণী সম্পূর্ণ ন্যাড়া, বাদামী খয়েরি রয়েরি রঙ, কোথাও আলগা মাটি পাথর। কিন্তু নদীর দুপাশ একেবারে ঘন সবুজ গালিচা বিছানো। মূলত দেওদার গাছই বেশী চোখে পড়ল। কোথাও কোথাও ছোট ছোট খেত, অল্প কয়েকটা মাটির বাড়ি। রূপম আগেই বলেছিলেন ওয়্যার মেমোরিয়াল আর কার্গিল শহরের মাঝামাঝি কোথাও একটা দূরের ঘন সবুজ গাছের মধ্যে একটা মসজিদের ঝকঝকে সোনালি গম্বুজ দেখা যায়, সে নাকি অদ্ভুত সুন্দর লাগে দেখতে। জায়গামত সারথিকে বলে গাড়ি দাঁড় করিয়েও দিলেন। হুড়মুড়িয়ে নেমে দেখি সত্যিই বড় সুন্দর। চারিদিকে বাদামীর নানা শেডে উঠে যাওয়া সারি সারি পাহাড়, অনেক নীচে এক নদীকে ঘিরে ঘন গাঢ় সবুজ উপত্যকা, আর তার মাঝখানে ঝকঝকে সোনালী গম্বুজ আর তিনটে মিনার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক মসজিদ। বেলা প্রায় সাড়ে তিনটে, আকাশে এলোমেলো কিছু মেঘ ওদিকের কোণটা ছায়াছায়া করে রেখেছে আর একপাশ থেকে আসা প্রখর সূর্যকিরণ পড়ে সোনালী গম্বুজ আর মিনার যেন জ্বলছে। গোটা দৃশ্যটা মনে হচ্ছে ভার্মিয়ের আঁকা কোন ছবি, শুধু থ্রি ডাইমেনশানাল এই যা। এমন অপার্থিব আলোমাখা দৃশ্যকে ধরে রাখবে এমন ক্যামেরা আজও তৈরী হয় নি। তবু কিছু ছবি তো তুলতেই হয় যাতে পরে সেগুলোর দিকে তাকিয়ে এই মুহূর্তটায় ফিরে যাওয়া যায়। টিপিকাল ট্যুরিস্ট স্পটের বাইরে অপরূপ এই দৃশ্যটা দেখানোর জন্য রূপমকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু তিনখানা মিনার কেন? বরাবর তো মসজিদে চারটে মিনারই দেখেছি। আসিফভাইকে জিজ্ঞাসা করে জানা গেল শিয়া মসজিদে তিনখানাই মিনার থাকে। এই অঞ্চলে শিয়া মুসলমানের প্রাধান্য বেশী তাই পরেও আরো কিছু তিন মিনারওয়ালা মসজিদ দেখেছি। ... ...
তো এহেন লাদাখ আমার স্বপ্নের গন্তব্য হয়ে আছে সেই ১৯৯৮ সাল থেকেই। সেই সময় ম্যাকলিয়ডগঞ্জে বেড়াতে গিয়ে দালাই লামার বক্তব্যে লাদাখের কথা প্রথম শুনি। তারপরে তো নানা বইপত্র ইত্যাদি। কার্গিলযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে কার্গিল ওয়্যার মেমোরিয়াল ইত্যাদিও হয়ে দাঁড়ায় পর্যটনস্থল। শ্রীনগর থেকে সড়কপথে লেহ গিয়ে লাদাখের অন্যান্য অংশ ঘুরে পরে মানালি হয়ে ফিরলে প্রায় পুরো সার্কিট ঘোরা যায়। তাছাড়া অ্যাক্লিমেটাইজেশানও বেশ ভালভাবে হয়। আকাশপথে সরাসরি লেহ গিয়ে নামলে সেটা হয় না। সেক্ষেত্রে লেহতে অন্তত দুইদিন থেকে ফুসফুসকে কম অক্সিজেনে কাজ চালাতে শিখিয়ে পড়িয়ে নিতে হয় আর কি। লাদাখ এমনিতে বেশ ব্যায়বহুল জায়গা, গাড়িভাড়া যথেষ্ট বেশী। আর গণপরিবহন প্রায় নেইই বলতে গেলে। ফলে সোলো ট্রিপ খুবই খরচসাপেক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। খুব বড় গ্রুপের সাথে যাওয়াও খুব একটা সুবিধেজনক হবে না। বিশেষ করে আমার যে সব ব্যপারে আগ্রহ, সেরকম গ্রুপ ট্যুরে পাওয়া সহজ নয়। তো অরুণাচল ট্রিপে আলাপ হওয়া সমরেশ হালদার-দাদার সাথে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছিল কীভাবে টেম্পো ট্রাভেলার কাটিয়ে ইনোভা বা জাইলো্ জাতীয় ছোট গাড়িতে ভ্রমণটা করা যায়। সেই সূত্রেই রূপম মুখার্জিকে বলা (ইনিই অরূণাচল ট্রিপ অ্যারেঞ্জ করেছিলেন), এবং উনি একটা ট্যুর প্ল্যান দিলেনও। আমি তাতে হানলে যোগ করতে বলায় রাজীও হলেন। সমরেশদা বৌদির যাওয়ার উপযুক্ত সময় ধরে ঠিক হল আগস্টের শেষে রওনা হব, শ্রীনগর পৌঁছে সেখান থেকে যাত্রা শুরু। আমরা তো যাওয়া আসার টিকিট কেটে তৈরী। একটা ছোট সমস্যা যা দেখলাম হানলে ঢোকানোর পরে ১২ রাত ১৩ দিনের বিস্তারিত প্ল্যানটা আর পাওয়াই গেল না। প্রচুর ফলোয়াপের পরে খুবই স্কেচি একটা আউটলাইন পাওয়া গিয়েছিল যাত্রার দুই তিনদিন আগে, তো সেটা তখন তেমন সমস্যাজনক মনে হয় নি। পরে গিয়ে বুঝেছিলাম মুশকিলটা কোথায় হয়েছে। তো যাক সে কথা আপাতত, যথাস্থানে বলবো। পরিকল্পনামাফিক ২৮শে আগস্ট দুপুরে কলকাতা থেকে শ্রীনগরগামী বিমানে চেপে বসা গেল। বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ শ্রীনগর পৌঁছে দেখি ঝিরঝির করে বৃষ্টি হচ্ছে। পছন্দ করে ডানদিকের জানলায় সিট নিয়েছিলাম, কিন্তু হায় পুরো হিমালয়ান রেঞ্জই পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘের আড়ালে লুকিয়ে রইলো। হোটেল যাওয়ার পথে সারথি জানালেন গতকাল অর্থাৎ ২৭ অবধি তীব্র গরম ছিল, আজই সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আমরা মনোরম আবহাওয়া পাবো। আমাদের গন্তব্য হোটেল বেলমন্ট। এমনিতে ভালই, খাওয়াদাওয়াও মন্দ নয়। ... ...
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ৩০… দেখা হোলো দুটি আকর্ষণীয় সেতু। আলাপ হোলো দুটি আকর্ষণীয় মানুষের সাথে। একাকী ভ্রমণ তো করেই থাকি তবে ঐ ভ্রমণের সূত্রে পরবর্তীতে হয়েছে কয়েকটি দলগত ভ্রমণ। তার আনন্দ আবার অন্যরকম ... ...
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ২৯…।করোনাকালে দুরে না হোক, কাছেপিঠে কোথাও, ঘর হতে শুধু তিন পা ফেলিয়া মোডে মৃদুমন্দ ভ্রমণ তো হতেই পারে। ২০২১ এর মার্চে কর্ণাটকের মনিপাল থেকে কলকাতায় আসার আগে তেমন একটা ব্যবস্থা করে এসেছিলাম। এটা ঠিক একাকী ভ্রমণ বৃত্তান্ত নয়, ফোনালাপ ও হোয়াচ্যাটের মাধ্যমে অদেখা কিন্তু বিশেষ পরিচিত সুজনবাবুর সুবাদে সম্পূর্ণ অচেনা কিছু মানুষের সাথে বাস্তবে আলাপ, আশপাশে টুকুন ঘোরাফেরা, এই সবের আলুনী পাঁচালী। তবু, কলকাতায় এসে যেহেতু ঘর থেকে বেরিয়েছিলাম একাই, আলাপ যা তা হয়েছিল পথে, তাই এটাও রাখলাম এই সিরিজে ... ...
এই কেল্লার ভেতর একখানা নতুন গির্জা , স্কুল , খেলার মাঠ এইসব আছে। শনিবার বলে সবই বন্ধ। সেখান থেকে আবার দেবকা সৈকতে এসে টানা পাঁচিলের ওপর বসে আরব সাগরের হাওয়া খাওয়া গেল। সাবুর পাঁপড় , ঝালমুড়ি , টকঝাল চানাচুর এইসব ফেরিওয়ালারা ঘোরাঘুরি করছে। এই সৈকত রোজ পরিষ্কার করা হয় বলে মনে হল , প্লাস্টিক বা অন্যন্য নোংরা নেই। একজায়গায় ধাপ ধাপ করা আছে সৈকতে নামার জন্য। সেখানে দুখানা চৌকো বারান্দাওলা ঘরের মধ্যে কিছু জলখাবারের কাউন্টার, এছাড়া কোনো স্থায়ী খাবারের দোকান নেই। একটু আগে যে নির্মীয়মাণ রাস্তা দিয়ে দেবকা সৈকতে এসেছি, সেখানেই ফেরত যেতে হল তন্দুরি পমফ্রেট ইত্যাদি খাবার জন্য। এই রাস্তার দুধারে যাবতীয় হোটেল , খাবার জায়গা , ট্যাটু পার্লার ইত্যাদি। রাস্তাতেও ট্যাটু করানোর জন্য কেউ কেউ বাক্স নিয়ে বসে আছে। ... ...
চার্চ গেট থেকে ছেড়ে মেরিন লাইন্স, চারনি রোড, গ্র্যান্ট রোড, মুম্বাই সেন্ট্রাল। থামতে থামতে যাচ্ছে। বান্দ্রা, খার রোড পেরিয়ে সান্তা ক্রুজে নেমে উবের অটো। জুহু তারা রাস্তা ধরে যাবার সময়েই বোঝা গেল এই এক দামি এলাকা। লোকজনের পোশাক, গাড়ি, দুপাশের খাবার জায়গা, হোটেল দেখেই টের পাওয়া যাচ্ছে। অথচ জুহুর সৈকত এত নোংরা যে সন্ধ্যেবেলা কিছুক্ষন পা ভিজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে পায়ে প্লাস্টিক এসে ঠোকরাচ্ছে। কালো লম্বা প্লাস্টিক জড়িয়ে যাচ্ছে পায়ে। সেসব দেখে আর আরো উত্তরে ভারসোভা সৈকত যাবার প্রবৃত্তি হল না। কিছুক্ষণ বাদে বাদেই মাথার ওপর দিয়ে উড়োজাহাজ উড়ে আরব সাগরের দিগন্তে মিলিয়ে যাচ্ছে। ... ...
গাড়িগুলো ইউনিয়নের। এরা চালান। ইউনিয়নকে কিছু দিতে হয়। কুমায়ুনের স্থানীয় মানুষদের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাতায়াতের জন্য বড় বলভরসা এই সব শেয়ার ট্যাক্সি। সমস্ত শেয়ার গাড়িগুলোতে ড্যাশবোর্ডের ওপর নকল ঘাসের সবুজ চাদর। চালকরা সমস্ত খুচরো নোট ড্যাশবোর্ডের ওপর অথবা চাদরের নিচে ছড়িয়ে রেখেছে। বেগুনি কমলা সবুজ। খুচরো ফেরত দিতে সুবিধা হয়। একহাতে বাঁকে গাড়ি ঘোরাতে ঘোরাতে অন্যহাতে রিমোট দিয়ে তারা গাড়ির স্পিকারের গান বদলায় , আওয়াজ কমায় বাড়ায়। এছাড়াও পাহাড়ি রাস্তায় বাঁক নেবার সময় টুং টুং করে বেজে ওঠে পিছনে দেখার আয়নাতে লাগানো পিতলের ঘণ্টা। ... ...
ওই হ্রদে যাবার জন্যই মান্ডিতে আগমন। হ্রদের তীরে ব্যাসদেবের পিতা পরাশর ঋষি ধ্যান করতেন বলে ~ছশো বছর আগে এক মন্দির বানিয়ে দেন মান্ডির রাজা। ঋষির নামেই সমস্ত উপত্যকা , হ্রদ , মন্দিরের নাম হয়ে যায়। ... ...
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ২৮ … দুবার একই ভুল করে একটি জনশ্রুতির মর্মার্থ উপলব্ধি করেছি কাঁপতে কাঁপতে - ছাগল দিয়ে লাঙ্গল দেওয়া গেলে চাষা বলদ কিনতো না। সেবার উত্তরাখণ্ড ভ্রমণে পঞ্চকেদারের দুটি কেদারে গেছিলাম। একাকী যোশিমঠ থেকে কল্পেশ্বর। ছ জনের দলে তুঙ্গনাথ। দলটি হয়েছিল গুপ্তকাশীতে আলাপ পাঁচটি উত্তরপ্রদেশের তরুণের সাথে। তুঙ্গনাথ, দেওরিয়া তালে দুটি রাত কাটিয়ে উখিমঠ থেকে ওরা হরিদ্বার চলে যেতে আবার আমি একা ... ...
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ২৭ … পরিচিত সঙ্গীর সাথে হপ্তা দুয়েক অবধি ভ্রমণ ঠিক আছে। তার বেশী হলে নানা কারণে ছানা কাটতে শুরু করে। কিন্তু দু মাসের একাকী ভ্রমণেও কখনো সঙ্গীহীনতার চাপ অনুভব করিনি। সেলফ ড্রাইভ করে বেড়াতে গেলে বাস্তবিক কারণে সাথে একজন থাকলে সুবিধা হয়। কারণ পথে গাড়ি খারাপ হতেই পারে। জনবাহনে গেলে সে প্রয়োজন নেই। একাকী ভ্রমণে সঙ্গীর অভাব বোধ না করলেও চলার পথে স্থানীয় মানুষের সাথে গল্পগুজব করতে ভালোই লাগে। যাদের সাথে আর কখনো দেখা হবেনা তাদের সাথে ক্ষণিকের আলাপ স্মৃতিতে রয়ে যায় বহুদিন ... ...
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ২৬ … এই সিরিজের ৪নং পর্বে জনৈক নীল ২১.১০.২৩ লিখেছিলেন - “অনসূয়া দেবী যাত্রার কথা লিখবেন না?” বলেছিলাম - “লিখবো। সেও বেশ আনন্দময় অভিজ্ঞতা”। আরো নানা বিষয়ে লিখতে গিয়ে সময় হয়নি। এতোদিনে নীলের অনুরোধ রাখতে পারলাম। তবে আমার ছড়িয়ে ফেলা স্বভাব অনুযায়ী এই যাত্রা পথেও আসবে কিছু পার্শ্বপ্রসঙ্গ ... ...
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ২৫ - করণ বলে, বাবুজী, আপনি তো আমায় সিনেমায় এ্যাক্টিং করার মতো করতে বলছেন। আমি কী পারবো? বলি, চেষ্টা করে দ্যাখোই না। তবে চাপ নিয়ো না, এসব আমার নিছক খেয়াল। ওদের নিস্তরঙ্গ জীবনে বেড়াতে আসা এক প্রবীণ বাঙ্গালী আঙ্কলের খেয়াল দেখে করণও মজা পায়। স্পোর্টিংলি বলে, চলুন তাহলে দেখি, আপনি যা বলছেন, পারি কিনা ... ...
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ২৪ - অনেকের ধারণা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড মানে ১৪ বা ২০ বছর। তা কিন্তু নয়, সরকার চাইলে কাউকে আমৃত্যু কারাগারে বন্দী রাখতে পারে। তবে নতুন, হার্ডকোর অপরাধীদের জন্য কারাগারে স্থান সংকুলানের জন্য জেলারের সুপারিশে সাত দশ বছর জেল খাটা কিছু শান্ত, ভদ্র, নিরীহ দণ্ডিতদের মুক্ত বন্দীশালায় এনে রাখা হয়। তাতে বন্দী পিছু সরকারের খরচও হয় অনেক কম ... ...
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ২৩ - এই লেখায় চরিত্রগুলির নাম উল্লেখ না করতে আমি রঘুবীর মীনাজীর কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই জায়গাটিরও আসল নামের বদলে করলুম - সূরজনগর - After all what's in a name? ... ...
এরপর আমরা চললাম আরেকটি গন্তব্যে, মাঝসমুদ্রে ব্যানানা বোটে চড়তে। এই বোট বা নৌকোটি রাবারের তৈরী আর হাওয়া ভরে ফোলানো। দেখতে ঠিক পাকা কলার মতো-ই আর রং-ও হলুদ। উপরে ছয় জন করে বসতে পারে, একটি করে আঙটা লাগানো আছে ধরে থাকার জন্যে। এর সামনে একটি মোটরচালিত বোটে এই ব্যানানা বোট বেঁধে দেওয়া হয় আর দুরন্ত গতিতে মোটরবোট চলতে শুরু করলে এই ব্যানানা বোট-ও কোনোমতে টাল সামলে পাল্লা দিয়ে জল কেটে দৌড়োয়। জলের ফোয়ারা, দুরন্ত গতির সাথে শরীরের ভারসাম্য রাখা আর অসীম সমুদ্রের বুকে ছুটে চলা, একেবারে রোমহর্ষক ব্যাপার বটে। সবাই মিলে খুব উপভোগ করলাম এই রাইড। ... ...
লাক্সর মন্দির থেকে কার্নাকের মন্দির পর্যন্ত ছিল একটি সুপ্রাচীন রাস্তা, যার নাম ‘Alley of Sphinxes’ বা ‘Avenue of Sphinxes’। এই রাস্তাটি ছিল প্রায় দু-কিলোমিটার দীর্ঘ। আমরা বাস থেকেই দেখলাম সেই রাস্তা আর তার দুপাশে স্ফিংক্স-এর সারি, যদিও অধিকাংশ-ই ভাঙা। বাসের একদিকে রয়েছে লাক্সর মন্দির, অন্যদিকে কার্নাক। আর আমাদের বাস এই অ্যাভিনিউ-এর উপর দিয়ে একটি সেতু পার হয়ে এগিয়ে চলল। এই স্ফিঙ্কস-গুলির কিছু তৈরী হয়েছিল ফারাও তুতানখামুনের আমলে, কিছু তৃতীয় আমেনহোটেপের আমলে আর বাকিটুকু ফারাও প্রথম নেকতানেবো-র সময়ে। প্রায় মিনিট পনেরো পরে আমরা এসে দাঁড়ালাম কার্নাক মন্দিরের পার্কিং-এ। ... ...
“কবর দাও বা চিতায় পোড়াও, মরলে সবাই মাটি” না, প্রাচীন মিশরের মানুষ অবশ্যই এভাবে ভাবতেন না, বরং জীবনানন্দের কথা ধার করে বলা যায় “মানুষের মৃত্যু হ’লে তবুও মানব থেকে যায়”; আর মৃত্যুর পরের মানবটির জন্যে গড়ে ওঠে একের পর এক স্থাপত্য, ভাস্কর্য, শিল্পকলা! মরলে মানুষ কোথায় যায়, মৃতেরা এ-পৃথিবীতে না ফিরলেও প্রাচীন মিশরে আনুবিস আর ওসাইরিসের পরীক্ষায় পাশ করলে আর এক সুখের দুনিয়ায় (‘দুয়াত’) পৌঁছে যাওয়া যেত। যেখানে যমদূত-দের চাবুক খেতে না হলেও দেবতাদের তুষ্ট করার জন্যে চাষবাস ইত্যাদি করতে হতো আর মৃত্যুর পরেও জীবিতাবস্থার সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা যেত। আত্মা নাকি অবিনশ্বর, তায় যদি পাওয়া যায় তিন তিনখানা আত্মা, তাহলে আর দেখে কে! প্রাচীন মিশরের মানুষ বিশ্বাস করতেন জীবিতাবস্থায় মানুষের একটি আত্মা থাকে, তা হল ‘কা’, এই কা শরীরের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর মৃত্যুর পর আরও দুই আত্মা এসে হাজির হয়, একজন হল ‘আখ’, আরেকজন ‘বা’। ‘বা’ পাখির রূপ ধরে সমাধি থেকে বেরিয়ে দিনের বেলায় বাইরের পৃথিবীতে ঘুরতে পারে (এরপর মিশরের আকাশে পাখি দেখলে কি মনে পড়বে ভাবুন একবার); আর আখ হল সেই আত্মা যাকে পরীক্ষায় বসতে হয় ওসাইরিস, আনুবিস, মাত প্রমুখ দেবদেবীর সামনে। এই যে পিরামিডে বা পরবর্তীতে ফারাও বা রাণীদের সমাধিতে মমির সঙ্গে কেটে রাখা প্রত্যঙ্গ, ধনদৌলত, ব্যবহৃত জিনিসপত্র এসব দেওয়া হত, তা ঐ কা-এর সুবিধার্থে। মমিফিকেশনের কথা তো আগেই দ্বিতীয় পর্বে বলেছি, এবার বুক অব দ্য ডেড-এর কথা, কারণ আজ আমরা যাব ভ্যালি অব দ্য কিংস-এ। ... ...
এখন তো বছরের সেই সময়টা শুরু হয়ে গেছে জাপানে যখন লক্ষ লক্ষ বিদেশী পর্যটক সেই দেশে পাড়ি জমায়। জাপান বছরের মার্চ-এপ্রিল-মে এই তিন মাসের মধ্যে খুব সময়ের জন্য সেজে ওঠে চেরী ফুলের সম্ভারে, যাকে ওরা বলে ‘সাকুরা’। সেই সাকুরা দেখতেই পর্যটকদের আগমন। আজ তো নতুন বছরের প্রথম দিন, ভাবলাম সেই চেরী ফুলের গল্প ভাগ করে নেওয়া যাক। ... ...