এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • সিনেমা

    upal mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ০৭ অক্টোবর ২০২৪ | ৩৮৪ বার পঠিত
  • বইমেলায় বসে থাকতে থাকতে লোক দেখছিলাম। কিছু লোক প্যান্ট পরে  যাচ্ছিল আর কিছু লোক নানান কাপড় দিয়ে তৈরি ঢিলে ঢালা পাজামার মতো পরে যাচ্ছিল।  তাদের  নানা রকম দেখতে ও সূর্যের রোদ পড়ে নানান রকম করে ঠিকরে ঠিকরে বেরচ্ছে দেখলাম তাদের গা থেকে। তারা রোজ হাঁটে বলে তাদের পা সরু সরু নয় আর সরু সরু হলেও তারা বেশ জোরে হাঁটতে পারে। আমি বেশির ভাগ সময় তাদের মুখ ও বুকের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। সেখানে নানা রকম রঙের গন্ধ পেতে দেখেছি। এদের দেখতে দেখতে আমার খুব খিদে পেয়ে গেল তাই সুশান্তকে বলে উঠলাম, ‘খুব খিদে পাচ্ছে'। সুশান্ত  হাসছিল। তার ঠোঁটের কোণে ঘা হয়ে গেছে তাতে মাল্টি-ভিটামিন খেতে হবে তাহলে ঘা সেরে যাবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী করে বুঝলি সারবে? সুশান্ত আমার কথা এবারও শুনতে পেয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। তাই আবার আমি বলে উঠেছি, ‘খুব খিদে পাচ্ছে'। এবার সুশান্ত বইমেলায় বসে বসে দেখতে দেখতে তাকাতে তাকাতে আমায় উত্তর দিল, ‘কার খিদে পেয়েছে'?
    • আমার।
    • তাই।
    • হ্যাঁ।
    •  কী খাবে,
    • ভেজিটেবল প্যাটিস।
    সুশান্ত  শুনে হাসল। আমি বললাম, ‘হাসছিস কেন?’ সুশান্ত হাসি না থামিয়ে বলল, ‘দাঁড়াও’।
    • দাঁড়াবো ?
    • বস।
    • কোনটা করব?
    • যে কোনটা।
    • আমাকে কাউন্টারে বসতে হবে, গাবুদার জ্বর।
    • বস।
    সুশান্ত চলে গেল, আর কেউ ছিল না। কপিল অনেক দূর চলে গিয়েছিল, সে অনেক পরে ফিরবে কি? এখনই চলে আসতে পারে। এখনই যে ধুলো আসছে এ বুঝলাম আর রোদ একটু দূরে পড়ে আছে। সেখানে আমরা লস্যি খেয়ে ফেলেছি। তার প্যাকেট পড়ে আছে। আর একটু পর লস্যির প্ল্যাস্টিকের প্যাকেট থাকছে না তখনও রোদ পড়ে থাকবে তখন আবার লস্যির প্যাকেট খেতে ইচ্ছে করবে কারণ তাতে লস্যি থাকে। তাতে আরো তেষ্টা পেলে জল আছে। সেটা প্ল্যাস্টিকের প্যাকেটে মোড়া। সেটা কী রকম এঁকে বেঁকে রয়েছে। চুপ করে কাৎ হয়ে শুয়ে আছে আর জলের মতোই নানান আকৃতি আর রঙ ধরছে তাতে। সে আশপাশ থেকে গন্ধও নিয়ে নিচ্ছে। সুশান্ত চলে আসার পর প্যাটিস খেলাম। বামনাথ  ক্লিনিক থেকে এসেছিল। সে কাল বাড়ি থেকে আসবে। বামনাথ দু জায়গা থেকেই বইমেলা আসতে থাকছে। সে একটা ছবি এঁকে দিল বাইরের দেওয়ালে, কালো রঙের সে ছবিটা, আবার পর দিন লাল রঙ দিয়ে অন্য কিছু করেছে। ফলে ছবিটা আর দুপুরের মতো লাগছে না সেটা সন্ধেবেলা আর একটা ছবি হয়েছে কি? কপিল আসতে  বলেছি, ‘বস।‘ কপিল বসার পর  বামনাথের সঙ্গে, সুশান্তের সঙ্গে সিগারেট খেতে গেলাম। তখন অনেক লোক হয়ে গেছে। আমি বললাম, ‘অনেক লোক হয়ে গেছে না?’ সুশান্ত বলল, ‘আগেও তো অনেক লোকই ছিল।’
    • তাই?
    • হ্যাঁ বইমেলায় অনেক লোক হয়।
    • আর সিনেমা হয় না।
    • সিনেমাও হয়। অনবরত সিনেমা হতে থাকে।
    • আর ছবিও হয়। হয় না কি?
     এই বলে আমি বামনাথের দিকে তাকালাম। সে বলল, ‘আজ চকোলেট দিয়ে, পর্ক বানিয়ে দিয়েছে বোন।' অনুজ এসে গিয়ে সবাইকে  সিগারেট খাইয়েছিল।তখন সুশান্ত বলেছে, 'আমি বিড়ি খাব' । তাতেও অনুজ একমত হয়েছে। আমি বললাম, ‘আমাদের উল্টো দিকেই বড় বড় সিনেমা ডিরেক্টরদের বই বিক্রি হচ্ছে।' অনুজ বলল, ‘তাই, আমি যাব'। বামনাথ বলল, ‘ওই আরকি। বই টই।’
    • তোমার ছবিটা দারুণ হয়েছে।
    • কোন ছবিটা?
    • ও, ওটা তো তুমি তিনদিন ধরেই এঁকেছো।
    • হ্যাঁ। প্রত্যেকটা আলাদা, আলাদা ছবি এঁকেছি।
    • তিনটে ছবি।
    • তিনটে দিন
    • তিনটে বেলা
    • তিনটে সিনেমা।
    • সিনেমা?
    •  হ্যাঁ।
    •  কপিল কাউন্টারে বসে নানান বই বিক্রি করছিল আমরা স্টলে এসে দেখলাম সবই প্রায় বিক্রি হয়ে গেছে আর সে বসে আছে।
    • বসে আছো।
    • অনেকক্ষণ।
    • বই?
    • অনেকক্ষণ।
    • কী?
    • বিক্রি?
    • কী?
    • কী?
    • হয়ে গেছে?
    • ধূস্!
    • মানে?
    • হয়নি।
    • হয়নি?
    • না, আজ একদম হল না।
    • তবে আমি কী ভুল দেখলাম?
    • না।
    • তা হলে?
    • বিক্রি হতে পারত। এই তো শনিবার হল না? হল কিনা?
    • হ্যাঁ, সে হল।
    • তবে?
    • আজ হবে কি?
    • আজ আমরা পর্ক খাব।
    • পর্ক।
     আজ বামনাথের বোন চকোলেট দিয়ে পর্ক বানিয়ে দিয়েছিল। সেই পর্ক থেকে চকোলেটের গন্ধ আসছিল। বাইরে ভিড় জমেছে কি? সেই ভিড় কি ক্রমশ এগিয়ে এগিয়ে এসে স্টলটাকে ঘিরে ফেলছে বইমেলায়। বাইরে খাবারের বই বিক্রি হচ্ছিল। সেই বই কিনতে লোক আসছিল। ভিড় আসছিল। ভিড় হয়ে গেলে আমি লোকেদের মুখ দেখতে ভুলে যাচ্ছি। পর্ক চকোলেট দিয়ে তৈরি হলেও, বেশ একটা ঝাল মতো, মিষ্টি মতো- স্বাদে দারুণ লাগছে আর পর্কের গা থেকে চর্বি বেরিয়েছে। কিছু চর্বি লেগে রয়েছে।  ভিড়ের গা থেকে চর্বি এসে আমাদের স্টলে ঢুকে পড়ছিল। সেই ভিড়ের মুখ থেকে ঘাম বেরিয়ে আমাদের স্টলের ভেতরটা ভিজিয়ে দিচ্ছে। বামনাথের ছবি গুলো স্টলের বাইরে বাইরে আঁকা। সে তিন দিন ধরে এঁকেছ। চারদিকে ভিড় আর মুখ নেই কারুর আর ভিজে ভিজে ঘামের মধ্যে সেই ছবিগুলোও ঘামতে লাগলো। ছবি ঘামলে আর একবার ছবি আঁকা হতে লেগেছে। আমি  বামনাথকে বলেছি, ‘তুমি তিন দিন ধরে ছবি এঁকেছো তো ?
                -      তিন বার ছবি এঁকেছি।
    • আলাদা আলাদা ছবি ?
    • সব আলাদা আলাদা হয়েছে ছবিগুলো। প্রথম দিন কালো দিয়ে তারপর দিন লাল দিয়ে।
    • জানি সব রঙের আলাদা আলাদা গন্ধ পাচ্ছিলাম।
    • স্প্রে দিয়ে তৃতীয় দিন হলুদ রঙের ছবি এঁকেছি।
    • তাকিয়ে দেখ আজ আবার আঁকা হচ্ছে।
    • কে আঁকছে?
    • তা জানিনা। তবে ভিড়ে ছবিগুলো ভিজেছে। ঘেমে ঘেমে উঠেছে।
    • তুমি পর্কটা নাও।
    •  তোমার ছবি কিন্তু অন্য ছবির মতো হয়ে যাচ্ছে আজ।
    •  কাল আবার আরেক রকম করে ছবি আঁকা হবে। পর্কটা নাও। কেমন হয়েছে স্বাদ?
    •  অপূর্ব। মিষ্টি মিষ্টি। অল্প ঝাল ঝাল আর অপূর্ব গন্ধ ছড়াচ্ছে।
    খানিকটা পর্ক ইটির জন্য নিয়েছিল। আজ ইটি আসেনি। কাল এসেছিল। ওর সঙ্গে আসার সময় ব্রাজিল টিমটা নিয়ে কথা হচ্ছিল। আমরা ইউটিউবে জিঙ্গার অপূর্ব খেলাটা একটু দেখেছি। তারপর যাব বইমেলা। সেখানে আসতে আসতে খুব গরম লেগে গেল। বইমেলায় এসে দেখলাম ইটি অয়নের সঙ্গে চলে গেল। আর কিছুক্ষণ পরেই একটা ব্যাঁজের বই চলে এল। সেটা আমি র‍্যাকের পেছনে রেখেছি। কিছুক্ষণ পরে সিনেমার বই চলে আসে। কপিল বলল, ‘সিনেমার বইটা ইটির জন্য রেখে দিও।’ আমি বলেছিলাম, ‘আর অন্য বই?’
    • না ও সিনেমার বইই কিনবে।
    • কেন?
    • ও আর ফিটলে সিনেমা করতে চায়।
    • কেন?
    • জানি না।
    • ওরা তো ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে।
    • ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েও ওরা সিনেমা করবে।
    • পারবে কি?
    • কী পারবে?
    • সিনেমা করতে?
    • চেষ্টা করবে।
    • পারবে কি?
    • কী পারবে?
    • চেষ্টা করতে?
    এত সব প্রশ্ন নিয়ে আমরা যখন ব্যস্ত তখন বই বিক্রি হতে শুরু করে। একটা দুটো করে বই বিক্রি হয়। সময় চলে গিয়ে আবার ঘুরে আসে। রোদ পড়ে আসে। যে ভিড়কে দেখতে বার বার ভুলে যাচ্ছিলাম তাই আবার করে দেখতে আরম্ভ করেছি। একই রকম লাগছে হাঁটা। একই রকম পোশাক পরেছে। একই রকমের মুখ ও বুক। তবে হাওয়া জোরে না দেওয়ায় পাতা উড়ছে না আর ধুলোরা স্তুপের মতো পড়ে আছে, তাদের চাপা দিয়ে রাখা যাচ্ছে। হাওয়া দিলে ওই চাপা উড়ে যেত। তখন ধুলোরা বেরিয়ে পড়ত। চুলেরা উড়ত। চুলেরা বাঁধা থাকত না আর মুখেরা বেরিয়ে পড়ত কারণ তাতে ক্রিম লাগানো যেত না, লিপস্টিক লাগানো যেত না। মসৃণ করে কাটা দাড়ি বা নানা ভাবে চাঁছা দাড়ি সব ধুলোয় ভরে যেত ভালো করে জোরে হাওয়া দিলে। সে সব না হওয়ায় লোকেরা নিজেদের মতো করে সাজাতে পারছে আর অবিরত কথা বলে যাচ্ছে কেন সাজাতে হবে এই উপলক্ষ্য করে। যেন সাজাটাই ঠিকঠাক। সাজাটাই একদম কাজ--- এই সব হয়ে দাঁড়িয়েছিল বইমেলার ভেতর অথচ ভিড়টা স্থির হয়ে চলমান হয়, এটা আমি দেখেছিলাম। নিজের  চোখের  কথা ভাবছিলাম সে একটা বিশেষ দিকে তাকিয়ে রয়েছে। একটা গোলাকৃতি অঞ্চল অথবা চৌকো মতো একটা জায়গা ঘিরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সবই দেখতে পাচ্ছিলাম। ভাবছিলাম হাওয়ার কথা যা তীব্র হলে এক জায়গায় চোখ রেখে, দৃষ্টি স্থির করে কোন জায়গার আবার ঠিক করে তাকিয়ে থাকার অবকাশ থাকতো না।
     অনুজ সুশান্তের মুখের ঘা পরীক্ষা করছিল। বইমেলার ধুলো উড়ছে কিনা দেখা যাচ্ছে না। এখন রাত, এখন অনুজ পরীক্ষা করবে তারপর সে ওষুধ দেয়, তাতে ঘা সেরে গেছে শোনা গেছে। সুশান্ত মদ বার করে দুপাশে তাকায়। চার পাশে তাকায়। সে সাদা মদ এনেছে তবু পুলিশ তাকে ধরেছিল কারণ সে পিঠে করে ঝুলিয়ে মদ আনে। তারপর তার ব্যাগ কেড়ে নিয়েছে তবে তার ভেতর মদের কথা পুলিশ টের পায়নি। । সেই ব্যাগ উদ্ধার করতে সে ও কপিল গেল। তারা ব্যাগ নিয়ে অন্য পাশ দিয়ে ঢুকেছে যেখানে ব্যাগ কেড়ে নেবে না।
    • কোন কোন গেটে ব্যাগ কেড়ে নিচ্ছে?
    • কোন কোন গেটে ব্যাগ দেখছে?
    • জানি না।
    • কোন কোন গেটে ব্যাগ দেখছে না?
    • খুব সোজা।
    • কী?
    • যে যে গেটে দেখছে সেগুলো ছাড়া।
    • এটা কি খুব সোজা?
    • সোজা নয়?
    • না। বোঝা যাচ্ছে না।
    • তবে কিছু করার নেই?
    • জানি না। যে যে গেট দিয়ে ঢুকলে ধরছে না--- সব ট্রাই মারতে হবে।
    • ট্রাই মারছে?
    • হ্যাঁ। কারণ ঢুকতে হবে।
     এই ভাবে মদ ঢুকেছে। বেরিয়েছে আবার কাল ঢুকবে বলে গেটে গেটে ঘুরেছে। বাংলার সঙ্গে লিমকা নিচ্ছে সুশান্ত। আমাকে বলল, ‘সে জোর নেই।’
    • কার ?
    • বাংলার।
      গত পাঁচ দিন , সাত দিন ধরে বাংলা খাচ্ছি। দুশো টাকা পড়ে। ফান্ড থেকে দিচ্ছে। কারু পকেট থেকে যাচ্ছে না। কারু পকেট থেকে না যাওয়ায় ভালো লাগছে। কিছুক্ষণ পর আবার খারাপ লাগতে আরম্ভ করেছে। চিন্ময়জিকে বললাম, ‘মাল দিই ?’
    • কী?
    • বিষ।
    • দাও।
     তারপর রামকৃষ্ণদা একটা খাবার এনেছিল। ফিস রোল। আমি বললাম, ‘তুমি যাবার সময় বললে ফিস কবিরাজি আনবে? রামকৃষ্ণদা বলল, ‘এনেছি তো?’ সুশান্ত বলল, ‘এটাকে ফিস কবিরাজি বলে না।’
    • তবে কী বলে?
    • এটা ফিস রোল।
    • তাতে কী এলো?
    • কিছুই না, গরম হলেই হলো আরকি।
    • এটা তো গরমই।
     খুবই গরম ফিস রোল লম্বা ও গোল করে পাকিয়ে তার মধ্যে বিস্কুটের, বেসনের পুর লাগিয়ে ভেজেছে তার ভেতরে লম্বা মতো একটা মাছের পুর পাকিয়ে ঢোকানো আছে অথবা মাছের টুকরো করে লম্বা মতো ঢুকিয়ে রেখেছে। সেটা খেতে গিয়ে সুশান্তকে দেখলাম হাঁ করছে। হাঁ করতে পারছে না কারণ ওর ঠোঁটের কোণে ঘা হয়ে আছে। যেই হাঁ করতে পারছে না কষ্ট করে করে জিভ বার করছে আর ঘা দেখা যাচ্ছে- মুখের ভেতর ও ঠোঁটের কোণে কোণে তার জিভটা লকলকিয়ে উঠছে আর লালা পড়ছে টপটপ টপটপ, ভিজিয়ে ফেলছে। পাশের স্টলে তান্ত্রিক নভেল খুব বিক্রি হচ্ছিল। পাতালকোট বলে একটা জায়গা নিয়ে থ্রিলার লিখেছে। বামনাথ বলেছিল, ‘একটা লতা ওপর থেকে নিচে চলে গেছে, সেটা বেয়ে বেয়ে নামতে হয়।’
    • কোথায়?
    • পাতালকোটে, অবশ্য সে অনেক কাল আগে।
    • তুমি পাতা ধরে বেয়ে বেয়ে নেমেছিলে
    • বোধ হয় না। সে অনেক আগে ওখানের আদিবাসীরা, গ্রামের লোক নামত। তাদের ওখানে খুব ভালো গাঁজা পাওয়া যেত।
    • তারা লতা বেয়ে বেয়ে গাঁজা আনত?
    • আর বদলে দরকারি জিনিস নিয়ে যেত।
    • তুমি কীভাবে গেলে?
    • সিঁড়ি ধরে ধরে নেমে গেলাম, আদিবাসীদের ঘরে থেকে যাই। খুব খাতির করল। আর পরদিন যখন ছবি আঁকলাম আরো খাতির করল। ওদের কিছু তৈরি করা জিনিস উপহার দিয়েছিল যাকে ক্র্যাফটস্ বলে। কপিল সেই থেকে পাতালকোটের ছবি দেখাচ্ছিল। এমন একটা জায়গা যেখানে অনেকটা নেমে তবে যেতে হয়। কয়েকটা সিঁড়ির ধাপ দেখলাম। তারপর বুঝলাম অনেকদূর নামতে হবে কারণ সিঁড়ির ধাপ ক্রমশ নামছে। কিন্তু লতাপাতার ছবি দেখতে পাইনি। কপিলকে বলেছি, ‘লতাপাতার ছবি কই?’
    • লতাপাতা?
    • যা ধরে ধরে ওরা ওঠানামা করত।
    • কারা?
    • আদিবাসীরা যারা পাতালকোটে থাকে?
    •  এখন আর ওসব নেই। এখন ওরা সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা করে। এখন ওরা ছবিও তুলতে পারে।
      এই বলে কপিল পাতালকোটের আদিবাসীদের তোলা কিছু ছবি আমাদের দেখাতে থাকল। এখন সবই পাওয়া যায় তাই পাশের স্টলে পাতালকোট নিয়ে যে থ্রিলার তাই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছিল বইমেলাতে। সামনের বইমেলাতেও সম্ভবত হবে। হতেই থাকবে যতদিন না এমন একটা অন্য জায়গা নিয়ে লেখা হবে যেখানে পৌঁছতে অনেকটা নিচে কোন অন্ধকার জায়গায় যেতে হয় আর পৌঁছলে আর জায়গাটা অন্ধকার থাকে না।
      কবে যেন দুপুরবেলা বেশ কিছু বিক্রি হয়েছে, আমি আর বামনাথ বসে আছি আর কপিল একটু দূরে স্টলের ঠিক বাইরে দাঁড়িয়েছিল। এমন সময় আশিস এসে আমাদের দুজনের মাঝে মেঝেতেই বসে পড়ে বলল, ‘একটা বিয়ার খাই।’ বামনাথ বলল, ‘বিয়ারে হবে?’
    • কী?
    • নেশা।
    • একটু।
    • একটুও না।
    • তবে?
      বামনাথ গত দশ বছর মদ ছোঁয় না। কোন নেশা করে না। শুধু মাঝে মধ্যে সিগারেট খায় আর বিড়ি খায় মাঝে মাঝেই। সে এখন একটা রিহ্যাব ক্লিনিকে সবাইকে নেশা ছাড়াচ্ছে। এই চাকরিটা ওকে দেওয়া হয়েছে। বামনাথ ইতস্তত করছিল। আমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘বলব’।
    • বল।
    • আমার কী বলা উচিত হবে?
    • কী?
    • কিসে নেশা বেশি হয়?
    • কেন? বেশি নেশা করলে তুমিই শিখিয়ে দেবে কী করে ছাড়াতে হয়।
      বামনাথ আশিসকে বলেছিল। শুনে আশিস বলল, ‘বড্ড নেশা হয়ে যাবে তার থেকে বিয়ারই ভালো।' এই বলে বিয়ারের ক্যানটা আমাদের গাদা হয়ে থাকা বাংলার বোতলের মধ্যে ছুঁয়ে দিল। সেটা আলগা হয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে ভাসতে লেগেছে তাই আমি, ওটাকে ভাল করে গুঁজে দিলাম। সুশান্তকে বললাম, তোকে বললাম না লেবেলটা ছিঁড়ে ফেলে দিতে। কয়েকদিন ধরে গাদা হয়ে পড়ে আছে সব বাংলার বোতল। । ' ও বলল, ‘ধরে ফেলবে যে?’
    • কে?
    • পুলিশ
    • কী করে। লেবেল ছেঁড়া তো?
    • ওটা ঠিক বুঝে নেবে।
    • কী বুঝবে?
    • ওটা বাংলার বোতল।
    • ওতো বুঝতে পারবে?
    • পারবে পারবে।
    • পুলিশ?
      কপিল বলল, ‘ঠিক আই ডেন্টিফাই করে ফেলবে।' চিন্ময়জি বলেছে, ‘তাতে বাল ছেঁড়া গেছে।’
    • কার?
    • কারুর না।
       ক্রমশ বুঝতে পারছি সামনের স্টল থেকে আরো আরো বেশি করে সিনেমার বই বিক্রি হচ্ছে। নানা রকম বইয়ের মধ্যে সিনেমার বইগুলোই কি সবচেয়ে বেশি বিক্রি? এটা নিয়ে আলোচনা হবে নাই বা কেন? একটু হাওয়াও তো দিতে পারে। শুধু হাওয়া দিলেই বা অসুবিধে কিসের। হাওয়া দিলে সে হাওয়া একটা গর্জনের মতো শোনাতেই পারে কারণ ঝড় হবে। অবশ্য ঝড় হবে, কী হবে না কেউ জানে না। ফিটলে আজ এসেছিল কারণ সে আর আসার সময় পাবে না। সে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে। যেমন সে দিন ইটি এলো। সেও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে। আজ অত্রিও এসেছিল সে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েনি সে বাংলা নিয়ে পড়েছে। আমি অত্রিকে জিজ্ঞেস করলাম ‘তুই বাংলা নিয়ে না পড়ে ইংরিজি নিয়ে পড়তে পারতিস। বাংলা আর তুই নতুন করে কী শিখবি। তুই তো নিজেই কবিতা লিখিস।’  অত্রি বলেছে, ‘আমি খুব ভালো করে বাংলা পড়ছি। শশাঙ্ককে জিজ্ঞেস করতে পার। ও বিশ্বভারতীতে ইতিহাস নিয়ে মাস্টার্স করছে।’ অত্রি , শশাঙ্ক আর ফিটলে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর অত্রি এসে বলল, ফিটলের সঙ্গে শশাঙ্কর খুব জমে গেছে। ওরা বইমেলায় ঘুরছে আর নানা গল্প করছে।’
      শশাঙ্ক এখনও rap গায় কি?অত্রি বলল, ‘অনেক দিন ওর গান শোনা হয় নি?’তবে আমি সেদিন ফেসবুকে ওকে একটা মেয়ের গান আপলোড করতে দেখেছি। মেয়েটা খোয়াইয়ের ওপর দিয়ে গান গাইতে গাইতে যাচ্ছিল আর পাশ থেকে তার ভিডিও করা হচ্ছিল। মেয়েটা সামনে তাকিয়ে ছিল আর এবড়ো খেবড়ো জমির ওপর দিয়ে হাঁটছিল। হোঁচট খাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও গান গেয়ে যাচ্ছিল। নিশ্চয়ই রাস্তাটাও ঠিকঠাক নজর করছিল, এটা কেউ কেউ পারে গান গাইতে গাইতে চারপাশ নজর করতে। ওই মেয়েটা নিয়ে আর কথা বলতে পারব না কারণ ওকে কী রকম দেখতে এটা মনে পড়ছে না। মেয়ে বলে নয় এটা আজকাল প্রায়ই হচ্ছে অচেনা কারুর মুখ বা বুক মনে রাখতে পারছি না। হাত ও পা-দের কথা তো কোন দূর। সে ছেলেই হোক বা মেয়ে। এই মনে না করার জন্য আমার একটা অসুখ হয়েছে সেটা কী বোঝার চেষ্টা করছিলাম, তখন আর একটু বাতাস দিল আর স্টলের মধ্যে গরমটা যেন গুলিয়ে উঠে সন্ধে হয়ে গেল। সেই সন্ধে থেকে ঠাণ্ডা ঝরে পড়ল টুপটাপ আর পাপুনদাকে দেখলাম। এক প্যাকেট লস্যি নিয়ে স্টলে ঢুকতে। বাপুনদা বললাম, ‘আপনার বই বিক্রি হয়েছে বেশ কয়েকটা।’ বাপুনদা বলল, ‘তাই’।’
    ‘হ্যাঁ, আমার অফিসের একটি ছেলে এসে বলল তার ক্লাস এইটে পড়া মেয়ের জন্য বই দিতে। আপনার বইটা দিলাম। ‘এখানে সবাই আখ্যান লেখে, আর বাপুনদা আখ্যানে বিজ্ঞান লিখেছে। বাপুনদা বলল, ‘আবার একটা ট্রেকিংয়ের প্ল্যান করছি। তোমাকে ছবি পাঠিয়ে দেব।’ বাপুনদার এ্যাংকিওলাইজিং স্পন্ডিলাইটিস  আছে। খুব যন্ত্রণা হয় আর তখনই বাপুনদা বেড়ানোর নানান পরিকল্পনা করে ।  সবগুলো হয় না কিছু হয় আর তাতে ব্যথা কমে যায়। চিন্ময়জি কপিলকে বলল, ‘মজফফরের-সাহিত্যে -আখ্যান  বইটা দেখেছিলে’।  কপিল বলল, ‘বাংলাদেশের স্টলে বলল ওটা এখনও আসেনি।’
    • সেকি।
    • হ্যাঁ আসেনি।
    • কবে থেকে বলছি।
    • আমাকে বলল মাঝপথে আটকে।
    • মানে?
    • এখনও এয়ারপোর্ট থেকে ছাড়েনি।
    • সব ছেড়ে দিল আর ওই বইটাই আটকে গেল।
    • কী জানি, তাই তো বলছে।
     আমি বললাম, ‘ও রকম কিন্তু হয় এয়ারপোর্টে’।
    • কী রকম?
    • কোন কোন বই বা ডায়েরি ওরা আটকে রাখে।
    • বই আর ডায়েরি কী এক হল। যত উল্টোপাল্টা।
    • নানা, ওটা কিন্তু ডায়েরিকেও কম গুরুত্ব দেয়নি।
    • মানে।
    • একবার জঙ্গলে বেড়াতে যাচ্ছিলাম। ভাবলাম একটা ডায়েরি নিয়ে যাই। এয়ারপোর্টে আটকে দিল। সব ছেড়ে দিল তারপর একজন অফিসার আলাদা করে ডায়েরিটা উল্টেপাল্টে দেখল। অনেকক্ষণ। তারপর ছাড়ল।
    •  কিছু জিজ্ঞেস করেনি?
    •  করেছিল। কী জিজ্ঞেস করেছিল ভুলে গেছি। তারপর থেকে আর ডায়েরি নিয়ে যাই না।
    • ডায়েরি লিখেছিলে?
    • পাগল, লিখলে যদি আবার আটকে দেয় তাই মোবাইলে লিখেছি।
    • মোবাইলে?
    • হ্যাঁ, মোবাইলে।
    কপিল বলল, ‘বইটা গাবুদাও খুঁজছে।’ফিটলে আর শশাঙ্ক ফিরে এসেছে। ফিটলে বলল, ‘অনেক সিনেমার বই দেখলাম।' কপিল বলল, ‘ভুলেও কিনিস না।’
    • তাই।
    • একগাদা  দাম নেবে বইমেলায়।
    • মাত্র টেন পারসেন্ট কমিশন।
    • কলেজ স্ট্রিটে গেলেই টোয়েন্টি পার্সেন্ট  পাওয়া যায়।
    • বইমেলায় বই কেনার কোন মানে হয় না।
    • কিছু কিছু বই আছে যা কলেজ স্ট্রিটে পাওয়া যায় না সেগুলো কেনা যেতে পারে।
    • সেগুলো অনলাইনে কিনবো। বেশি ডিসকাউন্ট পাবো।
    • তবে ম্যাগাজিন সব অনলাইনে নেই।
    • লিটল ম্যাগাজিন।
    • অবশ্যই লিটল ম্যাগাজিনের কথাই বলছি।
    • অবশ্যই লিটল ম্যাগাজিনের কথাই বলবো।
    • সে আর কতটুকু।
    • এইটুকু।
    • তাও তো তিন টুকরো করে ছড়িয়ে ছড়িয়ে ছড়িয়ে...
    • কী ছড়িয়ে?
    • লিটল ম্যাগাজিনের জায়গাটাকে ভাগ ভাগ ভাগ...
    • বইমেলায় বই বিক্রি হয় কেন?
    • বই বিক্রি হয়?
    • অবশ্যই হয়।
    • আমার পছন্দ নয়।
    • তাতে?
    • তাতে কিছু এসে যায় না
    • ‘হপ্তাক কাচরা' বলে  যে লিটল ম্যাগ আছে তারা মাটিতে বসে।
    • তাদের তুলে দিয়েছিল।
    • এখন আবার বসেছে।
    • কী করে?
    • জোর করে।
    • সারা সপ্তাহের ময়লা জমে জমে জমে কাচরা হয়। সেই ময়লা গাড়িতে তুলে দিলে হয়... দারুণ নাম। ফিটলে বলল, ‘ওদের ওখানে গিয়েছিলাম।’
    • গিয়েছিলি?
    • হ্যাঁ।
    • শশাঙ্কদা খুব ভালো rap করে।
                চিন্ময়জি বলে, ‘কী করে।’
    • rap।
    • তা করুক না কে করতে বারণ করেছে। কপিল শশাঙ্ককে বলল, ‘এই তো কেউ বারণ করেনি।’আমি বললাম, ‘তোরা একটু স্টলের বাইরে গিয়ে কর।’সৌমদা বলল, ‘ভেতরে করলেই বা কী হবে?’
    • বিক্রি মার খাবে। লোকে বই দেখতে পারবে না ভিড় হয়ে যাবে।
    • ঘন্টা হবে।
      শশাঙ্ক বলল, ‘নানা আমি বাইরেই করছি।’ আমি বললাম, ‘অত্রি কোথায়?’ অত্রিকে খুঁজে পেলাম না। তবে শশাঙ্কর rap অত্রিই পাঠিয়েছে। বলেছে বানান টানান দেখে নিতে। ওকে কবিতা পাঠাতে বলেছি। এখনও পাঠায় নি।
    শশাঙ্কর rap
                মসনদি তলোয়ার
                 সান দেয় জানোয়ার –
               স্বর্গে সুনামি আর খোপেতে আসামী
             আর শোকেসে খাজানা - নেভা নেভা কারখানা
           তবু ক্রাইসিসে ছুঁলে মরা হাতি লাখ টাকা...

                লিবারাল মাছি গুয়ে
                 আনাচার দুয়ে দুয়ে
                যত মাজা ঘষা বুলি
                আমি চেন টেনে খুলি
             এন আর সি তে অঞ্জলি
            কাউন্টারে নামাবলি গায়
         শান্তির জলে সবে পেতে ধরো মাথা...

                তোমার  ঢিল মৌচাকে আমি মৌমাছি।
                তোমার ঘর লিঙ্গবর্ধক আমার ঘরে কাঁচি
                অমার মগজ জ্বলে নেভে সমাজের সার্কিট এ
                বিস্ফোরণ এর শব্দ এবার শুনবে বিটে বিটে।
                অভিযান সোজা কেন্দ্রে রাজনীতি খুঁড়ে, ক্ষুধার্ত
                এই ভাষা খাবে ফুড চেন ধরে তোমাকেও খাবে
                একদিন সাম্যর জোরে, শব্দের ঘোরে, ঘাম বের করে,
                হুইস্কির ঘোরে...
                হৃদপিণ্ডটা করে শব্দ,
                ধান্দাবাজেরা হবে জব্দ...
                সময়ের যম... করবে হজম, প্রণহোতস্ম্যি
                দিবাকরম, জনতার শ্রম...

                এই ব্রহ্মাণ্ডতে বাজে বাদ্য।
                আদিম যখের হবে শ্রাদ্ধ...
                খানা তল্লাস... নামে সন্ত্রাস... মিলিটারি গ্রাস...
                হবে খাল্লাস... ট্রেনে দাও ফ্ল্যাশ...

                এটা ম্যাটার নয় মেটাফর নয়
                এটা ওয়ার এন পিস যেন টলস্টয়
                নরকের ব্রিজ থেকে নেমে কনভয়
                হাতে নিয়ে  rap রোপ এলো কাউবয়...
    Please  Please

     শশাঙ্কর rap আরো চলতে থাকবে। ভিড় বাড়ছে। কয়েকটা মেয়ে এসে শশাঙ্ককে খোঁচা মারছে তাদের আঙুলগুলো দেখতে পেলুম না। নিশ্চয়ই খুব সরু সরু নখ ছিল আর তাতে নেল পালিশ চাগিয়ে উঠেছিল। সরু সরু নখ হলে খোঁচা মারতে ইচ্ছে হয়। অত্রিকে জিজ্ঞেস করছি ‘এই ভিড় হল আবার ফুটে গেল। আমাদের স্টলে এলো না তো?’  চিন্ময়জি বলল, ‘আদিম যখের ব্যাপারটা খুব ইন্টারেস্টিং আর ফ্ল্যাশ টানার ব্যাপারটা।’ সৌম্যদা বলেছে, ‘এই ভাবে কিছু হবে না।’ অনুজ বলেছে, ‘গান হবে।’ সুশান্ত অনেকক্ষণ বিড়ি ধরায়নি বলে উসখুশ করছিল দেখে বামনাথ বলল, ‘চল বাইরে গিয়ে সিগারেট খেয়ে আসি। সৌম্যদাও যাবে।‘ 
      কপিলকে রেখে আমরা বাইরে বেরতে দেখি গেটের ভিড়টা স্টলের একেবারে সামনে চলে এসেছে। ভিড় পেরনোর স্টাট্রেজি ঠিক করছিলাম। কোন মুখ দেখা যাচ্ছিল না। কোন স্টল দেখা যাচ্ছিল না। কোন বই বা তার বিজ্ঞাপন দেখা  যাচ্ছিল না। রাস্তা বেশ বাঁধানো তাতেও ধুলো উড়ছে পায়ে পায়ে।  নানা রঙ ঝলমল করছে। বাতাস উঠছে কিন্তু কেউ টেরও পাচ্ছে না। টের পেলেও বাতাস উঠছে না। চলছে একটা কিছু। অত্যন্ত সচল, খালি কাঁধে কাঁধ ঠেকে উঠছে। এখানে ওখানে গান শোনা যাচ্ছে দ্রুতলয়ের। এখানে ওখানে কবিতা শোনা যাচ্ছে সেলিব্রিটিদের ।  একটা বড় স্ক্রিন টাঙানো রয়েছে। সব সেলিব্রিটি যারা মারা গেছে, তাদের ছবি ছেপেছে দেখছি একটা প্রকাণ্ড বড় ফ্লেক্সে। তাদের তালিকায় সবাইকে ধরা আছে। নিখুঁত তালিকা, তালিকা নিখুঁত করার জন্য গাদা গাদা আমলা আছে, প্রচুর পুলিশ আর প্রাইভেট সিকিউরিটির লোকজন ঘুরে বেড়াচ্ছে শয়ে শয়ে। কেউ বাদ পড়েনি, সকলে বাদ পড়েছে। শেষতম সেলিব্রিটি হয়ে শম্ভু রক্ষিতের ছবি তাকিয়ে রয়েছে। তার চোখ দেখা যাচ্ছে। দাড়ি দেখা যাচ্ছে। খোঁচা খোঁচা দাড়ি। খোঁচা খোঁচা ভিড়। খোঁচা খোঁচা সুসজ্জিত লোক। তাদের মুখ ও বুক না দেখে দেখে বাইরে চলে এলাম। অনুজ অসংখ্য সিনেমার বই কিনেছে সেগুলো সে  তাসের মতো করে সাজিয়ে দেখাচ্ছে কিসলাউস্কি, বেলাতার, গোদার, আইজেনস্টাইন, তারকভস্কি, পুদভকিন সব সাজানো তাসের মতো অসংখ্য ছবি দেওয়া, নানান খবর ছাপানো,  ছবি বইয়ের মতো সুন্দর সুন্দর করে সাজানো সব সিনেমার বই । সেগুলো সে একটা এক হাতে তাসের মতো করে ছুঁড়ে দেওয়ায় ইটি আর ফিটলে, অত্রির সঙ্গে কমপিটিশন দিয়ে কুড়িয়ে নিচ্ছে, কখনও লুফে নেওয়ার জন্য লাফাচ্ছে। তখন তারা উড়েও চলেছে ইচ্ছে মতো। আর ফিরছে না। পরে কখনও তাদের দেখা যেতে পারে যদি ইচ্ছে হয়। কলকাতার ঘোড়ারা খুবই অসুস্থ। গায়ে ঘা পায়ে ঘা, সেই ঘা নিয়ে পা টেনে টেনে তারা হাঁটছে । অজানা কাদার ওপর দিয়ে তারা চলছে তো চলছেই। কিছুটা যাওয়ার পর আর চলতে পারেনি কিন্তু কেউ তাদের চাবুকও মারার কথা ভাবে না, এমনই দুবলা ঘোড়া ফলে সিনেমায় কোন  দুঃখও হয়নি চাবুক মারা দেখে।
     কলকাতার হাওয়া খুবই মিন মিন করছিল কবিতারা একটু rapর মতো করে বেজে ছিল। একটু ক্লোজারও হল যেন, সশব্দে আমরা স্টলের গেটটা টেনে বন্ধ করলাম, সিনেমার মতো করে শেষ হল।  এমন দুবলা পাতলা হাওয়া নিয়ে, দুবলা পাতলা ঘেয়ো ঘোড়া নিয়ে, কাঁধে কাঁধ লেগে যাওয়া ভিড়ে যা সিনেমা সম্ভব সেটা করে দেখালো।
      অত্রির কবিতাও পেয়েছি :
    অতঃপর ক্লাউনের সঙ্গে দেখা হল
    তার হাসতা খিলতা গতরের ভিতরে সিনেমা হল
    তার ভিতরে অজস্র লোক বাসের হাতলে ঝুলন্ত
    আর ভিতরে নোংরা ক্যানভাসের দিকে হতবাক কেউ কেউ তাকিয়ে আছে।
    তার ভিতর বুড়ো ইঁদুর খুবসে বংশবৃদ্ধি করছে।
    তার ভিতর নীল এই সন্ধ্যালোকে একটি কালো বিড়াল আমাদের আড্ডার রাস্তা কেটে দিলো...

     আমি বললাম, ‘ভিতরে বললি কেন?’ চিন্ময়জি বলল, ‘তুমি কী বলতে চাইছ’, আমি বললাম, ‘ভেতরে বললে কী খুব অসুবিধে আছে।’  চিন্ময়জি বলল, ‘ভেবে দেখা যেতে পারে।’ সৌম্যদা চুপ করে রইল। অনুজ দেবরূপদের সঙ্গে কথা বলছিল। সুশান্ত কোণের দিকে একমনে মদ ঢাকছে  আর ঢালছে। কপিল বই সাজাচ্ছে। বামনাথ একটু আগেই স্টল ছেড়ে চলে গিয়েছিল। গাবুদার জ্বর।

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • গপ্পো | ০৭ অক্টোবর ২০২৪ | ৩৮৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • যেমন মনে হল  | 165.225.***.*** | ০৮ অক্টোবর ২০২৪ ০১:২৩538309
  • "..তখন আর একটু বাতাস দিল আর স্টলের মধ্যে গরমটা যেন গুলিয়ে উঠে সন্ধে হয়ে গেল। সেই সন্ধে থেকে ঠাণ্ডা ঝরে পড়ল টুপটাপ.." 
     
    এইরকম লাইনগুলো থাকত পেন্সিল আর সর্বকর্মার অ্যাডভেঞ্চারে। 
     
    গল্পটা ফিরে ফিরে পড়ে যাচ্ছি!
  • upal mukhopadhyay | ০৮ অক্টোবর ২০২৪ ১১:২৭538323
  • ওরে বাবা। এই লাথখোরের সঙ্গে ননী ভৌমিকের করা দ্রুজকভের অনুবাদের তুলনা । একটু বাড়াবাড়ি হচ্ছে কি ? আপনার জ্ঞাতার্থে জানাই এই লেখাটা দুটো লিটিল ম্যাগাজিন ফেরত দিয়েছে। @যেমন মনে হল 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন