এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • খগা দি অলরাউন্ডার

    নিরমাল্লো লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ২০২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • কি নাম রে তোর?

    খগ্...  খগেন্দ্রনাথ বসু, রোল নাম্বার আটত্রিশ।

    বল করতে পারিস?

    হ্যাঁ, ঘাড় কাত করল খগা। 

    যা বল করে দেখা দেখি। বলে ক্যাম্বিসের বলটা বাড়িয়ে দিল গৌতম স্যার। খগা উইকেট থেকে দশ বারো কদম পিছিয়ে গিয়ে বোলিং রান আপের মাথায় দাঁড়ালো। ব্যাট করছে অংশুমান, তার দিকে একবার তাকিয়ে গৌতম স্যার ইশারা করলেন খগাকে। খগা নড়বড় করতে করতে এসে পপিং ক্রিজের কাছে লাফিয়ে উঠে বলটা ছুঁড়ল ব্যাটসম্যানকে লক্ষ্য করে। কিন্তু বলটা হাত থেকে ফসকে গৌতম স্যারের দিকে ছিটকে এল। ফস করে ধরে ফেললেন স্যার। 

    আবার কর, বলটা দিলেন এগিয়ে খগাকে। দ্বিতীয়বার বলটা ক্রিজের মধ্যেই ছিল, কিন্তু অনেক শর্ট। দুটো ড্রপ খেয়ে সেটা অংশুমানের কাছে পৌঁছাতে সে মাছি তাড়াবার মত করে বলটা সামনে সরিয়ে দিল। খগা প্রবল বেগে ছুটে এসে তৃতীয় বলটা করল। ফুলটস বলটা অংশুমানের মাথার উপর দিয়ে গিয়ে উইকেটকিপার শৈবালেরও হাতের উপর দিয়ে ফসকে মাঠের পাঁচিলে লেগে ফিরে এল।

    গৌতম স্যার অন্য আরেকজনকে বলটা কুড়িয়ে আনতে বলে রোল নাম্বার উনচল্লিশকে ডাকলেন। খগা শুকনো মুখে মাঠের এক কোনে দাঁড়িয়ে ছিল প্রতিমের সাথে। তাকে কেউ ভ্রুক্ষেপ করল না। 

    খেলার পিরিয়ডের পরে অঙ্ক ক্লাস। মনিদীপা দিদিমণি খুব কড়া, কিন্তু খগার মন ঐকিক নিয়মের বাইরে গিয়ে বল আর সবুজ মাঠের মধ্যে ঘোরাঘুরি করছিল। অঙ্ক একটাও তার মাথায় ঢুকল না। 

    এর পরে ইতিহাসের ক্লাস তারপরে ছুটি। খগা জানলা দিয়ে দেখতে লাগল সবুজ মাঠে, একটু আগে যেখানে তারা ছুটোছুটি করছিল, সেখানে দুটো শালিখ তুরুক তুরুক করে নাচা নাচি করছে। একটা ক্লক ওয়াইজ আর অন্যটা এন্টিক্লকওয়াইজ ঘুরছে, একটু ঘোরে আবার আটকে যায়। ঠিক যেমন বাড়িতে দেয়ালঘড়িটার ব্যটারি শেষ হয়ে গেলে, সেকেন্ডের কাঁটাটা খুচ খুচ শব্দ করে নড়তে চায়, কিন্তু নড়তে পারে না, একটা ঝাঁকুনি দিয়ে একই যায়গায় আটকে থাকে তেমনি করে।

    হঠাৎ একটা চকের টুকরো মাথায় এসে লাগাতে চমকে উঠল খগা। ইতিহাসের মাষ্টার মশাই শিববাবু কটমটিয়ে চেয়ে আছেন তার দিকে। 

    বাইরে কি দেখছিলি অত মন দিয়ে?

    খগা মাথা নিচু করে থাকে।

    কি দেখছিলি বল?

    খগার মুখে টুঁ শব্দটি নেই।

    আলেকজান্ডার কে ছিলেন?

    গ্রীসের রাজা।

    কিসের জন্যে তিনি বিখ্যাত?

    খুব যুদ্ধ করতেন, স্যার। ভারতে পুরু রাজার সাথে যুদ্ধ করতেন। ভানুর কমিকে আছে স্যার। খগার কথা শুনে আশেপাশের ছেলেরা খুক খুক করে হাসছিল। এবারে শিবু স্যারের মুখটাও একটু হাসি হাসি হয়ে, আবার গম্ভীর হয়ে গেল। হয়েছে বস। খবদ্দার আর বাইরে তাকাবি না। খগা মাথা চুলকে বসে পড়ল।

    খগা ওরফে খগেন্দ্রনাথ বোস, থাকে উত্তর চব্বিশ পরগনার এক মফঃস্বলে। রোগা গিরগিরে চেহারা। মাথায় এক ঝাঁকড়া চুল। আর গায়ের রঙ হুড বার্নিশ করা। খগা উত্তরপাড়া বয়েস স্কুলের ক্লাস ফাইভ বি তে পড়ে।

    খগার লেখাপড়ায় একটুও মন নেই, এই নিয়ে বাবা তার উপরে খুব চটা। দিনরাত তার উপরে চোটপাট চলতে থাকে। তার মা তাকে নিয়ে সন্ধ্যেবেলায় বসে অঙ্ক করতে বসায়। অঙ্ক করতে খগার মোটেই ভালো লাগে না। অঙ্কে খগার মাথা নেই। সোজা সোজা সুদকষা, ঐকিক নিয়ম, লসাগু গসাগু সে করতে পারে না। নবগণিত মুকুলের অঙ্কই সে পারে না। অথচ ক্লাসের ছেলেরা, কেশব নাগের বই এর সব অঙ্ক কষে ফেলেছে। খগা পারে না।

    পড়তে বসলেই খগার মাঠের কথা মনে পড়ে, ট্রেনের চড়ার কথা মনে পড়ে, বাসে জানলার পাশে বসলে কেরকম দম বন্ধ করা হাওয়া মুখের উপরে লাগে সে সব কথা মনে পড়ে। খগা হাতে পেন্সিল নিয়ে হাঁ করে আকাশ পাতাল ভাবে। কখনো কখনো পেন্সিল চুষতে চুষতে ভাবে, সে পাইলট হয়েছে। দমদমের এয়ারপোর্টে একবার গিয়েছিল খগা, নতুন দাদুকে সি অফ করতে। নতুন দাদু মায়ের দূরসম্পর্কের কাকা, বাংলাদেশে থাকে। দাদুর নাম অবশ্য নতুন নয়, কিন্তু নতুন করে আলাপ হয়েছে বলে খগা দাদুকে নতুন দাদু বলে। খগা দেখেছে দাদু কেরকম সরু একটা টানেলের মধ্যে দিয়ে এ্যারোপ্লেনে চড়ে গেল। দাদুকে অবশ্য আর দেখা যাচ্ছিল না। কিন্তু সবাই হাত নাড়ছিল টাওয়ারে, তাই সেও খুব হাত নাড়ছিল কাঁচের জানলার সামনে দাঁড়িয়ে। প্লেনটা আস্তে আস্তে ঘুরে গিয়ে, তারপরে আগে এগিয়ে গেল, আর দেখা গেল না। মা বাবার সাথে বাসে করে ফেরার পথে সে আরেকটা প্লেন কে উড়তে দেখেছিল। প্লেনটা বোঁ করে মাটি থেকে আকাশে লাফিয়ে উঠে, পাঁচিল পার হয়ে ওদের বাসের উপর দিয়ে চলে গেল। খগা ছুটে গিয়ে বাসের ও ধারের জানলায় দেখতে চাইছিল যে ওপাশ দিয়ে কোথায় গেল প্লেনটা। কিন্তু বাসের সবাই হাঁ হাঁ করে খগাকে আটকে দিল।

    খগা ভাবছিল সে যদি পাইলট হত তবে সে কত দেশ বিদেশে যেতে পেত। খগার বিদেশ যাবার খুব ইচ্ছা। সে খুব খুশি হত যদি, অস্ট্রেলিয়ায় কিম্বা ওয়েস্ট ইণ্ডিজে যেতে পারত। ওয়েস্ট ইণ্ডিজের অ্যান্ডি রবার্টস, জোয়েল গার্নার কিম্বা অস্ট্রেলিয়ার ডেনিস লিলি, জেফ টমসন কি জোরে বল করে। শাঁ শাঁ করে বলগুলো মাথার কাছ দিয়ে বুকের পাশ দিয়ে চলে যায়। সেবার বাবা, কাকারা সব ভারত ওয়েস্ট ইণ্ডিজের খেলা দেখছিল, বাবা থেকে থেকেই টেবিল চাপড়ে, ধ্যার একটাও বল ব্যাটে লাগাতে পারে না, বলে চ্যাঁচাচ্ছিল। খগা মাঝে মাঝে ভাবে সে যদি ইণ্ডিয়া টিমে চান্স পায় তাহলে খুব ভালো হয়। অ্যান্ডি রবার্টসকে সে মিড অনের উপর দিয়ে পুল মেরে দেবে, লিলির আউটসুইং হেলায় স্কোয়ার কাট করে বাউন্ডারিতে পাঠাবে। উত্তেজনায় খগা লাফিয়ে উঠে দেখে সে বিছানায় শুয়ে আছে। বাবা এখনো শুতে আসে নি।

    খগার বাবা স্কুলে পড়ায়। রাত অবধি খাতা দেখা তার অভ্যাস। খাতাটাতা দেখে শুতে এলে খগা জিজ্ঞেস করে, বাবা কপিল দেব খুব জোরে বল করে না! বাবা হুঁ হুঁ করে যায়। খগা আবার জানতে চায়, বাবা কপিল বেশি ভালো না অ্যান্ডি রবার্টস? অ্যান্ডি রবার্টস জোরে বল করে কপিল দেব মিডিয়াম পেসার, সুইং করায় ভারতের নিচু বাউন্সের উইকেটেও। বড় হও তখন বুঝবে, এখন ঘুমাও, এই বলে বাবা বড় বড় থাবা দিয়ে কাঁধে চাপড় দিতে থাকে, খগাও চুপ করে ঘুমোতে চেষ্টা করে।

    খগাকে বন্ধুরা খেলায় নিতে চায় না, খগা খুব দূর্বল। পাড়ার মাঠে ফুটবল হলে খগা তারা কাঠি কাঠি হাত পা নিয়ে লাফাতে লাফাতে মাঠে এসে হাজির হয়। সব্বাইকে দলে ভাগ করার পরে খগাকে দলে ডাকা হয়। বড় বড় দাদারা বল নিয়ে ছুটে এলে খগার ভয় করে। খগা পা সরিয়ে নেয়, অমনি টিমের বাকিরা চ্যাঁচাতে থাকে, খগা লেডিস, খগা ভীতু। খগা রেগে যায়, রেগে মেগে ছুটে গিয়ে বলের উপরে লাফিয়ে পড়ে। কিন্তু খগা হালকা মানুষ, পাড়ার টোটন দা, ছোটন দা'র সাথে গায়ের জোরে সে পারে না। ধাক্কা খেয়ে ডিগবাজি খেয়ে সে পড়ে যায়। তক্ষুনি আবার উঠে পড়ে হাত পা ঝেড়ে নেয়, যেন কিচ্ছু হয় নি। বাড়ি এসে খোঁড়াতে দেখলে বাবা আরো দু ঘা দেয় পিঠে। খগার দুঃখ কেউ বোঝে না।

    খগা কৃশানু দে'র মত খেলতে চায়। ময়দানে কৃশানুর জন্যে সবাই পাগল। বড় ম্যাচের আগে ইস্টবেঙ্গলের সাপোর্টাররা সবাই কৃশা-নু, কৃশা-নু বলতে বলতে, ম্যাটাডোরে চেপে লাল হলুদ পতাকা উড়িয়ে যুবভারতী কিম্বা ময়দানে যায়। খগা কতবার বাবাকে বলেছে ওদের সাথে যেতে দিতে, কিন্তু বাবা কিছুতেই যেতে দেয় না। বাবার এক কথা, আগে বড় হও। খগার মা খেলা টেলা বোঝে না। বড়জোর লুডো বা রঙমিলান্তি ছাড়া কিছু পারে না। তাই মা'কে বলেও কিছু হয় না। খগার প্রাণটা হাঁকপাক করে খেলা দেখতে, খেলা করতে।

    সেদিন যেমন খেলার মাঠে গিয়ে খগা দেখল বড়রা মাঠ দখল করে নিয়েছে। দাদা কাকারা সব খেলছে, সুতারাং খগাকে আজ কেউ নেবে না। মুখ চুন করে খগা পাঁচিলে বসে খেলা দেখছিল। সুদীপ কাকা ডানদিক থেকে ড্রিবল করতে করতে মাঝমাঠে এসে হঠাৎ ডানপায়ে একটা লম্বা চিপ তুলে দিল গোল লাইন বরাবর। চঞ্চলকাকা গোললাইনের থেকে পাঁচ সাত গজ দূরে বলটা ধরতেই বাবলুদা চার্জ করল চঞ্চলকাকার পায়ে। দুম করে শব্দ করে বলটা অনেকটা লাফিয়ে খগার মাথার উপর দিয়ে চলে গেল পাপান দা'দের বাড়ির উঠোনে। পিকলু বসেছিল, খগার পাশে। চঞ্চলকাকা ওকে হেঁকে বলল বলটা নিয়ে আসতে। খগা যাবার ইচ্ছে প্রকাশ করছিল, পাঁচিলের উপরে উঠেও দাঁড়িয়েছিল ওপাশে নামবে বলে। চঞ্চলকাকার ধমক খেয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে গেল সে।

    পিকলু ওপাশে নেমে বলটা কুড়িয়ে একটা হাই কিক করে এপাশে পাঠাবার চেষ্টা করল। বলটা কোমর হাইটে, খগার ডানপাশ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ খগার মাথায় বিদ্যুৎ চমকের মত একটা ছবি মনে পড়ল। কাকার ফেভারিট একটা ছবি, বেঁটেখাটো গাট্টাগোট্টা একটা ঝাঁকড়াচুলো লোক বাঁপায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে ডানপায়ে ভলি মারছে। ডানপাটা বাঁ পায়ের সাথে সমকোণে রয়েছে। কাকা খবরের কাগজ থেকে কেটে ছবিটা নিজের বইয়ের আলমারীতে চিপকে রেখেছে। ছবিটা মনে পড়তেই খগা ডান পা তুলে সটান চালিয়ে দিল বলটা লক্ষ্য করে। আশ্চর্য্যের ব্যপার, পা'টা বলের সাথে কানেক্ট হয়ে, বলটাকে মাঠ পেরিয়ে গোললাইনের দিকে পাঠিয়ে দিল। সবাই অবাক হয়ে বলের দিকে দেখছিল, কেউ খেয়াল করে নি যে খগা পড়ে গেছে। পিকলুর চিৎকারে সবার সম্বিৎ ফিরল। খগার বাঁ পাটা দেখতে দেখতে ক্যাম্বিস বলের মত ফুলে যাচ্ছিল, সবাই ধরা ধরি করে ওকে হাসপাতালে নিয়ে গেল।

    জ্ঞান হবার পরে খগা দেখল, একটা সাদা পর্দা ঘেরা ঘরে, অপরিচিত বিছানায় সে শুয়ে আছে। মা বসেছিল পাশে, খগাকে চোখ মেলতে দেখে মা ওকে জড়িয়ে ধরল দুই হাত দিয়ে। খগার অস্বস্তি হচ্ছিল, এত লোকের মাঝে, মায়ের কোন সেন্স নেই...। একটু দূরে বাবা চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়েছিল ডাক্তারের সাথে, খগাকে দেখে এক চিলতে হাসল ওর দিকে তাকিয়ে। খগা থাম্বস আপ করে দেখালো সব ঠিক আছে। বাবা কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করল, কদ্দুর গেছিল রে বলটা? খগার মুখে হাজার ওয়াটের আলো জ্বলে উঠল, অনেক দূর জানো বাবা। মাঝমাঠ পেরিয়ে ঐ গোল লাইনের সামনে! বাবা মাথার চুলগুলো ঘেঁটে দিল খগার।

    আমি বাড়ি যাবো না? জিজ্ঞেস করল খগা। 

    একদুদিন থাকতে বলছে রে ডাক্তার কাকু। তোর কদিন ছুটি হল স্কুল থেকে। মজা কর।

    খগা মিচকি হাসি দিল একটা। মনে মনে খুশিই হয়েছে সে। স্কুলে যেতে হবে না কদিন। মজাসে শুয়ে শুয়ে কাটাবে। বাবাকে শুকতারাটা এনে দিতে বলতে যাবে, এমনসময় সাদা শাড়ি পরা একটা মোটাসোটা কাকিমা এসে বাবা মা-কে বলল, ওকে খাওয়ানোর সময় হয়ে গেছে। খাওয়ানোর পরে ওষুধ খাওয়াতে হবে। টিফিনবক্স খুলে মা আলু বেগুনের তরকারি আর রুটি খাইয়ে দিল খগাকে। তারপরে ইয়াব্বড় বড় কটা ক্যাপসুল ট্যাবলেট এনে খগাকে খেতে বলল। খগা নাক মুখ সিঁটকে কোনরকমে সেগুলো খেয়ে ফেলল, জানে বারণ করে লাভ নেই। তারপরে ওকে শুইয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল মা। খগা অবাক হচ্ছিল এই ভেবে যে কেউ ওকে রোজকার মত দুষ্টুমি করার জন্যে বকাবকি করছে না। ইউক্যালিপ্টাস তেলের মত একটা গন্ধে নেশার মত লাগছিল খগার। বাবা আর মা কেবিনের বাইরে বেরিয়ে এল।

    আরো অনেক বছর কেটে গেছে তারপরে, খগা একটা এখন অনেক বড় হয়েছে। রোগা শরীরটা এখন পেটানো, শক্তপোক্ত হয়েছে। এরিয়ানের হয়ে এ্যাটাকিং মিডিও পোজিশানে খেলে সে। নিউইয়র্ক অলস্টার টিম এক্সিবিশান ম্যাচের জন্যে বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেড়াচ্ছে। নামী দামী সব খেলোয়াড়রা আছেন এই টিমে। সারা পৃথিবী ঢুঁড়ে সেরা ট্যালেন্ট নিয়েই এই অলস্টার টিম বানানো হয়েছে। ফিফার আউটরিচ প্রোগ্রামে ভারতে এসে বিভিন্ন সংস্থার সাথে কথা বলে ভারতের ফুটবলের পরিকাঠামো তৈরী করতে চায় তারা। সেই সুবাদে ভারতের যুবদলের সাথে একটা এক্সিবিশান ম্যাচ হবে যুবভারতীতে। খগেন্দ্রনাথ ডাক পেল সেই যুবদলে। অত বড় একটা টিমের সঙ্গে খেলা বুক ঢিব ঢিব করছিল খগার।

    মাঠে নামতেই কিন্তু সব টেনশান কোথায় চলে গেল, বুঝতে পারল না খগা। হরিণের মত ছুটছে সে। কখনো নিচে নেমে বল ডিস্ট্রিবিউট করে খেলাটাকে ছড়িয়ে দিচ্ছে, কখনো স্ট্রাইকারের সাথে ওয়ান টু পাস খেলে উপরে উঠে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে দিচ্ছে। খেলা এগিয়ে চলেছে, খগা বল নিয়ে সাপের মত এঁকেবেকে গোটা মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আজ একটা মিরাকেল হবেই। সেদিনের রোগা ছেলেটা অদম্য জেদ নিয়ে আজ মাঠে ছুটে চলেছে। হঠাৎই একটা ডিফেন্সের থেকে একটা লব কোনাচে হয়ে এসে নামতে শুরু করল খগার কাছে। থাইয়ে রিসিভ করে বলটা অপর পক্ষের মিডফিল্ডারের মাথার উপর দিয়ে এগিয়ে দিয়েই, একশো আশি ডিগ্রী ঘুরে গেল খগা। মিডফিল্ডারটি পা ফসকে পড়তে পড়তে দেখল, বল নিয়ে তীরবেগে ছুটেছে খগা। সাথে দুই ডিফেন্ডার কিছুতেই ধরতে পারছে না তাকে। স্টপারকে একটা বডি ফেইন্টে দুলিয়ে দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়ল খগা, সামনে শুধু গোল কিপার। গোটা গ্যালারি উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করছে। চকিতে একবার পেছনে তাকিয়ে, সম্মুখে আগুয়ান গোলকিপারকে দেখে একটা আউটস্টেপে দূরের পোস্টে লক্ষ্য করে শটটা মারল খগা....

    নার্সিংহোমের কেবিনের বাইরে খগার বাবা মা কথা বলছিল নিজেদের মধ্যে। পর্দাটা পুরোটা টেনে দিয়ে ফিসফিস করে উদ্বিগ্ন কণ্ঠস্বরে মা জিজ্ঞেস করল, কি বলল ডাক্তারে?

     বাবা বলল, বাঁ পায়ের মিনিস্কাসটা পুরো ছিঁড়ে গেছে। ও আর ফিক্স করানো যাবে না। সার্জারি করে নতুন মিনিস্কাস লাগানো যায়। অনেকগুলো টাকার ব্যপার... 

    অপরেশান! ওইটুকু ছেলের! যদি খারাপ কিছু হয়! 

    অপরেশান তো আর বললেই করা যায় না। রেস্ট দিতে হবে অনেক দিন। নইলে হয়তো হাঁটতেই পারবে না। নড়াচড়া বন্ধ রাখতে হবে অনেক দিন। দেখি কি করা যায়। একটা টিউশানি যদি... 

    ওরা কেউ খেয়াল করে নি, পর্দার ফাঁক দিয়ে টিউবলাইটের আলো কাটাকুটি ছায়ার মত খগার মুখে খেলা করছিল, আর খগা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে হাসছিল। স্বপ্ন দেখতে তো খগার বাধা নেই।

    নিরমাল্লো
    ৯ এপ্রিল ২০১৯ 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • গপ্পো | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ২০২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • aranya | 2601:84:4600:5410:456e:c0a5:f081:***:*** | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:১৩541224
  • ভাল লাগল 
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১০:২৮541228
  • খুব মুস্কিল‌। চমৎকার লেখা‌। কিন্তু এত মন-খারাপ করা crying
  • নিরমাল্লো | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:৩০541254
  • থ্যাঙ্কিউ @aranya, রমিত চট্টোপাধ্যায়, অমিতাভ চক্রবর্তী। ছোটবেলায় মতি নন্দীর লেখা খুব ভালো লাগত। তাই এরকম গপ্পো লেখার খুব ইচ্ছে ছিল একটা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন