রোবোটের অনুভূতি নিয়ে আমরা নানারকম খবর পড়ি, এই যেমন রোবোটরা মান-অভিমান, দাবিদাওয়া ইত্যাদি করছে, কিন্তু রোবোটের মধ্যে অনুভূতির কি আদৌ প্রয়োজন আছে? না নেই, বরং রোবোটের মধ্যে যেটার প্রয়োজন সেটা হল সহানুভূতি। সহ-অনুভূতি। আপনার সঙ্গে কেউ আছে, আপনার কথা শোনার কেউ আছে, আপনার প্রশ্নের বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর দেয়ার কেউ আছে, আপনার কাজ করে দেবে, বেশি প্রশ্ন না করে নিজেই কাজ বুঝে নেবে- এই সঙ্গে থাকাটা - এইটা আমরা রোবোটের কাছে প্রত্যাশা করি। Empathy শব্দটার সঠিক বাঙলা নেই, তবে সহানুভূতি বা সহমর্মিতা বলা যায়।
মানুষকে প্রশ্ন করলে মানুষ যে উত্তর পায়, তা আমাদের কাছে অনেক সময়ই "যান্ত্রিক" বলে মনে হয়, তাতে Empathy থাকে না। উল্টে চ্যাটজিপিটির উত্তর "মানবিক" মনে হয়- অন্ততঃ ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে। কারণ Empathy নিয়ে কেউ জন্মায় না, সামাজিক আদানপ্রদানদান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শেখে- আর চ্যাটজিপিটিকে প্রশিক্ষণ দেয়া সহজ- সে শিখে শিখে ক্লান্ত হবে না। অধিকাংশ মানুষ একটা সময়ের পর কিছু শিখতে চায় না, বা শেখার সময় পায় না।
প্রশিক্ষণ ছাড়া আরেকটি শিক্ষাপদ্ধতি হল সামাজিক আদান-প্রদান। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এখানেও কিন্তু যন্ত্র এগিয়ে। একজন মানুষ সপ্তাহে যদি দশজন মানুষের সঙ্গে সামাজিক আদান-প্রদান করতে পারে, তবে যন্ত্রের পক্ষে দিনে লক্ষাধিক মানুষের সঙ্গে সামাজিক আদান-প্রদান করা সম্ভব। অতএব reinforcement learningএর মাধ্যমে অনেক দ্রুতগতিতে যন্ত্র শিখবে মানুষের আচরণ, মানুষের মনের গভীর কথা, মানুষ কী বললে ভালভাবে সাড়া দেয়, আর কী বললে অসন্তুষ্ট হয়। এভাবে যন্ত্র সহমর্মিতা শেখে, ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স লাভ করে। তাই যন্ত্র মানুষের সঙ্গে অনেক অনেক বেশি "মানবিক" আচরণ করবে, অন্য মানুষের তুলনায়- খুব স্বাভাবিক।
এটা ছিল সহমর্মিতা শেখা- এছাড়াও, সহমর্মিতা জ্ঞাপনটাও যন্ত্রের পক্ষে মানুষের চেয়ে সহজ। তার একাধিক কারণ আছে- এক, যন্ত্র ক্লান্ত হয় না, অন্ততঃ chatgpt কখনও ক্লান্ত হবে না। আপনি ব্যাংকে বিকেল সাড়ে তিনটের সময় পরিষেবা নিতে গেলে কর্মীরা আপনাকে দেখে মোটেই খুশি হবে না- আগামীকাল আসতে বলবে। তার কারণ, এক- দিনশেষের ক্লান্তি, দুই, ক্ষমতার সমীকরণ, তিন, একজন পরিষেবক একজন গ্রাহকের কথা শুনবে কিনা তা নির্ভর করে পরিষেবকের গ্রাহককে পছন্দ হচ্ছে কিনা- তার চেহারা, কথার টোন তাকে খুশি করছে কিনা, গ্রাহকের সামাজিক অবস্থান কীরকম ইত্যাদির উপরে। বিশেষ করে যেসব পরিষেবায় সরাসরি কেনাবেচা হয়না সেখানে গ্রাহককে মুখের উপর না বলা যায়। মোটকথা মানুষের মুড থাকে, ক্লান্তি থাকে, মানুষের মধ্যে পক্ষপাতদোষ থাকে- তাকে আইনকানুনের দোহাই দেয়া যায় না। যন্ত্র নিয়ম অনুযায়ী চলতে সক্ষম। তাই যন্ত্রের পক্ষে মানুষের সঙ্গে অনেক ভদ্র এবং নিয়মনিষ্ঠ আচরণ করা সম্ভব।
তবে, যন্ত্রকে কী নিয়ম শেখানো হবে আর কী কাজ দেয়া হবে, তা মানুষের উপর নির্ভরশীল। প্রশ্নটা হল কোন মানুষ? কোম্পানির সি-স্যুট, ইঞ্জিনিয়াররা, গবেষকরা, ম্যানেজাররা, গ্রাহকরা, নাকি সরকার- কারা এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে?
(চলবে)
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।