এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • সময়ের প্রয়োজনে 

    লতিফুর রহমান প্রামানিক লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৫ জুলাই ২০২৫ | ১৭ বার পঠিত
  • সময়ের প্রয়োজনে।
    লতিফুর রহমান প্রামাণিক।
    শুনলাম আগামী রবিবার স্কুল খুলবে।  সেখানে পোড়া বাতাসের গন্ধ ফিকে হচ্ছে রোজ রোজ। স্কুলের পিয়ন আর সুইপার রা এর আগে এতোটা কাজে মনোযোগী হওয়ার ইতিহাস কম। বিষন্ন হৃদয়, বুকের ভিতর চাপা দুঃখ। তবুও ময়লা পরিস্কার করতে হচ্ছে। আগুনে পুড়ে কালো হয়ে যাওয়া ডেক্স কিংবা বেঞ্চের দাগ সহজে তুলে ফেলা যায় না। পুড়ে যাওয়া শিশুদের চামড়া এখনো পোড়া ছাইয়ের সাথে মিশে আছে।  সবকিছু মুছে ফেলতে কমতি নেই। জীবন হয়তো এটাই। দু দিন যে শিক্ষক রা স্কুলের আয়া, পিয়ন আর দারোয়ান রা হো হো করে কান্না জুড়ে দিত, তারাও দিনে দিনে শক্ত হয়ে উঠছে। এমন ঘটনা হয়তো জগতে বিরলতম। প্লেন যে এ-ই প্রথম ক্রাশ করেছে তা নয়, সারা দুনিয়ায় রোজ রোজ প্লেন ক্রাশ হয়। মানুষ মরছে, পুড়ছে, স্বামী হারাচ্ছে স্ত্রী, কিংবা কোলের শিশু। প্রতিটি মৃত্যুই বেদনার, শোকের। যার হারায়, সেই জানে। প্রিয়জনকে হারানোর অনুভূতি আমাদের পক্ষে অনুবাদ করা অস্মভব।  মাইলস্টোনের গেটের সামনে এখন আর অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে দল পাকায় না।  তবে গেটের সামনে দিয়ে পার হয়ে যাওয়া প্রতিটি মানুষ অন্তত একবার হলেও প্লেন ক্রাশ করা দালানের দিকে উঁকি দিতে চায়।  এখনো সবার চোখের সামনে ভাসতে থাকে, যে শিশু টা ৯০ ভাগ পুড়ে যাওয়া শরীর টা নিয়ে কি এক মনের জোরে কাঁদতে কাঁদতে তার বাবা মা কে খুঁজে খুঁজে দেখছিল কিংবা ক্লাস থ্রি তে যে শিশুটি চামড়া খসে পড়া হাত দিয়ে পরিচিত কাউকে ডাকছিল। উফ কি নির্মমতা।  এই ছবি গুলো নিয়ে স্কুল টা বেচে থাকবে কিন্তু চাক্ষুষ মানুষ গুলোর স্মৃতি হয়তো এক সময় ভোতা হয়ে উঠবে একদিন।  বাচ্ছাদের পরীক্ষা, ক্লাস, কোচিং। অনেক ক্ষতি হয়েছে এই ক দিনে। আর স্কুলের দুর্নাম তো হলোই, তরতাজা বাচ্ছাদের লাশ বেরুলো, স্কুলের মাঠে হাজারো বাপ মায়ের চোখের জল এখনো জ্যাবজ্যাব হয়ে আছে। এই ক্ষত একসময় শুকিয়ে যাবে কিন্তু স্মৃতি তো অক্ষয় পাথরের মতো। এখনো লাশের সংখ্যা বাড়ছে, লাশের সংখ্যা নিয়ে হইচই করা ছাত্র কিংবা যারা সরকারের বিরুদ্ধে সচিবালয়ে হামলা চালিয়েছে তারা ও আর পথে নেই। এটাই স্বাভাবিকতা সময়ের। শিক্ষিকা মাহরিন চৌধুরীর কবরের পাশে গিয়ে অবশেষে বিমান বাহিনী ক্রন্দনের ভায়োলিন বাজিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে বাধ্য হলো। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় হইচই পড়ে যাওয়া এই ঘটনা শুধু বাংলাদেশ নয় জাতীসংঘ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে শোকের কথা জানালো। একদিন সমস্ত কিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে। যে কন্যা শিশু টা তার খালাকে হাত ছেড়ে না দেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করছিল, বোতলের এক চিমটি পানি মুখে নিয়ে আক্ষেপ করছিল, তার বুকের ভিতর এক সমুদ্র তৃষ্ণা কিংবা আইসক্রিম খাওয়ার শেষ আবদার দেখে ডাক্তার আপ্লূত হয়ে বলেছিল, তার সময় শেষ, তাকে খেতে দিন। আর ভোর চারটায় খালার হাত ধরে চলে যায় জান্নাতে। এই শোক তার খালা সইবে কেমনে? আর পর দিন তার ছোট্ট ভাইয়ের মৃত্যু। উফ পারবে এই বিচ্ছেদের স্মৃতি ভুলতে?  মানুষ তবুও সয়ে যাবে একদিন। একসময় দেয়ালে ভাই বোনের যুগল ছবি ঝুলে থাকবে। দেখলাম একটা পোড়া শিশুকে সি এন জি কিংবা অটোরিকশা চালক হাসপাতালে নিয়ে যেতে অসভ্য, বর্বর অস্বীকৃতি করতে, তারা ও তো মানুষ। দুই লিটার পানি যখন ৬০০ টাকায় বিক্রি করে কিছু মানবিক মানুষ, জাতী হিসাবে আমাদের লজ্জা হয়না? তার বুক কি কখনো কাপেনি? তার বাড়িতে কি অমন সুন্দর কচি মুখ নেই? আহা টাকাই সব। এসব নির্মম দৃশ্য আমরা তো দেখলাম। দেখলাম রক্ত দেওয়ার জন্য তৃতীয় লিঙ্গের কিছু মানুষ দল বেধেছিল রক্ত দেওয়ার জন্য। হায়রে রক্ত! দেখেছি হাজারো মানুষ টেলিভিশনের পর্দায় সেদিনের এই দৃশ্য দেখে দেখে অজ্ঞাতে ঝরিয়েছে চোখের জল। সাংবাদিক রা দারুণ ব্যস্ততায় দু'দিন কাটিয়ে এবার ছুটেছে বিচারপতির পিছনে। কারাগার, আদালতের বারান্দায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছে।  সাংবাদিক দের ক্যামেরার সাথে সাথে লক্ষ লক্ষ চোখ সেদিক ছুটে যায়, পিছনে পড়ে যায় আরেকটি ঘটনা। মানুষ এভাবেই স্মৃতি সরায় পলকে।  মাইলস্টোন এ রবিবার থেকে নিয়মিত ঘন্টা শুনবো, ছুটি হবে, ক্লাস হবে, পরীক্ষা হবে।  বাচ্চাদের ট্রমা থেকে যাবে অনেক দিন। খেলার সাথী কিংবা বেঞ্চের যে স্থানে হারিয়ে যাওয়া বন্ধু রোজ রোজ বসতো, মহাকাল সেই শুন্য বেঞ্চ হাহাকার করবে হৃদয়ে। হারিয়ে যাওয়া শিশুদের নাম কেটে দিতে হবে প্রিয় শিক্ষক কে। হাত ভারী হয়ে আসবে, চোখের সামনে জল এসে টলমল করবে খানিকক্ষণ।  তবুও করতেই হবে, এই নিয়ম জগতের। জগতের কোন কিছু শুন্য থাকে না সময়ের প্রয়োজনে। সময়ের প্রয়োজনে আমরা সমস্ত কিছু ভুলে যাই। জহির রায়হানের সময়ের প্রয়োজনে গল্পের লাইন টা আমার জীবনের সেরা লাইন,
    প্রথম প্রথম কাউকে মরতে দেখলে ব্যথা পেতাম। কেমন যেন একটু দুর্বল হয়ে পড়তাম। কখনও চোখের কোণে একফোঁটা অশ্রু হয়তো জন্ম নিত। এখন অনেকটা সহজ হয়ে গেছি। কী জানি, হয়তো অনুভূতিগুলো ভোঁতা হয়ে গেছে, তাই। মৃত্যুর খবর আসে। মরা মানুষ দেখি। মৃতদেহ কবরে নামাই। পরক্ষণে ভুলে যাই।
    এটাই জীবন। আমরা এর বাহিরে নই কখনো।

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন