পঞ্চায়েত ২
রিভিউ – ঝর্না বিশ্বাস
আচ্ছা আপনার কি কখনও সাঁইসাঁই করে টাইম মেশিনের হাত ধরে অন্য কোথাও পৌঁছে যাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে? যদি নাই হয়, আপশোস নেই। ‘অ্যামাজন প্রাইমে’ এক ক্লিকে ফুলেরাবাসী হতে এতটুকু সময় লাগবে না।
সে আপনি যেই হোন না কেন…পাড়ার হম্বিতম্বি বাপ্পাদা থেকে শুরু করে হাইরাইজের স্ফীতোদর মন্ডলবাবু বা ‘দুনিয়া কা বোঝ উঠাতা চলা’ টাইপের টেনশন দিদি - আপনাকে একবার ঘুরে আসতেই হবে ফুলেরা গাঁও…হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন, “পঞ্চায়েত” সিরিজের বহু পরিচিত সেই ফুলেরা গ্রাম…জেলা বলিয়া, উত্তরপ্রদেশ যেখানে দ্বিতীয় সিজনের ধমাকা নিয়ে ১৯শে মে তে আবার হাজির অভিষেক ত্রিপাঠী, প্রধানজি, ম্যাডাম, রিঙ্কি, প্রহ্লাদ ও বিকাসের মত চরিত্ররা…
‘দিল মে জগহ বনানে কে লিয়ে, সির্ফ এক ফুল হি কাফি নহী
জিন্দেগী তো মেহেকতি হে, ইয়ার পরিবার সে… ‘
এটাকেই মূল মন্ত্র হিসেবে নিয়ে গ্রাম বাংলার প্রেক্ষাপটে সপাট এক গল্প লিখেছেন চন্দন কুমার। মোট আটটা পর্বের ‘পঞ্চায়েত ২’ তে সেখানকার ভিন্ন ভিন্ন দিককেই তুলে ধরা হয়েছে। কোথাও ইট ভাটার মালিকের সাথে মাটির রেট নিয়ে দরাদরি, কোথাও দুই পরিবারে কথা চালাচালি বন্ধ…আবার ‘স্বচ্ছতা অভিযান’ এর আওতায় থাকা প্রত্যেক ঘরে শৌচালয়ের ব্যবস্থাই হোক বা গ্রামে প্রথম সিসিটিভি ক্যামেরা অথবা ‘নেশা মুক্তি অভিযান’ - লেখক কোন কিছুকেই লিপিবদ্ধ করতে ভোলেননি।
প্রথম পর্ব ঠিক যেখানে শেষ হয়েছিল, ‘পঞ্চায়েত ২’ সেখান থেকেই শুরু। সেই জলের ট্যাঙ্ক, যা পুরো ফুলেরা গ্রামকে কয়েদ করত সেখানেই অভিষেক ত্রিপাঠীর প্রথম লুকে মস্ত হৈচৈ। অপছন্দের চাকরি হলেও সচিব-জির চরিত্রে জিতেন্দ্র কুমার ছাড়া আর অন্য কাউকে ভাবা যেত না। আসলে TVF Creation জানে মানুষের মন জয় করার আসল চাবিখানা রাখা আছে প্রকৃতির কোলে যেখানে খোলা আকাশ, মাটির গন্ধ আর পরিচিত প্রিয় মানুষের কলকাকলি।
প্রত্যেকটা গল্প নিজস্ব ঢালে চলে, প্রত্যেক গল্প কিছু বলে… তাই ‘নাচ’ এ যখন নর্তকী মেয়েটি অভিষেকের উদ্দেশ্যে বলে ‘আপ ভি এক তরহ সে নাচ হী রহে হেঁ…’ অবাক হইনি কিছু। ‘দোস্ত ইয়ার’ গল্পে শহরের এক বন্ধুর গ্রাম দেখতে আসা… ছোটবেলার সমস্ত ফ্যান্টাসিকে যেন হাতের মুঠোয় পাওয়া। তবে অভিষেক ও প্রধানজির একমাত্র মেয়ে রিঙ্কির বন্ধুত্ব পঞ্চায়েত ২র অন্যতম আকর্ষণ যা নিশ্চুপে সম্মতি দেয় ভালোলাগার।
যদিও শেষ গল্পটিতে এসে মনখারাপ হয় তবে এটাই সত্য। অল্প টাকার মাইনেতে সংসার চালানো বাড়ির একমাত্র ছেলের নিষ্প্রাণ দেহ আগলে রাখে পুরো ফুলেরা গ্রাম। চিঠি আসে এই সিরিজের অন্তিম দৃশ্যে…অভিষেক ত্রিপাঠীর বদলি হয়ে গেছে।
তাহলে সচিবজি কি সত্যিই চলে যাবেন? রিঙ্কি ও সচিব-জির সম্পর্কে আদৌ কি শিলমোহর পড়বে? কেমন হবে সেই ফুলেরা গ্রাম যখন রাস্তাটা পাকা হয়ে যাবে? পঞ্চায়েত অফিসের টিউবওয়েল সরে গিয়ে জলের নল বসবে তো? অন্ধকার কাটিয়ে উঠতে পারবে এই ফুলেরা বাসীরা?
প্রিয় মিশ্রাজি (পরিচালক – দীপক কুমার মিশ্রা) … এই যে প্রশ্নপত্র হাতে আমাদের দাঁড় করিয়ে গেলেন আশাকরি তার উত্তর শীঘ্রই পাব পঞ্চায়েত ৩ এ। ততদিন মনের মনিকোঠায় লুকোনো থাক ফুলেরা গ্রামের গল্পরা …
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।