দক্ষিণ কলকাতার এক তিনতলা বাড়ি, বড় বড় ঘর, গরাদ লাগানো মানুষ সমান জানলা, বিরাট টানা বারান্দা ৷৷ বাড়ির সিঁড়িতে এক ঝাঁক কচি-কাঁচার আওয়াজ, দৌড়োদৌড়ি শব্দ, হাসি-আনন্দ গল্পে বাড়িটা মুখরিত হয়ে আছে ৷৷ তার মধ্যেই মাঝে মাঝে মা মাসিদের গলার আওয়াজ —" ওরে পড়ে যাবি / সাবধান " — শব্দগুলো হাওয়ায় ভেসে এলেও শিশুদের কানে খুব একটা ঢোকে না ৷৷ তারা তাদের খেলাতেই ব্যাস্ত৷৷ নয় নয় করে গোটা বারো ছানাপোনা ৷৷
শীতের ছুটি চলছে ৷৷
সময় বদলায়, দিন পার হয়, সেই শিশুরা আস্তে আস্তে বড় হয়ে যায় - যে যার মত প্রতিষ্ঠিত ৷৷ সারা পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন শহরে সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে৷৷ যোগাযোগ ক্ষীণ, সুতোর মতো টিকে আছে হোয়াটস আপ আর ফেসবুকের মাধ্যমে ৷৷
বিশাল বাড়িতে এক এক করে ঘর বন্ধ হতে থাকে, দেউটির বাতি নিভে যায় আস্তে আস্তে৷৷ জালনার গরাদ ঢাকে আধুনিক বাহারি গ্রিলে, দেওয়ালে ওঠে বিশাল স্প্লিট এ.সি ৷৷
আধুনিকতার মোড়কে মোড়া পুরোন বাড়ীর দরজায় বসে দামী কোলাপসিব্যল গেট ৷৷ ঢুকতে বেরোতে ডজন খানেক চাবির ব্যবহার করতে হয় ৷ অবশ্য কেই বা আসে??
টিমটিমে বাতির মতো রয়ে গেছেন একজন স্মৃতি আঁকড়ে ৷৷ বয়সের ভারে ন্যুব্জ, পরিচারিকার সাহচর্য নিয়েই জীবন ৷৷
দিনান্তে একা ঘরে টিভি সঙ্গী, আর মাঝে মাঝে মুঠোফোনের মাধ্যমে সন্তানদের বার্তা ৷৷
কোন সমস্যায় পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই ৷৷
অদ্ভুত এক জীবন ৷৷
ঐ বাড়ীর মতো এমন বাড়ী আজ সারা কলকাতার বুকেই ছড়িয়ে আছে ৷৷ যাদের কেউ কেউ পারছেন না শিকড় উপড়ে সন্তানের শহরে যেতে — আবার কারুর ক্ষেত্রে সযত্নে লালিত সন্তান ভুলেই গেছে তাদের অস্তিত্ব ৷৷