"বধূ শুয়েছিলো পাশে— শিশুটিও ছিলো;
প্রেম ছিলো, আশা ছিলো— জ্যোৎস্নায়– তবু সে দেখিল
কোন্ ভূত? ঘুম কেন ভেঙে গেল তার?
অথবা হয়নি ঘুম বহুকাল— লাসকাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার।"
বিষন্ন হেমন্ত জুড়ে মৃত্যুর আঘ্রাণ । কোজাগরী রাতে কিম্বা ছাতিম গন্ধা শহরে শীত নামে অতর্কিতে।
কবি হেঁটে চলেন মহাপ্রস্থানের নিমগ্নতায়। শহর-রাস্তা-কোলাহল-নিয়ন-শরীর-ট্রাম লাইন সব ধূসর শীতাতুর বিছিন্নতায় অদৃশ্য প্রায়। আশা,মায়া, আনন্দ,প্রেম,ভরসা কোথাও কিছু নেই, যেন কখনো থাকার কথা ও ছিল না।
অব্যাক্ত শব্দের ভারে ক্লান্ত শহরের প্রতিটি ইট। পরতে পরতে বিগতের স্মৃতি। নারীর শীৎকারের মতন অন্ধকার আর নৈঃশব্দ্যের রমণকালে পৃথিবীরও একটা ব্যাঞ্জনাময় নিজস্ব অভিব্যক্তি আছে। অন্ধকারের অধিকার, নৈঃশব্দের অধিকার কেবল মাত্র কবির। কবি হেঁটে চলেন উন্মাদ সুলভ অবজ্ঞায় । পৃথিবীর ডাকে সাড়া দিতে তার বয়েই গেছে।
ধর্ম-কুকুরের মতো অত্যন্ত অনুগত ট্রাম অনুসরণ করে কবিকে। কবি হেঁটে চলেন। যুগ যুগান্তর, কাল কালান্তর পেড়িয়েও কবির চলা থামবে না।
আর সেই ধর্মকুকুর-ট্রামও কবিকে অতি বিশ্বস্তের মতো সঙ্গ দেবে। প্রেমের মত স্পর্শ দেবে। আশির্বাদের মত মৃত্যু দেবে। দেবেই।
ওই একদিনই মৃত্যু পোষ মানা পাখিটির মত কবির আঙ্গুল ছুঁয়েছিল। আর মৃত্যুকে স্তব্ধ করে কবি বলেছিলেন_
"মৃত্যু এলে, মরে যেতে হবে
ভালোবাসা নদীর জলের মতন হয়ে রবে,
জলের থেকে ছিঁড়ে গিয়েও জল
জোড়া লাগে আবার যেমন নিবিড় জলে এসে।"
জীবনানন্দ অনায়াসে মৃত্যুকে ছুঁয়ে অমরত্বের মন্ত্রগুপ্তি উচ্চারণ করেন। আর আমরা ভয়ে ভয়ে খালি পিছন ফিরে দেখি। এইরে ... ট্রামটা এসে গেল না তো !
অপূর্ব লেখা
ধর্ম-কুকুর ট্রাম? চমৎকার লেখনি।
এপারে উত্তরবঙ্গের জেলা সিরাজগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। কুয়াশামাখা ভোরে খাল পাড়ে সার সার বাঁশকলে চৌকো ফ্রেমে আটা জাল ডোবানো আছে। জেলেদের জিজ্ঞাসা করতে একজন হেসে বললেন, এর নাম, ধর্ম-জাল স্যার!
কি অদ্ভুত যোগাযোগ!
@বিপ্লব রহমান, "ধর্ম" জাল ই বটে।