রাতে নার্সিংহোমেই থাকবে বলে সুফি হওয়ার দিন বিকেল নাগাদ অনমিত্র বাড়িতে আসে কিছু জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে যেতে। আমার কেবিনে আমি, সাথে একজন সিস্টার। তাকে বলি আমার এখানে বসে বোর হওয়ার দরকার নেই। তোমার অন্য কাজ থাকলে করতে পারো গিয়ে। আমার কিছু লাগলে আমি বেল বাজাবো। তো উনি, "ডাকবে কিন্তু। আমি তাহলে ওদিকটাই (রুমের বাইরে আঙুল দেখিয়ে) আছি" বলে চলে গেলেন। আমি নিজের মতো নেটফ্লিক্সে লুসিফার দেখতে শুরু করি। সিরিজটা প্রায় শেষ হয়েই এসেছে। এমন সময় না ডাকতেই সিস্টার দিদি ঘরে এলেন। বসলেন। একথা সেকথা জিজ্ঞেস করলেন। তার মধ্যে, "তোমার বয়স কতো গো সোনা"-ও ছিলো। তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন টিভি দেখবে?! আমি বললাম আমি অলরেডি একটা জিনিস দেখছি মোবাইলে। আপনি দেখুন। "ঠিকাছে। কিন্তু কেউ এলে বলবে তুমি দেখছো। আমি এমনি বসে আছি। নইলে আমি বকা খাবো", বলে উনি টিভি চালালেন। তার জাস্ট পরপরই ওনার হঠাৎ মনে পড়লো যে ওনার তো জিজ্ঞেস করা হয়নি আমি মোবাইলে কি দেখছি।সুতরাং জিজ্ঞেসও করলেন। বললাম "লুসিফার"... শুনে কৌতুহলী চোখমুখ করে, "সেটা কি নিয়ে" জানতে চাইলেন। খানিক বোঝানোর চেষ্টা করে শেষে "শয়তান শয়তান। লুসিফার হলো শয়তান" বলে থামি। শয়তান শব্দটা শুনে দিদি চোখ ততক্ষণে ব্রহ্মতালুতে তুলে আমায় স্পষ্টই বলে দেন, "সর্বনাশ! কাল তোমার বাচ্চা হবে আর আজ তুমি শয়তান দেখছো! ছি ছি! দাঁড়াও!" বলেই হাতে রিমোট নিয়ে ওনার সাধের সিরিয়ালটি সরিয়ে বাচ্চা লোকনাথ বাবার কিছু একটা চালিয়ে দিলেন। সাথে, "আমি ওটা (যেটা উনি দেখছিলেন। কোনও এক সিরিয়াল) পরে দেখে নেবো। তুমি এটা দেখো। লোকনাথ বাবার মতো বাচ্চা হবে।" আমি যতই বলি দেখবোনা, ততই উনি আমায় ধমকে জোর করে বাচ্চা লোকনাথ বাবা দেখানোর চেষ্টা করেন। সাথে মাঝেমধ্যে খুবই ভক্তিভরে প্রণাম করেন আর "আহা আহা" করতে থাকেন। আমি কিছুই দেখবোনা বলে বই খুলে বসি। উনি দেখতে থাকেন। সুফি পরের দিন নয়, সেদিনই হয়। এবং সুফির একদিন আগে হওয়ার পেছনেও উনি লোকনাথ বাবার ইচ্ছে বলে দাবি করেন। আমার সাথে ওনার রোজ লোকনাথ বাবা আর লুসিফার নিয়ে তর্ক হতে থাকে। উনি বলেন লোকনাথ বাবা মেয়ে হয়ে জন্মেছেন। আমি বলি, না লুসিফার মেয়ে হয়ে জন্মেছে। ওনার শেষ অস্ত্র ছিলো, "তুমি কেমন মা গো! মা হয়ে নিজের সন্তানকে শয়তান বলছো!"... আমি বলি, " যাত্তারা, পরের সন্তান কে কেনই বা শয়তান বলতে যাবো! সেটা কি ভালো দেখায়!"
প্রসঙ্গত সুফি আজকাল লোকনাথ বাবার স্টাইলেই বেশিরভাগ সময় বসে থাকেন। বসেন লোকনাথ বাবার মতো কিন্তু শয়তানি বুদ্ধি লুসিফারের মতো।
আমি প্রায়ই ওর অত্যাচার আর সহ্য করতে না পেরে বলি, বেরিয়ে যা। বাক্সপ্যাঁটরাও গুছিয়ে দিচ্ছি। কয়েকটা কাঁথা, তিন-চারটে হেয়ারব্যান্ড, জলের বোতল, বাটি-চামচ....ইত্যাদি.... উনি আবার দুটো কাঁথা কমিয়ে তার বদলে পছন্দের দুটো জামা গুছিয়ে নেন। আর আমাকে রিকোয়েস্ট করেন আমার টুপিটিও নিতে চান বলে... প্রায় প্রত্যেকদিনই সক্কাল থেকে রেডি হয়ে বসে থাকেন। চলেই যেতেন কিন্তু কাজু দাদার জন্য মনটা একটু কেমন করে বলে এখনও গিয়ে উঠতে পারেননি। আর প্রত্যেকবারই বলেন রোদটা পড়লে ভেবে দেখবেন কি করা যায়...
কি মিষ্টি
বাঃ ভারি ভালো লাগল। শিশুটক টইটাও অনেকদিন আপডেট হয় না :)
সুফিকে লুসি কিম্বা লুচি বলেও ডাকা যায়, ভেবে দেখলাম।
সবাইকে ধন্যবাদ... সুফির কিিিন্তু অদৃশ্য লেজও আছে.. সেসব গল্প একে একে বলবো।..
আর পাই দি তোমার নাম দুটিও পছন্দ হয়েছে