এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক

  • করোনাকালীন (দুই)

    Anuradha Kunda লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৩০৩৭ বার পঠিত
  • #করোনাকালীন (দুই)
    দশ
    স্কুটি গ্যারাজ করে অদিতি দোতলার দিকে তাকালো। গোল বারান্দা ঘেরা বাবার বেডরুমে এখনো আলো জ্বলছে। অচ্যুত শিবরামণ অনেক রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। আবার উঠেও পড়েন ভোরে। সামনে বাগানে জল দেন। তারপর প্রাণায়াম ইত্যাদি । জগিং সেরে এসে তিনি স্টাডিতে ঢুকে যান ।সেখানেই তাঁর ব্রেকফাস্ট পৌঁছে যায় ।কিন্তু কোভিডকালে তাঁর জগিং বন্ধ। বাগানের পরিচর্যায় অনেকটা সময় কাটান তিনি।কোনো মালি নেই।একটা পরিচ্ছন্ন ঝকঝকে ফলবতী ও ফুলবন্ত বাগান রাত্রিবেলাতেও ঝকঝক করছে। অদিতি জোরে একটা শ্বাস নিল। গোলাপ ।সে শুনেছে দেবরূপের মাও বাগান করেন।ছাতে বাগান করেছেন খুব সুন্দর করে।
    সে ছবিও দেখেছে। কিন্তু তাদের বাগানের ছবি মালবিকা দেখেন নি। মালবিকা শুধু অদিতির নামটা জানেন।ওয়ান অব দ্য ফ্রেন্ডস অব দেবরূপ।এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।
    একটা নিঃশ্বাস ফেলে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে অদিতি ভেতরে ঢুকে গেল। এটাই এ বাড়ির প্রথা। কাউকেই নিচে নামতে হবে না দরজা খোলার জন্য।মুমতাজ নিচে থাকেন বাড়িতে থাকলে।অদিতি না ফেরা পর্যন্ত ।
    অচ্যুত অনেক রাত অবধি পড়বেন।তিনি একজন খ্যাতনামা অ্যাডভোকেট।কোভিডকালে কোর্ট বন্ধ বটে কিন্তু তাঁর হাতে প্রচুর পেন্ডিং কেস।কাজেই তিনি সেগুলো নিয়ে কেস স্টাডি করতে ব্যস্ত ।মুমতাজ কলকাতা গিয়ে আটকে গেছেন লকডাউনে ।সেজন্য বাড়ির কোনো বেহাল অবস্থা হয়নি তবে অচ্যুত টেনশনে আছেন। এ বাড়ির দুটি কন্যাই খুব গোছানো ও বুদ্ধিমতী। তারা বাড়ি এবং বাবাকে ঠিকঠাক দেখভাল করে। কিন্তু অদিতিকে কাজের জন্য অনেকটা সময় বাইরে থাকতে হয়।ইদানিং সে পুণেতে পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর একটা ডকুফিল্ম তুলছে। আসা যাওয়ার সময় ঠিক নেই।মুমতাজ বাড়িতে থাকলে অচ্যুত এসব নিয়ে চিন্তাই করেন না।সময়ও পান না।বাট দিস লকডাউন, অ্যাবসেন্স অব মুমতাজ অ্যান্ড ইরেগুলার আওয়ার্স অব অদিতি।সব মিলিয়ে তিনি কিছু বিব্রত ।ছোট মেয়ে সুনিধি বাড়িতেই থাকে।হিস্ট্রি অনার্স থার্ড ইয়ার। তার কলেজ বন্ধ ।অদিতি যেমন পিতৃমুখী মেয়ে, সুনিধি মায়ের মত কাটা কাটা সুন্দর।অদিতি বাবার বাদামি ত্বক, চ্যাপ্টা নাক উত্তরাধিকারসূত্রে বহন করছে।সেই সঙ্গে পেয়েছে উভয়ের জেদ।
    বাইরে থেকে ফিরে সে একতলার গেস্টরুমে স্নান সেরে নিচ্ছে ইদানীং ।ওপরে যাচ্ছে একদম সকালে ফ্রেশ হয়ে।রাতে মাথা ভিজিয়ে স্নান করলে আবার ড্রায়ার চালিয়ে শুকোতে হবে।ক্লান্ত শরীরে সেটা সে আর পেরে ওঠে না। তার রাতের খাবার বলতে টোস্ট বা পরোটা।সবজি।চিকেন। ডাইনিং এ ঢাকা থাকছে। আপাতত সে সুনিধিকে নিচে নামতে না করেছে রাতে।
    সুনিধির একটা অসুখ আছে। হার্টে একটা ফুটো।অ্যাট্রিয়াল সেপ্টাল ডিফেক্ট। এ এস ডি।জন্ম থেকেই আছে ছিদ্রটি। অনেকদিন কোনো কষ্ট ছিল না।ডক সেইড ইট ইজ ওকে। তারপর গত দুবছরে ছিদ্রটি বড় হয়ে ওর কষ্ট বাড়িয়েছে। প্রচন্ড যন্ত্রণা হয় মাঝেমাঝে । অপারেশন হবার কথা আছে। কাজেই এক্স্ট্রা সতর্কতা নেওয়া খুব জরুরি। কো মরবিডিটি ইজ ডেন্জারাস ফর কোভিড ইনফেকশন।
    অনেকসময় অদিতি দেবরূপের বাসা থেকেই ডিনার সেরে আসে। কিন্তু আজ ইচ্ছে করে নি।ওর স্টুপিডের মত বিহেভিয়ার দেখে অদিতি বেরিয়ে গেছে।দুটো নার্সিংহোমে কাভার করে ফিরেছে বাড়িতে ।
    গিজার অন করে পরিস্কার পাজামা আর টি শার্ট রাখলো বাথরুমে । আপাতত গেস্টরুম তার ঘর। ইউটিউবে গান চালিয়ে দিল ।ব্লু টুথ কানেক্ট করলে নতুন স্পিকারটা ভালো কাজ দিচ্ছে।আশা ভোঁসলের মাখন মসৃণ কন্ঠ পিছলে পড়ছে সারা ঘরে।মেহগনি বার্নিশ করা খাটের বাজুতে।ওয়ার্ড্রোবে। ঘন নীল পর্দাতে। ইঁয়ু সজা চাঁদ কী ঝলকা মেরে আন্দাজকা রঙ।
    কত যে আশ্চর্য সূক্ষ্ম মোচড় আছে গানটিতে! অদিতি জন্ম থেকে দেখেছে তার মা রবীন্দ্রনাথের গান শোনেন। ভারি ভারি গান। এ পরবাসে। কী ধ্বনি বাজে। রূপে তোমায় ভোলাব না। নজরুলগীতি শোনেন। পরদেশী মেঘ।
    সেও শোনে।তবে সবসময় রবীন্দ্রসঙ্গীত সে নিতে পারে না। রিল্যাক্স করতে গেলে তার পছন্দ গজল। নতুন একটা বাথ সল্ট ঢাললো। নিশান্তকে ফোন করল একবার। দেবরূপের খুঁটিনাটি জিজ্ঞেস করে নিল। কতটা সুস্থ ।কাল থেকে কী রুটিন হবে।দেবরূপের ফ্ল্যাটে বড় আড়ষ্ট কেটেছে সময় আজ।নিশান্ত পেশেন্টের সামনে সবটা হয়তো বলবে না।অদিতি ও নিশান্ত স্কুল মেটস। একটা মেচুওর আন্ডারস্ট্যান্ডিং আছে দুজনের মধ্যে ।সেটা অদিতিকে একটা ভালো সেন্স অব সিকিউরিটি দেয়।সেপারেশনের পরে এই সুদক্ষ চিকিৎসকটি আরো পরিণত হয়েছে। পুরো কনসেনেট্রশন কাজেই দেয়।সে কখনোই নিজের ভেঙে যাওয়া দাম্পত্য নিয়ে ফোঁসফাঁস করে না। অভিযোগ করে না।বড় বেশি চাপা প্রকৃতির।

    বাথটাবে গা ভাসিয়ে বড় করে একটা নিঃশ্বাস ।গজলের সুর দরজা টপকে স্নানঘরে চলে আসার ফলে গোটা স্নান একটা পেলব সুরেলা অভিজ্ঞতা হয়ে যায় । দেবরূপ সাধারনত এ সময়ে একটা ফোন করে। অদিতি ঠিকঠাক ফিরেছে কিনা জেনে নেয়। আজ ফোন আসছে না।বাদামি ত্বকে একটা কফি স্ক্রাব ঘষতে ঘষতে অদিতির কান রয়েছে ফোনের দিকে।না।কোনো কল নেই।কানের লতির পেছনে ভালো করে লুফাটা ঘষতে ঘষতে অদিতি ভাবার চেষ্টা করলো, হোয়াই ডিড শী ফল ইন লাভ উইদ দেবরূপ?হোয়াট ওয়জ দ্য কেমিস্ট্রি? বাথটাব ভরে গেছে সুগন্ধি ফেনাতে।মোস্ট প্রবাবলি বিকজ অব দিস। অনেক বাঙালি ছেলের সঙ্গে পরিচয়, বন্ধুত্ব হয়েছে অদিতির। ও শিওর, তাদের মধ্যে শতকরা নিরানব্বই জন ওকে বলবে যে এদেশে মাইগ্রান্ট লেবার নিয়ে যারা ডকু বানায় , তারা সিউডো। তাদের কেউ কস্মিনকালেও কলতলায় স্নান করেনি।বা পুকুরে। তারা লেবারদের নিয়ে ছবি বানিয়ে বাথটাবে বসে ওয়াইন খায়।অল বোগাস। বাঙালি ইন্টেলেকচুয়াল ছেলেরা এইরকম কথা বলে।ইনস্টিটিউটে দেখেছে। দেবরূপ ওরকম নয়।ও সিরিয়াস।সংযত। অদিতির কী দোষ দ্যাট শী বিলংগস টু আ ওয়েল টু ডু ফ্যামিলি? দেবরূপ টিপিক্যাল ইন্টেলেকচুয়াল কথাবার্তা বলে না।সেটাই ওর ভালো লেগেছিল।

    কী ভয়ানক রিস্ক নিয়েছে সে এবং নিশান্ত।দেবরূপকে হসপিটালে নেয়নি নিজেদের দায়িত্বে।নার্সিংহোমে নেয়নি।পুরো চিকিৎসা চলেছে হোম আইসোলেশনে। যদি কিছু খারাপ হত! সমস্ত ব্লেম আসত তাদের ওপর। টেনশন ছিল এতো যে তখন এটা ভাবেনি। এখন এই চিন্তাটা ফিরে আসছে।কী বলত সে দেবরূপের পরিবারকে? নিজেকে?বাট নিশান্ত ওয়জ প্রেটি কনফিডেন্ট।অদিতি অবাক হয়ে গেছে ওর'গাটস দেখে।কী অবলীলায় ডিসিশন নিল!দেবরূপ অকারণে ট্যানট্রাম থ্রো করছে।অদিতি ভেবেছিল সেক্সুয়াল ইন্টিমেসির পরে দুটি তরুণ তরুণীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির জায়গা কম থাকে। এখন বুঝতে পারছে শী ওয়জ রং। মাইন্ড হ্যাজ ইটস ওন টার্ন। অ্যান্ড বডি ইটস ওন।মিলতেও পারে।নাও পারে।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাদামি ত্বকের মেয়ে উঠে এলো বাথটাব থেকে। ঠিক তার বাবার প্রতিমূর্তি । কোনো প্রাচীন দেবী।

    যতই মুড খারাপ থাক, একটা চমৎকার স্নান, ফ্রেশ পোশাক, ঢুলুঢুলু গজল মুড আপলিফ্টের জন্য যথেষ্ট আরামদায়ক । অদিতি সাদা রাতপোশাক ব্যবহার করে।অন্য কোনো রঙ পরলে ওর ঘুম আসবে না। ডিও স্প্রে করে ডাইনিং টেবিলে বসল। পরোটা আছে। শুকনো চিকেন।আর ডাল। ছোট ছোট পরোটা বানিয়েছে সুনিধি। শী লাভস টু কুক।লাইক মম। খুব বেছেবুছে সুন্দর রান্না করে।

    ল্যান্ডিংএ শব্দ হল।অচ্যুত এসে দাঁড়িয়েছেন।পেছনে একটা মস্ত পেইন্টিং ।বাই সতীশ কক্কর।ওরিজিনাল।পিতলের পাত্রে গাছ।অচ্যুত বেশ লম্বা মানুষ। কালো গায়ের রঙ।উজ্জ্বল চেহারা। অদিতির মনে হয় কোনো এক প্রাচীন দেবতা ল্যান্ডিং এ দাঁড়িয়ে কথা বলছেন তার সঙ্গে ।

    - নিচে এসো না বাবা।দো আই হ্যাভ টেকন বাথ।
    - ইজ দেবরূপ টোট্যালি কিউরড?আজ একটু বেটার পেলে?
    - ইয়াপ। অলমোস্ট। উইক আছে একটু।
    - ডু টেক কেয়ার অব ইওরসেল্ফ বাবলস। অ্যান্ড ডু স্টে অ্যাট হোম।ফর সাম ডেজ। প্লিজ।
    অদিতির ডাক নাম বাবলস। সুনিধির বার্বি। কিন্তু অদিতি ওকে সুনি বলে ডাকে।
    চিকেন খুব ভালো হয়েছে। সুনিধি বাবার পাশে দাঁড়িয়ে ।ওর টিকোলো নাকের ওপর চশমার ফ্রেম ঝকঝক করছে।
    ইফ ইউ ওয়ান্ট সাম সুইট , দই আছে ফ্রিজে ।ইউ টিউব দেখে মিষ্টি দই বানিয়েছে সুনি।

    সে জানে ।কিছুদিন বাড়িতে থাকতে পারলে ভালো। খুব চাপ যাচ্ছে।
    অচ্যুত উঠে গেলেন। সুনিধিও।ইচ্ছে থাকলেও এখন আড্ডা মারার শক্তি নেই। অচ্যুত দরজা বন্ধ করলেন স্টাডিতে ঢুকে।
    অদিতি পরোটা ছিঁড়ছিল। অচ্যুত আর মুমতাজের একটা মারকাটারি প্রেমের ইতিহাস আছে। ও মাঝেমাঝেই মুড ভালো থাকলে বাবাকে জিজ্ঞেস করে, ডিড ইউ ফলো মণিরত্নমস বম্বে ইন ইওর লাইফ অর ডিড মণিরত্নম ফলো ইওর লাইফস্টোরি ইন বম্বে?
    দুজনেই বম্বেতে তখন। অচ্যুত সদ্য বম্বে হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করছেন।মুমতাজের বাবা এসেছিলেন প্রপার্টি কেস নিয়ে । শাহাদাত ফজিল খান। মুম্বাই তখন বম্বে। ফজিল খান শাস্ত্রীয় সঙ্গীতসাধক। মুর্শিদাবাদে দাউদ খানের ছাত্র। বম্বেতে বেশকিছু প্লেব্যাক গাইবার সুযোগ হয়েছিল। তারপর আরো অনেক ছবিতে সেমিক্ল্যাসিকাল গান গেয়েছেন।সঙ্গে ছিল টেলরিং বিজনেস। নিজের মিউজিক স্টুডিও করেছেন ।মুমতাজের মা শাহনাজ পাক্কা বোম্বাইয়া। শাহনাজকে বিয়ে করে বম্বেতেই সেটল করেছিলেন ফজিল খান।মুমতাজরা চার ভাই বোন।
    তরুণ অচ্যুত ওদের বাড়িতে যেতেন কেসের ব্যাপারে।ফজিল মিউজিক স্টুডিও কিনেছিলেন এক জালি ব্রোকারের থ্রুতে। ল্যান্ড নিয়ে ডিসপিউট ছিল।শাহনাজের বাবা ছিলেন বলে ফজিলের বম্বেতে সেটল করা সহজ হয়ে যায় ।সেই ফজিল খানের কন্যা মুমতাজ অচ্যুতকে চা দিতে এসেছিল ড্রয়িং রুমে। টেবিলে পাতা ছিল গোলাপি ক্রুশের টেবিলক্লথ ।চাঁদও বোধহয় উঠেছিল গগনে।
    তারপর একটা তুমুল প্রেম।ততোধিক তুমুল পারিবারিক আপত্তি সত্ত্বেও বিবাহ।
    আইন কানুন নখদর্পণে। তাই অচ্যুত স্টেডি ছিলেন।
    তাঁর পরিবারের আপত্তি তো ছিলই।পরবর্তীতে ঝামেলা এড়াতে সোজা পুণেতে এসে প্র্যাকটিস শুরু করেন।দুই পরিবার থেকেই দূরে।
    অদিতি অ্যাডোরস হিম।
    আর এই গাধা দেবরূপ এতদিনেও বাড়িতে কিছু বলতে পারল না। নিনকমপুপ কোথাকার।
    মাস্ট হ্যাভ লার্নট সামথিং ফ্রম অচ্যুত।কী করে ডেয়ারিং হতে হয়।কী করে নিজের মতকে প্রতিষ্ঠা দিতে হয়।ইনস্পাইট অব অল অডস।
    ডাইনিং টেবিলের সামনেই মুমতাজের কিশোরী কালের একটি সাদা কালো ছবি।অদিতি মামাবাড়িতে খুব কম গেছে।কিন্তু মুম্বাইতে ঐ কাঠের সিঁড়িওয়ালা বাড়িটা ওর খুব পছন্দ ছিল।একতলাতে টেলাররা বসে সেলাই করত মেশিনে
    বারান্দা জুড়ে ছিট কাপড়ের পিস।অদিতির পুতুলের জন্যই যেন।সবুজ একটা মিনে করা দরজা দিয়ে ঢুকে একটা উঠোন। উঠোনের মধ্যে মস্ত একটা চৌবাচ্চা।চারপাশে বেশকিছু গাছ।নানারকম পাম। ডালিম ছিল একটা। বাড়ির ভেতরে এত অলিগলি যে ছোট বাবলস কিছুতেই তার মা' কে খুঁজে পেত না।কাঠের রেলিং দেওয়া একটা বারান্দাতে মুখ বার করে বসে খট খট করে সেলাই মেশিন চলতে দেখত।কাবাবের গন্ধ উঠত বিকেলের দিকে।
    অদিতির খুব ইচ্ছে ঐ বাড়িটাকে নিয়ে একটা ডকুমেন্টারি বানায়।রেমিনিসেস অফ ওল্ড বম্বে ।কে জানে কখনো হবে কীনা!
    আপাতত চিকেনের হাড় চিবাতে চিবাতে সে ভাবে কতখানি ভালবাসা থাকলে ঐ বাড়ি, চিরকালের চেনা পরিবেশ ছেড়ে বেরিয়ে আসা যায় । মুমতাজ পেরেছিলেন। সে? সে কী পারবে? না। অদিতির বেস ক্যাম্প এই বাড়িটা। এ সুরক্ষিত না থাকলে সে কোনো অভিযানেই যেতে পারবে না।দেবরূপের সঙ্গেও নয়।

    সিংকে বাসন নামিয়ে রাখল অদিতি ।জল দিয়ে রাখল।সকালে ধোবে।
    খুব ক্লান্ত লাগছে ওর। আজ আর ফোন আসবে না দেবরূপের। অদিতি গিভস আপ।
    ধপাস করে বিছানাতে শুয়ে ফোনটা হাতে তুলে নিল ও। একটা কল করা দরকার।একটু হাল্কা হওয়া । রিলিজ করা নিজেকে। এই একটা ফোনই ওকে শক্তি দেয় অনেকটা। অনেকটা।নিজেকে মেলে দেওয়া দরকার তার সামনে।গোটানো কার্পেট যেমন রোল করা থাকলে গন্ধ হয়।

    দুর্গন্ধযুক্ত আত্মা। মালিন্যময়।
    খুলে দিচ্ছে কার্পেট।রোল গড়িয়ে যাচ্ছে অকাতরে।হাওয়া বাতাস লাগুক।
    পাকিজাতে মীনা কুমারীর পায়ের সামনে লাল পারসিক কার্পেট খুলে যাচ্ছিল ।ছোট ছোট কোমল পা পড়ছিল সেই বহুমূল্য কার্পেটে। সেটা অবশ্য ছিল বিষাক্ত কার্পেট। কদর্য কামনার কার্পেট।
    আত্মিক দমবন্ধ ছিল।হু সেইড? রবার্ট ব্রাউনিং। মা আবৃত্তি করেন। কতদিন মা বাড়িতে নেই।থাকলে বোঝা যায় কী গভীর তাঁর উপস্থিতি ।
    মাই সোল স্মুদড ইটসেল্ফ আউট।আ লঙ ক্র্যাম্প্ড সোল।ফ্রেশনিং অ্যান্ড ফ্লাটারিঙ ইন দ্য উইন্ড।

    টাচস্ক্রিন। টক টক টক টক।
    হ্যালো মা!

    রাতে ছটফট করতে করতে একটা স্বপ্ন দেখেছিল।পঙ্গপাল। লক্ষ লক্ষ পঙ্গপাল উড়ে আসছে। শস্যদানা শেষ হয়ে যাচ্ছে। খেতখামার সব শেষ।গাছের গুঁড়িতে থিকথিক করছে পঙ্গপাল। আকাশ কালো করে উড়ে আসছে সব।
    একটা বিশাল আকৃতির লোক পিছন ফিরে শুধু হাইড্রোক্সিক্লোরোকূইন উইদ অ্যাজিথ্রোমাইসিন বলে চিৎকার করছে। সাপ্লাই মোর। ইট ওয়র্কস। স্বপ্নে অদিতি লোকটার পিঠে টোকা দিতেই সে ঘুরে তাকালো।
    সে লোকটা ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্রী হাসল তার দিকে চেয়ে ।
    টুইট।টুইট।টুইট।বিশ্বে তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ছে।
    ঘুমের মধ্যে ছটফটিয়ে উঠল বাবলস্। পাশে হাতড়ে দেখল কেউ নেই।(চলছে)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৩০৩৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৯:৫৭97246
  • পড়ছি 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন