এই লেখাটা খুবই ভালো লাগছে। বাস্তবআশ্রয়ী। নিখুঁত ছবি। পুরোটা একসঙ্গে করে বই হলে ভালো হয়।
এক অভিনব অভূতপূর্ব পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলেছে আজকের পৃথিবী। প্রায় রাতারাতি বদলে যাচ্ছে জীবন এবং তার আনুষঙ্গিক নিয়মকানুন অভ্যেস আর তৈরি হয়ে উঠছে এক অন্য জগৎ অন্য পরিবেশ নতুন আচার বিচার। এই অবস্থান্তরের ছবি এঁকেছেন অনুরাধা কুন্ডা তাঁর উপন্যাস 'করোনাকালীন' এ। আজকের বর্তমান কে পরবর্তীর জন্য সঞ্চিত করার এক অসামান্য প্রয়াস এই লেখাটি। সমাজের বিভিন্ন স্তরকে পরতে পরতে খুলে ধরেছেন পাঠকের কাছে এবং বাধ্য করেছেন তাদের সেই বিভিন্ন স্তরের মধ্যে কোথাও নিজেকে খুঁজে পেতে। কখনো কলকাতায় তো কখনো পুনে বা কেরালায়, কখনো উচ্চবিত্তের ফ্ল্যাটে তো কখনো শহরের বস্তিতে, কখনো ত্রিদিব মালবিকার সম্পর্কে তো কখনো শ্যামা সুখনের, রাস্তায় মৃত্যু হওয়া শ্রমিক বা নার্সিং হোমে মালবিকার মায়ের মৃত্যুর মধ্যে অনায়াসে ঘুরেছি আর চমকে উঠেছি কখনো কখনো চেনা চেহারা বা পরিস্থিতি দেখে। অবাক হয়েছি কিভাবে শরীরের অসুখ পৌঁছে গেছে মননে। উপন্যাসটি এই সময়ের এক প্রামাণিক দলিল হয়ে থাকবে। অনুরাধা যে মনোযোগ সহকারে গল্পের মধ্যে সমসাময়িক বিভিন্ন তথ্য মিশিয়েছেন তা যেকোনো প্রশংসার দাবিদার। দেশে অসুখের সূচনা, ঠিক অথবা ভুলভাবে তার মোকাবিলা করা, অন্য প্রদেশে কর্মরত শ্রমিকদের পদব্রজে ঘরে ফেরার চেষ্টা, অসুখটির বৈজ্ঞানিক পরিচয় এবং সেটিকে ঘিরে নানা মুনির নানা মত এই সমস্ত তথ্য লেখক পরিবেশন করেছেন গল্পকথায় মিশিয়ে। আমার কাছে এইটি একটি বড় প্রাপ্তি এই উপন্যাস থেকে। আশা করছি প্রকাশকালে অনুচ্ছেদ ও পরিচ্ছেদের দিকে আরেকটু নজর পড়বে। ধারাবাহিকে একটু অসুবিধা হয়েছিল পড়তে। অনুরাধা কুন্ডা কবি,গল্পকার, নাট্যকার, নাট্য ও চিত্রপরিচালক ও আরও বিভিন্ন পরিচয়ের অধিকারী। এই পরিচয় তালিকায় যোগ হচ্ছে ঔপন্যাসিক। 'করোনাকালীন' শেষে অপেক্ষায় আছি তার উত্তরকথার।