এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • আশুরা, আলী, মু'আবিয়া, হুসাইন, শিয়া সম্প্রদায় ও উমাইয়া রাজবংশের উত্থানের ইতিহাস

    Sumit Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৯ আগস্ট ২০২০ | ৪০৬৯ বার পঠিত
  • মুসলিমদের পবিত্র দিন আশুরা

    এই বছরের ২৮ ও ২৯শে আগস্ট মুসলিমদের, বিশেষ করে শিয়া মুসলিমদের অন্যতম ধর্মীয় পবিত্র দিবস আশুরা উদযাপিত হচ্ছে। ইসলামিক পঞ্জিকা অনুযায়ী মুহররম এর দশম দিনকে আশুরা বলা হয়। সুন্নি মতানুযায়ী ইহুদীরা মুসার বিজয়ের স্মরণে আশুরার সাওম বা রোজা পালন করত। তবে শিয়া মত আশুরার পূর্ব ইতিহাসকে প্রত্যাখ্যান করে এবং তারা আশুরাকে কারবালার বিষাদময় ঘটনার স্মরণে পালন করে। এই দিনটি শিয়া মুসলমানদের দ্বারা বেশ আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা হয়ে থাকে। এ উপলক্ষে তারা বিভিন্ন ধরনের মিছিল, মাতম ও শোকানুষ্ঠান আয়োজন করে। তবে একটি ক্ষুদ্র অংশ তদবীর পালন করে থাকে। পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, ইরাক, লেবানন ও বাহরাইনের শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলোতে এসব অনুষ্ঠান চোখে পড়ার মত।

    অনেক কারণেই মুসলিমদের কাছে আশুরা গুরুত্বপূর্ণ। জনপ্রিয় ধারণায়, আশুরা মূলত একটি শোকাবহ দিন কেননা এদিন নবী মুহাম্মদ-এর দৌহিত্র হুসাইন ইবনে আলী নির্মমভাবে শহীদ হয়েছিলেন। কিন্তু সেটা ছাড়াও আরও বিভিন্ন কারণে আশুরাকে উদযাপন করা হয়, যেমন এই দিনে আসমান ও যমিন সৃষ্টি করা হয়েছিল, প্রথম মানুষ আদম-কে সৃষ্টি করা হয়েছিল, আল্লাহ নবীদেরকে স্ব স্ব শত্রুর হাত থেকে আশ্রয় প্রদান করেছেন, নবী মুসা-এর শত্রু ফেরাউনকে নীল নদে ডুবিয়ে দেয়া হয় এই দিনেই, এই দিনেই নূহ-এর কিস্তি ঝড়ের কবল হতে রক্ষা পেয়েছিলো এবং তিনি জুডি পর্বতশৃঙ্গে নোঙ্গর ফেলেছিলেন, এই দিনে দাউদ-এর তাওবা কবুল হয়েছিলো, নমরূদের অগ্নিকুণ্ড থেকে ইব্রাহীম উদ্ধার পেয়েছিলেন; আইয়ুব দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্ত ও সুস্থতা লাভ করেছিলেন; এদিনে আল্লাহ তা'আলা ঈসা-কে ঊর্ধ্বাকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন। এভাবে অনেক মুসলিমই তাদের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলিকে এই দিনের সাথে সম্পর্কিত করেছে। আবার, প্রচলিত আছে যে এই তারিখেই কেয়ামত সংঘটিত হবে। যাই হোক, এত এত কারণের মধ্যে কারবালায় হুসাইনের শাহাদাত বরনের জন্যই এই দিনটা মুসলিমদের নিকট সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে তাই আজ আশুরা উপলক্ষে সেই ইতিহাস নিয়েই দুচারটে কথা লিখতে যাচ্ছি। ইতিহাসের এই ভারশনটি রিভিশনিস্ট স্কুলের না, এখানে আধুনিক লিঙ্গুইস্টিক্স, আর্কিওলজির দ্বারা প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ইতিহাস রচনা করা হচ্ছে না, বরং ইসলামিক স্কলারদের দ্বারা রচিত ও সমর্থিত ইতিহাসকেই তুলে ধরা হচ্ছে, তাদের রচনা থেকেই তথ্যসমূহ নেয়া হচ্ছে। এদের দেয়া তথ্য অনুসারেই ইসলামের সূচনাপর্বে যে একাধিক স্বার্থান্বেষী পক্ষের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব মুর্ত হয়ে উঠেছিল, যাদের সংঘাতের ফলাফলই পরবর্তী ইসলাম ও সমস্ত পৃথিবীর ভবিষ্যৎকে কয়েক শতকব্যাপী নির্ধারণ করেছিল সেই বিষয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

    মুহাম্মাদের মৃত্যুর পর বকর, উমার ও উসমান

    আবু বকর ছিলেন মুহাম্মাদের অন্যতম পুরানাে সমর্থক ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু। মুহাম্মাদের অন্তিম অসুস্থ জীবনের সময় ইনিই নামাজের ইমামতি করতেন। আল-মদীনায় বহু মুসলিম নেতার উপস্থিতিতে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের ৮ জুন মুহাম্মাদের উত্তরাধিকারী হিসেবে আবুবকরের নাম স্থির হয়। এরপর থেকে তিনিই মুহাম্মাদের সমস্ত দায়িত্ব পালন করতেন, আর বিনিময়ে পয়গাম্বরি-বিষয়ক ব্যাপারগুলি বাদে মুহাম্মাদ যেসব (ক্ষমতাসম্পর্কিত) সুবিধাদি ভােগ করতেন, তিনিও তা পাওয়ার অধিকারী ছিলেন।

    আবু বকরের পর নিয়মমাফিকই মুহাম্মাদের উত্তরাধিকারী হবার কথা ছিল উমারের। আবু-বকরই তাকে উত্তরাধিকারী ঘােষণা করে দেন। দ্বিতীয় খলিফা হিসেবে (৬৩৪-৪৪) তিনিই প্রথম মুসলিম সেনাবাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ বা সেনাপ্রধান হিসেবে ‘আমির-আল মু'মিনিন' (অর্থাৎ মুসলিম ধর্মবিশ্বাসীদের নায়ক) উপাধিতে ভূষিত হন। মৃত্যুর আগে উমার ‘আল-শূরা' নামে ৬ সদস্যের এক পর্ষদ মনােনীত করে যান যাদের দায়িত্ব ছিল পরবর্তী খলিফা বাছাই করার [১]। উমারের এই পর্ষদ গঠনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল যাতে তার মৃত্যুর পর তার পুত্র জোর করে খলিফা হয়ে যেতে না পারেন, উমার এর বিরোধী ছিলেন। এমনভাবে পর্ষদ মনোনীত করেছিলেন যাতে তার পুত্র জোর করে খলিফা হয়ে যেতে না পারেন, তিনি তার বিরােধী ছিলেন। সাবেক আরবে এইভাবেই উপজাতি প্রধান বাছাই করা হত। উমারের পর্ষদ এরই অনুকরণে ছিল। উমার এক বিশাল মুসলিম সাম্রাজ্যের অধিপতি হবার গৌরব অর্জন করেছিলেন, যার আমলে রাষ্ট্রীয় নথিভুক্তিকরণ চালু হয়, যিনি প্রথম সুসংগঠিত মুসলিম প্রশাসন উপহার দেন, কিন্তু উমারের মৃত্যু হয় আচমকাই। ৬৪৪ খ্রিস্টাব্দের ৩ নভেম্বর এক খ্রিস্টান পারসি ক্রীতদাস বিষমাখানাে ছুরি দিয়ে তাকে হত্যা করে। [২] হত্যার সময় তিনি নামাযের জামাআতে উপস্থিত ছিলেন। সাম্রাজ্য-আধপতি হিসেবে উমার যখন সবে বিখ্যাত হয়ে উঠছিলেন তখনই তিনি খুন হন।

    তৃতীয় খলিফা নির্বাচন হয় প্রাচীনত্বের ভিত্তিতে, তাই আলীর দাবিকে ছাপিয়ে উসমানই হয়ে যান খলিফা। উসমানের আমলেই ইরান, আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়ার কিছু অংশ মুসলিম সাম্রাজ্যের দখলে আসে। উসমান ভাল মানুষ ছিলেন, তবে তার লােভী আত্মীয়পরিজনকে বাধা দেওয়ার মতাে দৃঢ়তা তার ছিল না। এর কিছু উদাহরণ দেয়া যাক। তার বৈমাত্রেয় ভাই আবদুল্লাহ মুহাম্মাদের শ্রুতিলেখক ছিলেন, তিনি কুরআনের 'রহস্য উদঘাটন' পর্বের পাণ্ডুলিপি বিকৃত করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। [৩] আবার উসমানের সৎভাই আল-ওয়ালীদ ইবন-উকবাহ্ এর সাথে মুহাম্মদের সম্পর্ক ভাল ছিল না, তাকে বেশিরভাগই পছন্দও করত না, কিন্তু উসমান তাকেই আল-কূফার (বর্তমান ইরাকে অবস্থিত) রাজ্যপাল নিযুক্ত করেন। উসমানের খুরতুতো বা চাচাতো ভাই মারওয়ান ইব্ন‌-আল-হাকামের নামেও দোষ ছিল, তাকেও উসমান ‘দিওয়ান’ বিভাগের দায়িত্বে নিযুক্ত করেন। এছাড়া মাত্রাহীন স্বজনপােষণ করে উমাইয়া বংশের অনেককে তিনি গুরুত্বপূর্ণ রাজপদে নিযুক্ত করেন। [৪] এছাড়া খলিফা নিজেও রাজ্যপালদের অথবা তাদের কর্মচারীদের উপহার গ্রহণ করতেন। স্বজনপােষণের অভিযোগ ক্রমেই বাড়তে থাকে, প্রশাসনের বিরুদ্ধে জনরােষ বাড়ছিল দিন দিন।

    কুরাইশপন্থি তিনজন - আলী, তালহা এবং আল-যুবাইর উসমানের উত্তরাধিকারের দাবিদার হয়ে ওঠেন। আলীর অনুগামীরা আল-কূফায় বিদ্রোহ করেন। এই বিদ্রোহের বহর দেখে ভালই বোঝা যাচ্ছিল যে, মিশরে যে তার অনুগামীর সংখ্যা বেশ ভালই ছিল। মিশর থেকে ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিলে ৫০০ বিদ্রোহীকে আল-মদীনায় পাঠানো হয়। বিদ্রোহীরা শহরের বিশিষ্ট অশীতিপর বৃদ্ধ খলিফাকে একটি বাড়িতে আটক করে রাখে। এরপর যখন উসমান ওই বাড়িতে কুরআন পাঠে রত ছিলেন, তখনই বাড়িটিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়, তিনি তখন কুরআন পড়ছিলেন, ঐতিহাসিকদের বর্ণনায় তার রক্তের দাগযুক্ত আল-বাসরার মসজিদে সুরক্ষিত ছিল। [৫] বিদ্রোহীরা যখন তার গৃহে প্রবেশ করছিল তখন উসমানের স্ত্রী নাইলা তাদেরকে বাধা দেয়, এতে নাইলার আঙ্গুল কাটা যায়। আবুবকরের পুত্র মুহাম্মাদ বলপূর্বক তার ঘরে ঢুকে তাকে হত্যা করেন, ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জুন তিনি মারা যান। [৬]

    ক্ষমতায় আলী, প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে দ্বন্দ্ব ও আপস রফা

    ৬৫৬ সালের এই ঘটনার পর ইসলামী সাম্রাজ্যের অখণ্ডতা ভেঙ্গে পড়ে। আলী, তালহা ও আল-যুবাইরের মধ্যে রক্ষক্ষয়ী সংঘাত শুরু হয়। আর এই লড়াইতে যুক্ত হন মু'আবিয়া আরেক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জুন আল-মদীনায় মুহাম্মাদের মসজিদে চতুর্থ খলিফা হিসেবে আলীর নাম ঘােষিত হয়। কার্যত সমগ্র মুসলিম দুনিয়া তার উত্তরাধিকারত্বের স্বীকৃতি জানায়। আলী ছিলেন মুহাম্মাদের খুড়তুতাে ভাই। আবার আলীই মুহাম্মাদের কন্যা ফাতিমাকে বিবাহ করেছিলেন। হাসান এবং হুসাইন ছিলেন আলীর পুত্র। আলীর অনুগামীরা দৃঢ়ভাবে এটা মনে করত যে, মুসলিম সাম্রাজ্যের গােড়াপত্তনের দিন থেকেই আল্লাহ এবং তার পয়গম্বর আগাগােড়া আলীকেই তাদের প্রতিনিধি হিসেবে খলিফার আসনে দেখতে চেয়েছেন, কিন্তু প্রথম তিনজন খলিফা তার সঙ্গে প্রতারণা করে তাকে সিংহাসন থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। [৭]

    আলীর প্রথম সমস্যা ছিল তার দুই প্রতিদ্বন্দ্বীদের দাবির মীমাংসা করা। মক্কাভিত্তিক দলের তাল্হা‌ এবং যুবাইর ছিলেন তার সিংহাসনের অন্যতম দাবিদার। দুজনেরই আল-হিজাজ এবং আল-ইরাকে প্রচুর অনুগামী ছিলেন, যারা আলীকে খলিফা হিসেবে মেনে নিতে রাজি হননি (আল-যুবাইরের মা ছিলেন মুহাম্মাদের বাবার বােন)। মুহাম্মাদের প্রিয়তমা স্ত্রী আয়িশা, যিনি মুসলিমদের কাছে মায়ের সম্মান পেতেন, তিনি উসমানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ উপেক্ষা করেছিলেন। সেই আয়িশাও শেষ পর্যন্ত আল-বাসরায় আলী-বিরােধী বিদ্রোহে শামিল হন। যৌবনােচ্ছল আয়িশা এত অল্প বয়সে বিবাহ করেছিলেন যে বিবাহের সময় পিতৃগৃহ (আবুবকর) থেকে প্রচুর পুতুল সঙ্গে করে এনেছিলেন, (ইব্‌ন হিশামের মতে ৯ বছর বয়সে)। [৮] তিনি আলীকে অপছন্দ করতেন। একটি ঘটনায় তার গর্ব গভীরভাবে আহত হয়। একবার আয়িশা স্বামীর কাফেলায় যাওয়ার সময় তিনি পথিমধ্যে আলস্যে কালক্ষেপ করেছিলেন। এর ফলে তার সতীত্ব নিয়ে সন্দেহ পােষণ করা হয়। স্বয়ং আল্লাহ্ প্রত্যাদেশ (সূরাহ্ ২৪ : ১১-২০) মারফত হস্তক্ষেপ করে আয়িশার পক্ষ অবলম্বন করেন সেবার।

    আল-বাসরার উপকণ্ঠে ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর আলী তার বিদ্রোহীদের মুখােমুখি হয়ে বিখ্যাত ‘উটের যুদ্ধে’ তাদের পরাস্ত করেন। ওই যুদ্ধের সময় আয়িশাও একটি উটের পিঠে বসে বিদ্রোহী বাহিনীর শৃঙ্খলা রক্ষা করেছিলেন। যাই হােক, আলীর দুই প্রতিদ্বন্দ্বীই পরাস্ত হন এবং মৃত্যুবরণ করেন। আলী কিন্তু তাদের জন্য যথার্থ শােকজ্ঞাপন করেই সম্মানের সঙ্গে তাদের দেহ সমাহিত করেন। (আল-যুবাইরের স্মৃতিসৌধের পাশে তার নামে এক শহর গড়ে ওঠে)। আয়িশাকে বন্দী করা হয়। বন্দী করা হলেও তার সঙ্গে সুব্যবহার করা হয়, যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে আয়িশাকে মদীনায় ফেরত পাঠানাে হয়। এভাবে মুসলিম বনাম মুসলিমদের প্রথম যুদ্ধের অবসান হয়।

    যুদ্ধে জয়ী হয়ে সিংহাসনে সুনিশ্চিতভাবে বসে আলী নতুন রাজধানী আল-কূফা থেকে শাসন পরিচালনা শুরু করেন। প্রথমেই তিনি পূর্বসুরিদের নিযুক্ত অধিকাংশ প্রাদেশিক রাজ্যপালকেই সরিয়ে শূন্যপদে বসান অনুগতদের। বাকিদের থেকে তিনি পূর্ণ আনুগত্য দাবি করেন। এমনই এক রাজ্যপাল ছিলেন সিরিয়ার রাজ্যপাল মু'আবিয়া ইবন আবি-সুফয়ান। তার সঙ্গে প্রাক্তন খলিফা উসমানের আত্মীয়তা ছিল, সেজন্য আলী তাকে হুমকি মনে করে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেন। তখন মু'আবিয়া বিদ্রোহীদের সামনে খুন হওয়া উসমানের রক্তমাখা জামা এবং বাধা দিতে আসা তার স্ত্রী নাইলার কর্তিত আঙুল প্রদর্শন করেন। [৯] এভাবে বাগ্মিতার দ্বারা তিনি মুসলিম আবেগকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে আলীর অনুগত প্রমাণ করেন। কিন্তু মু'আবিয়া নিজে আলীকে খলিফা হিসেবে মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। তিনি আলীকে কোণঠাসা করতে এক নতুন প্রস্তাব তোলেন, যা ছিল আলীর জন্য উভয় সংকটের। আলীকে তিনি বলেন, হয় পয়গম্বরের উত্তরসূরিদের যারা হত্যা করেছে সেই গুপ্তঘাতকদের হাজির করুন অথবা দুষ্কর্মে সহযােগিতার দায়ভাগ স্বীকার করে নিন। উসমানের হত্যাকারীদের নাম সামনে আসলে আলীর নামও এসে যাবে তাতে তিনি খলিফা হিসেবে অযোগ্য প্রমাণিত হবেন, আবার দুষ্কর্মে সহযোগিতার দায়ভাগ স্বীকার করলেও সেই অযোগ্যই প্রমাণিত হবেন। আলীর সঙ্গে তার বিরােধের কারণ অনেকটাই ছিল ব্যক্তিগত, পারিবারিক। তবে এর একটা রাজনৈতিক দিকও ছিল। ইসলামি সাম্রাজ্যে নিয়ামকের ভূমিকা কোন প্রদেশ পালন করবে - আল-কূফা, দামাস্কাস, আল-ইরাক না সিরিয়া - এই প্রশ্নটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে আলী খলিফা হয়েই আল মদীনা ছেড়ে চলে যান। তিনি কখনোই আর মদীনা সফরেও আসেননি, তাই আল-মদীনা ইতিমধ্যেই প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে গিয়েছিল। পরবর্তিতে সুদূরপ্রসারিত বিজয় অভিযানের পরিণতিতে সমগ্র মুসলিম সাম্রাজ্যের ভরকেন্দ্র হয়ে পড়ে উত্তরাঞ্চল।

    দ্বন্দ্ব বাড়তে থাকলে এক পর্যায়ে ইউফ্রেটিসের পশ্চিম তীরে আল-রাক্কার দক্ষিণ দিকে সিফফীন সমভূমিতে শেষপর্যন্ত মু'আবিয়া এবং আলীর অনুগামী সৈন্যবাহিনী মুখােমুখি হয়। আলীর সৈন্যদলে ৫০ হাজার ইরাকি ছিল, অন্যদিকে মু'আবিয়ার সৈন্যদলে সিরিয়ার লােকই বেশি ছিল। যুদ্ধ আদৌ জমেনি কারণ কোন পক্ষই চূড়ান্ত নিষ্পত্তি দেখতে আগ্রহী ছিল না। স্রেফ কয়েক সপ্তাহের খণ্ডযুদ্ধ হয়, পরে ৬৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জুলাই চূড়ান্ত যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে মালিক আল-আশতার-এর নেতৃত্বে আলীর সৈন্যবাহিনী প্রায় জয় হাতের মুঠোয় এনেছিলেন। এমন সময় যুদ্ধ বন্ধ করতে মু'আবিয়ার সৈন্যবাহিনীর চতুর সেনানায়ক আমর-ইব্‌ন-আল-আস দুর্দান্ত কৌশলের পথ নিলেন। হঠাৎ যুদ্ধক্ষেত্রে দেখা গেল, সৈন্যরা বল্লমের ফলায় কুরআন ঝুলিয়ে উঁচুতে তা তুলে ধরে চলেছে। এতেই আচমকা দুপক্ষের বিদ্বেষ মুছে গেল, আর আলী মু'আবিয়ার সঙ্গে মীমাংসায় রাজি হয়ে গেলেন। দুই মুসলিম বাহিনীর রক্তক্ষয়ী সংঘাত প্রতিহত হল। ঠিক হল, মীমাংসা হবে আল্লাহর কথা মেনে, তাতে যা ফল হবে তাই মেনে নেয়া হবে।

    আপসসূত্র অনুযায়ী খলিফা তার ব্যক্তিগত প্রতিনিধি আবু-মূসা-আল-আশআরিকে নিযুক্ত করলেন। এই লােকটি সন্দেহাতীতভাবে ধার্মিক ছিলেন, কিন্তু আলীর প্রতি তার কোন পক্ষপাত ছিল না। মু'আবিয়াও এই কাজে নিযুক্ত করলেন সারা আরব দুনিয়ার রাজনৈতিক বিষয়ে অন্যতম প্রতিভাধর ব্যক্তি আমর ইব্‌ন-আল আসকে। [১১] এই লোক ছিলেন আবার মু'আবিয়ার ডান হাত। এরা দুইজন এই কাজের 'হাকাম' বা মধ্যস্থতাকারী হলেন। দুই পক্ষই কাজে নেমে পড়লেন, উভয় পক্ষেই ছিল অন্তত ৪০০ জন করে সাক্ষী। দুই 'হাকাম’ ৬৫৯ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে জনসমাবেশ ডাকলেন। আল-মদীনা এবং দামাস্কাসের মাঝে আযরূহ্‌ নামক জায়গায় এই জনসমাবেশ হয়। এই ঐতিহসিক সম্মেলনে ঠিক কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তা জানা যায়নি। নানা সূত্র থেকে নানারকম তথ্য পাওয়া যায়। [১২] একটি সূত্র থেকে জানা যায়, দুই মীমাংসক (হাকাম) উভয়কেই পদচ্যুত করার আপসে সম্মত হল। এভাবে তারা এমন একজনের প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করেন, যার গুণাগুণ সম্পর্কে তারাই অন্ধকারে ছিলেন। এরপর এই দুই হাকামের মধ্যে বয়ােজ্যৈষ্ঠ, নিরপেক্ষ, ধার্মিক ও আলীর প্রতিনিধি আবু মূসা সম্মেলনে উঠে দাঁড়িয়ে হঠাৎ ঘােষণা করেন যে, তিনি যাকে রিপ্রেজেন্ট করছেন সেই আলীর সিংহাসনে বসার কোন অধিকার নেই। এদিকে স্বাভাবিকভাবেই মু'আবিয়ার প্রতিনিধি ও ডান হাত আমর ইব্‌ন আল আস সেটা করেননি। তিনি রায় দিলেন মু'আবিয়ার সপক্ষে। এই নিয়ে পিয়ার ল্যামেনস [১৩] এবং তার আগে ওয়েলহাউসেন [১৪] যে গবেষণা করেন তাতে দেখা গেছে , ওই সময়কার ইতিহাসের অধিকাংশ তথ্যই পাওয়া গেছে ইরাকি ঐতিহাসিকদের কাছ থেকে। এই ঘরানা আব্বাসীয় রাজবংশের আমলে বিকশিত হয়। আর আব্বাস-বংশীয়রা ছিলেন উমাইয়াদের আজীবন শত্রু। যাই হােক, সেই ঘটনায় আলীই যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, তা বলাই বাহুল্য।

    আপস রফার পর আলী ও মু'আবিয়ার দ্বন্দ্ব

    এই ঘটনার পর মু'আবিয়া তার স্থান সিরিয়ায় ফিরে যান, যেখানে তাকে আমীর উল মোমিনিন পদমর্যাদায় ভূষিত করা হয়। এদিকে আলী মু'আবিয়ার সাথে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন, তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। ইসলামী সাম্রাজ্য স্পষ্ট দুটো অংশে ভাগ হয়ে যায়, মু'আবিয়ার নেতৃত্বে সিরিয়া বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, সাথে যুক্ত হয় মিশরও। মিশরের গভর্নর তখন ছিল উসমানের হত্যাকারী আবুবকর পুত্র মুহাম্মাদ। সেখানে উসমানপন্থীরা মুহাম্মাদের উপর ক্ষিপ্ত ছিল, তারা মু'আবিয়াকে চিঠি লিখে সাহায্যের আবেদন করে, ফলে মু'আবিয়া আমর ইব্‌ন আল আসকে সৈন্য সহকারে পাঠায়, যুদ্ধে মুহাম্মাদের মৃত্যু হয় আর মিশরও মু'আবিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। মিশর মু'আবিয়ার হাতে আসার পর তিনি ইরাকের দিকে হাত বাড়ান, যেখানে আলী বাস করত। তবে তিনি প্রত্যক্ষ যুদ্ধে যাননি, স্ট্র্যাটেজিক হয়ে তিনি আলীর পক্ষের ট্রাইব চিফটেইনদেরকে ঘুষ দিয়ে নিজের পক্ষে নেন, এবং এদেরকে তার এলাকায় লুণ্ঠন চালাতে বলেন। এদিকে মু'আবিয়া আরব অঞ্চলের হেজাজ, নেজাদ, ইমামেন সহ বিভিন্ন অঞ্চলে আক্রমণ করেন। আলী এসবের বিরুদ্ধে শক্তিশালী ব্যবস্থা নিতে পারেন নি, কারণ তাকে 'খারিজী' নামে আরেকটা দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়েছিল।

    মু'আবিয়া সমগ্র খিলাফতের একটি অংশের রাজ্যপাল ছিলেন মাত্র। কিন্তু আলীর মতাে খলিফার সঙ্গে তার নিষ্পত্তি হওয়ায় তার সম্মান বেড়ে আলীর সমান হয়ে যায়। পাশাপাশি আলীর মর্যাদা কিছুটা ক্ষুন্ন হল। রফাকারী বা হাকামরা যে রায় দিলেন তাতে আলী প্রকৃত ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত হন। আপস প্রস্তাবে সম্মত হয়ে আলীর সবদিক দিয়েই লােকসান হয়। এর ফলে তার অনুগামীদের এক বৃহৎ অংশের সহানুভূতি থেকে বঞ্চিত হন তিনি, এই দলটিকে বলা হত ‘খারিজী’ বা 'হারুরিয়া', যার অর্থ বিচ্ছিন্নতাকামী। এরা ছিলেন ইসলাম ধর্মের একেবারে গােড়ার দিককার এক সম্প্রদায়। ক্রমে এরা আলীর ঘৃণ্য শত্রুতে পরিণত হলেন। এরা শ্লোগান তোলেন, "আপস বা মীমাংসা করার মালিক একমাত্র আল্লাহ”। [১৫] প্রায় ৪০০০ খারিজী আবদুল্লাহ্ ই-ওহাব আল-রশিবির নেতৃত্বে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত উঁচুতে তুলে ধরে এই শ্লোগানে সমর্থন জানায় ('শাহরাস্তানি’তে ১২০০০ খারিজী) [১৬]। ৬৫৯ খ্রিস্টাব্দে নাহরাওয়ান খালের তীরে আলী এদের শিবিরে আচমকা হানা দেন। সেই আচমকা হানায় এদের সবাই প্রায় নিহত হন। তবে শেষ হয়েও এরা মুছে যাননি। পরে অন্য নাম নিয়ে ফের মাথাচাড়া দেন। আব্বাসীয় আমল পর্যন্ত এরা ছিলেন খিলাফতের কাটাস্বরূপ।

    ইয়ামেনে মু'আবিয়ার সৈন্যদের দুষ্কর্মের কারণে আলী তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার কাজ শুরু করেন। কিন্তু তিনি আর তা করতে পারেন নি। ৬৬১ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জানুয়ারির আল-কূফায় মসজিদে যাবার সময় বিষমাখানাে তলােয়ার দিয়ে আলীর কপালে সজোরে আঘাত করা হয়। অস্ত্রের আঘাত মস্তিষ্কে পৌঁছয়। ওই তলােয়ারটি তৈরি করেছিলেন আবদ-আল রহমান ই-মুলজাম এক খারিজী যার এক বন্ধুর আত্মীয়স্বজন নাহরাওয়ান আক্রমণে খুন হয়েছিলেন। সেই খুনের প্রতিশােধ নিতেই তিনি এই কাজ করেন। এছাড়া ওই মুলজাম আরেক বড় চক্রান্তেরও অংশীদার ছিলেন। আলী, মু'আবিয়া এবং আমর ইবন-আল-আস - এই তিন নেতার হাত থেকে মুসলিম সমাজকে মুক্ত করতে যে তিনজন কাবায় শপথ নিয়েছিলেন মুলজাম তাদের মধ্যেও ছিলেন। [১৭] আল-কূফার যে নির্জনস্থানে আলীকে সমাহিত করা হয়, বর্তমানে আল-নাজাফের মাশহাদ আলী নামে সুপরিচিত সেই জায়গাটি পরবর্তীকালে ইসলাম ধর্মের, বিশেষ করে শী'আহ সম্প্রদায়ের অন্যতম তীর্থস্থান হিসেবে উন্নীত হয়। এই স্থানটি ৭৯১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত গােপন রাখা হয়েছিল। ওই সালেই হারূন আল-রশীদ অকস্মাৎ তা জানতে পেরে যান। [১৮]

    আলী দিনে দিনে শী'আহ জনগণের কাছে মুসলিম মহাপুরুষ হিসেবে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। শী'আহ্ জনগণের কাছে তিনি বিখ্যাত হন ‘ওয়ালি’ (অর্থাৎ আল্লাহর বন্ধু এবং প্রতিনিধি), যেমন মুহাম্মাদ ছিলেন আল্লাহর বার্তাবাহক এবং ইসলামের পয়গম্বর। জীবিত আলীর চেয়ে মৃত আলীই বেশি ক্ষমতাধর এবং সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠিত হন। জীবদ্দশায় যে সম্মান তিনি হারিয়েছিলেন মৃত্যুর পর তার দ্বিগুণ সম্মান পান আলী। যুদ্ধক্ষেত্রে নির্ভীক, উপদেষ্টা হিসেবে যােগ্য ও জ্ঞানী, ভাষণে পটু, বন্ধুবৎসল, শত্রুর প্রতি সদাশয় এই আলী মুসলিম আভিজাত্য এবং শৌর্যের পরম আদর্শ হয়ে উঠেছিলেন। তাকে নিয়ে বহু কবিতা লেখা হয়। তৈরি হয় কত প্রবাদ, কত ধর্মোপদেশ, কত সত্য কাহিনী। তার প্রিয় তরবারি 'ঘূ-আল-ফাকার’ বদর-এর যুদ্ধক্ষেত্রে মুহাম্মাদ নিজে ব্যবহার করেছিলেন। এই তরবারি সম্পর্কে যে বাক্য প্রচলিত রয়েছে তা মধ্যযুগের বহু আরবীয় তরবারিতে খােদাই করা থাকত। কথাটি এরকম —“কোন তরবারিই ‘ঘূ-আল-ফকর’-এর সমকক্ষ নয়। কোন যােদ্ধাই আলীর সমকক্ষ নয়।" সমগ্র মুসলিম বিশ্বে জ্ঞানী ও সাহসী ব্যক্তি হিসেবে আলী পরিচিত ছিলেন। একাধিক ফিতয়ান ও দরবেশদের সংগঠন তাকে মনে করতেন আদর্শবাদী ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। তার পক্ষভুক্ত লােকেরা তাকে মনে করতেন নিষ্পাপ ও ভ্রান্তিহীন। এমনকী শী'আদের মধ্যে গুলাহ্ (চরমপন্থি) সম্প্রদায় আলীকে মনে করত, আল্লাহর অবতার। আজও আল-নাজাফে তার স্মৃতিসৌধ দেখতে প্রতি বছর অসংখ্য তীর্থযাত্রী যান। তারই পুত্র হুসাইন, যিনি নিকটস্থ কারবালার কাছে শহিদের মৃত্যুবরণ করেন, তার স্মৃতিসৌধ দেখতেও সমান ভিড় হয়। আজও মুহাররামের দশম দিনে সমগ্র শী'আহ দুনিয়া হুসাইনের এই মৃত্যুবরণের ঘটনা পুনরাভিনয় করে তাকে স্মরণ করেন। এরূপ পুনরাভিনয়ের মধ্য দিয়ে শী’আ জগৎ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে যে, জীবনের তুলনায় তার মৃত্যু ত্রাণকর্তা হিসেবে কাজে লেগেছে বেশি।

    মু'আবিয়ার খিলাফত লাভ, উমাইয়া রাজবংশের উদ্ভব, হাসানের ক্ষমতা-ত্যাগ ও মৃত্যু

    ৬৬১ খ্রিস্টাব্দে আলীর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে আবুবকর (৬৩২)-এর হাত ধরে খিলাফতের যে প্রজাতন্ত্রী যুগের সূচনা হয়েছিল তা শেষ হয়। আলীর মৃত্যুর পরেই মু'আবিয়ার সিংহাসন যথাযথ স্বীকৃতি পায়। মু'আবিয়া তার পুত্র ইয়াজিদকে উত্তরাধিকারী ঘােষণা করে যান। এভাবে তিনি এক রাজবংশের পত্তন করেন। উমাইয়া খিলাফত হচ্ছে ইসলামি দুনিয়ার সর্বপ্রথম রাজবংশ (মুলুক)। খলিফা নির্বাচন এবং সেই উৎসব যে জনগণের নেতারা আক্ষরিক অর্থেই যে এই নতুন খলিফাকে স্বীকৃতি দিলেন, তার বর্ণনা ‘বায়আহ’-তে সংরক্ষিত আছে। [১৯] মু'আবিয়া খুব দক্ষ ও বিচক্ষণ রাজা ছিলেন। আভ্যন্তরীন শৃঙ্খলা রক্ষা ও বহির্বিশ্বের সাথে যুদ্ধ উভয় ক্ষেত্রেই তিনি অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আলোচনা এখন করব না।

    যে সমস্ত ঐতিহাসিকের রচনাবলি আমাদের হাতে এসে পৌছেছে তার থেকে জানা যায় যে, নানা দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও মু'আবিয়া, তাদের কাছে গ্রহণযােগ্য হয়ে উঠতে পারেননি। তারা মু'আবিয়াকে ইসলামের প্রথম মালিক (রাজা) বলে মেনে নিয়েছেন, কিন্তু এই উপাধিটা প্রকৃত আরবদের কাছে এতই বিতৃষ্ণার যে তারা এটি শুধুমাত্র কোনােও অ-আরবীয় রাজার ক্ষমতা বােঝাতে ব্যবহার করেন। ঐতিহাসিকদের লেখায় এই রক্ষণশীলদের মতবাদের প্রতিফলন দেখা যায়, যারা মনে করতেন, যে মু'আবিয়া ইসলামকে পার্থিব এবং খিলাফত আল-নুবুআহ (পয়গম্বর সুলভ, অর্থাৎ ধর্মভিত্তিক খিলাফত)-কে একটি মূল বা পার্থিব সার্বভৌম সত্তায় পরিণত করেছেন। [২০] সেই সাথে বলা হয়, মু'আবিয়া অনেক কাজই করেছেন যেগুলো শাস্ত্রসম্মত ছিলনা, একটি উদাহরণ হচ্ছে খলিফার ব্যবহারের জন্য মাকসুরা নির্মাণ, মাকসুরা হল মসজিদের মধ্যে এক ধরনের বাসগৃহ যেটা শুধুমাত্র খলিফা ব্যবহার করতে পারতেন, একজন খলিফার জন্য এটি শাস্ত্রসম্মত নয়। [২১] আব্বাসি আমলে বা শী'আদের প্রভাবে রচিত আরবীয় বর্ষপঞ্জিতে তার ধর্মানুরাগের কঠোর সমালােচনা করা হয়েছে। অবশ্য ইব্‌ন-আসাকিরে সংরক্ষিত সিরিয়ার ঐতিহ্য অনুযায়ী তাকে একজন ভাল মুসলিম বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। উমাইয়া বংশধরদের মধ্যে তিনি ক্ষমাশীলতা, প্রাণপ্রাচুর্য, বিচক্ষণতা ও কূটনৈতিক চাতুর্য ইত্যাদি গুণাবলি সঞ্চারিত করে গেছেন।

    ৬৬০ সালে ইলিয়াতে (জেরুসালেম), মু'আবিয়া নিজেকে আনুষ্ঠানিকভাবে খলিফা হিসেবে ঘােষণা করেছিলেন (তাবারী, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৪, তুলনীয় মাসউদী, ৫খণ্ড, পৃঃ ১৪)। প্রাদেশিক সরকারে তার ক্ষমতাসীন হবার সঙ্গে সঙ্গে দামাস্কাস মুসলিম সাম্রাজ্যের রাজধানীতে পরিণত হয়। অবশ্য সেই সাম্রাজ্যের সীমানা একটি নির্দিষ্ট গণ্ডীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। আমর ইব্‌ন আল আস যখন মু'আবিয়ার সপক্ষে মিশর কেড়ে নিয়েছিলেন, তখন আল-ইরাকে আলী ও ফাতিমার বড় ছেলে আল-হাসানকে আলীর আইনসঙ্গত উত্তরাধিকারী ঘােষণা করা করা হয় (খিলাফতের জন্য)। সুফিয়ানীদের (মু'আবিয়ার বংশ) প্রতিনিধিত্বের প্রতি মক্কা ও আল-মদীনার আনুগত্যে যথেষ্ট দ্বিধা ছিল, কারণ মক্কার পতনের আগে সুফিয়ানরা মুহাম্মদকে স্বীকৃতি দেয়নি। এজন্য এরা মু'আবিয়াকে খলিফা হিসেবে মেনে নিতেও পারেনি। অভিযোগ আছে, সুফিয়ান বংশের লোকেদের মধ্যে ইসলাম ধর্মের প্রতি তাদের আনুগত্য দৃঢ় বিশ্বাসের ভিত্তিতে গড়ে ওঠেনি, তা ছিল নিছকই কিছু সুবিধা লাভের হতিয়ার।

    যাই হোক সিংহাসন নিয়ে আলীর পুত্র আল-হাসানের তেমন আগ্রহ ছিল না, রাজ্য পরিচালনায় তিনি তেমন উৎসাহী ছিলেন না, বরং হারেমেই তার আগ্রহ ছিল বেশি। আলীর মৃত্যুর পর মু'আবিয়া তাকে চিঠি পাঠান, সেখানে লেখা ছিল, “আমি স্বীকার করি যে, তােমার রক্তের সম্পর্কজনিত কারণে আমার পরিবর্তে ওই উচ্চ আসনে বসার ক্ষেত্রে তুমিই অধিকতর যােগ্য। আর আমি যদি রাজকর্তব্য পালনে তােমার দক্ষতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতাম তা হলে বিন্দুমাত্র ইতস্তত না করে তােমার আনুগত্য স্বীকার করে নিতাম, এখন তুমি নিজেকে জিজ্ঞাসা কর, তােমার কি করা উচিত।” চিঠিটির সঙ্গে যুক্ত ছিল মু'আবিয়ার সই করা একটি ফাকা কাগজ এবং তার শূন্যস্থানটি আল-হাসানকে পূরণ করতে হবে। [২২] হাসান মু'আবিয়ার হাতে বাৎসরিক মোটা অর্থের পেনশনের বিনিময়ে মু'আবিয়ার হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিলেন। [২৩] এর মােট পরিমান ছিল কূফা রাজভাণ্ডার থেকে আজীবন ৫ মিলিয়ন বা ৫০ লক্ষ দিরহাম এবং পারস্যের একটি জেলা থেকে আদায় করা রাজস্বের সমষ্টি। [২৪] হারেমের কোন এক ষড়যন্ত্রের পরিণতিতে সম্ভবত বিষপ্রয়ােগে মাত্র ৪৫ বছর বয়সে (৬৬৯) তার মৃত্যু হয়। [২৫] কিন্তু তার আগে আল-হাসানের বিবাহ ও বিবাহ-বিচ্ছেদের সংখ্যা ১০০ তে পৌছেছিল বলে শােনা যায়। এর জন্য তিনি 'মিতলাক’ (মহান বিবাহ-বিচ্ছেদকারী) আখ্যা পেয়েছিলেন। [২৬] এই যড়যন্ত্রের জন্য শী'আরা মু'আবিয়াকেই দায়ী করেন। আর এই ভাবে মারা যাবার ফলে আল-হাসান হলেন একজন শহিদ। তাকে সমস্ত শহিদের ‘সায়্যিদ’ (প্রভু) হিসাবে গণ্য করা হয়।

    ইয়াজিদের রাজত্ব ও হুসাইনের সাথে দ্বন্দ্ব

    ২০ বছর রাজত্বের পর ৬৮০ সালে মু'আবিয়া মৃত্যু বরণ করেন। ক্ষমতায় আসেন তার উত্তরাধিকারী ও পুত্র ইয়াজিদ। হাসানের ছােট ভাই আল-হুসাইন মু'আবিয়ার শাসনকালে আল-মদীনায় অবসর জীবনযাপন করেছিলেন। মু'আবিয়ার মৃত্যু হলে ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে তিনি মু'আবিয়ার পুত্র ইয়াজিদকে স্বীকৃতি দেননি। এদিকে ইরাকীরা আল-হাসান ও আলীর পরে হুসাইনকেই আইনসঙ্গত খলিফা রূপে ঘােষণা করেছিলেন। হুসাইন তাদের জরুরি ও বারংবার আবেদনে সাড়া দেন এবং একটি দুর্বল সেনাদলকে নিয়ে তিনি আল-কূফার উদ্দেশে যাত্রা করেন। মু'আবিয়া তার নিজের সুবিধার জন্যই উবাইদুল্লাহ্‌ এর পিতা জিয়াদকে নিজের ভাই হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। সেই সূত্রে উবাইদুল্লাহ্ ছিল মু'আবিয়ার ভ্রাতুষ্পুত্র, ৬৮০ সালে যখন হুসাইন ইরাকের আল-কূফার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছেন তখন উবাইদুল্লাহ্‌ই ছিলেন আল-ইরাকের উমাইয়া গভর্নর। তিনি আল-ইরাক থেকে আল-হিজাজ পর্যন্ত সমস্ত রাস্তার ওপর ফাঁড়ি তৈরি করেছিলেন। ৬৮০ সালের ১০ অক্টোবর মুহাররামের দশম দিনে বিখ্যাত সেনাপতি সা’দ-ইবন-আবি ওয়াক্কাসের পুত্র উমার আল-কূফার ২৫ মাইল উত্তর-পশ্চিমে কারবালা প্রান্তরে ৪০০ সৈন্য নিয়ে আল-হুসাইন ও তার ২০০ সৈন্যকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেন। আল-হুসাইন আত্মসমর্পণ করতে না-চাইলে তাদের হত্যা করা হয়। এভাবে পয়গম্বর মুহাম্মাদের নাতি শরীরে বহু আঘাত নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকেন। পরে তার মাথাটি দেহ থেকে কেটে নিয়ে ইয়াজিদের কাছে দামাস্কাসে পাঠানাে হয়। আল-হুসাইনের বােন ও ছেলেকে সেই কাটা মুণ্ডু ফিরিয়ে দেওয়ার পর তারা তা নিয়ে দামাস্কাসে গিয়েছিলেন। [২৭]

    আল-হুসাইনের শহিদের মৃত্যুবরণ-কে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে শী'আপন্থি মুসলিমরা প্রতি বছর মুহাররামের প্রথম ১০ দিন অনুতাপের দিন হিসাবে পালন করার রীতি চালু করেছে। এছাড়া তার বীরােচিত সংগ্রাম ও যুদ্ধক্ষেত্রে নিদারুণ কষ্ট সহ্য করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গভীর আবেগময় পুনরাভিনয় করা হয়। প্রতি বছর এই পুনরাভিনয় দুটি ভাগে দেখানাে হয়। যুদ্ধের স্মরণে আল-কাজিমাইনে একটি অংশ দেখানাে হয়—তার নাম ‘আশুরা’ (দশম দিবস)। মুহাররামের ১০ম দিন থেকে আরও ৪০ দিন পরে কারবালা প্রান্তরে দেখানো হয় আরেকটি অংশ তার নাম ‘মস্তকের প্রত্যাবর্তন'। আলীর চেয়ে তার পুত্র আল-হুসাইনের রক্তদানই আলাদা মতবাদ গড়ার ব্যাপারে শী'আহ সম্প্রদায়কে অনেক বেশি প্রেরণা দিয়েছিল। মুহাররামের ১০ম দিবসে শী’আহ্ মতবাদের জন্ম হয়েছিল। তখন থেকেই ইসলাম ধর্মে মুহাম্মাদ যে শিক্ষা তুলে ধরেছিলেন, তাকে অবহেলা করা শুরু হয়। তার পরিবর্তে শী'আহ মতবাদে গোঁড়ামির যথেষ্ট প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ফলে আলীর বংশধরদের মধ্যে বংশানুক্রমিকভাবে ইমামের পদলাভের প্রথা চালু হয়ে যায়। ইয়াওম কারবালা (কারবালা যুদ্ধের দিনটি) শী'আদের মধ্যে ‘আল-হুসাইনের হত্যাকাণ্ডের সমুচিত প্রতিশােধ' নেবার মানসিকতা গড়ে তােলে। এটিকে উমাইয়া বংশের পতনের অন্যতম কারণ রূপে গণ্য করা হয়। অপরদিকে, সুন্নি সম্প্রদায় ইয়াজিদকেই প্রকৃত শাসক বলে মনে করত। তাই তারা বিশ্বাস করত যে, তার কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করার অর্থ হল বিশ্বাসঘাতকতা, আর এই বিশ্বাসঘাতকতার একমাত্র শাস্তি হল মৃত্যু। তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করত যে, শী'আদেরও এই ঘটনাকে অন্যভাবে দেখা উচিত নয়। কিন্তু কোন ঘটনাকে মানুষের কীভাবে দেখা উচিত তার থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল ইতিহাসের চলমান শক্তি হিসাবে মানুষ কোন একটি ঘটনাকে কীভাবে দেখে। এর পরিণতিতেই ইসলামধর্মে বিরাট বিভেদ সৃষ্টি হয়। তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত সেই বিভেদ দূর করে ঐক্য গড়ে তােলা সম্ভব হয়নি।

    যাই হোক, হুসাইন ও এজিদের দ্বন্দ্ব সেই সময়ের উমাইয়া সাম্রাজ্যের আভ্যন্তরীন দ্বন্দ্বের একটি অংশ মাত্র, এরকম আরও গুরুত্বপূর্ণ দ্বন্দ্বই সেসময় ছিল। কিন্তু সেগুলো আলোচনা করা এই রচনার উদ্দেশ্য নয়।

    তথ্যসূত্র:

    ১। ইব্‌ন সা’দ, কিতাবুল তাবাকাত আল-কাবীর, ৩ খণ্ড, প্রথম অধ্যায়, ২৪৫-২৪৬ পৃষ্ঠা।
    ২। আত তাবারি, তারিখ আল রসুল ওয়াল মুলুক, ১ খণ্ড, ২৭২২-৩২; ইয়াকূবী, ২ খণ্ড, ১৮৩ পৃঃ।
    ৩। আল বায়দাওয়ি, তাফসির আল-বায়দাওয়ি, ১ খণ্ড, ৩০০ পৃঃ।
    ৪। ইব্‌ন হাজার আল-আসকালানি, ফাথ আল-বারি, চতুর্থ খণ্ড, ২২৩-২২৪; ইব্‌ন সা’দ, কিতাবুল তাবাকাত আল-কাবীর, ৩ খণ্ড, প্রথম পরিচ্ছেদ, ৪৪ পৃষ্ঠা, আল মাসুদি, আত-তানবিহ ওয়া আল-আশরাফ, চতুর্থ খণ্ড, ২৫৭ পৃষ্ঠা।
    ৫। ইব্ন‌ বতুতা (১৩৭৭), ২ খণ্ড, ১০-১১, ইব্‌ন-সা’দের (৩ খণ্ড, প্রথম পরিচ্ছদ, ৫২ পৃঃ)।
    ৬। ইব্‌ন-সা’দ ৩ খণ্ড, প্রথম পরিচ্ছেদ, ৫১ পৃষ্ঠা)। ফলে এই প্রথম মুসলমানদের হাতেই এক মুসলিম খলিফার মৃত্যু হয় (৬৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জুন)।
    ৭। আল শাহরাস্তানি, কিতাব আল মিলাল ওয়া আল নিহাল, ১৫ পৃষ্ঠা।
    ৮। ইব্‌ন হিশাম, সিরাতু রাসুলি ইলাহ্‌ ১০০১ পৃষ্ঠা।
    ৯। ইব্‌ন আল তিকতাকাহ্‌, আল-ফাখরি, ১২০-১৩৭ পৃষ্ঠা।
    ১০। আবু হানিফা দিনাওয়ারি, কিতাব আল-আখবার আল তিওয়াল, ২০৬-৮ পৃষ্ঠা।
    ১১। আল মাসুদি, আত-তানবিহ ওয়া আল-আশরাফ চতুর্থ খণ্ড, ৩৯১ পৃঃ।
    ১২। আত তাবারি, তারিখ আল রসুল ওয়াল মুলুক, ১ম খণ্ড, ৩৩৪০-৬০ পৃষ্ঠা; আল মাসুদি, আত-তানবিহ ওয়া আল-আশরাফ, চতুর্থ খণ্ড, ৩৯৯-৪০২ পৃষ্ঠা; আল ইয়াকুবি, তারিখ আল ইয়াকুবি, ২য় খণ্ড, ২২০-২২ পৃষ্ঠা; ফাখরি, ১২৭-৩০ পৃষ্ঠা।
    ১৩। Etudes sur le regne du calife omaiyade Moawia I (বেইরুট, ১৯০৭) সপ্তম অধ্যায়।
    ১৪। Das arabische Reich and sei struz (বার্লিন, ১৯০২) দ্বিতীয় অধ্যায়, দ্য আরব কিংডম অ্যাণ্ড ইটস ফল; অনুবাদ : মার্গারেট জি ওয়ার (কলকাতা ১৯২৭) দ্বিতীয় অধ্যায়।
    ১৫। ইব্‌ন আল তিকতাকাহ্‌, আল-ফাখরি, ১৩০ পৃষ্ঠা, কুরআন, ১২ : ৭০ তুলনীয়।
    ১৬। আল শাহরাস্তানি, কিতাব আল-মালাল ওয়া আল নিহাল, ৮৬ পৃষ্ঠা।
    ১৭। আবু হানিফা দিনাওয়ারি, কিতাব আল-আখবার আল তিওয়াল, ২২৭ পৃষ্ঠা; তাবারী, ১ম খণ্ড, ৩৪৫৬-৭ পৃষ্ঠা; এইচ গােটেনবার্গ-এর ক্রনিক দ্য তাবারী, ৩য় খণ্ড (প্যারিস ১৮৭১), ৭০৬-৭ পৃষ্ঠা।
    ১৮। ইব্ন‌ হাওকাল লিখিত ‘আল-মাসালিক অ-আল-মামালিক’, সম্পাদনা : দ্য গােজে (লিডেন, ১৮৭২), ১৬৩ পৃষ্ঠা।)।
    ১৯। ইব্‌ন খালদূন - এর লেখা 'মুকাদ্দামাহ' আর্থাৎ ‘কিতাব আল-ইবার ওয়া-দিওয়ান আল-মুবতাদা অ-আল-খবর'- এর প্রথম খণ্ড (কায়রো ১২৮৪) ১৭৪–১৭৫ পৃষ্ঠা; কোয়াত্রিমেয়র সম্পাদিত ‘নােটিসেস এট এক্সট্রেটস' ইত্যাদির ৩৭৬-৩৭৭ পৃষ্ঠা; ১৬ খণ্ড (প্যারিস, ১৮৫৮) এবং দ্য স্লেন-এর অনুবাদের ৪২৪-২৬ পৃষ্ঠা, ১৯ খণ্ড, (প্যারিস, ১৮৬২)।
    ২০। ইব্‌ন খালদূন, মুকাদ্দামা, পৃঃ ১৬৯-৭০; ইয়াকূবী, ২য় খণ্ড, পৃঃ ২৫৭।
    ২১। ইয়াকূবী, ২য় খণ্ড, পৃঃ ২৫৬ ; দীনাওয়ারি, পৃঃ ২২৯; তাবারী, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৭০, ১, ২০।
    ২২। আত তাবারি, তারিখ আল রসুল ওয়াল মুলুক, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৫।
    ২৩। ইব্‌ন হাজার আল-আসকালানি, ফাথ আল-বারি, ২য় খণ্ড, পৃঃ ১৩; আবু হানিফা দিনাওয়ারি, কিতাব আল-আখবার আল তিওয়াল, পৃঃ ২৩১।
    ২৪। আত তাবারি, তারিখ আল রসুল ওয়াল মুলুক, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৩।
    ২৫। আল ইয়াকুবি, তারিখ আল ইয়াকুবি, ২য় খণ্ড, পৃঃ ২৬৬।
    ২৬। ইবন্‌ আশাকির, তারিখ দামাশ্‌ক, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ২১৬, ১, ২১।
    ২৭। ইব্‌ন হাজার আল-আসকালানি, ফাথ আল-বারি, ২য় খণ্ড, পৃঃ ১৭।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৯ আগস্ট ২০২০ | ৪০৬৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Sumit Roy | ৩০ আগস্ট ২০২০ ০৯:৪৪96777
  • একটি ত্রুটি - 'ঘূ-আল-ফাকার’এর জায়গায় 'ধূ-আল-ফাকার’ হবে। এই 'ধূ-আল-ফাকার’কে ফারসি ভাষায় বলা হয় 'জুলফিকার'।

  • ar | 96.23.***.*** | ৩১ আগস্ট ২০২০ ০১:৩৮96792
  • এই খবরটা এখানেই থাক।

    Scores Injured as Police Break Up Muslim March in Kashmir

    By The Associated Press
    Aug. 29, 2020

    SRINAGAR, India — Indian forces on Saturday fired shotgun pellets and tear gas to disperse hundreds of Shiite Muslims participating in a traditional religious procession in Indian-controlled Kashmir, injuring scores, witnesses said.

    https://www.nytimes.com/aponline/2020/08/29/world/asia/ap-as-kashmir-violence-muharram-procession.html
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন