হতেই পারে এই লকডাউনের বাজারে টিভিতে রামায়ণ দিলে আপনি উলটো দিকে ঘুরে বসে মোবাইলে ওয়েব সিরিজ ঘাঁটতে থাকেন, কিন্তু অস্বীকারের কোন পথ নেই যে বাল্মীকি জম্পেশ করে একখান কাব্য লিখেছিলেন বটে। বিশেষ করে আজ যখন মেন্টাল হেলথ বজায় রাখতে বই পড়ার উপদেশাবলী অঝোর ধারায় বর্ষিত হচ্ছে সকল সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে, তখন ঐ আদিকাব্যটিকে ভুলি কেমন করে? আচ্ছা, না হয় রাম নয়, বরং যার মনের খাতায় রামায়ণের জন্ম হল তার কথা বলা যাক। আপনিও ‘পড়েছি যবনের হাতে...’ ইত্যাদি বল-টলে নেহাত অন্যমনস্কের ভঙ্গিতে এদিকে একটু কান দিন। আসলে বাল্মীকি যেমন করে কাব্যটি বেঁধেছেন তাতে অতি আধুনিক কবি সাহিত্যিকেরাও হার মানবেন। সেকথা বলতেই এই ধান ভানতে শিবের গীত গাইলুম। আমাদের পাখির চোখ আসলে বাল্মীকির কাব্যের গোছগাছ।
আপনি এই ফাঁকে বলতেই পারেন, নতুন করে আর বলবেন কি? ঐ তো রাম না হতে রামায়ণ। উহুঁ, অতটাও সহজ নয়। আচ্ছা, বলুন দেখি, রামায়ণ, মানে অবশ্যই বাল্মীকি রামায়ণের শুরুটা কোথা থেকে? আসলে রামায়ণের অনেকগুলো ফর্ম আছে কিনা, নামও, গোত্রও। তার মধ্যে বাল্মীকিরটাই মনে করা হয় কাব্য ফর্মে প্রথম। রামকথা অনেক আছে, সেকথা আজ নয়। হ্যাঁ, শুরুটা তাহলে কি দিয়ে? আমার অভিজ্ঞতায় এ কোয়েশ্চেনের কমন আনসার হল – রত্নাকার থেকে বাল্মীকির বাল্মীকি হয়ে ওঠা দিয়ে। মানে ঐ যে দস্যু রত্নাকর ডাকাতি করত, তরপর তার পাপের বোঝা কেউ নিতে রাজী হল না, বাবা মা, এমনকি বউও নয় (এই তালে আপনার ঠোঁটের কোণটি ঈষৎ বক্র হাসিতে ভরপুর হতেই পারে)। তারপর সে মরা মরা করতে করতে রামনামে উদ্ধার হল। বল্মীকের স্তূপ ভেদ করে উঠে তার নতুন নাম হল বাল্মীকি। ব্যাস, অমনি আপনি রসোগোল্লার সাইজের একটা জিরো পেলেন খাতায়। কারণ ওটি কৃত্তিবাসের লেখা, বাল্মীকির রামায়ণে নেই কোত্থাও। অধ্যাত্ম রামায়ণেও অবশ্য একটুখানি ইঙ্গিত রয়েছে তার।
এইবার আপনি একটু নড়ে চড়ে বসলেন, আচ্ছা তাই নাকি? ভেবেই বুকসেলফে রাজশেখর বসু বা হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য আছে কিনা মনে করার চেষ্টা করলেন। ধুলোর আড়ালে চলে গেছে কোথায় ভাবতে ভাবতে আরেকটা উত্তর ঝটাপট রেডি করে ফেললেন – ঐ ক্রৌঞ্চ-মিথুন বধ, ঐ মা নিষাদ ... ঐখানেই রামায়ণের শুরু। কাছাকাছি এসে পড়েছেন, তবে ততটাও নয়। তাহলে যে আধুনিক কাঠামোটার কথা বলছিলুম তার বাঁশ, দড়া-দড়ি বাঁধা শুরু হত কোথা থেকে। আচ্ছা, বলছি গুছিয়ে, আপনিও গুছিয়ে বসুন, দরকার হলে খাতা কলম সঙ্গে নিয়ে। অঙ্ক আছে বিস্তর।
সব্বার আগে এইটা বলুন দেখি কেউ যখন কোনকিছু লেখে, মানে রচনা করে তার এগোনোর রাস্তাটা কেমনতরো হয়? আপনিও তো লেখেন মাঝেসাজেই। ঐ দেখুন লজ্জা পাচ্ছেন কেন? লুকোবারই বা চেষ্টা করছেন কেন? নিজের নাম নিজের লেখাপত্তরের সঙ্গে জুড়ে দেবার একটা বেশ রেওয়াজ ছিল পুরোনো দিনে। শোনেন নি ঐ যে ছড়াপত্তরের লেখার শেষের লাইনে ‘অমুকে ভনে, তমুকে বলে’ ইত্যাদি? বাল্মীকি সে পথের এক্কেবারে শুরুর দিকের গুরু। তিনিও বেশ ঘটা করে নিজের নাম ধাম দিয়েই রামায়ণ লিখছেন, তারপর কেমন করে লিখছেন ইত্যাদি বলে তবেই কলমের খোঁচায় রামের জন্ম দিয়েছেন। তাই বলছি, নিজের লেখক হওয়ার গুণপনা না লুকিয়ে ভাবুন দেখি কেমন করে লিখতে শুরু করেন? তা সে কলম দিয়ে হোক বা ল্যাপটপের কী-বোর্ডে হোক। এইখানে এসে আপনি আমার বালক সুলভ অজ্ঞতার আভাস পেয়ে মনে মনে একটু নিজের গোঁফে তা দিয়ে মুখ খুলবেন - আহা, কলম ধরার কথা এত তাড়াতাড়ি আসছে কোথা থেকে? তার আগে তো প্রোডাকশনের জন্য কাঁচামাল চাই। অর্থাৎ, বেসিক ইনফর্মেশন চাই। আর তার পরে সেগুলো নিয়ে একটা মক্সো করা চাই। যদি সৃজনশীল লেখা হয় তাহলে খানিক নিজের কল্পনার গোড়ায় ঘাস উগিয়ে সেগুলোও গুছিয়ে দেওয়া চাই। হুম, আমিও সেকথাই তো বলছি। বাল্মীকিও তাইই করেছিলেন।
তাই করেছিলেন? মানে, তাঁকে কাঁচামালের সাপ্লাই কে দিল? উত্তরটা তো সোজা জলের মত। সেই দিল, যার পক্ষে দেওয়াটা সবচেয়ে সহজ। যিনি বিশ্বভুবন চষে বেড়ান নিজের ঢেঁকিটি চড়ে। ঠিকই ধরেছেন, নারদ জোগালেন সে বেসিক ডাটা। সক্কলের উঠোনের খবরের শিরোনাম যে তার বীণার তারে। এখান থেকেই শুরু বাল্মীকির রচনা। মানে কেবলমাত্তর লিখেই বিশ্বজয় করেন নি, নিজের লেখার হাল-হকিকত, জোগাড়-যান্তির কথাও লিখে গেছেন সেইখানেই। মানে কাব্য শুরু হবার আগে তার বাইরের একখান কাঠামো দাঁড় করিয়েছেন, যেটা কাব্যের মধ্যেও বটে, বাইরেও বটে। এইরকমটা তিনি বারবারই করে চলেছেন। এই তিনি স্টেজে আছেন, এই তিনি নেই। ভুলে গেলে চলবে না যে বাল্মীকি নিজেও এই রাবণবধ কাব্যের একটা চরিত্র।
নারদের কাছে বাল্মীকি জানতে চেয়েছিলেন পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ আছে কিনা যিনি “গুণবান, বিদ্বান, মহাবল, পরাক্রান্ত” প্রভৃতি। প্রভৃতির লিস্টিটা এতো বড় ছিল যে নারদ তাঁকে জানিয়েছিল এমন একজন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। তবে হ্যাঁ, ইক্ষ্বাকুকুবংশীয় একজন নরপতি আছেন বটে যার গুণের শেষ নেই, আর তার জীবনটাও বেশ থ্রিলিং। মানে একখান গল্প ফাঁদার পক্ষে দা-র-উ-ণ। ঘরোয়া ঝগড়া আছে, রাক্ষস-রাক্ষুসী আছে, এখান ভিলেনও আছে জবরদস্ত। যুদ্ধ-টুদ্ধ তো আছেই, আর স্পেশাল এফেক্টের ছড়াছড়ি – আকাশে ওড়াউড়ি, দশটা মুণ্ডু, পুস্পক রথ। এমনকি একখান নির্বাসনও আছে। যদিও একথা কবি স্পষ্ট করে লেখেন নি যে হঠাৎ করে এমন একজন মানুষের খবরে তাঁর কি দরকার ছিল। সে কি নেহাতই নির্ভেজাল জ্ঞান বাড়ানোর জন্য, নাকি কোথাও মনের কোন গভীর কোণে সৃষ্টির একটা উত্তাপ তৈরি হচ্ছিল। যাইহোক, নারদ তো রামের জীবন কথা আদ্যোপান্তো বলে দিলেন। তবে সেটা নেহাতই ঐ কাঁচামাল মাত্র। অর্থাৎ গল্পের কাঠামোর বাঁশ-টাশ গুলো পড়ল বটে, তবে তার আকারটা চোখের সামনে ফুটল না। কারণ বাল্মীকির লেখার সূক্ষ্ম ভাঁজগুলো তাতে নেই, সবচেয়ে বড় কথা হল যে পুরো উত্তরকাণ্ডটাই বাদ।
নারদের কথা শেষ হল এইভাবে “যে ব্যক্তি এই আয়ুষ্কর, পবিত্র, পাপনাশক, পুণ্যজনক, বেদোপম রামচরিত পাঠ করবেন, তিনি সকল পাপ হইতে মুক্ত হইয়া পুত্র, পৌত্র ও অনুচরগণের সহিত দেহান্তে দেবলোকে গিয়া সুখী হইবেন”। স্টাইলটা বেশ চেনা চেনা লাগছে না? পুরাণগুলোর সাথে মিল, এমনকি পাঁচালী বা মঙ্গলকাব্যের সঙ্গেও খুব মিল। এখানে যা খেয়াল করে মনে মনে টুকে রাখার তা হল, নারদ যখন তাঁর সুদীর্ঘ বক্তৃতাটি দিচ্ছিলেন সেসমইয়েই কিন্তু রামকথা বা রামচরিতের অস্তিত্ব ছিল। অর্থাৎ, বাল্মীকি যার ওপর নির্ভর করে নিজের লেখার কাঠামো খাড়া করেন, তা আসলে এক বা একাধিক প্রচলিত কথা। সেই কথা যাদের মুখে মুখে ছড়াতো, নারদকে কি সেই তাদেরই এক চরিত্রায়ণ বলা যেতে পারে?
নারদের কথা চলেছিল প্রথম কাণ্ডের প্রথম সর্গ জুড়ে। এই ব-কার বিহীন সর্গের মানে হল সৃষ্টি। গোটা রামায়ণের কাণ্ডগুলো সর্গে ভাঙ্গা। পরের দিকে যত কাব্য লেখা হয়েছে তার বেশিরভাগই এই সর্গের ভাগাভাগিটাকে অনুসরণ করেছে। তাই তো রামায়ণ আদিকাব্য, বাল্মীকি আদিকবি। তবে আমরা এখন গল্পের যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখানে তখনো বাল্মীকি আদিকবি হন নি। তার জন্য আমাদের হাঁটা লাগাতে হবে তমসা নদীর দিকে। ভাগীরথীর অদূরে বইছে তমসা, জল তার স্বচ্ছ, বাল্মীকির ভাষায় “সচ্চরিত্র মানুষের চিত্তের ন্যায়”। এই তমসার তীরেই হয়েছিল ক্রৌঞ্চ-মিথুন বধ। মজার ব্যাপার হচ্ছে যে নিত্যদিন এমন কত ঘটনার সাক্ষী হয় কত মানুষ, কত মৃত্যু, কত বিরহ। আর ব্যাধের তীরে পাখির বধ - এ তো আকছার ঘটছে। কিন্তু ক’জনের মন সেই দেখে অমন তোলপাড় হয়? কবিদের হয়, কারণ তারা যে ক্রান্তদর্শী, তারা স্থান, কাল, ঘটনা অতিক্রম করে দেখতে পান, দেখতে পান অন্তঃস্থল পর্যন্ত। বাল্মীকিও পেয়েছিলেন সেই মুহূর্তে। পাখিদুটোর একটাকে (পুরুষ পাখিটিকে) ব্যাধের বাণে ছটফটিয়ে মরতে দেখে, আর যে পড়ে রইল তার কান্না শুনে বাল্মীকির কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে এল “মা নিষাদ” ইত্যাদি। শোক থেকে জন্ম বলে তার নামকরণ বাল্মীকি নিজেই করলেন শ্লোক। সেই শুরু। ভেবে দেখুন সংস্কৃত ভাষায় ছন্দোবদ্ধ কিংবা সুর করে কাউকে কিছু বলতে শুনলে লোকে আজও বলে – ঐ দেখ অং বং চং শ্লোক অউড়াচ্ছে। কথাটার মধ্যে একটা অমর্যাদার শ্লেষ উঁকি দিলেও যেটা ভাবার বিষয় সেটা হল এই যে, শোকের সঙ্গে শ্লোকের সম্পর্কের দাগটা গেছে মুছে, রয়ে গেছে যা, তা হল ছন্দ আর সুরের হাতধরাধরি। বাল্মীকিও খেয়াল করেছিলেন এই গাঁটছড়াটা। ভরদ্বাজকে বলছিলেন সেকথা। ও হ্যাঁ, বলতে ভুলে গেছি এই গোটা ঘটনাটার সাক্ষী ছিলেন শিষ্য ভরদ্বাজ গোত্রীয় কেউ। তাঁকে গুরু বললেন “এই বাক্য চরণবদ্ধ অক্ষর-বৈষম্য-রহিত ও তন্ত্রীলয়ে গান করিবার সম্যক উপযুক্ত হইয়াছে।” অর্থাৎ কিনা বেশ ছন্দ-টন্দ আছে, আর গান করে গাওয়াও যাবে (তারের যন্ত্র বাজিয়ে অবশ্যই, সে সময়ে সঙ্গীত সাধনার রীতিও বোধহয় তাই ছিল)। আর ততক্ষণাৎ এইখানেই, আগামীতে রচিত হতে চলা কাব্যের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গেল।
আশ্রমে ফিরে এসেও বাল্মীকি ধাতস্থ হতে পারছিলেন না। এমনকি প্রজাপতি ব্রহ্মা দেখা করতে এসেছেন, তাঁর সামনেও বারবার অন্যমনস্ক হয়ে হড়ছিলেন। ব্রহ্মা অন্তর্যামী। বাল্মীকির মনের অবস্থা আন্দাজ করতে পেরে আশ্বাস দিলেন, তাকে নিশ্চিন্ত করে যা বললেন তার মর্মার্থ দাঁড়াল এই যে, ভয় পেয় না। তমসার তীরে যা কিছু হয়েছে সব আমারই ইচ্ছায়। আপাতত ঐ শ্লোক দিয়ে নারদের কাছে যা শুনেছ সেসব লিখে ফেল চটপট। এমনকি, নারদ যা বলেন নি সেসব কথাও রচনা করবার ছাড়পত্র দিলেন চতুরানন – “নারদ যাহা কহেন নাই, রচনাকালে তাহাও তোমার স্ফুর্তি পাইবে। তোমার এই কাব্যের কোন অংশই মিথ্যা হইবে না।” – অরিজিনাল সংস্কৃত অংশটা তুলে দেবার লোভ সামলাতে পারলুম না। ব্রহ্মা বললেন –
তচ্চাপ্যবিদিতং সর্বং বিদিতং তে ভবিষ্যতি/
ন তে বাগনৃতা কাব্যে কাচিদত্র ভবিষ্যতি// (বালকাণ্ড, দ্বিতীয় সর্গ, শ্লোকসংখ্যা ৩৫)।
এইখানে এসে আরেক লম্বা দাড়িওয়ালা ক্রান্তদর্শীর শরণ নিতে হয়। তাঁকেই আপামর বাঙালী ঠাকুর বলে চেনে, তাঁর গানেতেই হৃদয় থাকে বাঁধা। কবিতার নাম ‘ভাষা ও ছন্দ’। সেখানে রবি কবি এই নারদ, তমসা, ক্রৌঞ্চ-মিথুন বধ আর ছন্দোবদ্ধ ভাষার জন্ম সবই আবার করে রচেছেন, অবশ্যই ‘আপন মনের মাধুরী মিশায়ে’। সেখানেই ব্রহ্মার কথা নারদের মুখে বসিয়েছেন তিনি –
নারদ কহিলা হাসি, “সেই সত্য যা রচিবে তুমি,
ঘটে যা তা সব সত্য নহে। কবি, তব মনোভূমি
রামের জনমস্থান, অযোধ্যার চেয়ে সত্য জেনো।”
এই ছাড়পত্রটাই সমস্ত কবিকুলের খোলা জানলা, খোলা পথ, খোলা হাওয়া। যুগে যুগে সমস্ত কবি উত্তরাধিকার সূত্রে তা পেয়েছেন। সে ছাড়পত্র এনেছিলেন বাল্মীকিই।
সেই ছাড়পত্র পেয়েই তার পরের ধাপ অবশ্যই কাঁচামাল থেকে কাঠামোটা তৈরি করে ফেলা। নারদের কথাতেই গোটা রামকথা মোটামুটি একবার বলা হয়েছিল। তৃতীয় সর্গে এসে বাল্মীকি তাকে নিজের মতো করে গুছিয়ে সাজালেন, আকৃতিতে একটু ছোট দেখতে লাগতে পারে, কিন্তু ঘটনার ঘনঘটা তাতে কম কিছু নেই। একটা যেন সূচীপত্রের মতো। অর্থাৎ, নারদের কথা যদি হয় সূচীপত্র ১, তাহলে এটি সূচীপত্র ২। তবে এই সূচীপত্র ২ তে এসে উত্তরকাণ্ডের একটু আভাস পাওয়া যায়। কেবলমাত্র সীতা পরিত্যাগের কথাটা রয়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গে আর একটু ইঙ্গিত দেওয়া আছে – “মহর্ষি বাল্মীকি এই সমস্ত এবং রামের অপ্রচারিত অন্যান্য সমুদায় বিষয় স্বপ্রণীত কাব্যমধ্যে বর্ণনা করেছেন।”
চতুর্থ সর্গে এসে উত্তরকাণ্ডের নাম শোনা গেল। কিন্তু সোজাসুজি সাতকাণ্ড না বলে উত্তরকাণ্ডকে যেন একটু আলাদা করে বসানো হল। বলা হল – বাল্মীকি রচিত এই কাব্যে পাঁচশো সর্গ ও ছয় কাণ্ড এবং উত্তরকাণ্ড প্রস্তুত আছে। এরকম ছুৎমার্গের ব্যাপার স্যাপার দেখে পণ্ডিতরা পুরো উত্তরকাণ্ডকেই প্রক্ষিপ্ত বলেছেন, যদিও তার বিপরীতে যুক্তিও রয়েছে প্রচুর। তবে আমাদের নজর সেদিকে না দিলেও চলবে। শুধু এটুকু ভাবা যেতে পারে যে, যেহেতু নারদের বর্ণনায় উত্তরকাণ্ডের ব্যাপার-স্যাপারের কোন উল্লেখ নেই, তাই বাল্মীকির নিজের সংযোজন বোঝাতে কি উত্তরকাণ্ডকে আলাদা করে উল্লেখ করেছেন? তাতে অবশ্য উত্তরকাণ্ডের গুরুত্ব কিছুমাত্র কমতি হয় না। কিন্তু আমাদের আলোচনায় তার থেকে বেশি নজরকাড়া ব্যাপার হল এই যে, বাল্মীকির রচনার পর রামায়ণ যেভাবে তমসার তীর থেকে জনগণের কাছে পৌছয়, তার মধ্যে উত্তরকাণ্ডর গুরুত্ব বাকি ছ’টার থেকে একদম আলাদা। সেখানে উত্তরকাণ্ডটাই মঞ্চ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে আদিকাব্য গান করার জন্য।
এখন প্রশ্ন হল গান করবে কে? আচ্ছা, নাটকের চরিত্রদের কি বলা হয় বলুন তো? ঠিকই ধরেছেন, এককথায় তারা কুশীলব বলে পরিচিত। আর এই কুশীলবের নামকরণের সুতোটা বাঁধা আছে লব-কুশের নামের সাথে। কারণ, তাদের দুজনকেই বাল্মীকি দায়িত্ব দেন রামায়ণ গান করতে। তাদেরও সেজন্য রীতিমত মহড়া দিয়ে শিখতে হয়। মজার ব্যাপার হল পুরো রামায়ণটাই লব-কুশের গলায় গান হিসেবে শুরু। অর্থাৎ, বাল্মীকি নিজের কাব্যের জন্য দুজন ন্যারেটার ঠিক করলেন, যারা সেই কাব্যেরই দুটি অন্যতম চরিত্র। সে চরিত্রদুটির জন্ম কোথায়? উত্তরকাণ্ডে। আর তাদের দুজনকে বাল্মীকি রামায়ণ গান করার আদেশ দিচ্ছেন কোথায়? বালকাণ্ডে। এবং একই সঙ্গে তিনি পুরো কাহিনীর বর্ণনাটার সময় ও স্থানটা নিয়ে গিয়ে ফেলছেন উত্তরকাণ্ডে, তাও শেষের দিকে যেখানে রাম অশ্বমেধ যজ্ঞ করতে বসেছেন। সতরাং সেই ফর্মটা তো আছেই যে, কাব্যের কথক কাব্যের একটা চরিত্র, কখনো কাব্যের মধ্যে, কখনো বা বাইরে। তাছাড়া একটা গোটা বৃত্ত এঁকেছেন বাল্মীকি, শুরু আর শেষ যেখানে মিলেছে। তবে আবার সে বৃত্তের বাইরেও বেরিয়ে গেছেন অনায়াসে। সাধে কি আর বলেছিলুম যে কাঠামোর দিক থেকে অনেক আধুনিক সাহিত্যকেও ছাপিয়ে যায় এই মান্ধাতা আমলের কাব্য।
একটু বেশি জট পড়ে গেল কি? চলুন তাহলে জটটা ছাড়াই। ফিরে যাই বালকাণ্ডের চতুর্থ সর্গে। বাল্মীকি রামায়ণ রচনার পর কুশ ও লবকে বাছলেন গান করার জন্য। এই পর্যায়ে কিন্তু তাদের পিতা-মাতার কোন পরিচয় দেওয়া হয় নি, তারা নেহাতই আশ্রমবালক। শুধু আভাসটুকুমাত্র পাওয়া গেল – “ ইঁহাদিগকে দেখিলে বিম্ব হইতে উত্থিত প্রতিবিম্বের ন্যায় রূপে রামেরই অনুরূপ বোধ হইত।” প্রকৃত পরিচয়টা কাব্যকার তুলে রাখলেন ক্লাইম্যাক্সের জন্য। তো, বাল্মীকির আদেশে এই সুদর্শন বালকযুগল গান গেয়ে বেড়ায়। প্রাথমিকভাবে তাদের শ্রোতা হন অন্যান্য মুনি ঋষিরা। একালের সেমিনারের মতো সেকালেও বুঝি মুনি-ঋষিদের জমায়েত হত নিজেদের জমানো জ্ঞান আদানপ্রদানের জন্য। সেখানেই গান করত লব-কুশ, আর অসংখ্য সাধুবাদ কুড়ত। এরপর একদিন যখন অযোধ্যার রাস্তায় তারা গান করছে, রাজা রাম তাদের কথা শুনতে পেয়ে ডেকে পাঠালেন, আর গান শোনাতে আদেশ দিলেন। লবকুশও গান জুড়ল। এটুকু দিয়েই বালকাণ্ডের চতুর্থ সর্গ শেষ আর পঞ্চম সর্গে দশরথের কথা দিয়ে রামায়ণের আসল শরীর শুরু। মানে রামায়ণটা লবকুশের গলায় গান, যা শুনছেন রামচন্দ্র স্বয়ং। এখন প্রশ্ন হল, ঐ দুই ভাই সুদূর অযোধ্যা পৌছল কি করে? কেনই বা গেল? উত্তর হল রামের অশ্বমেধ যজ্ঞের কারণে গেল। আর সে কথা জানা গেল মাঝের কাণ্ডগুলো পেরিয়ে গিয়ে সোজা উত্তরকাণ্ডের বিরানব্বই-তিরানব্বইতম সর্গে পৌঁছে। সুতরাং বাল্মীকির কাব্যির কাঠামো বুঝতে বালকাণ্ড থেকে আমাদের এখন পাড়ি দিতে হবে উত্তরকাণ্ডের বিরানব্বইতম সর্গে, যেখানে রাজাধিরাজ রামচন্দ্রের অশ্বমেধ যজ্ঞের জোগাড়-যান্তি চলছে ব্যস্তসমস্তভাবে।
রাজসূয় যজ্ঞের ইচ্ছা ছিল অযোধ্যাপতির। কিন্তু কতগুলো কারণে শেষ পর্যন্ত অশ্বমেধ। বিশাল তার আয়োজন। ইন্দ্র, চন্দ্র, যম, বরুণ – কারোর বাড়িতেই নাকি এমন অনুষ্ঠান কেউ কখনো দেখে নি। রাজা-রাজড়াদের সাথে মুনি-ঋষিরাও এসেছে। সশিষ্য উপস্থিত বাল্মীকিও। শিষ্যদের মধ্যে আছে কুশ ও লবও। তাদের ডেকে ঋষি আদেশ দিলেন “তোমরা গিয়া পবিত্র ঋষিক্ষেত্র, বিপ্রালয়, রাজমার্গ, অভ্যাগত রাজগণের গৃহ, রাজদ্বার, যজ্ঞস্থান এবং বিশেষতঃ যজ্ঞদীক্ষিত ঋষিগণের নিকট পরম উৎসাহে সমগ্র রামায়ণ গান কর।” সেযুগে রাজাদের গুণপনা কীর্তন করে গান গাওয়া একটা প্রচলিত রেওয়াজের মধ্যেই পড়ত। আর এ তো রাবণ বধকারী রামচন্দ্র বলে কথা। তবে ঋষির কথা একটু খেয়াল করে দেখুন, কোথাও যেন তাঁর একটা আশা বা আশঙ্কা ছিল যে কোন না কোনভাবে রামের কানে এই সুমধুর গীতের কথা উঠবেই। এবং সেক্ষেত্রে এই দুই ভাইয়ের পরিচয় জিজ্ঞাসা করাই স্বাভাবিক। তিনি তাদের সেকথা বলেও দিলেন আগেভাগেই –“যদি রাজা রাম গীতশ্রবণের নিমিত্ত উপবিষ্ট ঋষিগণের মধ্যে তোমাকে আহ্বান করেন, তাহা হইলে তোমরা তথায় গিয়া রামায়ণ গান করিও।” তিনি আরো বললেন, “যদি রাম তোমাদিগকে জিজ্ঞাসা করেন তোমরা কার পুত্র, তখন বলিও আমরা বাল্মীকির শিষ্য।”
ঋষির আন্দাজ পুরোপুরি মিলে গেল। রাজা তাদের গানের কথা শুনলেন, জানলেন এবং তাদের গান করার জন্য ডেকে পাঠালেন। কতদিন ধরে সে গান চলল তা বলা নেই স্পষ্ট করে, তবে একটা আন্দাজ করা যেতে পারে। লবকুশ প্রতিদিন কতটা করে গান করবে তার একটা সুস্পষ্ট নির্দেশ বাল্মীকি দিয়ে দিয়েছিলেন আগে ভাগেই – রোজ কুড়িটি করে সর্গ। বালকাণ্ডে রামায়ণের আকার-আকৃতির একটা পরিচয় দেওয়া হয়েছিল আগে – “চতুর্বিংশতি সহস্র শ্লোকে পাঁচশত সর্গ ও ছয় কাণ্ড এবং উত্তরকাণ্ড প্রস্তুত আছে”। তাহলে কিনা, উত্তরকাণ্ড বাদ দিয়ে বালকাণ্ড থেকে যুদ্ধকাণ্ড পর্যন্ত যদি ধরি তাহলে অঙ্কটা দাঁড়ায় মোটামুটি এরকম – ৫০০ ÷ ২০ = ২৫। একদিনও ছুটি না নিয়ে উত্তরকাণ্ড বাদ দিয়ে অন্তত ২৫ দিন লেগেছিল রামায়ণের ছয়কাণ্ডের গল্প বলতে। লবকুশ প্রথম দিন শুরু করেছিল এক্কেবারে গোড়ার কথা দিয়ে, অর্থাৎ কিনা নারদের উক্তি দিয়ে। এখন প্রশ্ন হল, উত্তরকাণ্ড তখনই পড়া হয়েছিল কিনা। কারণ পুরো কাব্যের ঘটনাক্রম তখনও কিছুটা ঘটতে বাকি। বাকি সীতার পাতালপ্রবেশও। তবে উত্তরকাণ্ড হয়ত কিছুটা নিশ্চয়ই ঐ প্রথম পর্যায়েই গান করা হয়ে গিয়েছিল। কারণ সেখান থেকেই রামচন্দ্র জানতে পারেন যে, কুশ ও লব সীতারই পুত্র। চেহারার মিল তো বহু আগেই খেয়াল করেছেন সবাই। আর সেই পরিচয়েই এবার সীলমোহর লাগানোর পালা। ডেকে পাঠানো হল সীতাকে।
সীতার পাতালপ্রবেশের গল্প আর বলছি না, দরকারও নেই। তাই তার পরের অংশ থেকে শুরু করা যেতে পারে। সীতার পাতালপ্রবেশের পর সে রাত্তিরটা রামচন্দ্র দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বাল্মীকির পর্ণকুটীরে কাটান। পরেরদিন সকাল থেকে আবার রামায়ণ গান শুরু হল “রাত্রি প্রভাতে রাম ঋষিগণকে আনয়নপূর্বক পুত্র কুশীলবকে কহিলেন, এক্ষণে তোমরা নিঃশঙ্কচিত্তে উত্তরকাণ্ড আরম্ভ কর। মহাত্মা ঋষিগণ স্ব-স্ব আসনে উপবিষ্ট হইলেন এবং কুশীলব গান করিতে লাগিলেন।” এর পর রাম ও তাঁর ভাইদের স্বর্গারোহণ পর্যন্ত রামায়ণ, কিন্তু সেখানে কুশ ও লবের গানের কথা আলাদা করে কোথায় শেষ হল সে কথা বলা নেই। সব কথা বলা থাকে না, বলতেও নেই।
আরে, অ মশাই, আবার যে ওয়েব সিরিজ নিয়ে বসে গেলেন। শেষটুকু শুনবেন না? এইবার অমূল্য সময় এইভাবে নষ্ট করায় যার-পর-নাই বিরক্ত আপনার সেই মোক্ষম প্রশ্নটা করার পালা – বলি, এই সাতকাণ্ড রামায়ণ কেন এত ঘটা করে শোনানো হল? রামায়ণ তো বলি নি মোটে, বলেছি বাল্মীকির কাব্যলেখার টেকনিক। তার দরকার ছিল বই কি। রামায়ণের যে একটা সাহিত্যের চেহারা আছে তা তো নানান এদিক ওদিকের কথায়-অকথায় ভুলতে বসেছি প্রায়। ভেবে বলুন দিকি, রামায়ণের কাঠামো যে এত জটিল তা কি কোনদিন ভেবেছিলেন আগে? একথাও কি কখনো ভাবা গিয়েছিল যে আগাগোড়া রামায়ণটা ফ্ল্যাশব্যাকে দেখানো? আর ফ্ল্যাশব্যাক মানেই একটা পরিপূর্ণ বৃত্ত থাকবে, ন্যারেটারের কথা শেষ হবে সেখানেই, যেখানে সে শুরু করেছিল। কিন্তু বাল্মীকি আরো খানিক এগিয়ে গিয়ে সে বৃত্তের বাইরে আরো কিছু কথা বললেন, রাস্তা দেখালেন কেমন করে সৃজনশীলতা কলমের মধ্যে দিয়ে অমরত্ব পায়, কেমন করে উপাদান জোগাড় থেকে আরম্ভ করে তার গায়ে মাটি লাগিয়ে প্রতিমার চক্ষুদান হয়। তাকে বৃত্তের পরিধির বাইরে রাখা যেতে পারে, বা আরেকটা বড় বৃত্তও বলা যেতে পারে। মধ্যিখানের ঐ ছোট বৃত্তটাতে বাল্মীকি আর লব-কুশ গল্পের চরিত্র, গল্পের প্রয়োজনে তারা এসেছে। বাইরের বড় বৃত্তের পরিধিতে তারাই গল্পের লেখক ও কথক। রচনা ও গান এই দুই দিয়ে সম্পূর্ণ হল আদিকবির গোছগাছ। কি মনে হচ্ছে? খ্রীষ্টপূর্ব অব্দের রচনা, নাকি উত্তর আধুনিক কালের সাহিত্য?
উদ্ধৃতি সূত্রঃ
সংস্কৃত – শ্রীমদ্বাল্মীকীযরামাযণম্, গীতা প্রেস।
বাংলা – বাল্মীকি-রামায়ণ, অনুবাদ –হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য, ভারবি।
Ramayan revolves around Load Ram & this can be a reason of not going into the details of his next generation.
Well written & thoroughly enjoyed.
Ramayan revolves around Load Ram & this can be a reason of not going into the details of his next generation.
Well written & thoroughly enjoyed.
বোধিসত্ত্ব,
আপনার উত্তরটা দেবার চেষ্টা করা যাক, সেই তালে আরো দুচার কথা এই লেখার নেপথ্য নিয়েও বলি। আমার লেখা পড়ে প্রত্যাশা জাগছে, এটাই আমার কাছে সাত রাজার ধন মানিকের মতো লাগছে। যাই হোক, প্রসঙ্গে আসি। যদিও প্রশ্নটা বেশ জটিল ছিল, তবুও আমার স্বল্প বুদ্ধিতে তাকে ডিকোড করার চেষ্টা করলাম। “স্টাইলটা বেশ…চরিত্রায়ণ বলা যেতে পারে?” লেখার এই অংশটা (অনেক ধন্যবাদ এত মন দিয়ে পড়ার জন্য) মূল আরগুমেন্ট ছিল না। আমিও আসলে একটা গল্প বলতে বসেছিলাম – গল্প তৈরির গল্প। তাতে যদি যুক্তির কথা কিছু থাকে, তা হল কেমন করে উপাদান থেকে পূর্ণতা পায় একটা কাব্য। প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, তাহলে সব ছেড়ে বাল্মীকিকে নিয়ে পড়লাম কেন? কারণ এটাই যে, প্রথম যিনি রাস্তা দিয়ে হাঁটেন তাঁর কথার আলাদা গুরুত্ব থাকেই। ধুলোর পরত সরিয়ে সে স্মৃতি মনে করা মানে কখনই নয় “আমাদের আধুনিক উত্তরাধুনিক সব আছে হুঁ হুঁ বাওয়া” বলতে পারা। সে দাবি এ লেখাতে কোথাও করা হয়েছে বলে মনে হয় না। উত্তর আধুনিক সাহিত্যের কথাটা একেবারে শেষে একটা আলতো প্রশ্নের আকারে এসেছে, রামায়ণকে সেই ধাঁচে ফেলা হয় নি। তাছাড়া, বাল্মীকির আগে যদি রামকথা “বহুদিন ধরেই বহুফর্মে রাম ইত্যাদির গল্প আছে, নানা সময় নানা ভূগোল জুড়ে আছে”, কিন্তু লক্ষ্য করার এটাই যে সেগুলো লিখিত কোন কাব্যের আকারে ছিল না। হয়ত মুখে মুখে ছোট-বড় গল্পগুলো বলা হত, হয়ত বিচ্ছিন্নভাবে, হয়ত খানিক একসঙ্গেও। কিভাবে তা বলা হত তার কোন গ্রন্থভিত্তিক প্রমাণ পাওয়া যায় না। এখানে ভরসা কেবল নারদের ঐ রামকথার উল্লেখটুকু। বাল্মীকিতে এসে সে কথা/গুলো একটা পূর্ণাঙ্গ রূপ পেল, এবং রচনার রূপ পেল। সংস্কৃত ভাষায় কোন গ্রন্থ রচনার ক্ষেত্রে ‘কৃ’ ধাতু প্রয়োগ হয় সবচেয়ে বেশি। যদি প্রাচীন পুঁথি খুলে দেখা যায় তাহলে “অমুকেন কৃতমিদম্” এরকম প্রায়শই চোখে পড়ে। রামায়ণের প্রথমদিকের সর্গগুলোতে কৃ ধাতু সহযোগে ‘বাল্মীকি রামায়ণ রচেছেন’ – এইরকম প্রয়োগ প্রচুর। তাছাড়া তৎকাল-প্রচলিত (যদিও সঠিক রামায়ণের কাল নিয়ে নানা মুনির নানা মত, তাই সে দিকে না গিয়েই) রামকথাতে নেই এমন বেশ কিছু ঘটনাও বাল্মীকির সংযোজন। ‘ছাড়পত্র’ এই পরিভাষায় তার ওপর খানিক আলোকপাত করা হয়েছিল আমার লেখাতে। রামকথার ওরাল ফর্ম থেকে রামায়ণ কাব্য হয়ে ওঠা – এটাই নতুন এখানে। এখানে মানে, এই লেখাতে। শুধুমাত্র তার কাঠামো নিয়েই শুরু, এবং শেষ। ফোকাস থেকে বাদ গেছে অন্যান্য রামায়ণ, তাদের অনুবাদ, পুনর্লেখন ইত্যাদি প্রভৃতি। সে গণ্ডীর কথাও সব্বার প্রথমে জানিয়েছিলাম।
সবশেষে অনেক ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্য। কারণ প্রশ্নকর্তাই প্রকৃত শুভানুধ্যায়ী।
লেখা ও আলোচনা বেশ ভাল লাগল। চলুক।
@b,
গীতা প্রেস -এর বইতে সংস্কৃত শ্লোক সহ বাংলা অনুবাদ পাওয়া যাবে। হিন্দি ও ইংরেজি অনুবাদও আছে, তবে আলাদা এডিশনে। আর্যশাস্ত্র বলে একটি পত্রিকাতে একসময় এরকম বাংলা অনুবাদ ধারাবাহিক ভাবে হয়েছিল জানতাম। তবে হেমচন্দ্রের বইটিতে প্রায় সংস্কৃত শ্লোক ধরে ধরেই অনুবাদ করা আছে।