এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিবিধ

  • “কবি, তব মনোভূমি”: আদিকবির গল্পের গোছগাছ

    gargi bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২৩ এপ্রিল ২০২০ | ৩৮৪২ বার পঠিত
  • হতেই পারে এই লকডাউনের বাজারে টিভিতে রামায়ণ দিলে আপনি উলটো দিকে ঘুরে বসে মোবাইলে ওয়েব সিরিজ ঘাঁটতে থাকেন, কিন্তু অস্বীকারের কোন পথ নেই যে বাল্মীকি জম্পেশ করে একখান কাব্য লিখেছিলেন বটে। বিশেষ করে আজ যখন মেন্টাল হেলথ বজায় রাখতে বই পড়ার উপদেশাবলী অঝোর ধারায় বর্ষিত হচ্ছে সকল সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে, তখন ঐ আদিকাব্যটিকে ভুলি কেমন করে? আচ্ছা, না হয় রাম নয়, বরং যার মনের খাতায় রামায়ণের জন্ম হল তার কথা বলা যাক। আপনিও ‘পড়েছি যবনের হাতে...’ ইত্যাদি বল-টলে নেহাত অন্যমনস্কের ভঙ্গিতে এদিকে একটু কান দিন। আসলে বাল্মীকি যেমন করে কাব্যটি বেঁধেছেন তাতে অতি আধুনিক কবি সাহিত্যিকেরাও হার মানবেন। সেকথা বলতেই এই ধান ভানতে শিবের গীত গাইলুম।  আমাদের পাখির চোখ আসলে বাল্মীকির কাব্যের গোছগাছ।  

    আপনি এই ফাঁকে বলতেই পারেন, নতুন করে আর বলবেন কি? ঐ তো রাম না হতে রামায়ণ। উহুঁ, অতটাও সহজ নয়। আচ্ছা, বলুন দেখি, রামায়ণ, মানে অবশ্যই বাল্মীকি রামায়ণের শুরুটা কোথা থেকে? আসলে রামায়ণের অনেকগুলো ফর্ম আছে কিনা, নামও, গোত্রও। তার মধ্যে বাল্মীকিরটাই মনে করা হয় কাব্য ফর্মে প্রথম। রামকথা অনেক আছে, সেকথা আজ নয়। হ্যাঁ, শুরুটা তাহলে কি দিয়ে? আমার অভিজ্ঞতায় এ কোয়েশ্চেনের কমন আনসার হল – রত্নাকার থেকে বাল্মীকির বাল্মীকি হয়ে ওঠা দিয়ে। মানে ঐ যে দস্যু রত্নাকর ডাকাতি করত, তরপর তার পাপের বোঝা কেউ নিতে রাজী হল না, বাবা মা, এমনকি বউও নয় (এই তালে আপনার ঠোঁটের কোণটি ঈষৎ বক্র হাসিতে ভরপুর হতেই পারে)। তারপর সে মরা মরা করতে করতে রামনামে উদ্ধার হল। বল্মীকের স্তূপ ভেদ করে উঠে তার নতুন নাম হল বাল্মীকি। ব্যাস, অমনি আপনি রসোগোল্লার সাইজের একটা জিরো পেলেন খাতায়। কারণ ওটি কৃত্তিবাসের লেখা, বাল্মীকির রামায়ণে নেই কোত্থাও। অধ্যাত্ম রামায়ণেও অবশ্য একটুখানি ইঙ্গিত রয়েছে তার।

    এইবার আপনি একটু নড়ে চড়ে বসলেন, আচ্ছা তাই নাকি? ভেবেই বুকসেলফে রাজশেখর বসু বা হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য আছে কিনা মনে করার চেষ্টা করলেন। ধুলোর আড়ালে চলে গেছে কোথায় ভাবতে ভাবতে আরেকটা উত্তর ঝটাপট রেডি করে ফেললেন – ঐ ক্রৌঞ্চ-মিথুন বধ, ঐ মা নিষাদ ... ঐখানেই রামায়ণের শুরু। কাছাকাছি এসে পড়েছেন, তবে ততটাও নয়। তাহলে যে আধুনিক কাঠামোটার কথা বলছিলুম তার বাঁশ, দড়া-দড়ি বাঁধা শুরু হত কোথা থেকে। আচ্ছা, বলছি গুছিয়ে, আপনিও গুছিয়ে বসুন, দরকার হলে খাতা কলম সঙ্গে নিয়ে। অঙ্ক আছে বিস্তর।           

    সব্বার আগে এইটা বলুন দেখি কেউ যখন কোনকিছু লেখে, মানে রচনা করে তার এগোনোর রাস্তাটা কেমনতরো হয়? আপনিও তো লেখেন মাঝেসাজেই। ঐ দেখুন লজ্জা পাচ্ছেন কেন? লুকোবারই বা চেষ্টা করছেন কেন? নিজের নাম নিজের লেখাপত্তরের সঙ্গে জুড়ে দেবার একটা বেশ রেওয়াজ ছিল পুরোনো দিনে। শোনেন নি ঐ যে ছড়াপত্তরের লেখার শেষের লাইনে ‘অমুকে ভনে, তমুকে বলে’ ইত্যাদি? বাল্মীকি সে পথের এক্কেবারে শুরুর দিকের গুরু। তিনিও বেশ ঘটা করে নিজের নাম ধাম দিয়েই রামায়ণ লিখছেন, তারপর কেমন করে লিখছেন ইত্যাদি বলে তবেই কলমের খোঁচায় রামের জন্ম দিয়েছেন। তাই বলছি, নিজের লেখক হওয়ার গুণপনা না লুকিয়ে ভাবুন দেখি কেমন করে লিখতে শুরু করেন? তা সে কলম দিয়ে হোক বা ল্যাপটপের কী-বোর্ডে হোক। এইখানে এসে আপনি আমার বালক সুলভ অজ্ঞতার আভাস পেয়ে মনে মনে একটু নিজের গোঁফে তা দিয়ে মুখ খুলবেন - আহা, কলম ধরার কথা এত তাড়াতাড়ি আসছে কোথা থেকে? তার আগে তো প্রোডাকশনের জন্য কাঁচামাল চাই। অর্থাৎ, বেসিক ইনফর্মেশন চাই। আর তার পরে সেগুলো নিয়ে একটা মক্সো করা চাই। যদি সৃজনশীল লেখা হয় তাহলে খানিক নিজের কল্পনার গোড়ায় ঘাস উগিয়ে সেগুলোও গুছিয়ে দেওয়া চাই। হুম, আমিও সেকথাই তো বলছি। বাল্মীকিও তাইই করেছিলেন।

    তাই করেছিলেন? মানে, তাঁকে কাঁচামালের সাপ্লাই কে দিল? উত্তরটা তো সোজা জলের মত। সেই দিল, যার পক্ষে দেওয়াটা সবচেয়ে সহজ। যিনি বিশ্বভুবন চষে বেড়ান নিজের ঢেঁকিটি চড়ে। ঠিকই ধরেছেন, নারদ জোগালেন সে বেসিক ডাটা। সক্কলের উঠোনের খবরের শিরোনাম যে তার বীণার তারে। এখান থেকেই শুরু বাল্মীকির রচনা। মানে কেবলমাত্তর লিখেই বিশ্বজয় করেন নি, নিজের লেখার হাল-হকিকত, জোগাড়-যান্তির কথাও  লিখে গেছেন সেইখানেই। মানে কাব্য শুরু হবার আগে তার বাইরের একখান কাঠামো দাঁড় করিয়েছেন, যেটা কাব্যের মধ্যেও বটে, বাইরেও বটে। এইরকমটা তিনি বারবারই করে চলেছেন। এই তিনি স্টেজে আছেন, এই তিনি নেই। ভুলে গেলে চলবে না যে বাল্মীকি নিজেও এই রাবণবধ কাব্যের একটা চরিত্র।

    নারদের কাছে বাল্মীকি জানতে চেয়েছিলেন পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ আছে কিনা যিনি “গুণবান, বিদ্বান, মহাবল, পরাক্রান্ত” প্রভৃতি। প্রভৃতির লিস্টিটা এতো বড় ছিল যে নারদ তাঁকে জানিয়েছিল এমন একজন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। তবে হ্যাঁ, ইক্ষ্বাকুকুবংশীয় একজন নরপতি আছেন বটে যার গুণের শেষ নেই, আর তার জীবনটাও বেশ থ্রিলিং। মানে একখান গল্প ফাঁদার পক্ষে দা-র-উ-ণ। ঘরোয়া ঝগড়া আছে, রাক্ষস-রাক্ষুসী আছে, এখান ভিলেনও আছে জবরদস্ত। যুদ্ধ-টুদ্ধ তো আছেই, আর স্পেশাল এফেক্টের ছড়াছড়ি – আকাশে ওড়াউড়ি, দশটা মুণ্ডু, পুস্পক রথ। এমনকি একখান নির্বাসনও আছে। যদিও একথা কবি স্পষ্ট করে লেখেন নি যে হঠাৎ করে এমন একজন মানুষের খবরে তাঁর কি দরকার ছিল। সে কি নেহাতই নির্ভেজাল জ্ঞান বাড়ানোর জন্য, নাকি কোথাও মনের কোন গভীর কোণে সৃষ্টির একটা উত্তাপ তৈরি হচ্ছিল। যাইহোক, নারদ তো রামের জীবন কথা আদ্যোপান্তো বলে দিলেন। তবে সেটা নেহাতই ঐ কাঁচামাল মাত্র। অর্থাৎ গল্পের কাঠামোর বাঁশ-টাশ গুলো পড়ল বটে, তবে তার আকারটা চোখের সামনে ফুটল না। কারণ বাল্মীকির লেখার সূক্ষ্ম ভাঁজগুলো তাতে নেই, সবচেয়ে বড় কথা হল যে পুরো উত্তরকাণ্ডটাই বাদ।

    নারদের কথা শেষ হল এইভাবে “যে ব্যক্তি এই আয়ুষ্কর, পবিত্র, পাপনাশক, পুণ্যজনক, বেদোপম রামচরিত পাঠ করবেন, তিনি সকল পাপ হইতে মুক্ত হইয়া পুত্র, পৌত্র ও অনুচরগণের সহিত দেহান্তে দেবলোকে গিয়া সুখী হইবেন”। স্টাইলটা বেশ চেনা চেনা লাগছে না? পুরাণগুলোর সাথে মিল, এমনকি পাঁচালী বা মঙ্গলকাব্যের সঙ্গেও খুব মিল। এখানে যা খেয়াল করে মনে মনে টুকে রাখার তা হল, নারদ যখন তাঁর সুদীর্ঘ বক্তৃতাটি দিচ্ছিলেন সেসমইয়েই কিন্তু রামকথা বা রামচরিতের অস্তিত্ব ছিল। অর্থাৎ, বাল্মীকি যার ওপর নির্ভর করে নিজের লেখার কাঠামো খাড়া করেন, তা আসলে এক বা একাধিক প্রচলিত কথা। সেই কথা যাদের মুখে মুখে ছড়াতো, নারদকে কি সেই তাদেরই এক চরিত্রায়ণ বলা যেতে পারে?

    নারদের কথা চলেছিল প্রথম কাণ্ডের প্রথম সর্গ জুড়ে। এই ব-কার বিহীন সর্গের মানে হল সৃষ্টি। গোটা রামায়ণের কাণ্ডগুলো সর্গে ভাঙ্গা। পরের দিকে যত কাব্য লেখা হয়েছে তার বেশিরভাগই এই সর্গের ভাগাভাগিটাকে অনুসরণ করেছে। তাই তো রামায়ণ আদিকাব্য, বাল্মীকি আদিকবি। তবে আমরা এখন গল্পের যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখানে তখনো বাল্মীকি আদিকবি হন নি। তার জন্য আমাদের হাঁটা লাগাতে হবে তমসা নদীর দিকে। ভাগীরথীর অদূরে বইছে তমসা, জল তার স্বচ্ছ, বাল্মীকির ভাষায় “সচ্চরিত্র মানুষের চিত্তের ন্যায়”। এই তমসার তীরেই হয়েছিল ক্রৌঞ্চ-মিথুন বধ। মজার ব্যাপার হচ্ছে যে নিত্যদিন এমন কত ঘটনার সাক্ষী হয় কত মানুষ, কত মৃত্যু, কত বিরহ। আর ব্যাধের তীরে পাখির বধ - এ তো আকছার ঘটছে। কিন্তু ক’জনের মন সেই দেখে অমন তোলপাড় হয়? কবিদের হয়, কারণ তারা যে ক্রান্তদর্শী, তারা স্থান, কাল, ঘটনা অতিক্রম করে দেখতে পান, দেখতে পান অন্তঃস্থল পর্যন্ত। বাল্মীকিও পেয়েছিলেন সেই মুহূর্তে। পাখিদুটোর একটাকে (পুরুষ পাখিটিকে) ব্যাধের বাণে ছটফটিয়ে মরতে দেখে, আর যে পড়ে রইল তার কান্না শুনে বাল্মীকির কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে এল “মা নিষাদ” ইত্যাদি। শোক থেকে জন্ম বলে তার নামকরণ বাল্মীকি নিজেই করলেন শ্লোক। সেই শুরু। ভেবে দেখুন সংস্কৃত ভাষায় ছন্দোবদ্ধ কিংবা সুর করে কাউকে কিছু বলতে শুনলে লোকে আজও বলে – ঐ দেখ অং বং চং শ্লোক অউড়াচ্ছে। কথাটার মধ্যে একটা অমর্যাদার শ্লেষ উঁকি দিলেও যেটা ভাবার বিষয় সেটা হল এই যে, শোকের সঙ্গে শ্লোকের সম্পর্কের দাগটা গেছে মুছে, রয়ে গেছে যা, তা হল ছন্দ আর সুরের হাতধরাধরি। বাল্মীকিও খেয়াল করেছিলেন এই গাঁটছড়াটা। ভরদ্বাজকে বলছিলেন সেকথা। ও হ্যাঁ, বলতে ভুলে গেছি এই গোটা ঘটনাটার সাক্ষী ছিলেন শিষ্য ভরদ্বাজ গোত্রীয় কেউ। তাঁকে গুরু বললেন “এই বাক্য চরণবদ্ধ অক্ষর-বৈষম্য-রহিত ও তন্ত্রীলয়ে গান করিবার সম্যক উপযুক্ত হইয়াছে।” অর্থাৎ কিনা বেশ ছন্দ-টন্দ আছে, আর গান করে গাওয়াও যাবে (তারের যন্ত্র বাজিয়ে অবশ্যই, সে সময়ে সঙ্গীত সাধনার রীতিও বোধহয় তাই ছিল)। আর ততক্ষণাৎ এইখানেই, আগামীতে রচিত হতে চলা কাব্যের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গেল।

    আশ্রমে ফিরে এসেও বাল্মীকি ধাতস্থ হতে পারছিলেন না। এমনকি প্রজাপতি ব্রহ্মা দেখা করতে এসেছেন, তাঁর সামনেও বারবার অন্যমনস্ক হয়ে হড়ছিলেন। ব্রহ্মা অন্তর্যামী। বাল্মীকির মনের অবস্থা আন্দাজ করতে পেরে আশ্বাস দিলেন, তাকে নিশ্চিন্ত করে যা বললেন তার মর্মার্থ দাঁড়াল এই যে, ভয় পেয় না। তমসার তীরে যা কিছু হয়েছে সব আমারই ইচ্ছায়। আপাতত ঐ শ্লোক দিয়ে নারদের কাছে যা শুনেছ সেসব লিখে ফেল চটপট। এমনকি, নারদ যা বলেন নি সেসব কথাও রচনা করবার ছাড়পত্র দিলেন চতুরানন – “নারদ যাহা কহেন নাই, রচনাকালে তাহাও তোমার স্ফুর্তি পাইবে। তোমার এই কাব্যের কোন অংশই মিথ্যা হইবে না।” – অরিজিনাল সংস্কৃত অংশটা তুলে দেবার লোভ সামলাতে পারলুম না। ব্রহ্মা বললেন –

    তচ্চাপ্যবিদিতং সর্বং বিদিতং তে ভবিষ্যতি/

    ন তে বাগনৃতা কাব্যে কাচিদত্র ভবিষ্যতি// (বালকাণ্ড, দ্বিতীয় সর্গ, শ্লোকসংখ্যা ৩৫)। 

    এইখানে এসে আরেক লম্বা দাড়িওয়ালা ক্রান্তদর্শীর শরণ নিতে হয়। তাঁকেই আপামর বাঙালী ঠাকুর বলে চেনে, তাঁর গানেতেই হৃদয় থাকে বাঁধা। কবিতার নাম ‘ভাষা ও ছন্দ’। সেখানে রবি কবি এই নারদ, তমসা, ক্রৌঞ্চ-মিথুন বধ আর ছন্দোবদ্ধ ভাষার জন্ম সবই আবার করে রচেছেন, অবশ্যই ‘আপন মনের মাধুরী মিশায়ে’। সেখানেই ব্রহ্মার কথা নারদের মুখে বসিয়েছেন তিনি –

    নারদ কহিলা হাসি, “সেই সত্য যা রচিবে তুমি,

    ঘটে যা তা সব সত্য নহে। কবি, তব মনোভূমি

    রামের জনমস্থান, অযোধ্যার চেয়ে সত্য জেনো।”     

    এই ছাড়পত্রটাই সমস্ত কবিকুলের খোলা জানলা, খোলা পথ, খোলা হাওয়া। যুগে যুগে সমস্ত কবি উত্তরাধিকার সূত্রে তা পেয়েছেন। সে ছাড়পত্র এনেছিলেন বাল্মীকিই। 

    সেই ছাড়পত্র পেয়েই তার পরের ধাপ অবশ্যই কাঁচামাল থেকে কাঠামোটা তৈরি করে ফেলা। নারদের কথাতেই গোটা রামকথা মোটামুটি একবার বলা হয়েছিল। তৃতীয় সর্গে এসে বাল্মীকি তাকে নিজের মতো করে গুছিয়ে সাজালেন, আকৃতিতে একটু ছোট দেখতে লাগতে পারে, কিন্তু ঘটনার ঘনঘটা তাতে কম কিছু নেই। একটা যেন সূচীপত্রের মতো। অর্থাৎ, নারদের কথা যদি হয় সূচীপত্র ১, তাহলে এটি সূচীপত্র ২। তবে এই সূচীপত্র ২ তে এসে উত্তরকাণ্ডের একটু আভাস পাওয়া যায়। কেবলমাত্র সীতা পরিত্যাগের কথাটা রয়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গে আর একটু ইঙ্গিত দেওয়া আছে – “মহর্ষি বাল্মীকি এই সমস্ত এবং রামের অপ্রচারিত অন্যান্য সমুদায় বিষয় স্বপ্রণীত কাব্যমধ্যে বর্ণনা করেছেন।”     

    চতুর্থ সর্গে এসে উত্তরকাণ্ডের নাম শোনা গেল। কিন্তু সোজাসুজি সাতকাণ্ড না বলে উত্তরকাণ্ডকে যেন একটু আলাদা করে বসানো হল। বলা হল – বাল্মীকি রচিত এই কাব্যে পাঁচশো সর্গ ও ছয় কাণ্ড এবং উত্তরকাণ্ড প্রস্তুত আছে। এরকম ছুৎমার্গের ব্যাপার স্যাপার দেখে পণ্ডিতরা পুরো উত্তরকাণ্ডকেই প্রক্ষিপ্ত বলেছেন, যদিও তার বিপরীতে যুক্তিও রয়েছে প্রচুর। তবে আমাদের নজর সেদিকে না দিলেও চলবে। শুধু এটুকু ভাবা যেতে পারে যে, যেহেতু নারদের বর্ণনায় উত্তরকাণ্ডের ব্যাপার-স্যাপারের কোন উল্লেখ নেই, তাই বাল্মীকির নিজের সংযোজন বোঝাতে কি উত্তরকাণ্ডকে আলাদা করে উল্লেখ করেছেন? তাতে অবশ্য উত্তরকাণ্ডের গুরুত্ব কিছুমাত্র কমতি হয় না। কিন্তু আমাদের আলোচনায় তার থেকে বেশি নজরকাড়া ব্যাপার হল এই যে, বাল্মীকির রচনার পর রামায়ণ যেভাবে তমসার তীর থেকে জনগণের কাছে পৌছয়, তার মধ্যে উত্তরকাণ্ডর গুরুত্ব বাকি ছ’টার থেকে একদম আলাদা। সেখানে উত্তরকাণ্ডটাই মঞ্চ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে আদিকাব্য গান করার জন্য।

    এখন প্রশ্ন হল গান করবে কে? আচ্ছা, নাটকের চরিত্রদের কি বলা হয় বলুন তো? ঠিকই ধরেছেন, এককথায় তারা কুশীলব বলে পরিচিত। আর এই কুশীলবের নামকরণের সুতোটা বাঁধা আছে লব-কুশের নামের সাথে। কারণ, তাদের দুজনকেই বাল্মীকি দায়িত্ব দেন রামায়ণ গান করতে। তাদেরও সেজন্য রীতিমত মহড়া দিয়ে শিখতে হয়। মজার ব্যাপার হল পুরো রামায়ণটাই লব-কুশের গলায় গান হিসেবে শুরু। অর্থাৎ, বাল্মীকি নিজের কাব্যের জন্য দুজন ন্যারেটার ঠিক করলেন, যারা সেই কাব্যেরই দুটি অন্যতম চরিত্র। সে চরিত্রদুটির জন্ম কোথায়? উত্তরকাণ্ডে। আর তাদের দুজনকে বাল্মীকি রামায়ণ গান করার আদেশ দিচ্ছেন কোথায়? বালকাণ্ডে। এবং একই সঙ্গে তিনি পুরো কাহিনীর বর্ণনাটার সময় ও স্থানটা নিয়ে গিয়ে ফেলছেন উত্তরকাণ্ডে, তাও শেষের দিকে যেখানে রাম অশ্বমেধ যজ্ঞ করতে বসেছেন। সতরাং সেই ফর্মটা তো আছেই যে, কাব্যের কথক কাব্যের একটা চরিত্র, কখনো কাব্যের মধ্যে, কখনো বা বাইরে। তাছাড়া একটা গোটা বৃত্ত এঁকেছেন বাল্মীকি, শুরু আর শেষ যেখানে মিলেছে। তবে আবার সে বৃত্তের বাইরেও বেরিয়ে গেছেন অনায়াসে। সাধে কি আর বলেছিলুম যে কাঠামোর দিক থেকে অনেক আধুনিক সাহিত্যকেও ছাপিয়ে যায় এই মান্ধাতা আমলের কাব্য।

    একটু বেশি জট পড়ে গেল কি? চলুন তাহলে জটটা ছাড়াই। ফিরে যাই বালকাণ্ডের চতুর্থ সর্গে। বাল্মীকি রামায়ণ রচনার পর কুশ ও লবকে বাছলেন গান করার জন্য। এই পর্যায়ে কিন্তু তাদের পিতা-মাতার কোন পরিচয় দেওয়া হয় নি, তারা নেহাতই আশ্রমবালক। শুধু আভাসটুকুমাত্র পাওয়া গেল – “ ইঁহাদিগকে দেখিলে বিম্ব হইতে উত্থিত প্রতিবিম্বের ন্যায় রূপে রামেরই অনুরূপ বোধ হইত।” প্রকৃত পরিচয়টা কাব্যকার তুলে রাখলেন ক্লাইম্যাক্সের জন্য। তো, বাল্মীকির আদেশে এই সুদর্শন বালকযুগল গান গেয়ে বেড়ায়। প্রাথমিকভাবে তাদের শ্রোতা হন অন্যান্য মুনি ঋষিরা। একালের সেমিনারের মতো সেকালেও বুঝি মুনি-ঋষিদের জমায়েত হত  নিজেদের জমানো জ্ঞান আদানপ্রদানের জন্য। সেখানেই গান করত লব-কুশ, আর অসংখ্য সাধুবাদ কুড়ত। এরপর একদিন যখন অযোধ্যার রাস্তায় তারা গান করছে, রাজা রাম তাদের কথা শুনতে পেয়ে ডেকে পাঠালেন, আর গান শোনাতে আদেশ দিলেন। লবকুশও গান জুড়ল। এটুকু দিয়েই  বালকাণ্ডের চতুর্থ সর্গ শেষ আর পঞ্চম সর্গে দশরথের কথা দিয়ে রামায়ণের আসল শরীর শুরু। মানে রামায়ণটা লবকুশের গলায় গান, যা শুনছেন রামচন্দ্র স্বয়ং। এখন প্রশ্ন হল, ঐ দুই ভাই সুদূর অযোধ্যা পৌছল কি করে? কেনই বা গেল? উত্তর হল রামের অশ্বমেধ যজ্ঞের কারণে গেল। আর সে কথা জানা গেল মাঝের কাণ্ডগুলো পেরিয়ে গিয়ে সোজা উত্তরকাণ্ডের বিরানব্বই-তিরানব্বইতম সর্গে পৌঁছে। সুতরাং বাল্মীকির কাব্যির কাঠামো বুঝতে বালকাণ্ড থেকে আমাদের এখন পাড়ি দিতে হবে উত্তরকাণ্ডের বিরানব্বইতম সর্গে, যেখানে রাজাধিরাজ রামচন্দ্রের অশ্বমেধ যজ্ঞের জোগাড়-যান্তি চলছে ব্যস্তসমস্তভাবে।

    রাজসূয় যজ্ঞের ইচ্ছা ছিল অযোধ্যাপতির। কিন্তু কতগুলো কারণে শেষ পর্যন্ত অশ্বমেধ। বিশাল তার আয়োজন। ইন্দ্র, চন্দ্র, যম, বরুণ – কারোর বাড়িতেই নাকি এমন অনুষ্ঠান কেউ কখনো দেখে নি। রাজা-রাজড়াদের সাথে মুনি-ঋষিরাও এসেছে। সশিষ্য উপস্থিত বাল্মীকিও। শিষ্যদের মধ্যে আছে কুশ ও লবও। তাদের ডেকে ঋষি আদেশ দিলেন “তোমরা গিয়া পবিত্র ঋষিক্ষেত্র, বিপ্রালয়, রাজমার্গ, অভ্যাগত রাজগণের গৃহ, রাজদ্বার, যজ্ঞস্থান এবং বিশেষতঃ যজ্ঞদীক্ষিত ঋষিগণের নিকট পরম উৎসাহে সমগ্র রামায়ণ গান কর।” সেযুগে রাজাদের গুণপনা কীর্তন করে গান গাওয়া একটা প্রচলিত রেওয়াজের মধ্যেই পড়ত। আর এ তো রাবণ বধকারী রামচন্দ্র বলে কথা। তবে ঋষির কথা একটু খেয়াল করে দেখুন, কোথাও যেন তাঁর একটা আশা বা আশঙ্কা ছিল যে কোন না কোনভাবে রামের কানে এই সুমধুর গীতের কথা উঠবেই। এবং সেক্ষেত্রে এই দুই ভাইয়ের পরিচয় জিজ্ঞাসা করাই স্বাভাবিক। তিনি তাদের সেকথা বলেও দিলেন আগেভাগেই –“যদি রাজা রাম গীতশ্রবণের নিমিত্ত উপবিষ্ট ঋষিগণের মধ্যে তোমাকে আহ্বান করেন, তাহা হইলে তোমরা তথায় গিয়া রামায়ণ গান করিও।” তিনি আরো বললেন, “যদি রাম তোমাদিগকে জিজ্ঞাসা করেন তোমরা কার পুত্র, তখন বলিও আমরা বাল্মীকির শিষ্য।”

    ঋষির আন্দাজ পুরোপুরি মিলে গেল। রাজা তাদের গানের কথা শুনলেন, জানলেন এবং তাদের গান করার জন্য ডেকে পাঠালেন। কতদিন ধরে সে গান চলল তা বলা নেই স্পষ্ট করে, তবে একটা আন্দাজ করা যেতে পারে। লবকুশ প্রতিদিন কতটা করে গান করবে তার একটা সুস্পষ্ট নির্দেশ বাল্মীকি দিয়ে দিয়েছিলেন আগে ভাগেই – রোজ কুড়িটি করে সর্গ। বালকাণ্ডে রামায়ণের আকার-আকৃতির একটা পরিচয় দেওয়া হয়েছিল আগে – “চতুর্বিংশতি সহস্র শ্লোকে পাঁচশত সর্গ ও ছয় কাণ্ড এবং উত্তরকাণ্ড প্রস্তুত আছে”। তাহলে কিনা, উত্তরকাণ্ড বাদ দিয়ে বালকাণ্ড থেকে যুদ্ধকাণ্ড পর্যন্ত যদি ধরি তাহলে অঙ্কটা দাঁড়ায় মোটামুটি এরকম – ৫০০ ÷ ২০ = ২৫। একদিনও ছুটি না নিয়ে উত্তরকাণ্ড বাদ দিয়ে অন্তত ২৫ দিন লেগেছিল রামায়ণের ছয়কাণ্ডের গল্প বলতে। লবকুশ প্রথম দিন শুরু করেছিল এক্কেবারে গোড়ার কথা দিয়ে, অর্থাৎ কিনা নারদের উক্তি দিয়ে। এখন প্রশ্ন হল, উত্তরকাণ্ড তখনই পড়া হয়েছিল কিনা। কারণ পুরো কাব্যের ঘটনাক্রম তখনও কিছুটা ঘটতে বাকি। বাকি সীতার পাতালপ্রবেশও। তবে উত্তরকাণ্ড হয়ত কিছুটা নিশ্চয়ই ঐ প্রথম পর্যায়েই গান করা হয়ে গিয়েছিল। কারণ সেখান থেকেই রামচন্দ্র জানতে পারেন যে, কুশ ও লব সীতারই পুত্র। চেহারার মিল তো বহু আগেই খেয়াল করেছেন সবাই। আর সেই পরিচয়েই এবার সীলমোহর লাগানোর পালা। ডেকে পাঠানো হল সীতাকে।

    সীতার পাতালপ্রবেশের গল্প আর বলছি না, দরকারও নেই। তাই তার পরের অংশ থেকে শুরু করা যেতে পারে। সীতার পাতালপ্রবেশের পর সে রাত্তিরটা রামচন্দ্র দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বাল্মীকির পর্ণকুটীরে কাটান। পরেরদিন সকাল থেকে আবার রামায়ণ গান শুরু হল “রাত্রি প্রভাতে রাম ঋষিগণকে আনয়নপূর্বক পুত্র কুশীলবকে কহিলেন, এক্ষণে তোমরা নিঃশঙ্কচিত্তে উত্তরকাণ্ড আরম্ভ কর। মহাত্মা ঋষিগণ স্ব-স্ব আসনে উপবিষ্ট হইলেন এবং কুশীলব গান করিতে লাগিলেন।” এর পর রাম ও তাঁর ভাইদের স্বর্গারোহণ পর্যন্ত রামায়ণ, কিন্তু সেখানে কুশ ও লবের গানের কথা আলাদা করে কোথায় শেষ হল সে কথা বলা নেই। সব কথা বলা থাকে না, বলতেও নেই।

    আরে, অ মশাই, আবার যে ওয়েব সিরিজ নিয়ে বসে গেলেন। শেষটুকু শুনবেন না? এইবার অমূল্য সময় এইভাবে নষ্ট করায় যার-পর-নাই বিরক্ত আপনার সেই মোক্ষম প্রশ্নটা করার পালা – বলি, এই সাতকাণ্ড রামায়ণ কেন এত ঘটা করে শোনানো হল? রামায়ণ তো বলি নি মোটে, বলেছি বাল্মীকির কাব্যলেখার টেকনিক। তার দরকার ছিল বই কি। রামায়ণের যে একটা সাহিত্যের চেহারা আছে তা তো নানান এদিক ওদিকের কথায়-অকথায় ভুলতে বসেছি প্রায়। ভেবে বলুন দিকি, রামায়ণের কাঠামো যে এত জটিল তা কি কোনদিন ভেবেছিলেন আগে? একথাও কি কখনো ভাবা গিয়েছিল যে আগাগোড়া রামায়ণটা ফ্ল্যাশব্যাকে দেখানো? আর ফ্ল্যাশব্যাক মানেই একটা পরিপূর্ণ বৃত্ত থাকবে, ন্যারেটারের কথা শেষ হবে সেখানেই, যেখানে সে শুরু করেছিল। কিন্তু বাল্মীকি আরো খানিক এগিয়ে গিয়ে সে বৃত্তের বাইরে আরো কিছু কথা বললেন, রাস্তা দেখালেন কেমন করে সৃজনশীলতা কলমের মধ্যে দিয়ে অমরত্ব পায়, কেমন করে উপাদান জোগাড় থেকে আরম্ভ করে তার গায়ে মাটি লাগিয়ে প্রতিমার চক্ষুদান হয়। তাকে বৃত্তের পরিধির বাইরে রাখা যেতে পারে, বা আরেকটা বড় বৃত্তও বলা যেতে পারে। মধ্যিখানের ঐ ছোট বৃত্তটাতে বাল্মীকি আর লব-কুশ গল্পের চরিত্র, গল্পের প্রয়োজনে তারা এসেছে। বাইরের বড় বৃত্তের পরিধিতে তারাই গল্পের লেখক ও কথক। রচনা ও গান এই দুই দিয়ে সম্পূর্ণ হল আদিকবির গোছগাছ। কি মনে হচ্ছে? খ্রীষ্টপূর্ব অব্দের রচনা, নাকি উত্তর আধুনিক কালের সাহিত্য?   

    উদ্ধৃতি সূত্রঃ

    সংস্কৃত – শ্রীমদ্‌বাল্মীকীযরামাযণম্‌, গীতা প্রেস।

    বাংলা – বাল্মীকি-রামায়ণ, অনুবাদ –হেমচন্দ্র ভট্টাচার্য, ভারবি।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ২৩ এপ্রিল ২০২০ | ৩৮৪২ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    দরজা - gargi bhattacharya
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • N C Chakrabarti | 162.158.***.*** | ২৩ এপ্রিল ২০২০ ২০:৪৭92639
  • Ramayan revolves around Load Ram & this can be a reason of not going into the details of his next generation. 

    Well written & thoroughly enjoyed.

  • N C Chakrabarti | 162.158.***.*** | ২৩ এপ্রিল ২০২০ ২০:৪৭92640
  • Ramayan revolves around Load Ram & this can be a reason of not going into the details of his next generation. 

    Well written & thoroughly enjoyed.

  • b | 172.69.***.*** | ২৩ এপ্রিল ২০২০ ২১:৪২92642
  • মহাভারতও তাই। বলছেন বৈশম্পায়ন, জন্মেজয়কে। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের বহু পরে।
    লেখাটার জন্যে ধন্যবাদ।
  • হখগ | 162.158.***.*** | ২৩ এপ্রিল ২০২০ ২৩:১৭92643
  • চমৎকার সুখপাঠ্য লেখা। কিন্তু মূল আর্গুমেন্ট যদি এটা হয় ," স্টাইলটা বেশ চেনা চেনা লাগছে না? পুরাণগুলোর সাথে মিল, এমনকি পাঁচালী বা মঙ্গলকাব্যের সঙ্গেও খুব মিল। এখানে যা খেয়াল করে মনে মনে টুকে রাখার তা হল, নারদ যখন তাঁর সুদীর্ঘ বক্তৃতাটি দিচ্ছিলেন সেসমইয়েই কিন্তু রামকথা বা রামচরিতের অস্তিত্ব ছিল। অর্থাৎ, বাল্মীকি যার ওপর নির্ভর করে নিজের লেখার কাঠামো খাড়া করেন, তা আসলে এক বা একাধিক প্রচলিত কথা। সেই কথা যাদের মুখে মুখে ছড়াতো, নারদকে কি সেই তাদেরই এক চরিত্রায়ণ বলা যেতে পারে?" -তাহলে নতুন কথা টা কি , বুঝলাম না। সর্গ ইত্যাদি স্ট্রাকচার টা 'আদি'-ত্ব আরোপের একটা কারণ বূঝলাম, কিছু এটা বহুদিন ধরেই প্রতিষ্ঠিত বহু ফর্মে রাম ইত্যাদির গল্প আছে, নানা সময় ভূগোল জূড়ে আছে, এবং এটাও প্রতিষ্ঠিত নানা ধরনের এপিক এর একটা ওপেন স্ট্রাকচার থাকে এবং সেটা 'আধুনিক'
    লিনিয়ারিটির বাইরে। পোস্ট মডার্নিস্ট দের এই
    লেয়ার , ডায়লজিসম এবং বাখতিনিয়ান জগঝম্পর খোঁজকে আবাজ দেবার জন্য ইউরোপের প্রেক্ষিতে লোকজন ত্রয়োদশ শতক এ উত্তর আধুনিক তার নিয়মিত খুঁজে পায়। অর্থাৎ স্ট্রাকচারের গল্পে টেক্সট ডেটিং এর টেকনিক ও এভিডেন্স না থাকলে একটা অসম্পূর্ণ তার থাকে। আমি সেটা আশা করতে শুরু করেছিলাম। এছাড়া মরালিটি আর ভাগ্যচক্র এই দুই বস্তূর কোডিফিকেশনের ভার টি নিয়ে আলোচনা না করলে এক ধরণের 'আমাদের আধুনিক উত্তরাধুনিক সব আছে হুঁ হুঁ বাওয়া' গোছের এই ইনসুলারিটির থেকে মুক্তি র পথ দেখানোর কাজটাই বাদ পড়ে। অতএব যে প্রত্যাশা তৈরি হল তাকে বর্তমান লেখককেই সমাধান এর পথে আনতে হবে।
  • বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত | 162.158.***.*** | ২৩ এপ্রিল ২০২০ ২৩:২০92644
  • হখগ না বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত হবে।
  • gargi bhattacharya | 162.158.***.*** | ২৪ এপ্রিল ২০২০ ২১:১৮92651
  • বোধিসত্ত্ব,

    আপনার উত্তরটা দেবার চেষ্টা করা যাক, সেই তালে আরো দুচার কথা এই লেখার নেপথ্য নিয়েও বলি।  আমার লেখা পড়ে প্রত্যাশা জাগছে, এটাই আমার কাছে সাত রাজার ধন মানিকের মতো লাগছে। যাই হোক, প্রসঙ্গে আসি। যদিও প্রশ্নটা বেশ জটিল ছিল, তবুও আমার স্বল্প বুদ্ধিতে তাকে ডিকোড করার চেষ্টা করলাম। “স্টাইলটা বেশ…চরিত্রায়ণ বলা যেতে পারে?” লেখার এই অংশটা (অনেক ধন্যবাদ এত মন দিয়ে পড়ার জন্য) মূল আরগুমেন্ট ছিল না। আমিও আসলে একটা গল্প বলতে বসেছিলাম – গল্প তৈরির গল্প। তাতে যদি যুক্তির কথা কিছু থাকে, তা হল কেমন করে উপাদান থেকে পূর্ণতা পায় একটা কাব্য। প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, তাহলে সব ছেড়ে বাল্মীকিকে নিয়ে পড়লাম কেন? কারণ এটাই যে, প্রথম যিনি রাস্তা দিয়ে হাঁটেন তাঁর কথার আলাদা গুরুত্ব থাকেই। ধুলোর পরত সরিয়ে সে স্মৃতি মনে করা মানে কখনই নয় “আমাদের আধুনিক উত্তরাধুনিক সব আছে হুঁ হুঁ বাওয়া” বলতে পারা। সে দাবি এ লেখাতে কোথাও করা হয়েছে বলে মনে হয় না। উত্তর আধুনিক সাহিত্যের কথাটা একেবারে শেষে একটা আলতো প্রশ্নের আকারে এসেছে, রামায়ণকে সেই ধাঁচে ফেলা হয় নি। তাছাড়া,  বাল্মীকির আগে যদি রামকথা “বহুদিন ধরেই বহুফর্মে রাম ইত্যাদির গল্প আছে, নানা সময় নানা ভূগোল জুড়ে আছে”, কিন্তু লক্ষ্য করার এটাই যে সেগুলো লিখিত কোন কাব্যের আকারে ছিল না। হয়ত মুখে মুখে ছোট-বড় গল্পগুলো বলা হত, হয়ত বিচ্ছিন্নভাবে, হয়ত খানিক একসঙ্গেও। কিভাবে তা বলা হত তার কোন গ্রন্থভিত্তিক প্রমাণ পাওয়া যায় না। এখানে ভরসা কেবল নারদের ঐ রামকথার উল্লেখটুকু। বাল্মীকিতে এসে সে কথা/গুলো একটা পূর্ণাঙ্গ রূপ পেল, এবং রচনার রূপ পেল। সংস্কৃত ভাষায় কোন গ্রন্থ রচনার ক্ষেত্রে ‘কৃ’ ধাতু প্রয়োগ হয় সবচেয়ে বেশি। যদি প্রাচীন পুঁথি খুলে দেখা যায় তাহলে “অমুকেন কৃতমিদম্‌” এরকম প্রায়শই চোখে পড়ে। রামায়ণের প্রথমদিকের সর্গগুলোতে কৃ ধাতু সহযোগে ‘বাল্মীকি রামায়ণ রচেছেন’ – এইরকম প্রয়োগ প্রচুর। তাছাড়া তৎকাল-প্রচলিত (যদিও সঠিক রামায়ণের কাল নিয়ে নানা মুনির নানা মত, তাই সে দিকে না গিয়েই) রামকথাতে নেই এমন বেশ কিছু ঘটনাও বাল্মীকির সংযোজন। ‘ছাড়পত্র’ এই পরিভাষায় তার ওপর খানিক আলোকপাত করা হয়েছিল আমার লেখাতে। রামকথার ওরাল ফর্ম থেকে রামায়ণ কাব্য হয়ে ওঠা – এটাই নতুন এখানে। এখানে মানে, এই লেখাতে। শুধুমাত্র তার  কাঠামো নিয়েই শুরু, এবং শেষ। ফোকাস থেকে বাদ গেছে অন্যান্য রামায়ণ, তাদের অনুবাদ, পুনর্লেখন ইত্যাদি প্রভৃতি। সে গণ্ডীর কথাও সব্বার প্রথমে জানিয়েছিলাম।     

    সবশেষে অনেক ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্য। কারণ প্রশ্নকর্তাই প্রকৃত শুভানুধ্যায়ী।  

  • বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত | 162.158.***.*** | ২৫ এপ্রিল ২০২০ ০১:৩৩92655
  • একটা স্ট্রে মন্তব্য কে আদৌ অ্যাড্রেস করার জন্য ধন্যবাদ। নিয়মিত প্রবন্ধ লিখুন। গুরুচন্ডালি কে প্রবন্ধ লেখার জায়্গা হিসেবে নির্বাচিত করার জন্য গুরুচন্ডালির পাঠক হিসেবে ধন্যবাদ জানাই।

    আমার এই প্রবন্ধটা চোখ টেনেছিল কারণ গুলো সহজেই অনুমেয়।
    প্রথমত বাল্মিকী রামায়নের টেক্স্ট , তার ওপেন নেচার বা তার আগের কথিত গল্পের নেচারের সাহিত্যিক এভিডেন্স দিয়ে আপনি যে কথা বলছেন, সেটা আসলে একটা লোক-গাথার লিখিত মহাকাব্য হয়ে ওঠার কাহিনী হয়তো আমাদের শোনাতে চাইছেন। কিন্তু এই একই সাহিত্যগুণ সংক্রান্ত কথা গুলি, নর্মালি মহাভারত সম্পর্কে বেশি ব্যবহৃত। রাম এবোঙ্গ তার গাথা অনেক বেশি পোলিটিকাল কাহিনী আমাদের দেশে। তো সেই পলিটিক্স এর থেকে ডিসোসিয়েশন টাকে হয়তো পোলিটিকাল কারণেই গুরুত্তঅ দিচ্ছেন, সাহিত্যিক সীমারেখা টানার প্রকল্পটা কোথাও কাজ করছে বলে মনে হয়েছিল।
    তুলসীদাসী টেক্স্ট এর পারিবারিক পূজ্য হয়ে ওঠার এবং মরাল রেফারেন্স পয়েন্ট হয়ে ওঠাটার থেকে মানুষের অকারণ ফোকাস সরাতে চান বলেই হয়তো বাল্মিকী র টেক্স্ট এ নজর দিচ্ছেন বলে মনে হয়েছিল।
    কিন্তু বিষয়টা যেহেতু রামায়ন, সেহেতু পরবর্তী মরাল-্সামাজিক কোডিফিকেশনের দায় কি বাল্মিকীর উপরে কিছুয় বর্তায় না? মানে না বর্তালেই ভালো, তাহলে তাকে আরেকটু এস্টাবলিশ আপনাকে ভবিষ্যতে করে একটা প্রবন্ধ কিন্তু এখানেই লেখার কথা একটু ভেবে দেখবেন। বাল্মিকীর লিনিয়ারিটি তুলসীদাসের থেকে কম এটা র এভিডেন্স দেখানোর একটা দায় কিন্তু রয়ে গেল।
    আরেকটা যেটা বোলছিলাম, প্লিজ, বিভিন্ন রামায়ন সংক্রান্ত রেফারেন্স দেবার সময় শুধু একটু সম্ভাব্য ডেটিং টেকনিক গুলি নিয়ে যদি আলোচনা করে একটি প্রবন্ধের সিরিজ আসে বেশ ভালো হয়, এই দাবীটাও জানিয়ে রাখা গেল। ধন্যবাদ। প্রকরণ স্টাইল এসব তো আপনি ই মালিক, বেছে নেবেন। নানা নিরীক্ষা প্রার্থনীয়।
  • ar | 108.162.***.*** | ২৫ এপ্রিল ২০২০ ০৩:২৭92656
  • "বিষয়টা যেহেতু রামায়ন, সেহেতু পরবর্তী মরাল-্সামাজিক কোডিফিকেশনের দায় কি বাল্মিকীর উপরে কিছুয় বর্তায় না?"

    বোঝা গেল না ..... ভবিষ্যতের মরাল বা সামাজিক কোডিফিকেশনের দায় কেন বাল্মিকীর উপরে বর্তাবে। লেখিকা নিজেই এখানে উল্লেখ করলেন যে তিনি গল্প তৈরীর গল্প বলতে চান। সব গল্প বা কবিতাকে বন্দুকের নল বা শোষণের আগ্নেয়গিরি সঞ্জাত হতে হবে, এমন তো নয়। আদিকবির সৃষ্টির উত্সমুখ হয়ত নিছকই নির্মল আনন্দ সহকারে কথকের ভূমিকা পালন করা। মরাল বা সামাজিক কোডিফিকেশনের দায় তো আগামীর! তা না হলে তো কাস্সাওজ্জি আর অভিজিৎ হত্যার দায় হজরতের মোঃ ওপর বর্তায়। বা হিটলার আসলে ইহুদী-বিদ্বেষী ছিলেন না, তার কৃতকর্মের জন্য যিশু বা তাঁর বারো সাথীই দায়ী।

    কোরাণিক অপব্যাখ্যার দায় যেমন হজরতের মোঃ নয়, তেমনি, ভবিষ্যতের মরাল বা সামাজিক কোডিফিকেশনের দায়্ভার বাল্মিকীর নয়। পরবর্তীর মরাল বা সামাজিক কোডিফিকেশনের দায় একান্ত ভাবেই পরবর্তী প্রজন্মের। গ্রহণ, বর্জন, পরিমার্জন ও পরিবর্তন; এর সব দায় পরবর্তী প্রজন্মের। সৃষ্টিকর্তার দায় সুধুমাত্র তাঁর জীবনকালেই সীমাবদ্ধ থাকে।

    আর তা না হ'লে, পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার অবলুপ্তির দায় এখন মার্ক্সকে নিতে হয়!!
  • বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত | 162.158.***.*** | ২৫ এপ্রিল ২০২০ ০৭:৪৪92658
  • এ আর:--)))))))))) এ প্রসঙ্গে সিপিএম আসবে এটা ভাবিনি:--)))))))) লেখক ভেবেছেন এরকম এভিডেন্স নেই। থ্যাঙ্কফুলি:--))))) আসলে বিষয়টা হল এটা মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত ভারতীয় পরিবারের মডেল রামের পরিবার, ভারতীয় হিন্দু পুরুষের মডেল একদিকে রাম অন্যদিকে কৃষ্ণ। এটা খুব ডিডাকটিভ লজিকে হয়নি কিন্তু হয়েছে :---)))) প্রতিটি নেশনেই ফাউন্ডেশন মিথ থাকে, আমাদের এগুলোই আছে। এবার তে সময়ে লিখিত হচ্ছে, তখন একটা সামাজিক মতাদর্শের ছবি পাওয়া সম্ভব, যদি ডেটিং করা যায়। এবার রামায়ন যেহেতু সাহিত্য তত্ব হিসেবে উত্তর আধুনিকতার খানিকটা আগেকার বস্তু তাই গার্গী তাঁর প্রবন্ধে যেমন খানিকটা মজা করে বাল্মিকী রামায়ন প্রসঙ্গে দুটি কথা বলছেন। এক বাল্মিকী রামায়ন যথা সম্ভব মূল টা পড়লে সাহিত্য রস বেশি, এবং তার ন্যারেটিভ স্ট্রাকচার টাই তাকে সমসাময়িক সাহিত্য আলোচনা র নিরিখে ই রেলিভ্যান্ট করে। সুতরাং পাঠকের পক্ষে আহা ব ইটি বড্ড পুরো নো বা গল্প তো সব জানি বলে আভয়েড করলে নিজেকে ই বঞ্চনা করা হবে। দুই যেটা বলছেন এবং সেটাই মেন এম্ফাসিস, যে বাল্মিকী তখন লিখছেন তখন তে ওরাল ট্রাডিশন ছিল তার এভিডেন্স হল নারদের ন্যারেটিভ। আর যেটা মেসেজ ছিল সেটা হল রামায়ন কে সাহিত্য হিসেবে দেখার অভ্যেস করা। যেটা আমরা হয়তো মহাভারতের ক্ষেত্রে খানিকটা করে থাকি।
    আমার বক্তব্য মূলতঃ ছিল প্রবন্ধ টি অসাধারন হ ওয়া সত্তেও প্রাবন্ধিক এর একটা স্ব - আরোপিত ঘেরাটোপ আছে , আমি চেষ্টা করছিলাম যদি ভবিষ্যতে কতগুলো প্রশ্ন নিয়ে লেখেন তার প্রস্তাব করতে , তাহলে ঘেরাটোপ টা ভাঙে। এবং সংস্কৃত জানাটা আরো বড় করে পাঠকের কাজে লাগে। যেমন
    কৃত্তিবাস আর তুলসীদাস ভক্তি আন্দোলনের দুটি দিক , এগুলি ভাষার ইতিহাস এর অঙ্গ যেমন, তেমন লোকমানস এর উপরে এদের প্রভাব আধুনিক অর্থে সাহিত্যে র থেকে বেশি। তো বলছিলাম যে নারদের এপিক টেক্সটে সারা ভারত জুড়ে তে রামের গল্প চলে তার যদি তুলনা মত করে তার রচনাকাল গুলি কে কি ভাবে নির্ধিরন করা হয়ে থাকে সেটাও যদি ভবিষ্যতে আলোচনা য় আসে ভালো হয়। আরো কয়েকটি বিষয়েও আগ্রহ প্রকাশ করেছি। আমার জেনেরালি মনে হয়েছে , এই প্রবন্ধ টা ইতিহাস, সাহিত্য এবং ফ্র্যাঙ্কলি এপিকের ফেমিনিস্ট লিভিং তিনটে জিনিসের সঙ্গম স্থলে বসে মাত্র শুধু বিশুদ্ধ সাহিত্যিক কনসার্ন গুলো য় সীমাবদ্ধ থাকছে, সেটা এই লেখার একটা প্রাবন্ধিক এর চয়েস হতেই পারে , কিন্তু ভবিষ্যতে উনিই প্রকোপ একটু বাড়াতে পারেন, এইসব ভেবে একথা বলা, যাই হোক এনগেজ করাই বিপদ দেখা যাচ্ছে::--)))))) করলেই সিপিএম :--)))) পশ্ঢিমবঙ্গ ও বামপন্থা আসিতেছে:::---)))) তাই হোক গুরু তে এরকম আরো আরো লেখা আসুক, এই প্রাবন্ধিক আরো প্রবন্ধ উপহার দিন , এটাই চাই।
  • বোদাগু | 162.158.***.*** | ২৫ এপ্রিল ২০২০ ০৭:৪৭92659
  • *****নারদের এপিক কথনের মত সারা ভারতে রামের গল্প যা ছড়িয়ে আছে ----ইত্যাদি।
  • বোদাগু | 162.158.***.*** | ২৫ এপ্রিল ২০২০ ০৭:৫০92660
  • ,*****এপিকের ফেমিনিস্ট " রিডিং "---- উফ বাবা অটো কারেক্ট।
  • বোদাগু | 162.158.***.*** | ২৫ এপ্রিল ২০২০ ০৭:৫৪92661
  • প্রকোপ না স্কোপ, গুগল এডিটর টি পাগল করে দিল।
  • b | 162.158.***.*** | ২৫ এপ্রিল ২০২০ ১২:৫০92667
  • "তুলসীদাসী টেক্স্ট এর পারিবারিক পূজ্য হয়ে ওঠার এবং মরাল রেফারেন্স পয়েন্ট হয়ে ওঠাটার থেকে মানুষের অকারণ ফোকাস সরাতে চান বলেই হয়তো বাল্মিকী র টেক্স্ট এ নজর দিচ্ছেন বলে মনে হয়েছিল।"

    বেচারা বাল্মীকি।
  • Atoz | 162.158.***.*** | ২৬ এপ্রিল ২০২০ ০৩:২২92678
  • বেচারা বাল্মীকি। হি হি হি ঃ-)
  • ar | 173.245.***.*** | ২৬ এপ্রিল ২০২০ ০৬:১৬92680
  • @বোদাগু

    আরে ছিঃ, আমি মাত্র বামপন্থার কথা বললাম, আপনি তাকে সিপিএমে টেনে নিলেনঃ)))
    অবশ্য কোরানিক আর বিবলিক্যাল প্রসঙ্গও উঠেছিল, তা যাক সে কথা।

    এই দায় বর্তায় প্রসঙ্গেই আমার আপত্তি এই মডেলটাতে। অর্থাৎ রামের পরিবারের মডেল, রাম বা কৃষ্ণ চরিত্রের মডেলে। এই নিয়ে দ্বিমত অছে। ভারতবর্ষ আর রামের মডেল একসাথে খাপে খাপ করতে যাওয়া বা চাওয়াটাও একটা মিথ বৈ আর কিছু নয়। বিশ্বকোষ প্রণেতা নগেন্দ্রনাথ বসুর মতে রামের দেবত্ব বা অবতারবাদ ঘোষণা করা মূল রামায়ণের উদ্দেশ্য নয়, এবং অবতারবাদের অংশগুলি বিশেষভাবে প্রক্ষিপ্ত। আবার এই বাল্মিকী কে শিখন্ডী করে যে মডেল এখন সারাভারতে চালান হয়, তার কতটা বাল্মিকীর আর কতটা তুলসীদাসী? ঐতিহাসিক্ভাবে, উত্তর ভারতের কিছু অংশ বাদে বাকী অংশে রামের বিশেষ প্রভাব ছিল না। দক্ষিণ ভারতের বড় অংশে ছিল শৈব বা বৈষ্ণবদের ধারা (বা ট্যাডিশন)। আবার পূর্ব ভারতে সেই মডেল এনে ফেললে, আমাদের বৌদ্ধ, জৈন আর লোকায়াত ধারাকে অস্বীকার করতে হয়। আশাকরি এইটা মেনে নিতে অসুবিধা নেই যে সেই ধারায় মর্যাদাপুরুষোত্তমের কোন স্থান নেই। তো আজ যদি হঠাৎ করে সবাই মিলে রামকে মডেল করে নেয় তাতে করে বাল্মিকীর দায়্টা কোথায়?

    এই প্রসঙ্গে একটু অফ-্টপিকে'এ যাই। বেশ কিছুদিন আগে সূর্য সেন স্ট্রীট দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি যে পূর্ব্তন পার্টী অফিসে বড় তালা ঝোলা। জানতে পারি যে তেমন লোক ও নেই। কিছু অবসর নিয়েছেন, বয়সের ভারে ক্লান্ত, কিছু ভয় পেয়ে দল ছেড়েছেন। ও পাড়ায় আমার ছাত্রজীবনের বহু বহু কাল কেটেছে। এমনটি কখন দেখেছিলাম বলে মনে পরে না। তো এই ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ প্রতীকী মনে হয়েছে। যেন একটা গোটা দলমত জনমতে তালা ঝুলিয়ে দিলাম। পরিবর্তনের প্রতীক আর কী? তো দেখুন বাঙ্গালা দেশে একটা বামপন্থা যুক্তিবাদী ধারা বরাবর ছিল। না, না, আমি মার্ক্সবাদী বা লেনিনবাদী কিছুই বলছি না!!! এ ধার মূলত বামাচারী ধারা বা বিপরীতো বা বিরুদ্ধাচার (তন্ত্র নয় কিন্তু)। এবং সেই ব্যাপারটা জ্ঞান বা যুক্তির পারস্পরিক আদানপ্রদানের পরম্পরা থেকেই উঠে এসেছিল। একে রাজা রামমোহনের কাল থেকে (ইচ্ছামত সময়্টা ধরে নেওয়া যাক) অমি প্রতিষ্ঠান বিরোধীতার ধারাও বলতে পারি। গোদা বাঙ্গালায়, প্রবাহের সাথে না চলে, নতুন কথা বলার সাহস দেখানো। সেটাও একটা ট্র্যাডিশন বলা যায়। তো এই ব্যাপারটা তুলসীদাসী মডেলের বাইরেই সৃষ্টি হয়েছিল। সময়্কালটা দেখবেন। বাঙ্গালার কনৌজ থেকে আগতদের বংশধরদের ওপর কিন্তু তুলসীদাসী রামায়ণের প্রভাব অতটা ছিল না। সেই মাইগ্রেশন (বল্লাল সেনঃ ১১৬০) তুলসীদাসের (১৫৩২-১৬২৩; ১৫৮৪-৮৫ রচনাকাল শুরু) বহু আগেই হয়েছিল। বাল্মিকীর কাল তো তারও বহু আগে। তুলনা করা যেতে পারে, ভারতের পুরোনো ইহুদীদের মধ্যে হানুকা যেমন জনপ্রিয় ছিল না। তাদের পূর্বদিকে মাইগ্রেশন ইতিহাসিক হানুকার সময়্কালের অনেক আগেই ঘটেছিল। বঙ্গতে রামের পুজো ছিল, আবার বৌদ্ধ, জৈন দর্শনের প্রভাবও বেশী ছিল। আরেকটা টইতে
    রঞ্জন রামচন্দ্র প্রসঙ্গে রামকৃষ্ণ পরমহংসের কথা লিখেছেন। তাঁর পরিবারের কুলদেবতা কিন্তু ছিল রঘুবীর (রামচন্দ্র নামে নয়)। তাতে করে রামকৃষ্ণের যত মত তত পথের ধারা প্রতিষ্ঠা করতে কোন অসুবিধা হয়নি। [আবার অদ্ভুতভাবে তখন জলাচলের সংস্কার পুরোমাত্রায় বিদ্যমান ছিল!!]। এর ওপরে একটা বড় সংখ্যায় মানুষ লোকায়াত ধারায় বিশ্বাসী ছিলেন। তাহাদের দর্শন, গুরুবাদ সবটাই তুলসীদাসী আর বাল্মিকীর প্রভাবের বাইরেই ছিল। ভানুবাবুর "নব-রামায়ন" কিছুটা এই প্রতিষ্ঠান বিরোধীতার ধারা থেকে সৃষ্টি। অমি নিশ্চিত যে এখনকার সময় হলে সেটা বলা বা শোনার জন্য লেখক, কথক আর শ্রোতা, সকলেরই গর্দান যেত। ৭০-৮০-৯০ এর কিছু নারীবাদী আলোচনাতে মর্যাদাপুরুষোত্তমের মডেলের বিরুদ্ধে বেশ কথাবার্তা হত। সেখনে শ্রীরামের এখনকার সর্বভারতীয় ইমেজ খুব একটা পাত্তা পেত না। সে অলোচনার দ্বার আমরা নিজেরাই রুদ্ধ করে দিয়েছি। এখন আমরা সাম্প্রদায়িকতা দিয়ে সাম্প্রদায়িকতা কে রোধ করার চেষ্টা করছি। বিরুদ্ধ বা বিপরীত মতামতকে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে, কিছু বলা বা শোনার অবকাশ কোথায়। আর প্রবাসে টক দ্য টক, ওয়াক দ্য ওয়াক, করতে গিয়ে সবাই মিলে জ্ঞান-যুক্তি-পরম্পরার ধারাটিকে বিসর্জন দিয়ে বসলে, সেই ম্যরাল কোডিফিকেশনের দায় বাল্মিকীর উপরে চাপিয়ে দেওয়ার কোন মানে হয় না।

    হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয়ের "হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধ গান ও দোঁহা" থেকে কয়েকটা লাইন তুলে দিতে ইচ্ছা হল।

    "দোঁহাকোষে এবং অদ্বয়বজ্রের টীকায় ষড়দর্শনের খন্ডন আছে। জাতিভেদের উপর গ্রন্থকারের বড় রাগ। তিনি বলেন, -- ব্রাহ্মণ ব্রহ্মার মুখ হইতে হইয়াছিল; যখন হইয়াছিল, তখন হইয়াছিল, এখন ত অন্যেও যেরূপে হয়, ব্রাহ্মণও সেইরূপে হয়, তবে আর ব্রাহ্মণত্ব রহিল কি করিয়া? যদি বল, সংস্কারে ব্রাহ্মণ হয়, চন্ডালকে সংস্কার দাও, সে ব্রাহ্মণ হোক; যদি বল, বেদ পড়িলে ব্রাহ্মণ হয়, তারাও পড়ুক। আর তারা পড়েও ত, ব্যাকরণের মধ্যে ত বেদের শব্দ আছে! আর আগুনে ঘি দিলে যদি মুক্তি হয়, তাহা হইলে অন্য লোকে দিক না। হোম করিলে মুক্তি যত হোক না হোক, ধোঁয়ায় চক্ষের পীড়া হয়, এই মাত্র। তাহারা ব্রহ্মজ্ঞান ব্রহ্মজ্ঞান বলে। প্রথম তাহাদের অথর্ব্ববেদের সত্তাই নাই, আর অন্য তিন বেদের পাঠও সিদ্ধ নহে, সুতরাং বেদেরই প্রামাণ্য নাই। বেদ ত আর পরমার্থ নয়, বেদ ত আর শুন্য শিক্ষা দেয় না, বেদ কেবল বাজে কথা বলে।" [খৃঃ ৮-১০ শতক]
  • বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত | 172.69.***.*** | ২৬ এপ্রিল ২০২০ ০৭:৩২92683
  • এ-আর, এবার আপনার কথা টার কনটেক্স্ট টা খানিকটা বেটার ধরতে পেরেছি। খুব ই সুন্দর ফেয়ার বক্তব্য। ধন্যবাদ, অ্যাকচুয়ালি কোন ফান্ডামেন্টাল দ্বিমত পোষণ করছি -ই না, আপত্তির ও কিছু পাচ্ছি না। খুব ই মনে ধরার মত কথা বলেছেন। আপনার কাছে আমাদের অনেক প্রবন্ধ পাওনা রইলো। অনেক লিখুন এবোঙ্গ গুরুচন্ডালি কে প্রবন্ধ লেখার জায়্গা হিসেবে বেছে নিন প্লিজ।

    রামায়ন এর যে ফর্মটার সংগে আমরা পরিচিত, তার প্রভাব মূলতঃ উত্তর ভারতে। আমার আগের বক্তব্যের ভৌগোলিক সীমাও তাই। অন্য প্রাচীন সাহিত্য কীর্তির সংগে ফাউন্ডেশন এপিক এর একটা পার্থক্য আছে, সেটা আশা করি অস্বীকার করবেন না। এবং শুধু ই প্রভাবসম্পন্ন সাহিত্য কীর্তি হোলেও রচনাকালের সামাজিক মতাদর্শের ছাপ থাকাই স্বাভাবিক। তো আমার বক্তব্য ছিল , শুধু সাহিত্যরস, কাব্যগুণ প্রভাভশালী টেক্স্ট এ দেখবো কেন? আর যদি দেখিয়ো, তাহলে ঐ আপনি যেরকম বললেন, দাক্ষিনাত্য সহ অন্যান্য রামায়নের সংগে একটা তুলনা করা যায় কিনা, এবং আদিত্ব আরোপন টা মূলা সর্গ ইত্যাদি গঠনাত্মক বৈশিষ্টের উপরেই শুধু নির্ভরশীল হওয়া উচিত কিনা, নাকি একটু বড়ো করে, বিভিন্ন রাম কথা গুলোর টেক্স্ট এর রচনাকাল গুলোকে প্রবন্ধের স্কোপের মধ্যে এনে, আঞ্চলিক বা ন্যারেটিভ এর বিভিন্নতার আলোচনাটি করা যায় কিনা। আমার মনে হয়েছিল তাতে রামায়ন কেও সেকুলার টেক্স্ট হিসেবে পড়ার যে আনডারলায়িঙ্গ আর্গুমেন্ট, সেটাই আরেকটু পোক্ত হত। আর ফাঁকে তালে আমাদের ও বিভিন্ন রাম কথা গুলোর কথা জানা যেত। টু বি ফেয়ার টু গার্গী, উনি প্র‌্যাকটিকালি স্কোপ স্টেটমেন্টে অনেক কিছুই বাদ দিয়ে নিয়েছেন।
    একটি সাহিত্য কীর্তি যখন ফাউন্ডেশনাল এপিক হয়ে ওঠে, সেটা শুধুই কালচক্র বা রচয়িতা ব্যতীত প্রজন্মান্তরের পাথক বা শ্রোতৃ-জনগোষ্ঠীর দায় নাকি আসলে একটা দেশের বা অঞ্চলের শাসকের দার্শনিক অবস্থানের ইতিহাস , এই প্রশ্নটা আমি অন্তত চাইছিলাম অ্যাড্রেস্ড হোক।

    'মডেল' শব্দটা ব্যবহারের সময়ে মনে হয়েছিল, একটা ক্ল্যারিফিকেশন জুড়ে দেই। কিন্তু দেওয়া হয় নি। বলছিলাম, পুরুষকারের অনেক মডেল ই আছে প্রাচীন গাথাগুলিতে, কারণ অনেক গাথার ই উদ্দেশ্য আচার নির্দেশ, ঠিক শুধুই পাঠ বা শ্রুতির জন্য কাহিনী নয়, আর্যাবর্তের শাসক-ধর্মের দিক থেকে লোকায়ত ধর্মঅভ্যাস গুলির কো-অপশনের ইতিহাস ই তার ক্ষমতার বলয়, বৈচিত্র বৃদ্ধির ইতিহাস এবং আমাদের বৃহদাকার নেশন স্টেটের ভিত্তি ;-) পূর্বাঞ্চলে কলিঙ্গে যেমন, জগন্নাথ পূজা প্রসঙ্গে হার্মান কুলকে স্মর্তব্য। মজাটা হল, শাসক পক্ষের পুরুষকারে রাজনৈতিক অর্থে কৃষ্ণ আর সামাজিক অর্থে রাম চরিত্র দুটি সত্যি ই অনুকরনীয় হয়ে উঠছে অন্য অসংখ্য চরিত্র কে ছাড়িয়ে। এবং অবশ্যই শাসক বা আদর্শ প্রজা পুরুষের পক্ষে। তো এর পেছনে কি কেবল সাহিত্যগুণ, নাকি লিখিত মহাকাব্য, একটা সময়ের সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় মতাদর্শের চিহ্ন হিসেবে দেখলেই বরঞ্চ রচনাকারের দায় বাড়ে না, প্রকৃত প্রস্তাবে কমে।

    সেই জন্যেই তুলনামূলক কালক্ষেপন টা কে গুরুত্তঅপূর্ণ মনে হয়েছিল। আর অন্য কথাটা তো আগেই বলেছি, এই একেবারেই যেন মজা করে হাল্কা গপ্প চ্ছলে কিছু সাহিত্য জগতের খবর দেওয়া হচ্ছে এরকম ভাবে লিখিত হলেও, মূল প্রবন্ধটি তে বিষয়ের দিক থেকে দেখলে, আমার এখনো মনে হচছে, বলা কথা গুলি র ওপেন স্ট্রাকচারের বা একাধিক ন্যারেটিভ এর দিক টা মূলতঃ মহাভারত সম্পর্কে বলা হত, তো সেটাকে বাল্মিকী রামায়নে প্লেস করেছেন , তো সেটা প্রাথমিক ভাবে খুব ই ইন্টারেস্টিং লেগেছে বোলেই এত কথা।
    যাই হোক, আর কথা আমার নতুন কিসু নেই, আপনার যা বলার রেকর্ড করে ফেলুন, পারলে প্রবন্ধাকারে। আমরা উপকৃত হবো, এই সন্দেহ যথেষ্ট দৃঢ় হয়েছে ;-)
  • b | 162.158.***.*** | ২৬ এপ্রিল ২০২০ ০৯:৩২92691
  • @গার্গী
    রামায়ণের এমন কোনো বঙ্গানুবাদ আছে, যেখানে শ্লোক ধরে ধরে অনুবাদ করা আছে? মানে শ্লোক/(তার অন্বয়)/এবং অনুবাদ একসাথে। মডেল হিসেবে , ধরুন বুদ্ধদেব বসু-র করা মেঘদূত বা নবপত্রের সংস্কৃত সাহিত্য সম্ভারের মতন।
    হেমচন্দ্রের বইয়ের যে এডিশন (তুলি কলম প্রকাশনা)ইন্টারনেটে পেলাম, সেখানে পাশাপাশি মূল সংস্কৃতে নেই।
  • o | 162.158.***.*** | ২৬ এপ্রিল ২০২০ ১৯:২৩92708
  • লেখা ও আলোচনা বেশ ভাল লাগল। চলুক।

  • gargi bhattacharya | 162.158.***.*** | ২৬ এপ্রিল ২০২০ ২১:০২92710
  • @b,

    গীতা প্রেস -এর বইতে সংস্কৃত শ্লোক সহ বাংলা অনুবাদ পাওয়া যাবে। হিন্দি ও ইংরেজি অনুবাদও আছে, তবে আলাদা এডিশনে। আর্যশাস্ত্র বলে একটি পত্রিকাতে একসময় এরকম বাংলা অনুবাদ ধারাবাহিক ভাবে হয়েছিল জানতাম। তবে হেমচন্দ্রের বইটিতে প্রায় সংস্কৃত শ্লোক ধরে ধরেই অনুবাদ করা আছে।

  • ar | 162.158.***.*** | ২৭ এপ্রিল ২০২০ ০৫:১৬92730
  • @বোধিসত্ত্ব

    আপনাকে ধন্যবাদ। নিশ্চয় লিখব। আপনিও লিখতে থাকুন। আমরা ঋদ্ধ হই।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন