
'গহনারবাক্স' বিরতির আগে পর্যন্ত দারুণ ছিল। হুট করে সেখানে 'বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ' টেনে আনা এবং কিছু আরোপিত বিষয় খানিকটা জোর করে গুঁজে দেবার কারণে ভালো হতে হতেও শেষ পর্যন্ত সেটা ভালো লাগেনি তেমন। পরেরটা ছিল 'আরশিনগর'। ওফফ! বার বার নিশ্চিত হওয়ার আর্জি জেগেছিল 'আরশিনগর' দেখতে দেখতে, সিনেমাটা কি আসলেই অপর্ণা সেনের! পরেরটা নিয়ে আমার ব্যাপক ব্যাকুল প্রতিক্ষা আর আশা ছিল। 'সোনাটা(Sonata)'। ভাগ্যিস শাবানা আজমি ছিলেন এটাতে। নইলে পর্দার অরুণা চরিত্র, যেটা পরিচালক স্বয়ং করেছিলেন, সে চরিত্রের আরোপিত কাঠিন্য দর্শক হিসেবে এই নাদানকে কেমন একটা দমবন্ধের অনুভূতি দিয়েছে সারাক্ষণ। অথচ অপর্ণা কত পছন্দের একজন! শাবানা আজমির চরিত্রটা 'সোনাটা'র প্রাণভোমরা বিশেষ। যাঁর উপস্হিতি দর্শকের জন্য স্বস্তিময় ছিল।
'ইতি মৃণালিনী'র পরপর এই সিনেমাগুলোতে ধারাবাহিকভাবে হতাশ করেছেন অপর্ণা সেন। বিভিন্ন সাক্ষাতকারে যতটা বলেছেন পর্দায় ততটা যেন বর্ষায়নি মনে হয়েছে এই নাদান দর্শকের। ওঁর পরমা, পরমার একদিন, জাপানিজ ওয়াইফ, মিস্টার এণ্ড মিসেস আয়ার দেখার আনন্দ আর হয়ত পাবো না, কিন্তু তার কাছাকাছি কিছু না পাওয়ার অভিমান জমছিল মনে। আজুখাজু কেউ হলে ধুততারি বলে অন্য কারোতে মগ্ন হতাম। কিন্তু ইনি যে ঋতুপর্ণের পরম আস্হার রিংকুদি। যিনি পঠন-পাঠনে কি ভীষণ ঋদ্ধ। এমন একজন পছন্দের তুখোড় মানুষের কাছে চাওয়াটা বেশিই থাকে। পাওয়ার ক্ষেত্রে এবারও তিনি হতাশ করবেন কিনা সেটা নিয়ে মন ঘোরতর ঘোঁট পাকিয়েছে।
'ঘরে বাইরে আজ' দেখবার আগে ভূতের রাজা দিও বর' কয়ে দেখতে বসেছি । মনে একটা ভয় বেয়াড়ার মত মাথা উঁচিয়েই ছিল। অতিশয় মেলোড্রামার প্লাবনে ভেসে না যায় সেলুলয়েডের ফিতে। দু' দুজন তাবড় মানুষেররেখে যাওয়া কাজের ভার অপর্ণা সেন কতটা দক্ষতার সাথে সামলাতে পারলেন সেটাও আড়ালে একটা প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করেছিল বৈকি। কিন্তু তিনি সব আশঙ্কার মুখে বেশ একটা ঝামটা দিয়ে একেবারে নিজস্ব ঢংয়ে উপস্হিত করলেন 'ঘরে বাইরে আজ' কে। সেখানে না রবীন্দ্রনাথের চোখ পাকানোর কোনো সুযোগ থাকলো, না সত্যিজিতকে ঘাড় তুলে জলদগম্ভীর গলায় বলতে দেয়া হলো- হচ্ছে টা কী! এমনটাই মনে হয়েছে বাহে আমার।
'ঘরে বাইরে' গল্পের কাঠামোয় আজকের সময়কে দারুণ সাহসের সাথে উপস্হিত করেছেন অপর্ণা সেন। সেজন্য তাঁর সাধুবাদ পাওনা। অপর্ণার নিখিলেশ চরিত্রের সাথে যেন অদৃশ্যে যেন হেঁটে গেছেন ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারিতে প্রাণের বই মেলার সামনে স্বদেশি ঘাতকের কোপে নিহত অভিজিৎ রায় কিংবা ২০১৭সালের ৫ সেপ্টেম্বরে নিজের বাড়ির সামনে 'অজানা আততায়ীর' হাতে নিহত সাংবাদিক গৌরি লঙ্কেশ। আমাদের চারপাশে মুখোশে ঢাকা সুবেশি-জ্ঞানবান সন্দীপেরা বুকের ভেতর বিষ নিয়ে ছড়িয়ে আছে! ঘন হয়ে আসা অন্ধকার দুহাতে ঠেলে সরানোর আন্তরিকতায় শুভবুদ্ধির মানুষের প্রতিনিধি বৃন্দা কিংবা বৃন্দারা এখনও আছে বলেই হয়ত পৃথিবীটা এখনও রসাতলে যায়নি। অপর্ণা সেনের 'ঘরে বাইরে আজ' বৃন্দা চরিত্রের উত্তরণই এ সিনেমার গন্তব্য, যেখানে উগ্র ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দু আগ্রাসনের বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়ায় দলিত সমাজ, ভারতবর্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ।
সিনেমার শেষ দৃশ্যটা অবাস্তব এবং ক্লিশে মনে হলেও অপর্ণা কেন ওরকম একটা দৃশ্য রাখলেন সেটা নিয়ে মনটা ভাবিত হয়েছে খানিক। দৃশ্যটা কি তিনি প্রতীকী হিসেবে দেখালেন, যেখানে নিজেদের কৌলিন্যে অন্ধ শ্রেণিটাকে জব্দ করতে উঠে দাঁড়াচ্ছে দলিত হিন্দু শ্রেণি..গ্লাসভরা পানি এগিয়ে দিতে দিতে তার প্রতি সর্মথন জানাচ্ছে কোনঠাসা মুসলিম প্রতিনিধির একজন? কিজানি হবে হয়ত। আজকে ভারতে(গোটা পৃথিবীই আসলে) চলমান অন্ধকার সময়টার সামনে দাঁড়িয়ে ধর্মান্ধ শোষক শ্রেণির চোখে চোখ রেখে অন্যায় কে অন্যায় বলে উচ্চারণ করতে পারাটা সাহসের কাজ। অপর্ণা সেন সেই সাহসের কাজটাই করে দেখালেন।
ছবিটি দেখার ইচ্ছে রইল।
আসলে একজন খ্যাতনামা অভিনেতা পরিচালক হিসেবে পর পর ভাল ছবি বানালে বোধহয় দর্শকের মনে মাপকাঠি তৈরি হয়। সেটিকে টপকাতে না পারলেও ধরে রাখাই মুন্সিয়ানা। ঋতুপর্ণ রিংকুদি ইত্যাদি বাই লাইন মাত্র।
লেখাটি বেশ প্রাণবন্ত। উড়ুক
Pagla Dashu | 162.158.***.*** | ২৭ জানুয়ারি ২০২০ ০৫:১৪90865
Dolon | 14.***.*** | ২৮ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:২৯90871
de | 162.158.***.*** | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১২:৪২90875
একলহমা | 162.158.***.*** | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১১:৫৩90901
ঐশিকা | 162.158.***.*** | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৭:০০90904পক্ষে বিপক্ষে চমৎকার আলোচনা চলেছে দেখি! পোস্ট পড়ে প্রাণবন্ত মন্তব্য রাখবার জন্য সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।