পোশ্নটা খুব কঠিন লাগচে। মানে আমি কে তা কে জানে। আচ্চা দেখা যাক এব্যাপারে সুকুমার রায় কি বলেছেন –
বলছিলাম কি, বস্তুপিণ্ড সূক্ষ্ম হতে স্থূলেতে,অর্থাৎ কিনা লাগ্ছে ঠেলা পঞ্চভূতের মূলেতে—গোড়ায় তবে দেখতে হবে কোত্থেকে আর কি ক'রে,
রস জমে এই প্রপঞ্চময় বিশ্বতরুর শিকড়ে৷
তবে চলুন রসের সন্ধানে যাই। না না তালগাছপানে তাকাবেন না, ওগাছে একানড়ে থাকে। আমাদের যেতে হবে অন্য রসের সন্ধানে। কি সেই বস্তু, না বীররস। কিন্তু বড় বড় বীরেরাও মাঝে মাঝে কষ্ট পান। কিসের কষ্ট বলুন দেখি। বর্ডার সিনেমা দেখেছিলেন? ‘চিঠঠি আতি হ্যায় ...’, বাড়ি থেকে একখানা চিঠি, আর হুদো হুদো বীর জোয়ান সব ইমোশানে দ্রব হয়ে যাচ্চে। কি সেই ইমোশান, না নস্টালজিয়া। সেটা কি জিনিস বোধায় সব্বাই জানেন। একটু বিস্তারিত করা যাক।
আপনি কে বা কি ছিলেন, অন্ততপক্ষে আপনার স্মৃতিতে আপনার যা আইডেন্টিটি, তাই হল গে নস্টালজিয়া। এইবারে যারা ইংরিজি পড়ান তারা আমার দিকে একটা গোব্দা অক্সফোর্ড ছুঁড়ে মার্বেন। আহা! আগেই মেরেন না, এট্টু শুনুন।
একথা সত্যি ১৬৮৮ সালে যোহানেস হফার নামে এক ব্যক্তি হোমসিকনেস বোঝাতে এই শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন, দুটি গ্রীক শব্দের সন্ধি করে, nòstos (returning home) + álgos (pain)। এই শব্দটিকে আগে যুদ্ধুতে সৈন্যদের বাড়ি ফেরার আকুতি বোঝাতে ব্যাবহৃত হত। যুদ্ধক্ষেত্রে অনেক সময় সৈন্যেরা এমনই কাতর হয়ে পড়ত, যে তারা আর যুদ্ধু কি করবে, বাড়ি যাবার জন্যে কান্না কাটি কত্তে থাকতো এই নস্টালজিয়ার ঠ্যালায়। এর সমাধান কি।
এদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া।
একথা সত্যি ১৬৮৮ সালে যোহানেস হফার নামে এক ব্যক্তি হোমসিকনেস বোঝাতে এই শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন, দুটি গ্রীক শব্দের সন্ধি করে, nòstos (returning home) + álgos (pain)। এই শব্দটিকে আগে যুদ্ধুতে সৈন্যদের বাড়ি ফেরার আকুতি বোঝাতে ব্যাবহৃত হত। যুদ্ধক্ষেত্রে অনেক সময় সৈন্যেরা এমনই কাতর হয়ে পড়ত, যে তারা আর যুদ্ধু কি করবে, বাড়ি যাবার জন্যে কান্না কাটি কত্তে থাকতো এই নস্টালজিয়ার ঠ্যালায়। এর সমাধান কি।
এদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া।
কোন বাড়ি? না, নিজের বাড়ি।
ওমা! বাড়ি তো নিজেরই হয়!
ঠিক তাই কি?
আব্রাহাম লিঙ্কন যখন ২০ বছর পরে নিজের বাড়ি ফিরে আসেন, তখন তিনি ভারি নস্টালজিক হয়ে একটি পদ্য লেখেন –
My childhoods’ home I see again,And sadden with the view;And still, as memory crowds my brain,
There’s pleasure in it too.
অর্থাৎ আমরা মূলত সুখস্মৃতিটুকু নিয়েই নস্টালজিক হই। এবার দেখি সাইকোলজিস্টরা কি বলেন এই ব্যাপারে। তারা বলেন আপনার নস্টালজিয়া কেবল আপনিময়। অর্থাৎ আপনার স্মৃতি, আপনার অতীত, যা আপনি ছিলেন, যা আপনি হয়েছেন, এই সবে মিলে আপনহারা। সব মিলিয়ে নস্টালজিয়া হল আপনার ‘আমি কে?’ প্রশ্নের উত্তর। সত্যি কথা বলতে আপনি হলেন এমন একটি সময়রেখা (timeline) যে তার অতীতের কিছু স্মৃতি মনে ধরে রেখে দেয় এবং অতীত ও বর্তমানের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে একটি কন্টিন্যুয়াম তৈরি করে। খুব কঠিন হয়ে গেল? সাইকোলজিস্টরা বলেন আপনার অতীতের ঘটনার সাথে বর্তমানের যে যোগসূত্র সেটিকে শক্ত করে এই নস্টালজিয়া। সময়ের সাথে সাথে আপনি পালটান, আপনার অভ্যাস পালটায়, বন্ধুরা পালটে যায়, কাজকর্ম, পরিবেশ, চিন্তাভাবনা সবই পালটাতে থাকে। কিন্তু নস্টালজিয়া আপনাকে সাহায্য করে এই সব ঘটনার সাথে যুক্ত রাখতে। এই নস্টালজিয়াই আপনাকে সাহায্য করে বয়ঃসন্ধি কালে বা বার্ধক্যে এসে পৌছোলে, ভূতপূর্ব জীবনের সাথে ব্যালেন্স বজায় রাখতে।
তাহলে দেখতে পাচ্ছি যে আমাদের জীবনের বহিরঙ্গ ক্রমাগত পালটাচ্ছে আর তাকে ধরে রাখে নস্টালজিয়া। কিন্তু ভিত্রের কাজ কারবার। ওই যে রাজ-দা বললেন “অ্যাম আই নো আসিড!” বা দিলীপদার অনু-পরমানুর সমাহার। মিনিট ফিসিক্স ব্লগের হেনরি ভারি মজার একটা কথা বলে সব ভিডিয়োর শেষ তা হল – ‘ইতি আপনাদের প্রিয় “পরমানুর সমাহার” যা হেনরি নামে পরিচিত’। সত্যি কি তাই?
আমি বাপু সাদামাটা কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (সত্যি কেমিক্যাল নয়, আসলে কমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, আমার শিক্ষকেরা আমায় মনে করেন ‘joke in the name of chemical engineer’, মুখে বলেন না দুঃখু পাবো বলে) অতো সাইকোলজি বুঝি না। কিন্তু এনার্জি ব্যালেন্স বুঝি। তাতে বলে যে আমাদের দেহে সবসময় এনার্জি মাসে ও মাস এনার্জিতে ট্রান্সফার হচ্চে। তাতে হলটা কি? অর্থাৎ আপনি যা খাচ্চেন সেটা এনার্জি হয়ে আর মাস হয়ে আপনার দেহে জমা হচ্চে। একই সঙ্গে পুরোনো যে সব সেলগুলো আছে সেগুলো ক্রমশ মরে যাচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি নিয়তই আপনি পালটে যাচ্ছেন। মোটামুটিভাবে ৫ বছরের মধ্যে আপনার দেহের সব অনু পরমানুই পালটে নতুন হয়ে যায়। মানে আপনার হাত, পা, মাথা থেকে শুরু করে যা যা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আছে, সবই পালটে যাচ্ছে। পাঁচ বছরে আগেকার আপনি আর এখনকার আপনি ভোটার কার্ডে একই হলেও, সুক্ষ স্কেলে এক নয়। ব্যোমকে গেলেন? মনে করুন কোনো এক এলিয়েন আপনাকে দেখতে পায় না অথচ সব মলিকুলগুলোকে ট্র্যাক কত্তে পারে, এবং যে ক্যামেরায় দেখে সেটা বছর দশেক সময় মোটে কয়েকটা ফ্রেমকে ধরতে পারে, সে আপনাকে ঠিক ঐ ভাবে দেখবে। কিছু মলিকুল আসছে কিছু যাচ্ছে, মোটের উপরে শেপটা একই থাকছে।
তাহলে কি দাঁড়ালো, না আপনি আপনার বহিরঙ্গে এক থাকছেন, না অন্তরঙ্গে। সময়ের সাথে সাথে সবই পালটে যাচ্ছে, শুধু পরে থাকে স্মৃতি। তবে – তুমি কি কেবলি স্মৃতি!!
এই চিন্তা কিন্তু ভারি চিন্তাকর – কারণ আপনার যদি স্মৃতিলোপ পায় তবে কি আপনি অন্য লোক হয়ে যাবেন? অথবা যাকে বলে ফলস মেমরি সেই বা কি?
ফলস মেমরি হল সেই মেমরি যা ইমপ্ল্যান্ট করা হয়। মনে করুন আপনার প্রথম সাইকেলে চড়ার ঘটনা, বা প্রথম প্রেম, বা এমন কিছু যা আপনাকে খুব আকর্ষণ করে। তাতে মাঝে মাঝে ভ্যাজাল থাকে! কি ভাবছেন, একথা সত্যি নয়! আজ্ঞে না সত্যি। তবে সবসময় যে তা হয় তা ঠিক নয়। তবে মাঝে মাঝে এমন হয়েই থাকে। এমন ঘটনা দুই ভাবে হয়, পুরোনো দিনের একাধিক স্মৃতি মিলে একটি স্মৃতিকে করাপ্ট করে দেয়। অথবা আপনি নিজেই সেই কথা বার বার বলতে বলতে সামান্য পরিবর্তন করেন, কিঞ্চিৎ আত্মপ্রসাদ লাভের জন্যে।
রিসার্চাররা পরীক্ষা করে দেখেছেন যে, কাউকে যদি অনেকগুলি, ছোটোবেলার ছবি দেখানো হয় এবং তার মধ্যে একটি ফেক ছবি বা ফোটোশপড ছবি দেওয়া থাকে, সেক্ষেত্রে ঐ ভুল ছবিটিকে চিহ্নিত করার বদলে বেশিরভাগ লোক ওই ঘটনার একটি মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। আসলে এটি আমাদের ব্রেনেরই দোষ এটি কিছুই অপরিচিত বা অজ্ঞাত রাখতে চায় না। তাই সব ইনফর্মেশানগুলোর একটা লজিক্যাল এক্সপ্ল্যানেশান দিতে করতে পারলে এর লাভ, মনে রাখতে সুবিধা।
এবার দেখা যাক ব্রেন কি করে কাজ করে। স্মৃতিই বা কি? কাকেই বা বলব কনশাসনেস-
এ ব্যাপারে শেষ বক্তব্য রাখার মত জ্ঞান আমার নেই। সত্যি বলতে কি, আমাদের বিজ্ঞান এখনো এতোদূর যায়নি যে এর উত্তর দিতে পারে। তবে কি জানা যায়। আমাদের ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে আমরা কোনো কিছুকে জানি। এই ধরুন যদি আপনাকে বলি আপনার আঙ্গুল কোথায়, আপনি কি জানেন? তবে আপনি হয়তো ভিরকুটি করে বলবেন, জানি না মানে এই তো আমার আঙ্গুল, বলে আপনার আঙ্গুলগুলি আমার চোখের সামনে নেড়ে দেবেন। ভালো কথা, আপনার এই ইন্দ্রিয়জ জ্ঞানই আপনাকে বিশ্বের সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল করায়। কিন্তু এ কতখানি বিশ্বাসযোগ্য? আমাদের অপটিকাল ইল্যুশান হয়, অডিয়ো ইল্যুশান হয়, এমন কি সেনসরি ইল্যুশানও হয়। আসলে বহির্বিশ্বের সবকিছুই জানার একমাত্র মাধ্যম হল সেই বস্তুটি, যেটি আপনার টাকের হাপ ইঞ্চি তলাতে আছে।
জ্ঞানের ফিলোসফিকে বলে epistemology। প্লেটোর একটি বিখ্যাত কোটেশান আছে, ‘the things we know, are things that are true, that we believe and we have justification for believing’। এই সব “justification” হতে পারে অযৌক্তিক বা যুক্তিযুক্ত। হতে পারে তার কোনো প্রুফ আছে। কিন্তু তাতে অত ভরসা করবেন না। কারন ইংরিজি মতেও ‘প্রুভেন’-এর সমার্থক শব্দ কিন্তু ‘সত্য’ নয়। এর কিছু ব্যাতিক্রম আছে যাকে বলে স্বতঃসিদ্ধ, বা a priori। ধরুন আমি বললাম ‘সব অবিবাহিত’দেরই বিয়ে হয়নি’। এটা প্রমাণ করার জন্যে আমায় দুনিয়া ঢুঁড়ে সব অবিবাহিতদের সার্ভে করার দরকার নেই। কারন অবিবাহিতদের সংজ্ঞা অনুযায়ী তারা বিয়ে করে নি। অবশ্য তার জন্যে আপনাকে আগে জানতে হবে অবিবাহিত ও বিয়ে শব্দের অর্থ। কি বললেন, এতো আপনি জানেন? তবু ভালো। তবুও আমার তেঁএটে মন প্রশ্ন করতে চায়, যে আপনি কিভাবে শিওর হচ্চেন যে আপনি জানেন!! এবার আমি বলতে চাইছি যে সত্যি কি করে আপনি জানেন। মানে বায়োলজিক্যালি আপনার জানার অর্থটা কি?
আমাদের স্মৃতি আসলে কি দিয়ে তৈরী?
রিসার্চাররা বলেন যে আমাদের স্মৃতি মস্তিস্কের এক যায়গায় থাকে না, বরং বিভিন্ন যায়গায় বিভিন্ন ব্রেন সেলের সংযোগের মাধ্যমে তার প্রকাশ। এই ব্রেনসেল হলগে নিউরন। একটি নিউরন যখন অন্য একটি নিউরনকে উত্তেজিত করে একই ভাবে বার বার, তখন সেই সিগনালটি সহজে পরিচিত হতে পারে, এবং এর ফ্রিকোয়েন্সিও বেড়ে যায়। এই সংযোগ বহুদিন টিকে থাকে, এমনকি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত্যও তা থাকতে পারে। এবং যে মেকানিসমের ফলে এই স্মৃতি সংরক্ষিত হয় তাকে বলে long term potentiation বা LTP। অর্থাৎ কিছু মনে রাখতে গেলে এই বস্তুটিই কাজে আসে।
এবার ধরুন এই ধরনের কিছু স্মৃতিধারক সেল যদি আপনার মাথা থেকে কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়, তবে কি সেই স্মৃতি আপনার মন থেকে সম্পূর্ণ মুছে যাবে? যেতে পারে, তবে তার জন্যে আপনার ব্রেনের অনেকটাই কেটে বাদ দিতে হবে! কারণ, স্মৃতি একটি যায়গায় আবদ্ধ নয়। মনে করুন আপনার গ্রাজুয়েশানের কথা বা প্রথম চুম্বনের কথা। এই ঘটনা শুরু হবার সময়কার ঘটনাবলী এক যায়গায় রক্ষিত, তার গন্ধ বা অনুভব এক যায়গায়, সবকিছু মিলিয়ে তবেই না সে আপনার পার্থিব জীবনের স্মরণীয় দিন। পাঠক আপনার বদ উদ্দেশ্য আমি জানি। আপনি আমার অস্ত্র আমার উপরে প্রয়োগ করতে চলেছেন, এবং তা হল আমি জানলাম কি করে? তাই তো!
এটা খুব কঠিন প্রশ্ন। যদিও রকেট সাইন্স বা কোয়ান্টাম মেকানিক্স-এর মত কঠিন নয়। নাকি তার থেকেও কঠিন! এ প্রশ্ন হল এই যে আদৌ রকেট সাইন্স বা কোয়ান্টাম মেকানিক্স আছে কিনা। তবে আমরা কি কখনোই সত্যিটা জানতে পারবো, নাকি সবসময়ই একটা অ্যাপ্রক্সিমেট ধারণা নিয়ে চলতে হবে। বিজ্ঞান কি কখনই প্রমাণ করতে পারবে যে বিজ্ঞান নিজে, বা আপনার বন্ধু মা বাবা ভাই বোন সবাই আসলে আছে, নাকি সবটাই আপনার নিজের মনে, অথবা আপনি ঐ মেট্রিক্সের মধ্যে আছেন। না পারবে না। কেন না আপনি যে ইন্সট্রুমেন্টই ব্যবহার করুন না কেন, সে টেলিস্কোপই হোক বা পার্টিকেল অ্যাক্সিলারেটার, সব ইনফর্মেশানগুলোকে ইন্টারপ্রেট করার দায়িত্ত্ব কেবল আপনার মুন্ডুর উপরে। আপনি আপনার নিজের মাথার মধ্যে একেবারেই একা। অর্থাৎ যুক্তিসঙ্গত ভাবে এমন কোনো উপায় নেই যা দিয়ে আপনি প্রমান করতে পারেন যে কোন ঘটনা আসলে সত্যি। একে বলে egocentric predicament।
চার্লস সন্ডার্স পিয়ার্স এই ব্যাপারে আপনাকে কিছু সাহায্য করতে পারেন। তিনি এই বাস্তব জগত এবং ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বাস্তবতার (ওনার দেওয়া নাম phaneron) মধ্যে একটি সীমারেখা টানেন। অর্থাৎ আপনি যা দেখেন, যা শোনেন বা যা জানেন তা বাস্তব নয় আসলে আপনার phaneron এবং এই বিশ্বাস যে একমাত্র আপনি আছেন এবং বাকি বিশ্ব কেবল আপনার মস্তিষ্ক পরিচালিত মায়াচিত্র, একে বলে solipsism। এবং কোনো সলপ্সিস্টকে আপনি কখনোই বোঝাতে পারবেন না যে সত্যি কোনো আসল বিশ্ব আছে।
তবে কি তা নেই! এর উল্টোদিকে তবে কি আছে। আছে realism। সেটা কি? সেটা হল এই যে বহির্বিশ্ব আপনার phaneron-এর সাহায্য ছাড়াই আলাদা ভাবে অবস্থান করে। এই পাথর, মাটি, জল, সূর্য, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি, এমনকি আপনার প্রিয়জনও আপনার উপস্থিতি ও আপনার অনুভবের বাইরে স্বাধীন ভাবে অবস্থান করে। কিন্তু আপনি কখোনোই জানতে পারবেন না যে এই realism সত্য। আপনি কেবল তাতে বিশ্বাস করতে পারেন।
তবে কি পড়ে রইলো। কেবল বিশ্বাস!
আপনি কি কুকুর বা বেড়াল পোষেন? যদি পোষেন, তবে জানবেন যে তারা অদ্ভুত অদ্ভুত যায়গায় চড়ে বসতে ভালোবাসে। কেন? না তারা তাদের গন্ধ ছড়িয়ে দিতে চায়। এটি তাদের অস্তিত্ত্বর একটি চিহ্ন। মানুষও এদের থেকে খুব আলাদা নয়, পার্থক্য কেবল এক যায়গায়, তা হল এই গন্ধ ছড়াবার থেকে আমরা ভালোবাসি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে। আমরা কখোনই এই বিশাল পৃথিবীর সব সমস্যার সমাধান করতে পারবো না, কিন্তু এই সমস্যার মধ্যে ঘুরে বেড়ানো তাদের নিয়ে চিন্তা করাও এক ধরনের মজা। তাই না। এবং এই সমস্যা সমাধান বা তার সমাধানের চেষ্টাই হল মানুষের অস্তিত্ত্বর এক চিহ্ন। কারন সমস্যা বা তার সমাধান হল একধরনের ইনফরমেশান, এবং ইনফর্মেশানই হল আমাদের অস্তিত্ত্ব।
অনেক বকচি, এবার থামা যাক। গান শোনা যাক বরং। গানের কথায় মনে এলো, লং প্লেয়ার কাকে বলে জানেন? গ্রিনিচের রয়াল অবসারভেটরিতে জেম ফাইনার’এর ডিসাইন করা একটি লং প্লেয়ার আছে যা হাজার বছর ধরে একটি কেবল একটি সঙ্গীত সৃষ্টি করে যাবে, কোনো রিপিটেশান ছাড়াই। এটি অনেকগুলি সিঙ্গিং বোলের সমাহার। এটি চালু হয় ১৯৯৯ তে এবং শেষ হবে ২৯৯৯ তে। এই শব্দ তরঙ্গ, বা কম্প্রেশান ওয়েভ যা এই লং প্লেয়ারের গান আপনার কানে পৌছে দিচ্ছে তা কিন্তু আপনার আমার থেকে খুব একটা আলাদা নয়।
সত্যি কথা বলতে কি আমি আপনি সবাই এই পৃথিবীর উপরে এক ধরনের কম্প্রেশান ওয়েভ – যা কখনো এক থাকে না। ‘তরঙ্গ মিলায়ে যায় তরঙ্গ উঠে, কুসুম ঝরিয়া পড়ে কুসুম ফুটে’। একথা ঠিক যে এই তরঙ্গ আপনার চলে যাবার পরেও বহু বছর থাকবে না। তবে এরকম তো হতেই পারে যখন আপনি আছেন আপনার এই তরঙ্গ অন্য কোনো তরঙ্গের সাথে মিলে কোনো নতুন হারমনি তৈরী করল। এমন কিছু যা বাকিরাও মনে রেখে দিতে চায়, সময়ের সঙ্গে কেবল লয় হয়ে যায় না। তবে সেই তরঙ্গের সুর হয়তো বহু বছর পরেও কানে লেগে থাকবে। কে বলতে পারে।
এই লেখার মূল আইডিয়া পাওয়া মাইকেলের ইউটিউব ব্লগ ভিসস’এর বিভিন্ন ভিডিয়ো থেকে। আমার জঘন্য লেখা যদি পড়ে না বুঝতে পারেন তার দায় একান্তই আমার। আমি চাইবো যে আপনারাও ভিসসের ভিডিয়োগুলি দেখুন, তাহলে আর এই লেখা পড়তে হবে না।