তৃতীয় দিনেও ভারত জুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত। অংশগ্রহণকারী শহরগুলির সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বিভিন্ন ওয়েবসাইট আর খবর না দিয়ে নিয়মিত বিক্ষোভের মানচিত্র ঘন্টায় ঘন্টায় প্রকাশ করে চলেছে। ম্যাপ ক্রমশ বেড়ে চলেছে, বলাই বাহুল্য।
সুপ্রিম কোর্টের জনৈক বিচারপতি এরই মধ্যে একটি মন্তব্যে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে জানিয়েছেন, যে, আন্দোলন করার ইচ্ছে থাকলে তারা যেন আন্দোলনই করে, কোর্টে না আসে। আন্দোলনকারীরা সেই উপদেশ সানন্দে গ্রহণ করেছেন বলেই মনে হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট এবং আমজনতার মধ্যে একটিই পার্থক্য। সুপ্রিম কোর্ট আইনের ব্যাখ্যা করে, আর আমজনতা সরকারকে নির্বাচিত করে, যারা আইন বানায়। নতুন আইন বানানোর জন্য, বা পুরোনো আইন বাতিলের আন্দোলন কখনও আদালত-মুখাপেক্ষী হতে পারেনা। কেউ স্পষ্ট করে না বললেও আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি থেকে এই বার্তা পরিষ্কার।
মুম্বাইয়ের বিশিষ্ট পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ নির্বাসন ভেঙে টুইটারে ফিরে এসে বিবৃতি দিয়েছেন নতুন আইনের বিরুদ্ধে। বললে বিশ্বাস করা মুশকিল, চেতন ভগতও ছাত্রদের উপর রাষ্ট্রীয় হামলার নিন্দা করেছেন। সারা ভারতের নারী-পুরুষরা যাঁদের কথা ভেবে শয়নে-স্বপনে নালেঝোলে হন, যাঁরা মাঝেমাঝে টিভিতে 'সামাজিক' বিষয়ে অনুভূতিপ্রবণ অনুষ্ঠান করেন, সোশাল মিডিয়ায় বাণী দেন, মুম্বইয়ের সেই বৃহৎ তারকারা অবশ্য এই সংকটকালে নিশ্চুপ। বাংলাও ব্যতিক্রম নয়। বুদ্ধিজীবিদের মধ্যে কেউ কেউ এর বিরুদ্ধে পক্ষ নিলেও সিনেমার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা, যাঁরা আজকাল সিনেমার সুবাদে টিভি থেকে সংসদ সর্বত্রই সহজে ঢুকে পড়েন, তাঁদের মধ্যে তেমন নড়াচড়া দেখা যাচ্ছেনা। খুব সম্ভবত কোন পক্ষ নিলে সুবিধে হবে, তাঁরা এখনও এই জল মাপতেই ব্যস্ত।
বিশিষ্ট কবি জয় গোস্বামী গুরুচণ্ডালিকে স্পষ্ট করেই এন-আর-সি/ক্যা বিরোধী একটি তীব্র বার্তা দিয়েছেন, যা আমরা আগামীকাল প্রকাশ করব।
দেশে-বিদেশে নতুন আইন নিয়ে নিন্দার ঝড় অব্যাহত। বাংলাদেশ এবং জাপানের মন্ত্রীদের সফর আগেই বাতিল হয়েছিল। রাষ্ট্রপুঞ্জেও হয়েছিল সমালোচনা। মার্কিন কংগ্রেসের দুটি কমিটিও এবার এই আইনের নিন্দা করেছে। ওয়াশিংটন পোস্ট ছেপেছে তীব্র সমালোচনা।
এরই মধ্যে অমিত শাহ ঝাড়খণ্ডের একটি সভায় গিয়ে সোচ্চারে দাবী করেছেন, অযোধ্যায় আকাশ-ছোঁয়া বিরাট মন্দির হবে। উচ্চতায় প্যাটেলের মূর্তির চেয়ে বড় হবে কিনা সে নিয়ে কিছু জানা যায়নি। স্বভাবতই দেশের অর্থনীতি সহ অন্যান্য তুচ্ছা বিষয়গুলি নিয়ে তাঁর কোনো মন্তব্য নেই।
পশ্চিমবঙ্গে আন্দোলন অব্যাহত। তৃণমূল, সিপিএম, বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ, বাংলা পক্ষ, যে যার মতো প্রতিবাদ করছে। পথে নেমেছেন যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি সহ নানা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছে মানববন্ধন। আন্দোলনের নামে উস্কানিদাতা কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে সরকার। আগামী কাল কলকাতায় আছে একাধিক মিছিল। মৌলালির রামলীলা ময়দান থেকে আছে মহামিছিল। তা সম্ভবত অভূতপূর্ব জনসমুদ্রে পরিণত হতে চলেছে।
বাংলায় বিজেপির ক্যা সমর্থনে একটি মিটিং মিছিলেরও খবর এখনও নেই। স্থানীয় স্তরে হয়তো কিছু হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু জোরেসোরে বলার মতো লোক পাওয়া যাচ্ছেনা। হিন্দুত্ববাদী একটি পেজের সূত্রে জানা যাচ্ছে, বিহার-ইউপি থেকে বজরং দলের বহু সদস্য বাংলার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন, তাঁরা এবার বুঝে নেবেন খেলা। খবরটি খুব সম্ভবত ভুয়ো। মনোবল বাড়ানোর জন্য করা। কিন্তু এভাবে যে মনোবল বাড়াতে হচ্ছে, তাতেই বিজেপির অবস্থা পরিষ্কার। উত্তর-ভারতীয় সংস্কৃতির আমদানি ছাড়া বিজেপির এই মুহূর্তে হালে পানি পাওয়া খুবই শক্ত।
উত্তর ভারতেও অবশ্য গোলমালের শেষ নেই। এ দিনের শ্রেষ্ঠ খবর আন্দোলনের নয়। উত্তর-প্রদেশের ১০০ জন বিধায়ক একযোগে যোগি সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। অবশ্যই ক্যা-এর বিরুদ্ধে নয়। যোগি সরকারের উদ্ধত আচরণের বিরুদ্ধে। গোবলয়ের হিন্দুত্ববাদী নেতারা বাংলার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন, এ অভিযোগ ছিলই। আসামেও এন-আর-সি থেকে বিজেপির নেতা-নেত্রী কর্মীরা যখন বাদ পড়েছেন, সর্বভারতীয় নেতৃত্ব পাশে দাঁড়িয়েছেন বলে শোন যায়নি। কিন্তু তাঁদের উদ্ধত আচরণ যে গোবলয়ের ছোটো নেতাদেরও ছেড়ে দেয়না, এই ঘটনা থেকেই তা পরিষ্কার।
-------------------
মিডিয়ায় আসুক বা না আসুক, আমরা প্রতিদিনই আন্দোলনের খবর প্রকাশ করে চলেছি এবং চলব। আগামী কাল প্রকাশিত হবে বিশিষ্ট কবি জয় গোস্বামীর বিবৃতি। নজর রাখুন এই পাতায়।