এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • একটা অ-সমাপ্ত গল্প (পর্ব: ৩৩ - ৩৫ )

    Kaushik Ghosh লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ | ২২৩৩ বার পঠিত
  • ৩৩।

    কলকাতা থেকে ফিরে আসা ইস্তক মনটা ভীষণ ভালো হয়ে রয়েছে সুধার। এত দিনের স্বপ্ন এবার পূরন হতে চলল। এম.এ.-তে ভর্তি হতে গেছিল ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটিতে। ইউনিভার্সিটির চৌহদ্দির বাইরে পায়ে পায়ে বেড়িয়ে এসে হাতে ধরে থাকা মাইনে জমা দেওয়ার বইটার দিকে চেয়ে অদ্ভূত একটা শিহরণ খেলে গেছিল ওর সারা শরীরে। কলেজ স্ট্রীট দিয়ে শিয়ালদা স্টেশনের দিকে হাঁটতে হাঁটতে বাবা অনেক কথাই বলছিল কিন্তু সব কথা ওর কানে ঢুকছিল না। কলকাতায় থেকে পড়তে পারবে - এ সুখ চিন্তাটাই মাথায়-মনে খেলে বেড়াচ্ছিল সারাক্ষণ। দুটো একটা শব্দে বাবার কথার উত্তর দিয়ে তৎক্ষনাত ফিরে যাচ্ছিল নিজের লব্ধ নতুন ভুবনে, যেখানে আর মাত্র কটা দিন পর থেকেই আর মনে মনে বাস করতে হবে না! এই রাস্তা, ওই আকাশ ছোঁয়া দ্বারভাঙ্গা বিল্ডিঙ্গ, লাইব্রেরি বা কলেজ স্কোয়ারের পুকুর পাড়টা - এ সবই হবে ওর চারন ক্ষেত্র! আর এতটাই তন্ময় হয়ে পড়েছিল নিজের চিন্তায়, যে আমহার্স্ট স্ট্রীটের কাছটায় রাস্তা পার হতে গিয়ে আরেকটু হলেই গাড়ি চাপা পড়েছিল আর কি! বাবা হাত ধরে টান মেরে কি বকাটাই না দিল - চোক্ষের কি মাথা খাইস! ভবলীলা সাঙ্গ হইয়া যাইত এহনি!
    বাকি রাস্তাটা দুরু দুরু বুকে সাবধানেই চলেছিল সুধা।

    ক্লাস শুরু হতে দেরি আছে এখনও। এ কটা দিন ওর নিরবিচ্ছিন্ন ছুটি। নিজের পড়া নেই, পড়াতে যাওয়া নেই আর এমনকি বাড়ির কাজ ও নেই। সামান্য কিছু এটা ওটা করতে গেলেই হয় শোভা নয় চাঁপা এসে হাত থেকে জিনিস কেড়ে নিয়ে বলছে, তুমি রাখো তো এখন ওসব, বরং নিজের গোছগাছ যা কিছু বাকি আছে তা সারো গে যাও!

    চাঁপাকে বৌদি বলতে কেমন যেন একটা লাগে! এত ছোট একটা মেয়ে! তবু বৌদিই বলে সুধা।

    ঘরে বসে একঘেয়ে লাগছে। একটু বাইরে যাবে কি? সকালবেলায় বাড়ির বাইরে কোন কাজ ছাড়া বেড়াতে বেরনোটাও কেমন বোকা বোকা লাগে। তবু 'মা একটু আসছি' বলে বেড়িয়েই পড়ল সুধা।

    বাড়ির সামনের ছোট জমিটা পেরিয়ে বোস বাড়ির সামনে এসে অশোককে দেখতে পেল সুধা। বাড়ির রোয়াকে বসে খবরের কাগজ পড়ছে। অশোক ও দেখতে পেয়েছে সুধা কে। রোয়াক থেকে নেমে এসে বলল, কি গো সুধা'দি, এখুনি কলকাতার দিকে হাঁটা মারলে নাকি? কপট রাগ দেখাতে গিয়েও হেসে ফেলল সুধা। বলল, খুব ডেঁপো হয়েছিস তো! তা রাস্তায় বসে খবরের কাগজ পড়ছিস যে বড়?

    -আর কেন! তোমাদের প্রফুল্ল সেনের দয়ায় কি আর ঘরে বসার যো আছে? পাওয়ার কাট!
    -শুরু হল তো তোর রাজনৈতিক কথাবার্তা! আচ্ছা, তুই পড়াশুনোটা করিস কখন বল তো? লেখাপড়া একটুও করিস, নাকি সারাদিন মিটিঙ আর দেওয়াল লেখা নিয়েই আছিস?
    -রাজনীতি কি জীবনের বাইরে সুধা'দি?আজকের কাগজটা দেখেছো? খোদ ওয়াশিঙটনে বিশাল জনসভা হয়েছে ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরোধিতা করে। গতকাল নিউইয়র্কে প্রথমবারের জন্য মার্টিন লুথার কিং ভাষণ দিয়েছেন এই যুদ্ধ নিয়ে।
    -জষ্ঠি মাসের গরমে আর মাথা ঘামাস না, এমনিতেই ঘেমে নেয়ে একসা হচ্ছি। তুই কাগজ পড় আমি এগোলাম।

    অশোককে দাঁড় করিয়ে রেখে এগিয়ে গেল সুধা। পেছন থেকে অশোকের গলা ভেসে আসছে - এতেই ঘেমে গেলে? আরো আছে, ও সুধা'দি, গতকাল চিন সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ডাক দিয়েছে -শুনলে!

    পেছনে না ফিরে হাতের ইশারায় অশোককে চুপ করতে বলে এগিয়ে গেল সুধা। পাড়ার মোড়টা পেরিয়ে গঙ্গার ঘাটের দিকে চলল। হাঁটতে হাঁটতে অশোকের কথাই ভাবছিল ও। কত ছোট ছেলেটা। কিরনেরই বয়সী, কিন্তু বড়দের মতন কথা বলে। অথচ ওর কচি মুখে কথাগুলো যে খুব বেমানান শোনায় - তেমনটাও নয়। ভীষণ ম্যাচিওরড! মুখে যাই বলুক না কেন, মনে মনে ওদের কার্যকলাপের প্রতি একটা প্রচ্ছন্ন সমর্থন আছে সুধার। ওদের বুকে আগুন আছে।

    পোড়ামাতলা দিয়ে যাওয়ার সময় সংস্কার বসত দেবস্থানের সুবিশাল বটগাছটার মাথার দিকে চেয়ে কপালে হাত ছোঁয়ালো সুধা। গাছটার কান্ডটা খুব কাছকাছি না গেলে দৃষ্টি গোচর হয়না। গাছটার চারিদিকে পসরা সাজানো অজস্র দোকান। প্রায় সবগুলোই বিক্রি করছে দেবালয়ের সাথে সংযুক্ত জিনিস পত্র। প্রসাদি পেঁড়া, ধূপ-ধূনো গামছা শাড়ি ইত্যাদি। অশোকটা এখানে থাকলে এক্ষুনি বলত - সুধা'দি,ওদিকে একটা বিচুটি গাছ আছে, গড় করলে না!

    আচ্ছা, অশোকরা তো সাম্যের কথা বলে, সকলের জন্য কাজের কথা বলে - তা এই গাছটাকে ঘিরে যে এত মানুষের রোজগার হচ্ছে, তাদের পরিবারের গ্রাসাচ্ছাদন চলছে - সে জন্য একটা প্রনাম, একটু সম্মানও কি ওর প্রাপ্য নয়? পরে দেখা হলে বলে দেখবে অশোককে কথাটা? না বাবা, থাক। ভাববাদ টাববাদ বলে লম্বা লেকচার দিয়ে দেবে!

    পোড়ামাতলার ভীড়টা পেরিয়ে এল সুধা। ওহ্‌, বড্ড হট্টগোল জায়গাটায়! এদিকের রাস্তা অপেক্ষাকৃত অনেকটাই ফাঁকা। উল্টোদিক থেকে একটা রিক্সা আসছে। তাতে সওয়ার লোকটা একটা মাইকে তারস্বরে চেঁচাচ্ছে - আসিতেছে আসিতেছে আসিতেছে.....শাম্মি কাপুর ও আশা পারেখ অভিনীত রঙিন হিন্দি ছবি......সকলকে নিয়ে দেখার মতন ছবি......তিসরি মঞ্জিল.....আগামি শুক্কুর বার থেকে.....নবদ্বীপের পপুলার হ'লে......
    দম নেওয়ার জন্য থামলো লোকটা। মাইক থেকে ভেসে এল গানের কলি - ও মেরে সোনা রে....

    যত্তসব সব লঘু বিনোদন! সুধার কোন আগ্রহ নেই।

    গঙ্গার পাড়টা ভারি মনোরম। বাবা রোজই সকালে আসে কিন্তু সুধা কোনদিন আসেনি বাবার সাথে। আগে পড়াশোনো ছিল, সকালে উঠে বেড়াতে বেরোনোর প্রশ্নই ওঠেনা। ঘাট থেকে সিঁড়ি নেমে গেছে ধাপে ধাপে নদীর বুকে। অনেকে স্নান করছে। কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থাকার পর অস্বস্তি হতে থাকল সুধার। পা বাড়ালো অন্যদিকে। দু পা না যেতেই পেছন থেকে একটা পুরুষ কণ্ঠ কানে এল - দিদিমণি! সুধার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলল, ডাকটা ওকে উদ্দেশ্য করেই।
    ঘুরে দাঁড়ালো সুধা। ওর পুরনো ছাত্রী ফুলটুসির বাবা দাঁড়িয়ে আছেন। গঙ্গা স্নানে এসেছিলেন, পরনে গামছা, গা দিয়ে জল ঝরছে। আর যাকেই হোক, এনাকে এখানে দেখবার আশা মন করেনি।

    ভদ্রতা বসত হাতদুটো আপনা থেকেই জোড় হয়ে বুকের কাছে চলে এল সুধার - নমস্কার।

    -দিদিমণি, আপনি তো আর এলেন না তার পর থেকে, বছর ঘুরে গেল প্রায়! আপনার মাইনেটাও তো নিয়ে জাননি!
    -ওতে আমার আর দরকার নেই।

    কথাটা নিজের কানেই একটু রূঢ় শোনাল সুধার। তাই ভদ্রতা করতে জিজ্ঞেস করল - আপনারা সকলে ভালো তো? ফুলটুসি কেমন আছে।
    হলদে হাঁত বের করল লোকটা। "আজ্ঞে, আপনাদের আশীর্বাদে দিব্বি আছে - গত মাসে খোকা হয়েছে। একবারটি এসে আশীর্বাদ করে যাবেন একদিন। এখানেই থাকবে এখন মাস কতক!"

    ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে থাকতে অস্বস্তি হচ্ছে। বাড়ির রাস্তা ধরল সুধা। অশোক কি বলবে জানেনা,কিন্তু ওর এখন পোড়ামাতলায় গিয়ে চুপ করে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে - ভগবানের কাছে কটা প্রশ্ন না করলেই নয়।

    আর কতদিন, আর কতদিন.........

    ৩৪।

    রেকর্ড প্লেয়ারটার থেকে খোনা গলার একটা লোক গেয়ে চলেছে। ঘুরন্ত রেকর্ডটার দিকে গালে হাত দিয়ে স্থির দৃষ্টিতে বসে আছে প্রবীর। ঝুঁকে পড়েছে প্রায় প্লেয়ারটার ওপর; মনে হচ্ছে যেন পারলে প্রায় ঢুকেই পড়ে ওটার ভেতরে!

    রোববারের সকাল, পড়াশোনার পাট নেই। হস্টেলে নিজেরর ঘরে রতনকে ডেকে নিয়ে এসে গানটা শুনছে ও। এধরনের গান রতন এর আগে শোনেনি কখনও, ওর ভালোও লাগেনা। সে কথা ও বলেওছে প্রবীরকে - কিন্তু প্রবীর কি কথা শোনার ছেলে? বলে, আরে গাঁইয়া ভূত তোকে মানুষ করতে হবে তো? তুই না শালা কমি! তো শোন এ গান গুলো - খালি জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ বলে চেঁচালেই হয়না, বুঝলি!

    অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাই বসে আছে রতন। গানটা ভালো না মন্দ নাকি অন্য কিছু - তাই বুঝতে পারছে না। ভাষাটা ইংরাজি বলে নয়। বাংলা মাধ্যম স্কুলে পড়লেও রতনের ইংরাজি লেখার প্রশংসা মাস্টার মশাইরা বরাবরই করে এসেছেন। আর এখানে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে আসার পর ভাষাটা বলার ক্ষেত্রে যে জড়তাটা কাজ করত, তাও কাটছে অল্প অল্প করে। ক্লাসে প্রফেসরদের লেকচার ফলো করতেও তেমন কোন অসুবিধে হয়না। কিন্তু এ কেমন ইংরাজি? গানের মুখরাটা ছাড়া বাকি কথা গুলো কিছুই প্রায় বুঝতে পারছে না ও। মাঝে মাঝে খালি - ইয়েস এন্‌ হাউ মেনি রোডস বা ইয়েস এন্‌ হাউ মেনি ইয়ারস বলে কিছু একটা যে বলছে, সেটুকু শুধু বুঝতে পারছে ও। ধুর! এটা কোন গান হোল! আর গালাটাও অখাদ্য! তবে এসব কথা প্রবীরকে বলা চলবে না, তা হলে এরকম আরো পাঁচটা সাপ-ব্যাঙ গান শুনতে হবে। মানে শুনতেই হবে। তাই চুপচাপ গানটা শেষ হওয়ার অপেক্ষায় বসে আছে রতন।

    তবে এতক্ষণে একটা লাইনেরই পুরো কথা গুলো বুঝতে পেরেছে ও - হাউ মেনি টাইমস্‌ মাস্ট দ্য ক্যানন বলস্‌ ফ্লাই, বিফোর দে আর ফর এভার ব্যান্‌ড- অপূর্ব লাগল! গানের আর সব কথা গুলোও নিশ্চয়ই একই রকম ভালো, নইলে প্রবীর অমন হুমড়ি খেয়ে গানটা শুনবে কেন! কিন্তু গান কি কেবলই কথা? তবে তো কবিতা শুনলেই হয়! এই যে গানটা, তাতে না আছে সুরের দোলা আর না সেটা শ্রুতিমধুর - তবে আর গান শোনা কেন! প্রতিবাদই যদি প্রতিপাদ্য হয়, তবে আমাদের সলিল চৌধুরীর গানই বা কম কিসে? নবদ্বীপে থাকতে পার্টি অফিসে মাঝে মাঝেই সকলে গাইত ওঁনার গান। তেভাগা আন্দোলন নিয়ে যে গান গুলো, সে গুলোর চাইতে আর প্রতিবাদী গান হয় নাকি? হেঁই সামহালো ধান - শুনলেই গায়ে কাঁটা দেয় ওর।

    রেকর্ডের থেকে পিনটা তুলে নিয়ে রতনের দিকে তাকাল প্রবীর। "কিরে ন'দে, কেমন বুঝলি?" এখানে রতনকে সকলে ন'দে বলে ডাকে - নদীয়া জেলায় বাড়ি বলে। বড় ভালো লাগে রতনের। কলেজের বন্ধুদের দৌলতে ওর একটা ডাকনাম তো জুটেছে এতদিনে! প্রবীর অবশ্য ওর মতন হতভাগা নয় - ওর ডাক নাম ওর বাড়ির লোকেরাই দিয়েছে - বালু। আজকাল প্রবীরকে ওই নামেই ডাকে রতন।

    - খারাপ না।
    - খারাপ না! শুধু খারাপ না! ওরে এটা একটা গোল্ড মাইন!
    -কথা গুলো সব বুঝলে তো বুঝব গোল্ড না কয়লা!

    হেসে ফেলল প্রবীর। বলল, সে তোকে আমি লিখে দেব কথা গুলো, পড়ে দেখিস লোকটা কি করেছে!
    গানটা শুনতে শুনতে যে প্রশ্নটা মনে এসেছিল সেটা প্রবীর কে করে ফেলল রতন -হ্যাঁরে, গানটা কি ভিয়েতনামের যুদ্ধের প্রতিবাদে গাওয়া?
    -গুড কোয়েশ্চেন, তবে এইখানেই আসল মজা কালীদা! এই গানটা ডিলান আজ থেকে চার বছর আগে লিখেছে। কিন্তু দেখ, তুই আজকের কন্টেক্সেটের সাথে এটাকে রিলেট করতে পারলি!
    রেকর্ড প্লেয়ারটাকে নিজের আলমারিতে তুলে রাখতে রাখতে প্রবীর বলল, আর আমি কোন লাইনটার সাথে কানেক্ট করতে পারলাম জানিস?

    কি বলবে রতন? সারা গানটায় একটা লাইনই ও পুরোটা বুঝতে পেরেছে। বোকার মতন মাথা নাড়ল তাই - না।

    খানিকটা স্বগোক্তির মতই বলল প্রবীর - এই লাইনটা খেয়াল করলি কি? হাউ মেনি টাইমস্‌ মাস্ট আ ম্যান টার্ন হিজ হেড, টু প্রীটেন্ড দ্যাট হি জাস্ট ডিডন্ট সি...... লোকটাকে আর কিছু না হোক লিটারেচারের জন্য নোবেল দেওয়াই উচিৎ, কি বল!
    -এই ইঞ্জিনিয়ারিং-এর দিব্যি বলছি বালু, এটা হজম হল না! রবীন্দ্রনাথ আর তোর ডীলান - দুজনকে বেমালুম এক আসনে বসিয়ে দিলি?

    রাগ করল না প্রবীর। মৃদু হেসে বলল, গান লিখিয়ে হিসেবে ডীলান যে রবীন্দ্রনাথের চাইতে কিছু কম - এ কথাটা বুঝলি কি করে? সময় সব কিছুর বিচার করে রে পাগলা!

    -রাখ তো! আগে সলিল চৌধুরীর মতন লিখুক ডীলান, তারপর ভেবে দেখব।
    - বেশ, তোর সলিল চৌধুরীর কি লিখেছেন শুনি একটু।
    - শুনবি? তবে এই লাইনটা শোন। ...আর দেব না আর দেব না রক্তে বোনা ধান মোদের প্রান হো...

    হাসতে হাসতে খাট থেকে ইচ্ছে করে পড়ে গেল প্রবীর। subtle বলে ইংরাজিতে একটা কথা আছে রে পাগোল! বড্ড মোটা দাগের হয়ে গেল কালীদা, বড্ড মোটা দাগের!"
    -তুই বললেই লাইনটা মোটা দাগের হয়ে যাবে! মানতে পারলাম না!
    -মানিস না, বাট দ্য ফ্যাক্ট উড রিমেন সেম।
    -রাখ, রাখ, খালি ব্লোয়িন ইন দ্য উইন্ড, ব্লোয়িন ইন দ্য উইন্ড বলে নাকি কান্না করে গেলেই সেটাকে গান বলে না!

    আরো কিছুক্ষণ তর্ক বিতর্ক করে নিজের ঘরের দিকে চলল রতন। যাওয়াটা দরকার। কালকে বিকেলের ডাকে কিরনের চিঠি এসেছে, সেটাকে পড়তে হবে। মানে আরেকবার পড়তে হবে। বহুবার পড়া হয়ে গেছে এর মধ্যে, কিন্তু চিঠির শেষটা যতবার পড়ছে, সারা শরীরে ওর একটা শিহরণ ছড়িয়ে যাচ্ছে। মাত্র দুটো শব্দ - তোমার কিরন! লাইনটানা খাতার একটা পাতায় নীল কালিতে লেখা দুটো শব্দের এমন অভিঘাত!

    নীল এনভেলপের ওপরে নিজের নামটা দেখে অবাক হয়েছিল রতন। ওকে কে চিঠি লিখবে। পর মুহূর্তেই একটা আশঙ্কায় কেঁপে উঠেছিল চিঠি ধরে থাকা হাতটা - বাড়িতে সকলে ভালো আছে তো? চিঠিটা খুলে নিজেকে বোকা মনে হল - হাতের লেখাটা দেখেই তো বোঝা উচিৎ ছিল! এতদিন ধরে যার অঙ্কের খাতা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করল, তার হাতের লেখাটা না চেনা একটা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ বইকি!

    চিঠিটা নিয়ে সোজা চলে গেছিল গঙ্গার ধারে। ওদের নবদ্বীপ হয়েই এখানে আসছে গঙ্গা। সেই একই রকম এলোমেলো হাওয়া এলোমেলো করে দিচ্ছিল ওর চুলগুলো। মা ছাড়াও আর কেউ ওর কথা এতটা ভাবে! একই যায়গায় বসে বারে বারে পড়েছিল চিঠিটা। ওর জীবনে প্রথম পাওয়া চিঠি।

    হস্টেলের ঘরে ঢুকে দেখল ওর রুমমেট পাকা ঘরেই আছে। পাকা, মানে রঞ্জন। সবেতেই ওর জ্যাঠামি,তাই সিনিয়ররা এই নাম দিয়েছে। সত্যি, পাকামিই বটে! নইলে ফুটবল ছেড়ে কেউ হকি খেলে? আর শুধু পাকাই নয় - ওর দুই দাদাও পড়ে এই কলেজে তারাও সব হবু ধ্যানচঁদ! পাকার সাথে এখন কিছুক্ষণ ধানাই পানাই করতে হবে। একটু পরে ও স্নান করতে গেলে চিঠিটা আরেকবার পড়বে রতন।

    চিঠিটার ছত্রে ছত্রে ভালোলাগা ছড়িয়ে থাকলেও একটা ব্যাপারে সামান্য হলেও খারাপ লাগছে ওর। কিরন লিখেছে রতন যেন কোন চিঠি না লেখে, কিরনই লিখবে নিয়ম করে চিঠি। ঠিক কথাই, কিরন তো আর হস্টেলে থাকে না!

    কিন্তু কিরনই বা কি করে লিখল চিঠিটা! বাড়িতে বসে লেখার প্রশ্নই নেই। তা হলে কি স্কুলে বসে লিখল? সেটাও খুব সম্ভবত নয়। তা হলে? খুব জানতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু উপায় নেই। কিরন বারন করেছে চিঠি লিখতে, যখন বাড়ি যাবে তখনই না হয় জেনে নেবে।

    চিঠিটা ভাঁজ করে আলমারিতে তুলে রাখল রতন। রজ্ঞন ফিরে এলে ও যাবে চানে। আজকে রাতে গ্র্যান্ড ডিনার আছে। প্রত্যেক মাসের শেষ রবিবারটায় ভালো খাওয়া দাওয়া হয়।
    এখানে এসে অনেক নতুন জিনিস দেখছে রতন। ওর নবদ্বীপের জীবনের চাইতে অনেকটাই আলাদা। এই গ্র্যান্ড ডিনারের ব্যাপারটাও সেরকম একটা জিনিস।

    যে কোন জিনিসেরই একটা ইংরাজি নাম এখানকার সকলের মুখে মুখে ফেরে - এটাও আলাদা। যেমন ডিম পাঁউরুটিকে এরা বলে ফ্রেঞ্চ টোস্ট। ক্যান্টিনের বলাইদার মুখে সেটার অপভ্রংশ - ফেন্টোস! বন্ধুদের প্রায় প্রত্যেকেরই একটা করে ডাক নাম জুটেছে - নদে, পাকা, আলু! ওরই বয়সী সকলে কিন্তু ওর চাইতে অনেক গুছিয়ে কথা বলে ওরা। ইংরাজি মাধ্যম স্কুলে পড়ত বলে কি? পড়তে বসার কোন বাঁধা ধরা সময় নেই। ওর বরাবরের অভ্যেস ছিল সকালে উঠে পড়তে বসা। এখানে প্রায় প্রত্যেকেই রাত জেগে পড়তে ভালোবাসে, ক্লাস না থাকলে ন'টা অবধি ঘুমোয়। অত বেলা অবধি শুয়ে থাকতে পারেনা রতন, তা সে যত রাতেই ঘুমোক না কেন।

    কোন জীবনটা বেশি ভালো? একটু ধন্ধ লাগে ওর। এ জীবনটা ওর কাটিয়ে আসা জীবনের চাইতে আলাদা অবশ্যই, কিন্তু ভালো কি? ছাত্রেরা এখানে মদ অবধি খায় - এটা ও মনের থেকে কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। কাউকে বলতেও পারেনা। কিন্তু তাও এই জীবনটাকে কিছুতেই কম ভালো বলে দাগাতে পারেনা ও। একটা জায়গা যেখানে মানুষ চাইলে পড়তে পারে, যতক্ষণ খুশি - সেটাকে ভালো না বলার উপায় রতনের অন্তত নেই।

    দেওয়ালে টাঙানো ঘড়িটার দিকে তাকাল রতন । সাড়ে এগারোটা বাজে। পাকার স্নান সেরে ফিরতে আরো কিছুক্ষন লাগবে। আলমারি থেকে চিঠিটা আরেকবার বের করলে হয় না?

    ৩৫।

    গত কদিন ধরেই আকাশ ভাঙ্গা বৃষ্টি চলছে সমানে। অল্প বিরাম দিয়ে শুরু হয়ে যাচ্ছে আবারো। পথ ঘাট সমস্ত থই থই করছে। এমন অবস্থা যে স্কুলটাও ছুটি দিয়ে দিয়েছে আজকে। রেনি ডে। এরকম দিনে স্কুল থেকে ফেরাটাও একটা বেশ মজার ব্যপার! রাস্তায় জমে থাকা জলে পা ডুবিয়ে ছপাক্‌ ছপাক্‌ করতে করতে চলা - আহা! বাড়ি ফিরে অবশ্য মায়ের বকুনিটা বরাদ্দ থাকছেই - আর এক বছর পরে হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা দিবি, তোর কি কোন কান্ডজ্ঞানই হচ্ছেনা! ছাতা থাকা সত্ত্বেও ভিজে ভিজে এলি!

    বাড়িতে মা আজকে খিচুড়ি রেঁধেছিল, সাথে ডিম ভাজা। অমৃত! সেই খেয়ে বেশ এক চোট ঘুম দিচ্ছে সকলে। শোভার ঘুম হয়না দুপুর বেলায়; একটা চাদর গায়ে টেনে নিয়ে একটু গুটিসুটি হয়ে এখন ও বিশ্বনাথ'দার কথা ভাবছে।
    বিশ্বনাথ'দার হাসি, সবার মাঝে শোভার দিকে একটা বিশেষ দৃষ্টিতে তাকানো, তার সপ্তকে বিশ্বনাথ'দার গলা - এ সব কিছুই ঘুরে ফিরে মনে করছে শোভা। আর মনে করছে - কান দুটো গরম হয়ে গেল শোভার - বিশ্বনাথ'দার ওকে করা প্রথম চুম্বন।

    আর সব দিনের মতন গত শুক্রবারেও সকলে গান শিখে চলে যাওয়ার পর গুরুজীকে ছাদের ঘরটা অবধি ছেড়ে দিয়ে এসেছিল বিশ্বনাথ'দা। শোভা অপেক্ষা করছিল বিশ্বনাথ'দার ঘরে বসেই, নিচে নেমে শোভাকে বাড়ি অবধি ছাড়তে যাবে বিশ্বনাথ'দা। সেদিনও এরকমই বাদলা করেছিল। সন্ধ্যে হয়ে এসেছিল বলে ঘরের বাতিটা সুইচ টিপে জ্বালিয়ে দিয়েছিল শোভা। কিছুক্ষণের মধ্যেই নেমে এসেছিল বিশ্বনাথ'দা। সিঁড়ি দিয়ে দু-ধাপ নামতে না নামতেই চারিদিকে ঝুপ করে নেমে এসেছিল অন্ধকার। লোডশেডিঙ। টাল সামলাতে নিজের অজান্তেই শোভা চেপে ধরেছিল বিশ্বনাথ'দার হাত। অন্য হাতটা দিয়ে বিশ্বনাথ'দা একটা বলিষ্ঠ বেড় দিয়েছিল শোভার দেহটাকে, টেনে নিয়েছিল নিজের বুকের মধ্যে।

    থরথর কেঁপে উঠেছিল শোভা - আনন্দে, উত্তেজনায়, আকস্মিকতায়। বুকের উথালপাতালটাকে সামলাতে সামলাতে ফিস্‌ফিস্‌ করে বলেছিল, আমার ভীষণ ভয় করছে!
    বিশ্বনাথ'দা ওর কথার কোন উত্তর না দিয়ে ওকে আরো টেনে নিয়েছিল নিজের বুকের মধ্যে। তারপর শোভার তিরতির কাঁপতে থাকা ঠোঁটে ডুবিয়ে দিয়েছিল নিজের ঠোঁট। বড় জোর মিনিট খানেক, কিন্তু তার মধ্যেই ঘটে গেছিল এ সব কিছু।

    রাস্তায় নেমে এসেও বিহ্বলতা কাটেনি শোভার। ঘটনাটা কি ঘটল? ভালো না মন্দ? উচিৎ না অনুচিৎ? মাথার মধ্যে সমস্ত গোলমাল হয়ে যাচ্ছিল ওর। পাশে বিশ্বনাথ'দা হাঁটতে হাঁটতে সমানে কি সব যেন বলছিল - সব কথা কানে ঢুকছিল না ওর।......আমি তোমাকে ভালোবাসি শোভা......ভুল বুঝোনা.....কথা দাও সামনের দিন তুমি আবার গান শিখতে আসবে....

    শোভার কি ভালো লাগছিল না খারাপ লাগছিল? সংস্কার আর প্রবৃত্তির একটা টানাপোড়েন, একটা মিশ্র অনুভূতি ওর মনকে এতটাই আচ্ছন্ন করে রেখেছিল যে ভালো বা খারাপ, কোনটাই লাগছিলনা ওর।

    বাড়ির সামনে পৌঁছেও কিছু বলতে ইচ্ছে করছিলনা বিশ্বনাথ'দাকে। আসলে নিজের সাথে একটু একলা থাকার প্রয়োজন ছিল তখন। বিশ্বনাথ'দাকে রাস্তায় একলা রেখে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেছিল শোভা।

    এখন ভেবে দেখলে ঘটনাটা ওর মনে কোন পাপবোধের জন্ম দিচ্ছে না। বরং একটা নবলব্ধ অভিজ্ঞতার রোমাঞ্চ ওর শরীরে খেলিয়ে দিচ্ছে শিহরণ। একটা ভয়ও যে কাজ করছে না সঙ্গে সঙ্গে তেমনটা নয় কিন্তু শোভা ক্রমশ বুঝতে পারছে যে ভয়টা পিছু হটছে এক পা এক পা করে।

    চাদরটা সরিয়ে খাট থেকে নেমে এল শোভা। বিকেল নামছে ধীরে ধীরে। আজকে বাইরে যাওয়ার প্রশ্নই নেই। অল্প হলেও, এখনও পড়ছে বৃষ্টি। ওদের 'টাট'-টাও কাদায় একাকার!

    আজ শণিবার। রাতের ট্রেনে দাদা অসবে কলকাতা থেকে। আচ্ছা, চাকরি পেলে পর দাদার ওকে কালী ময়রার দই খাওয়ানোর কথা ছিল না? আজকেই ধরতে হবে দাদাকে। অবশ্য দই না খাওয়ালেও সব বোনেদের মিষ্টি খাইয়েছে দাদা। তা হলই বা! দই তো আর নয়! আজ দাদাকে কিছুতেই ছাড়া যাবেনা।

    বারন্দার দেওয়ালে টাঙানো ঘড়িটার দিকে তাকাল শোভা। পাঁচটা বাজে, মায়ের ওঠার সময় হয়ে গেছে। বাবা এখনও স্কুল থেকে ফেরেনি। বাবাদের স্কুল ছুটি দিলনা কেন? বাবার ঘরে এসে ঢুকল শোভা,পৃথিবীতে ওর স-ব চাইতে প্রিয় জায়গা। বাবা না থাকলে বাবার বই খাতা ঘাঁটাঘাঁটি করে সময় কাটাতে বেশ লাগে শোভার।

    বাবার টেবিলে একটা নতুন বই। টু কীল আ মকিঙ বার্ড । কলকাতা থেকে বড় মামা পাঠিয়েছে বাবার জন্য। পুলিৎজার বলে একটা পুরষ্কার ও নাকি পেয়েছে বইটা, বাবা বলছিল। শোভার পড়া হয়নি কিন্তু কিছু কিছু জায়গা বাবা পড়ে শুনিয়েছে। লেখিকার নামটা কেমন ছেলেদের মতন যেন! হার্পার লী।
    টেবিলের ওপর থেকে বইটা তুলে নিল শোভা। এলো মেলো পাতা ওল্‌তাতে লাগল। বাবা বইটার জায়গায় জায়গায় আন্ডারলাইন করেছে লাল পেন্সিল দিয়ে। একটা পাতায় এসে থমকাল ও .... most of this Old Family stuff's foolishness because everybody's family's just as old as everybody else's।

    ওই পাতাতেই আরেকটু এগিয়ে গিয়ে আবার পেন্সিলের দাগ দেখল শোভা ....I think there's just one kind of folks. Folks.

    পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে শেষ পাতায় এসে পৌঁছল শোভা। ".........Atticus, when they finally saw him, why he hadn't done any of those things....Atticus, he was real nic
    পরের লাইনটায় দাগ দিয়েছে বাবা। "Most people are, Scout, when you finally see them."

    বইটা মুড়ে রেখে বাবার টেবিলে কিছুক্ষণ বসে রইল ও। ভালো লাগছেনা। একটা গভীর মন খারাপ আচ্ছন্ন করে তুলছে ওর মনটাকে। আচ্ছা, বাবা যদি ওর আর বিশ্বনাথ'দার সম্পর্কটার ব্যাপারে জানে তাহলে বাবার মনভাব কি রকম হবে? জানেনা শোভা।

    মেঘলা দিনে কখন যে বিকেল হয় আর কখন যে সন্ধ্যে নামে.... দুটোর মধ্যেকার সময়টাকে কিছুতেই ধরা যায়না! সন্ধ্যের মুখেই বাবা ফিরল স্কুল থেকে। সাইকেলটাকে দাঁড় করাতে করাতে বলল - শোভা মা, তোর মা রে বল তো একটু সা বানাইতে। বাবা চা কে সা বলে।

    চায়ের সাথে মুড়ি মাখা। চায়ে দুটো চুমুক দিয়েছে কি দেয়নি, দড়জায় কড়া নাড়ার শব্দ। কে এল এই সময়? মেজদি যাচ্ছিল দড়জা খুলতে কিন্তু শোভা বলল, আমি যাচ্ছি। দড়জা খুলেই চমক, দাদা! অন্যদিন ফিরতে রাত হয় দাদার। জিজ্ঞেস করতে বলল আজ হাফ ছুটি নিয়েছে।
    ভালই হয়েছে, সকলে মিলে জমিয়ে গল্প করা যাবে।

    হাত মুখ ধুয়ে এসে দাদা বসল বটে বাবার ঘরে কিন্তু খুব বেশি কথা বলছে না তো কারুর সাথে? ক্লান্ত বোধহয়! বাবাও মা কে বলল - আজ তাড়াতাড়ি রান্না চাপায়ে দাও, খোকারে টায়ার্ড লাগতাসে। শোভারও তাই মনে হল। আজকে আর দাদাকে দইয়ের কথা বলে কাজ নেই, একে চারিদিকে জলকাদা - একটু বিশ্রাম করুক গে দাদা।

    রাতে খেতে বসে দাদা বলল - মা, সামনের মাসে আমার ট্রান্সফার হয়ে যাচ্ছে। গোমো।
    - আগে বলিস নি তো!
    রুটি ছিঁড়ে পটলের তরকারিতে ডোবাল দাদা।
    - কতদিন পর পর আসবি তা হলে ?
    - কি করে বলি বল তো! আগে তো যাই জায়গাটাতে।
    - ওখানে থাকবার ব্যবস্থা করবে সরকার থেকে?
    - হ্যাঁ, কোয়ার্টার দেবে।

    মা উঠে রান্না ঘরে চলে গেল। শোভা জিজ্ঞেস করল, গোমো মানে সুভাষ বাবু যেখান থেকে ফ্রন্টিয়ার মেল ধরেছিলেন - না রে দাদা?
    -হুঁ।
    -তুই ওখানে স্থিতু হয়ে গেলে পর আমরা সবাই মিলে তোর ওখানে যাব, বেশ মজা হবে! তাই না বৌদি?

    ঘরের একটা কোনে চুপ করে দাঁড়িয়েছিল চাঁপা। শোভার কথা শুনে মাথা নাড়ল শুধু। খাওয়া থামিয়ে দাদা বলল - তোর বৌদিকেও আমার সাথে যেতে হবে রে শোভ। নইলে ওখানে আমার রান্না কে করে দেবে, বল!

    রান্না ঘর থেকে ফিরে এসেছে মা। বৌদিকে বলল, বৌমা কাল থেকে অল্প অল্প করে গোছগাছ শুরু করে দিও, একমাস সময় দেখতে দেখতেই কেটে যাবে।!
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ | ২২৩৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ***:*** | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৫:১৪74030
  • আবার নতুন পর্ব? আগেরটার তলায় অ্যাপেন্ড করা গেল না?
  • kaushik | ***:*** | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৬:৪৩74031
  • অপশন পেলাম না। কি জানি, হয়ত আমিই খুজে পচ্ছিনা। তবে দেখতে হবে খুব শিগ্গিরি, এ ভাবে অসুবিধা হচ্ছে বুঝতে পারছি।
  • Kaushik Ghosh | ***:*** | ০১ মার্চ ২০১৪ ১০:০৩74032
  • d,
    peyechhi. ebaara theke appened kore debo...
  • d | ***:*** | ০১ মার্চ ২০১৪ ১০:৫৪74033
  • বাহ ভেরি গুড :D
  • Biplob Rahman | ***:*** | ০২ মার্চ ২০১৪ ০৯:৫৩74034
  • ব্লগ বারান্দায় এতো দীর্ঘ ধারাবাহিক বোধহয় এই প্রথম। বিচ্ছিন্নভাবে ধারাবাহিকটি পড়ছি। এই পর্বটি ভালই লাগলো। ...

    মনে পড়ে যাচ্ছে, চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব এবং ভিয়েতনামের মুক্তির সংগ্রামের ঢেউ সে সময় আছড়ে পড়েছিল এই পোড়া বাংলায়। সে সময় একটি জনপ্রিয় শ্লোগান ছিল:

    "তোমার নাম/ আমার নাম/ ভিয়েতনাম/ ভিয়েতনাম!"
  • kaushik | ***:*** | ০৩ মার্চ ২০১৪ ০৪:২০74035
  • বিপ্লব ভাই,

    সে স্লোগানও লেখাটায় আছে, অন্য কোনো একটা পর্বে :)
  • sosen | ***:*** | ০৪ মার্চ ২০১৪ ০৩:৫২74036
  • পুরো লেখাটা, এখন অব্দি যতোদূর হয়েছে, একটা জায়গায় এনে দেওয়া যায়? এভাবে পড়তে অসুবিধে হচ্ছে বেশ।
  • um | ***:*** | ০৮ এপ্রিল ২০১৪ ০৬:৫৪74037
  • এটা কি আর হবেনা?
  • mila | ***:*** | ৩০ এপ্রিল ২০১৪ ০৫:২৩74038
  • এ কি ইটা আর এগোয়নি?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন