এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • পুঁটিকাহিনী ৯- মাতা-কন্যা সংবাদ

    San Gita লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৮ মে ২০১৭ | ১৫৬৬ বার পঠিত
  • মাতৃদেবীকে পুঁটিরাণী বিলক্ষণ বুঝিয়া চলে। প্রবল ব্যাক্তিত্বময়ী এবং সর্বকর্মনিপুণা মাতৃদেবী পুঁটিকে বেশ চাপে ফেলিয়া দেন যখন তখন। মাতার অভিযোগ মিথ্যা নহে- ফাঁকিবাজ পুঁটিরাণী কী প্রকারে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইত বা একাধিক দপ্তরে কী প্রকারে তাহার কর্মসংস্থান হইল, এই সবের ব্যাখ্যা আজও মাতার যুক্তিবুদ্ধির বাহিরে। এখন পরিণত বয়সেও পুঁটি সাংসারিক কর্মে নিতান্তই অপটু, সন্তানাদি মানুষ করায় তাহার অদক্ষতার সীমাপরিসীমা নাই, তাহার ঘরদোর ছবির মত একেবারেই নহে, তাহার দ্বাদশবর্ষীয় পুত্র মাতার চক্ষুর দিকে চাহিয়া পরবর্তী কার্যকলাপ পরিকল্পনা করা দূরস্থান, তুড়ি মারিয়া নিজ মাতার সিদ্ধান্ত উড়াইয়া দেয়, পুঁটিরাণী নিরুপায় হইয়া কাঁদিতে বসে, পুঁটির পরিচারিকাগণ মন্দ নহে, তবে তাহারা যাহা পারে করে, পুঁটি তাহার নাতিউচ্চ নাসিকা উহাদের কার্যে গলাইতে যায় না, যাহা পাইতেছে তাহাতেই সে মহা সন্তুষ্ট, যে সময় পুত্র ও পরিবারের পিছনে ব্যয় করিলে সোনার সংসার হইতে পারিত, সেই মূল্যবান সময় পুঁটি নিজের খামখেয়ালীপনায় অপচয় করে, পুত্র উচ্ছন্নে যাইতে বসিয়াছে, পুঁটি অপ্রয়োজনীয় বস্তুসামগ্রী, খাদ্যদ্রব্য এবং পরিধেয় কিনিয়া বাড়ি বোঝাই করিতেছে, অথচ সেগুলির কোনরূপ যত্ন নাই, শীর্ণকায় পুত্রকে নানারূপ সুস্বাদু রান্না করিয়া খাওয়ায় না, একবাক্যে কী করিয়া যে পুঁটি অর্থহীন দিনাতিপাত করিতেছে, তাহা ভাবিলে মাতার রক্তচাপ উর্ধ্বমুখী হইয়া পড়ে, পুঁটি তাঁহার আত্মজা কিনা ঘোর সন্দেহ হইতে থাকে।

    মাতা নিজকন্যার গুণপনার কাহিনী কন্যাসহ চারিপার্শ্বের কাহাকেও বলিতে কার্পণ্য করেন নাই কোনদিন, তথাপি পুঁটি অবিচল, মাতার জামাতা সহিষ্ণুতার পরাকাষ্ঠা, পুঁটির শ্বশ্রূমাতা মোটের উপর সন্তুষ্ট। তদুপরি, মাতার বাক্যের উত্তরে অর্বাচীন, উদ্ধত পুঁটি বলিয়া থাকে যে, থালা-চামচ গুণিয়া-গাঁথিয়া রাখিবার জন্য তাহার জন্ম হয় নাই, শ্বশ্রূমাতা বধূর বুদ্ধিমত্তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ এবং শ্বশ্রূমাতার পুত্র পুঁটিকে আরো অধিক দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় করিতে উৎসাহ দিয়া থাকে বলিয়া শোনা যায়। দেখিয়া শুনিয়া মাতার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মাইল, ইহাই ঘোর কলিকালের লক্ষণ!

    পুঁটির পক্ষে একমাত্র স্বস্তি এই যে, পিতা অকারণেই চিরকাল কন্যাগর্বে মহা গর্বিত এবং মাতার মতে, পিতা জগৎসংসারে পুঁটি অপেক্ষা অধিকতর অচল। প্রত্যহ মাতার নিকট তাঁহার অপটুতা নবনবরূপে ধরা দিতেছে। ফলতঃ, পিতাকে লইয়া মাতা এতই ব্যতিব্যস্ত যে চক্ষুর অন্তরালে থাকিয়া পুঁটি যে আরো কত বিশৃংখল হইল, নিয়মিত সেই সন্ধান লওয়া তাঁহার পক্ষে সম্ভব হইয়া উঠে না।

    অপরদিকে, পুঁটি শ্বশ্রূমাতার বেজায় ভক্ত হইয়া উঠিয়াছে, মাতার নিকট কোন এক সময় কথাপ্রসঙ্গে বলিয়াছে যে, শ্বশ্রূমাতা তাহার জীবনচর্যায় কোন অভিযোগ তোলেন না, তাহার সকল চপলতায় প্রবল প্রশ্রয় দেন, বিপণী হইতে প্রত্যাবর্তনের কালে পুঁটির হস্তে রাশিকৃত সম্ভার দেখিয়া ভ্রূকুঞ্চন তো করেনই না, কী পরিমাণ অর্থনাশ হইল, জানিতে চান না পর্যন্ত! শুনিয়া মাতা অভিমানী হইয়া পড়িলেন- তাঁহার মনে হইল যে, পুঁটি মাতৃস্নেহের অবশেষে এই প্রতিদান দিল, মাতার কার্যে এখন সে খুঁৎ দেখিতে পায়, শ্বশ্রূমাতার স্নেহে সে ধরাকে সরা জ্ঞান করিয়া নিজমাতাকে পর করিতে চায়। হায়!! পুঁটি এই বিশ্লেষণের কিছুই জানিল না! মাতা স্থির করিলেন যে, তিনি কন্যার প্রতি কর্তব্য অবশ্যই করিবেন, কিন্তু তাহার কোন কার্যে আর বিচলিত হইবেন না, কন্যার নিকট কোন কিছুর মূল্য জানিতে চাইবেন না। নূতন গৃহক্রয়ের কালে মাতা সর্বপ্রকার সাহায্য করিলেও গৃহের মূল্য জানিতে চাহিলেন না, নানা ব্যস্ততায় তাহা পুঁটির নজর এড়াইয়া গেল। কিন্তু গোল একটা বাঁধিল। ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন কেহ কেহ মাতার নিকট নূতন গৃহের মূল্য কীরূপ জানিতে চাহিলে মাতা বলিতে পারিলেন না এবং জানিয়াও বলিতেছেন না এই অভিযোগে অভিযুক্ত হইলেন। মাতা ক্ষুণ্ন হইলেন বৈকি!

    আশার কথা এই যে, গৃহসন্ধানহেতু পুঁটির একা একা নগরের এপ্রান্ত ওপ্রান্ত চষিয়া বেড়ানো, এমনকি প্রয়োজনে মধ্যস্থ ব্যক্তিবর্গের দ্বিচক্রযানে চড়িয়া বসিয়া দৌড়াদৌড়ি দেখিয়া মাতার সেই পুরাতন সন্দেহের কিঞ্চিৎ নিরসন হইয়াছে। তবে মাতার ধারণা, নূতন গৃহে থাকিবার কালে পুঁটি "সংসার" কথাটির অর্থ সম্যক বুঝিবে। কার্যকালে দেখা গেল, তাঁহার ধারণাই সত্য। পুঁটি পরপর বাড়ির দলিল, একখানি বারোহাজারী চেক ও নিজ প্যানকার্ড হারাইল ও সেই কাঁদুনিতে চারিপার্শ্বের লোককে অস্থির করিয়া তুলিল। নিজ ভবিষ্যৎবাণী মিলিলেও মাতা কন্যার দুরবস্থায় অনেক চেষ্টা করিয়াও খুশী হইতে পারিলেন না। কী করিয়া পুনরায় সেগুলি পাওয়া যায়, তাহা লইয়া বিস্তর জলঘোলার পর একে একে তাহারা গৃহে স্ব-স্ব-স্থানে পুনরাবিস্কৃত হইল। পুঁটি নিজেই চমৎকৃত হইয়া গেল। সকলে কহিল, পুঁটি বড়ই কর্মনিপুণা, তাহারা পূর্বেই জানিতেন যে, উহার কিছু হারাইতেই পারে না। মাতা মনের রাগ মনে চাপিয়া চুপ করিয়া রহিলেন।

    আজকাল মাতা আর কন্যার কুকীর্তির সংবাদ পান না, নিশ্চয় কন্যা জামাতাকে টিপুনি দিয়া রাখিয়াছে! জামাতা বাবাজীবন ভাল ছেলে, তবে কিনা সাংসারিক কার্যে পুঁটিরই কাছাকাছি। কাজেই স্ত্রীকে তিরস্কারও খুব একটা করিতে পারে না। সময় পাইলেই গোঁজামিলের সংসারে তালা লাগাইয়া বাক্স-প্যাঁটরা বাঁধিয়া পুঁটি অ্যান্ড কোং ঘুরিতে বাহির হইয়া পড়ে, পুত্রের ভবিষ্যৎচিন্তা বা টাকাপয়সার চিন্তা উহাদের বিন্দুমাত্র আছে বলিয়া মনে হয় না। আবার কিছু ছানাপোনা যোগাড় করিয়া নাটক ইত্যাদি করানোতেও পুঁটির প্রবল আগ্রহ!! ঘরের খাইয়া বনের মোষ তাড়ানো আর কাহাকে বলে!

    সম্প্রতি মাতার কানে আসিয়াছে, পুঁটির 'কাব্য'রোগ দেখা দিয়াছে। সময় পাইলেই এখন সে দুই-চার ছত্র লিখিয়া নেয়। বাল্যকাল হইতে এযাবৎকালের নানা স্মৃতির উপর রঙ চড়াইয়া সে যা লেখে, কিছুসংখ্যক বন্ধু তাহাদের অবসরকালে নাকি সেগুলি পড়িয়াও থাকে। কর্মক্ষেত্রের সকল কার্য সমাধা করিয়া যতটুকু সময় উদ্বৃত্ত হয়, তাহা যে সংসার এবং পুত্রের জন্য অপ্রতুল, তাহা জানিয়াও পুঁটি কি ভ্রমবশতঃ এই সকল উঞ্ছবৃত্তিতে মাতিয়া আছে, তাহা মাতার পরিণত মস্তিষ্কের পক্ষেও বোঝা দুঃসাধ্য! মাতা মনে মনে কন্যার মুন্ডপাত করিতে করিতে পুঁটির মুখমন্ডলে রোমের সম্রাট নীরোর ছবি দেখিতে পান, আর আপনারা, পাঠককুল? কী দেখেন আপনারা?

    ©sangitaghoshdastidar
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৮ মে ২০১৭ | ১৫৬৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কান্তি | ***:*** | ০১ জুন ২০১৭ ০২:৫০59693
  • এই রচনা পাঠান্তে আমি একান্ত ভাবে কামনা করিতেছি, পুঁটির উদ্যত কলম হইতে আরো, আরো এইরূপ রক্ত পলাশ ঝরিয়া পড়ুক।
  • a | ***:*** | ০১ জুন ২০১৭ ০৩:২২59694
  • সাধু সাধু বলে ঠিক পরিত্রিপ্তি হয় না, বলতে ইচ্ছা করে নাজুক
  • avi | ***:*** | ০১ জুন ২০১৭ ০৩:৩৩59695
  • ক্যাবাত, এনকোর, নাজুক, সোনার কীবোর্ড, মেডেল দেব, তনখা বঢ় জায়েগা তুমহারি, সাধু সাধু।
  • সিকি | ***:*** | ০১ জুন ২০১৭ ১০:৪২59696
  • তুললাম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন