শ্রীজাত শাসকদলের হয়ে লিখেছেন ও সেটাকে বলেছেন প্রোফেশনাল কাজ। এর ফলে যা যা হলো......
বিতর্কলিস্টিঃ
১ স্বঘোষিত জ্যাক কেরোয়াকের দল বলতে শুরু করলেন - "দেখলে তো! সব আসলে স্টান্ট! আরি বাওয়া যেটা প্র্যাক্টিস করি সেইটেই লিখি, এ জিনিস রোইন্দোনাত ছাড়া আর কে আছে বল দিনি"
২ পাছা থেকে স্কুল বেঞ্চের দাগ না যাওয়ারা অব্দি অ্যানালিসিস করতে বসলেন "দূর শ্রীজাত নাকি আবার লেখক! তরল লেখা সমস্ত। খাপছাড়া ইমেজারি, আনন্দবাজার অব্দি ঠিক আছে, তার বেশি অ্যালাউ করা উচিত না।"
৩ আঁতেলরা চিরকালই শ্রীজাতকে কবি বলে মনে করতেন না, অবশ্য তারা কোনো কিছুকেই কোনো কিছু বলে মনে করেন না। এই ঘটনায় "হেঁহ" সহযোগে ঋত্বিক ঘটকের অন দা কালচারাল ফ্রণ্ট কোট করেছেন।
৪ চেনা বোদ্ধারা, মানে ধরুন যাদের মিষ্টির দোকান, বা গ্যারেজ, বা সরকারি পদ, বা ইয়েতি ট্রেনিং সেন্টার ইত্যাদি প্রভৃতিও আছে আবার লেখেন্টেখেন ও তারাও এক নম্বরের কথাই বলছে। শিপ্লী ও স্রষ্টার ফারাক ইত্যাদি, তারা টাক মাথা চশমা পরা ইত্যাদি বলে গালাগাল করে বলছেন, "ওমা, আমিতো স্যুরিয়েল নেতাজীর কথা বলছি"
৫ শিল্প না জীবিকা। ভাস্কর চক্রবর্তীর চিরকেলে দ্বন্দ্বও উঠে আসছে।
৬ পোঁদপাকারা মজা পেয়েছে সবচাইতে বেশি। তারা শিড়দাঁড়া কি ওয়ার্ডে যা নয় তাই লিমেরিক নামিয়ে ফুটেজ খাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।
৭ নিজেদের আণ্ডার অ্যাচিভার ভাবা সাহিত্যিকরা অবশ্য মোটের ওপর খুশিই। তারা চান্স পাননি গান লেখার, এবার দ্যাখ সালা ক্যামন লাগে।
এইবার আমার মত গ্র্যাজুয়েট ফেল, সাহিত্য নির্বোধ, লাথখোরদের গোষ্ঠি হইতে উপরিউক্ত পয়েন্টের প্রতি...
কাউন্টার বিতর্কলিস্টিঃ
১ নাগরিক হয়ে যাওয়ার আগে অব্দি অ্যালেন জিন্সবার্গ, বিট জেনারেশন ছাড়া কারোর লেখা পড়বেন না। একমাত্র এনারাই যেটা প্র্যাকটিস করতেন সেটাই লিখতেন। পিকাসো, ছবি, হেমিংওয়ে, ফিৎসজেরাল্ডের বইয়ের দিকে তাকালেও পাপ লাগতে পারে। মিডনাইট ইন প্যারিসই দেখে নিতে বলতাম কিন্তু উডি অ্যালেন তো ইদিকে মেয়ে কে বিয়ে করে বসে আছেন।
আপনাদের যুক্তি অনুযায়ী ডুবুরি ট্রেনিং না থাকলে সমুদ্রের গভীরতা নিয়ে ভাবাও পাপ। আর শ্রীজাত কিনা আবার লিখছে।
২ পড়োনা ভাই, আনবিয়ারেবল লাইটনেস ওফ বিয়িং পড়ো, কৃষ্ণ কুন্তী কৌন্তেয় পড়ো, আউটাসাইডার পড়ো, মান্টো, তুঘচাই, কার্ভার, ব্রেশটের সমোলচনা, ডা. জিভালগোর পর গৃহবন্দী হয়ে থাকা নিয়ে কার্টুনের পুরষ্কার প্রাপ্তির গল্প পড়ো, একাত্তরের যীশু পড়ো, এম্পিথ্রিতে লিওনার্ড বার্নস্টেইনের সিরিজ ওফ লেকচার শোনো, কেউ তো বারণ করেনি।
তবে শ্রীজাতকে লেখা তুলে গালাগাল করবার আগে নিজে কিছু একটা লিখে দেখাও যেটা কাতিউশার গল্পের যে কোনো একটা কবিতার ধারে কাছেও পৌঁছতে পারে। গুলিয়ে ফেলোনা কিন্তু ভাই, লেখার কথা বলেছি, তোমাদের আর শ্রীজাত-র।
৩ আঁতেলদের কিছু বলার যোগ্যতা আমার নেই আর তারা এখন ব্যস্ত আছেন। শান্তিনিকেতনের হোটেল বুক করছেন। ব্যাস্ত আছেন। টিকিট কাটছেন। ব্যাস্ত আছেন। এবং ব্যাস্ত আছেন।
৪ শ্রীজাত লেখালিখি ছাড়াও অন্যকিছু করেন বলে তো শুনিনি। ও হ্যাঁ অভিনয় করবেন শুনতে পাওয়া যায়, তবে তার না আছে প্রোডাকশন হাউস, না আছে, উপরি।
আপনারা তো নিজেদের লেখার প্রতি মারাত্মক ভাবে সৎ, ওসব ছেড়ে দিন দেকি। তারপর শুধু লিখুন।
৫ আবার সেই, বিট জেনারেশন প্রসঙ্গ চলে আসবে। বা হয়ত বলবো বিজ্ঞাপন পড়ুন।
৬ পোঁদপাকাদের কিছু বলা যা, ল্যাংচা হাব বা ঝালমুড়ি মার্ট নিয়ে ভাবাও তাই। দুটোতেই সময় নষ্ট বই অন্য কিছু হয়না।
৭ এঁরা পন্ডিত। আড়াইশো ধনে কেনবার প্রাক্কালেও মনে মনে দেরিদাকোটাবলী স্মরণ করে তবে খুচরো বের করেন।
গান্টানকে বিশেষ পাত্তা দেননা। গুলজারের ফ্যান।
অন্যান্য
আমরা বাঙালীরা মানুষ দিয়ে কাজ বিচার করি। যদিও উল্টোটা হওয়াটাই কাম্য ছিলো। কিন্তু আমরা সেরকম নই।
আমরা রবীন্দ্রনাথকে ঠাকুর করেছি, চ্যাপলিনকে কমেডিয়ান।
শ্রীজাতর প্রোফালেই অকুপেশনের জায়গায় লেখা আছে সেল্ফ এম্পয়েড ক্রিয়েটিভ রাইটার। কবি-র মত কোনো পবিত্র শব্দ নয়।
কলরবের সময়ের কবিতা বা অভিজিৎ রায় মারা যাওয়ার পর অন্ধকার কবিতাগুচ্ছ, লেখবার পর আমরা বসিয়েছি তাকে প্রতিবাদ মুখের সিংহাসনে। তিনি পুরষ্কার ফেরাচ্ছেন আর বালি সরিয়ে ফুটপাথে হাঁটা অমেরুদণ্ডী আমরাও সেই লেখা শেয়ার করে কিছুটা প্রতিবাদ চাখছি।
আসলে আমরা খুঁজে বেড়াচ্ছি হীরো। একটা রিয়েল লাইফ হীরো। শ্রীজাতকে সেই জায়গাটা দেবো বলে হামলে পড়েছি।
কিন্তু শ্রীজাত পরিষ্কার বুঝিয়ে দিলেন তিনি এমন একজন যিনি যেটা ভালোবাসেন সেটা করেই পেট চালাচ্ছেন। আর বেশ ভালোভাবেই করছেন। ব্যাস! আমাদের বাস্তবে এনে ফ্যালা!! এইবার শ্রীজাত-র মাথায় সূর্যরশ্মির প্রতিফলিত হয়েই ওজোন স্তর ফূটো হচ্ছে বলে যদি দাবী তোলে কেউ, তাইতেও অবাক হবোনা।
এবার তর্ক আসতেই পারে যে তাহলে তো যারা প্রোফেশানাল কিলার তারাও জাস্টিফায়েড। তার উত্তর হলো শ্রীজাত কোনো অপরাধ করেননি।
যেটা করেছেন সেটা করতে আর স্বীকার করতে গাটস লাগে। শাসকের বিরদ্ধে যাওয়ার মতই এটাতেও, গাটস লাগে।
কবি ও একজন মানুষ। আপনার ভাবতে অসোয়াস্তি হলেও এটাই সত্যি।
শ্রীজাত-র কবিতা নিয়ে এই দলবদ্ধ ছেনালি কবে বন্ধ হবে জানিনা। তবে এটা জানি যে এরপর যখন আবার শ্রীজাত-র কোনো কাজে জাতির মেরুদণ্ড স্যাটিসফায়েড হবে, তখন এরাই আবার মাথায় তুলে নাচানাচি করবে।
যারা একদম সামনের সারীতে নাচবে তাদের যদিও অনেকেরই সময়ের অভাবে কাতিউশার গল্প পড়া হয়নি, কার লেখা যেন??