এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • নুড়ি , থুড়ি , গাঁজাখুরি

    Soumyadeep Bandyopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০১ আগস্ট ২০১৬ | ১৯৮৯ বার পঠিত
  • সন্ধ্যে নামবে নামবে করছে , বর্ষার এই সময় টা আকাশ দেখার জন্য আদর্শ | দিনের শেষ আলোর রঙিন ফলা এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়েছে আকাশকে , সেই রক্ত লাল চুইঁয়ে পড়েছে নদীর জলে , আনমনে ভেসে থাকা নৌকা গুলোর গায়ে | নদীর ধারটা অদ্ভূত | শহরের মাঝে, তবুও একদম ই শহর নয় | সামনের কাদা জমিতে ঘাসের মাথা নাড়া , স্রোতের অপেক্ষায় এ শহরে আটকে থাকা পানা ঝোপ | দূরে ওপাশে তিন রকম ভাষায় নাম চমকাচ্ছে হাওড়া, ব্রিজের ওপরে হালকা বেগুনী আলো জ্বলবে জ্বলবে প্রায় | উত্তর প্রদেশীয় অভিবাসী দের ভিড় প্রচুর এখানে | শিব মন্দিরের ধাপে নিশ্চিন্ত পা ফেলছে আবহমান| পাশেই গঙ্গামার আরতি শুরু হয়েছে একটা পেল্লাই প্রদীপ নিয়ে | সেই আলোয় আঁধারে চান সারছে এক ঝাঁক মাথা | লঞ্চ থেকে বয়ে যাচ্ছে জলপথে ফেরা অফিস যাত্রীদের ঢল | এর মধ্যেই উত্সাহীদের সার বেধে সদ্য ধরা মাছের দর দস্তুর চলছে আর তার পাশেই একটা ঢাল চাতালে আমি বসে আছি | বেপরোয়া কৈশোর লোহার পাটাতন থেকে অনায়াসে উঠে যাচ্ছে লঞ্চের ছাদে , আর ঝাঁপ খাচ্ছে প্রায় কালো হয়ে আসা জলে | আমার পিছনেই যে রেল লাইন টা চলে গেছে, সেটা গোল করে ঘুরেছে সারা শহর কে , হুগলীর পার ঘেঁসে | ছোটবেলায় বাবা চড়িয়েছিল সবাইকে, চক্র রেল | আর রেল লাইনের দু পাশ ঘিরে প্লাস্টিক , মাটি আর বাঁশ দিয়ে বানিয়ে রাখা অসংখ্য বস্তি | বেশির ভাগ ট্র্যাকেই ট্রেন চলে না, তাই সেখানে গজিয়ে উঠেছে সংসার | কবে কোথা থেকে উত্খাত হয়ে এই বহমান মানব স্রোত আশ্রয় নিয়েছে নদীর ধারে , কেউ জানে না | জমাট অন্ধকারের মাঝে কুপির অস্তিত্ব , ফটোগ্রাফার দের কাছে খুবই লোভনীয় , কিন্তু বাসিন্দাদের অন্ধকার তাতে ঘোচে না |
    প্রচুর বোর করলাম না আপনাদের | আচ্ছা আসুন আসুন , কতক্ষণ অপেক্ষা করছি আপনার জন্য সে আর কি বলব | জিজ্ঞেস করলেও বলতে পারব না, সময়ের সেন্স আমার খুব কম , বিশেষ করে এখন | এখন শঙ্কু আকৃতি মাটির পাত্রে ঢুকে যাচ্ছে নশ্বর শরীর , সূক্ষ্ম দেহ উড়ান দিচ্ছে ধোঁয়াটে সফরে | চারিপাশে সব থেমে আসছে , ঢিমে হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর কম্পন, সামনে জল স্থির , পুড়ে চলেছে বিস্ময় ওষধি | আপনার কি দেখেই নেশা হয়ে গেল নাকি মশাই , বসুন বসুন সবে তো শুরু | ঘাবড়ালে চলবে নাকি ! আপনি বরং একটা জয়েন্ট ধরান বরঞ্চ, নাকি আপনি রিসালা বলেন |ধীরে সুস্থে উড়বেন | যাই হোক, মন দিয়ে টানুন ..খুব সাম্যবাদী নেশা | কোনো উঁচু নীচু নেই | দূরের ধোঁয়া দেখে অবাক হবেন না , কারখানা টানা এদিকে আর বিশেষ নেই, ছিল এক কালে | যেটা দেখছেন, ওটা হলো শ্মশান | একটু বাদে ওখানে গিয়েও আমরা বসতে পারি , পাশেই কার বাবা ভাই বা মা বোন পুড়তে পুড়তে কার্বন হয়ে যাচ্ছে হটাত একটা পা ফটাকসে খাড়া হয়ে যাচ্ছে আগুনের মাঝে আর তার পাশে বসে ছিলিমে ক্রম বিলীন হয়ে যাওয়া | শুধুই ধোঁয়া আর ধোঁয়া | আহা , স্বর্গীয় এই বৈরাগ্য বিলাস | তাও যাবেন না বলছেন....ভয় পাচ্ছেন ..আরে একদিন তো আমরাও | আচ্ছা আচ্ছা থাক তা হলে |
    অল্প অল্প নেশা হয়েছে না| আসুন তাহলে একটু আস্তে আস্তে হাঁটি অন্য দিকে, জানি এখন নিজেকে মনে হবে শামুক , একেক পা মনে হবে ৫ মিনিটের রাস্তা কিন্তু আমাদের কোনো তাড়া নেই , মাইলস্টোন নেই , শুধু স্টোনড হওয়া আছে | দেখেছেন, তো কিসব ভুল ভাল বকছি , আজ আপনার প্রথম দিন এখানে আর আমি কিনা পান মারাচ্ছি | ওহ সরি সরি ক্ষমা করে দিন দাদা, মুখটা এরম ই হয়ে গেছে আজকাল | অভ্যেস ! আপনাদের মত লোকেদের সাথে এত কথা তো হয়না , কি করব বলুন | সঙ্গদোষ ....
    যেটা বলার ছিল , সেটা হলো কলকাতায় এত ভালো ছিলিম ঠিক দামে আপনি আর কোথাও পাবেন না | কোনো লুকোছাপা নেই, ঢেলে বিক্রী হচ্ছে | কি ভাবছেন পুলিশ ? আরে বাবার মন্দির চারিদিকে, পুজোয় লাগে, কোন শালা পুলিশ কি করে এখানে | ওই দেখুন আবার শালা বলে ফেললাম ! যাগ্গে চাইলে কুচো মশালাও পেয়ে যাবেন | তবে খুব একটা ভালো নয় | আরে মশালা, মশলা যাকে সাহেব রা বলে মারিওনা ( সাহেব সুবো বলে কথা, ওরা বলতেই পারে ) ওয়ানাবি রা বলে ক্যানাবি , শহরে বলে জি বা আরেকটু স্টাইলিশ হলে স্টাফ আর গ্রামের দিকে তামাক আর জেনেরিক নাম গাঁজা | যাই হোক, যেকোনো জায়গা থেকে গাঁজা না নেওয়াই ভালো , এখন এটা মেনস্ট্রিম নেশা তাই স্কুলের ছেলে পুলে বিন্দাস মেরে দিছে সিগারেটে ভরে আর ভেজাল ও দেওয়া হচ্ছে হুলিয়ে | অবাক হচ্ছেন নাকি শুনে ? কোনটা, বিশ্বাস হচ্ছেনা স্কুলে গাঁজা খাওয়াটা ..ওহ গাছের পাতায় ভেজাল টা | কিন্তু অবাক হবার কি আছে , আমরা তো জেনেটিকালি অসৎ | মিল্ক পাউডারে চক, মশলায় ইট সিমেন্ট , চা পাতা মিশিয়ে নলেনগুড়ের সন্দেশ ,খেতের তীব্র পেস্টিসাইড মাখানো পটল নিজের মাচার বলে চালিয়ে দেওয়া এসব ট্রেনিং আমাদের রক্তে | গাঁজায় এন টেন ,ব্যাটারীর জল মেশানো টা তো জলভাত | কি বললেন , খাস নদীয়ার মাল , যাক রং টা বেশ সবুজ ভালই মনে হচ্ছে | দেখেছেন , কথা বলার নেশায় আবার অন্য দিকে চলে গেলাম | যেটা আসল কথা, সেটা হলো যে ডিজাইনার ছিলিম কিনতে হলে আরেকটু ভিতরে যেতে হবে আসুন | রাস্তা দেখে, হুগলীর ধার একটু সাবল্টার্ন প্রাত:কৃত্যময় হয়ে থাকে কিন্তু |
    কি চোখ গোল্লা গোল্লা হয়ে গেল তো , এত ভ্যারাইটি দেখে | কি বলেছিলাম | থাক অভ্যেস নেই বুঝতে পারছি, তারপর প্রথম দিন | ঘর সাজানোর জন্যই নিয়ে যান না হয় | কোনদিন আমি আপনার বাড়ী গেলে কাজে দেবে | নইলে বাবার আশীর্বাদ হিসেবে রেখে দেবেন | চলুন এবারে একটু ওই ঘাটে বসি, এদিক টা নির্জন | আলো নেই এখন শুধু দু একটা লঞ্চের পিটি পিটি আলো , নৌকায় কুপি জ্বলছে | এসময় দুঃখী মেয়েরা নৌকোয় ওঠার জন্য সাজগোজ করে থাকে | আরে ওরম চিড়িয়া খানার মত করে তাকাবেন না | বহু দুঃখে মাংস বেচতে বসেছে এরা | তার চেয়ে এদিকে দেখুন , চারপাশের ওই কুঠরি কুঠরি জাফরী দেওয়া ঘরগুলো বেশ | বাবু দের বানানো চানের ঘাট, বাড়ীর মেয়েদের জন্য | আর পাশের ছোট অন্ধকার ঘর টা ? ওটা দিনের বেলা হলে পড়তে পারতেন | অন্তর্জলী যাত্রা পড়েছেন তো, ওই এক পিস ঘর এখনো টিঁকে গেছে কোনো রকমে | ওখানে আগে মৃত্যু পথযাত্রী দের এনে রেখে দেওয়া হত | গঙ্গার জলে পা ডুবিয়ে , যাতে অক্ষয় স্বর্গ বাস টা ইনসিওর করে ফেলা যায় | অবশ্য কেউ কেউ শক্ত প্রাণে দু তিন দিনও টিঁকে যেত | আর ফ্যামিলির চাপ বাড়াতো |
    কি বলেছিলাম না, একটা বেশ আদি কলকাতা আদি কলকাতা ব্যপার খুঁজে পাবেন | উল্টো দিকের বাড়ীটাই দেখুন না, ঠিক মাঝ বরাবর একটা গাছ উঠে গেছে , ঝুরি নামিয়ে দিয়েছে মজবুত রেলিঙে | পুরনো খিলান ,গাড়ী বারান্দা মাঝখানে ব্রিটিশ স্টাইল সিংহ মুন্ডুর ওপরে কাকের হাগা , খোপে খোপে পায়রার সংসার | মানুষ জন আর থাকে না, শরিকী বিবাদে আদালত তালা বন্ধ করে রেখেছে | বখাটে ছেলেরা মাঝে মাঝে ওখানে পাতা ফাতা নেয় | কেমিক্যাল লোচা, ওসবে আমরা নেই | শুধু হারবাল ই সম্বল | জমাট করে বসুন, ওই যে আমার বন্ধুও আছে , তিন জন না হলে ছিলিমে জুত হয় না | গিট্টি বানাতে ও সেরা | এমন হাতের কাজ আমি আর দেখিনি | একটা আধলা ইট আরেকটু ছোট করে মিনিট পাঁচেক ঘসে ঘসে একটা ছোট শন্কুর মত বানিয়ে ফেলা তারপর সেটা ছিলিমে ঢুকিয়ে দেওয়া | মাপ এমন হতে হবে যাতে , ছিলিমের ছোট মুখ টায় আটকে থাকে, অথচ হাওয়া পাস করে...নইলে কিন্তু টানা যাবেনা | টেকনিকাল ব্যপার, ওটা সবাই পারে না ওটা আমি ওর হাতেই ছেড়ে রাখি | প্রথমে ধজ্জি ধরে বিচি বেছে( ভয় পাবেন না মশাই , আপনার নয় ..গাঁজার ) আর ডাল পালা ঝেরেঝুরে রেডি করা | খইনি টাই আমার বেস্ট লাগে গাঁজার সাথে মেশাতে ( খৈনিতে চুন থাকলে কিন্তু গ্যামাক্সিন) , মোটা মুটি ৩০ ৭০ অনুপাতে | এবারে দু এক ফোঁটা জল দিয়ে , যারে কয় জল টিপ দেওয়া একটু আঙ্গুল দিয়ে ঠাসা ঠাসি করলেই ভালো একটা ডবকা জিনিষ পাওয়া যাবে | এবার সেটাকে কাঁচি (অভাবে হাত)দিয়ে কুচি কুচি করে ছিলিমে ঢুকিয়ে দেওয়া | আসুন এবারে একটা সাফি, মানে একটা ছোট কাপড়ের টুকরো ভিজিয়ে তলায় লাগাতে হবে | ওটা ছাড়া টান দিলে গরম পটে পট করে ঠোঁট পুড়ে যাবে | এবারে ওপরে অল্প একটা নারকেল দড়ি জ্বালিয়ে দিলে, বেশ ধিকি ধিকি আগুন পাওয়া যাবে | প্রথম টান টা আপনি নাই বা দিলেন, টানতে কষ্ট হবে, ধরাতে হবে তো | আহ | কি শান্তি ....অল্প অল্প করে কাটিয়ে এক ফুসফুস ধোঁয়া নিয়ে ছেড়ে দিন...রিং টিং হবে তার মধ্যে দিয়ে আপনার আত্মন জিমন্যাস্ট দের মত খেলা করে বেড়াবে আর আপনি থম মেরে বসে থাকবেন | জলে পা ডুবিয়েও রাখতে পারেন , কাছিম টাছিম নেই এদিকে | কত দূরের থেকে নৈশ:ব্দ ভেসে আসবে আপনার ইন্দ্রিয়ে | এক ঝটকায় আপনি পৌছে গেছেন হেথা নয় হোথা নয় অন্য কোনো খানে |প্রচুর জোরে টেনেছেন তো..না দম আছে দেখছি | এবারে একটু কাশি হোক ....এখখ এখখ ! বেশ চোখ কপালে শিবনেত্র সিন | একটু চাতালে হেলান দিয়ে থাকুন.....এই তো স্বর্গ হামীন অস্ত হামীন অস্ত ইত্যাদি ইত্যাদি |
    দাদা , একদম সেঁটে গেছেন দেখি ...এই তো এবারে লক্ষ্য করুন আপনাকে ঘিরে কেমন একটা অদ্ভূত ল্যাদের সাম্রাজ্য | কানের ওপর ওপর একটা পিপড়ে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে , দুবার ফোন বেজে গেল ..বোধয় বৌদির, আপনি গ্রাহ্যই করছেন না | এ সমস্ত তুচ্ছ জাগতিক ঝুট ঝামেলা থেকে আপনি এখন অনেক ওপরে | কোনো এক অপার্থিব টানে আপনি এখন বাঁধন ছাড়া ঘুড়ির মত লাট খাচ্ছেন , কোনো অন্তর্জালিক এন্টেনায় আপনার আর ফেঁসে যাবার সম্ভাবনা নেই | এ এক ঐতিহাসিক জায়গা যেখানে ছিলিমের পর ছিলিম টেনে পক্ষী উপাধি পেয়েছেন কত মহা মানব | ওই যে কুলফি মালাই যাচ্ছে , আসুন খাই একটা করে | জিভে তার পাবেন |
    কি দাদা , এখন কেমন ...আসুন এবারে আপনাকে আরেকটা স্পেশাল জিনিস খাওযাই | যারে কয় গুলি | আমি গব্বর নই রে বাবা, নিশ্চিন্তে থাকুন..আমি নেহাতই প্যাসিফিস্ট | একে বলে চরস , গাঁজার বাবা | কালচে দেখে চিন্তা করবেন না..এর ভিতরে আছে রামধনুর উল্লাস | গাঁজার কুঁড়ি, জটা এসব ভালো করে কন্সেনট্রেট করে বানানো হয় | এ ব্যাপারে খাঁটি হচ্ছে মানালা ক্রিম , কিছু আসে নেপালের ওদিক থেকে | যদিও প্রচুর ভেজাল হয়, বুট পালিশ টালিশ দিয়ে, কিন্তু আজ যেটা আছে এটাও ভালো, শিলিগুড়ির অনেকটা ভেতরে একটা গ্রাম থেকে আনা | একটু হাতে নিয়ে , গোল্লা পাকিয়ে চিপ্টে একটা কাঠিতে লাগিয়ে ( শক্ত হলে কাঁচিতে) অল্প সেঁকে নিলেই পুরো মাখনের মত গলে ছোট ছোট নরম দানা | আর একটা হালকা মিষ্টি গন্ধ | এর সাথে খৈনি চলবে না ..স্বাদ নষ্ট হবে | খুব ভালো চলে একটু দামী তামাক | সেটাও অল্প সেঁকে , সেই অল্প স্মোকড তামাক মিশবে চরসের দানা শরীরে | এবারে ছিলিমে পুড়ে প্রথম টান দিলেই বুঝবেন কেন গুলি বলে | সেরম টানলে ধা করে একটা বুলেট ঢুকে যাবে ফুসফুসে | একটু পরেই আপনার শিরায় শিরায় ঘুরে বেড়াবে একটা ঠান্ডা পাহাড়ী নদী আর আপনি , একটা আধডোবা পাথর হয়ে হুব্বা মেরে বসে থাকবেন | পাখী না থাক , আপনিই গুন গুন করে উঠতে পারেন
    ‘এসেছে চরস নেশার পরশ
    লেগেছে হৃদয়পুরে
    সন্ধেবেলায় , কলকে ডগায়
    মানালার সুরে সুরে ‘’
    দেখুন , আরতি শেষ হয়ে এসেছে | দূরের দ্বিতীয় হুগলী সেতু তার আলোর বিচ্ছুরণ ঘটাচ্ছে | জোয়ার এসে গেছে , এ ঘাটে আটকে থাকারা ভেসে চলেছে , হেথা নয় হোথা নয় অন্য কোনো খানে | হটাত একটা পাগল বাঁশী তে ফু দিয়েছে , পোষা নেড়ি কে পাশে বসিয়ে | ঠান্ডা হাওয়া , শতাব্দী প্রাচীন গাছের পাতা নাড়িয়ে বলে যাচ্ছে ইয়ে জো দেশ হয়্ তেরা | হুম হুম শব্দ করতে করতে গাম্ভীর্য্য মাপছে বুড়ো হুতোম | হলুদ আলো ঘিরে ফেলছে চরাচর | .......আসুন, চুপ করে স্পর্শ করি এই দৃশ্যকল্প | শুধু জলের শব্দ বয়ে যাক অনন্ত গভীরতায় |
    অনেক কাব্যিক ছড়ালাম , আসুন এবার একটু অন্য রুটে নদী কে সাইডে রেখে | এটাও মনে হয় উত্তর কলকাতার ই একচেটে , রাস্তার ওপরেই শক্তিবাবা | প্রায় তিন প্রজন্মের দোকান, শিব ঠাকুরের ছবি সাজানো ভেতরে আর বিভিন্ন রঙের সিরাপের আধুনিকতা | কিন্তু, সেই গভীর সবুজ রঙের ঘাসের মন্ডর মত দেখতে জিনিসটা , আদিম প্রাচীন | ১০ টাকার ই ঘুঁটতে বলি না হয়| আমরা কিন্তু সিরাপ দিয়ে ওটা খাব না , তবে আপনি একটু দুধের সাথে খান মজা পাবেন | আমি, একটা পোস্টাই ভাঙ্গের গুল্লি একটু জল দিয়েই সাঁটিয়ে দেব | খেতে খেতে আড়চোখে পাশের ভদ্র লোক কে দেখুন | ওই কাটিং এর শার্ট প্যান্ট , চুলের ছাট অদৃশ্য় হয়ে গেছে প্রায় ৩/৪ দশক আগেই | কিন্তু , এই জায়গাটার মতই , তিনি এখনো একই জায়গায় দাঁড়িয়ে দৈনন্দিন ভাঙ্গের কোটা পূর্ণ করে আসছেন এতদিন ধরে | দেখুন ওই গলি টা মন দিয়ে, যে লোহার ডগা টা বেরিয়ে আছে, ওটা হলো একদা গ্যাস লাইটের কঙ্কাল | বিষন্নতা মুড়ে ত্রিফলার নীচে ম্লান হয়ে ঝুলে আছে , ভবিতব্যের মত |
    ইমোশনাল হয়ে পড়ছি না খুব | থাক তবে | গ্লাস টাও শেষ | অল্প অল্প গলা শুকাবে হয়ত , চিন্তা নেই | আমাদের আজকের ওড়াউড়ি প্রায় শেষের পথে | আসুন যাবার আগে , ওই মোড়ের দোকান টা থেকে ১৫ টাকার রসমালাই খাওয়া যাক | এবার নেশাটা একটু ধরতাই পাবে | অনেক টা রাস্তা তো যেতে হবে আপনাকে, সঙ্গ দেবে | খিদে পাবে একটু বেশি , দেখবেন কি অনায়াসে গোটা কুড়ি গরম রসগোল্লা সাঁটিয়েও পেটের খোঁদল খালি |
    চারিদিকে ভীড় কমে এসেছে , বেশীরভাগ মানুষ সংসারের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে এখন | আপনার মনে হচ্ছে কতক্ষণ আপনি উড়ে বেড়িয়েছেন , কিন্তু ঘড়ি দেখলেই বুঝবেন মোটে ঘন্টা দেড়েক ছিলেন আপনি | আর কি দাদা, সামনেই অটো সাবধানে যান | কোনদিন এসময়ে ঘাটে চলে আসলে আবার দেখা হয়ে যাবে ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় ...তদ্দিন জয় বাবা
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০১ আগস্ট ২০১৬ | ১৯৮৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • prativa sarker | ***:*** | ০১ আগস্ট ২০১৬ ০৪:৩৩55731
  • পড়তে পড়তে যেন নাকে ধোঁয়ার গন্ধ পাচ্ছি। এত গ্রাফিক বর্ণনা। একদম অচেনা যে শহরটা আছে এই ত্রিফলা সজ্জিত শহরের ভেতরে, তার আভাস উঠে এসেছে অত্যন্ত জোরালো ভাবে !
  • dd | ***:*** | ০১ আগস্ট ২০১৬ ০৪:৩৪55732
  • বেশ বেশ।

    আমাদের আর্লি যইবনে ছিলিমে দু এক কুচি আদাও দিতাম। ওতে নাকি কাশির দমকটা হয় না। শুনেছিলাম দু এক ফোঁটা গোলাব জলও কেউ কেউ দিতো।

    আরেকটা কথা। লেখার মাঝে মাঝে প্যারাগুলোর মধ্যে এট্টু গ্যাপ দিলে চোখের একটু ইয়ে হয়।
  • Soumyadeep Bandyopadhyay | ***:*** | ০২ আগস্ট ২০১৬ ০৩:২৮55733
  • ধন্যবাদ । আর প্যারা টা মূল লেখায় ছিল, অনেক গুলো । পোস্টে দেখলাম কেমন ঘেঁটে গেছে । আউট ছিলাম বোধয় ☺
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন