এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • নান্টু ফার্স্ট হয় নি

    Soumyadeep Bandyopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৪ জুলাই ২০১৬ | ২২১৩ বার পঠিত
  • রাজেন কলকাতা ছেড়ে গেছে প্রায় বছর দশেক | উত্তর কলকাতার গঙ্গার ধারের বাড়ী ছেড়ে তার নতুন আস্তানা ব্যাঙ্গালোরের সরজাপুর | বউ বাচ্চা , দু কামরা , গাড়ী মাঝে মাঝে অফিস টুরে বা সস্তা দামে বিদেশ ভ্রমণ , ছুটি ছাটায় মা বাবাকে এখানে নিয়ে আসা ইত্যাদি নিরুপদ্রব অভ্যস্ত জীবন যাপন চলছিল বেশ | শনিবারের বিকেল , টুটুল কে নিয়ে তার মা গেছে ক্রাফট স্কুলে | গাড়ী টাও নিয়ে গেছে | ওখানে ওকে পৌছে দিয়ে সরাসরি চলে যাবে বন্ধুদের গেট টুগেদারে | সুরমিতাও চাকরী করতো , কিন্তু টুটুল হবার পর থেকে সে এখন ফুলটাইম মা |
    ব্যাঙ্গালোরে এসময়ের সন্ধ্যে বড় মায়াময় | অল্প ঠান্ডা হাওয়া , আর্দ্রতা হীন এই প্রাক শরতের শহর | এ সময় কোনো না কোনো অফিস কলিগের বাড়ীতে পার্টি চলেই | কিন্তু মনের ভিতর কেমন একটা একা থাকার ইচ্ছে ওকে আজ বেরোতে দিচ্ছিলো না | হাতে এখন অন্তত ঘন্টা তিনেক সময় , তাই সেলার থেকে আগের বার দুবাই থেকে আনা ডিউটি ফ্রি গ্লেনমোরান্জে থেকে একটা পেগ নিয়ে স্পোর্টস চ্যানেল সার্ফ করছিল সে | কিছুক্ষণ বাদেই স্প্যানিশ লীগের ম্যাচ শুরু হবে | হঠাৎ একটা চ্যানেলে চোখ আটকে গেলো | ন্যাশনাল গেমসে সাঁতার প্রতিযোগিতা দেখাচ্ছে | এখন ৪০০ মিটার ফ্রীস্টাইল মেন | একটা লম্বা শিষের সাথে আটজন ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াচ্ছে ব্লকে , টেক ইওর মার্ক আর তারপরে ঘন্টা বাজার সাথে সাথে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ল সবকটা উদগ্র শরীর | স্ক্রীনের ধারের স্টপওয়াচে স্প্লিট দেখাচ্ছে ন্যাশনাল রেকর্ড আর মিট রেকর্ডের | শেষ পর্যন্ত ফার্স্ট হলো কর্ণাটকের শাহীন , ভাষ্যকার ঘোষনা করলো ন্যাশনাল রেকর্ড ওরই ছিল | মিট রেকর্ড হলো, তবে ন্যাশনাল রেকর্ড ভাঙ্গে নি | বাংলা থেকে থার্ড হলো তনুময় মাঝি | যাক , তাও ভালো | কিন্তু কি অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে সাঁতারে ....অবাক হয়ে গেলো রাজেন |
    সাথে সাথে ওর মনটা চলে গেল বছর পনের আগের সেই ভিজে শরীর পৃথিবীতে , যখন সাঁতারই ছিল ধ্যান জ্ঞান | সেই লড়াই ছিলো অনেক সরাসরি , মুখোমুখি | আর আজ দৌড়ের সংজ্ঞা পাল্টে গেছে কতটা!
    তার সাথে এটাও মনে পড়ল , সামনের সপ্তাহে তার কলকাতা যাবার কথা আছে , সেলস মিটিং এ | নিয়ম মত কিছু ধমক ধমক দিতে হবে, গাজর ঝোলাতে হবে চোখের সামনে আর সব থেকে ভয় দেখাতে হবে সুকুমার কে | ওর বেচু দলে নতুন আমদানী মাস আটেক আগে , এর মধ্যে শেষ দু কোয়ারটারে একবারেও বিক্রীর কোটা পূর্ণ করতে পারেনি | মোটামুটি ভদ্র ভাবে বোঝাতে হবে (মানে যতটা অবধি বললে এইচ আরের কাছে নালিশ না যায়) যে পরের দুমাসে ঘাটতি মেটাতে না পারলে এবার আসতে হবে | সব তথ্য এক্সিকিউটিভ ডায়েরি তে পরিষ্কার পর পর লিখে রেখেছে রাজেন, এসব ব্যাপারে কোনো রিস্ক নিতে সে রাজী নয় |
    স্মৃতির কামড় খেয়ে সেদিনই রাতে হোয়াটস আপে ধরল কযেকজন সাঁতারের বন্ধুকে , বলল কলকাতা আসছি সামনের সপ্তাহে, দেখা হতে পারে | আশ্চর্য সমাপতন , ওরা বলল সামনের সপ্তাহ শেষের দিকে কলকাতায় সিনিয়র রাজ্য সাঁতার আছে | ভালই হলো , এক ঢিলে দু পাখি মারা যাবে | একটু টুর টা বাড়িয়ে নেবে রাজেন , বউ মেয়েকে দুদিন এখানে রেখে পাঠিয়ে দেবে কোন্নগরে মামার বাড়ীতে | ওখানে টুটুলের ন্যাওটা আরেকটা পুঁচকে আছে | এদিকে ভালো একটা সাঁতার প্রতিযোগিতাও দেখা হয়ে যাবে | কলকাতায় এলে বরাবরই নিজের বাড়ীতেই ওঠে রাজেন | এ কদিন মায়ের হাতের রান্না আর বাবার সাথে চায়ের টেবিলে তুফান না তুললে ঠিক জমে না তার কলকাতা ভ্রমণ |
    সেই মত প্ল্যান করে পরের বৃহস্পতি বার তাড়াতাড়ি ক্লায়েন্ট মিট সেরে সুভাষ সরোবরের দিকে রওনা দিল রাজেন | সেই চেনা চেনা ক্লোরিনের গন্ধ , নামকরা ছেলে মেয়েদের ঘিরে উত্সুক জটলা | তার সাথে উপরি প্রচুর পুরনো বন্ধুদের সাথে দেখা হলো , বেশিরভাগই নয় রেল, নয় পুলিস বা আর্মি তে | আড্ডা জমে উঠলো পাওয়া না পাওয়া , সাঁতারের সেকাল একাল, নিজেদের ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যত এসব নিয়ে এমন সময় পিঠে একটা দুর্বল থাপ্পড় পড়ল , চিনতে পারছিস ভাই ? সেই প্রায় সন্ধের অন্ধকার আলোতে রাজেন ওকে চিনতে পারল , নান্টু | হুড়হুড় করে একরাশ বেনো স্মৃতি ভেসে এলো | ওর মত অদ্ভূত ছেলের কথা মনে রাখতে কারই বা আর ভুল হতে পারে ?
    শেষ ওর সাথে দেখা হয়েছিল এরকম ই একটা রাজ্য সাঁতার প্রতিযোগিতায় | ...রাজেন প্রথম হয়েছিল, ও হয়েছিল পঞ্চম বা ষষ্ঠ | সেটা আশ্চর্য্ নয়, বাংলায় প্রথম তিনজনের মধ্যে ওকে কোনোদিনই দেখা যায়নি | এমনিতে , কোনো প্রথম বা দ্বিতীয় সাঁতারুর পঞ্চম বা ষষ্ঠ কে মনে রাখার কোনো কারণ নেই কিন্তু ওই যে , ও ছিলই অদ্ভূত | প্রতিভার অভাব ও পোষাতে চেষ্টা করত উত্সাহ আর হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে | একবার এরম ই কোনো একটা সাঁতারের প্রতিযোগিতায় ও নিজে না কাটলেও,প্রায় ৬০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে এসেছিল শুধু দেখতে | এসব বাকিদের কাছে অভাবনীয় ছিলো | কিন্তু ও একটা জিনিস বোঝে নি বা বুঝতে চায়নি , সবার জন্য সবকিছু নয় | সাঁতার ওর জন্য ছিলো না |

    শেষ যে বার রাজেন প্রথম হয় সেটা ২০০১, তার পর সাঁতার ছেড়ে দিযে ওর সাথে আর যোগাযোগ ছিল না| কিন্তু আজ হঠাৎ ওকেই এত আপন কেন মনে হলো সে জানে না | সেটা কী ওর আপাত চিমসে যাওয়া জীবন যাকে দেখে নিজের তুলনামূলক সাফল্যের খতিয়ান সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া যায়, নাকি নেহাতই প্রাক্তন কোনো খেলোয়াড় দের প্রতি আত্মীয়তা ? কে বলতে পারে |
    আলো নিভছে পুলে , আস্তে আস্তে সবাই চলে যাচ্ছে অন্ধকার সুইমিংপুল ছেড়ে, রাজেন ওকে বলল চ আমার সাথে একটু আড্ডা মারি একসাথে | খেয়ে দেয়ে একবারে বাড়ি ফিরবি |
    এই ভাবেই ওকে নিয়ে রাজেন এলো মধ্য কলকাতার একটা পুরনো কিন্তু নামকরা পানশালায় | ও কিছুতেই মদ খেতে রাজী হলো না , এমনকি বিয়ার ও নয় | খেতেও চাইল না বিশেষ কিছু | পেটে নাকি আলসার হয়েছে | একটু খাবার নাড়াচাড়া করে , খানিক টা দ্বিধা দ্বন্দ , খানিকটা অবজ্ঞার সাথে রাজেন ওকে জিগ্গেস করল, তারপরে কি করছিস এখন ? একটু ইতস্তত করে উদাসী ভাবে নান্টু কথা বলা শুরু করল | নিজে না খেলেও , চারিদিকের সমবেত নেশা উত্সবের একটা ফল আছেই | একটু বাদেই ও যেন অন্য কোনো জগতে চলে গেল | সেখানে কেউ নেই , শুধু নান্টু একা , যেন মন্ত্রোচ্চারণ করে যাচ্ছে | একমাত্র শ্রোতা রাজেন |
    রাজেনরা সবাই যখন একের পর এক অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে , বাকিদের বেশিরভাগই চাকরী পেয়ে গেছে সাঁতার কেটে ও তখনও অন্য লড়াই তে ব্যস্ত ছিল | ও নিজের ক্লাবে কোচিং শুরু করলো | এতেও আশ্চর্যের কিছু ছিল না , কত জনেই করে | কিন্তু ওর লক্ষ্য ছিল আলাদা | প্রতিবার এরম স্টেট মিটে যারা প্রথম তিনে আসতে পারত না, তাদের কে তৈরী করার পাগলামো পেয়ে বসেছিলো ওকে | প্রায় হাত পা জোরাজুরি করে , এসব ছেলেদের কোচিং এর দায়িত্ব নিত ও | কারো বাবা মা আবার ভাগিয়ে দিতো , কিন্তু ও কোনদিন নিরাশ হয়নি | এদের সবাই যে খুব ইচ্ছুক হত তা নয় , একবার একজন তো প্রায় হাতাহাতি করে চলে এসেছিল ওর কোচিং থেকে | কিন্তু টিঁকে যাওয়া বাকিদের নিয়ে চলত তার এই অসাধ্য সাধনা | রোজ সকালে ৬ থেকে ৮ টা আর বিকেলে ৫ থেকে ৭ টা ঘড়ি ধরে দুটো লেনে প্র্যাকটিস হত সোম থেকে শনি |
    যেহেতু ও কোনদিন প্রথম তিনজনের মধ্যে ঢোকেনি, তাই ও খুব ভালো করে ওদের মনস্তত্ব বুঝতে পারত | ওদের সাথে থাকত , সুখ দুঃখের কথা ভাগ করে নিত | কেউ কেউ খেতে না পেলে , নিজের দোকানে এনে খাওয়াত আর সাঁতার কাটাত | তদ্দিনে বাবা মারা গেছে, মা আর ওর সংসার | দোকান টা একটু বড় হয়েছে | সারাদিন যাতে ক্লাবে পড়ে থাকতে পারে , বিয়েও করে উঠতে পারেনি | কিন্তু কি অদ্ভূত ওর এই কোচিং মডেল | বেশিরভাগ ছাত্র যারা পরের বছর ই প্রথম টিমে চান্স পেয়ে যায়, ও আর তাদের কোচিং করানোর সুযোগ পাবে না | তাদের জন্য আসবেন প্রধান কোচ বাপিদা , তাঁর পেডিগ্রীই আলাদা , প্রাক্তন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন | আবার নতুন তথাকথিত ব্যর্থ ছাত্র রা আসে পরের বছর | তাদের পিছনে আবার ওর লড়া শুরু | দিন থেকে দিন সহকারী কোচের দিন যাপন |
    কোনো স্বীকৃতি নেই, কোনো কাগজে ওর নাম কোনদিন ই বেরোবে না অথচ প্রতিদিন সেই এক গত বাঁধা সকাল ৬ টা থেকে রাত ১০ টার জীবন সংগ্রাম শুধুমাত্র দ্বিতীয় শ্রেনীর সাঁতারুদের প্রথম শ্রেণী তে নিয়ে আসার জন্য | এরম ভাবে সব কিছু চলে যাচ্ছিল , কিন্ত কথায় আছে কপালের নাম গোপাল | একদিন , ট্রেনে কলকাতা আসছিল কোনো কাজে , রানিং ট্রেনে নামতে গিয়ে পচা আমে পা পিছলে পড়ে যায় | স্টেশনের কাছে ঢুকছিল বলে ভাগ্যিস, স্পিড কম ছিল- একটা পা চিরতরে জখম হয়ে ফাঁড়া টা কেটে যায় | রাজেন এবার বুঝলো, ওর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলার কারণ |

    কথা শেষ করে কিছুক্ষন যেন ঘোরের মধ্যে চুপচাপ বসে রইল ও | রাজেন একটা কোল্ড ড্রিংক দিতে বলল | এতক্ষণে যেন আরেকবার ভালো করে নান্টু কে দেখল রাজেন | কাঁধের কাছে জামাটা অল্প অল্প পিঁজে গেছে , হনু বেরিয়ে এসেছে দুটো ডিগডিগে সমান্তরাল রগের ওপর | হালকা না কাটা দাড়িতে বয়সের ছোপ | শুধু যখন কোনো ছাত্রর কথা বলছে অল্প ঘোলাটে চোখের মাঝে মাঝে ঝিকিয়ে উঠছে লোহা শান দেবার সময় ঠিকরিয়ে ওঠা আগুন কুচি | রাজেন জানতে পারলো, এবারে যে ন্যাশনাল গেমসে থার্ড হয়েছে , সে এককালে ওর কাছে সাঁতার কেটেছিলো দু সিজন | রাজেন একা একাই তিন পেগ টেনে নিয়েছিল এরমধ্যে | একা খেলে ওর অল্পেও নেশা চড়ে | নান্টুর মুখের দিকে তাকিয়ে কেমন একটা লাগছিল রাজেনের | ও তো বেশ দিব্ব্যি আছে , মনে হচ্ছে | ভাবতে গিয়ে একটা ঈর্ষার ছোট্ট মোচড় লাগলো কি কন্ঠায় |
    নান্টুর কোল্ড ড্রিংক শেষ হয়ে গেছে| এবার রাজেনের দিকে আরেকবার ভালো করে দেখলো তারপর আর একবার হাত টা চেপে ধরে বলল , আসি রে ভাই শেষ ট্রেন টা ধরতে হবে | বেশী দেরী হলে বুড়ী টা চিন্তা করবে | তারপর একটা চাপা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, অনেকদিন বাদে তোকে দেখে খুব ভাল লাগছে, ভালো চাকরি করছিস, ভালো আছিস আমার মত এই ভুতের বেগার খাটতে হচ্ছেনা | যাবার আগে কি রাজেনকে ব্যঙ্গ করেই কথা টা বলল নান্টু? কে জানে | স্টেশন অবধি এগিয়ে দেওয়া নিশ্চয় উচিত ছিল , কিন্তু রাজেনের কেন কে জানে নড়াচড়া করতেই ইচ্ছা করলো না | মাথা দুপ দুপ করছে , শরীর ছেড়ে দিচ্ছে যেন|
    বাড়ী ফিরে অনেকক্ষন বই নাড়াচাড়া করলো রাজেন | ঘুম আসছেনা | নান্টুকে নিয়েই ভাবছিল সে অনর্গল | অনেকক্ষণ বাদে, সে তার এক্সিকিউটিভ ডায়রী টাতে লিখলো রাজেন – আমি কালকে সবার আগে একবার আলাদা করে বসব সুকুমারের সাথে | বলব ওর সাথে আছি | ওকে সময় দেব বাকিদের থেকে বেশী , ওকে ঠিকঠাক গাইড করতেই হবে | সাঁতারের প্রথমজন, ষষ্ঠর কাছে এত সহজে হারবে না কিছুতেই |
    এর পর রাজেনের সাথে ওর আর দেখা হয়নি | তবে একটা ফোন এসেছিল, প্রায় মাস পাঁচেক পরে | একটা ছুটির দিন সকালে | বউ মেয়ে যথা রীতি বাইরে গেছিল , আর সুযোগের সদ্ব্যবহার করে রাজেন সিগারেট টানছিলো একের পর এক | ঘরটা ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় সাদা হয়ে গেছে | শিশিরের ফোন টা আসে তখনি | নান্টু মারা গেছে দু দিন আগে | অনেকটা শ্লেষ্মা , কান্না জড়িয়ে যা বলল তার নির্যাস হলো , ওদের দোকানটা যে বাজারে সেখানে রাতে আগুন লাগে | কেউ বলছে শর্ট সার্কিট , কেউ বা বলছে বাজার উঠিয়ে ওখানে কোনো একটা মাল্টিপ্লেক্স ওঠানোর প্ল্যান করেছে কিছু প্রোমোটার , ওদেরই কীর্তি ওটা | পুজোর আগে অর্ডারের চাপ ছিল , তাই দোকানেই ছিল ও | আগুন দেখে সবাই প্রায় বেরিয়ে এসেছিল | শুধু একটা চালচুলোহীন ভিখিরির বাচ্চা ছাড়া | ওটা শুয়েছিল, কোনো একটা অন্য দোকানের পেছনে | অনেকটা ঘুরে এসে , আবার বেড়া ভেঙ্গে ওকে বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করে নান্টু | চিরকাল পিছিয়ে পড়াদের চান্স দিতে দিতে নিজে ধোঁয়ায় ধোঁয়ায় পথ হারিয়ে আর বেরোতে পারেনি | ৬০% থার্ড ডিগ্রী বার্ন নিয়ে সে রাতেই কোনো অন্য জগতে সাঁতার কাটতে চলে গেছে নান্টু |বাচ্চা টা বেঁচে গেছে যদিও |

    স্বাভাবিক ভাবেই এসব ঘটনার মাঝে রাজেনকে আর ফোন করে উঠতে পারেনি কোনো বন্ধুরা |

    এর পর আরেকটু সিনেম্যাটিক হতেই পারত | ঘর টা অল্প বিস্তর দুলে উঠতো , ঝাপসা হয়ে ঘরের দেয়াল আকাশে মিশে যেতো , হয়ত এক অব্যর্থ ম্যাচ কাটে রাজেনের হাতের মোবাইল ফোন পড়ে যেতে যেতে মিশে যেতো ঘট থেকে ঝরে পড়া নান্টুর সাদা কালো নাভি ভস্ম কণায় | কিন্তু শিশির ফোনের ওধার থেকে বুঝতে পারেনি যে একটা আপাত অপ্রাসঙ্গিক কথা মনে পড়ে রাজেনের ভুরুটা কুঁচকে গেছিলো | রাজেন একবার বেঙ্গল প্র্যাকটিসে লুকিয়ে দড়ি টেনে এগিয়ে যেতে গিয়ে ব্যাপক ঝাড় খেয়েছিলো কোচের কাছে | আজ মনে হচ্ছিল নান্টু অন্যায় ভাবে দড়ি টেনে এতটা এগিয়ে গেছে যে রাজেন ওকে আর কিছুতেই ধরতে পারবে না | ওই হাসিটার জবাব বকেয়াই রয়ে যাবে এ জীবতকালে |
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৪ জুলাই ২০১৬ | ২২১৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • aranya | ***:*** | ২৭ জুলাই ২০১৬ ১০:৫১58453
  • 'প্রতিবার এরম স্টেট মিটে যারা প্রথম তিনে আসতে পারত না, তাদের কে তৈরী করার পাগলামো পেয়ে বসেছিলো ওকে '

    - ইন্টারেস্টিং। ভাল লাগল
  • Soumyadeep Bandyopadhyay | ***:*** | ২৮ জুলাই ২০১৬ ০২:৪৪58457
  • নিজের জীবনের প্রায় ১৫ বছর সাঁতার কেটেই গেছে় তাই এরম লোক জন অনেক দেখেছি ় তাদের প্রতি একটা অক্ষম ট্রিবিউট ়
  • π | ***:*** | ২৮ জুলাই ২০১৬ ০৩:৩৭58454
  • হ্যাঁ, এরকম কিছু পাগল বোধহয় সত্যিই আছেন।
    ভাল লাগল।
  • Du | ***:*** | ২৮ জুলাই ২০১৬ ০৩:৪৫58455
  • খুব ভালো লাগলো
  • AP | ***:*** | ২৮ জুলাই ২০১৬ ০৬:৫৬58456
  • খুব ভালো লাগলো।
  • ranjan roy | ***:*** | ২৯ জুলাই ২০১৬ ১২:৪৮58458
  • সৌম্যদীপকে অনেক ধন্যবাদ, এই রকম লেখার জন্যে।
  • Soumyadeep Bandyopadhyay | ***:*** | ৩১ জুলাই ২০১৬ ০৩:২২58459
  • ধন্যবাদ রঞ্জন বাবু :)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন