এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • অধিকারের দাবীতে সংঘবদ্ধ শ্রমিকের আওয়াজ উঠল দিল্লীতে

    বকলমে লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৩ মার্চ ২০১৯ | ৯০০ বার পঠিত
  • বিশ্বজিৎ

    পুলওয়ামার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিজেপি আর অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো যখন শহীদ সেনাদের নিয়ে রাজনীতি করতে ব্যাস্ত, মেকি দেশপ্রেমীদের উগ্র জাতীয়তাবাদ উসকে দিয়ে বিজেপি যখন যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় মগ্ন; তখন ৩রা মার্চ দিল্লীর রাজপথে বিভিন্ন রাজ্য থেকে আগত হাজার হাজার শ্রমিকরা, নিজেদের অধিকারের দাবী তুললেন লাল পতাকা হাতে৷ রামলীলা ময়দান থেকে সংসদ মার্গ, পায়ে পা মেলালেন দেশের বঞ্চিত, শোষিত শ্রেণীর মানুষ; পায়ের ঘষায়, স্লোগানে স্লোগানে, লাল পতাকার ঢেউয়ে রাজধানী মুখরিত হলো তাঁদের অধিকারের শব্দে৷
    শহর অঞ্চলের বস্তিবাসী শ্রমজীবি মানুষ, ভাড়া বাড়িতে থাকা মেহনতি মানুষ- যাদের কেউ জোগাড়ে কাজ করে, কেউ রঙ-মিস্ত্রি বা রাজমিস্ত্রী, কেউবা ভ্যান চালক, রিক্সা চালক, বাসের হেল্পার, ড্রাইভার, পুরসভার সাফাই কর্মী, নির্মান শ্রমিক, ধনী লোকেদের বাড়ি শ্রম দেওয়া মহিলারা-এরা সকলেই রাজধানীর উঁচু উঁচু বাড়ি, প্রশাসনিক, সরকারি ভবনের সামনে দিয়ে মাথা উঁচু করে জানিয়ে গেলেন নিজেদের ন্যায্য বাসস্থানসহ বিদ্যুৎ, পানীয় জল এবং অন্যান্য নাগরিক অধিকারের দাবী৷
    অসংগঠিত শ্রমিক, কৃষিজীবী শ্রমিকদের সাথে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত কারখানার ট্রেড ইউনিয়নের শ্রমিকেরা একসাথে পথ হাঁটলেন মিছিলে, মজদুর একতা জিন্দাবাদ বলে৷ বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের সাথে হরিয়ানার মারুতি সুজুকি আর হোন্ডার মজদুর, গুড়গাঁওয়ের ইন্ডোরেন্স টেকনোলোজি কোম্পানীর মজদুর,বাজাজ মোটর্সের মজদুর, রাজস্থানের হ্যান্ডলুম মজদুর, ডাইকিনের মজদুর, উত্তরাখন্ডের বন্ধ হয়ে যাওয়া ডেল্টা ইলেকট্রনিক্স কোম্পানীর মজদুর এমন আরও অনেক কোম্পানীর মালিকদের শোষণের বিরুদ্ধে লড়াকু মজদুররা এদিন একসাথে স্লোগান দিলেন- 'মালিকরাজ খতম করো'৷
    কয়লাখনিতে কাজ করা শ্রমিক এবং চা বাগানের শ্রমিকেরাও স্লোগানে স্লোগানে, কান ফাটা চিৎকারে ঠিকা প্রথা রদ করার সাথে নুন্যতম মাসিক ২৫,০০০ টাকার ন্যায্য পারিশ্রমিকের দাবী তুললেন ৷ দাবী উঠলো সামাজিক সুরক্ষার এবং একই কাজের জন্য সমান ও সম্মানজনক মজুরীর৷
    জল-জমি-জঙ্গল নষ্ট করা উন্নয়ন, মানুষের বেঁচে থাকার রসদ ছিনিয়ে নেওয়া উন্নয়ন, যে উন্নয়ন দেশের মানুষকে কাজ দিতে পারে না- তার বিরুদ্ধেও আওয়াজ উঠলো মিছিলে৷
    বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থা আর্থিক সঙ্কট থেকে মুক্তি পেতে শ্রমিকশ্রেণী সহ অন্যান্য মেহনতি, খেটে খাওয়া মানুষের কাঁধে বিভিন্ন কৌশলে এর বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে ৷ কর কাঠামো বদলে, নতুন শ্রমিক আইন এনে মালিক শ্রেণী আর তাদের দালাল সরকার মিলে শ্রমজীবি মানুষের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে৷ রাশিয়ার বিপ্লবের পর সাম্রাজ্যবাদী ও পুঁজিপতি শাসকরা বাধ্য হয় শ্রমিকদের কিছু আইনি অধিকার দিতে৷ আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ও দেশের শ্রমিক আন্দোলনের চাপে ভারতেও বেশ কিছু আইন প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এখন শ্রমিকদের বিরোধিতায় সেই সব আইনগুলোকে সংশোধন করার চেষ্টা চলছে৷ যাতে শ্রমিকদের শোষণ করে পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে টিঁকিয়ে রাখা যায়৷ সেজন্যই বিশ শতকের শ্রমিক আন্দোলনের ফসলগুলোকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টায় দ্রুততার সাথে মোদী সরকার শ্রমিক বিরোধী সুপারিশ গুলো লাগু করার চেষ্টা করছে৷
    শ্রমিকরাই আজ নানাভাবে লড়াইয়ের পথে যেতে চাইছে৷ মারুতি কারখানার শ্রমিকদের আন্দোলন বা মুন্নারের চা-বাগান শ্রমিকদের লড়াই বা মুম্বাইয়ের সাফাই কর্মচারীদের লড়াইগুলোর দিকে তাকালে এই ব্যাপারটা স্পষ্ট বোঝা যায়৷ লক্ষ্য করার যে এই ধরণের অধিকাংশ লড়াই বড় বা প্রতিষ্ঠিত কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃত্বে নয়, বরং ছোটোখাটো স্বাধীন ইউনিয়নগুলোর নেতৃত্বে আজ বড় বড় লড়াইগুলো হতে দেখা যাচ্ছে৷ তবে এই ইউনিয়নগুলোর সীমাবদ্ধতা থাকছে; তারা নিজস্ব উদ্যোগে সরকারের পলিসির বিরুদ্ধে লড়াই গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছে না৷ অথচ এখন সেটাই প্রয়োজন৷ আর তার জন্য যে ব্যাপকতর ঐক্যের প্রয়োজন, সেটা গড়ে দিয়েছে মজদুর অধিকার সংঘর্ষ অভিযান৷
    যখন দেশ জুড়ে শ্রমিক আন্দোলন দুর্বল ও ছন্নছাড়া অবস্থায় রয়েছে ঠিক তখনই শ্রম আইনগলোকে সংশোধন করার চেষ্টা চলছে৷ তার সাথে চলছে ধর্মীয় মৌলবাদ, আঞ্চলিকতাবাদ, পুরুষতান্ত্রিকতা, ব্রাহ্মন্যবাদ ৷ জনগণকে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের মধ্যে আবদ্ধ করে রেখে চলছে সরকার বিরোধী শক্তিগুলোকে দুর্বল করার প্রয়াস৷ কিন্তু দিল্লীতে মাসার অভিযান, 'দুনিয়ার মজদুর এক হও' স্লোগান তুলে প্রমাণ করে দিয়েছে দেশের শ্রমিকরা দুর্বল নয়, তারা সংঘবদ্ধ হতে জানে৷ সরকার যতই বিভেদ আনার চেষ্টা করুক সরকার বিরোধী এই শ্রমিক শক্তিগুলি ততই শক্তিশালী হবে৷
    পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান, পাঞ্জাব,হরিয়ানা, বিহার, উত্তরাখন্ড,অন্ধ্রপ্রদেশ, আসাম, গুজরাট,দিল্লির বিভিন্ন অঞ্চলের হাজার হাজার শ্রমিকরা তাদের দাবী নিয়ে রাজধানীর বুক কাঁপিয়ে আওয়াজ তুললেও সরকারের সহযোগী ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলো বধির এবং অন্ধ৷ বাজার চলতি পত্র পত্রিকাগুলির কলমও এ ব্যাপারে ভোঁতা হয়ে গেছে৷ শ্রমিকের হয়ে কথা বলবার আগেও কেউ ছিল না, এখনো কেউ নেই, সবাই তো মালিক শ্রেণীর তাঁবেদারি করতে ব্যাস্ত৷ এ লড়াই খেটে খাওয়া মানুষের নিজেদের লড়াই৷ সমাজের সকল শোষিত শ্রেণীর মানুষ, নিজেদের একইরকম যন্ত্রণা,কষ্ট,লাঞ্ছনার চিত্রটা বুঝতে পেরে, বিভিন্ন জায়গায় থেকে অালাদা আলাদা কাজ করলেও তাদের শত্রু যে এক সেটা তারা চিনতে পেরেছেন৷ আর তাই তারা সেই মালিক শ্রেণীর বিরুদ্ধে, পুঁজিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে, শ্রমিক বিরোধী সরকারী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একজোট হয়েছেন ৷ সেই একতার মঞ্চ MASA (মজদুর অধিকার সংঘর্ষ অভিযান)-তে তারা মিলিত হয়েছে, সংঘবদ্ধ হয়েছে৷ ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যের শ্রমিক শক্তি একজায়গায় হয়ে আরও বেশী শক্তিশালী হয়েছে একে অপরের শোষণ যন্ত্রণার কাহিনি শুনে৷ আগামিদিনে মাসা আরও বেশী শক্তিশালী হবে; আজ যারা হাজারে হাজারে, কাল তারা লাখে লাখে জড়ো হবে৷ ভেঙে গুড়িয়ে দেবে মালিকরাজ, ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যাবস্থার ভিত৷ প্রতিষ্ঠিত হবে খেটে খাওয়া শ্রমজীবি মানুষের সমাজ ৷ সেই বিপ্লব আর দূর নেই, মাসার মঞ্চে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেই লড়াই জারি থাকবে৷ শোষণের দিন শেষ হবেই৷





    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৩ মার্চ ২০১৯ | ৯০০ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    ব্যাধিনী -
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কল্লোল | ***:*** | ১৪ মার্চ ২০১৯ ০৫:১১49526
  • সংগঠিত ও অসংগঠিত ক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যবহার প্রচন্ড বেড়ে যাওয়ায় শ্রম নির্ভরতা কমছে। ফলে শ্রমিকের অধিকার নিয়ে চোখ মটকে পড়ে থাকা সরকারের পক্ষে অসুবিধাজনক নয়।
    বরং একটা দাবী কি শ্রমিকেরা তুলতে পারে? কাজের ঘন্টা কমানোর দাবী।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন