এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • প্রেম নিয়ে দু’চারটি কথা

    Ranajay Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৬ মে ২০১৯ | ১৯১২ বার পঠিত
  • কয়েকদিন আগে বন্ধুদের মধ্যে প্রেম নিয়ে এক আলোচনায় জন্ম নেয় এ লেখার বীজ। সেই আলোচনায় একটি কথা আমাকে ভাবায়, প্রেম্ মানে সমর্পণ। মনে পড়ে যায় বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের এক প্রেমপত্রের কথা – “...আমি বেশ কিছু ভালো জিনিস নিয়ে আসার চেষ্টা করব, যা কিছু সম্ভব আমার পক্ষে আর তারপর তুমি ডাকলেই আমি ছুটে যাব পরের ট্রেন ধরেই, যে অবস্থায় থাকব সেই অবস্থাতেই। কিন্তু এটাকে আমার দুর্বল নম্রতা ভেবো না, আমি নম্র খুব একটা নই। এ আমার গর্বিত সমর্পণ। এভাবে আমি সবার সঙ্গে মিশি না।“

    “গর্বিত সমর্পণ”...কি বোঝাতে চেয়েছিলেন এডনা ভিনসেন্ট মিলেই? এই নিয়ে ভাবতে ভাবতেই লেখা এই প্রেম নিয়ে দু’চার কথা।

    প্রেমের মত আর কি আছে যা এত আশা, স্বপ্ন নিয়ে শুরু হয়? অথচ দিবারাত্র আমাদের চোখের সামনে প্রেম ভেঙ্গে যেতে থাকে আর তবুও আমরা আশা করে থাকি, আমাদের প্রেম আলাদা, ঐ দূরত্ব আমাদের নয়, ঐ নিঃসঙ্গতা আমাদের নয়, ঐ তিক্ততা আমাদের নয়...আমাদের চিরকালীন ভালবাসা নিয়ে একসাথে থেকে যাব সারাজীবন...

    ঠিক কত বড় এই “সারাজীবন”? যদি আশি বছর বয়েসে জীবন শেষ ধরি, তাহলে বর্তমান বয়েস আশি থেকে বাদ দিলেই পাব ঠিক কত বছরের জন্য এই প্রেমের স্বপ্ন দেখছি। এখন বয়েস তিরিশ হলে পঞ্চাশ বছর, কুড়ি হলে ষাট আর চল্লিশ হলে আরও চল্লিশ বছর। ভাবার বিষয়।

    মনে রাখতে হবে, এই চল্লিশ বছর কবিতা গানের সিনেমার চল্লিশ বছর নয়, খুব সাধারণ ১৪৬০০ দিন। অন্তত ৭০০০ বার একসঙ্গে খেতে বসা। অন্তত ১৪০০০ দিন যার সারাদিনের গল্প শোনা। হানিমুন নয়, ৮০ বার তার সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে দ্বিতীয় দিনে কাজের বা সংসারের কথা না ভাবতে চাওয়া। অসংখ্য ভুলে যাওয়া দিনের হারিয়ে যাওয়া ডায়েরিগুলো দিয়ে তৈরি এই চল্লিশ-পঞ্চাশ-ষাট বছর...

    এই কমপক্ষে চল্লিশ বছর যে প্রেমের মধ্যে দিয়ে কাটানোর কথা আমরা ভাবি, তাকে প্রকৃতপক্ষে আমরা দেখি কি ভাবে?

    যে কোন সাফল্যের জন্য কিছু জানার, কিছু করার দরকার পড়ে...এমনকি সম্পর্কেও, যেমনটা আমরা জানি অফিসে বসের সঙ্গে, ব্যবসায়ে বড় খদ্দেরের সঙ্গে ব্যবহারে। শুধু প্রেমে আমরা উদাসিন...

    মজার কথা, কোন কাজই বেশ কিছুবারের অভ্যেস ছাড়া ভালভাবে করা মুশকিল আমরা জানি, কিন্তু প্রেমের ক্ষেত্রে কোনরকম প্রস্তুতি নেওয়াকে বাঁকা চোখে দ্যাখা হবে বললে মোলায়েম করেই বলা হল।

    সমাজ পছন্দ করে প্রেম কার সঙ্গে হবে, কিভাবে হবে তা ভাগ্যের, হঠাৎ জেগে ওঠা ইন্সটিঙ্কটের ওপর ছেড়ে দিয়ে আশায় বেঁচে থাকা।
    অথচ প্রেম ৯৮% ক্ষেত্রে একটি প্রতিক্রিয়া, যাদের আমার চারপাশে দেখি তাদের মধ্যে কোন একজনের প্রতি। মানে আমার পরিচিতি-বৃত্তে যারা আছে বা যাদের আনা সম্ভব, তাদের মধ্যে থেকেই আমি নির্বাচন করব আমার প্রেমিকা এবং এর পেছনে কোন সচেতন, বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত থাকবে না, থাকলে তা নিন্দাযোগ্য হবে।

    আমাদের সাংস্কৃতিক উপকথায় খাপ খায় না প্রেম শব্দের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা সত্য...

    তো যাইহোক, প্রেম হল। তারপর কি?

    মনের কন্দরে কোথাও, প্রেমে আমি নায়ক, সে নায়িকা। এই নায়কত্ব তখন সবচেয়ে বেশি টের পাওয়া যায় যখন আমি বিপন্ন, সহায়হীন নারীকে উদ্ধার করছি...যখন তার পাশে আর কেউ নেই আমি ছাড়া আর আমি তার মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলছি।

    আপাতদৃষ্টিতে নির্দোষ এই চিত্রকল্পের গভীরে যা লুকিয়ে থাকে, তাকে আলোয় টেনে বের করলে দেখা যায়, নারীর বিপন্ন থাকা প্রয়োজন, আমার নায়কত্ব অনুভবের চাহিদা মেটানর জন্য। আমার প্রেমিকার দুর্বলতার প্রেক্ষাপটেই তো আমার সাহস, বিশ্বস্ততা, পুরুষত্ব সবচেয়ে প্রকটভাবে ফুটে উঠতে পারে।

    তাহলে এক স্বাধীনচেতা, দৃঢ়মনা নারী? যার কোন প্রয়োজন নেই আমার সাহায্যের, বরং কখনো যে আমাকেই হাত বাড়িয়ে টেনে তুলে আনতে পারে বিপদ থেকে? তাকে আর যাই হোক, প্রেমিকা হিসেবে ভাবা মুশকিল। এড়িয়ে চলা বাঞ্ছনীয়, কারন তার অস্তিত্বই আমার পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা কাঠামোর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আছে।

    এর থেকেও বড় সমস্যা তৈরি হয় যখন কোন নারী পালটে যেতে থাকে সম্পর্কের মধ্যেই। পূর্বরাগ পর্বে যে কোমল, নির্ভরশীল, আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকা মেয়েটিকে আমি চিনতাম, সময়ের সঙ্গে সেও পরিবর্তিত হয়ে ওঠে এক বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বে। এর থেকে বেশি বিরক্তিকর আর কিছু হয় না। পরিষ্কারভাবেই, সে আর আমাকে তেমন ভালবাসে না। যদি বাসত, তাহলে সে তার দুর্বলতা, নির্ভরশীলতা ত্যাগ না করে যত্নে রেখে দিত, আমার “প্রয়োজনীয়তা” প্রগাঢ় ভাবে অনুভব করাতে দিত। আমি তোমাকে যতই ভালবাসি আর তুমি আমাকে যতটাই ভালবাস না কেন, তুমি আমার বীররসসম্পৃক্ত পৌরুষকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পার না তোমার অসহায়তার ক্যানভাস আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে...

    দুর্বল তুমি, অসহায় তুমি, নির্ভরশীল তুমি হয়তো খুব সম্মানের যোগ্য হবে না, কিন্তু ভালবাসা, আকণ্ঠ ভালবাসা পাবে তুমি আমার থেকে...

    ইসরায়েলি দার্শনিক ইভা ইলাউজের কথায় – “এতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই যে ইতিহাসকাল ধরে প্রেম নারীকে এত তীব্রভাবে আকর্ষণ করে এসেছে, কারন প্রেম প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সেই নৈতিকতা আর সম্মান দেওয়ার, যা সমাজ তাদের কখনো দেয়নি। ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রেমের সবথেকে বড় সাফল্য প্রগাঢ় লিঙ্গবৈষম্য শুধু লুকিয়ে রাখায় নয়, তাকে গৌরবান্বিত করাতেও।“

    সেই গৌরবের গান গাই আমরা ঘরে ও বাইরে, গঙ্গার ঘাট থেকে ক্যাফের টেবিলে। আমাদের লিবেরাল স্ট্যান্ড যদি বহিরদুনিয়ার জন্য রাখা থাকে, ঘরে রাখা থাকে আমার গোপন কাঠামো, যা ঠিক করে রেখেছে প্রেম ঠিক কিরকম হবে আর আমার প্রেমিকার ঠিক কিভাবে চলা উচিত।

    কেউ যদি প্রশ্ন তোলে, আগে থেকেই বানানো এক সুকঠিন খাঁচার মধ্যে কি এক জীবন্ত সম্পর্ককে খাপ খাওয়ানো সম্ভব? সামনের জীবন্ত মানুষটিকে কি এভাবে মেপে মেপে কোন মৃত হরিণের স্টাফড মাথার মত জীবনের দেওয়ালে সাজিয়ে রাখা সম্ভব? তাহলে কি মানুষটির বদলে, প্রকৃত সম্পর্কের বদলে আদতে নিজেরি ধারণাকে দেখছি না আমি? প্রেমিকের বদলে আমি কি আদতে এক সমালোচকের চোখ দিয়ে আমার প্রেমিকার দিকে তাকাচ্ছি না?

    অর্থহীন প্রশ্ন। তারাই করতে পারে যারা প্রকৃত প্রেম কোনোদিন জানেনি। যারা ব্যর্থ সম্পর্কের ওজন কাঁধে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত তিক্ততা থেকে এইরকম কথা তোলে।

    হয়তো তাই সত্যি।

    কিন্তু আমি জানি মুখোশের কথা। যে মুখোশ প্রতিটি মানুষ পরে থাকে। যার কথা রিলকে বলেন –

    No one lives his life.
    Disguised since childhood,
    haphazardly assembled
    from voices and fears and little pleasures,
    We come of age as masks.
    Our true face never speaks.

    বিজ্ঞানের ভাষায় বলা যায়, মনস্তাত্ত্বিক ব্যূহ। দেহের আবরণ সরানো অনেক সহজ, শরীরী ক্ষত দ্রুত সেরে যায় আর বেশির ভাগ সময়েই, চিহ্ন রয়ে যায় শুধু অগভীর ক্ষতের। কিন্তু মূলত যে মন, সমস্ত চেতনা নিয়ে আমার যে আত্মা, তাকে কেন অনাবৃত করব সবার কাছে?
    কিন্তু প্রেম? উচ্চতম সম্পর্ক? সেখানেও কি অবিশ্বাসের ছায়া থেকে যাবে? এও সেই সাংস্কৃতিক রূপকথার খেলা, প্রেম শুরু তো বিশ্বাসও শুরু, প্রকৃতপক্ষে যা মেলে না। বিশ্বাস অর্জন করতে হয়, যার জন্য লাগে সময়।

    টিনএজ চেতনায় গড়ে ওঠা যে প্রেম নামক সম্পর্কের ধারণা, তা বাস্তব জীবনের সব অভিঘাত, অভিজ্ঞতা, চেতনার বয়সোচিত অভিযানকে অস্বীকার করে, দূরে ঠেলে রাখে। ভালবাসা আর বিশ্বাস যে প্রথমেই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত থাকে না, তা মেনে নেওয়া যায় না কিছুতেই।
    যে মুহূর্তে আমি দাবি করব আমার প্রেমিকার নগ্ন মুখ ও আত্মা, সেই মুহূর্তেই হয় আমি নিজের মুখোশ যথাযথ রেখে দেব নয়তো নিজের ক্ষেত্রে কোন মুখোশের অস্তিত্বই অস্বীকার করব।

    আমরা মাথায় রাখি না, বিশ্বাসের মধ্যে লুকিয়ে থাকে অনন্ত ঝুঁকি। আঘাত পাওয়ার ঝুঁকি, দিনের পর দিন আর মাসের পর মাস যন্ত্রনায় থাকার ঝুঁকি, কখনো না শুকোতে পারা ভীষণ গোপনে রাখা ক্ষতের ঝুঁকি যা অতি সাধারণ কোন কথাকেও আমার কাছে বিষিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

    আমি ও আমার প্রেমিকা দুই পৃথক মানুষ, যারা একসাথে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, একসঙ্গে। সেখানে দাঁড়িয়ে আমি ভুলে যাই, আমার প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি তার নিজেরো কিছু প্রয়োজন মেটানোর আছে আর এই দুই প্রয়োজন অনেক সময়েই পৃথক। মুশকিল হচ্ছে, ভালবাসা আর বিশ্বাসে প্রথম থেকেই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত থাকবে, এই দাবির নিচে লুকিয়ে থাকে আমার দ্বিতীয় দাবি- আমাদের দুজনের সব প্রয়োজন এক হওয়ার। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, প্রেমিকার সব প্রয়োজন হয় আমার প্রয়োজনের সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যাওয়ার বা অন্ততপক্ষে আমার সম্মতিসাপেক্ষ হওয়ার।

    আরে আমার সব প্রয়োজনের, সব চিন্তার, নিজের সম্বন্ধে সব সত্যের আমি নিজে মুখোমুখি হতে পারি না, তাহলে আরেকটি মানুষকে কি করে বলব সেসব কথা, সে প্রিয়তম হলেও। আমার জীবনের মেয়েটিও তো এই একই সমস্যায় ভোগে।

    বিবর্তনের একটি দিক বেঁচে থাকার জন্যই আমাদের শিখিয়েছে জন্ম থেকে ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ, কাকে বিশ্বাস করা যায়। এই পর্যবেক্ষণ শুধু অন্যকে নয়, নিজেকেও। এই মুহূর্তের আমি কি কাল বা পরশুর আমিকে বিশ্বাস করতে পারি যে আর সিগারেট খাব না, সুগারে ভোগা সত্ত্বেও কাল চকোলেট খাব না, পরশু পরীক্ষায় চিট করব না, ঐ সুন্দরীর স্তনের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে চাইব না সে আমার সঙ্গে কথা বলুক?
    কিন্তু ঐ বিশ্বাস আমি দাবি করব আমার প্রেমিকার কাছে। সে দিতে বাধ্য।

    আঘাত করা সোজা। আহত হওয়া আরও সোজা। বিশ্বাসের মূলে দাঁড়িয়ে থাকে এই স্বীকারোক্তি – আমি আহত হতে পারি যে অস্ত্রে, তাই তুলে দিচ্ছি তোমার হাতে। খেয়াল করি না যে সব অস্ত্র আমি নিজেও চিনি না, যা আমাকে আহত করতে পারে। কারন আমার সব ইচ্ছে আমি নিজেই জানি না।

    এক অন্তহীন যুদ্ধ চলে আমার নিজেরি মধ্যে। আমার স্বার্থপর ইচ্ছের সঙ্গে স্বার্থহীন ইচ্ছের, তাৎক্ষণিক সুখের ইচ্ছের সঙ্গে স্থায়ী সুখের ইচ্ছের, সচেতন মনের ইচ্ছের সঙ্গে অবচেতন মনের ইচ্ছের...আমার নিজেরি ভেতর যদি ক্রমাগত মহাভারতিয় মাপের যুদ্ধ চলতে থাকে, তাহলে নিতান্ত র্যািনডম ভাবে, বলা যেতে পারে বিস্ময়কর ভাগ্যের জোরে ছাড়া কিভাবে দুটি আলাদা মানুষের সব স্তরের সমস্ত প্রয়োজন মিলে যেতে পারে? কতটুকু সম্ভাবনা? জানলার দিকে তাকিয়ে বাইরে পক্ষীরাজ ঘোড়া দেখতে পাওয়ার থেকে বেশি?
    তবু দাবি করি।

    খলিল জিব্রান বলে গিয়েছেন সত্যি কথাটি –

    Give your hearts, but not into each other’s keeping.
    For only the hand of Life can contain your hearts.
    And stand together, yet not too near together:
    For the pillars of the temple stand apart,
    And the oak tree and the cypress grow not in each other’s shadow.

    প্রেম দুই আপাতবিরোধী স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে - সমর্পণ আর স্বায়ত্তশাসন। আমাদের একসঙ্গে থাকার প্রয়োজনের পাশেই থাকে সমান গুরুত্বপূর্ণ, একা থাকার প্রয়োজন। বড় বেশি একা থাকলে যেমন যোগাযোগ ক্ষীণ হয়ে যায়, দুর্বল হয়ে যায়, তেমনই বড় বেশি নৈকট্য কেড়ে নেয় সমস্ত রহস্য যা ছিল প্রথম আকর্ষণের মূলে, কেড়ে নেয় ভিন্ন কিন্তু প্রিয় স্বর (কারণ পড়ে আছে শুধু আমার নিজেরই স্বর), কেড়ে নেয় যোগাযোগ কারণ প্রয়োজনীয় দুটি পৃথক সত্ত্বা আর নেই...

    এই হল প্রেমের প্যারাডক্স, আত্মিক যোগাযোগের জন্যই প্রয়োজন কিছুটা দূরত্ব। এই নিজস্ব জায়গাটুকু দেয় একেবারে একান্ত স্বপ্ন, ছোট্ট ছোট্ট ইচ্ছের নিঃশ্বাস; ধীরে ধীরে জাগিয়ে তোলে ক্ষুধা, তার দিকে ছুটে যাওয়ার, তাকে ছোঁয়ার তীব্র কামনা, যেন কতদিন দেখা হয়নি। সেই ছুটে যাওয়াই তো মিলেই-এর বলা সেই “গর্বিত সমর্পণ”, যা তোমার চাওয়াকে সম্মানের জন্য নয়, তোমার প্রয়োজনের জন্য নয়, শুধু আমার জন্য, সবরকম ভাবে শুধু আমার জন্য ছুটে যাওয়া। এর থেকে বেশি আমি কিভাবে নিজেকে দিতে পারি?

    প্রেমকে স্বয়ংক্রিয় এক জড় প্রক্রিয়া না ধরে, কিছুটা সময় থিতু হয়ে বসে একটু কি ভাবা যায় যে প্রিয় মানুষটিকে, তার সমস্ত সত্ত্বা, মনুষ্যত্ব, স্বকীয় চিন্তাভাবনা যে সম্মান দাবি করে, ভালবাসার সঙ্গে সেটুকুও দেওয়া প্রয়োজন কি না?

    সম্মান। আমাদের সরব দৈনন্দিন প্রেম-জীবন নির্বাহ করার মধ্যে যার অভাব নিঃশব্দে লুকিয়ে থাকে।

    সম্মান। প্রেমের জন্য। ভালবেসে পারি না দিতে?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৬ মে ২০১৯ | ১৯১২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে প্রতিক্রিয়া দিন