কয়েকদিন আগে বন্ধুদের মধ্যে প্রেম নিয়ে এক আলোচনায় জন্ম নেয় এ লেখার বীজ। সেই আলোচনায় একটি কথা আমাকে ভাবায়, প্রেম্ মানে সমর্পণ। মনে পড়ে যায় বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের এক প্রেমপত্রের কথা – “...আমি বেশ কিছু ভালো জিনিস নিয়ে আসার চেষ্টা করব, যা কিছু সম্ভব আমার পক্ষে আর তারপর তুমি ডাকলেই আমি ছুটে যাব পরের ট্রেন ধরেই, যে অবস্থায় থাকব সেই অবস্থাতেই। কিন্তু এটাকে আমার দুর্বল নম্রতা ভেবো না, আমি নম্র খুব একটা নই। এ আমার গর্বিত সমর্পণ। এভাবে আমি সবার সঙ্গে মিশি না।“
“গর্বিত সমর্পণ”...কি বোঝাতে চেয়েছি ... ...
শৈশবের সব স্মৃতিই যেরকম হয়, বাস্তবের থেকে উজ্জ্বলতর, তেমনই সেই দুপুরগুলোও ছিল আরো ঝকঝকে, আরো নির্জন, যখন আমাদের বাড়ির ন্যাড়া ছাদে আমি পায়চারি করতে করতে পড়াশোনা করতাম। আকাশ থাকত মেঘলা, ছাদে অন্য কেউ উঠতে পারত না কোনো সিঁড়ি ছিল না বলে, আর পাশের বাড়ির বেলা করে রান্নায় ফোড়নের গন্ধে আর হালকা হাওয়ায় নিজের মতো বেশ থাকা যেত।
আমি উঠতাম একটা ছোট পাঁচিলে, সেখানে দাঁড়িয়ে পাশের অ্যাসবেস্টসের চালে প্রথমে বই, জলের বোতল ছুঁড়ে দেওয়া আর তারপর হাতে ভর দিয়ে নিজে ওঠা, তারপর সেখান থেকে আরেক লাফ ... ...
ফুটবল শিখতে চাওয়া সেই প্রথম নয় কিন্তু। পাড়ার মোড়ে ছিল সঞ্জুমামার দোকান, ম্যাগাজিন আর খবরের কাগজের। ক্লাস থ্রি কি ফোর থেকেই সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়তাম হি-ম্যান আর চাচা চৌধুরীর কমিকস আর পুজোর সময় শীর্ষেন্দু-মতি নন্দীর শারদীয় উপন্যাস। সেখানেই একদিন দেখলাম ফুটবলের ওপর বই, অমল দত্তের “ফুটবলের অ-আ-ক-খ”, খুব ভুল না হলে নামটা তাই ছিল। কিনে ফেলা হল। ছোট্ট বই, একদিনেই শেষ করা গেল। ঐ বয়েসে মাঠে যাওয়ার অনুমতি বিকেলে এক ঘণ্টার বেশি ছিল না। তাই যা পড়লাম, তা প্র্যাকটিস করার জায়গা ছিল আমাদের ছোট্ট ঘরটাই।
বছর তিন বাদে সুকিয়া স্ট্রিটের পাড়ায়, বাড়ির ঠিক সামনের মাঠে চুপচাপ বসে দেখতে হত বড়দের খেলা, নিজে খেলার উপায় ছিল কম। বিকল্প হিসেবে ফুটবলের জায়গা হিসেবে নেওয়া হল পাড়ার বন্ধু বাজুর বাড়ির সরু গলি, সাড়ে চার থেকে পাঁচ ফুট চওড়া, যেখানে আমি আর বাজুই শুধু দুটো দল, বল ছিল পয়সা থাকলে রাবার ডিউস ক্রিকেট বল আর না থাকলে সুতো বাঁধা প্লাস্টিকের ড্যালা।
একে অন্যকে ঐ সরু জায়গার মধ্যে টপকে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে শরীরের ভার পরিবর্তন, ভারসাম্য আর সব মিলিয়ে সামান্য জায়গায় ড্রিবলিং স্কিল তৈরির রান্নাঘর ছিল সেই ... ...
সময়টা ছিল শরৎকাল, ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ আর উজ্জ্বল রোদের দিন, কিন্তু ক্লাস এইটের প্যাংলাপানা মোটা চশমা পরা ছেলেটা তার ক্লাসরুমে দাঁড়িয়ে সেসব কিছুই টের পাচ্ছিল না। টিফিন টাইম শেষ হয়ে আসছিল আর দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সে ভাবছিল কোন পথে শেষ বেঞ্চে তার ব্যাগের দিকে গেলে, কোনো চাঁটি বা ঠ্যালা না খেয়ে পৌঁছনো যাবে। হেয়ার স্কুল থেকে এই হিন্দু স্কুলে আসার পর দু’বছর কেটে গেছে, অথচ তার ওপর চালিয়ে যাওয়া র্যাগিং থামেনি। সে ভাবতে পারে প্রচুর, কথা বলতে পারে কম আর মারতে পারে ঘোড়ার ডিম। প্রতিক্রিয়াহীন এই ক্রমাগত অত্যা ... ...