এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • প্রবাদ- প্রবচন

    Ramkrishna Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৪ নভেম্বর ২০১৩ | ৩১৮৯ বার পঠিত
  • “হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন”
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত
    ***
    প্রবাদ কাকে বলে, এ ব্যাপারে সবারই জানা আছে । ব্যাপারটা হলো, কেউ ঠিক এর সংজ্ঞা নির্দেশ করতে চাইবেন না ।
    প্রবাদ বলতে, সাধারণত আমরা যা বুঝি- সেটা এত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নানা রকম বিচিত্র ভাষায় প্রকাশ হয়, তাদের মধ্যে আপাত দৃষ্টিতে কোনো একটা সাধারণ লক্ষণ খুঁজে পাওয়া বড় মুশকিল ।
    অসংখ্য উৎসমুখ থেকে আসা, ক্ষীণ স্রোত ধারাতে প্রবাহিত হয়ে, যা কিছু একসঙ্গে মিশেছে- তাদের একের সঙ্গে অপরের কোনো মিল বা যোগাযোগ নেই ।
    এগুলোই প্রবাদ নামে চিহ্নিত হয়ে এসেছে । সহজে, পৃথক করা মুশকিল !!!
    তবুও আমাদের পূর্বসূরিরা এই বিষয় নিয়ে যে সব নির্দেশ বা দিক দিয়েছেন বা দেখিয়েছেন- সে সবের সাহায্যে, কিছু কিছু সাধারণ লক্ষণের সন্ধান আমরা পাই যার থেকে আমরা একটা সংজ্ঞায় আসতে পারি ।
    সাধারণ লোকের মুখে সচরাচর যে সব বুলি বা বচন শোনা যায়, তার অল্প অংশ স্বরচিত হলেও হতে পারে কিন্তু বেশীর ভাগই পরের কাছ থেকে শোনা বা উত্তরাধিকার সূত্রে শুনে এসেছে ।
    যে সব উক্তি বা বচনে চিরন্তন সত্য বা নির্ভুল তথ্য আছে আর যা আকারে সংক্ষিপ্ত , ভাষার মনোহারিত্বে মর্মস্পর্শী এবং জনগণের মধ্যে বহুল প্রচার পেয়েছে, তাকেই খাঁটি প্রবাদ বলে স্বীকার করা হয়েছে ।
    এই সব লক্ষণের মধ্যে কোনো একটার অভাব থাকলে, তাকে প্রবাদ না বলা গেলেও – লোকোক্তি বা জনশ্রুতি বলে নেওয়া হয়ে থাকে ।
    আগামীতে আমার চেষ্টা থাকবে, এই প্রবাদ –প্রবচন নিয়ে লেখার ।
    ( চলবে )
    তথ্যঋণ :- সত্য রঞ্জন সেন রচিত, প্রবাদ রত্নাকর । প্রকাশক – ওরিয়েন্ট লংম্যান্স । সাল- ১৯৫৭ । দুর্লভ এই বইটি আমাকে সংগ্রহ করে দিয়েছেন বলে আমি শ্রী পরিচয় সেনগুপ্তের ( আগরপাড়া) কাছে ঋণী ।


    ***
    এটা দেখা গেছে- জ্ঞান আর সত্যের প্রচার এবং সেই সঙ্গে ভাষার লালিত্য দিয়ে জনগণের মনোরঞ্জনের যোগ্যতা – এই দুটো কিন্তু সার্থক কবিতার লক্ষণও বটে ।
    সব সাহিত্যের ইতিহাসে দেখা গেছে- আদিতে কবিতারই জন্ম হয়েছে । শব্দ নিয়ে গড়া বাক্য যখন রসাত্মক হয়, তখন সেটা কাব্য হয়ে দাঁড়ায় ।
    শব্দ বিন্যাসের সংযত সংক্ষিপ্ততাও কাব্যের অপরিহার্য্য লক্ষণ । এই সংক্ষিপ্ততার চরম পরিণতি দেখা যায় প্রবাদে ।
    যে প্রবাদ যতো অল্প শব্দে রচনা করা হয়েছে, তার সার্থকতা ততোই বেশী ।
    কাব্যের ধ্বনি বা ব্যঞ্জনাও প্রবাদের এক বিশেষ উপাদান । তাই, এক একটা প্রবাদকে কবিতার ঘনীভূত নির্যাস বা কাব্য কণিকা বলা যেতে পারে ।
    প্রবাদে সত্য প্রচারের চেষ্টা হয়েছে, নানা ভাবে । ধর্ম, নীতি, কৃষিকাজ, বাজারের দাঁড়িপাল্লা, সামাজিক , পারিবারিক কর্তব্য করার উপদেশ, স্বাস্থ্যরক্ষা- সব বিষয়েই ব্যবস্থা নেবার এবং তার সাথে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ।
    যেমন :-
    “কখনো খেয়ো না তালে আর ঘোলে
    কখনো ভুলো না ঢ্যামনার বোলে”
    -
    পথ চলবে জেনে
    কড়ি নেবে গুণে
    -

    রুয়ে কলা, কেটো না পাত
    তাতেই কাপড়, তাতেই ভাত
    -
    যার হাতে দাঁড়ি পাল্লা
    নাই তার খোদা তাল্লা
    -
    অনেক প্রবাদে সরাসরি উপদেশ না দিয়ে অন্যায় বা অবিচারের বিরুদ্ধে তীব্র মন্তব্য করে করণীয় করার দিকে মন দিতে বলা হয়েছে ।
    উদাহরণ :-
    যার ধন, তার ধন নয়
    নোপোয় মারে দই
    -
    বজ্র আঁটুনি- ফস্কা গেরো
    -
    আপনি পায় না, শঙ্করাকে ডাকে
    -
    যতো ছিল নাড়া বুনে
    সব হলো কীর্তুনে

    ( চলবে )
    তথ্যঋণ :- সত্য রঞ্জন সেন রচিত, প্রবাদ রত্নাকর । প্রকাশক – ওরিয়েন্ট লংম্যান্স । সাল- ১৯৫৭ ।

    তৃতীয় কিস্তি
    -
    আগেই বলেছি, স্বল্প পরিসরের মধ্যে- ভাবের প্রকাশ, প্রবাদের একটা প্রধান গুণ । দু চারটে শব্দের মধ্যে দিয়ে বক্তব্য এলে অনেক গ্রহণযোগ্য এবং হৃদয়গ্রাহী হয় – এটা অস্বীকার করা যায় না ।

    তাই ছোট ছোট প্রবাদ- প্রবচনের প্রচণ্ড আদর । এর প্রচুর উদাহরণ আছে । যেমন :-
    পরচিত্ত অন্ধকার

    মন না মতি

    নারীর বল, চোখের জল

    ধরি মাছ, না ছুঁই পানি
    কেবল ব্যতিক্রম দেখা যায়, মেয়েলী বচনে । ( এটা কোনো রেসিয়াল কমেন্ট নয় !! লক্ষ্য করে দেখা গেছে )
    নারীজাতির অলঙ্কার প্রিয়তার খ্যাতি, আর প্রগলভতার অখ্যাতি – এই দুটোই আছে । ( আবার মাফ চাইছি)

    তাই এদের তৈরী প্রবাদ- প্রবচন অনেক ক্ষেত্রেই বেশ অলঙ্কার মণ্ডিত হয়ে, শব্দবহুল হয়ে গেছে ।
    দেখা গেছে, অনেক জায়গায় বড় ছড়ার জন্ম দিয়েছে- এই সব মেয়েলী বচন ।
    একটা উদাহরণ :-
    যার হাতে খাই নি, সে বড় রাঁধুনী
    যার সঙ্গে ঘর করি নি, সে বড় ঘরণী

    নানা রকমের বিচিত্র প্রকাশ ভঙ্গীর জন্য প্রবাদ- প্রবচন সাধারণ জনগণের মন কাড়ে ।
    যাঁরা এই সব প্রবাদ- প্রবচন তৈরী করেছেন, নিঃসন্ধেহে বলা যায়, তাঁদের বক্তব্য সরস এবং হৃদয়গ্রাহী করার জন্য সবরকমের আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন ।

    ঠিক, এই কারণেই সরল জনসাধারণের সহজ রসবোধ বংশপরম্পরায় এই প্রবাদ প্রবচনকে সাদর স্বীকৃতি দিয়ে এসেছে এবং আসছে ।
    একটা শাস্ত্র আছে- অলঙ্কার শাস্ত্র । এই সব প্রবাদ- প্রবচনে শাস্ত্র নির্দিষ্ট সব রকমের প্রয়োগে কোনো ভুল নেই । এটা হয়তো জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাত সারে হয়েছে ।
    শব্দালঙ্কারের প্রধান কৌশল- অনুপ্রাসের সাহায্য নেওয়া হয়েছে সবচেয়ে বেশী পরিমাণে ।
    অন্ত্যানুপ্রাস বা মিল, যা সকল ভাষায়, সকল যুগে কাব্যের অপরিহার্য্য লক্ষণ বলে আমরা জানি, প্রবাদ- প্রবচনের সংকীর্ণ পরিসরেও তার উপস্থিতি, সেটা প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে হোক বারবার দেখছি ।
    কেবল মনোহারিত্বের জন্য নয়- মনে রাখার সুবিধের জন্য মিলের প্রয়োজন সেই প্রাচীন যুগ থেকেই চলে আসছে ।
    সব ব্যাপারেই এই কারণে মিত্রাক্ষর ছন্দের ব্যাপক ব্যবহার । জনগণের সুদীর্ঘ কাল মনে রাখাটা এই কারণেই হয়েছে । ছোট প্রবাদ- প্রবচনেও এই মিলের জন্য শ্রুতি সুখকর ।
    নুন খাই, গুণ গাই
    -
    ধন জন পরিবার
    কেউ নয় আপনার


    তথ্যঋণ :- সত্য রঞ্জন সেন রচিত, প্রবাদ রত্নাকর । প্রকাশক – ওরিয়েন্ট লংম্যান্স । সাল- ১৯৫৭ ।
    চতুর্থ কিস্তি
    -
    অন্তানুপ্রাসের পরই দেখতে পাই-আদ্যানুপ্রাসের আদর । সব দেশেরই কবিতায় এটা দেখা যায় ।
    =
    চাল নেই চুলো নেই
    পরের বাড়ী হবিষ্যি
    যেমন:-
    বামুন, বাদল, বান
    দক্ষিণা পেলেই যান
    -
    প্রবাদে আরও যেটা দেখা যায়- মধ্যানুপ্রাসের প্রাদুর্ভাব ।‘

    যেমন:-
    খুচরো কাজের মুজরো নেই
    -
    ঘোমটার ভেতর খেমটা নাচ
    -
    বাড়া ভাতে নেড়া গিন্নী
    -
    যদি হয় লুচি, মুচীর ঘরেও রুচি

    আবার অর্থালঙ্কারের মধ্যে, উপমা আর রূপকের ছড়াছড়ি – প্রবাদে ।

    অতিশয়োক্তি,সমাসোক্তি(যে অলংকারে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের ব্যবহার বা ধর্ম আরোপ করা হয়),ব্যাজস্তুতির ( নিন্দাচ্ছলে প্রশংসা) প্রয়োগও বেশ ভালো ভাবে দেখা যায় ।

    উদাহরণ :-
    চাঁদের হাট
    -
    ঘরের ঢেঁকি কুমীর
    -
    বাছার কি বা মুখের ছাঁই
    তবু হলুদ মাখেন নাই

    অত্যুক্তি বা অতিশয়োক্তির প্রয়োগে প্রবাদের চমৎকারিত্ব ফুটেছে ।
    যদি হয় সুজন, তেঁতুল পাতায় দুজন

    কুরগা মরা গরু, মাগ্গো লারতে উদয় চাঁদ ( কুঁড়ে মরা গরু, পেছন নাড়াতেই চাঁদ উঠে যায়, বরিশাল ) কুঁড়েদের প্রতি এই প্রবাদটা বলা হয়ে থাকে ।
    -

    হোগা নাই মেয়া উদ্দার হইররা পাদে। (বরিশালের প্রবচন) অর্থ: সামর্থ নাই ফুটানি কতো! ঋণ:- যথা ক্রমে ধ্রুবজ্যোতি গঙ্গোপাধ্যায় ও ডঃ মোস্তাক আল মেহেদি

    এই ভাবে, প্রবাদের প্রকৃত যে বক্তব্য অর্থালঙ্কারের পেছনে লুকিয়ে থাকে না । ঠিক, এই জন্যেই প্রাকৃত জনগণের কাছে এদের আবেদন কখনোই ক্ষুণ্ণ হয় না ।

    একটা জিনিষ লক্ষ্য করা গেছে :- প্রবাদের কৌলিন্য, তার প্রাচীনত্বে ।
    ইদানীং একটা প্রবাদ প্রায়ই শোনা যায় – যদির কথা নদীতে । ( অনিশ্চিত )

    ভাবের গৌরব, আকারে সংক্ষিপ্ত, মধ্যানুপ্রাস উপস্থিত- সবই আছে, কিন্তু কেবল নবীন বলে এটা তত প্রাচীন নয় বলে প্রবাদ কৌলিন্য পায় নি ।

    হতে পারে, এটা কিছু জায়গায় চলে, বেশ কিছু লোক বলে- কিন্তু মুখে মুখে প্রচলিত হয়ে- দূর দুরান্তে ছড়িয়ে পড়ে নি সেভাবে ।

    এই প্রাচীনত্বের জন্যই আবার রচয়িতার নাম খুঁজে পাওয়া খুবই কষ্টকর ।

    যত হাসি, তত কান্না
    বলে গেছে রামশর্মা

    এই রকম কিছু প্রবাদের মধ্যে রচয়িতার নাম পাই বটে, তবে সময়ের প্রভাবে জনগণ এই সব রচয়িতার নাম বাদ দিয়েছে ।

    এদের মধ্যে ছিলেন – শাস্ত্রজ্ঞ ব্রাহ্মণ পণ্ডিত, বিচক্ষণ গ্রাম্য মৌলবী, মোড়ল, কৃষক বা শিল্পী ।

    আবার শুদ্ধ অন্তঃপুর বাসীনী গৃহকর্ত্রী থেকে, মেয়ে বউ রচনা করেছে –সরস ও সুতীব্র মন্তব্য- আর তার থেকেই হয়েছে প্রবাদ ।

    নিম্ন আয়ের গৃহকর্ত্রী বাজার দর দেখে ক্ষেপে গেছেন, সাথে ছেলের বৌয়ের ঘন ঘন বাপের বাড়ী যেতে চাওয়ার জন্য – ছড়া কাটছেন :-

    বাজার করবি ঘুরে ঘুরে/ শ্বশুর করবি দূরে দূরে ।
    বাজার করতে গেলে একজায়গায় না কিনে ঘুরে ঘুরে কিনতে হয়, যাতে একটু সাশ্রয় হয় । আর শ্বশুর বাড়ী দূরে হলে, ক্যাচাল কম এবং বৌ ঘন ঘন বাপের বাড়ী যেতে চায় না।

    বাজারে দাঁড়িপাল্লায় ওজনে ঠকাচ্ছে দেখে মৌলবী বলছেন :-

    যার হাতে দাঁড়ি পাল্লা/ নেই তার খোদা তাল্লা

    ( চলবে )
    তথ্যঋণ :- সত্য রঞ্জন সেন রচিত, প্রবাদ রত্নাকর । প্রকাশক – ওরিয়েন্ট লংম্যান্স । সাল- ১৯৫৭ ।


    পঞ্চম কিস্তি
    -
    প্রবাদ- প্রবচনে বহু ধর্মীয় উপদেশ বাণী দেখা যায় । স্রষ্টারা স্বাভাবিক ভাবেই এগুলোতে চটুলতা এড়িয়ে চলেছেন ।
    এদের ভাব – গভীর, ভাষা গম্ভীর ও সংযত ।
    সত্যের প্রকাশকে, আপ্তবাক্য হিসেবে সমাজ শ্রদ্ধার সাথেই নিয়েছে ।
    তৎসম শব্দ থাকায়, প্রাকৃত জনগণ এখানে হস্তক্ষেপ করেছে কিন্তু কোনো রকম বিকৃতি বা মর্যাদা হানি হয় নি ।
    তার মধ্যে কয়েকটা:-
    অভাবে, স্বভাব নষ্ট
    -
    চক্ষু বিনা যেমন অঙ্গ
    ভক্তি বিনা সাধু সঙ্গ
    -
    কৃপণের ধনক্ষয়
    চুরি কিংবা ডাকাতি হয়
    -
    গবেষকরা মনে করেন- কোনো আকস্মিক ঘটনা বা কারও খারাপ ব্যবহারে ক্ষুব্ধ হয়ে গ্রাম্য কবি তার কাব্য প্রতিভার প্রকাশ ঘটিয়েছে । সৃষ্টি হয়েছে রসগর্ভ এই সব বচন:-

    ঘুঘু দেখেছো, ফাঁদ দেখোনি
    -
    বড়ো হাতী গেল তল
    মশা বলে কত জল
    -
    হায়রে কপাল একপেশে
    সবাই বলে ফেন খসে
    -
    সামাজিক বা পারিবারিক নানা ব্যাপারে অনেক কাল ধরে জড়িয়ে থেকে, প্রচুর অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন ।

    সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকেরা তাই নিজের মত প্রকাশের জন্য , এক একটা মন্তব্য করতে গিয়ে , তাঁদের অজ্ঞাত সারেই প্রবাদের সৃষ্টি করে গেছেন ।

    এগুলিকে ভূয়োদর্শন জাত প্রবাদ বলা যায় ।

    ছোট একটা মেয়েকে বারবার পুকুর থেকে ঘটি ভরে জল এনে জালায় ( জল রাখার বড় পাত্র ) রাখছে দেখে, কৃষিজীবী প্রবীণ গৃহকর্তা ফুট কাটলেন :-
    এমন করে ছাগল দিয়ে কি ধান মাড়ান হয় ?

    সঙ্গে সঙ্গে গৃহকর্ত্রীর উত্তর :- হয় গো হয় । কিছুটা তো হয় !! কেন, কাঠবেড়ালিতে সাগর বাঁধেনি ?
    এই দুটো পরস্পর বিরোধী কথা, পরিবারের লোকেরাও শুনে বহু জায়গায় ব্যবহার করতে করতে, একসময় প্রবাদ প্রবচনের ভাঁড়ারে ঢুকে গেল ।
    বা
    ড়ীতে, নতুন বিয়ে হয়ে আসা বৌ- একটু অলস, সহজে বাড়ীর কাজ করে না, ঝগড়াও করে একটু আধটু । তাই, তাকে বাড়ীতে গঞ্জনাও সইতে হয় ।
    সূত্রধর ( কাঠমিস্ত্রি) শ্বশুর কিন্তু স্নেহ প্রবণ । র‌্যাঁদা চালাতে চালাতে বললেন :-
    ও সব কালে ঠিক হয়ে যাবে খন । “ কুঁদের মুখে আর বাঁক থাকবে না” ।
    জন্ম হলো- আরও একটা প্রবাদের !!
    এসব দেখে মনে হয়- প্রবাদ বচনের বেশীর ভাগই সাধারণ লোকের রচনা ।
    নানা বিষয় নিয়ে রকমারি বিভিন্ন ভঙ্গীতে প্রকাশ পেয়েছে ।
    সেজন্য – যা নেই ভারতে, তা নেই ভারতে- কথাটা বোধহয় প্রবাদের ক্ষেত্রে বেশী করে খেটে যায় ।
    আমাদের তখনকার গ্রাম সর্বস্ব সমাজ জীবনের নানা স্তরের অভিজ্ঞতাকে আশ্রয় করেই প্রবাদ বচনের সৃষ্টি ।
    তাদের স্বাভাবিক সহজ জীবনের তথ্যই প্রবাদ সাহিত্যের উপজীব্য ।
    ঠিক এই কারণেই , এমন কোনো বিষয় বস্তু নেই যা প্রবাদ সাহিত্যে স্থান পায় নি ।

    ( চলবে )
    তথ্যঋণ :- সত্য রঞ্জন সেন রচিত, প্রবাদ রত্নাকর । প্রকাশক – ওরিয়েন্ট লংম্যান্স । সাল- ১৯৫৭ ।


    ষষ্ঠ পর্ব
    -
    প্রবাদের সর্বজনীন ভাণ্ডার সাধারণের সম্পত্তি । এই ভাণ্ডার থেকেই সকলেই যেমন জানতে পারেন, সেই রকম নিজের সাধ্যমত দান দেবারও অধিকারী ।

    যদি ভালো করে দেখা যায়, তবে বুঝবো- এই অধিকারের প্রয়োগে কারও কোনো ত্রুটি হয় নি বা এখনও হচ্ছে না ।

    একটু আধুনিক কালে এগিয়ে আসি । ইদানীং টিভিতে বাংলা সিরিয়াল দেখে একটা বচন ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন সোসাল নেট ওয়ার্কিং সাইট মারফত :-

    আতা গাছে তোতা পাখি,ডালিম গাছে মৌ
    বাংলা সোপে, একটা ছেলের দুটো করে বৌ

    খুব উন্নত মানের নয়, তবে পাবলিক “খেয়েছে” আপাতত এই সমালোচনার জন্য ।

    সকলের অধিকার যে সমান, সেটা অস্বীকার করার কোনো জায়গাই নেই ।

    সমাজের / প্রশাসনের সর্বোচ্চদের অপ্রিয় সমালোচনার অধিকার আছে “ হীনতম” গ্রামীন বা শহুরে লোকেদের ।

    অসাক্ষাতে রাজার মাকেও “ ডাইন” বলার অধিকার, কার ছিল না সেকালে ? এখনও আছে ।

    পরের দোষ ধরতে তো সকলেই ওস্তাদ খলিফা । তাই সমাজের প্রত্যেকেই অন্যের সমালোচক ।

    যে যখন সমালোচক হয়েছে- সমাজের যে স্তরে তার স্থান, সেই পরিবেশের মধ্যে থেকেই পরিচিত ব্যক্তি, বস্তু বা ঘটনাকে ঘিরে দ্বিধাহীন ভাবে বক্তব্য রেখেছে ।

    অভ্যস্ত ভাষা আর নিজস্ব ভঙ্গীতে প্রয়োগ করার ফলে- অনেক সময়েই মনে হয়, এগুলো “বিকৃত রুচির” প্রতিফলন ।

    অনেক সময়ে নগ্ন অশ্লীলতাও এসে পড়েছে অনিবার্য্য ভাবে ।
    -
    মজার ব্যাপার হলো একই অর্থবহ প্রবাদ ওপার বাংলাতেও আছে । কারা যে কার দ্বারা প্রভাবিত, এটা বের করা দুঃসাধ্য ব্যাপার, তবে আছে ।

    আইসো শাল- মাগ্গে বও । ঝাড়ের বাঁশ- গাঁড়ে আয় - ( যেচে বিপদ ডেকে আনা )

    -
    চালৈন কয়- সুইজেরে, তর পন্দে একডা ফুডা ! চালুনি বলে- সূঁচ, তোর পাছায় একটা ফুটো !! ( নিজের প্রচুর দোষ, তাও অপরের দোষ খোঁজা )
    -
    পোঁদে গু নিয়ে দৌড়নো – (অত্যন্ত তাড়াহুড়ো করে দৌড়নো ) । পন্দে গু লইয়া দৌড়ায় ।
    -
    এরকম সমালোচনা করতে গিয়ে কাউকেই ছাড়া হয় নি । যে “বাউন”কে ভগবানের মত পুজো করতো সেকালের লোক, তারা কি বলেছে- একবার শুনি :-

    লাখ টাকায় বাউন ভিখারি
    -
    বামুনের মড়া ভাসে জলে
    ফলারের নামে উঠে বসে
    -
    বাউনে দক্ষিণা ধরে
    ঢেঁকির নামে চণ্ডী পড়ে
    -
    রাজা , রাণীকেও ভয় করা হতো না । খুব বেশীদিন আগে নয় । একটা দীর্ঘদিনের অনশন চলেছিল ।
    তখন শুনেছিলাম :-

    বারো কাঁদি নারকেল, তেরো কাঁদি কলা
    আজ আমাদের রাণীর উপবাসের পালা ।
    -
    এটা পুরোনো প্রবাদ- কিন্তু অনশনের সময় মুখে মুখে ফিরতো !!! শুনেছেন হয়তো কেউ কেউ ।

    মন্ত্রীদের ব্যাপারেও প্রাচীন প্রবাদকে একটু ঘুরিয়ে নিয়ে বলা হত :-

    রাজার আঙ্গুল মোটা মোটা
    তাই দেয়, ফোঁটা ফোঁটা – এটা আসল । পরিবর্তিত রূপ হল :-
    -
    মন্ত্রীর আঙ্গুল মোটা মোটা
    তাই দেয়, ফোঁটা ফোঁটা
    =
    সমাজের শীর্ষ স্থানীয়দের প্রতি যখন প্রবাদ প্রবচন – নদারৎ, তখন সাধারণ মানুষকে যে নাকের জলে, চোখের জলে হতে হয়েছে- সেটা বলাই বাহুল্য ।

    আসবো সেই সবে, তবে এখন একটা ব্রেক ।

    তথ্যঋণ :- সত্য রঞ্জন সেন রচিত, প্রবাদ রত্নাকর । প্রকাশক – ওরিয়েন্ট লংম্যান্স । সাল- ১৯৫৭ ।


    সপ্তম কিস্তি
    -
    এই গুরু সাইটেই সিকি ,টইয়ের একটা লিংক দিয়েছে । সেটাতেও প্রচুর প্রবাদ আছে। সেখানে প্রচুর প্রবচনের উল্লেখ আছে ।
    কলমও চালানো হয়েছে সেই সব পুরোনো প্রবাদে । এভাবেই বহু প্রবাদের রূপান্তর ঘটেছে ।
    টইয়ের লিংক থেকেই দিচ্ছি :-
    পশ্চিম বঙ্গে ২০১১ র বিধান সভা নির্বাচনের পর একটা প্রবাদ আবার ভীষণ ভাবে চালু হয়েছিল :-
    হেলে ধরার মুরোদ নেই, ধরতে গেছে কেউটে.....

    আসলটা অশ্লীলতা দোষে দুষ্ট ।
    ছিঁড়তে পারেনা মুর্গীর বাল , ধরতে গেছে নৌকোর হাল ।
    আগে ছিল – ল্যঙ্গোটের আবার বুকপকেট !!
    এখন:-
    জাঙ্গিয়ার আবার বুক পকেট
    তাতে আবার ক্রেডিট কার্ড।
    সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন ও তৈরি হচ্ছে :- ( টই থেকেই দিলাম )
    খ্যাপা খাবি কি ঝাঁঝে মরে যাবি
    -
    ছিঁড়তে পারে না লোম, দেওয়ালে ছুঁড়বে বোম
    -
    কি বদল আনলে কাকা/আলুর কেজি তিরিশ টাকা
    -
    প্রবাদ প্রবচনের বিবর্তন। প্রাচীন কাল থেকে। ( সিকি বিরচিত)

    পাগল না পায়জামা।
    পাগল না হাপপ্যান্ট
    পাগল না বার্মুডা
    পাগল না মাথাখারাপ
    পাগল না সিপিএম
    পাগল না মমতা
    পাগল না তিনোমুল!

    তথ্যঋণ :- সত্য রঞ্জন সেন রচিত, প্রবাদ রত্নাকর । প্রকাশক – ওরিয়েন্ট লংম্যান্স । সাল- ১৯৫৭ । ও গুরুর টইয়ের লিংক ।

    অষ্টম কিস্তি
    -
    প্রবাদ প্রবচনের গুরুত্ব পেয়েছে- দুষ্কৃতকারীরাও । সবচেয়ে মনোযোগ পেয়েছে- চোর !!! ডাকাত- বাটপাড়- গাঁটকাটা নয়, সিঁদেল চোর এবং ছিঁচকে চোর ।

    পরের জিনিস অপহরণ যারা করে, সেই বিদ্যায় পারদর্শীদের সম্বন্ধে জন সাধারণের কৌতুহলের সীমা নেই ।
    কোনো চোর ধরা পড়লে- গৃহস্থ কে সাহায্য দানের যত না বেশী ইচ্ছে, তার চেয়েও নিজের হাতের সুখ করে নেওয়ার জন্য প্রচুর লোক রবাহুত হয়ে ছুটে যায় ।

    তাই- চোর, এই রহস্যজনক লোকটিকে নিয়ে যত বচন প্রচলিত, তেমন বোধহয় আর কাউকে নিয়ে আর হয় নি।

    চুরি বিদ্যে বড়ো বিদ্যে, যদি না পড়ে ধরা- এই সত্য সকলেই মুক্তকণ্ঠে মেনে নেবে , বিশেষ করে যারা নিজে ধরা পড়ে নি ।

    অবশ্য ধরা না পড়ার কৃতিত্বর ফলে যত চুরি হয়, ধরা পড়াটা তার একটা ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ মাত্র ।

    চোরের মনস্তত্ত্ব, কর্মকুশলতা ও জীবন দর্শন সম্বন্ধে এত সূক্ষ্ম গবেষণা আর বিশ্লেষণ হয়েছে যে, যারা এতটা কৃতিত্ব দেখিয়েছে, তারা ঐ ধরা না পড়ার দল ভুক্ত ।

    যেহেতু- “চোরে চোরে মাসতুতো ভাই” এবং “ এক চোরে বিয়ে করে আর এক চোরের শালী”- একে অপরের হাঁড়ির খবর অজানা নয় ।

    তাই এই মহাবিদ্যা বিশারদেরা ( এরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ) সাধু পরিচয়ে যেমন সমাজে প্রতিষ্ঠা বজায় রেখে চলে, তেমনই পরহিতৈষণায় প্রেরণার তাগিদে যাবতীয় গোপন রহস্য প্রকাশ করে দিয়ে ইঙ্গিত করেছে – “সাধু সাবধান” ।

    সবাই জানে- চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী । তাকে যত উপদেশই দেওয়া যাক না কেন- সব এ কান দিয়ে ঢুকে, ও কান দিয়ে বের করে ফেলে ।

    এই রকম অবস্থায়, তাকে নিরস্ত করার উপায় নেই দেখে, অগত্যা গৃহস্থের সাবধান হওয়া ছাড়া আর কোনো চারাও নেই ।

    কিন্তু, মানুষ আর কতো সাবধান হতে পারে ?

    এমন শুভানুধ্যায়ী, আত্মীয় বন্ধুদের অভাব নেই – যারা চোরকে চুরি করতে বলে আর গৃহস্তকে বলে সজাগ থাকতে ।

    তথ্যঋণ :- সত্য রঞ্জন সেন রচিত, প্রবাদ রত্নাকর । প্রকাশক – ওরিয়েন্ট লংম্যান্স । সাল- ১৯৫৭ ।

    প্রসিদ্ধি যে, মহাকবি কালিদাস, স্বীয় অসাধারণ কবি প্রতিভা সত্ত্বেও একদা রাজসভায় কয়েকটি সমস্যা পূরণে অপারগ হইয়াছিলেন ।

    মহারাজা বিক্রমাদিত্য ( মতান্তরে মহারাজা দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত) তাহার কারণ জিজ্ঞাসা করিলে, কালিদাস উত্তর দিয়াছিলেন:-

    “ দরিদ্রস্য গুণাঃ সর্বে ভস্মাচ্ছাদিতবহ্নিবৎ ।
    অন্নচিন্তা চমৎকারা কাতরে কবিতা কুতঃ ।।”

    ভস্মাচ্ছাদিত অগ্নির ন্যায় দরিদ্রের গুণাবলী প্রকাশ পাইতে পারে না । অন্নাভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্তের নিকটে কবিতা কোথা হইতে আসিবে ?

    ইহা হইতেই বঙ্গীয় ভাষায় প্রবাদ রচিত হইল :-

    “অন্নচিন্তা চমৎকারা,ঘরে ভাত নাই জীয়ন্তে মরা”

    যাঁহারা রসিক, তাঁহারা এক পদ আগাইয়া মন্তব্য করিলেন :-

    “অন্নচিন্তা চমৎকার, বস্ত্রচিন্তা নৈরাকার ( নৈরাকার = একাকার)
    তার চেয়ে বেশী চিন্তা, তামাক নাই যার”
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৪ নভেম্বর ২০১৩ | ৩১৮৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • শেখর সেনগুপ্ত | ***:*** | ১৪ নভেম্বর ২০১৩ ০২:৪২45838
  • আপনার লেখার প্রসাদগুণে বাংলা প্রবাদ-প্রবচনের ভান্ডার আরো সমৃদ্ধ হোক।।
  • Partha | ***:*** | ১৪ নভেম্বর ২০১৩ ০৪:৪৮45832
  • আপনি লিখুন। আমরা পড়বো।
  • indranil | ***:*** | ১৪ নভেম্বর ২০১৩ ০৫:০৩45839
  • ghonada ...likhe jan
  • usree dutta | ***:*** | ১৪ নভেম্বর ২০১৩ ০৫:০৬45833
  • Lekho jethu...
  • BINITA CHATTERJEE | ***:*** | ১৪ নভেম্বর ২০১৩ ০৬:৩৮45834
  • KHUB E INTERESTING BISOY. ARO LIKHUN . AMRA JANTE CHAI
  • BINITA CHATTERJEE | ***:*** | ১৪ নভেম্বর ২০১৩ ০৬:৩৮45835
  • KHUB E INTERESTING BISOY. ARO LIKHUN . AMRA JANTE CHAI
  • Ramkrishna Bhattacharya | ***:*** | ১৪ নভেম্বর ২০১৩ ০৮:৩১45837
  • পরের কিস্তি দিলাম, ওপরে
  • জয়দীপ | ***:*** | ১৫ নভেম্বর ২০১৩ ০২:৩৭45843
  • ভালো লাগছে পড়তে। এগুলো একসাথে সংকলিত হলে সম্পদ হয়ে থাকবে।
    এইরকম বিষয় নিয়ে লেখার জন্য ধন্যযোগ RK :)
  • সামিম | ***:*** | ১৫ নভেম্বর ২০১৩ ০৩:০৯45844
  • আপনি জানেন আপনি কত বড় কাজ করছেন। যখন একত্রিত হবে তখন সব বাঙালিরাও জানবে। চালিয়ে যান ঘনাদা
  • সামিম | ***:*** | ১৫ নভেম্বর ২০১৩ ০৩:০৯45845
  • আপনি জানেন আপনি কত বড় কাজ করছেন। যখন একত্রিত হবে তখন সব বাঙালিরাও জানবে। চালিয়ে যান ঘনাদা
  • সিকি | ***:*** | ১৫ নভেম্বর ২০১৩ ০৩:৪১45846
  • "আমি লেখক নই ..."

    এত বড় গুলটা ঘনাদাকে গুরুচন্ডালিতে এসেই মারতে হল? ;-)
  • kumu | ***:*** | ১৫ নভেম্বর ২০১৩ ১২:০২45840
  • আপনার লেখা ভাল লাগল।সবিনয়ে দুটি অনুরোধ
    ১।প্রবাদ রত্নাকর বইটির বিষয়ে একটু জানতে চাই।
    ২। নারীজাতির বহুকুখ্যাত অলংকার প্রিয়তার ওপর ভিত্তি করে কোন প্রবাদ আছে?
  • Ramkrishna Bhattacharya | ***:*** | ১৫ নভেম্বর ২০১৩ ১২:২৯45841
  • সব জানাবো ধীরে ধীরে । আমাকে লিখতে দিন । আমি লেখক নই, তাই এখন লিখলে বে লাইন হয়ে যাবোই যাবো ।

    আরও যদি কারও কোনো প্রশ্ন থাকে, তবে এখানে লিখে রাখুন । আমি সব পয়েন্ট নোট রাখছি ।

    মাঝে ৫/৬ দিন থাকবো না, তাই আপাতত লেখা বন্ধ ।

    ফিরে এসে শুরু করবো আরও অনেক পর্ব ।

    দয়া করে সময় দিন ।
  • kumu | ***:*** | ১৫ নভেম্বর ২০১৩ ১২:৪৭45842
  • ধন্যবাদ।আপনার সুবিধা অনুযায়ীই লিখবেন।
  • Ramkrishna Bhattacharya | ***:*** | ২০ নভেম্বর ২০১৩ ০১:৫৯45849
  • সব হবে
  • রঘু ডাকাত | ***:*** | ২০ নভেম্বর ২০১৩ ০২:০৯45850
  • খুব ভালো হচ্ছে । এই বিষয়টা গুরুচণ্ডালির একটা সম্পদ হতে যাচ্ছে ঘনাদা
  • Partha | ***:*** | ২০ নভেম্বর ২০১৩ ০৪:৩০45851
  • বেশ হচ্ছে। চালিয়ে যান।
  • 4z | ***:*** | ২০ নভেম্বর ২০১৩ ০৪:৩৬45852
  • "আমি লেখক নই..." - শুধু এইটা লেখার জন্যই ঘনাদার ফাইন হওয়া উচিত
  • কালো বেড়াল | ***:*** | ২০ নভেম্বর ২০১৩ ১২:৩১45847
  • ঘনাদা স্যার "চালাও গাড়ি বাদাম বাড়ি"! আমরা হলাম ফিরীসওয়ারি
  • রামগ্রুরের ছানা | ***:*** | ২০ নভেম্বর ২০১৩ ১২:৪২45848
  • একটানে পড়ে ফেললাম। প্রবাদের পেছনের গল্পগুলো খুউউব মজাদার। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
    পুনশ্চ- প্রবাদ তো থেমে নেই। প্রতিদিন বাসে ট্রামে বাজারে হাটে নতুন নতুন কথা তৈরী হচ্ছে, প্রবাদও পিছিয়ে নেই। এগুলোকেও রাখা যায়না?
  • Sayantani Putatunda | ***:*** | ২৫ নভেম্বর ২০১৩ ০৭:৩১45853
  • ki suru korechho guru! probad probochon niye eto somriddho lekha ar porini buro. kintu thamiye rekhechho keno suni? erpor koi? (dnat kirmir kore) tomar ei beral alisyi ar gelo na!
  • রাজীব হোসাইন সরকার | ***:*** | ২৭ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৪:৫২45854
  • অনুমতি চাই। লেখাগুলো কপি করে পিডিএফ করে আমার বাচ্চা কাচ্চাদের পড়াব ভাই :)
  • ঘনাদা ঘনার বচন | ***:*** | ২২ অক্টোবর ২০১৫ ০৬:৩৬45855
  • বৎস নন্দী এবং ভৃঙ্গি

    পূজার ভালো বাসা নিবা । অতি কষ্টে সরস্বতী দিদির মোবাইল থেকে তোমাদের এসেমেস পাঠাচ্ছি ।
    চিঠির চল, এই মর্তে উঠে গেছে । কৈলাসে, এখনও ক্যুরিয়ার সার্ভিস যায় না । নাকি- সীমান্তে কি সব বিবাদ আছে ।

    যাই হোক, যে কারণে এই চিঠি লিখছি । এখানকার লোকেরা এখনও আমার যাওয়ার দিন ঠিক করতে পারে নি ।

    একদল বলে, আজ- অন্যদল বলে আগামীকাল । ফেরার টিকিট পাবো কিনা সন্দেহ আছে ।
    তৎকাল রিজার্ভেসন, বেশী পয়সা দিয়ে কাটতে হবে । মুশকিল এই যে- যারা এই টিকিট কেটে দেবে বলেছিল- তাদের পুজো পঞ্চমীতেই শেষ ! অন্যরা কেউ গা লাগাচ্ছে না ।

    তোমাদের বাবার কথা আর কি বলি ? এখানে আসা ইস্তক খালি গাঁজা খেয়েই যাচ্ছে । ওঠবার নাম নেই । “ কোনো গুণ নেই তার, কপালে আগুন” ! গ্যাস সহজে পাওয়া যায় না বলে ওই আগুনে, দুটো খুঁদ কুড়ো রান্না করে খেতে দেই তোমাদের । তাই কিছু বলি না !
    তোমাদের নক্কি দিদি আর সস্সোতি দি তো খালি ঘুরেই বেড়াচ্ছে । এই পার্লার থেকে সেই পার্লার- আর খালি ছবি ফেসবুকে আপলোডাচ্ছে ।

    গণেশ সেই যে বড় বাজারে ঢুকেছে- আর বেরুবার নাম নেই !
    কাত্তিক দা তো খালি উড়ছে ।
    ছেঁড়া বালিশগুলো ঠিক করে রেখো আর ওয়াড়গুলো রিপু করে রেখো । আমি অবশ্য কিছু নতুন বিছানা বালিশ পেয়েছি শয়ানের জন্য তবে সহজে বের করবো না।
    তোমাদের বাবা বিছানার ওপর শুয়ে দুলে মুচড়ে চাদরগুলো শেষ করে দেবে ।

    আজ একজায়গায় পুঁটি মাছ আর পান্তা ভাত খেতে দিয়েছে অন্য জায়গায় পোলাও – মাংস ।
    এদিকে, যা হানাহানি চলছে- তাতে আর খেতে ইচ্ছে করে না । ভাবছি, পান্তা ভাতই খাবো । মাত্র তিন দিনে আর অভ্যেসটা নষ্ট করতে চাই না ।
    পুজোর নাম করে- বড় কোম্পানিগুলো ভালো পয়সা পিটে নিচ্ছে আর আমাকে বা আমার গরীব ভক্তদের দেবার নাম নেই ।
    আবার এরাই আমার আশীর্বাদ চায় । কি গেরো বল দিকিনি !
    কিছু লোক আবার তিন হাজার টাকা দামের নীচে জুতোই পড়তে পারে না । আবার কেউ কেউ সেপটিপিন লাগিয়ে ছেঁড়া হাওয়াই চপ্পল পরে ।
    পাণ্ডেলে ঘোরার কথা আমার অথচ- সব সাজুগুজু করে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে ।

    বলতে গেলাম – আমি তো সব জায়গায় আছি ! এত ঘোরাঘুরির দরকার কি? কে শোনে কার কথা !

    এত বড় এসেমেস পাঠানোর জন্য নাকি বেশী পয়সা কাটবে । অনেক কথা বলার থাকলেও লিখতে পারলাম না ।

    শেষ কথা – খাটের ভাঙা পায়াগুলো পেরেক মেরে ঠিক করে রাখিস ।
    ইতি
    তোদের
    দুগ্গি ঠাহরাণ
    ৪ ঠা কার্তিক- ১৪২২ সাল ( বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে )
    ২২/১০/২০১৫ ( ইং)

    নক্কি দিদির টিকিট আবার ২৭ তারিখ কাটা আছে ।
  • সে | ***:*** | ২২ অক্টোবর ২০১৫ ০৯:২৫45856
  • গোড়ার দিকটায় দুগ্গাকে বাঙাল বাঙাল মনে হোলো আবার শেষের দিকটায় ঘটি। মদ্দিখানে ট্রানজিশন ফেজ। মা যে সবার - ঘটির ও বাঙালের - সেইটেই মেসেজ।
  • samir | ***:*** | ১৭ নভেম্বর ২০১৫ ০১:৪৭45857
  • খুবই সুন্দর।
    প্রবাদ নিয়ে একটা প্রশ্ন খচখচ করছে। পিরিতে মজে মন, কিবা হাড়ি কিবা ডোম - এই প্রবাদটা কী যুগের পরিপ্রেক্ষিতে নিম্নবর্ণের প্রতি অপমান ও অবজ্ঞাসূচক নয়?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন